শিরোনাম |
সূত্র | তারিখ |
ভারত ও বাংলাদেশে সফলঃ কংগ্রেস সদস্য ফ্রিলিংঘুসেন এর সমীক্ষা | প্রেস বিজ্ঞপ্তি | ২৩ অক্টোবর, ১৯৭১ |
এইচ. বি. ফ্রিলিংঘুসেন- এর বক্তব্যের সারসংক্ষেপ
১৩ অক্টোবর, ১৯৭১
ভারত ও পাকিস্তানে ১২ দিনের ভ্রমণের উপর পযবেক্ষন সমূহ।
উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানে গৃহ অস্থিরতার ফলে পূর্ব পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশে সৃষ্ট মানবিক ত্রান সমস্যাগুলো সরেজমিনে দেখা এবং এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাচাই করা।
১। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশে অর্থবহ মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা অতি গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ
প্রতিরোধ ও স্থিতিশীল অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো অত্যান্ত
জরুরী। ভারতের উপর থেকে বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝার চাপ কমাতে উদ্বাস্তুদের জন্য বাড়তি ত্রান সহায়তার ব্যবস্থা করাটাও প্রয়োজনীয়। সাম্প্রতিককালে তীব্র খরায় আক্রান্ত
এলাকাগুলোয় পানির ব্যবস্থা করাটাও প্রয়োজনীয় বটে।
উদ্বাস্তু সমস্যার তীব্রতা দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। ভারতীয়রা তাদের দেশে আগত উদ্বাস্তুদের হিসাব রাখছে এবং তাদেরকে আশ্রয় ও খাদ্য দিচ্ছে, তাদের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৯০ লক্ষ উদ্বাস্তুকে তারা সেখানে দেখভালো করছে এবং তাদের এই প্রাক্কলিত হিসাবকে অস্বীকার করারমত কোন তথ্য আমার কাছে নেই।
২। ভারত ও পাকিস্তানে জরুরী মানবিক ত্রান সহায়তার জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সন সম্প্রতি যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার মঞ্জুরীর অনুরোধ করেছেন আমি বিশ্বাস করি কংগ্রেস তার অনুকুলে কাজ করবে। এই বিশাল পরিমান অর্থ দিয়ে দেশের আভ্যন্তরীণ প্রয়োজনগুলো মেটানো গেলেও কংগ্রেস এই মর্মে নিশ্চয়তা চাইবে যেন অন্যান্য দেশগুলোও এই জরুরী অবস্থায় যথাযথভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে। উদ্বাস্তুদের ত্রান সহায়তার জন্য আন্তর্জাতীক সম্প্রদায় ভারতকে মোট ১৮৬ মিলিয়ন ডলার দান করেছে বা দিয়েছে, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ৮৯ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে যেটা তাদের দেয়া অর্থের প্রায় অর্ধেক। এই মাত্রায় ত্রান যেটা হয়তো প্রয়োজনীয়, অনুদানকৃত অর্থের ন্যায্য জবাবদিহীতার প্রশ্নটিও বাড়িয়ে তুলবে।
ভারত বর্তমানে ত্রান তৎপরতার সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এবং সম্ভবত ভারত ও পূর্ব পাকিস্তান সিমান্তে চলমান ঘটনাগুলোর পরিমান হ্রাস্বে জাতি সংঘের জন্য এমনকি কোন ভূমিকার কথা চিন্তা করতেও অনিচ্ছুক। আমি এখনও ব্যক্তিগতভাবে আশাবাদী যে জাতি সংঘের কার্যকারিতা ও সঠিক তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য একটি পথ খুজে বের করা যাবে।
৩। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা এখন বাস্তব এবং এই আশঙ্কা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। দূর্ঘটনা বশতই হোক আর পরিকল্পিত অভিযানের মাধ্যমেই হোক, সশস্ত্র সংঘাত সহজেই শুরু হয়ে যেতে পারে। এই কারণে উভয় দেশেরই সর্ব্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করা চরম গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধ হবে চুড়ান্ত পরিনতি, এটা কোন সমাধান বয়ে আনবে না
বরং নি:সন্দেহে এমন একটা অঞ্চলে আরও ততধিক বিনাশ ঘটিয়ে দিবে যে অঞ্চল ইতিমধ্যেই বহু ক্ষয়ক্ষতির শীকার হয়েছে।
৪। রাজনৈতিক সমাধানের দিকে কিছু সফল অগ্রগতি অর্জন করা এবং তা দ্রুততার সাথে করাটা খুবই দরকারী। এই প্রকৃয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের
অংশগ্রহণ যদি সম্ভব করা যেত এবং অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর আলোকে বর্তমানের এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির উদ্ভব না হতো তাহলে অগ্রগতির দিকে এটাই হতে পারতো মূল বস্তু।
ঘটনা যাই হোক, দ্রুত সামনে আগানোর পথে চেষ্টার কোন পথই বন্ধ রাখা যাবে না। কেবল মাত্র ভারত আর পাকিস্তানের উপরেই নয়, আন্তর্জাতীক সম্প্রদায়ের চেষ্টার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে।
সবশেষে আমি বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন সামরিক সহায়তা সেটা চালানপথেই থাকুক আর নাই থাকুক, নির্বিশেষে তার সবকিছু অবশ্যই বন্ধ হবে। সংঘাত শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে যে পরিমান সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে তা ডলার মূল্যে ও সামরিক মূল্যেও পাকিস্তানের কাছে অসাড় বলে পরিগনিত হচ্ছে এবং তা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
মধ্যেকার সম্পর্কের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে।