শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশে শরণার্থী ত্রাণে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য বিল ঃ সিনেটের কেনেডী | সিনেটের কার্যবিবরণী | ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
এস ১৪৮৭৬ জনাব কেনেডী কর্তিক কংগ্রেসে সিনেট নথি সেপ্টেম্বর ২, ১৯৭১
এস ২৫৬৮। ইন্ডিয়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানী শরণার্থী দের জন্য ত্রাণ সাহায্যের যথোপযুক্ত বিল। পররাষ্ট্র দপ্তরে এই কমিটিকে পাঠানো হল।
জনাব কেনেডী। জনাব প্রেসিডেন্ট প্রতিবেদনে বলেছে যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে মানুষের দুর্দশার স্রোত ইন্ডিয়ায় ধাবিত হচ্ছে।
বস্তুত, আমি যে মাসে পূর্ব পাকিস্তানের সীমানার ঘেঁষে ইন্ডিয়ার শরণার্থী ক্যাম্প থেকে ফিরে এসেছি, তখন দেখেছি প্রায় ১০ লক্ষ পূর্ব বাঙ্গালীদের মাঝে অমানবিক অবস্থা দেখা গেছে আর তাদের সরকারের দ্বারা দেশে গণহত্যার মত অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে।
আজকের দিনে পূর্ব বাঙ্গালীর এই সত্য ঘটনা অনেকের কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হতে পারে। যে অবস্থা আমি দেখেছি তাতে করে বিস্তারিত বলার দরকার নেই। প্রতিটা দিন তাদের দুঃখ দুর্দশা বাড়তেই আছে।
আজ সকালে নিউ ইয়র্ক টাইমে যে রিপোর্টটি করা হয়েছে সেখানে শরণার্থী নিয়ে আরও অনেক খবর লেখা হয়েছে যেখানে আমি চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলাম তা হল –
পাকিস্তানী আর্মি আর তাদের দোসররা মিলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি ছাড়া খুন, লুট আর অগ্নি সংযোগ করছে তাতে করে দেশের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়াটা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পরেছে আর বাঙ্গালী জনগণের বিজয়ের জন্য আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে।
জনাব প্রেসিডেন্ট, এই রিপোর্টে নতুন কিছুই নেই কিন্তু আমি এই কথাগুলো শুনেছি অগণিত শরণার্থীর কাছ থেকে যখন আমি তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম ইন্ডিয়া গিয়ে।
আরও কতদিন আমাদের সরকার আমাদের প্রেসিডেন্ট নিজে এই সময়টা কাটিয়ে দিবেন কম্বলে মুখ লুকিয়ে, আমাদের এই নীরবতা কি খুব বেশি কিছু করতে পারছে ? কোথায় গেলো আমাদের এই উদ্দেশ্য সাধনের পথ ? এই উদ্দেশ্য সাধনের পথ কি আমাদের কিছু ফলাফল দিতে পেরেছে ?
কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোথায় আমাদের মূল্যবোধের পরিচয় ? কোথায় আমাদের এই লাখ লাখ শরণার্থী লোকের জন্য সমবেদনা ?
কখন আমাদের সরকার শেষপর্যন্ত তার এই নিশ্চুপতা থেকে বেরিয়ে এসে নেতৃত্ব দিতে পারবে আর দক্ষিণ এশিয়ার এই দুর্দশা থেকে মুক্তির একটি কিনারা খুঁজে বের করতে পারবে ?
কখন আমরা এই জাহাজ ভরা অস্ত্র সাহায্য স্থগিত করতে পারবো আর তার বিনিময়ে জরুরী ভিত্তিতে মানবিক ত্রাণ সাহায্য পাঠাতে পারবো ?
জনাব প্রেসিডেন্ট , এটা ছাড়া মানুষের জীবনের আরও মূল্য দিতে হবে ।
প্রতিটা দিন তাদের দুঃখ দুর্দশা বেড়েই চলেছে আর তাদের আরও আরও মৃত্যু। এবং প্রতিদিন ইন্ডিয়ার উপর নতুন করে বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমাদের সরকার তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায় ছাড়া যেটা সত্যিকার অর্থে সুবিশাল জায়গার প্রয়োজনীয়তার সমানুপাতিক হবে।
.
প্রতিটি দিন উড়ো দূর্ভোগ এবং আরো মৃত্যু নিয়ে আসে। এবং প্রত্যেকটা দিন প্রকৃত পক্ষে মাঠ পর্যায়ের বিশাল চাহিদার সাথে সমান হারে ভারতের ওপর ভয়াবহ বোঝাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে যা ভারতকে আমাদের সরকার, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সমর্থন বিচার না করেই জোরপূর্বক বহন করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
আমাদের সরকারের নতুন হিসাবে বর্তমানে শরণার্থীদের দেখাশোনায় বিস্ময়করভাবে চলতি অর্থবছরে ভারতের খরচ দাঁড়িয়েছে, ৮৩ কোটি যা ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সাহায্য সংস্থাগুলোর বার্ষিক অনুদানের সমান। সাধারন মানবতা দাবি করে যে, আমদের এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে এই সহজ সত্যের মুখোমুখি হতে হবে যে, এই শরণার্থীর ভার ভারতের পক্ষে একা বহন করা সম্ভব নয়।
এই পর্যায়ে আমি আজকে ভারতে আন্তর্জাতিক শরনার্থী ত্রান প্রচেষ্টার সহায়তায় ৪০ কোটি অনুমোদনের একটি বিল চালু করছি। এই অংকটি আমরা ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে শতকরা হারে যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে, আমরা বর্তমানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সাহায্য সংস্থার সদস্য হিসেবে ভারতের জন্য যে পর্যায়ের সহায়তা দেই এটি তার সমতুল্য।
দক্ষিন এশিয়ার ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়কে আরো জানতে এবং আমাদের সরকার বর্তমানে কি করছে ও এই সমস্যায় সহায়তায় ভবিষ্যতে কি করতে প্রস্তুত আছে তার প্রমান রাখতে- আমি আজ ঘোষণা করছি যে, শরনার্থী প্রসংগে উপকমিটির পরবর্তি শুনানি আগামী সপ্তাহে শুরু হবে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমি আজকে যে বিলটি চালু করেছি তার বিষয়বস্তু প্রতিবেদনের এই অংশে মুদ্রিত করার জন্য সকলের সম্মতি প্রার্থনা করছি।
এস. ২৫৬৮
কংগ্রেস সম্মেলনে সিনেট ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ দ্বারা এটিকে চালু করা হোক। ১৯৬১ সালের বৈদেশিক সাহায্য আইনের সেই ৩০২ ধারার শেষে নিম্নলিখিত নতুন উপ-ধারাটি যোগ করে সংশোধন করা হয়েছেঃ
(চ) পাকিস্তানি শরনার্থী যারা ২৫ শে মার্চ,১৯৭১ এ অথবা এর পরে পাকিস্তান ত্যাগ করেছে এবং ভারতে চলে গিয়েছে তাদেরকে ত্রান ও পুনর্বাসন সহায়তা দিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ব্যবহারের জন্য, ১৯৭২ অর্থ বছরে অনধিক ৪০ কোটির অনুমোদন দানের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির আছে।