You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে এক নতুন নামঃ কংগ্রেস সদস্য রায়ান প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী ৩ আগস্ট, ১৯৭১

স্পিকার মি. রায়ান, বিশ্ব সম্প্রদায়ে “বাংলাদেশ” একটি নতুন নাম। বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) এমন একটি জায়গা যেখানে ট্রাজেডি অব্যাহত, তা সত্বেও এশিয়ায় যা ঘটছে এ নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় ভীত। সকল বিবেচনা অনুসারে পূর্ব পাকিস্তান একটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বা আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে একটি অদৃশ্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আরোপ করতো। শহরগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, শিশু ও নারীরা জবাই হয়েছে। তাদের নিষ্ঠুর অবিচার সকল কিছুকে ছাড়িয়ে গেছিলো। অনুমান করা হয় যে ২৫০,০০০ বা আরো বেশি পূর্ব পাকিস্তানি বা বাঙালি মারা গিয়েছিল। সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ উদ্ভাস্তু হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছিলো যাদের সাহায্য করার মত পর্যাপ্ত সম্পদ ছিলোনা। নিউজউইক ম্যাগাজিনের আগস্ট ২, ১৯৭১, ইস্যু থেকে একটি উদ্ধৃতি দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া কিছু মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। এটি তাদের একটি প্রাত্যহিক কাজের মত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে হালুয়াঘাট গ্রামের যুবকদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা তাদের অবহিত করেন যে, তার আহত সৈন্যদের জরুরিভাবে রক্ত প্রয়োজন, তারা কি দাতা হতে চায়? যুবকদেরকে অস্থায়ী বেদির উপর শুইয়ে তাদের শিরায় সূঁচ ঢোকানো হত এবং তারা মারা যাওয়া পর্যন্ত ধীরে ধীরে রক্ত বের করা হত। এটা স্পষ্ট যে যা ঘটেছিলো তা পরিকল্পিত কাজ ছিল। খুব অল্প দ্বন্দ্ব বাকি ছিল। পাকিস্তানি সরকার- পশ্চিম পাকিস্তান এর সরকার এর অধিন- এযাবৎ তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্টেপ চাইল্ড কে রুপান্তরিত করছে- পূর্ব পাকিস্তান একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কার্যকলাপ। এটা করাতে, কোন আচরনই সহাই হয়নি। সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতার কারণে উচ্ছিন্ন হয়েছে। নিজেদের সমর্থন জোগাড়ের জন্য প্রাথমিক কাজ হিসেবে নতুন পাকিস্তানি সরকার পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানকে একত্র করতে চেয়েছিল। বিপরীতে, বিভিন্ন প্রমাণ থেকে দেখা যায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি সংকটের পূর্বাভাস যা এখন পূর্ব পাকিস্তানে লক্ষিত যেখানে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। যেটা দৃশ্যত পরবর্তীকালে অনুপ্রাণিত করে। এভাবে, পূর্ব পাকিন্তান পতিত জমিতে পরিনত হচ্ছে। এই অবস্থা খুব স্বল্প উন্নতির প্রতিশ্রুতি ধারন করে। পূর্ব পাকিস্তান দুর্ভিক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়। জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত- পাকিস্তানি দূতাবাসের অর্থনৈতিক-উপদেষ্টা ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান- যিনি পক্ষত্যাগ ও বাংলাদেশি বাহিনি যোগদান করেন এর কেবিনেট এর সাবেক উপ-সচিব, এর মতে আগামি ৩ মাসের মধ্যে ১৫ লক্ষ বাঙালি অনাহারে মৃত্যু বরণ করতে পারে। এইদিকে, ভারত শরণার্থী দ্বারা আবিষ্ট হচ্ছে, এবং এই শরণার্থী জনসংখ্যা বৃদ্ধি হবে বলে আশঙ্খা করা যেতে পারে।
.
একই সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকল, ঐতিহ্যগত ভাবে শত্রুতাপরায়ণ এই দুই প্রতিবেশী হয়ত যুদ্ধের একটি বিন্দুতে এসে পৌছাবে। পরম শক্তির জন্য অশুভ ইঙ্গিতের এমন সম্প্রসারন আশংকাজনক।

বাংলাদেশের ভয়াবহ অবস্থাকে চলতে দেওয়া যায় না। প্রশাসন আপাতত কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আমি সেগুলোর প্রশংসা করি। ১লা আগষ্ট, রবিবার ঘোষণা করা হয় যে, ১৫৬ জন বেসামরিক নাগরিকের একটি আন্তির্জাতিক দল জাতিসংঘের ত্বত্তাবধায়নে পুর্ব পাকিস্তানে পাঠানোর জন্য একটি ত্রান ও পুনর্বাসন কমিটি গঠন করেছে।

এই দলে ৭৩ জন উপদেষ্টা থাকবেন যারা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনার চারটি আঞ্চলিক অফিসে এবং ৬৯টি অন্যান্য এলাকায় সংস্থিত হবেন। তাদের কাজ হবে স্থানীয় অবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট করা।আশা করা যায় তাদের উপস্থিতি সহিংসতা ও প্রতিহিংসা হ্রাস করতে সাহায্য করবে।

উপরন্তু, জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত দলটি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে দুর্ভিক্ষ, রোগের আশংকা রোধে এবং ঘরবাড়ি পুনর্বাসন ও লক্ষাধিক গৃহহীনের আশ্রয়ের ব্যাপারে সাহায্য করবে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই প্রচেষ্টাকে চালু রাখতে সহায়তা করছে, আমি বিশ্বাস করি এটা সচেতনতার সাথে এবং সঠিকভাবে কাজ করবে।

যাই হোক, প্রশাসনের অন্য পদক্ষেপ গুলোকে সমর্থন করা যায় না।

প্রশাসন পাকিস্তানে অস্ত্র চালান বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে, এবং এটা স্পষ্টতই আমেরিকান জনগণকে এর পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রতারিত করতে চাচ্ছে। ১২ই এপ্রিলে একটি রাজ্যের দপ্তরের মুখপাত্র দাবি করেন যে, সেখানে পাকিস্তানে সামরিক সহায়তার উপর “১৯৬৫ সাল থেকে একটি নিষেধাজ্ঞা ছিল” এবং ১৫ এপ্রিল বিভাগের মুখপাত্রের একটি অনুবর্তী বিবৃতিতে বলা হয়ঃ

সংক্ষেপে বলতে গেলে, এই সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান সরকারের কাছে কোন অস্ত্র সরবরাহ করা হয় নাই, এবং বিলির বিষয়টি উন্নয়নের আলোকে পর্যালোচনা করা হবে।

২৩শে এপ্রিল, রাজ্যের সহকারী সচিব আবশির সিনেট কূটনৈতিক কমিটির চেয়ারম্যান, সিনেটর ফুলব্রাইটকে লেখেন এবং বলেনঃ

আমাদেরকে প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছিল যে, ২৫শে মার্চ পুর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান সরকার বা এর কোনো প্রতিনিধিকে কোন সামরিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়নি এবং এখন সরবরাহের জন্য কিছু নেই।

৬ই মে, সহকারী সচিব আবশির আবারও সিনেট কূটনৈতিক কমিটির চেয়ারম্যানকে এই দাবি করে লিখেনঃ

যেমনটা আপনারা জানেন, আমরা ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের সুত্র ধরে পাকিস্তান ও ভারতে সকল সামরিক সহায়তা বাতিল করেছি। তখন থেকে আমরা এই দুই রাষ্ট্রের কোন রাষ্ট্রেই কোনো অস্ত্র সরবরাহ করিনি। ১৯৬৫ সাল থেকে আমরা সামরিক সহায়তার শুধুমাত্র একটি বিষয় পুনঃবহাল করেছি আর তা হল সামরিক প্রশিক্ষনের একটি পরিমিত কার্যক্রম।

সামরিক সরবরাহ সম্পর্কে, ১৫ই এপ্রিল দপ্তরের মুখপাত্র যেমনটা ঘোষনা করেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ আমাদের জানিয়েছে যে, সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে কোন খুচরা যন্ত্রাংশ বা গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়নি এবং সরবরাহের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

তা সত্ত্বেও যে সময় রাজ্য দপ্তর দাবি করছিল যে, পাকিস্তানে কোন অস্ত্র পাঠানো হয়নি ঠিক সেই সময়ই পশ্চিম পাকিস্তান সরকারকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল।

এবং এমনকি এটাও এখন জানা গিয়েছে যে ভবিষ্যতে আরো চালান আসবে, ধারণা করা হচ্ছে কারন যে অস্ত্র গুলো পাঠানো হচ্ছে সেগুলোর চুক্তি ২৫শে মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই করা হয়েছিল।

সুতরাং রাজ্য বিভাগ যখন পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক সহায়তার কথা অস্বীকার করছিলেন তখন অস্ত্র গুলো পথেই ছিল।

আবারো প্রতিহিংসা এবং সহিংসতাকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সহায়তা পাঠানো হল। আবারো রাজনৈতিক সুযোগ নেওয়া-এবং আমি ধরে নিচ্ছি যে এটাই হল সেটা যা প্রশাসনকে উৎসাহিত করছে, যেখানে স্পষ্টতই মনুষত্ব্য সেটা পারছেনা, এর কার্যক্রমকে বৈধতা দেওয়া-নীতি নিয়ন্ত্রনের ভিত্তি।

এই চালান অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ২৫শে মার্চের পুর্বের কোন তারিখের কোন কাগজীয় চুক্তি এই অস্ত্র সরবরাহকে বৈধতা দিতে পারে না, যার অনেক গুলোই নিঃসন্দেহে পুর্ব পাকিস্তানে সহিংসতা চালু রাখতে ব্যবহার করা হবে।

এই পর্যন্ত পৌছাতে আমি যুগ্ম রেজুল্যিউশন ৭৬৫ এর সংশ্লিষ্ট সভায় যোগ দেই, যা পাকিস্তানে “সকল সামরিক সহায়তা এবং সকল সামরিক যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রের বিক্রয় ও সরবরাহকে” স্থগিত করে, এমনকি ৩৬৫ দিনের জন্য “ইতমধ্যে অনুমদিত বিক্রয়সহ সকল সামরিক বিক্রয়ের লাইসেন্স ” বাতিল করে “যতক্ষন পর্যন্ত না রাষ্ট্রপতি নির্ধারন করেন যে, এই ধরনের সহায়তা, বিক্রয় অথবা সরবরাহ অগ্রাহ্যকর জাতীয় স্বার্থের জন্য প্রয়োজন এবং কংগ্রেসও সেই রিপোর্ট দেয়। এই বিল গুলো দ্রুত পরিষদ করা উচিত।

আমি এটা দেখে আনন্দিত যে, ১৯৭১ এর বৈদেশিক সহায়তা আইন, এইচ. আর. ৯৯১০, বস্তুত পাকিস্তানে সহায়তাকে স্থগিত করে। এটি কূটনৈতিক কমিটি পরিষদের একটি অতি গুরুত্বপুর্ণ পদক্ষেপ। আমি শুধু এটাই আশা করব যে, রসিদের ভাষা আরও শক্তিশালী হবে যেহেতু এটার এখনকার ভাষা “কার্যকর সীমা পর্যন্ত” পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের দেওয়া তাদের গৃহে ফিরে যাওয়ার এবং তাদের জমি ও সম্পদ ফিরে পাবার অনুমতির স্থগিত আদেশকে রদ করে। যাই হোক এই স্থগিত আদেশের পরেও এই বিধান এখনো কংগ্রেসকে সেটা করার সুবর্ণ সু্যোগ দেবে যা প্রশাসন করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

আমি আরো উল্লেখ করব যে, ১৯৭১ এর বৈদেশিক সাহায্য আইন, এইচ. আর. ৯৯১০, পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীসের জন্য ১০ কোটি টাকার ত্রানের অনুমতি দেন এবং এটা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। অন্য পদক্ষেপ গুলোও অবশ্যই নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবশ্যই স্পষ্টভাবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গৃহীত এই পদক্ষেপের নিন্দা জানাতে হবে। এটাকে অবশ্যই এই বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বাতিলের আমাদের অসমর্থনকে স্পষ্টভাবে উত্থাপন করতে হবে। এটার জাতিসংঘের একটি বড় ত্রান প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত ও সহায়তা করা উচিত।

১৯৭১ এর ২৪শে জুলাই ওয়াশিংটন পোস্টের সংকলনে লী লিসজি এর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, “পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সাহায্য ভীত বাঙ্গালীদের হতভম্ব করেছে” একজন বাঙ্গালী থেকে বিবৃত এই উদ্ধৃতি দিয়ে

গণতন্ত্রের আলিঙ্গন……………………… আমাদের বিপক্ষে।

সব থেকে দুঃখের যে, প্রশাসন, জনগণের অবস্থার যে অনুমান করেছিল তা কোন ত্রুটিপুর্ণ মুল্যায়ন নয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বর্তমান অবস্থা বাংলাদেশের জনগণের মুখে অনিশ্চয়তার ভয়। এটা পরিবর্তন হতেই হবে।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!