You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.28 | বাংলাদেশের পরিস্থিতিঃ সিনেটর ফুলব্রাইটের ভাষণ | সিনেটের কার্যবিবরণী - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের পরিস্থিতিঃ সিনেটর ফুলব্রাইটের ভাষণ সিনেটের কার্যবিবরণী ২৮ জুলাই, ১৯৭১

এস১২৩৮১
কংগ্রেশনাল রেকর্ড – সিনেট
পূর্ব পাকিস্তান

জনাব ফুলব্রাইট. পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমূহের ভয়ানক পুনরাবৃত্তি শুধুমাত্র গুরুতর অপব্যবহারই চিহ্নিত করে না যার সাথে মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা সম্পৃক্ত। এটি পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং আপাতদৃষ্টিতে প্রেক্ষাপট নির্বিশেষে স্থিতাবস্থা বজায়ের সমর্থনে অনিবার্য প্রতিক্রিয়ার সাথে মার্কিন নীতির অসংবেদনশীলতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
মার্কিন সামরিক সহায়তা ছিল কমিউনিজমের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় পাকিস্তানকে সজ্জিত করা। পরিবর্তে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে, এবং পরবর্তীতে গণতন্ত্রের দিকে ধাবমান পাকিস্তানের নিজের দুর্বল পদক্ষেপকে দমন করতে।
মার্কিন সহায়তার এই স্বেচ্ছাচারিতা সত্ত্বেও, আমরা বিস্মিত যে, সামরিক পণ্যের চালান এখনো চলমান, দৃশ্যত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপর ভ্রান্ত প্রভাব বা “লিভারেজের” কারনে। এই বেদনা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে কারন প্রশাসন ফরেন রিলেশনস কমিটিকে আশ্বস্ত করেছে যে ২৫ মার্চ থেকে কোন সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানে সজ্জিত হয়নি এবং তা সরবরাহের জন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এটি বেসরকারী নির্বাহী পররাষ্ট্রনীতি সিদ্ধান্তের আরেকটি বেদনাদায়ক বিষয় যে, এই সিদ্ধান্ত কোন কারণ ছাড়াই কোনরূপ প্রকাশ্য আলোচনা ও বিতর্ক থেকে কঠোর বিচ্ছিন্নতায় গৃহীত হয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তানের মূল্যে পশ্চিম পাকিস্তানে অসম উন্নয়নের ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক সহায়তার অপব্যবহার করেছে, যা পক্ষান্তরে সমস্যাসমূহ বৃদ্ধি করেছে যেটি এখন পরিষ্কার ভাবে উম্মোচিত। উদীয়মান প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারকে ধ্বংস এবং নির্মম সামরিক অভিযানের মুখে, যা প্রধানত হিন্দু ও বুদ্ধিজীবী ও বাঙালী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছে, শত হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তথাপিও আমরা পাকিস্তান সরকারকে অর্থনৈতিক ও সামরিক ভাবে সমর্থন করি। আরও সাহায্যের বিরুদ্ধে বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশ ও বিশ্বের অন্যান্য দাতা দেশ গুলোর বিপরীতমুখী মনোভাবের মুখে এই সমর্থন চলমান রয়েছে।
কথিত আছে যে, আমরা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করব না-এটি একটি নীতি, যা ১৯৬৪ সালে আরও ভালভাবে বোঝা উচিত ছিল, বা ১৯৪৯ সাল থেকে চায়নাতে ঐ বিষয়ের জন্য যে আর্থিক সহায়তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা আমাদের উচিত হবে না। তবে, গৃহযুদ্ধে জড়িত একটি সরকারকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে সমর্থন করা অপর পক্ষকে সাহায্য করার ন্যয় হস্তক্ষেপের শামিল। এটি দেখতে হতাশাজনক যে, ইসলামাবাদে সাহায্য অব্যহত রাখার মাধ্যমে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও সামরিক একনায়কতন্ত্রের অনুগমন নীতিসমূহের সাথে নিজেদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা খুজে পেল, যা ঐ সকল বিষয়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থী যেসব ক্ষেত্রে আমরা বলে থাকি যে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দুর্ভাগ্যবশত আত্মবিরোধিতার এই সামাজিক চাপের প্রভাব পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের দ্বারা উদ্ভূত শরণার্থীদের ভারত অভিমুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে যেখানে তারা একটি গভীর সমস্যা ধারণ করে, এবং, অবশ্যই এই পরামর্শ দেয়া অতিরঞ্জন নয় যে এটি বিশ্ব শান্তির জন্য একটি সম্ভাব্য বিপদ, ইতিপূর্বে যেরূপ ২০ বছর পূর্বে ফিলিস্তিনে এর উদ্ভব হয়েছিল। এই অসহায় বাঙ্গালী শরণার্থীরা ভারতের একটি এলাকার মধ্যে নিষ্পেষিত যেখানে বিপ্লব ও অস্থায়িত্ব ইতিমধ্যেই ব্যপকভাবে বিদ্যমান এবং দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য সমস্যা খুবই প্রকট। ভারত কোনক্রমেই শরণার্থীদের পণ্যদ্রব্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান, এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যপক চাহিদার এই বোঝা বহন করতে পারবে না। এই পরিস্থিতি সহজেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দ্রুততর বিপ্লবী কার্যকলাপকে পুনরায় ত্বরান্বিত করতে পারে যা ভারতের নিজেদের ভবিষ্যতের প্রতি বা আরেকটি ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধ সংঘটনের হুমকি বহন করে।
এ অবস্থায় প্রশাসন বলছে যে পূর্ব পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য এটি গোপনে পাকিস্তানীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। তবে, পাকিস্তান একনায়কত্বের ভর্তুকি অব্যহত রয়েছে। এ আই ডি জুনের ১০ তারিখে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য বিতরণের জন্য জাহাজ ভাড়া করতে পাকিস্তানকে ১ মিলিয়ন দিচ্ছে, নিঃসন্দেহে এটি একটি উপযুক্ত উদ্দেশ্য। তবে, বিশ্লেষণ সাপেক্ষে সেখানে কিছু গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। ইতিপূর্বে পাকিস্তানকে ঘূর্ণিঝড় ত্রাণের জন্য অনুরূপ জাহাজ সরবরাহ করা হয়েছিল এবং এরূপ প্রকাশিত হয়েছে যে, সে এগুলো সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, নতুন জলযানের জন্য এই ১ মিলিয়ন কি সামরিক লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের বিদ্যমান জাহাজ ব্যবহার করার অনুমতি প্রদানের একটি উপায় নয়?
তাছাড়া আমাদের জন্য কি নিশ্চয়তা রয়েছে যে, আমরা এখন যেই ১ মিলিয়ন দিচ্ছি তা দিয়ে পাকিস্তান সামরিক উদ্দেশ্য সাধনে জাহাজ ভাড়া করবে না?
পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি অসহনীয়, তেমনি পররাষ্ট্রনীতি যা বাস্তবে সেখানে স্থিতাবস্থা জোরদার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বরং সীমিত হলেও সমুদয় প্রভাব ব্যবহার করা উচিত যাতে তারা একে একটি সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারে। এ প্রসঙ্গে, সামরিক পণ্য, খুচরা যন্ত্রাংশ সহ, পাকিস্তানে না পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত এবং গত হেমন্তে প্রস্তাবিত এফ-১০৪, বি-৫৭, টহল বিমান এবং সাঁজোয়া কর্মীবাহনের প্রস্তাব অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানীরা উভয়েই একটি সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমাধানে একমত না হওয়া পর্যন্ত এবং ভারতে অবস্থিত শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত অর্থনৈতিক সহায়তা স্থগিত করা উচিত। প্রশাসন যদি তার নিষ্ফল স্থিতাবস্থা পরিত্যাগ না করে, তাহলে সে উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে আমি কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ সমর্থন করব।