শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
অস্ত্রের জোরে ক্ষমতাসীন সরকারকে মদদ যোগানোর বিলাসিতা আমাদের সাজেনা সিনেটর ম্যাকগভার্ন | সিনেটের কার্যবিবরণী | ২৩ জুলাই, ১৯৭১ |
কংগ্রেশনাল রেকর্ড – সিনেট
পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি
জনাব ম্যাকগভার্ন. জনাব প্রেসিডেন্ট, পূর্ব পাকিস্তানের রক্তক্ষয় ও দমনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের ওয়াকিবহাল হওয়া উচিত। গত বছরের ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত এই ভূমি এখন আনুষ্ঠানিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। কেবল বিশ্বব্যাংক মিশনের রিপোর্ট পড়লেই যে কেউ বাঙালীদের দুর্ভোগের সাথে একাত্ম হবেন, উদাহরণ স্বরূপ, যশোর শহরে, যেখানে কয়েক মাস পূর্বে ৮০,০০০ জন বসবাস করতেন, সেখানে এখন মাত্র ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ জন বসবাস করেন; ২০,০০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অবশিষ্টরা গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে গেছেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমরা যেমন শিখেছি, যাই হোক, এই জাতির উচিত আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গণ শত্রুতার সময়ে আনুষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। তবে, নিরপেক্ষতা মানে এই নয় যে, আমরা আরও সাহায্যের চালানের সাথে সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যায্য নীতি সমর্থন করব।
এই মুহূর্তে, পাকিস্তানের জন্য আমেরিকার সাহায্য, যা পশ্চিম পাকিস্তানে যায়, তা অব্যহত রয়েছে। এই মাসে পাকিস্তানী জাহাজ পদ্মা ২ মিলিয়ন আমেরিকান সামরিক সরঞ্জাম করাচিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই জাতির এরূপ কোন সরকারকে ভর্তুকি প্রদানের বিলাসিতা করার সামর্থ্য নেই, যারা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে দমন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে।
উপরন্তু, বিশ্বব্যাংক মিশনের এই মাসে পূর্বে প্রদত্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এমন আকার ধারণ করেছে যে, এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহায়তা অকার্যকর হতে বাধ্য। এই জাতির উচিত ব্যাংকের নেতৃত্ব অনুসরণ করা এবং পরিস্থিতির উত্তরণ না ঘটা পর্যন্ত সাহায্য প্রদান বন্ধ রাখা। গৃহযুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা আর্থিক সাহায্য যা পশ্চিমে ধাবিত হবে তার দ্বারা পূরণ করা যাবে না।
যাই হোক, এই অঞ্চলের দুটি জরুরী পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক মনোযোগ আকর্ষণ করে। বর্তমান বিশৃঙ্খল রাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তান যেখানে অধিকাংশ জনগণ গ্রামাঞ্চলে আত্মগোপন করে রয়েছে এবং ৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ দেশ * ছেড়ে পালিয়ে গেছে, সেখানে দুর্ভিক্ষের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ফসল অযত্নে পরে রয়েছে এবং জাতির বাণিজ্যিক জীবন বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আর্থিক সহায়তা অব্যহত রাখা নয়, বরং বাঙালিদের জন্য রেড ক্রস, বা অন্য কোন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সরঞ্জাম, শস্য এবং অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করাই হবে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত আমেরিকান পদক্ষেপ। এটি নিশ্চয়তা প্রদান করবে যে, আমেরিকান সহায়তা শুধুমাত্র পাকিস্তানের গোড়ালি নিষ্পেষণে যারা নিষ্পেষিত হচ্ছে তাঁদের জন্য অনুমোদন করা হবে এবং আশা করা যায় যে, বাঙালিরা অন্তত একটি দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ পাবে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের শরণার্থী পরিস্থিতির ব্যপারেও পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। উদ্বাস্তুদের এই সুবৃহৎ ঢলের কারনে নিশ্চিতভাবে ভারতের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাসমান বাঙালীদের সহায়তায় ভারতের এই মানবিক কার্যক্রমের প্রতি আমাদের সমর্থন প্রসারিত করা উচিত। এজাতীয় অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আমাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে, তবে নিরপেক্ষতা নিপীড়ন ও শোষণে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বাধা হতে পারে না। ভারতীয়দের জন্য খাবার ও চিকিৎসা চালান এবং বরাদ্দকৃত শরণার্থী ত্রাণ তহবিল অনুমোদন করা উচিত যাতে তারা যেই গভীর সংকটের মুখোমুখি তা মোকাবেলা করতে পারে।