You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
অস্ত্রের চালান পাঠানো একটি মারাত্মক ভুলঃ সিনেটর স্যাক্সবীর বক্তৃতা সিনেটের কার্যবিবরণী ১২ জুলাই, ১৯৭১

জুলাই ১২, এস ১০৭২৭
১৯৭১ সিদ্ধান্ত বিবরণী-সিনেট
পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতির বিপর্যয়
মি স্যাক্সবে। পূর্ব পাকিস্তানের ক্রমাবনতির দিকে যাওয়া ঘটনাবলীর সাম্প্রতিক উত্তরণের প্রতি প্রেসিডেন্ট মহোদয় সিনেটরদের মনোযোগ আহবান করেছেন।
গত শনিবার ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্ব ব্যাংক কারগিল রিপোর্ট বিতরণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, কারণ প্রতিবেদনটিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার শাসন ব্যবস্থার প্রতি কটাক্ষ করা হয়েছে। রিপোর্টটটিতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আছে বলে বলা হয়েছে:
ইয়াহিয়ার পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর চাপিয়ে দেয়া ত্রাসের রাজত্ব এখন পূর্ব পাকিস্তানে বিরাজ করছে; দেশটির পূর্বাংশের প্রান্তিক জনজীবন ছারখার হয়ে গেছে এবং এর অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গেছে; ইয়াহিয়ার শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় গেরিলা প্রতিরোধ অব্যাহত আছে; সেখানে ব্যাপক খাদ্য সংকটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে এবং ইয়াহিয়ার প্রশাসন বিশ্ব জনমত ও পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে।
ওয়াশিংটন পোস্টে রয়টার্স বার্তা সংস্থা এবং ওয়াশিংটন স্টার দুটি পত্রিকাই গত রবিবার তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে কারগিল রিপোর্ট আটকে রাখার নিষ্ফল চেষ্টার পর অবশেষে বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবেদনটি বিতরণ করেছে। প্রতিবেদনটি আমি দ্বি-জাতি পাকিস্তান এইড কন্সোরটিয়ামে প্রেরণের সুপারিশ করছি এবং বিশ্বব্যাংককে তার প্রতিবেদনের অনুলিপিগুলো কংগ্রেসের কাছে দিতে বলার জন্য অনুরোধ করছি।
২৫ শে মার্চ রাতে সামরিক হস্তক্ষেপের পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনাবলীর পর থেকে পাকিস্তানের সাথে আমাদের সরকার যে অব্যাহত সহযোগিতা রেখে চলেছে তার আলোকে এই প্রতিবেদনটি প্রয়োজনীয়। এছাড়াও, সিনেট এপ্রোপ্রিয়েশন কমিটির বৈদেশিক কার্যক্রম উপকমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতার হার দশগুণ বৃদ্ধি করতে অর্থাৎ ৫০০,০০০ মার্কিন ডলার থেকে ৫,৫০০,০০০ মার্কিন ডলার করার জন্য আমাদের প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছে। এটা বৈদেশিক সামরিক বিক্রয়ের জন্য মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিক্রয় মঞ্জুরী এবং পুলিশী প্রশিক্ষণের জন্য ২৫০,০০০ মার্কিন ডলার মঞ্জুরী সীমা লঙ্ঘন করেছে।
গত সপ্তাহে আইডাহো থেকে আগত সিনেটর (মি. চার্চ) এক বাগ্মিতাপূর্ণ বক্তৃতায় বলেছেন পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তরের জন্য তখনও প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম তাদের সরবরাহ লাইনে প্রস্তুত রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে এই বক্তৃতাটি নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সরবরাহ লাইনে সামরিক সহায়তা থাকার প্রেক্ষাপট এবং সেইসাথে ১৯৭২ অর্থ বছরে মঞ্জুরীর জন্য অনুরোধ জানানোর আলোকে আমি মনে করি বিশ্ব ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত কারগিল প্রতিবেদনটি কংগ্রেসের জন্য আমাদের পরবর্তী আলোচনা সিদ্ধান্ত ঠিক করতে অনেক বড় সহায়ক হবে।
মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আমি বিশ্বব্যাংক এর প্রতিবেদন এর একটি বিশেষ বিষয়ের উপর জোর দিব- সেটা হলো দুর্ভিক্ষাবস্থা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে আমার কাছে প্রতিবেদন এসেছে যে, সেখানে ০.৫-৩ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য ঘাটতি দেখা দিবে। উপরন্তু যদি খাদ্য হস্তান্তর করা হতো তাহলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া চাইলেও তা বিতরণ করতে পারতেন না কারণ খাদ্য বিতরণের জন্য কোন সক্রিয় সংস্থা নেই।
মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আমি আশা করি হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে তার বর্তমান পথ থেকে সরিয়ে আনতে কিংবা বিকল্প উপায় হিসেবে আমেরিকাকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ত্রাসের রাজত্বের প্রতি অব্যাহত সমর্থন দেয়ার নীতি থেকে সরে আসার জন্য সহযোগিতা করতে সমর্থ হবেন। মি. প্রেসিডেন্ট, ইয়াহিয়া কোন নীতিতে চলছেন তা একবার দেখা যাক, এটা হলো এডলফ হিটলারের পর এ যাবত কালের সবচেয়ে নৃশংস পরিকল্পিত গণহত্যা।
এ্যান্থনী লুইস আজকের নিউ ইয়র্ক টাইমসে এর একটি বিভৎস তুলনা তুলে ধরে বলেছেন:
এই সময়ে এখানে কি ঘটছে তা কেউ অবহিত হওয়ার পরও যদি বুঝতে ব্যার্থ হন তবে তার জন্য কোন ক্ষমা থাকতে পারে না, সমসাময়িক চিত্র কল্পনায় উঠে আসবে খুব সামান্যই। এরপরও কিছু কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি তা দেখেন না। তবে আমেরিকার স্বার্থ বাস্তববোধকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী অস্পৃশ্য সরকারগুলোকে ভালো আচরণের পথে ফিরিয়ে আনতে আমেরিকার সক্ষমতার বিষয়ে আমরা আর বেশি ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে পারবো না, তবে সেখানে এমন একটি জায়গা আসে যেখানে স্ব-শ্রদ্ধাবোধ আমাদেরকে তাদের সহায়তা বন্ধ করার তাগিদ দেয়।
ক্রমাগত অস্ত্র সরবরাহ করে যাওয়ার আমাদের নীতিটা ঠিক নয়। এটা একটা ভয়ংকর ভুল। আমাদের অবস্থাটা এমন যে মনে হচ্ছে আমরা ভারত এবং পাকিস্তান উভয়কেই শান্ত করার চেষ্টা করছি যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পক্ষ নিয়েছে আর চীন পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। ঠিক যেমনটি ফ্লোরা লুইস বলেছিলেন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায়:
এটা বিচারীক ব্যর্থতা, শুধুমাত্র ভারত আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রেই নয়। এবং এটাকে অনেক বেশি মনে হচ্ছে যে অতীতের দক্ষিণ ভিয়েতনামের মত ভেঙে পড়ার পরিবর্তে বরং এর অবসানের সাথে সাথে খুব বেশি কৌশলগত অঞ্চলগুলোতে সমাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ছড়িয়ে পড়বে। একটাই কেবল মহা কৌশলের কারনে জাতীয় স্বার্থ ও জরুরী মানবিক প্রয়োজনগুলো একই পাশে আছে। কেন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধাণ মিত্রদের সাথে নিয়ে এর পাশে নেই?
আমি বিশ্বাস করি সবচাইতে জটিল সমস্যাটি মীমাংসার জন্য পাকিস্তানি পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও প্রজাতান্ত্রিক চায়নাকে একটি উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ দিতে পারে আর এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে তাদের অভিন্ন চেষ্টাকে আরও জোরালো করতে পারে। এই সমস্যাটি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইচ্ছা করলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকতে পারেন।
গত বৃহস্পতিবার, ১ লা জুলাই, কানাডা পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি অস্ত্রের চালান আটকে দেয়। সেখানকার কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেছেন তারা পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে পাঠানোর জন্য এফ- ৮৬ সার্বি জেট বিমানের ৪৬ ক্রাটিজ যন্ত্রাংশ লোডিংয়ের অর্ডার আটকে দিয়েছেন, যেগুলো তখনও যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যায় নি, এমনকি আমরা যদি লাইসেন্সসহ বা অন্য কোন অস্ত্র মাধ্যমেও পাঠাতাম তাহলেও এর ব্যত্যয় ঘটতো না, আমরা কেন তাদের চালান আটকাতে পারি না? আইনে এমন কোন বিধি নাই যেখানে বলা আছে যে আমাদেরকে এই কাজ করতেই হবে। উদাহরণ স্বরুপ, আমরা আমাদের সরকারি নীতি সকল চুক্তি আইনের উর্ধে চলে গেছে একথা মেনে নিয়ে কানাডার নেতৃত্বকে অনুসরণ করতে পারতাম। কোন লাইসেন্স যদি সরকার নীতির বিরুদ্ধে যায় তাহলে তা সব সময়ই প্রত্যাহার করে নিতে হয়, উদাহরণ – আইন পেশার লাইসেন্স ও চিকিৎসা পেশার লাইসেন্স।
আজকে কেউ কেউ আমাদের বলেছেন যে, আইনের শাসন পাকিস্তানে ফিরে গেছে। যদি তাই হয়, তাহলে কেন গত ৩০ শে জুন,বুধবার পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমস’র প্রতিনিধি সিডনী এইচ. শ্যানবার্গকে বহিষ্কার করা হলো? যদি আইনের শাসন ফিরে গিয়েই থাকে, তাহলে কেন একদল পাকিস্তানি সেনা বলিয়াদীর হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হানা দিয়ে নির্বিচারে লোকজনকে গুলি করলো, কেন বাড়িঘর গুড়িয়ে দিল আর গ্রাম হাটবাজার সব জ্বালিয়ে দিল?
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়, নৈতিক ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। বৈদেশিক সহায়তা আইনে স্যাক্সবি-চার্চ আইনের ১৫৯ থেকে এস. ১৬৫৭ নং সংশোধনীর প্রতি আমি সিনেটরদের মনোযোগ আহবান করছি। এটা দাখিল করা হয় ১০ জুন, ১৯৭১ ইং তারিখে আর বর্তমানে এটা বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির কাছে বিবেচনাধীন রয়েছে। আমাদের সংশোধনীর জন্য আমরা ২৯ জন কো-স্পন্সর পেয়েছি । ১৫৯ থেকে এস. ১৬৫৭ নং সংশোধনীর কোস্পন্সর হতে নিম্নলিখিত সিনেটরদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আমি সকলের ঐক্যবদ্ধ সম্মতি কামনা করছি : স্কট, টান্নি, কেস, পাস্টর, বেনেট, পেল, বেলমন, হার্ট, রথ, বায়হ, বগস, চ্যান্সটন, ব্রুক, মেটক্যালফ, গার্নি, ম্যাকগভার্ন, ইগলটন,স্টিভেনসন, মস, মন্ডেল, হিউজেস, হার্টকী, মাস্কি, প্রক্সমায়র, হামফ্রে, ম্যাগনুসন, উইলিয়ামস, রান্ডলফ এবং রিবিকফ।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!