You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র    তারিখ
বিভিন্ন সেক্টরে চিকিৎসা তৎপরতা বাংলাদেশ একাডেমীর দলিলপত্র ১৯৭১

 

সাক্ষাৎকারঃ কর্নেল মোহাম্মাদ শামসুল হক
১৭-৯-১৯৭৩

৩রা মে আমি ঢাকা ত্যাগ করি এবং দেশের বাড়িতে বেড়াতে যাই (মতলব থাকা কুমিল্লা জেলা)। ওখানে আমার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের নিয়ে সংক্ষিপ্ত রাইফেল ট্রেনিংয়ের ব্যাবস্থা করি। ওখান থেকে আমি লোক পাঠালাম আগরতলায়। মেসেঞ্জার এসে খবর দিল যে, সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের খুব প্রয়োজন।

আমি আমার পরিবারেকে গ্রামে রেখে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আগরতলার উদ্দেশ্যে রওনা হই। আগরতলায় পৌঁছে বাংলাদেশের অফিস কৃষ্ণনগরে আমার উপস্থিতি জানাই। ঐদিন সন্ধ্যার মেজর জিয়াউর রহমানের সাথে আমার দেখা হয়। ঐ দিন রাতে জিয়াউর রহমানের সাথে ১নং সেক্টরের হরিনাতে যাই এবং ১ নং সেক্টরের মেদিকেল অফিসারের দায়িত্ব গ্রহণ করি। ১নং সেক্টরের বিভিন্ন সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করি। কিছু ছেলেদের ফার্স্ট এইড ট্রেনিং দেই। তারপর আমাকে আগরতলা নিয়ে আসা হয় এবং ইস্টার্ন সেক্তরের মেডিকেল সার্ভিসেস এর সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। আমার দায়িত্ব ছিল ১০ টি সেক্টরে এবং তিনটি ব্রিগেডে মেডিকেল ওফিসার, নার্সিং ও ঔষুধপত্র প্রভৃতি পাঠানো। ভারতের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে ঔষধপত্র পেতাম।

আমাদের বিশ্রামগঞ্জে একটি বাংলাদেশ হাসপাতাল ছিল। এখানে প্রায় ২৮০ টি বেড ছিল। বাকি সমস্ত সেক্টরে এবং সাব সেক্তরে অগ্রবর্তী ড্রেসিং ষ্টেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সকল প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল আহত এবং অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা করে তাদের সেনাবাহিনীর ফিল্ড হাসপাতাল অথবা বেসামরিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া। এ ব্যাপারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ড হাসপাতাল এবং বেসামরিক হাসপাতালগুলো আমাদের পুরোপুরি সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশ ফোর্সের হাসপাতাল যেটা বিশ্রামগঞ্জে ছিল, সেই হসপিটাল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে লন্ডনের বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন ঔষধপত্র, যন্ত্রপাতি, টাকা-পয়সা, এবং ডাক্তার দিয়েও সাহায্য করেছেন। ডাক্তার জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ডাক্তার মোমেনের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ডিসেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়ায় আমাদের মনোবল বেড়ে গেলো। আমরা মুঝতে পারলাম যে, কিছুদিনের ভিতর আমাদের বাংলাদেশের ভিতরে যেতে হবে। তাই প্রত্যেক সেক্টরে নির্দেশ দিয়ে দিলাম মেডিকেল অফিসার এবং স্টাফদের তারা যেন ঔষুধপত্র, যন্ত্রপাতি, সবকিছু নিয়ে তারা যেন নিকটবর্তী সি-এম-এইচ এ রিপোর্ট করে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পনের পূর্বে বাংলাদেশের সমস্ত সি-এম-এইচগুলোর (ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর) তোষক, কম্বল, প্রভৃতি সব পুড়িয়ে দিয়ে যায়।

বাংলাদেশে আসার পর বিভিন্ন এলাকার পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ পরিত্যাক্ত ঔষুধপত্র ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী আমরা সংগ্রহ করি।

বিভিন্ন সেক্টরে সামরিক বাহিনীর মোট দশজন ডাক্তার ছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের যে সমস্ত ছাত্র ভারতে গিয়েছিল তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন সেক্টরে এবং সাবসেক্টরে মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ করা হয়। প্রত্যেকটা সেক্টরে অন্ততপক্ষে যদি একজন করে সামরিক বাহিনিন ডাক্তার থাকত, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা আরো সুষ্ঠুভাবে হত।

সাক্ষরঃ মোহাম্মাদ শামসুল হক
কর্নেল
১৭-৯-৭৩

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!