You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
প্রতিনিধি পরিষদ পররাষ্ট্রের উপকমিটি কর্তৃক গৃহীত শুনানিঃ রবার্ট ডরফম্যান-এর বিবৃতি প্রতিনিধি পরিষদ পররাষ্ট্র উপকমিটির রিপোর্ট ২৫ মে, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট

মঙ্গলবার, ২৫ মে, ১৯৭১
ভারতবর্ষের লোকসভা,
পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি,
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক উপকমিটি।

২২০০ নং কক্ষে দুপুর ৩.২০ ঘটিকায়, রায়বার্ণ অফিস ঘর ভবনে করনেলিয়াস ই.সালাঘের (উপকমিটির সভাপতি) নেতৃত্বে উপকমিটির সদস্যগণ মিলিত হয়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক রবার্ট ডরফম্যান-এর রিপোর্টের বিবৃতি

জনাব ডরফম্যানঃ আমাকে এখানে আসার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমার উদ্বেগ আপনাদের পূর্ববর্তী সাক্ষ্য হতে শোনা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার নিয়ে, কিন্তু এদের ভেতর একটি ঘনিষ্ঠ এবং দুঃখজনক সংযোগ রয়েছে।

সিনেটর কেনেডি এবং অন্যান্যরা ইতিমধ্যে পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় স্থানের লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর থাকা খাওয়ার উপর আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। আমার ব্যক্তিগত সহানুভূতি এবং উদ্বেগ ছাড়া এখানে আর আমার নতুন কোন কিছু যোগ করার নেই। কিন্তু এই লক্ষ লক্ষ মানুষের কষ্ট যন্ত্রণা এখন চলমান গৃহযুদ্ধের একটি বড় কারণ, এবং আমি আমার কয়েকটি মুহূর্ত এই যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা এবং মনোভাবের প্রতি উৎসর্গ করছি।

আমি নিজের পরিচয় দিচ্ছি। আমার নাম রবার্ট ডরফম্যান। আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক, আমেরিকার অর্থনীতি সমিতি পরিষদের সদস্য, ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সাবেক সভাপতি ইত্যাদি। আমার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে, এবং আমার সবরকম প্রাতিষ্ঠানিক প্রশংসাপত্র রয়েছে। আমি গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান সহ অন্যান্য স্বল্প উন্নত দেশসমূহের অর্থনীতি নিয়ে পেশাগতভাবে উদ্বিগ্ন রয়েছি। ১৯৬০ সালে যখন রাষ্ট্রপতি কেনেডি আমাকে প্যানেল সদস্য হিসেবে পাকিস্তান সরকারকে সিন্ধু অববাহিকার গুরুতর সমস্যা নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য নিয়োগ করেছিলেন তখন থেকে আমার আগ্রহের শুরু। আমি নিজেকে বুঝিয়েছি যে, রাষ্ট্রপতি প্যানেল এই এলাকার কৃষি অবস্থার উনয়নে এক বৃহৎ অবদান পালন করেছে। আমরা কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কিছু যুক্তিসম্মত পরিকল্পনা প্রস্তাব করি, যেখানে পরিবেশগত অবক্ষয় রোধ সহ আরও বেশ কিছু চমৎকার কাজ পাকিস্তার ইতিমধ্যে করে ফেলেছে। পরিকল্পনাটি ছিল পরবর্তী কয়েক বছরে মেক্সিকান উচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন গম প্রবর্তন এবং সাথে কিছু প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, তথাকথিত সবুজ বিপ্লবের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন, সে সমাজে নিয়ে আসা হবে যেখানে শুধু হতাশাই ছেয়ে রয়েছে।
.
পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার উপদেষ্টা হিসেবে, হাভারড ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন পরামর্শক হিসেবে এবং বিশ্ব ব্যাংক এ কাজ করে আমি পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগ্রহ ধরে রেখেছি।
যেকোন সন্দেহ দূর করতে আমি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষের ব্যাপারে প্রভাবিত হই। এখানে উল্লেখ করা উচিত যে কার্যত পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্যা এবং উন্নয়নে আমার সম্পূর্ণ সহযোগিতা গুরুত্ব দিবে । যখন আমার নীতিগুলো সমালোচনার সুযোগ থাকে , আমি সবার মধ্যে নিজেকে সমালোচনা করি যে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতির উন্নয়ন পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যাগুলোকে অবহেলিত করে। আমি ও এ নীতিগুলোর একটি পক্ষ ছিলাম, যদিও ছোট পক্ষ। আমার মনোভাব অন্য সবার মতই ছিল।
একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমি শুধু বর্তমান সঙ্কটের অর্থনীতির দিকগুলো নিয়ে বলতে পারি। কিন্তু অর্থনীতির দিকগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ , যা আওয়ামিলিগের ছয় দফা কর্মসূচীতে নির্দেশিত আছে, যার ভিত্তিতে আওয়ামীলীগ ১০-১ এর সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সদ্য নির্বাচনে জয়লাভ করে, যে কর্মসূচীর অর্ধেকই ছিল অর্থনীতি ও রাজস্ব সংস্কার । বর্তমান সঙ্কটের সুত্রপাত, উদ্দেশ্য, সমাধান সবকিছুই অর্থনীতির বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে। আমি অর্থনৈতিক অবস্থাকে আমার প্রথম লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করতে চাই , যার কারনে বিদ্রোহ ঘটছে, তারপর আমি অর্থনীতির সেই বিষয়গুলোকে নির্ধারণ করব যার উপর প্রকৃত ফল নির্ভর করছে। পরের বিষয়গুলো উপসভার বিশেষ বিবেচনার বিষয় , কারণ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তারা আভাস দেয় যে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ও কার্যক্রম এই যুদ্ধের উপর গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবত নিষ্পত্তিমূলক প্রভাব ফেলবে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের দেশের অপরিহার্য কিন্তু অবাঞ্ছিত দায়িত্ব রয়েছে। এর সাথে আমাদের জাতীয় স্বার্থও জরিয়ে আছে বলে আমি মনে করি।
আমি যেসব গুরুতর বিষয় নিয়ে চিন্তিত তা আপনাকে আগে জানাতে চাই, সেসব বিষয় পূর্ব পাকিস্তানের দারিদ্র্য এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আয়ের সমতার সাথে জড়িত। পূর্ব পাকিস্তানের দারিদ্র্য এত ভয়াবহ যে শুনতে হাস্যকর শোনায়। অর্থনীতির দিক থেকে দেখলে পূর্ব পাকিস্তান একটি সাধারন ভুল। প্রায় ৭০ মিলিয়নের বেশি লোক ২২ একর জায়গা এবং খুবই সামান্য প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে লড়াই করে বেচে আছে। প্রতি গৃহস্থ পরিবারের জন্য দেড় একর বরাদ্দ আছে, যা প্রায় গড়ে আমেরিকান ফার্মের ১ শতাংশের অর্ধেক। তার উপর রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা আর খরা।
গত বছর ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ৩০০,০০০ লোক মারা যায়, …/ বন্যা ততটা ভয়ংকর নয়, কিন্তু অর্থনীতির জন্য অনেক ক্ষতিকর। প্রতি বার্ষিক মৌসুমে পূর্ব পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ জমি প্লাবিত হয়, এর ফসল বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যায়। মৌসুম এর মাঝে বেশিরভাগ জমিতে সেচ ছাড়া ফসল ফলানোর মত পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয় না। জমির উৎপাদন এবং আয় আপনারা যা ভাবেন তার থেকেও বর্ণনাতীত কম ভয়াবহ, যেখানে দেশের ৬০ ভাগ লোক কৃষিকাজে নির্ভরশীল। ফলে তাদের বার্ষিক মাথা পিছু আয় ৪৫ ডলারের বেশি না, যা আমাদের প্রত্যাশার অনেক কম।
পশ্চিম পাকিস্তানও দরিদ্র, তাদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৭৫ ডলার, এটিও কম তবে পূর্ব পাকিস্তানের থেকে অন্তত ৬০ ভাগ বেশি।দুই দেশের আয়ের এই ব্যাপক ব্যবধান এবং দারিদ্র্যের মাত্রা পাকিস্তানের দীর্ঘ দিনের সমস্যাগুলোর একটি এবং বর্তমান সমস্যার গুলোর মূল কারন। পাকিস্তানের উল্লেখিত অফিসিয়াল নীতি এই ব্যবধান ধ্বংস করে এবং আয়ে সমতা আনে কিন্তু বাস্তবে এই নীতি পালনের কোন উন্নতি নেই । অন্যদিকে এই পার্থক্য বেড়েই চলছে। গত দশকে প্রতি বছর পশ্চিম পাকিস্তানের মোট জাতীয় আয় ৬ শতাংশ করে বেড়েছে, অথচ পূর্ব পাকিস্তানে যেখানে বেড়েছে প্রতি বছরে মাত্র ৪ শতাংশ, যার বেশিরভাগই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে শেষ হয়েছে।
এরমধ্যে একটি তিক্ত সমস্যা হল, পাকিস্তান তাদের আয়ের ব্যবধান কমানোর অফিসিয়াল নীতি আন্তরিকভাবেই বাস্তবায়ন করছে। পলিসিটা যে সম্পূর্ণ হতাশজনক তা নিয়ে কেউ তর্কে যায় না। দুই পক্ষের তর্ক বিতর্কের অনেক প্রমান ও নমুনা আছে , তাই আমি আমার এই অল্প সম তা সমাধান করতে পারি না। আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে ভাল নির্দেশ হল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিনিয়োগ বণ্টন করা। কারণ জাতীয় বিনিয়োগ সরাসরি সরকার নিয়ন্ত্রন করে এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয় শিল্প অনুমতি ও বৈদেশিক বিনিময় বণ্টন দ্বারা। পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় বিনিয়োগ কখনই পশ্চিম পাকিস্তানের মত বৃহৎ নয়,যদিও ৫৫ ভাগ জনগন পূর্ব পাকিস্তানের। গত ছয় বছরে …। বেসরকারি বিনিয়োগ ও অনেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যা পশ্চিম পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে ৩ গুন বেশি। সবকিছু মিলিয়ে মোট বিনিয়োগের ৬০ ভাগই হয় পশ্চিম পাকিস্তানে যেখানে জনগন রয়েছে ৪৫%। বিনিয়োগের এই বণ্টন আমার কাছে চরম ইঙ্গিত বহন করে, যেখানে দিন দিন সরকারের কার্যাবলী ও কর্মসূচি আয়ের ব্যাবধান কমানোর জন্য ঘোষিত নীতির বাস্তবায়ন করে না। এখানে আরও লক্ষন আছে যা বেশ অসঙ্গত। যে কোন ভাবেই হোক, পূর্ব পাকিস্তানিরা এর ফলে ভেঙ্গে পড়ে, এবং তারা বুঝতে পারে সরকারের এই বিশাল কর্মসূচি পশ্চিম পাকিস্তানের অনুকুলে, যেন তারা অর্থনৈতিক উপনিবেশ। আমাকে বলতে হয় যে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সাথে আছি।
অগ্রিম তথ্য গুলো কমাতে এখানে উল্লেখ করা উচিত , পশ্চিম পাকিস্তানে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে প্রচুর পরিমান ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দাতা গোষ্ঠী প্রকল্প সহায়তার স্বাভাবিক নীতি অনুযায়ি তাদের তহবিল বণ্টনে আগ্রহি হয়েছে, যার বেশিরভাগ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বণ্টনের কথা ছিল। তাই পশ্চিম পাকিস্তান অসামঞ্জ্যপুরন বৈদেশিক সাহায্য গ্রহন করে। আমাদের খুব কমই বলা হত যে কার প্রকল্পে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অবদান রাখতে হবে। পাকিস্তানের মোট দ্বিখন্দিত দেশে এটা খুবই জটিল প্রশ্ন যেখানে দেশের এক অংশের প্রকল্প গুলো অন্য অংশের উন্নয়নে কোন অবদানই রাখে না। এই স্বাভাবিক নীতিমালা অনুসরন করে, আমরা পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষতিপুরনে অবদান রাখি। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি যে অই নীতি টা মারাত্মক ভুল ছিল যা বর্তমান সংকট ও ইতিহাসের জন্য অনেকখানি দায়ী।

আমি আমার ভুমিকায় উল্লেখ করেছি যে আমরা আমাদের এত বড় দায়িত্ব এবং বর্তমান সংগ্রামের পরিণতি এড়িয়ে যেতে পারি না। মূলত এটা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং যুক্তরাষ্ট্র এই সমস্যার মধ্যস্ততা করা থেকে এড়িয়ে যেতে চাইছে, তবুও আমরা আমাদের ভুলশুদ্ধ বুঝতে পারি। সমস্যা হল আমরা পাকিস্তান অর্থনীতির সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে ছিলাম যে আমরা নিরপেক্ষ থাকতে যতই চেষ্টা করি তা সামরিক বাহিনীর ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ফেলবে।
.
সমস্যা হল আমরা পাকিস্তানি অর্থনীতির সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে রয়েছি যে আমরা যতই নিরপক্ষভাবে অবদান রাখতে চেষ্টা করি , তা সামরিক বাহিনীর ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই, আমাকে কিছুদিনের জন্য অর্থনীতি থেকে সামরিক শাসনের বর্তমান অবস্থারদিকে সরে যেতে হবে ।
যুদ্ধ কিছুদিনের জন্য শেষ হয়েছে , পশ্চিম পাকিস্তানের ট্যাঙ্ক, বিমান, কামান, শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈন্যবাহিনী সবকিছু জয় করে নিয়েছে। সৈন্যরা ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বড় শহরগুলোতে অবস্থান করে , এরপর তাদের করনীয় ছিল দেশের অবশিষ্ট জনবহুল স্থান গুলো দখলে। কিন্তু আমরা জানি তা তাদের জন্য কঠিন। তাই ৩০০০ মাইল ব্যাপ্তি জুড়ে তাদের ৫০০০০ এর বেশি সৈন্যবাহিনি প্রয়োজন । তারা ইতোমধ্যেই বেশ অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। গত বছর তাদের বৈদেশিক বিনিময় হার ৩০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৭০ মিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। কোন ব্যয় এবং যুদ্ধের ক্ষয় ক্ষতি ছাড়াই তাদের বার্ষিক বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি ৫০০ মিলিয়নের বেশি। ফলে তাদের বর্তমান সঞ্চিতি বাৎসরিক পরিকল্পনার এক তৃতীয়াংশ বা প্রযাপ্ত কার্যনির্বাহী ব্যালেন্সের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষত এই মুহূর্তে মনে হল পাকিস্তান তাদের এই মাসের বকেয়া দেনা স্থগিত রাখতে তৎপর হয়ে উঠেছে । অর্থাৎ এইভাবে যুদ্ধ কয়েক মাস চলতে থাকলে এবং পর্যাপ্ত আমদানি সম্ভব হলে, বহিরাগতরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ধন সম্পদ এর যোগান দিতে থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্র হবে পাকিস্তানের বৈদেশিক অর্থায়নের মুল নিয়মিত উৎস। মোটকথা , আমাদের IDA ও UNDP র অবদান ছাড়াই আমেরিকার অনুদান এবং ঋণ বাতসরিক প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, যা পাকিস্তানের বানিজ্য ঘাটতির প্রায় অর্ধেক মন্দাভাব দূর করে। তাই মিলিটারি কার্যক্রম চালানো পর্যন্ত আমেরিকার অনুদান এবং ঋনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা পশ্চিম পাকিস্তানের কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
তাই এই বিপদ সংকুল মুহূর্তে আমেরিকার যে দ্বিধা ছিল তা হল – কিভাবে নিরপেক্ষতা অনুসরন করবে, ধারাবাহিক সাহায্য আসতে থাকলে কিভাবে পাকিস্তান সরকারের দমনমূলক চেষ্টায় অপরিহার্য সহায়তা দেয়া হবে, সহায়তা বন্ধ হলে তা নিয়মিত সম্পর্কের বাধা হয়ে দাঁড়াবে যার উপর পাকিস্তান সরকার ভরসা করে থাকবে। যদিও যেকোন পলিসিই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমরা এমন ভাবে জরিয়ে পরেছিলাম, যে আন্তরিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরে আসতে পারছিলাম না। অন্যদিকে আমাদের জাতীয় স্বার্থও জরিয়ে রয়েছে।
যেহেতু পূর্ব পাকিস্তান ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আগত এবং যেখানে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ভারত, পাকিস্তান, মেইনল্যান্ড চায়না এবং বার্মা, যা রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং ক্ষমতার ভারসাম্যর উপর প্রভাব ফেলে। আমাদের জাতীয় স্বার্থ ছিল মূলত দক্ষিন এশিয়ায় শান্তি এবং স্থির অবস্থা বজায় রাখা ,আমি বলিনা এটা উচ্চ মানসিকতা বা মানবিক উদ্দেশ্যের বাইরে। পূর্ব পাকিস্তানের এই দীর্ঘ যুদ্ধ ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের মনোযোগকে ব্যস্ত রাখছে, উভয় দেশকেই দুর্বল করে দিচ্ছে এতে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান এর শক্তি গুলো অন্য খাতে চলে যাচ্ছে । ফলে পুরো উপমহাদেশের স্থিতিশীল অবস্থার পরিনতি এমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে যা অনুমান করাও কঠিন।
দ্বিতীয়ত, সংগ্রাম যতদিন চলতে থাকবে ততই তা অশুভ এবং দুঃখজনক দিকে মোড় নিবে। এই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলন পশ্চিমা শিক্ষা ও পশ্চিমা ধাচের মধ্যবিত্ত শ্রেনির দ্বারা পরিচালিত হয়। এটা কিছু ভাবাদর্শ নিয়ে আংশিক সংগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে, এই জ্বালাময়ী এবং ঘৃণা সঞ্চারক সংগ্রাম কে গনতান্ত্রিক ইচ্ছা নিয়ে নিয়ন্ত্রন করা বেশ কঠিন। এ ধরনের সংগ্রামে নেতৃত্ব এমন চরমপন্থি চক্রের দিকে ঝুকে পড়ে যাদের ঘৃণ্য লোকদের নিযুক্ত করার ব্যাপারে কোন বাধা থাকে না ফলে সংগ্রাম আরো বিপদ্গ্রস্থ হয়। এধরনের দল ইতোমধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানে রয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জাতীয় আওয়ামি পারটির একাংশ, আর পশ্চিম বঙ্গে অবৈধ মাওবাদী দলের সাথে যুক্ত নকশাল। দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত অবস্থায় চলতে থাকলে বিপ্লবের নিয়ন্ত্রন তাদের হাতে যাবে এবং তাহলে বিপদের সম্ভাবনা সিংহভাগ। তখন তুমি নিজেই পূর্ব পাকিস্তানে মাওবাদী বিপ্লব বাস্তবায়নের চিত্র দেখতে পাবে।
তাই যত দ্রুত সম্ভব আমেরিকার প্রবল আগ্রহ পূর্ব পাকিস্তানে শান্তি বজায় রাখা। অতএব আমরা কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারি না এবং তা উচিত ও না। কিন্তু আমরা এর মধ্যেই দেখেছি যে আমরা এমন অবস্থানে আছি যে চাইলেও আমরা ঘটনার প্রভাব এড়িয়ে যেতে পারি না। আমাদের উচিত সামরিক চাপ না দিয়ে আমাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সমঝোতার দিকে যাওয়া। সামরিক শাসনে অর্থায়নে অস্বীকার করে আমরা তা করতে পারি।
আমি বিশ্বাস করি না যে এসব অন্তর্গত যুদ্ধ চালিয়ে অর্থ ও সম্পদের যোগান নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষতা আমাদের বাধ্য করবে, যে অর্থ ও সম্পদ দেশের অর্থনৈতিক দিকে সহায়তা করে এবং বাইরের আগ্রাসন থেকে মুক্ত রাখে। আমাদের পরিস্কার ভাবে নিশ্চিত করতে হবে, আমেরিকার অর্থায়ন যেন অর্থনৈতিক খাত থেকে সামরিক কার্যক্রম খাতে না চলে যায়। এবং সবশেষে প্রতিটা অর্থায়নের সময় আমাদের এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা উচিত যাতে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনাভাবেই যুদ্ধের কাজে ব্যবহার না হয়। এবং আমাদের পূর্ব পাকিস্তানে খাবার এবং চিকিৎসার সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকা উচিত, যেখানে দুর্যোগের কারনে বিপুল পরিমান ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত। এ ধরনের সহায়তা সামরিক আক্রমন থেকে সুরক্ষিত রাখবে।
যেসব লক্ষ্য আমরা অনুধাবন করতে পারছি সেগুলো জোরালো ভাবে সুপারিশ করছি। এসবের পথ বা উপায় নিয়ে ভাবি নাই। এসব বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে সম্ভবত পাকিস্তানের Commodity and Program Aid এবং আংশিক করবে Project Aid .কিন্তু কঠিন বাস্তব হল পাকিস্তানে উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আমরা যে অর্থ বা পন্যই যোগান দেই তা সামরিক কার্যক্রম কাজে লাগতে পারে অন্যথায় তা বিদেশি পণ্য ক্রয়ে কাজে লাগবে। তাই উন্নয়নে সহায়তা দেয়া আসলে পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধেরই অর্থায়ন করা। উন্নয়নে সহায়তা প্রকৃত ভাবে কমে গেলে তা দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা হবে, কিন্তু সহায়তা অব্যাহত থাকলে যতদিন পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে এবং উন্নয়নের দিক জোরদার না হয় ততদিন তা বিফলে যাবে।
আমি বিশ্বাস করি এই পলিসি অনুসরণ করে পাকিস্তান সরকারেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে বাধ্য করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গনতন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে সত্যিকার সমতা নিশ্চিত হবে। এর ফলে পুরো মহাদেশে ও প্রত্যেকের স্বার্থে স্থিরতা আসবে।
আমি সবাইকে আমার মত প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জনাব গালাঘার , ধন্যবাদ , ডঃ ডরফম্যান , চমৎকার বিবৃতি এবং এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ।
পূর্ব পাকিস্তান সরকার এবং জনগনের কাছে কোন ধরনের রাজনৈতিক মীমাংসা গ্রহনযোগ্য বলে আপনি মনে করেন?
.
মি. ডর্ফমেন. আমি মনে করি যে, উভয় প্রতিদ্বন্দ্বী দলের তাদের দৃষ্টিকোণ হতে অসংবর্ধিত কিছু করা, কিন্তু অামার চিন্তা করা উচিত যে, পূর্ব বাঙ্গালীরা যুক্ত পাকিস্তানের যৌক্তিক অংশ হিশেবে থাকার জন্য রাজী হবে, যদি অাওয়ামী লীগের ছয় দফা দাবির অস্তিত্ব তাদের প্রদান করা হয়।

অামি মনে করি পশ্চিম পাকিস্তানে বিরোধ অব্যাহত রাখার চাপ এতোটাই তীব্রতর হবে যে, তারা নিজেদের পুনর্মিলিত করতে প্রায় যেকোনো মিমাংসা করবে যাতে দেশের পূর্ব প্রান্ত ত্যাগ করে যায়। তাদের চিন্তা, তাদের বিচ্ছেদ এড়িয়ে চলতে হবে।

মি. গেলাঘের. অপনি কি মনে করছেন রাজনৈতিক মিমাংসা পাওয়ার জন্য এবং টেকসই জাতি থাকার জন্য পাকিস্তানের উভয় দলের অাগ্রহতেই এমনটা হচ্ছে??

মি. ডর্ফমেন. অামি জানি না কতোদিন পর্যন্ত একটা রাজনৈতিক মিমাংসা টিকে থাকে। যে ঘৃণা বেড়েই চলেছে সেটা বাস্তবিক। দেশগুলো অবশ্যই ভৌগলিক ভাবে, সাংস্কৃতিক ভাবে, জাতিগত ভাবে, এমনকি অাগে ভাষার দিক দিয়েও ব্যাপকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল। এই কারনে মানুষ অনেকদিন যাবৎ ভবিষ্যৎবাণী দিচ্ছিলো যে, অাগে বা পরে এই একতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কতোটা অাবেগপূর্ণ ভাবে, অামি অনুমান করছি কেউই প্রত্যাশা করেনি। কিন্তু অামি মনে করছি অামি ঐ অবস্থাতে তখন সমাপ্ত করার জন্য যুদ্ধ করার চেয়ে বরং তাদের সমঝোতা করার চেষ্টা করা উচিত ছিল এবং এটা নিয়ে কাজ করা উচিত ছিল।

মি. গেলাঘের. অাপনি অাপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার অালোকে এই কাজের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন??

মি. ডর্ফমেন. হ্যাঁ অামি দেখছি, যদিও এটা উভয়দিকে অারও সন্তোষজনক অাদেশের প্রয়োজনবোধ করবে, যতদূর তারা প্রদর্শন করেছে তার তুলনায় এখিনে ব্যক্তিগত প্রভাবের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যদি পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণের অনুমতি দিতে সক্ষম হয় যেটা কিনা পশ্চিমাদের নয় বরং পূর্ব পাকিস্তানের অনুকূলে, এবং যদি অন্যান্য জাতি অনুশোচিত হয়, এবং অামি নিশ্চিত পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে তাদের অতিরিক্ত এলোমেলো অবস্থা নিয়ে অামরা কাজ করছি। অামি নিশ্চিত তারা একসাথে থাকতে পারবে।

অামি অাপনার বিবৃতিতে জেনেছি যে, ” তবুও পূর্ব পাকিস্তানকে খাবার এবং মেডিকেল সহায়তা সরবরাহ করার জন্য অামাদের তৈরি থাকা উচিত।” কিভাবে বন্টন প্রস্তুত করা উচিত বলে অাপনি মনে করেন??

মি. ডর্ফমেন. এখন পূর্ব পাকিস্তানে??

মি. গেলাঘের. অামি বলতে চাইছি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কি উচিত পূর্ব পাকিস্তানে দ্বিপক্ষীয় ভাবে বন্টন করা??

মি. ডর্ফমেন. অামি মনে করি, অামাদের উচিত না। ইউনাইটেড নেশন কর্তৃক তত্ত্বাবধান পরিচালনা করা কিংবা অান্তর্জাতিক রেড ক্রসকে প্রয়োজন হতে পারে।

মি. গেলাঘের. এই কাজের একমাত্র বাস্তব কার্যকর উপায় কি সেটা নয়??

মি. ডর্ফমেন. এই উপায়ে অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতি সংযোজনীয়, ভারতের নিকটবর্তী এলাকায় প্রেরিত সেই ত্রাণ সরবরাহ সীমান্ত জুড়ে অবাঞ্ছিত প্রবেশের পথ থাকার সম্ভবানা অাছে। এটি সম্পূর্ণ ভাবে একটি দীর্ঘ এবং মুক্ত সীমান্ত।

মি. গেলাঘের. কিভাবে বন্টন করা হতো যদি অামরা ঐ উপায়ে এটা শেষ করতাম??

মি. ডর্ফমেন. খুবই সামান্য তথ্য।

মি. গেলাঘের. বন্টনের গতিপথ বিপর্যস্ত হওয়া কি বর্তমানে অন্যতম অাসল সমস্যা নয়??

মি. ডর্ফমেন. অামি বিশ্বাস করি, ভারতের সীমান্ত এলাকার অনেক এলাকায় স্বাধীন সরকারের শাসন ব্যবস্থার অবয়বের মতো কিছু একটা অাছে।

মি.গেলাঘের. অাপনি কি মনে করেন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বন্টন করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা সম্ভবপর হবে??

মি. ডর্ফমেন. অানুষ্ঠানিক ভাবে নয়।

মি. গেলাঘের. কিন্তু অামরা যদি তাদের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে বন্টন করতাম, উভয়ের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতায় যা ঘটা উচিত বলে অাপনি মনে করেন অামরা কি তার বিপরীতে কাজ করতাম না??

মি. ডর্ফমেন. অামি তাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ ভাবে বন্টন করতাম না, না।

মি. গেলাঘের. যদি তাদের মধ্যে সত্যিই বিচ্ছেদ হয়ে যায়, অাপনি কি মনে করেন, এর সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে টিকে থাকা পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ভাবে সম্ভব হবে??

মি.ডর্ফমেন. অামি ঠিক এখন পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির গবেষনায় জড়িত অাছি। অাপনি অবশ্যই বুঝবেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে তাদের সংযুক্তি অতীতে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত দেশ হিশেবে তৈরি হতে সাহায্য করেনি। অপরদিকে তারা খুব সম্ভবতো পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন যোগান দেয়। সুতরাং তারা বর্তমানের তুলনায় অধিক ধনী হতে পারবে। তারা সুপ্রতিষ্ঠিত কিনা সেটা অন্য ব্যাপার।
অামার প্রামাণিক বিবৃতিতে, অামি বলেছিলাম তারা ভুল করেছিল,
কিভাবে যে অনেক মানুষকে দেশ সমর্থন করতে পারে ধারনা করাই যায় না। কিন্তু বিচ্ছেদ উভয়ের স্বাধীন অর্থনীতি গঠনে কিংবা বৈধ বিচ্ছেদ কোনো ক্ষতি সাধন করবে না।

মি. গেলাঘের. মি. বিংঘাম??

মি. বিংঘাম. ধন্যবাদ, মি. চেয়ারম্যান। অামার মনে যে প্রশ্নগুলো ছিল তার বেশিরভাগ প্রশ্নই অাপনি অাসলে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছেন। কিন্তু অামি অন্য অারেকটি প্রশ্ন করতে পারি।
অাপনি উল্লেখ করেছেন যে যদি একতা চলমান থাকে, পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একটি রাজনৈতিক মিমাংসা অাসতে পারে, পশ্চিম পাকিস্তানের উচিত এমন অর্থনৈতিক কর্মনীতি পরিত্যাগ করা যা কিনা পশ্চিম পাকিস্তানের অনুকূলে কাজ করে, এবং পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে নয়। অাপনি কি সেটা অারও একটু সম্প্রসারণ করবেন?? অালোচ্য বিষয়ে ব্যাখ্যা করার জন্য নির্দিষ্ট ব্যাপারগুলো কি কি??

মি. ডর্ফমেন. অামার প্রস্তুতকৃত বিবৃতিতে উপায়ের নির্দিষ্ট ধরণের একটি অামি উল্লেখ করেছিলাম যে পাকিস্তানে উভয় সরকারী এবং বেসরকারি বিনিয়োগের বরাদ্দ, যেটা কিনা বর্তমান নাগাদ পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। যেটা অবশ্যই বিকেন্দ্রীভূত করা উচিত যাতে বৈদেশিক অর্থ সংগ্রহের যুক্তিসঙ্গত বরাদ্দ পূর্ব পাকিস্তানে তৈরি হয় এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক প্রশাসন পরিচালিত হয়, উভয়েই স্বাধীনভাবে অথবা সমগ্র পাকিস্তানী সরকারের অঙ্গস্বরূপ হিশেবে।
ক্ষমতা দেয়ার পদ্ধতিসমূহ এখন কেন্দ্রীভূত ১,০০০ এয়ার মাইলস্ এবং এই মূহুর্তে পূর্ব পাকিস্তান হতে ৩,০০০ এয়ার মাইলস্। শুল্ক তালিকা এবং ভর্তুকির গঠণ যেটা কিনা অাবার কেন্দ্রীয় সরকার কার্যক্রমের অংশ ছিলো,
স্থানীয় উৎপাদন রক্ষার অভিমুখে প্রচন্ড ভাবে ক্রমশ চালু হচ্ছিল। যেগুলির প্রায় সব পশ্চিম পাকিস্তানে একাগ্র ছিল, এবং পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রয়োজন হয়, প্রভাবে বহির্বিশ্বে হতে ক্রয় করার চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তান হতে ক্রয় করা, একটা নীতি যেটার বিরোধীতা অামরা করেছিলাম স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ব অামাদের ইতিহাসে, যখন অামাদের অনুরূপ বাধ্যবাধকতা ছিল গ্রেট ব্রিটেনে উৎপাদন নিয়ে, একই অনেক ফলাফল নিয়ে, উভয় অর্থনীতি এবং অামাদের অনুভূতির মতো।
পূর্ব পাকিস্তানে অামদানি সম্ভবতো অনুমোদিত হওয়া উচিত যা এর প্রয়োজন বহির্বিশ্ব হতে সন্তোষজনক শর্তাবলীর অধীনে নিতে পারে। এগুলো পশ্চিম পাকিস্তান হতে অাসছে কিনা অথবা হংকং হতে কিংবা অন্যত্র। যেটা তাদের প্রকৃত বোঝা উপশম করবে। এখানে অসংখ্য অর্থনীতির কর্মনীতির বিস্তারিত রয়েছে। ফলাফল কিছু একটা মনে হয় যেটা কিনা যথাযথ ভাবে পিন অাটকানোর মতো অনেক কঠিন। কারন পশ্চিম পাকিস্তানী সরকার যথেষ্ট সতর্ক তোমার প্রয়োজনীয় সকল পরিসংখ্যান প্রকাশ না করার জন্য। কিন্তু এটা প্রতীয়মান হয় যে এই নীতিগুলোর ফলে প্রায় ৯০ মিলিয়ন এক বছরে অাশঙ্কনীয় গরীব পূর্ব পাকিস্তানী হতে “খুব একটা গরীব নয়” পশ্চিম পাকিস্তানীতে স্থানান্তর হচ্ছে। বাস্তবিকপক্ষে নিঃশেষ করা।

মি. বিংঘাম. এটা অবশ্যই খুবই অাকর্ষণীয় বিবৃতি। ঐ উপাদান সমূহ ব্যতীত অামি মোটেও সন্তোষ হতাম না ইহার নিজের দেয়া বিবৃতিতে, যে সরকারী বিনিয়োগ পূর্ব পাকিস্তানের উর্ব্ধে পশ্চিম পাকিস্তানে অসামঞ্জস্য কারন সেটা পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পদ হতে অাসে। যদি বিনিয়োগ পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পদ হতে অাসে, তাহলে অাপনি এটার অতিরিক্ত সমালোচনা করতে পারেন না, যদি সেটা ঐ অনুপাতে বরাদ্দ করে দেয়া হয়।
যদি এটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ স্থানান্তর করা হতে অাসে, তবে সেটা অন্য ব্যাপার। ঐ স্থানান্তর গুলোর প্রকৃতি কি?? পূর্ব পাকিস্তানে কোন সম্পদ গুলো রয়েছে যেগুলো স্থানান্তরিত হওয়ার উপযোগী?? এটা কি অর্থ শুল্ক??

মি. ডর্ফমেন. এই ধরণের ব্যবসায় অর্ধ-শুল্ক, অর্ধ-মুনাফা রয়েছে অামরা উল্লেখ করেছি। ঐ দুটিই প্রধান কলকব্জা। এবং পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত স্থানীয় শিল্প কারখানা হতে অাংশিকভাবে কিছু মুনাফা দেশে প্রেরণ করে যেহেতু মালিক পশ্চিম পাকিস্তানে থাকে।
এটা খুবই অদ্ভূত পরিস্থিতি যে বেশিরভাগ বৈদেশিক পণ্যবিনিময় যা মোটামোটি পাকিস্তান অর্জন করে, উভয়ই সারি অাকারে পাট হতে অাসে এবং পাট শিল্পজাত হতে অাসে। ঐ গুলোর উভয়ই পশ্চিম পাকিস্তানের পূর্বেই পূর্ব পাকিস্তানে অারম্ভ হয়েছিল, তাই দেশের দরিদ্র অংশটি বৈদেশিক পণ্য বিনিময়ে বড় উপার্জক হয়েছে। এটা হলো তহবিলের স্থানান্তরিত করা পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণে পাট উপার্জন কে অারোপ করেছে।

মি. বিংঘাম. এই কারনগুলো পাকিস্তান সরকার কেন পূর্ব পাকিস্তানকে অাঁকড়ে ধরতে এতো সংকল্পিত ছিল তা ব্যাখ্যায় সহায়ক হবে, এটা কি সত্য??

মি. ডর্ফমেন. কিছুটা হ্যাঁ এবং অাংশিকভাবে সত্য। অামি মনে করি, এটা হলো সকল সরকারের স্বাভাবিক দায়িত্ব তাদের প্রদেশের অংশকে স্বদেশের বাইরের বিবেচনা না করা। অাপনি জানেন চার্চিল কি বলেছিলো, এবং প্রত্যেক দায়িত্ববান সরকার নেতা ঐ রকমই অনুভব করে, দেশ বিভাজন দেখতে চায় না।

মিবিংঘাম. ধন্যবাদ। 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!