You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.01.05 | ওয়াশিংটন স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপের ৩,৪ ও ৬ ডিসেম্বর ’৭১-এ অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরণী | নিউইয়র্ক টাইমস্‌ - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
ওয়াশিংটন স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপের ৩,৪ ও ৬ ডিসেম্বর ’৭১-এ অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরণী নিউইয়র্ক টাইমস্‌ ৫-৬ জানুয়ারি, ১৯৭২

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের গোপন দলীলপত্রের লেখা
নিউ ইয়র্ক টাইমস বিশেষ প্রতিবেদন।
ওয়াশিংটন, জানুয়ারি। কলাম লেখক জ্যাক এ্যান্ডার্সন কর্তৃক প্রকাশিত ভারত পাকিস্তান সংকটের উপর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওয়াশিংটন স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপের কার্যবিবরণীর তিনটি গোপন দলিল নিচে দেওয়া হলঃ
ডিসেম্বর ৩, মিটিঙয়ের মেমো
গোপন স্পর্শকাতর।
প্রতিরক্ষা সহকারী সচিব।
ওয়াশিংটন, ডিসি ২০৩০১
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়।
নির্দেশ করেঃ ১-২৯৬৪৩/৭১ নথির জন্য স্বারকলিপি।
বিষয়
ডবিউএসএজি ভারত/পাকিস্তান নিয়ে মিটিং।
অংশগ্রহনকারীরা
প্রেসিডেন্টের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়সমূহের সহকারী- হেনরি এ. কিসিঞ্জার। পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে- জন এন. আরউইন প্রতিরক্ষা দপ্তরের সহকারী- ড্যাভিড প্যাকার্ড। গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক মহাপরিচালক- রিচার্ড এম. হেম্স। সহকারী প্রশাসক (এআইডি)- মরিস যে. উইলিয়ামস।
চেয়ারম্যান, জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ- এডমিরাল থমাস এইচ. মুরার। এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট (এনইইএআর)- জোসেফ যে. সিসকো। এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স (আইএসএ)- জি. ওয়ারেন নাটার। প্রিন্সিপাল ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স (আইএসএ)- আর্মইস্টিড আই, শেলডন জুনিয়র এসিস্ট্যান্ট এডমিনিস্ট্রেটর (এআইডি/এনএওএসএ)- ডোনাল্ড জি। ম্যাকডোনাল্ড।
সময় ও অনুস্থান
৩ ডিসেম্বর ১৯৭১, ১১০০ ঘন্টা। সিচুয়েশন রুম, হোয়াইট হাউজ।
252
সারাংশ
পশ্চিম অংশের প্রধান ঘটনা সম্পর্কে সাংঘর্ষিক প্রতিবেদন হাতে এসেছে। সিআইএ আমরা ভারতে উপর যথেষ্ট কঠোর নই। সে মাত্রই আমাকে আবার কল দিয়েছে। সে, ৯৯ মিলিয়ন ডলার সংক্রান্ত সংযোজিত চিঠি ইস্যুকরণে প্রেসিডেন্টের আদেশ বজায় রাখে, এবং ৭২ মিলিয়ন ইউএস ডলার পিএল ৪৮০ ক্রেডিট প্রয়োগে পরবর্তী কার্যক্রম বজায় রাখে। নিরাপত্তা পরিষদের ডাকা মিটিং এই বিকালে পাক রাষ্ট্রদূতের সাথে শর্তসাপেক্ষ আলোচনার পাশাপাশি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রকৃত অবস্থা পরিষ্কার করার পরিকল্পনা করেছে। কিসিঞ্জার মার্চ ১৯৫৯, ইউএস-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় চুক্তির গোপন বিশেষ প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা চেয়েছে।
কিসিঞ্জারঃ প্রতি আধাঘন্টা পরপর আমি প্রেসিডেন্টের নিকট থেকে ধমক খাচ্ছি যে আমরা ভারতের উপর যথেষ্ট কঠোর নই। তিনি মাত্রই আমাকে আবার ফোন দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন না যে আমরা তার ইচ্ছা পূরন করছি। তিনি পাকিস্তানের পক্ষে কাত হতে চান। তিনি অনুভব করেন আমরা যা কর তার ফল অন্যরকম হয়।
হেম্‌সঃ পশ্চিম অংশের প্রতিবেদিত কার্য বিবেচনায়, সেখানে উভয় পক্ষ থেকেই সাংঘর্ষিক রিপোর্ট আছে এবং একমাত্র সাধারণ ভিত্তি হল পাকিস্তান অমৃতসর, পাঠানকোট ও শ্রীনগর এয়ারপোর্টে আক্রমণ করে। পাক বলে ভারত পুরো সীমান্ত জুড়ে আক্রমণ করে; কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন এটি মিথ্যা। পূর্ব অংশে এই কার্য বড় হচ্ছে এবং পাক দাবি করে সেখানে এখন সাতটি আলাদা ফ্রন্ট রয়েছে।
কিসিঞ্জারঃ ভারতীয়রা কি ভূমি দখল করছে?
হেম্‌সঃ হ্যাঁ, ভূমির সামান্য অংশ, অবশ্যই।
সিসকোঃ এটা সহায়ক হবে যদি আপনি ভারত কর্তৃক দখলকৃত অংশ মানচিত্রে চিহ্নিত করে দেখান। পশ্চিমে কী হচ্ছে। পূর্ণমাত্রার আক্রমণের মত কিছু?
মুরারঃ বর্তমান ধরণ বিভ্রান্তিকর যে পাকরা মাত্র তিনটি এয়ারফিল্ডে আটকে আছে যাতে তাৎপর্যমূলক ভারতীয় যুদ্ধবিমান নাই।
হেম্‌সঃ ১.৩০ এ বেগম গান্ধীর বক্তব্য বাংলাদেশের ভাল স্বীকৃতি হতে পারে।
মুরারঃ পাকদের আক্রমণ বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা পড়ন্ত বিকেলে করা হয়েছে, যা অর্থ তৈরি করে না। মনে হয় আমাদের নিকট এখনও এটা নিয়ে যথার্থ তথ্য নাই।
কিসিঞ্জারঃ এটা কি সম্ভব যে ভারতীয়রা প্রথমে আক্রমণ করেছে এবং পাকিস্তান তার প্রতিউত্তর দিয়েছে যা তারা পূর্বেই অন্ধকারে করতে পারত?
মুরারঃ এটি নিশ্চিতভাবেই সম্ভব।
কিসিঞ্জারঃ ৯৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার ধারের অধীনে ইস্যুকৃত আর কোন অরপত্যাহারযোগ্য ধারের চিঠি প্রেসিডেন্ট চান না। তিনি চান যে ৭২ মিলিয়ন ইউএস ডলার পিএল-৪৮০ ধারও গৃহিত হোক।
উইলিয়ামসঃ পৃথিবী একসাথে হবে যখন আমরা এটি করি। প্রেসিডেন্ট কি এটি বুঝেন?
কিসিঞ্জারঃ এটি তার আদেশ, কিন্তু আমি প্রেসিডেন্টকে আবার জিজ্ঞেস করব। যদি জিজ্ঞেস করে, আমরা বলতে পারি যে আমরা আমাদের পুরো অর্থনৈতিক কার্যক্রম পূণর্বিবেচনা করছি এবং যে উপমহাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন সাহায্য অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী ইস্যু হল জাতিসংঘ।

২৫৩
আরউইনঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে আজ বিকালে ডাকছেন, এবং তিনি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেওয়ার দিকে ঝুঁকছেন।
কিসিঞ্জারঃ এই বড় মাত্রার নতুন কার্যের ব্যাপারে আমরা কিছু সমর্থন পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট এর পক্ষে আছেন। যদি এই ধরণের পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ফলপ্রসূভাবে কার্যক্রম চালাতে না পারে, তবে তার উপযোগ সমাপ্তিতে আসতে হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘের নিশ্চয়তা নিয়ে ভাবার কোন অর্থ নাই।
সিসকোঃ আজ বিকালে আপনার জন্য আমরা একটি সুপারিশ পাব, রাষ্ট্রদূতের সাথে আলোচনার পর। দেশে তারবার্তা প্রেরণের সময় দিয়ে আমরা পরীক্ষাচ্ছলে আগামীকাল নিরাপত্তা পরিষদের সভা ডাকার প্লান করতে পারি।
কিসিঞ্জারঃ আমাদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট আমাদেরকে দোষারুপ করছেন, কিন্তু আপনারা নিরাপদ আছেন।
সিসকোঃ এটাই আদর্শ!
কিসিঞ্জারঃ বুশের জন্য তৈরি পূর্ব খসড়াটিও জমা দেওয়া হয়েছে।
সিসকোঃ আলোচনা করতে, পাক রাষ্ট্রদূত দেখার পর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনার কাছে রিপোর্ট করবে। আমরা বুশের জন্য খসড়া বক্তব্য হালনাগাদ করব।
কিসিঞ্জারঃ আমরা বলতে পারি আমরা রাজনৈতিক সমঝোতার পক্ষে কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের আসল কাজ হল সামরিক পদক্ষেপ প্রতিরোধ করা।
সিসকোঃ আমরা কসিজিন অথবা বেগম গান্ধী থেকে কখনও কোন প্রতিউত্তর পাইনি।
উইলিয়ামসঃ আমরা কি পাকিস্তানের সাথে অর্থনৈতিক পদক্ষেপও নেব?
কিসিঞ্জারঃ প্রেসিডেন্টের সাথে আমার কথা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তিনি পাকিস্তানের সাথে এই সমস্যার সংযুক্তি নিয়ে এখনও পাকিস্তানের সাথে আলোচনা শুরু করেননি।
সিসকোঃ যদি আমরা ভারতীয় পক্ষের উপর কাজ করি, আমরা বলতে পারি আমরা পাকিস্তানের পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখছি।
কিসিঞ্জারঃ যদি আমরা ভারতের প্রতি পদক্ষেপের সাথে পাকিস্তানের প্রতি পদক্ষেপ মিলাতে চাই তবে পাকিস্তানের দিকে ঝোঁকা কঠিন। যদি আপনি সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করেন তবে আমি প্রেসিডেন্টের একটি সিদ্ধান্ত পেতে পারি।
প্যাকার্ডঃ স্থগিত কার্যের সাথে জড়িত থাকা ব্যাংককে জানানো আমাদের জন্য সহজ হওয়া উচিত যেহেতু আমরা সপ্তাহান্তিক ছুটির খুব কাছে আছি।
কিসিঞ্জারঃ সকালে আমাদের ডব্লিউএসএজি দরকার। চুক্তি নীতিমালাসমূহ আমাদের চিন্তা করা দরকার। বিশেষ ভারতীয় অবস্থা নিয়ে বজায় থাকা একটি চুক্তির ব্যাখ্যার চিঠি বা মেমো আমি মনে করতে পারি যখন আমি জানুয়ারি ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সফর করি, একটি গোপন দলিল অথবা সিয়াটো প্রসঙ্গে উঠা ঘটনা নিয়ে মৌখিক বোঝাপড়ার কথা আমাকে জানানো হয়। সম্ভবত এটি ছিল প্রেসিডেনশিয়াল চিঠি। এটি ছিল মার্চ ১৯৫৯ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিশেষ ব্যাখ্যা।

২৫৪
তৈরি করেছেনঃ
(স্বাক্ষর দিয়েছেন). জেমস এম. ময়েস নিকটবর্তী পূর্ব, আফ্রিকা দক্ষিণ ও এশিয়ার অনুমোদনকৃত বিষয়ের ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারিঃ (অস্পষ্ট স্বাক্ষর)।
জি. ওয়ারেন নাটার, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিরিউটি এফ্যায়ার্‌স এর পক্ষে।
পরিবেশনঃ Secdef, Depsecdef, CIJS, ASD (ISA), PDAASD (ISA), DASD: NEASA & PPNSCA, Dep Dir: NSCC & PPNSCA, CSD files, R & C files, NESA.
৪ ডিসেম্বর মিটিঙয়ের হিসাব
স্বরণীকা পরিচ্ছদ.
স্টাফ ওয়াশিংটন ডিসি ২০৩০১
এর যৌথ প্রধান।
গোপন স্পর্শকাতর।
নিম্নোক্তদের জন্য স্বারকলিপিঃ
চিফ অফ স্টাফ, ইউএস আর্মি.
চিফ অফ স্টাফ, ইউএস এয়ার ফোর্স.
চিফ অফ স্টাফ, ইউএস নাভাল অপারেশন.
কমানড্যান্ট অফ দ্যা মেরিন কর্প্‌স।

বিষয়
ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্দ নিয়ে ওয়াশিংটন স্পেশাল একশন গ্রুপ মিটিং;
৪ ডিসেম্বর ১৯৭১.

১. আপনাকে জানিয়ে দিতে বিষয় বৈঠক নথিভুক্ত করার জন্য এই স্বরণিকা সংযুক্ত করা হয়েছে।
২. এনএসসি ব্যবস্থায় তথ্যের স্পর্শকাতরতাএবং স্বারকলিপির বিশদ বর্ণনার বৈশিষ্টের ভিত্তিতে, কঠোর প্রয়োজনের ভিত্তিতে জানার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।
জেসিএস এর চেয়ারম্যানের জন্যঃ
এ. কে. নইহেন
ক্যাপ্টেন, ইউএস ন্যাভি।

জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফের চেয়ারম্যানের নির্বাহী সহকারী.
সভার প্রতিবেদন
গোপন স্পর্শকাতর।
.
যুগ্ম প্রধান কর্মকর্তা
ওয়াশিংটন, ডিসি ২০৩০১
৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১
বিষয়ঃ ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের উপর ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভা
৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
১। এনএসসি ওয়াশিংটন স্পেশাল গ্রুপ ইন্দো-পাকিস্তান পরিস্থিতি বিবেচনা করারর জন্য, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ১১০০ এর হোয়াইট হাউসের সভাকক্ষে মিলিত হয়েছিল। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ডঃ কিসিঞ্জার
২। অংশগ্রহণকারীঃ
ক। মুখ্য বক্তা
ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার
ডঃ জন হান্নাহ, এআইডি
জনাব রিচার্ড হেল্মস, সিআইএ
ডঃ জি ওয়ারেন্ট নাটার, প্রতিরক্ষা নৌপ্রধান এলমো জুমওয়েল্ট, জেসিএস
জনাব ক্রিস্টোফার ভ্যান হলেন, রাষ্ট্রবিভাগ
খ। অন্যান্য বক্তা
জনাব জেমস নয়েস, প্রতিরক্ষা বিভাগ
জনাব আরমিস্টেড সেল্ডেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ
প্রধান সেনাধ্যক্ষ রবার্ট ওয়ালেন্ডার, ওজেসিএস
ক্যাপ্টেন হওয়ার্ড কে, ওজেসিএস
জনাব হ্যারল্ড সন্ডার্স, এনএসসি
কর্নেল রিচার্ড কেনেডি, এনএসসি
জনাব স্যামুয়েল হসকানসন, এনএসসি
জনাব সনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড, এআইডি
জনাব জন ওয়ালের, সিআইএ
জনাব স্যামুয়েল ডি পামা, রাষ্ট্র বিভাগ
জনাব ডেভিড স্নেইডার, রাষ্ট্র বিভাগ
৩। সারাংশ। এটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে ইউএস নিরাপত্তা পরিষদে একটি জরুরি সভা আহবান করবে। ইউএস এর প্রস্তাবনাসমুহ যথাসম্ভব শীঘ্রই রাষ্ট্রদূত বুশ কর্তৃক তার বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।পাকিস্তানের প্রতি ইউএসজি-জাতিসংঘের অভিগমন সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হবে, পাকিস্তানে সাম্প্রতিক কার্যকর অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করা হবে না। জেএসসি এর উপর কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি।
৪। জনাব হেল্মস সভার উদ্বোধন করেন এই ইঙ্গিত দ্বারা যে ভারত বর্তমানে পুর্ব পাকিস্তানের সাথে কোনরূপ বাধা ছাড়াই আক্রমণে যুক্ত হয়েছে এবং তারা আজ সকালে সকল দিক থেকে সীমান্ত অতিক্রম করেছে। যখন ভারতীয়রা আটটি পাক বিমানঘাটিতে অতিক্রম করেছে পশ্চিমে এখনও পর্যন্ত কোন স্থল হামলার আভাস পাওয়া যায়নি, যদিও যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা জারি করা ছাড়াই রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া ব্যক্ত করেছেন যে, “ভারতের সাথে চূড়ান্ত যুদ্ধ আমাদের উপর ঘনিয়ে আসছে যার জবাবে মিসেস গান্ধী বলেছেন যে পাকিস্তানের যুদ্ধের এই ঘোষণা চূড়ান্ত বোকামির পরিচয় দেয়। ভারতীয়রা যুদ্ধ ঘোষণা না করার একটি দফা তৈরি করেছে। ভারতীয় হামলা করাচিতে একটি গুরুত্ত্বপুর্ণ রাজনৈতিক এলাকায় আঘাত হেনেছে যা একটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে রুপ নিয়েছে যেটি একটি উল্লেখযোগ্য সময় ধরে জ্বলছে এবং এভাবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য একটি উত্তম লক্ষ্যবস্তু প্রদান করার মাধ্যমে। জনাব হেল্মস আভাস দিয়েছেন যে সোভিয়েত অনুমান এটি যে বর্তমান সংকটময় অবস্থায় বৃহৎ ক্ষমতা প্রদর্শনের খুব বেশী সুযোগ নেই।
৫। ডঃ কিসিঞ্জারের মন্তব্য যে যদি ভারতীয়রা পুর্ন মাত্রায় আক্রমনের ঘোষণা দেয় এই তথ্য অবশ্যই জাতিসংঘের বক্তব্যে প্রতিফলিত হতে হবে।
৬। জনাব হেল্মস ইঙ্গিত করেছিলেন যে আমরা জানিনা কারা বর্তমান পরিস্থিতির সুচনা করেছিল অথবা আমরা এটিও জানিনা যে গতকাল পাকিস্তানিরা চারটি ছোট বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছিল।
৭। ডঃ কিসিঞ্জার অনুরোধ করেছিলেন যে সোমবার নাগাদ সিআইএ প্রতিবেদন তৈরি করবে কে কাদের প্রতি কি করেছিল এবং কখন।
৮। জবা দ্য পামা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে যদি আমরা জাতিসংঘে আমাদের আলোচনায় ভারতের যুদ্ধ ঘোষণাকে উল্লেখ করি তাহলে আমাদের ইয়াহিয়ার বিবৃতিকেও অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
৯। ডঃ কিসিঞ্জার প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন যে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বিশেষ নির্দেশনা পেয়েছেন এবং আমলাদের মধ্য থেকে কাউকে এইভাবে বক্তব্য তৈরি করতে হবে যেটি নির্দেশ করবে যে এটি হোয়াইট হাউসে করা হবে।
১০। জনাব হেল্মস ভারতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে “নো হোল্ডস বার্ড” মন্তব্য এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেয়া মন্তব্যেও অনুরুপ মন্তব্যের উল্লেখ করেন।
১১। ডঃ কিসিঞ্জার জানতে চেয়েছিলেন ভারতীয়রা এই প্রসঙ্গে কিছু ব্যক্ত করেছে কিনা যে তারা পুরোমাত্রায় যুদ্ধে যুক্ত আছে কি নেই।
১২। জনাব হেল্মস বলেছিলেন যে উল্লেখ্য পরিভাষা ছিল “নো হোল্ডস বার্ড”
১৩।ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করেছিলেন পাকিস্তানিরা কি বলেছে। অনাব হেল্মস জবাব দিয়েছিলেন যে তাদের পরিভাষা ছিল “ভারতের সাথে চূড়ান্ত যুদ্ধ” ।ডঃ কিসিঞ্জার পরামর্শ দিয়েছিলেন যে এটি কোন আপত্তিকর উক্তি ছিল না। এটি মনে করা অসংযত হবে না যে তারা (পাকিস্তানীরা) নিজেদের সমর্থনের চেষ্টা করছিল।
১৪। ডঃ কিসিঞ্জার তখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে জাতিসংঘে কি হচ্ছে যার জবাবে দ্য পামা বলেছিলেন যে ইউকে, বেলজিয়াম, জাপান এবং সম্ভবত ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহবান করার জন্য মিলিত হচ্ছে। জাপানিরা অধিকতর মৃদু প্রস্তুতিকে প্রাধান্য দিয়েছিল। যাইহোক আমরা এখনও জাপানিদের প্রতি কোন প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করিনি।
১৫। ডঃ কিসিঞ্জার চিঠিটি দেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে এটি জাতিসংঘে আমাদের পদক্ষেপ বর্ননা করে প্রস্তুত করতে হবে যারজবাবে দ্য পামা ইতিবাচক জবাব দিয়েছিলেন।
১৬। ডঃ কিসিঞ্জার বলেছিলেন যে যেহেতু চিঠির উপর তার কোন দৃঢ় মতামত নেই আমাদের অবস্থান বক্তব্যে পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরতে হবে
১৭। ডঃ কিসিঞ্জার বলেছিলেন যে তৃতীয় পক্ষ কিভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে পারে সে বিষয়ে তিনি পরোয়া করেননা যতক্ষন রাষ্ট্রদূত বুশ বুঝতে পারেন তার কি বলা উচিত।
১৮। ডঃ কিসিঞ্জার বললেন যে, যারা বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কযুক্ত নেপথ্যের তথ্য প্রচার করছে তারা রাষ্ট্রীয় ক্রোধকে প্ররোচনা দিচ্ছে। রাষ্ট্রপতি এই বিভ্রান্তিতে আছেন যে তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন; এটি নয় যে বিষয়গুলোর অগ্রগতির সাথে তাকে শুধুমাত্র অবগত করা হচ্ছে। ডঃ কিসিঞ্জার এই বিষয়টি মাথায় রাখতে বললেন।
১৯। জনাব দ্য পামা ইঙ্গিত দিলেন যে তিনি এখনও পর্যন্ত জানেন না যে (এই দিনে) নিরাপত্তা পরিষদ দুপুরে অথবা সন্ধ্যায় আহবান করা হবে কি না। যাইহোক সভায় প্রথম বক্তব্য ভারতীয় এবং পাকিস্তানীদের দ্বারা হতে পারে। তার ধারণামতে, রাষ্ট্রদূত বুশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বক্তব্যের পর প্রথম বক্তা হওয়া উচিত। তার মতে আমাদের বক্তব্যের প্রভাব আরও পরিষ্কার হবে যদি এটি শুরুর দিকে করা হয়। ডঃ কিসিঞ্জার এতে কোন আপত্তি করলেন না।
২০। জনাব দ্য পামা জানতে চাইলেন আমরা আমাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপনের পুর্বে অন্যদের আমাদের সাথে একত্রিত করতে চাই কিনা। যাইহোক, এটি সময়বহুল বিষয়। ডঃ কিসিঞ্জার পরামর্শ দিলেন এই কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করতে, আমাদের প্রস্তাবনা যতদ্রুত সম্ভব দাখিল করা উচিত, যদি দরকার হয় তবে এককভাবে। ডঃ কিসিঞ্জারের মতে, বর্তমানে আমাদের জন্য একটি উপায় আছে সেটি হল আমাদের বৃহৎ কৌশলের সাথে মিল রেখে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করা। সবাই জানে কিভাবে এসকল কিছু কিভাবে ঘটবে এবং সবাই জানে যে ভারতীয়রা অবশেষে পুর্ব পাকিস্তান দখল করবে। সে কারণে, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে, আমাদের প্রস্তাবনাকে উত্থাপন করতে হবে। আমরা একটি প্রস্তাবনা চাই যেটি রাষ্ট্রদূত বুশের একটি ভাষণের সাথে উত্থাপিত হবে। যদি কেউ আমাদের সাথে থাকতে চায়, উত্তম; কিন্তু যেভাবেই হোক আমরা এই প্রস্তাবনা রাষ্ট্রদূত বুশের ভাষণ দ্বারা উত্থাপন করব।
২১। ডঃ কিসিঞ্জার এই বলে তার বক্তব্য জারি রাখলেন যে এটি গুরুত্বপুর্ন যে আমরা আমাদের অবস্থানকে তুলে ধরি। জাতিসংঘে এই চর্চা সম্ভবত ব্যর্থ একটি চর্চা হতে পারে যেহেতু সোভিয়েতদের পক্ষ থেকে ভেটোর আশা করা যায়। জাতিসংঘ, সকল সম্ভাব্যতায়, নিজে থেকে এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য খুব কম কিছু করবে। তিনি অগ্রবর্তী ভাষণকে সারসংক্ষেপে বললেন যে তিনি ধারণা করছেন যে জাতিসংঘে আমাদের প্রস্তাবনা একটি ভাষণ দ্বরা উত্থাপিত হবে এবং কোন বিলম্ব হবে না। আমরা পুর্ব পাকিস্তানের প্রতি রাজনৈতিক সুপারিশের সাথে সম্পর্ক রেখে সাধারণ ভাষায় অগ্রসর হব কিন্তু আমরা অবশ্যই কোন বিশেষ বিষয়ে যেমন মুজিবের মুক্তি,পরামর্শ দেব না বা আভাস দেব না।
২২। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন যে ভারতীয়রা পরিষদে তাদের কার্যক্রমে কতক্ষন বিলম্ব করতে পারে? জনাব দ্য পামা বললেন তারা আমাদের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে লম্বা ভাষণ দিতে পারে। জনাব ভ্যান হলেন বললেন তারা যতক্ষন সম্ভব তাদের বক্তব্যকে দীর্ঘায়িত করবে যেটি তাদের পুর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির উপর আলোকপাতে সহায়তা করবে। জনাব দ্য পামা বললেন যে তারা তিন অথবা চার দিন পর্যন্ত এটিকে দীর্ঘায়িত করবে, যেটি। জনাব হেল্মসের মতে,যথেষ্ট হবে তাদের জন্য পুর্ব পাকিস্তান দখল করার। জনাব দ্য পামা বললেন যে আমরা সবসময়ই একটি ভোতের জন চাপ প্রয়োগ করতে পাড়ি। ডঃ কিসিঞ্জার পুনরাবৃত্তি করলেন যে জাতিসংঘে কার্যকর কিছু পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
২৩। জনাব দ্য পামা পরামর্শ দিলেন যে, সকল ক্ষেত্রে কোন না কোন ভাবে ভোট হবে।
২৪। অর্থনৈতিক সহায়তার ব্যাপারে, ডঃ কিসিঞ্জার বললেন যে রাষ্ট্রপতি নির্দেশ দিয়েছেন যে এই বিচ্ছিন্নতা শুধু ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তিনি আভাস দিলেন যে, যাইহোক, তিনিএই ঘোষণা রাষ্ট্রপতিকে পড়ে শোনাতে চেয়েছিলেন, যাতে পরবর্তীতে বোঝা যায় তিনি আসলে কি বলতে চেয়েছিলেন। এই মুহুর্তে জনাব উইলিয়ামস জিজ্ঞাসা করলেন পাকিস্তানের প্রতি সহায়তা বিচ্ছিন্ন না করার ব্যাখা করে বক্তব্যে কিছু উল্লেখ থাকবে কিনা। ডঃ কিসিঞ্জার বললেন যে, এই তথ্য শুধুমাত্র নেপথ্যের ঘটনার জন্য রাখা হবে।
২৫। জনাব উইলিয়ামস বললেন যে, কৃষি বিভাগ ইঙ্গিত দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে ভোজ্যতেলের দাম কমে যাচ্ছে। এটি ভারতে পিআই-৪৮০ সামগ্রীকে বিচ্ছিন্ন করছে যার ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সেকারণে, গমের পরিবর্তে তেলের চালান হতে পারে কিনা। ডঃ কিসিঞ্জার জবাব দিলেন যে এর উত্তর সোমবার নাগাদ অফিস শুরুর আগে থাকবে।
২৬। এরপর ডঃ কিসিঞ্জার সামরিক পরিস্থিতির উপর সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে চাইলেন। সেনাপ্রধান জুমওয়াল্ট জবাব দিলেন যে তিনি ভেবেছিলেন পাকিস্তানীরা রসদ সমস্যা প্রকট হওয়ার পুর্বে এক অথবা দুই সপ্তাহের কাছাকাছি পুর্ব পাকিস্তানে তাদের নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে পারবে। তিনি আশা করেছিলেন যে সোভিয়েতরা ভারতের প্রতি তাদের দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখবে এবং ভাইজাগে নৌঘাঁটির চিরস্থায়ী ব্যবহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করবে। তিনি অনুমান করেছিলেন যে সোভিয়েতদের আশু স্বল্প স্থায়ী উদ্দেশ্য হবে ভারতের সাথে তাদের বর্তমান সম্পর্কের মাধ্যমে সামরিক সুবিধা অর্জন করা।
২৭। ডঃ কিসিঞ্জার আভাস দিলেন যে পরবর্তী সভা সোমবার সকালে আহবান করা হবে (ডিসেম্বর ৬)
(স্বাক্ষর) এইচ এন কে
ক্যাপ্টেন, ইউএসএন
দক্ষিণ এশিয়া/এমএপি শাখা, জে৫ এক্সটেনশন ৭২৪০০
ডিসেম্বর ৬ সভার প্রতিলিপি
যুগ্ম প্রধান কর্মকর্তা
ওয়াশিংটন, ডিসি ২০৩০১
৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
নথিভুক্ত করার জন্য স্মারকলিপি
বিষয়ঃ ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের উপর ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভা
৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
১। এনএসসি ওয়াশিংটন স্পেশাল গ্রুপ ইন্দো-পাকিস্তান পরিস্থিতি বিবেচনা করারর জন্য, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ১১০০ এর হোয়াইট হাউসের সভাকক্ষে মিলিত হয়েছিল। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ডঃ কিসিঞ্জার
২। অংশগ্রহণকারীঃ
ক। মুখ্য বক্তা
ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার
জনাব ডেভিড প্যাকার্ড, প্রতিরক্ষা
রাষ্ট্রদূত ইউ অ্যালেক্সিস জনসন, রাষ্ট্র বিভাগ
জেনারেল উইলিয়াম ওয়েস্টমোরল্যান্ড, জেএসসি
জনাব রিচার্ড হেল্মস, সিআইএ
জনাব ডোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড, এআইডি
খ। অন্যান্য বক্তা
জনাব ক্রিস্টোফার ভ্যান হলেন, রাষ্ট্রবিভাগ
জনাব ব্রুস ল্যাঙ্গিজেন, রাষ্ট্রবিভাগ
জনাব জোসেফ সিসকো, রাষ্ট্রবিভাগ
জনাব জেমস নয়েস, প্রতিরক্ষা বিভাগ
জনাব আরমিস্টেড সেল্ডেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ
প্রধান সেনাধ্যক্ষ রবার্ট ওয়ালেন্ডার, ওজেসিএস
ক্যাপ্টেন হওয়ার্ড কে, ওজেসিএস
জনাব হ্যারল্ড সন্ডার্স, এনএসসি
কর্নেল রিচার্ড কেনেডি, এনএসসি
জনাব স্যামুয়েল হসকানসন, এনএসসি
জনাব জন ওয়ালের, সিআইএ
জনাব স্যামুয়েল ডি পামা, রাষ্ট্র বিভাগ
জনাব মরিস উইলিয়ামস, এআইডি
৩। সারাংশঃ আলোচনার মূল আলোচ্য ছিল বাংলাদেশের জাতি হিসেবে মুখোমুখি হওয়া ব্যাপক সমস্যাগুলো। ডঃ কিসিঞ্জার নির্দেশনা দিলেন যে এই সমস্যা এখন নিরীক্ষা করা উচিত।পাকিস্তানে সম্ভাব্য সামরিক সহায়তার বিষয়টিও নিরীক্ষা করা উচিত, কিন্তু গোপনীয়তার সাথে। পুর্ব থেকে পশ্চিমে ভারতীয় পুনঃসংস্থাপনের বিষয়টি ভারতের বর্তমান সমুদ্র “অবরোধের” বৈধতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
৪। জনাব হেল্মস বর্তমান পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বর্ননা দিয়ে সভা শুরু করলেন। তিনি বললেন যে ভারতীয়রা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পাকিস্তানীরা ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। পুর্বে বড় ধরনের যুদ্ধ এখনও চলছে কিন্তু ভারত পশ্চিমের সাথে স্থিতি কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে। জনাব হেল্মসের মতে ভারত পুর্বে ১০ দিনের মাঝে একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। ভারতের বর্তমানে পুর্বে প্রায় সকল জায়গায় বিমান বাহিনীর প্রাধান্য আছে যেখানে তারা পাকিস্তানী স্থল বাহিনী এবং রসদ এলাকা গুলোতে তাদের একশর কাছাকাছি বিমান প্রয়োগ করতে পারে। যাইহোক, ভারতীয়রা পুর্ব পাকিস্তানের প্রেক্ষিতে এখনও কব্জা করতে পারেনি। ভারতীয় প্রচেষ্টার একটি বড় অংশ প্রদেশের উত্তর পশ্চিম দিকে হয়েছে। ধাকার বিমানঘাঁটি পুরোপুরি বন্ধ। ভারতীয়রা যশোর এলাকায় শুধু কিছু ক্ষুদ্র অংশ দখলের বিবরণ দিয়েছে, কিন্তু তারা কমলাপুর দখলের দাবি করছে। পশ্চিমে ভারতীয় কার্যক্রম মুলত বিমান আক্রমনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। পাকিস্তানীদের এই প্রেক্ষিতে আক্রমণাত্মক মনে হচ্ছে এবং তারা পাঞ্জাবে বিমান হামলা করেছে। সামগ্রিকভাবে, পাকিস্তানীরা ৬১টি ভারতীয় উড়োজাহাজ ধ্বংসের দাবি করেছে; ভারতীয়রা ৪৭টি পাকিস্তানী উড়োজাহাজের দাবি করেছে। নৌকার্যক্রমে একটি পাকিস্তানী ডেস্ট্রয়ার ভারতীয়রা ডুবিয়ে দিয়েছে এবং আরেকটিও ডুবে যাওয়ার দাবি করেছে। ভারতীয়রা পুর্বদিকের সমুদ্রে একটি পাকিস্তানী ডুবোজাহাজের ডুবিয়ে দেয়ারও দাবি করেছে। মস্কো ভারতের পক্ষে ক্রমবর্ধমান সমর্থনে সোচ্চার এবং যুদ্ধ বিরতির জন্য জাতিসংঘের কোন পদক্ষেপকে সমর্থন করছেনা। চাইনিজ সংবাদমাধ্যম ভারতীয়দের উপর একটি শক্তিশালী আক্রমণ করেছে।
৫। ডঃ কিসিঞ্জার এরপর একটি সামরিক শক্তি যাচাইয়ের কথা বললেন এটি জিজ্ঞাসার মাধ্যমে যে পাকিস্তানীরা কতদিন পুর্বে তাদের দখল রাখতে সমর্থ। জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড জবাব দিলেন যে এটি তিন সপ্তাহের মত হতে পারে।
৬। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন বাংলাদেশের ব্যাপারে কি করা যেতে পারে। জনাব হেল্মস বললেন যে সকল প্রায়োগিক উদ্দেশ্যের দিক থেকে এটি এখন ভারত স্বারা স্বীকৃত একটি স্বাধীন দেশ।
৭। রাষ্ট্রদূত জনসন পরামর্শ দিলেন যে, পুর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনীকে জিম্মি করতে পারে।জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড সমর্থন দিলেন যে বিশেষত ভারতীয় নৌ প্রাধান্যের ভিত্তিতে পুর্ব অংশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদলকে সরিয়ে নেবার কোনদিক থেকেই কোন উপায় নেই।
৮।ডঃ কিসিঞ্জার ব্যক্ত করলেন যে পরবর্তীতে রাজনৈতিক গতিপথ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের মনোভাবের নির্ধারণকে অন্তর্ভুক্ত করবে।
৯। জনাব উইলিয়ামস উল্লেখ করলেন পুর্ব পাকিস্তানের প্রায় সাড়ে দশ লাখ উর্দু ভাষাভাষীদের (বিহারি) যাদের জিম্মি করা হতে পারে।
১০। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন এই লোকগুলো ইতোমধ্যে কোন গণহত্যার শিকার হয়েছে কিনা। জনাব উইলিয়ামস বললেন যে, তিনি মনে করেন অবশ্যই হবে। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন আমরা কিছু করতে পারি কিনা যার জবাব জনাব উইলিয়ামস বললেন যে হয়তবা তাদের পক্ষে একটি আন্তর্জাতিক মানবিক প্রচেষ্টার আরম্ভ করা যেতে পারে। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন আমাদের এই মানুষদের দুর্দশার প্রতি মনোযোগ আকর্ষন করা উচিত কিনা। জনাব উইলিয়ামস বললেন যে অধিকাংশ মানুষ আসলে রেল প্রতিষ্ঠান গুলোকে কেন্দ্র লরে বসতি স্থাপন করেছিল; যে তারা নগর বাসিন্দা এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে তাদের জন্য কিছু প্রচেষ্টা আরম্ভ করা যেতে পারে। ডঃ কিসিঞ্জার পরামর্শ দিলেন যে এটি একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এড়ানোর জন্য শীঘ্রই করা যেতে পারে। জনাব সিসকো বললেন যখন ইউএন এই সময়ের প্রেক্ষিতে কিছু করতে পারছেনা, সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে এই পরিস্থিতির উপর সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষন করা যেতে পারে।
১১। জনাব উইলিয়ামস উল্লেখ করলেন পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত ৩০,০০০ বাঙালির কত্থা এবং তারাও একই বিপদের মধ্যে আছে। জনাব সিসকো বললেন এই মানবিক বিষয়টি সাধারণ পরিষদের জন্য খুবই চিত্তাকর্ষক হতে পারে এবং আমরা পরিষদের কার্যক্রমের উপর নজর রাখতে শুরু করব।
১২।সামরিক চিত্রের প্রতি পুনরায় মনোযোগ দিয়ে জনাব উইলিয়ামস ব্যক্ত করলেন যে তিনি মনে করেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাথমিক বিশ্বাস হল চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করা এবং পুর্বে এখনও অবস্থারত পাকিস্তানীদের জন্য রসদ সরবরাহের সামর্থ্যকে ধ্বংস করা। তিনি বললেন যে তার মতে পুর্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বড় আঘাত হবে পাকিস্তানী নিয়মিত সৈন্যদলকে ধ্বংস করা। তিনি মনে করেন যে পুর্বে বিশাল একটি কাজ হবে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা যেহেতু এটি গনহত্যার সম্মুখীন হবে যেটি বিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত হওয়া কোন গনহত্যার মতই ব্যাপক।
১৩। জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড পরামর্শ দিলেন যে ভারতীয়দের সম্ভবত তিন অথবা চার ডিভিশন সৈন্যের দরকার পড়বে মুক্তি বাহিনীর সাথে কাজ করার জন্য। বাকি সৈন্যদের পশ্চিমে বিমান বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য সরিয়ে নেয়া যেতে পারে।
১৪। জনাব সিসকো মত দিলেন যে ভারতীয়রা তাদের অধিকাংশ সৈন্যদের সরিয়ে নেবে যখন পাকিস্তানীরা নিরস্ত্র হবে, যেহেতু ভারতীয়রা যতদুর সম্ভব বন্ধুভাবাপন্ন জনসংখ্যার সাথে কাজ করবে; এভাবে তারা সামরিক প্রচেষ্টাকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি বাহিনীর দিকে ফিরিয়ে দেবে। তিনি মনেকরেন যে পুর্ব থেকে পশ্চিমে সকল অথবা অধিকাংশ সৈন্যদলকে সরিয়ে নিতে এক মাসের মত সময় লাগতে পারে।
১৫। একটি প্রশ্নের জবাবে, জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড বলেন যে পশ্চিম থেকে পুর্বে ভারতীয় পরিবহন ক্ষমতা সীমিত, এবং এক পদাতিক ডিভিশনকে সরিয়ে নিতে অন্তত এক সপ্তাহ লাগতে পারে। পুর্ব থেকে পশ্চিমে সকল অথবা অধিকাংশ সৈন্যদলকে সরিয়ে নিতে এক মাসের মত সময় লাগতে পারে।
.
১৬. মিঃ সিসকো বলেছেন, বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর দীর্ঘ উপস্থিতির সমাধান প্রয়োজন। মিঃ ভ্যান হলেন মন্তব্য করেন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসার পর যদি ২-৩ সপ্তাহের বেশি ভারতীয় বাহিনী সেখানে অবস্থান করে, তাহলে তারা বাঙালীদের চোখে হিন্দু দখলদার বাহিনীতে পরিণত হবে।
১৭. মিঃ ভ্যান হলেন ভারত থেকে শরণার্থীদের ফিরে আসা সংক্রান্ত সমস্যাটিকে তুলে ধরেন। বাংলাদেশে মুসলিমদের যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা, সেখানে ফিরে আসা দশ মিলিয়ন শরণার্থী, যাদের অধিকাংশই হিন্দু, তারা আর একটি জটিল সমস্যার অবতাড়না করবে।
১৮. জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড মন্তব্য করেন, পশ্চিমে ভারতীয় অবস্থান অসুবিধাজনক ছিল না। তিনি সংক্ষেপে পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থা ব্যাখ্যা করেন এবং মন্তব্য করেন যে ভারত তুলনামূলক ভাল অবস্থানে আছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রধান শক্তিপ্রয়োগ কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের দিকে আশা করা যায়। তার মতে, ভারতীয়রা প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা (LOC: line of communication) থেকে করাচীকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য হায়দ্রাবাদের দিকে আক্রমণ করবে। ভারতীয়রা করাচী পর্যন্ত ধাবিত হবে বলে তিনি মনে করেন নি। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ভারতীয়দের এদিকে আগ্রাসন বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য হতে পারে, যাতে পাকিস্তানীরা কাশ্মীর থেকে তাদের বাহিনী ফিরিয়ে নেয়।
১৯. মিঃ প্যাকার্ড পাকিস্তানের জ্বালানী (POL: Petroleum, Oil, Lubricants) সরবরাহের ব্যাপারে জানতে চান। মিঃ হেলমস বলেন, বর্তমান সময়ে তা খুব খারাপ বলেই মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ স্থলপথে ইরানের সাথে যোগাযোগের রাস্তাসমূহ অত্যন্ত ভঙ্গুর ছিল।
২০. মিঃ উইলিয়াম মন্তব্য করেন, দক্ষিনে ভারতীয়দের আগ্রাসন ছিল রাজনৈতিক। ভারত যতই সিমান্তে যুদ্ধ করতে অনাগ্রহী হোক, তাদের কাশ্মীরে পিছু হটতে হবে। পার্লামেন্টে সমালোচনা এড়াতে মিসেস গান্ধী হয়তো দক্ষিনের কিছু পাকিস্থানী আবাসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
২১. ডঃ কিসিঞ্জার এরপর জাতিসংঘের উদ্যোগসমূহ সম্পর্কে জানতে চান। মিঃ সিসকো বলেন, আমরা রাষ্ট্রদূত বুশের সঙ্গে পর্যালোচনা করছি। সোভিয়েত কর্তৃক দুটি সমাধানের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে ভোট দেয়া হয়েছে। এদিকে ‘শান্তির বিরুদ্ধে হুমকি’ এই বিধান অনুসারে সাধারন পরিষদের জরুরি সভা আহবানের পক্ষে নিউইয়র্কে একটি জনমত তৈরি হয়েছে। সমস্যাটি একটি সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটে সভায় স্থানান্তরিত হতে পারে।
২২. ডঃ কিসিঞ্জার এবং মিঃ সিসকো একমত হয়েছেন যে সাধারন পরিষদে উত্থাপিত যেকোন রেজল্যুশনে দুটি বিষয় থাকতেই হবেঃ অস্ত্রবিরতি ও সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার। ডঃকিসিঞ্জার একমত হয়েছেন যে আমাদের জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল এখন পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অবস্থা সামাল দিয়েছেন। মিঃ সিসকো বলেন, যদিও সমস্যাটি সাধারন সভায় উত্থাপনের সম্ভাবনা খুব বেশি, আমাদের মনে রাখতে হবে সেখানে ১৩৬টি দেশ প্রতিনিধিত্ব করে এবং আমরা সব ধরনের চাপ আশা করতে পারি। মিঃ ডি পালমা মতামত ব্যক্ত করেন এই বলে যে যখন রেজল্যুশনটি সভায় উত্থাপন করা হবে, সেখানে ঘটনা নতুন মোড় নিতে পারেন ভারত আর রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকবে না। ততক্ষণে ব্যাপারটি আর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে না।
২৩. মিঃ পালমা বলেন যে আজ তিনটা ত্রিশ মিনিটে পরিষদের একটি মিটিংয়ের সমিয় নির্ধারন করা হয়েছে এবং আমরা চেষ্টা করতে পারি যাতে সাধারন সভায় স্থানান্তরের জন্য পরিষদ ইস্যুটিকে ছেড়ে দেয়, যেহেতু এটি পরিষ্কার যে নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে আমরা যুদ্ধবিরতি পাবো না।
২৪. দিন শেষে ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসার (Gel the issue) সাধারন সভার কাছে আশা করা যায় কিনা তা জানতে চেয়েছেন ডঃ কিসিঞ্জার, যার উত্তরে মিঃ ডি পালমা বলেন, সম্ভবত সেটাই হতে যাচ্ছে।
২৫. ডঃ কিসিঞ্জার বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের উত্থাপিত একই বক্তব্য নিয়ে আমরা সাধারন পরিষদে যাবো। অবশ্য তিনি শরণার্থী ও আমাদের বিশ্লেষনের ব্যাপারে কিছু যোগ করতে আগ্রহী ছিলেন।
২৬. ডঃ কিসিঞ্জার আরও নির্দেশ দেন, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সাথে এতদিন যে উদার আচরন করা হয়েছে, সেই উচ্চপর্যায়ের আচরন আর করা হবে না।
২৭. ডঃ কিসিঞ্জার এরপর ভারতের বর্তমান সামুদ্রিক অবরোধের আইনী দিক সম্পর্কে জানতে চান। মিঃ সিসকো বলেন, আমেরিকান জাহাজ জড়িত আছে এমন দুটি ঘটনারই আমরা প্রতিবাদ করেছি। তবে যুদ্ধঘোষণার ব্যাপারে দৃশ্যত কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয় নি। এটি এখনো অঘোষিত যুদ্ধ এবং ভারত এই সামরিক অবস্থান গ্রহনের ব্যাপারে তাদের অধিকার আছে বলে দাবি করছে। রাজ্য অবশ্য ব্যাপারটির আইনগত দিক নিয়ে দলিল তৈরি করবে।রাষ্ট্রদূত জোনাথন বলেন, তার জানা মতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে ভারতের কোন আইনগত অবস্থান নেই।
২৮. ডঃ কিসিঞ্জার একটি খসড়া প্রতিবাদলিপি প্রস্তুত করতে বলেন। যদি আমরা মনে করি এটি অবৈধ, তাহলে আমরা আনুষ্ঠানিক কুটনৈতিক প্রতিবাদ জানাবো। মিঃ সিসকো প্রতিবাদলিপি তৈরির দায়িত্ব নেন।
২৯. ডঃ কিসিঞ্জার জর্ডান বা সৌদী আরবের সামরিক শক্তি পাকিস্তানে স্থানান্তরের অনুমোদন দানের ব্যাপারে আমাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে চান। মিঃ ভ্যান হলেন বলেন, পাকিস্তানের মত যে সকল চুড়ান্ত গ্রহীতার কাছে আমেরিকা সরাসরি অস্ত্র বিক্রির অনুমতি দেয় না, সেখানে আমাদের সরবরাহকৃত অস্ত্র কোন তৃতীয় পক্ষকে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া সম্ভব নয়। গত জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা পাকিস্তানে অস্ত্র বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেই। মিঃ সিসকো বলেন এধরণের পদক্ষেপে জর্ডান তার নিজের অবস্থান দূর্বল করে ফেলবে, এবং তারা কৃতজ্ঞ থাকবে যদি তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। পাকিস্তানের উপর যেহেতু চাপ বাড়ছে, তারা আমাদের কাছে সংকটকালিন আবেদন করবে বলেও মিঃ সিসকো মত দেন।
৩০. ডঃ কিসিঞ্জার বলেন, রাষ্ট্রপতি ওইসব আবেদনকে গুরুত্ব দিতে আগ্রহী হতে পারেন। ঘটনাগুলো রাষ্ট্রপতির নজরে আনা হয় নি, তবে এটা পরিষ্কার যে রাষ্ট্রপতি পাকিস্থানকে পরাজিত হতে দিতে ইচ্ছুক নন। মিঃ প্যাকার্ড তখন বলেন, আমাদের কি কি করণীয় তা খতিয়ে দেখা উচিত। মিঃ সিসকো একমত পোষণ করেন, তবে তিনি বলেন এটি অত্যন্ত গোপনে করা উচিত। ডঃ কিসিঞ্জার পরের দিনের মধ্যে (৭ ডিসেম্বর) একটি দলিল আশা করেন বলে জানান।
৩১. মিঃ সিসকোর মতে, আমরা যে জিনিসের প্রতি আসলেই আগ্রহী তা হল সহজলভ্য করা যায় এমন সরবরাহ ও উপকরন, এবং এইসব উপকরণ পৌছানোর উপায়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের প্রচেষ্টা হওয়া উচিত পশ্চিম পাকিস্তানকে নিঃশেষ করা থেকে ভারতীয়দের বিরত রাখা।
৩২. ডঃ কিসিঞ্জার ত্রানের ব্যাপারে আলোকপাত করেন এবং অনুরোধ করেন যেন এখন থেকে লেটার অফ ক্রেডিটসমূহ প্রত্যাহারের অযোগ্য না করা হয়। মিঃ উইলিয়াম বলেন, আমরা সাধারন অর্থনৈতিক সহায়তা, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের জন্য প্রতিশ্রুত না, তা স্থগিত করেছি। এটি এর মাত্রাকে ১০ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে এনেছে। তিনি মন্তব্য করেন, ভারত যেভাবে তাদের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড যুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সচল করেছে আর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য অবশিষ্ট সহায়তা সার ও মানবিক সহায়তার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে, সে তুলনায় আমরা পাকিস্তানের জন্য যা করেছি তা যৌক্তিক নয়। কৌশলগত, রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে একটি যুক্তি দাড় করানো যায় যে ভারত ও পাকিস্তানকে দেয়া সাহায্যের মধ্যে একটি পার্থক্য রয়েছে।
৩৩. ভারতকে দেয়া কোন সহায়তা বন্ধের সময় যেন যে যে সহায়তা চলমান আছে, তার চেয়ে যে যে সহায়তা বন্ধ করা হয়েছে তার উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়, ডঃ কিসিঞ্জার সেই দিকে নজর রাখতে বলেছেন।
৩৪. ডঃ কিসিঞ্জার এরপর ঢাকা খালি করার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। মিঃ সিসকো জানালেন ঢাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।
৩৫. ডঃ কিসিঞ্জার পূর্ব পাকিস্তানের সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে জানতে চাইলেন। মিঃ উইলিয়াম জানালেন আপাতত বড় কোন সমস্যা হবে না, তবে পরবর্তী বসন্তের দিকে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশকে প্রত্যাখ্যান করার আবেদন আমাদের কাছে আসবে কিনা জানতে চাইলেন ডঃ কিসিঞ্জার। মিঃ উইলিয়াম বলেন, আমরা যদি মাসে ১৪০ টন খাবার চট্টগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করাতে পারি, তাহলে সমস্যা প্রকট হওয়ার কথা নয়, কিন্তু বর্তমানে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব ধরনের সাহায্য দরকার হবে। রাষ্ট্রদূত জনসন যোগ করেন, বাংলাদেশ হবে একটি আন্তর্জাতিক ঝুড়ি। ডঃ কিয়াইঞ্জার অবশ্য বলেন, এটি ‘আমাদের’ ঝুড়ি হবে না। মিঃ উইলিয়াম বলেন, শরণার্থী পূণর্বাসন, জনগণকে পরিবহনো খাদ্য সরবরাহের জন্য ব্যাপক সাহায্যের দরকার হবে। ডঃ কিসিঞ্জার তৎক্ষনাৎ এই সমস্যাটি বিশ্লেষন শুরু করতে বলেন।
৩৬. মিঃ উইলিয়াম বলেন, ভারতীয়রা সবসময় নগদ অর্থে শরণার্থীদের জন্য সহায়তা চেয়েছে। বিনিময়ে ভারতীয়রা শরণার্থীদের খাদ্য ও সহায়তা প্রদান করবে। এটি ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। ডঃ কিসিঞ্জার আগামীকালের মধ্যে খতিয়ে দেখতে বলেছেন নগদ অর্থের পরিবর্তে পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করা যায় কিনা। আমরা মানবিক সহায়তা বন্ধ করতে চাই না। তবে আমরা নগদ অর্থের পরিবর্তে পণ্যসামগ্রী দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব।
৩৭. সভাটি এরপর মুলতবি করা হয়।
(সাক্ষর) এইচ,এন,কে
ক্যাপ্টেন, ইউ,এস,এন
দক্ষিন এশিয়া/এম,এ,পি ব্রাঞ্চ, জে-৫
এক্সটেনশন ৭২৪০০

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস
বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ১৯৭২
.