You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
প্রেসিডেন্ট নিক্সন এর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হেনরী কিসিঞ্জারের ৭ই ডিসেম্বর’৭১ এর সাংবাদিক সম্মেলন সিনেটর কার্যবিবরণী ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১

এস ২১০১২ কংগ্রেশনাল রেকর্ড সিনেট ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১

[ নিচের তথ্যগুলো ৭ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের দেয়া একটি ব্রিফিং থেকে নেয়া হয়েছে। অ্যারিজোনার সিনেটর ব্যারি গোল্ডওয়াটার হোয়াইট হাউস থেকে এই প্রতিলিপিটি পান এবং ৯ ডিসেম্বর এটি কংগ্রেশনাল রেকর্ডের অন্তর্ভুক্ত করেন।]
ভারত-পাকিস্তান
(হেনরি কিসিঞ্জারের সাথে ব্রিফিং)

ড. কিসিঞ্জার, আমি ভেবেছিলাম দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যাগুলো নিয়ে আমরা কতটা চিন্তিত, সে সম্পর্কে আপনার সাথে কথা বলতে হবে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র যেসব ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সেগুলোর কতটুকু আমরা সম্পন্ন করেছি, সেটা নিয়েও আলোচনা করা দরকার।
এই ব্যাপারে যেহেতু আমার কাছে কোনকিছু সাজানো নেই, সুতরাং আমি আপনার সাথে কোন প্রকার পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই কথা বলতে যাচ্ছি এবং আমি আজকের সাক্ষাৎকারটি একটি পত্রিকায় উল্লেখ করতে পারি।
প্রথমত, আমি আপনাকে কিছু ব্যাপার স্পষ্ট বলে দিতে চাচ্ছি। কোন কোন জায়গায় বলা হয়েছে যে, প্রশাসন ভারতবিরোধী। এটি সম্পুর্ন ভুল ধারনা। ভারত একটি বৃহৎ দেশ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে একটি। এটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি দ্বারা পরিচালিত।
যুদ্ধোত্তর সময়ে আমেরিকানরা অন্যান্য সকল প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের অগ্রগতি ও উন্নয়ন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে এবং আমেরিকান জনগণ ১০ বিলিয়ন পরিমাণ অর্থ সাহায্য দেয়। গত বছর ভারত এই প্রশাসন থেকে সর্বমোট ১.২ বিলিয়ন সাহায্য পায়, যার মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন আসে কেবল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। অতএব, ভারতের উন্নতি এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা সবসময় দেখে এসেছি যে, ভারতের সাফল্য এবং গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি অনুন্নত বিশ্বের অনেক দেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
অতএব, ভারতের সাথে আমাদের যখন মতবিরোধ হয়েছিলো, যেমন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আছে, আমরা অত্যন্ত দুঃখ এবং হতাশার কারণে এগুলো করেছিলাম।
আমার দেখামতে ২৫ মার্চ কেমন ছিল সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাক। ২৫ মার্চ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব বাংলায় সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং পরিস্থিতি বর্তমানের রূপে নিয়ে এসেছিল।
এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটানোর মত কর্মকাণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনই সমর্থন করেনি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে যে এই ধরনের ঘটনা ভারতের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। আমরা সবসময় দেখে এসেছি যে, ভারতে উদ্বাস্তুদের অনুপ্রবেশের ঘটনা সবসময়ই বিপজ্জনক। এতে করে সাম্প্রদায়িক বিবাদের সম্ভাবনা থেকে যায়। আমরা জানতাম যে এই ঘটনাগুলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।
অতএব, ভারতে শরণার্থীদের ভোগান্তি প্রশমনে এবং উদ্বাস্তুদের অন্তঃপ্রবাহ রোধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একই সাথে দুইটি কাজ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত, মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে এবং শরণার্থীদের ফেরত আনতে; এবং দ্বিতীয়ত, আমরা একটি রাজনৈতিক সংঘাতের সমাধান করার চেষ্টা করছি, যেখানে শরণার্থীদের প্রথম স্থানে নিয়ে আসার কথা হয়েছিলো।
এটি করার জন্য যেসকল সমস্যা হতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হল রাজনৈতিক বিবর্তন আনার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগা। কিন্তু এই বিবর্তনটি ছিল মানুষের দুঃখকষ্ট কমানোর জন্য সবচেয়ে বেশি দরকারি।
শরণার্থী সমস্যার দুটি দিক ছিল; প্রথমত, ভারতের ভিতর যেসকল শরণার্থী আছে তাদের ঠিকমত দেখাশোনা করা; এবং দ্বিতীয়ত পূর্ব পাকিস্তানের উপর আরোপিত যেসকল শর্তগুলোর জন্য শরণার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেগুলোর পরিবর্তন করা, বিশেষ করে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করারই হল উদ্দেশ্য। আমরা পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষ এড়াতে জন্য ৯০ মিলিয়ন এবং ভারতের শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য ১৫৫ মিলিয়ন সাহায্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমাদের এই সাহায্যের পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য সকল দেশ কর্তৃক যত সাহায্য এসেছে তার সমষ্টির চেয়েও বেশি।
আমি এখানে আরও কিছু যোগ করতে পারি, ভারত সরকারের অনুরোধে পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষ এড়ানোর জন্য যে সাহায্য দেয়া হয়েছিল, তার জন্য ভারতে শরণার্থীদের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে এবং এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে অনুরোধ করেছে আরও ২৫০ মিলিয়ন বেশি সাহায্য পাঠানোর জন্য, যাতে করে আমাদের প্রস্তুতকৃত খাবারগুলো শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য পাঠানো যায়। অন্যভাবে বলা যায়, শরণার্থীদের নিয়ে ভারতের সমস্যার সমাধান এবং ভারতে আরও শরণার্থীর অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতৃক সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৫০০ মিলিয়ন।
সমুদ্র বন্দর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে খাবার ও অন্যান্য সাহায্য পরিবহন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানকে ২৬টি জাহাজ দিয়ে সাহায্য করেছিল।
১৯৭১ সালের মার্চে যা ঘটেছিলো সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো ক্ষমা করেনি। পক্ষান্তরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে পাকিস্তানের উপর নতুন কোন উন্নয়ন ঋণ দেয়নি।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দেয়ার জন্য একটি বড় চুক্তি সম্পাদিত হয়। তবে এই বিষয়টি সত্য যে গত বছরের মার্চের শেষের দিকে পূর্ব পাকিস্তানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন লাইসেন্সগুলো স্থগিত করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে সকল সামরিক পণ্যের চালান আমেরিকার বাইরে থেকে হয়েছিল বা আমেরিকান সরকারি নিয়ন্ত্রণে হয়েছিলো। পাকিস্তানে পুরাতন লাইসেন্সের উপর ভিত্তি করে বাণিজ্যিক চ্যানেলের মাধ্যমে যেসকল অস্ত্র প্রেরণ করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কেবলমাত্র অস্ত্রগুলোর অতিরিক্ত অংশ। সেখানে মারাত্মক কিংবা প্রাণঘাতী কোন অস্র ছিল না।
পূর্ববাংলায় এই ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরপরই মার্চের শেষ কিংবা এপ্রিলের শুরুতে ৩৫ মিলিয়ন মূল্যমানের অস্রের মধ্যে মাত্র ৫ মিলিয়ন সমমূল্যের অস্র চালান দেয় এবং বাকি সব অস্র রেখে দেয়া হয়। অন্যদিকে, আমরা ৪টি সশস্ত্র ডিভিশন তৈরী করেছি। আসল ব্যাপার হল ৩৫ মিলিয়ন মূল্যমানের অস্র রেখে দেয়া হয়েছিল এবং কেবলমাত্র ৫ মিলিয়ন সমমূল্যের অস্র চালান দেয়া হয়েছিল – আমার সঠিক পরিমাণটা জানা নেই। আমার মনে হয় এটি ৪ – ৫ মিলিয়নের মধ্যেই হবে, যেগুলো বাণিজ্যিক চ্যানেলের মাধ্যমে পুরাতন লাইসেন্স ব্যাবহার করেই অস্রের বিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে পাঠানো হয়েছিলো।
সুতরাং, আমি বিশ্বাস করি, এটি সঠিক যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে এই বছরের মার্চ মাসে তাদের নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরি করে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কাজকর্মের মাধ্যমে বিশ্বের বাকি দেশগুলোকে সাথে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দুর্ভোগ এড়ানোর জন্য, বিশেষ করে মার্চের শেষের দিকে পূর্ববাংলার উপর যে দুর্ভোগ নেমে আসে সেটি সমাধানের জন্য অবদান রাখতে চেয়েছিল।
এখন রাজনৈতিক বিবর্তনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যাক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক বিবর্তনের জন্য কি অবসান রেখেছে?
এটা সত্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক বিবর্তনের উপর সরাসরি কোন মতামত ঘোষণা করেনি। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিল্লি এবং ইসলামাবাদ উভয়ের সাথে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা চেয়েছিল যাতে করে শরণার্থীরা পুনরায় ফিরে যেতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রপতির অনুরোধে, জুলাই মাসের প্রথম দিকে আমি যখন দিল্লি ছিলাম তখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিকট এই ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল এবং তারা উভয়েই বলেছেন যে তারা আমাদের পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পেরেছেন এবং আমাদের সিদ্ধান্তের কোনরূপ সমালোচনা করেননি।
তারা অস্ত্রের চালানের ব্যাপারটি নিয়ে সমালোচনা করেছিল। দ্বিতীয়ত, আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের প্রভাব ব্যাবহার করেছি যাতে করে পাকিস্তান সরকার একটি রাজনৈতিক বিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়। আমরা পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই এবং তারা পূর্ব পাকিস্তানে এই ব্যাপারে কোন সমালোচনা না করে, তাদের জন্য প্রেরিত সাহায্যগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা বিতরণ করার সিধান্তে রাজি হয়। পাকিস্তান আরও মনে করে যে এর ফলে পাকিস্তান বেসামরিক শাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে এটি ঘটার কোথা ছিল।
আমরা সীমান্ত থেকে উভয় দেশের সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু যখন ভারত সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তখন আমরা পাকিস্তানকে একতরফাভাবে সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই এবং পাকিস্তান আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু ভারত এই বিষয়ে কোন সাড়া দেয়নি।
আমরা সকল শরণার্থীদের জন্য একটি সাধারণ ক্ষমার আহ্বান জানাই এবং আমাদের আহ্বানটি গৃহীত হয়েছিল।
প্রশ্নঃ কার দ্বারা?
পাকিস্তানের ড. কিসিঞ্জার। পাকিস্তানে ভারতের কোন শরণার্থী ছিল না।
সকল শরণার্থীদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্য আমরা পাকিস্তানকে অনুরোধ করি যাতে করে তারা কোনরূপ প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয় ছাড়াই ফিরে আসতে পারে।
আমরা আরও গিয়েছিলাম। আমরা কলকাতায় বাংলাদেশের মানুষদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম এবং এই বছর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ৮ বারেরও বেশিবার যোগাযোগ করেছিলাম।
বাংলাদেশ মানুষের সাথে সন্ধিস্থাপনের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে আমরা তিনবার সাক্ষাত করেছিলাম। পাকিস্তান সরকার আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। কলকাতায় থাকা আমাদের নিজস্ব সংবাদবাহক আমাদের জানিয়েছিল যে ভারতীয় সরকার এই আলোচনার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে নিরুৎসাহিত।
.
অন্য কথায়,আমরা একটি রাজনৈতিক মীমাংসার প্রয়াস করেছি,এবং আমি যদি আমাদের ও ভারত সরকারের মধ্যকার যে বিভেদ আছে তার সারমর্ম করি,তাহলে এটা হলঃ

আমরা বিভিন্ন উপলক্ষে ভারত সরকারকে বলেছি- মাননীয় রাষ্ট্রসচিব ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সাথে ১৮বার সাক্ষাৎ করেছেন;আমি অগাস্ট মাসের শেষ হতে রাষ্ট্রপতির হয়ে সাত বার সাক্ষাৎ করেছি।আমরা সকলে জানিয়েছি যে রাজনৈতিক বিবর্তনে পূর্ব বাংলার জন্য রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন-ই অনিবার্য ফলাফল ছিল,এবং আমরা সকলে তা সমর্থন করেছি।পার্থক্য হয়ত এটাই ছিল যে ভারত সরকার সব এতো দ্রুত চেয়েছিলেন যে এটা আর রাজনৈতিক বিবর্তনের না বরং রাজনৈতিক পতনের আলোচনায় পরিনত হয়েছিলো।

ভারত সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনার চেষ্টা না করে,বিষয়টার প্রকৃত ঘটনা,যেভাবে তারা আমাদের সামনে নিজেদের উপস্থাপন করেছে তাই মেনে নিয়ে,আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যখন এখানে ছিলেন তখন তাঁকে সীমান্ত থেকে তাঁদের সৈন্যদল উঠিয়ে নেয়ার পাকিস্তানের একতরফা প্রস্তাবের ব্যাপারে বলেছিলাম।সেখানে কোনো প্রতিক্রিয়া ছিলো না।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যখন এখানে ছিলেন তখন আমরা তাঁকে জানিয়েছিলাম যে আমরা পাকিস্তানী ও আওয়ামী লীগের সদস্যদের মধ্যে একটি আলাপ-আলোচনার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব,বিশেষত মুজিবুরের সম্মতিতে,যিনি এখন জেইলে।ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ভারতে ফিরার পরপর-ই আমরা তাঁকে জানিয়েছিলাম যে আমরা তাঁদের সাথে একটি রাজনৈতিক সময়সূচী নিয়ে আলোচনা করতেও প্রস্তুত ছিলাম,একটি যথাযথ সময়সূচী পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।এই কথোপকথনটি ১৯শে নভেম্বরে হয়েছিলো।২২শে নভেম্বর পূর্ব বাংলায় সামরিক কার্যকলাপ শুরু হয়ে গিয়েছিলো।

কাম্য ছিলো ১৫ই নভেম্বর,যখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব এখানে ছিলেন আমরা তাঁকে বলেছিলাম যে আমরা ধারণা করছি এবার পাকিস্তানের সময় সর্বাধিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা।তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি ২২শে নভেম্বরের সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের কোনো উত্তর দিতে পারবেন না,যখন তিনি তাঁর দেশে ফিরবেন।তিনি আমাদের এ-ও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বেসামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তন হবে,সেই সময়ে মুজিবুরের মুক্তির মত বিষয়গুলো তুলে ধরা সহজ হবে,যার কারাদন্ড সামরিক আইনে হয়েছিলো।

তথ্যটি প্রেরণ করা হয়েছিলো,এবং তাসত্ত্বেও ২২শে নভেম্বরের সপ্তাহে সামরিক শাসন শুরু হয়েছিলো।সুতরাং যখন আমরা বলি যে এখানে সামরিক শাসনের প্রয়োজন ছিলো না,তখন আমরা বলি না ভারতের ভোগান্তি হয়নি,আমরা বলি না ভারতের সমস্যায় আমরা অনুভূতিহীন বা ভারত কে আমরা মুল্যা্যন করি না।

এই দেশের,ভারতের জন্য বিভিন্ন আঙ্গিকে ভালোবাসা রয়েছে,তাই প্রচন্ড দুঃখ নিয়ে এই ঘটনাটি মেনে নিয়েছি যে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যাপ্ত কারণ ছাড়া সামরিক শাসন নেওয়া হয়েছে এবং আমরা যদি এই মতামত যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ করি,যেটা আমরা করবো না কারণ আমরা উপমহাদেশের একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ কে সমর্থন করতে চাই বা পৃথিবীর বিশিষ্ট দেশগুলোর মধ্যের একটি দেশের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই,কিন্তু যেহেতু আমরা কিছু উক্তিতে বিশ্বাস করি যে,সামরিক আক্রমণের বৈধতা নির্ধারিত হয় অংকশাস্ত্রের মাধ্যমে,যদি রাজনৈতিক জ্ঞান এটা বলে যে আক্রমণকারীর আছে ৫০ কোটি এবং প্রতিরোধকারীর রয়েছে ১০ কোটি,সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সংখ্যাগত দিক দিয়ে শক্তিশালীর পাশে থাকবে,আমরা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করছি যেখানে সুদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক নৈরাজ্য তৈরি হবে এবং শান্তির সময় প্রতিষ্ঠা,যা রাষ্ট্রপতির সবচেয়ে বড় ইচ্ছা;তা ক্ষুণ্ণ হবে,আবশ্যকভাবে প্রথমেই আমেরিকানদের জন্য না,কিন্তু পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য।

আমি আমাদের দৃষ্টিকোণ স্পষ্ট করতে এখানে আসার সুবিধা গ্রহণ করেছি।আপনি এই নেপথ্য ভিত্তির প্রয়োজনীয়তা দেখতে পারেন,কারণ এখানে আমরা কি করেছি এবং আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে।আমি আপনাকে পুর্বপ্রস্তুতিহীন সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছি এবং এখন আমি আপনাকে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বা আরো বিস্তারে যেতে খুশি হব।

প্রশ্ন। কেনো ভারতের নিন্দায় আমেরিকার অবস্থান নিয়ে প্রথম আংশিক-প্রকাশ্য ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিলো এবং কেনো আপনি এখন এই বিলম্বিত ব্যাখ্যা দিচ্ছেন?বিশ্ববাসীর উপলব্ধি হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আগ্রাসক হিসেবে বিবেচনা করেছে,যা ভারত-বিরোধী,এবং আপনি একটি নিরপেক্ষ প্ররোচক অবস্থা এখানে তৈরি করেছেন যা এখানের ঘটনা নয়।তাহলে কেনো এই বিলম্ব?
ডঃ কিসিঞ্জার। এটা এখন পর্যন্ত পিটার লিসাগর হতে পাওয়া আমার সর্বোচ্চ প্রশংসা। (হাসি)
আমরা অনেকটা সময় এটা বিশ্বাস করতে অনিচ্ছুক ছিলাম যে এই বিষয়টি প্রকাশ্য ক্ষমতার আশ্রয়েই এতটা অবতীর্ণ হয়েছিলো এবং সামরিক সক্রিয়তার প্রথম দুই সপ্তাহ আমরা দেখছিলাম রাষ্ট্রবিভাগের কূটনৈতিক পরিচালনায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটা থামাতে কি করা যায়।
আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি আবেদন করেছি।আমরা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিও আবেদন রেখেছি
এখন,তারপর শুক্রবারে পরিস্থিতি পূর্ণ-বিকশিত যুদ্ধে বিস্ফোরিত হয় ও এই ঘটনাটি জনগণের আগে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।এখন এই ঘটনাগুলোকে সামনে রাখতে আপনি যে বৈশিষ্ট্যপ্রদান করেছেন,যা ভারত-বিরোধী হিসেবে সামনে রাখা হয়েছে,অবশ্যই আমি তা মেনে নিতে পারব না।

প্রশ্ন। আমি বলেছিলাম বিশ্ববাসীর ধারণা যে যুক্তরাষ্ট্র ভারত-বিরোধী ছিলো শুক্রবারে রাষ্ট্রবিভাগে দেয়া প্রথম নেপথ্য বিবরণীর বৈশিষ্ট্যের কারনে।
ডঃ কিসিঞ্জার। আমরা এই সংকটে সামরিক শক্তি ব্যবহারে বিরোধিতা করেছি,এবং আমরা বিশ্বাস করি না যে সামরিক যুদ্ধে নিযুক্ত হওয়াটা জরুরি ছিলো।আমরা বিশ্বাস করি যে পূর্ব বাংলায় যে দুঃখজনক ঘটনার সূচনা হয়েছিলো এখন তা একটি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রকে বিভাজনের প্রয়াসে পরিণত হয়েছে।
সুতরাং শনিবারে যে দর্শন ব্যক্ত করা হয়েছিলো তা আজকের দর্শনের সাথে অসঙ্গত নয়।যা আজ করা হয়েছে তা শনিবারে দেয়া বিবৃতির নেপথ্যের ব্যাখ্যা ছিলো,এবং হয়তোবা এটাই ভালো হবে যদি আমরা এই পুরো বিষয়টাকে সামনে রাখি।

প্রশ্ন।যদি আপনি যা বলেছেন তা থেকে আমি ধরে নেই, পুর্বে ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে পূর্ণমাত্রার প্রতিদ্বন্দ্বীতার প্রাদুর্ভাবে আপনি বলেছিলেন পাকিস্তান সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বাস দিয়েছে যে এতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে যার মধ্যে এই মাসের শেষে বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া,কলকাতায় বাংলাদেশের যে প্রতিনিধি রয়েছে তার সাথে আলোচনায় যাওয়া,একতরফাভাবে সীমান্ত থেকে সৈন্যদল সরিয়ে নেয়া।আপনি কি জানেন এই মুহূর্তে পাকিস্তান সরকারের করা এই প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে কোনো একটিও এখন বলবৎ কিনা?যদি কোনোভাবে এই যুদ্ধ থামানো যায়,তারা কি সেইসব কাজ করতে এখনো ইচ্ছুক?
ডঃ কিসিঞ্জার। এই বিভিন্ন বিষয়গুলিকে আমায় সততার পরিপ্রেক্ষিতে নিতে দিন।

এই একতরফা প্রত্যাহার,এটার কোনো পরিবর্তন নেই।বাংলাদেশের জনগণের সাথে কথা বলার ইচ্ছায় একদিকে ভারত ও বাংলাদেশ একপক্ষে এবং পাকিস্তান অপরপক্ষে থেকে অসম্মতিতে লিপ্ত হয়েছে।ভারতীয়দের অভিমত যে আলোচনা মুজিবুরকে দিয়ে শুরু হতে হবে,যিনি এখন কারাগারে।
আমরা চেষ্টা করেছিলাম বাংলাদেশের জনগণের সাথে একটি আলোচনা শুরু করতে যারা কারাবাস করছে না এবং যারা কলকাতায় ছিলো।পাকিস্তানীরা জানিয়েছিলো যে তারা শুধুমাত্র সেইসব বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলবে যাদের উপর পাকিস্তানে নির্দিষ্টভাবে কোনো অন্যায় করার অভিযোগ নেই এবং আমার ধারণা নেই যে এতে কে বাদ পরছে।
কিন্তু আমি মনে করি সেই অংশটা,ভাঙ্গনের ছিলো না।যা আমাদের মাঝে গুরুতর পার্থক্য সৃষ্টি করেছে-যার এতখানি আমরা না,কারণ আমরা কোনো দল ছিলাম না,আমরা শুধু তথ্য প্রেরণ করছিলাম তাদের মাঝে যারা আলোচনা শুরু করতে চায় এবং ভারতীয় পক্ষের মত ছিলো যে এই আলোচনাটি মুজিবুরের মাধ্যমে শুরু হতে হবে।

এক মিনিটের জন্য আমি এই নথি থেকে সরে আসছি।

আমরা বিবেচনা করেছি যে একবার এই আলোচনা শুরু হলে,মুজিবুরের মুক্তি কিছু সময়ের মধ্যে একটি অনিবার্য ফলে পরিনত হবে আর তাই আমাদের মনে হয়েছে যে এই মুহূর্তে আলোচনা শুরু করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এই অংশে আমি নথি বিবেচনা বন্ধ করছি।এটা আপনার বোধগম্যতার জন্য সরবরাহ করছি।আমি মনে করি এটা বলা নিরাপদ যে ভারতের দিক থেকে সর্বোচ্চ দ্রুততা আশা করেছিলো এবং সম্ভবত পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বরদাস্ত করার থেকেও দ্রুত গতিতে।আমরা অনুভব করেছি যে এটা সমাধানের একটা উপায় হতে পারে ভারতীয়রা যদি তাঁদের হিসাবে কোনো যৌক্তিক একটা সময়সূচী আমাদের দেয়,এবং এটা হতাশার জন্ম দিয়েছিলো যখন আমি গ্রীষ্মকালে সেখানে ছিলাম,ও কোনো সদুত্তর পাইনি।এটা ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিদায়ের আগেই আবার উত্থাপন করা হয়েছিলো,ও এটার উত্তর দেওয়া হয়নি।
সুতরাং আমরা কোনো বাস্তব অভিব্যক্তি পাইনি যে সময়ের কি পার্থক্য ছিলো।তাঁরা জানতেন যে আমরা বিশ্বাস করতাম আলোচনার যৌক্তিক পরিনতি রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন ছিলো।এই প্রস্তাব এখনো আছে কিনা?আমি জানি না। (নথি সমাপ্ত)
যদি এই যুদ্ধ থামে ও সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার করা হয় ,আমি যেই দিকে ইঙ্গিত করেছি সেদিকে বিষয়টিকে নেয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে যেকোনো কিছুর মাধ্যমে দ্বিগুণ করতে নিশ্চয় আমরা আমাদের তরফ থেকে প্রস্তুত হবো।

প্রশ্ন।এটা সত্য যে আপনার উদ্বোধনী মন্তব্যে আপনি আরো দুটি বিষয় নিয়ে এখানে বলেননি যা মূখ্য কারন ছিলো আপনার এবং মাননীয় রাষ্ট্রপতির ভারতকে আগ্রাসক হিসেবে ধরে নেয়ার-তা হল,ভারতকে আগ্রাসক হিসেবে দায়ি করা-প্রকৃত ঘটনা (১)অন্যভাবে মাননীয় রাষ্ট্রপতির চীন সফর অকৃতকার্য হতে পারে এবং প্রায়-ই জেনারেল খানের হয়ে মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও আপনার ব্যক্তিগত পক্ষপাতে বিবৃতি ছাপা হত যা কিনা নয়াদিল্লিতে অবাস্তব নেতাদের উপর বিবেচনা করা হত?
ডঃ কিসিঞ্জার। প্রথম প্রশ্নের প্রতি সম্মান রেখে বলছি,গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সমস্যায় আমাদের সাথে চুক্তিকে সফল অভ্যাগমনের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করবে আমাদের সেই প্রভাব নেই,অতএব,গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জনগণের আমাদের নীতির উপর নিষেধাজ্ঞা আছে বলে আমরা বিবেচনা করি না।
.
সংক্ষেপে, আমাদের নীতি হল সামঞ্জস্যপূর্ণ। সমগ্র গ্রীষ্মকাল ধরে আমরা ভারতীয় সরকারকে বলেছি যে আমরা এমন রাজনৈতিক বিবর্তন চাই বা সমর্থন করি যা স্বায়ত্তশাসনের পথে পরিচালিত হয়; এবং দ্বিতীয়ত, আমরা সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিরোধী ছিলাম, এবং আমরা এটি করেছিলাম চাইনিজদের মতামত কি হতে পারে তা থেকে স্বতন্ত্র থেকে, চাইনিজগণ জাতিসংঘে কি অবস্থান গ্রহণ করবে সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো আগাম তথ্য ছিল না, এবং আমরা অনেক স্বাধীনভাবে কাজ করেছি।
দ্বিতীয়ত, আমার সম্পর্কে প্রথমে বলতে গেলে, আমি যখন প্রথমবার ভারতীয় উপমহাদেশ সফর করি যখন আমি ছিলাম আলোচনার বিষয়বস্তু, ১৯৬২ সালে, পত্রিকার নথিগুলোতে যা খুব ভালোভাবেই খুঁজে দেখা যাবে, পাকিস্তানের পত্রিকায় অত্যন্ত উগ্রভাবে আমার সমালোচনা করা হয়েছিল, ভারতীয়দের প্রতি আমার হার্ভাড কর্তৃক তৈরীকৃত পক্ষপাতিত্বের কারণে, এবং এটি এত বেশি মাত্রায় ছিল যে আমাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে আমি যেন আমার পাকিস্তান সফর বাতিল করি।

পাকিস্তানের প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্ব নেই, এবং সেই মতামতগুলো যেগুলো আমি শুরুতে প্রকাশ করেছি, আমেরিকার অবস্থান সম্পর্কে,- অর্থাৎ, বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে এবং এই উপমহাদেশে ভারতের চরম গুরুত্ব সম্পর্কে – যেগুলো আমি সবসময়ই অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছি, এবং সেজন্য, আমি অনুরাগ সহকারে সেগুলো সমর্থন করি যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকার দ্বিদলীয় নীতির একটি অভিব্যক্তি হিসেবে।

প্রেসিডেন্টের কথা বলতে গেলে, ভারতীয় নেতাদের তুলনায় পাকিস্তানি নেতাদের প্রতি তাঁর অধিক অনুরক্তি রয়েছে এ ব্যাপারে আমি জ্ঞাত ছিলাম না, এবং সেজন্য আমি আজ সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি যে এটি কিসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করেন- যেমনটা আপনি জানেন, তাঁর বর্তমান পদের পূর্বে রাষ্ট্রপতির সাথে আমি পরিচিত ছিলাম না- কিন্তু তিনি আমার কাছে ব্যাখ্যা করেন যে ১৯৬৭ সালে তাঁর সফরে, তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অত্যন্ত উষ্ণভাবে অভ্যর্থনাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, এবং তিনি কোনোক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়েছিলেন এমন প্রতিবেদনগুলোর কোনো ভিত্তি নেই, এবং যে কোনো ক্ষেত্রে, পাকিস্তানে হামলা শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা যে উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রসারিত করেছি, তা যেকোনো ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে পরিষ্কার করে যে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের প্রতি আমরা কি ব্যাপক মূল্য জ্ঞাপন করি।

যদিও আমি বুঝতে পারছি যে কোন বিজ্ঞ কার্যধারা গ্রহণ করা হবে সে ব্যাপারে মতামতের আন্তরিক পার্থক্য থাকতে পারে, আমি মনে করি না আমরা আমাদের প্রতি ন্যায়বিচার করব যদি আমরা ব্যক্তিসাধারণের ব্যক্তিগত মতামতের বিরুদ্ধে তাদের উপর নীতিগুলো চাপিয়ে দেই। পাশাপাশি, আগ্রাসনের অভিযোগ এই অঞ্চলে প্রথম করা হয়নি।

প্র: প্রধানমন্ত্রী যখন গতমাসে এখানে ছিলেন তখন কি রাষ্ট্রপতির সাথে তাঁর বোঝাপড়ায় কোনো ব্যর্থতা ছিল, এই দেশ কি চায় এবং তিনি কি করার পরিকল্পনা করছিলেন সেক্ষেত্রে বোঝাপড়ার কোনো ব্যর্থতা?

ড.কিসিঞ্জার. আমাদের প্রকৃত অবস্থান কি তা আমরা ভারতীয় নেতাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলাম, রাষ্ট্রপতিও করেছিলেন এবং সেই সাথে করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। যে প্রস্তাবগুলো তৈরি করা হয়েছে আমরা সেগুলো উল্লেখ করেছিলাম – এই প্রস্তাবগুলোর কোনো উত্তর আমরা পাইনি, এবং এমন একটি সামরিক অপারেশন যে ঘটতে পারে তার বিন্দুমাত্র আভাসও আমাদের দেওয়া হয়নি; বস্তুত, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্থান এবং সামরিক অপারেশনগুলোর সূচনার মধ্যবর্তী সময়ে আমরা তিনটি কাজ করেছিলাম:

প্রথমত, আমরা ইসলামাবাদ সরকার এবং মুজিবুর কর্তৃক অনুমোদিত বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা অগ্রসর করতে চেয়েছিলাম, আমরা ইসলামাবাদ সরকারের সম্মতি পাইনি।

আমি শুধু বলছি আমরা কি করার চেষ্টা করছিলাম।

দ্বিতীয়ত, যখন তিনি এখানে ছিলেন তখন আমরা অত্যন্ত অক্লান্তভাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে সর্বোচ্চ যতটা ত্যাগ করা সম্ভব তা অত্যন্ত জরুরিভিত্তিতে করা প্রয়োজন, এবং আমাদের একটি উত্তর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এবং তারপর দেখা গেল, সেই সপ্তাহে সামরিক আক্রমণ সংঘটিত হয়েছে।

তৃতীয়ত, আমি এর আগে এটা উল্লেখ করিনি, মুজিবুরের পক্ষসমর্থন আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে আমরা পাকিস্তান সরকারের অনুমোদন পেয়েছিলাম, এসকল বিষয়ই ভারতীয় সরকারকে জানানো হয়েছিল, এবং তা সত্ত্বেও সামরিক আক্রমণ সংঘটিত হয়।

প্র.ড.কিসিঞ্জার, আপনি এক মুহূর্ত আগে যে কথাগুলো বললেন আমি সে বিষয়টির ব্যাখ্যা পাওয়ার নিমিত্তে একটি প্রশ্ন করতে চাই।
আপনি বললেন যে আগ্রাসনের অভিযোগ এই বিল্ডিং এ করা হয়নি। এ ব্যাপারে দুইটি প্রশ্ন আছে, প্রথম,

ড.কিসিঞ্জার. আমরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করিনা, কিন্তু এই বিষয়টি বলা হয়েছিল এই প্রসঙ্গে যে আমার এবং রাষ্ট্রপতির একটি ভারত বিরোধী মনোভাব রয়েছে।

প্র.এটি কি এই তাৎপর্য বহন করে যে আপনি সেই প্রকৃত আগ্রাসনের অভিযোগ পররাষ্ট্র বিভাগের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন? এটি আমার প্রথম প্রশ্ন।

ড.কিসিঞ্জার. না। এ ব্যাপারে সরকারের একটি অভিন্ন অভিমত রয়েছে।

প্র.দ্বিতীয়ত, আমি এখনো মি.লিসাগো এবং অন্যদের মনে যে প্রশ্নটি রয়েছে তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি, মি.জিয়েগলার শনিবারে ফ্লোরিডাতে বলেছেন যে ভারত একটি বৃহদায়তন সামরিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হয়েছিল, এবং তিনি ‘বৃহদায়তন’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন যা আমাদের কাছে এই বিল্ডিংটির মত শোনায়।

ড.কিসিঞ্জার: কিসের মত শোনায়?

প্র: এই বিল্ডিং থেকে আগ্রাসনের অভিযোগের মত, অন্তত, আমার কাছে।

ড.কিসিঞ্জার : আমরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করিনা। আমি এটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছিলাম যে এটি কোনো ব্যক্তিগত স্বতন্ত্র চিন্তাধারা নয়। ‘বৃহদায়তন সামরিক কর্মকান্ড’ -এই বাক্যটি যা রন জিয়েগলার ব্যবহার করেছিলেন সেটি হল একটি আনুষ্ঠানিক ভারতীয় বিবৃতি হতে উদ্ধৃতি যা বলছে, যে পূর্ব পাকিস্তানে বৃহদায়তন সামরিক অপারেশন শুরু হয়েছে এবং রন কেবলমাত্র ভারতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হতে এই উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করেছিলেন।

প্র:ড.কিসিঞ্জার, আপনি কি ইসলামাবাদ সরকার এবং বাংলাদেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার অবস্থার বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন? আলাপ-আলোচনা করতে তারা কতটা সম্মত? আপনি যা বলেছেন আমি সে ব্যাপারে পুরোপুরি বিভ্রান্ত। সরকার কি মুজিবুর কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে?

ড. কিসিঞ্জার : না। এটি হল এমন এটি হল এমন একটি বিষয় যা আমরা এখনো নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি, তাঁরা বলেছিলেন তাঁরা বিষয়টি বিবেচনা করবে। তাঁরা বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলতে সম্মত হয়েছে।

প্র: তাহলে, কেন আপনি এতটা নিশ্চিত ছিলেন যে এই আলাপ-আলোচনার ফলাফল হবে স্বায়ত্তশাসন, যে আলোচনার ব্যাপারে আপনার কাছে কোনো সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা নেই?

ড.কিসিঞ্জার : এক মিনিট। বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ব্যাপারে আমাদের কাছে নিশ্চয়তা ছিল। তবে তখনো আমাদের কাছে এই নিশ্চয়তা ছিলনা যে এই আলোচনাকারীদের নির্বাচন করবেন মুজিবুর।
প্র: তাহলে, এই আলোচনার ফলাফল যে হবে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন আপনার এই বিশ্বাসের ভিত্তি কি ছিল?

ড. কিসিঞ্জার : আমি বলিনি যে এটিই ঘটবে। আমি এটা বলেছি যে আমরা বলেছিলাম আমরা এটি সমর্থন করব, এবং এটি যাতে ঘটে সেজন্য পাকিস্তানের উপর আমাদের যে প্রভাব আছে আমরা তা ব্যাবহার করব, এবং আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়-পর্যায় অনুসরণ করতে আগ্রহী।

প্র: আমি ভেবেছি যে আপনি এটা বলেছিলেন যে-

ড. কিসিঞ্জার : আমি বলেছিলাম যে এটি হল আমাদের ব্যক্তিগত অভিমত এবং এটা প্রমাণ করা সম্ভব ছিল না;
এবং এটা কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি ছিল না যে, যদি একবার আলাপ-আলোচনা শুরু হয় এবং কিছু উন্নতি প্রদর্শন করা শুরু করে, তবে তা মুজিবুরের মুক্তির পথে পরিচালিত করবে -এমন সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে জোর দেইনি।

প্র: আমি ভেবেছিলাম আপনি বলেছেন এটা হল অনিবার্য।

ড.কিসিঞ্জার : আমি বলেছি এটা কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না, যে আমাদের অভিমত হল এই যে আলোচনার অনিবার্য ফলাফল হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং আমরা এই ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের সাথে কথা বলেছি এবং তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন যে পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষা এবং মুদ্রা এই বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য সকল ব্যাপারে তাঁরা পূর্ব-পাকিস্তানকে রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান করতে প্রস্তুত।

প্র: আপনি যা বলছেন তা থেকে বলা যায় এই আলাপ-আলোচনার ব্যাপারটায় আমরা খুব বেশি জড়িয়ে পড়ছি।

ড.কিসিঞ্জার : বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে না।

প্র: বিষয়বস্তুর ব্যাপারে না?
পূর্ব-পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন, ইত্যাদি।

ড.কিসিঞ্জার : বস্তুত, এই ধরণের আলাপ-আলোচনা কখনো শুরুই হয়নি।

প্র: ঠিক আছে, সবকিছু ঠিকভাবে সাজালে যে প্রশ্নটা আমি প্রকৃতপক্ষে করতে চাই তা হল: আজকে একটি প্রতিবেদন রয়েছে যে ইয়াহিয়া খান একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করার জন্য পূর্ব-পাকিস্তানের সহযোগিতা চেয়েছেন। এটি কি যে পথ আমরা অনুসরণ করছি এবং যা আমাদের লক্ষ্য তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? আমরা কি
এটি অনুমোদন করছি এবং এটি কি কোনোভাবে উৎসাহব্যঞ্জক?

ড.কিসিঞ্জার : আমরা এই অবস্থানটা গ্রহণ করতে পারি না যে আলাপ-আলোচনার প্রতিটা খুঁটিনাটির জন্য আমরা দায়ী। আমরা বেসামরিক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার বিষয়টিকে উৎসাহিত করেছি। যে সকল রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে আমি সে ব্যাপারে কোনো বিস্তারিত আলোচনায় যেতে চাই না। একটি দেশ হিসেবে আলাপ-আলোচনার প্রতিটি পদক্ষেপের দায়িত্ব নেওয়ার মত অবস্থানে আমরা ছিলাম না। আমি শুধুমাত্র এটি ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছিলাম যে, প্রথমত আমরা মানবিক উদ্বেগ প্রদর্শন করেছি, দ্বিতীয়ত মার্চের শেষে আমরা পূর্ব -পাকিস্তানের অবস্থার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। তৃতীয়ত, আমরা পূর্ব পাকিস্তানে সেই ড়াজনৈতিক অবস্থাগুলো তৈরি করতে চাচ্ছিলাম যা শরণার্থীদের ফিরে আসাটা সম্ভব করবে।

আলোচনার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আলোচিত হতে হবে ইসলামাবাদ এবং ভারতের মধ্যে এবং কোনো একটি নির্দিষ্ট সরকার যথাযথ নাকি অন্য কোনো সরকার যথাযথ সেটি হল এমন একটি বিস্তারিত বিষয় যে বিষয়ে আমরা আলোচনা করতে পারিনা। বিশেষত যখন আমি এ ব্যাপারে কোনো ধারণা নেইনি।

প্র: আমরা কি এই বিষয়ে আরো আলোচনা করতে পারি? তাহলে কি আমরা প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ এশিয়াতে সেই একই ভূমিকাটি পালন করছি যা আমরা মধ্যপ্রাচ্যে পালন করেছিলাম।
একজন সৎ দালালের ভূমিকা? আপনি কি আমাদের এটাই বলতে চাচ্ছেন?
.
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
আমরা একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেষ্টা করছি যা যুদ্ধের পথকে অপ্রয়োজনীয় করবে। আমরা ভারতের একটি প্রধান সমস্যা ছিলো বলে সনাক্ত করেছি। আমরা শনাক্ত যে পূর্ব বাংলার অবস্থা উদ্বাস্তুদের ফিরে যাওয়াতে কঠিন করেছে এবং একটি মানবিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্পর্কে আনার জন্য আমরা মানবিক এবং অন্যান্য কারণে শৃঙ্খলা শান্তি বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করেছি।
আমরা এখন যা বলেছি এবং শনিবারে যা বলেছিলাম, শান্তিপুর্ন সমাধানের আশা এখনো শেষ হয়নি, ২২ থেকে ২৯ তারিখের পরিস্থিতিতে সামরিক শক্তির ব্যবহার সমর্থন যোগ্য নয়। এটা আমদের অবস্থান এবং এর সাথে কোন দেশের পক্ষপাতের কোন সম্পর্ক নেই। এটা বিশ্বশান্তির উপর কেমন প্রভাব সৃষ্টি করে তার সাথে সম্পর্কিত।
প্রঃ এটি ভারতীয়রা বাংলাদেশের জন্য কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন আগ্রহী ছিল না, কিন্তু এটা (সামরিক হস্তঃক্ষেপ) চেয়েছিলেন এ ব্যাপারে আপনার রায় কি?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
আমি এ বিষয়ে কোন অনুমান করতে পারবে না। আমরা অবশ্যই শুরু থেকে তাদের বলেছি যে আমরা কি ইচ্ছুক এবং আমি অনুমান করতে চাই না।
প্রঃ শান্তি আলোচনার অচলাবস্থার জন্য যেই দায়ি হোক না কেন আপনি বা রাষ্ট্রপতি কী একান্তভাবে মনে করেন যে বর্তমান যুদ্ধবিগ্রহের জন্যে ভারতই একমাত্র আগ্রাসক?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
আমি এটা পুনরায় বলতে চাই- আমি আবেগের বশে বলতে চাই না যে সামরিক হস্তঃক্ষেপ সমর্থন যোগ্য। আমরা বলতে চাই একটি যুদ্ধবিরতি এবং সেনা প্রত্যাহার আবশ্যক এর পর আমার পূর্বে বর্নিত রাজনৈতিক পরিবর্তন আরোও বলিষ্ঠতার সাথে পরচালনা করা উচিত।
প্রঃ হেনরি , যদি থাকে, যুক্তরাষ্ট্র কী ভারত থেকে সামরিক পথ অবলম্বন করার কোন ব্যক্ষা পেয়েছ?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
আমরা কোন ব্যক্ষা পাই নি।
প্রঃ হেনরি শুরুতে আপনি পাকিস্তানিদের সাথে প্রকাশ্যে কিছু না করে গোপনে আমাদের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করার কথা বলেছেন। আপনি কি আমাদের একটি দৃঢ় উদাহরন দেখাতে পারবেন যেখানে, প্রতিশ্রুতি যেগুলি রাখা হয়নি বা পরবর্তি সমস্যার কারনে রাখা সম্ভব নয়, গোপন রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার সফল হয়েছে?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
এখন, দারাও, আমারা এখানে ঐ প্রতিশ্রুতির আলাপ করতেছি না যেগুলা আমরা…… রেখেছি। আমাকে মে মাস থেকে যেগুলো সম্পন্ন হয়েছে তার মাঝে থেকে কতগুলো বলি। পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ সামগ্রী আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করার ব্যাপার টা, বেসামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি সময়সূচি ঘোষণা; পূর্বপাকিস্তান আর্মির সামরিক গভর্নরকে মার্চের শেষে প্রতিস্থাপন, পুর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর প্রতিস্থাপন এবং বেসামরিক গভর্নর স্থাপন, ক্ষমার ঘোষনা, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করার ঘোষণা, যদিও তাদের সম্পর্কে কিছু বিতর্ক ছিলো, এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছায় নি কারন এটি বাংলাদেশের প্রার্থী উপস্থাপনের আগেই বাতিল হয়ে গিয়ছিলো, অথবা পাকিস্তানিরা বাতিল করে দিয়েছে। তারা কখনো কাউকে প্রত্যাখ্যান করে নি, আমাদেরকে মুজিবুরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার ডিফেন্স এটোর্নির সাথে কথা বলায় সম্মতি, পূর্ব পাকিস্থানে রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের ইঙ্গিত ইত্যাদি। আমি এটা বলছিনা যে এটা আমাদের আহ্বানে তারা এটা করেছে, কিন্তু এটা সত্যি যে তারা আমাদের আহ্বান জানানোর পরে এগুলো হয়েছে।
কিন্তু আমি পাকিস্তান সরকারের হয়ে কথা বলতে চাই না এবং এটাও দাবি করতে চাই না যে তারা আমাদের আহ্বানএর পরিপ্রেক্ষিতে এ কাজ করেছ, কিন্তু এইকাজ গূলো আমদের সুপারিশ করার পর হয়েছে।
প্রঃ আপনার কী মনে হয় গান্ধী সাহেবা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
আমি এমন শব্দ ব্যবহার করতে চাই না।
প্রঃ তিনি কী শান্তিপুর্ন সমাধান ব্যাতিত অন্য কোন পথ ক খোজা্র ইঙ্গিত দিয়েছেন?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
আমি এতটুকু বলতে পারি যে আমাদের সামরিক পন্থাই একমাত্র উপায় হিসাবে বিশ্বাস করার কোন কারন নেই এবং শান্তি পূর্ন সমাধানের জন্য কাজ শুরু করারজন্য আমদের কাছে কোন সময় ছিল না।
আমি পরিষ্কার করে বলি যে আমরা বিশ্বাস করি আমাদের অফুরন্ত সময় ছিল না, কিন্তু তারা আমাদেরকে একটি সময়সুচি দিতে পারতেন অথবা বেসামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তন বর্তমান সমস্যার জন্য দায়ী ব্যাক্তিদেরকে সামনের সারির ব্যাক্তিদের সরিয়ে কি পরিবর্তন নিয়ে আসতো তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে পারতো যা মাত্র তিন সপ্তাহ দূরে ছিল।
প্রঃ আপনি আগে বলেন যে আমরা সেখানের সমস্যা প্রসঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা কি আমাদার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মার্চের শুক্রবারের গোলাগুলি শুরু হবার আগপর্যন্ত আশাবাদি ছিলো?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
আমি মনে করি তারা অবহিত ছিলো।
প্রঃ তাদের কি অবহিত করা হয়েছিল?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
আচ্ছা, হয়তো আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত ছিলো না কিন্ত আমাদের সাধারন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত ছিলো।
প্রঃ আপনি কি আমাদের বলতে পারেন যতটুকু আমাদের জানানো হয়েছিলো এ সম্পর্কে তাদের মনোভাব কী ছিল?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
তারা একটি আনুষ্ঠানিক দায়সারা মনোভাব রেখেছে যা অন্তত যা ঘটেছে তাকে নিরুৎসাহিত না করার হয়তো ব্যবহারিক ফলাফল।
প্র: এই সঙ্কট সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলবে বলে আপনি মনে করেন?
ডঃ কিসিঞ্জারঃ
আমরা বিশ্বাস করি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি এই যে দুটি দেশ বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার সঙ্কটে স্বল্পমেয়াদি এবং দীরঘমেয়াদী শান্তির স্বার্থে সংযম প্রদর্শন।
আমরা অবশ্যই অনেক চেষ্টা করছি। আমরা সবসময় সফল না হতে পারি কিন্তু আমরা দক্ষিন এশিয়া সহ সর্বত্র সমস্যার সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আমি বিভিন্ন বক্তৃতায় অনেক বার তুলে ধরেছি একতরফা সুবিধা অর্জনের চেষ্টা নিকট ভবিষ্যতে সমষ্যা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা আশা করি সোভিয়েত ইউনিয়ন একই চেতনায় তার অবিতর্কিত প্রভাবের ব্যবহার করবে উপমহাদেশের সমস্যার সমাধান করার জন্য। এবং এই স্বল্পমেয়াদী প্রচেষ্টাকে বিপন্ন করবে না। কিন্তু আমরা এখনো অপেক্ষা করছি। আমাদের এখনো কনো মন্তব্য নেই।
প্রঃ প্রায় ২৫ বছর ধরে দক্ষিন এশিয়াতে নিরোপেক্ষতা বজায় রাখা এই মহান জাতির জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি পক্ষ সমর্থন করাটা কি সঠিক ভুমিকা হবে?
ডঃ কিসিঞ্জার
আচ্ছা, আমারা যন্ত্রনা কমানোর চেষ্টা করেছি এবং আমাদের মানুষ্কে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারন আদর্শের প্রতি সত্য থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমারা এটি প্রভাবখাটিয়ে করার চেষ্টা করি নি। আমরা উভয় পক্ষের সমর্থন সাপেক্ষে শান্তি বজায় রাখার জন্য করেছি। শান্তি রক্ষার স্বার্থে জাতিসংঘের সামনে উপস্থিত এই আশু সমস্যার জন্য আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই জাতিসংঘের সদস্য হিসাবে সামরিক শক্তির ব্যবহার কে সমর্থন করি না।
তাই পিটার তোমাকে এই আশু সমস্যার সাথে সামগ্রিক সমস্যার প্রতি আমাদের আচরন কে আলাদা করতে হবে। আশু সমস্যা এই যে নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে ১১-২ এ আমাদের অবস্থান ভেটো পেয়েছে। সোভিয়েত অউনিয়ন এবং পোল্যান্ড আমদের বিরোধিতা করেছে। এটা আমাদের অবস্থান নয় এটা আমাদের এবং ভারতের মাঝের দ্বন্দ্ব নয়। এটা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের কে বিতর্কের শান্তি পুর্ন সমাধানে আমাদের অবস্থা প্রকাশ করতে। এবং এটা বলা ভুল হবে যে একপক্ষ ৬ কোটি সাধারন মানুষ কে আঘাত করে এবং যারই এই সমস্যা সমাধান করার শক্তি আছে তাদের করা উচিত। এটা আন্তর্জাতিক অরাজকতার দিকে নিয়ে যাবে।
তাই শনিবারে যা বলা হয়ছিলো তা সামরিক হস্তঃক্ষেপ এর সম্পর্কে বলা হয়েছিল, এবং আজকে যা বলা হয়েছে তা আমাদের সামগ্রিক দৃষ্ট্ভঙ্গিকে সঠিক দিকে পরিচালনা করার জন্য।
প্রেসঃ আপনাকে ধন্যবাদ।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!