শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পররাষ্ট্র দপ্তর কর্মকর্তা কর্তৃক সিনেটর বার্চ বে’র পত্রের জবাব | সিনেটের কার্যবিবরণী | ২৭ অক্টোবর, ১৯৭১ |
এস ১৬৯২৪ কংগ্রেস-সম্পর্কিত দলিল-সিনেট ২৭ অক্টোবর,১৯৭১
রাষ্ট্র বিভাগ
ওয়াশিংটন,ডি.সি.,২৬শে অগাস্ট,১৯৭১.
মাননীয় বার্চ বে,
ইউ.এস. সিনেট,
ওয়াশিংটন,ডি.সি.
প্রিয় সিনেটর বেঃ মাননীয় সচিব আমাকে অনুরোধ করেছেন পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিষয়ে আপনার ১২ই অগাস্ট-এর চিঠির উত্তর দিতে।
এই সংকটে আপনার চিঠি অনেক দৃষ্টিভঙ্গির আভাস দেয়।আপনি যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তা কঠিন যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অতীব জটিল ও গম্ভীর নীতির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।আমি আশা করছি,আপনি সম্মত হবেন যে এর সমাধান-ও কঠিন,আমাদের সকলের জন্যই,যেহেতু এই সরকার এমন নীতি অনুসরণ করতে ইচ্ছুক যা আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে এবং এই সংকট উপশমে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।
শুরু থেকেই এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের পথ ছিল মূলত ত্রৈমাত্রিক।প্রথমত,মানবজাতির এই বিশাল দুঃখজনক ঘটনায় লাখো মানুষের দুর্ভোগ উপশম করায় মানবিক ত্রাণ প্রয়াসে আমরা সীমান্তের উভয় পার্শ্বে পুরোভাগে ছিলাম।আমরা এই দায়িত্ব পালনে মনঃস্থ হয়েছি।দ্বিতীয়ত,ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে অবশ্যম্ভাবী দ্বন্দ্বের ঝুঁকি রয়েছে তা এই সংকটকে প্রচণ্ডভাবে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে,তার কারণে আমরা উভয় দেশকে সংবরণ করতে পরামর্শ দিয়েছি।আমরা সেটাই জারি রেখেছি।তৃতীয়ত,এই সমস্যার গোঁড়ার কেন্দ্রবিন্দু চিহ্নিত করাটা অপরিহার্য,আমরা পাকিস্তান সরকারকে তাড়না দিয়েছি যাতে যত দ্রুত সম্ভব একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে জরুরি আলোচনা শুরুর পদক্ষেপ নেয়।যতক্ষণ পর্যন্ত,আমরা এই প্রক্রিয়ায় কোনো অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে পারব,আমরা এই চেষ্টা জারি রাখব।
আমরা বিশ্বাস করি যে এই পরিস্থিতিতে এটাই সঠিক পদ্ধতি।এই নীতি তৈরিতে আমরা বিভিন্ন প্রয়াসের উদ্যম নেয়ার মনঃস্থির করেছি,এমন একটি সংকটের মুহূর্তে এটা করতে উভয় সীমাবদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতা সম্মন্ধে অবগত আছি যে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রক্রিয়ায় বাইরের কোন শক্তি প্রভাব ফেলতে পারে ও এমন দুঃখজনক ঘটনার সাথে সঙ্গতি রেখে পুরো মানব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াশীল হতে হবে।
এখন আমি আপনাকে আমাদের নীতির বিভিন্ন উপাদানের ব্যপারে আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছি।
এখানে একটি বহুবিস্তৃত ও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে,১৯৭১ সালের মার্চ মাসের সংকটপূর্ণ দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমাণে অস্ত্র যোগান দিয়েছে পাকিস্তান কে।বাস্তবে,আমরা কোনো মারাত্মক সামরিক মারণ-সামগ্রীর
যোগান দেইনি যখন থেকে পাকিস্তানে ১৯৬৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের সামরিক অনুদান কর্মসূচি স্থগিত (পরে বাতিল) হয়।পাকিস্তান সেই সময় হতে চীন, ইউএসএসআর ও ফ্রান্স সহ বিভিন্ন সরবরাহকারী থেকে উপকরণ সংগ্রহ করতে থাকে।আমরা ধারণা করতে পারি যে এই সরঞ্জাম এর কিছু ও যেগুলো আমরা আগে সরবরাহ করেছি তা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবহৃত হয়েছে,কিন্তু আমাদের এই বর্তমান সংকটে তার পরিমাণের অনুপাত জানার কোনো পন্থা নেই।ইউ.এস. এর সরঞ্জাম এর ব্যপক ব্যবহারে আমরা অনুতপ্ত এবং পাকিস্তান সরকারকে তাই পরামর্শ দেয়া হয়েছে,তা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ সুরক্ষায় সামরিক শক্তির ব্যবহারকে সার্বভৌম অধিকার রক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায় হিসেবে ভাবে।
১৯৬৫ সাল হতে পাকিস্তানের কাছে পূর্বের পাঠানো ইউএস সরঞ্জামে যেসব মারণ সামগ্রী যেমন পরিবহন ও যোগাযোগ সামগ্রী এবং খুচরা যন্ত্রাংশ আমরা বিক্রয় করেছি,তা বিশাল অনুপাতে কমানো হয়েছে।কিছু গোলাবারুদ-ও বিক্রয় হয়েছিলো।এই বছরে মার্চ-এর শেষের দিকে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর,আমরা ভবিষ্যতে সকল বিক্রয় বাতিলের ব্যবস্থা নিয়েছি-শুধুমাত্র সেইসব সামগ্রী ছাড়া যেখানে বৈধ অনুমতিপত্র বিশেষভাবে লক্ষণীয়।সেই সময় পর্যন্ত বৈধ অনুমতিপত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানে যা হয়েছে,প্রায় পুরোটাই অতিরিক্ত অংশে হয়েছে এবং,যেহেতু অনেক অনুমতিপত্র হয় মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা কাজে লাগানো হয়নি তা ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষের বেশি না।কোনো সামরিক গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।সাম্প্রতিক সময়ে যা যাত্রাপথে রয়েছে তার সংখ্যা চল্লিশ লক্ষের নিচে,আর এই সংখ্যাটা কমতে থাকবে যেহেতু বাকি অনুমতিপত্র ব্যবহার করা হয়ে গেছে অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ।
অতঃপর আমরা যে ব্যাপারে আলোচনা করছি তা শুধু একটি ছোট সংখ্যা নয় কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে এর সামরিক প্রভাব সামান্য।আমাদের ধারণা হয়নি যে অবশিষ্ট চালানের উপর আমাদের পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত কারণ আমাদের ইচ্ছা পাকিস্তান সরকারের সাথে অবাধ যুদ্ধ এড়ানো যা শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমাদের যে ভূমিকা তা পালনে সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে।
অর্থনৈতিক সহায়তায় আমরা একভাবে আমাদের পথে চালিত হয়েছি।যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হতে আমরা নতুন কোনো দ্বিপার্শ্বিক সহায়তা প্রদান করি নি(শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা ছাড়া),কিন্তু আমরা ধারণা করছি যে আনুষ্ঠানিকভাবে চলমান কোনো প্রকল্পকে বন্ধ করাটা শুধুমাত্র পাকিস্তানের সাথে সামগ্রিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে যে নমনীয়তা আমরা আশা করি তাতে বিপরীত ফল আনবে তা নয়,চূড়ান্ত বিশ্লেষণে পাকিস্তানের জনগণের জন্য-ও ক্ষতিকারক হবে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবস্থা এমন,সবক্ষেত্রে না হলেও,পাকিস্তানে অন্যান্য সাহায্যদাতাদের ক্ষেত্রে।যেহেতু ভবিষ্যতের জন্য আমরা বলেছি যে আমরা আমাদের সাহায্য আবার শুরু করার আশা রাখছি যার উন্নয়ন মার্চ এর ঘটনাবলির আগে আশাপ্রদ ছিলো,কিন্তু আমরা তা শুধুমাত্র করতে পারব জাতীয় উন্নতি পরিকল্পনার প্রসঙ্গে উভয়পক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পুনরালোচনার মাধ্যমে।পাকিস্তানের দ্বারা এমন পুনরালোচনা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পূর্ণ দায় নিবে।আমরা বিশ্বাস করি না যে অন্যসব দাতা থেকে আদতে এই পরিস্থিতি আলাদা।
আপনি মানবিক সহায়তায় আমাদের ভূমিকা দেখুন।সেখানে আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার এবং,আশা করছি,অক্ষুণ্ণ থাকবে-যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মানুষের ভোগান্তি কমানো ও ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষ আটকাতে আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কার্যকর ও দৃঢ়ভাবে সহায়তা করেছি।রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও সচিব উভয়ই এই প্রয়াসে পূর্ণ সহায়তা করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা করতে গিয়ে নিশ্চিতভাবে অঙ্গীকার করা মুশকিল,যে আমাদের ত্রাণ বিতরণ প্রত্যেকক্ষেত্রে পূর্ণ ও কার্যকরভাবে কাজে লাগবে,কিন্তু আমরা এইটুকু নিশ্চিত যে আমাদের ও অন্যান্যদের ত্রাণ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষদের কাছে পৌঁছাচ্ছে।এই বিশ্বাস দৃঢ় হবে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে পূর্ণ ও বাস্তব সাহায্য প্রদানের সক্রিয়তার মাধ্যমে।
এটা আমাদের দৃঢ় আশা ও বিশ্বাস যে যেহেতু পূর্ব পাকিস্তানে ইউএন দ্বারা পরিচালিত হয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন এর প্রয়াস চলছে তা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের বিশ্বাস পুনুরুদ্ধারে সাহায্য করবে,যা পালাক্রমে ভারতে থাকা শরণার্থীদের ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে অবদান রাখবে।আমাদের এই হিসাবে কোনো ভ্রম নেই,যাহোক,যদিও আমরা খুব ভালভাবে জানি যে লাখো শরণার্থীর উল্লেখযোগ্য হারে ফিরে যাওয়া হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি শরণার্থীদের বিশ্বাস কে উদ্বুদ্ধ করে।
এই সকল সমস্যা আপনার চিঠিতে উল্লেখিত মৌলিক দুটি বিষয় কে বর্ণন করে,যা হল,পাকিস্তানের দুই অংশকে পুনর্মিলনে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে অবদান রাখতে পারি।দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের নীতিতে এগুলো মৌলিক উদ্দেশ্য।আমরা বিশ্বাস করি যে এসব কাজ নিষ্পাদনে কোনো উন্নতি চাইলে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সাথে সক্রিয়ভাবে সহকারী মনোভাব বজায় রাখতে হবে।তারা কিভাবে তাদের সমস্যার সমাধান করবে তাতে যেমন আমরা নির্দেশ দিতে পারি না এবং আমাদের অবশ্যই আমাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত।কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে এটা শুধুমাত্র তাদের প্রত্যেকের সাথে সতন্ত্র সম্পর্ক রাখা যাতে আমরা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রিত উপদেশ দিতে পারি এবং এই বিশাল সমস্যার সমাধানে উদ্বুদ্ধ করতে পারি যার কারণে এই দুই দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে ও উপমহাদেশের শান্তিকে বিঘ্নিত করেছে।
আমি জানি যে এই বিভাগের প্রত্যক্ষ কর্মকর্তারা আপনার বা আপনার কর্মচারীবৃন্দের সাথে মিলিত হয়ে আনন্দিত হবেন যদি আপনি এই সকল বিষয়ের কোনো বিষয়ে বিবরণাদি চান।দয়া করে যখনই এই বিভাগ কোনো সহায়তা প্রদান করতে পারবে নির্দ্বিধায় তখনি আমাদের আহ্বান করুন।
আপনার একান্ত বাধ্যগত,
হ্যারিসন এম স্যামস,
কংগ্রেসসম্পর্কিত সম্পর্কের জন্য
কার্যনির্বাহক সহকারী সচিব।
.