You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.23 | আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সির রিপোর্ট (অংশ) | পররাষ্ট্র দপ্তর - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সির রিপোর্ট (অংশ) পররাষ্ট্র দপ্তর ২৩ আগস্ট ১৯৭১

DEPARTMENT OF STATE
AGENCY FOR INTERNATIONAL DEVELOPMENT
Washington D.C. 20523
August 23,1971

Disaster Memo, Number Four
East Pakistan Civil Strife and Cyclone Victims.
SITUATION SUMMARY

জাতিসংঘ ত্রাণ কার্যক্রমের ভূমিকাঃ

পূর্ববর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী ২২ মে ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ করে। জাতিসংঘ এই দায়িত্ব গ্রহণে রাজি হয়, এবং পাকিস্তান সরকারের সাথে সমন্বিত ভাবে একটি ত্রাণকার্য পরিচালনার রূপরেখা ঠিক করতে বিশেষ দূত হিসেবে জনাব ইসমাত কিট্টানিকে প্রেরণ করা হয়।

জুন মাস জুড়ে জাতিসংঘ এই ত্রাণ কার্য সফল ভাবে পরিচালনার জন্য বেশ কিছু কর্মী নিয়োগ করে। এর মধ্যে ছিলেন ঢাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত জাতিসংঘের ত্রাণ কার্য সমন্বয় বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি জনাব বাহগাত-এল- তাউইল, নিউইয়র্ক ও জেনেভায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সদর দপ্তর প্রতিনিধি ও জনাব কিট্টানির সহযোগী জনাব স্টিফেন আর ট্রিপ, এবং জনাব গ্লেন হেইডন, যার দায়িত্ব ছিল ঢাকায় কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করে জনাব এল-তাউইল কে ত্রাণ এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে সহায়তা করা। এরমধ্যে আরো অন্তর্গত ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বিশেষ দল, খাদ্য এবং কৃষি বিষয়ক সংস্থা সমূহ এবং বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম যাঁদের দায়িত্ব ছিল খাদ্য ও স্বাস্থ্য সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা তদারক করা। একই সময়ে ইউনিসেফ পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ, WFP এবং WHO এর সাথে সমন্বিত ভাবে মা ও শিশুদের খাদ্য চাহিদা পূরণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।

১৫ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাথমিক ত্রাণ সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার উপরে জাতিসংঘ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রেস রিলিজ প্রেরণ করে। এটি কয়েকটি বিশেষ ভাগে বিভক্ত ছিল। ১১ আগষ্ট জাতিসংঘ প্রতিবেদন দেয় যে তাঁরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মী নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন এবং তাঁদের কার্যক্রমের প্রথম ধাপ অচিরেই শুরু হতে যাচ্ছে। এই ধাপের অন্তর্গত ছিল ৩৮ জন কর্মীকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রেরণ করা। জাতিসংঘ জানায় যে এই ৩৮ জনের কেউ কেউ ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছেন, বাকিরা গন্তব্যের কাছাকাছি রয়েছেন। আশা করা হয় যে শূন্য পদ গুলো মাস শেষের আগেই পূর্ণ হয়ে যাবে। এই দলে ছিলেন ঢাকায় অবস্থিত সেক্রেটারি জেনারেলের অফিসের জন্য নিয়োজিত অতিরিক্ত কর্মীবৃন্দ, কৃষি মন্ত্রণা বিষয়ক একটি দল, বন্দর এবং নৌ যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক, স্বাস্থ্য এবং সাধারণ ত্রাণ সমস্যা সমাধানের জন্য একটি অপারেশন ইউনিট, যার অন্তর্গত ছিলেন ৪ জন আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, এবং একটি প্রশাসনিক ইউনিট যাঁদের মধ্যে ছিলেন আর্থিক সংস্থান, পরিবহন এবং যোগাযোগ বিষয়ে দক্ষ কর্মীবৃন্দ।

পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় জাতিসংঘকে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

মূল সমস্যা সমূহ সনাক্তকরণঃ

দুর্গতদের কাছে ত্রাণ সাহায্য পৌঁছে দেবার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল ভেঙ্গে পড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর কারণ হল পর্যাপ্ত পরিমাণ জলযানের অভাব, এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়াও আরো কিছু সমস্যা সমাধানের অপেক্ষায় ছিল। যেমনঃ ১) আমদানিকৃত খাদ্যের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা, ২) বিভিন্ন সমবায় সমিতি, ঋণ প্রকল্প ও অন্যান্য প্রকল্প পুনরায় চালু করে গ্রামের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ৩) সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ, ৪) সেচের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি। ধারণা করা হয় যে প্রতি টন সারের স্বল্পতার ফলে পরবর্তীতে ৫ টন খাদ্য শস্য আমদানী করা লাগবে।

পরিবহন এবং বিতরণঃ সাম্প্রতিক সাফল্য সমূহ

২৬ জুলাই তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তান সরকার উপকূলীয় জলযান সমূহের সদ্ব্যবহার সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা পেশ করেছে। ২৮ জুলাই তারিখে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গভর্নর অভ্যন্তরীন নৌ যোগাযোগের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি নিয়োগ দিয়েছেন। এই কমিটির উদ্দেশ্য হল অভ্যন্তরীন নৌ যোগাযোগ যত বেশি সম্ভব বৃদ্ধি করা। সরকার নৌ যোগাযোগের সমন্বয়ের জন্য নারায়ণগঞ্জে একটি সদর দপ্তর ও চট্টগ্রামে একটি আঞ্চলিক দপ্তর স্থাপন করে। আশা করা হয় যে এই কার্যক্রমের ফলে বিদেশ থেকে আগত ত্রাণবাহী জাহাজগুলো সুবিধা পাবে, এজন্য পাকিস্তান সরকারের সাথে ৩টি চুক্তির মাধ্যমে এই প্রজেক্টে ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করা হয়। এছাড়াও এই চুক্তি অনুযায়ী ২৬ টি কোস্টার লিজ নেওয়া হয় যাদের প্রথম টি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করতে অগাস্টের ১ তারিখ পূর্ব পাকিস্তান পৌছায়। অক্টোবর এর ১ তারিখের আগে আরো ৮টি কোস্টার পৌছানোর চুক্তি হয়। এই ৯টি জাহাজের সম্মিলিত ধারণ ক্ষমতা ছিল ৬,৩০০ টন এবং আশা করা যাচ্ছিলো যে এগুলি মাসে ৩ বার যাতায়াতের মাধ্যমে ত্রাণ কার্য পরিচালনা করতে পারবে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে জানা যায় যে তাঁদের ২৪টি জলযান জুলাই এর শেষভাগে নিরাপদে ভাল অবস্থায় ফিরে আসে। এই জাহাজ গুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আদেশে পরিচালিত হয়েছিল।

শরনার্থীঃ

৬ অগাস্ট পাকিস্তান সরকারের প্রদেয় হিসাব অনুযায়ী ১০৭,০৯৮ জন শরনার্থী ভারত থেকে পাকিস্তানে ফিরে এসেছেন। এরমধ্যে ২৫০০৬ জন ফিরেছে্ন শরনার্থী অভ্যর্থনা কেন্দ্রের মাধ্যমে, এবং ৮২,০৯২ জন ফিরেছেন অচেনা পথ ধরে। এদের মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার জন অমুসলিম বলেও দাবি করা হয়। ১০ জুন তারিখ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ২৯টি শরনার্থী কেন্দ্র স্থাপন করে পাকিস্তান সরকার।

অর্থনীতিঃ

অর্থনীতির অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে, যা কিনা ১১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলন এর ফলে করুণ অবস্থায় পতিত হয়েছিল, এবং এই আন্দোলন জুলাই মাসের দিকে থিতিয়ে এসেছে। বেশিরভাগ শিল্প কারখানা চালু হয়, কিন্তু শ্রমিকদের মাত্র ৫০ ভাগ কাজে যোগদান করে। উৎপাদনের হার ছিল স্বাভাবিক অবস্থার ৪০ শতাংশ। বড় শহরে ব্যবসা বাণিজ্যের এক তৃতীয়াংশ পুনরায় চালু হয়। আশা করা হয় যে কৃষিজ উৎপাদন ১০ থেকে ১৫ ভাগের চেয়ে হ্রাস পাবে না। সম্পূর্ণ অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়া যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই খাতে উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই অর্থনীতি এভাবেই স্থবির থাকবে।

কৃষিঃ

হাজার হাজার কৃষক তাঁদের জমি ছেড়ে চলে গেছেন যা পূর্ব পাকিস্তানের কৃষি খাতকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে। কৃষকদের এই প্রস্থানের ফলে সীমান্তবর্তী এলাকা ছাড়াও অভ্যন্তরীন কিছু এলাকাও প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে খুলনা, দিনাজপুর এবং রাজশাহী জেলা।

জুলাই ১৯৭১ এর ইউ এস এইডের এক জরিপ অনুযায়ী ১৯৭২ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হবে ৯.৬৪ মিলিয়ন টন, যা ১৯৭০ অর্থবছরের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন থেকে ১২ শতাংশ কম। গড় শস্য উৎপাদন বছরে ১১ মিলিয়ন টন। উপরন্তু অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য অতিরক্ত আমদানী করতে হয় চাহিদা মেটাতে। অর্থনীতির এই বেহাল দশার ফলে এবার অতিরিক্ত আরো দেড় মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য আমদানী করতে হবে যার অর্থ মোট আমদানীর পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ মিলিয়ন টনের কাছাকাছি। এর আগে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ আমদানি ছিল দেড় মিলিয়ন টন, ১৯৭০ সালে।

১৯৭২ অর্থবছরে এই পরিমাণ খাদ্যশস্য যোগান দিতে ব্যাপক এবং প্রচন্ড প্রচেষ্টার প্রয়োজন, যেখানে পরিবহন ও বিতরণের বহুল সমস্যা রয়েছে, এরপরেও ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতি এড়াতে হলে এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান আবশ্যক।

ভোলা দ্বীপের পরিস্থিতির উপর বিশেষ প্রতিবেদনঃ

কৃষি ক্ষেত্রের এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইউ এস এইডের দুজন প্রতিনিধি জুলাই এর ২৪ তারিখ ভোলা দ্বীপের কৃষিক্ষেত্রের অবস্থা ও বিতরণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন। তাঁরা দেখেন, খাদ্য শস্য বিতরণ ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক, তবে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাঁদের প্রতিবেদনে দেখা যায় যে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চাল উৎপাদন এর সম্ভাবনা বেশী, কারণ প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার একর জমিতে আউস ধান রোপণ করা হয়েছে ও ফসল সংগ্রহ করা হয়েছে। ইউ এস এইডের দুজন প্রতিনিধি মন্তব্য করেন যে, যদিও নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় ও মার্চের বিশৃংখল অবস্থার প্রভাব থেকে ভোলার খাদ্য পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করছে, তবে অন্যান্য ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকার অবস্থা এমন হবার সম্ভাবনা কম। বর্ষাকালে অন্যান্য দ্বীপ অঞ্চল যেমন মনপুরা বা অন্যান্য দ্বীপ এর তুলনায় ভোলা অঞ্চলে যাতায়াত তুলনামূলক সহজ।
Russel S. McClure
Disaster Relief Coordinator.