শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক পাকিস্তানে অস্ত্র প্রেরণ প্রশ্নে কংগ্রেস সদস্য মাইকেল হ্যারিংটনের পত্রের জবাব ও এতদ সংক্রান্ত বিবৃতি | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ২৬ জুলাই, ১৯৭১ |
পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র প্রেরণ
স্বরাষ্ট্র দফতর
ওয়াশিংটন ডি.সি, ২১ জুলাই, ১৯৭১
সম্মানিত মাইকেল জে. হ্যারিংটন
প্রতিনিধি পরিষদ
ওয়াশিংটন ডিসি।
জনাব হ্যারিংটনঃ পাকিস্তানে আমাদের সামরিক সরবরাহ নীতির বিবৃতি প্রদানের জন্য আপনার ২৯ জুলাইয়ের চিঠির প্রত্যুত্তর দিতে সেক্রেটারি আমাকে বলেছেন।
এই বিষয়টির ওপর জনগণের আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে এবং এই সংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি দূর করার জন্যে আমরা আমাদের বিবৃতিটি প্রস্তুত করেছি। পূর্ব পাকিস্তানে যে যুদ্ধ চলছে তার ফলে আমরা যে সকল ব্যবস্থা নিয়েছি তার ব্যাখ্যাও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমি আমাদের পূর্বতন সামরিক সরবরাহ নীতিটির দিকেও আপনার দৃষ্টিগোচর করানোর ইচ্ছে রাখি যে নীতিটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে উনিশশো একাত্তরের ২৫ মার্চের পরে তাদের পররাষ্ট্র সামরিক বিক্রয় কর্মসূচির আওতায় থাকা সামরিক সাজসরঞ্জামের সরবরাহ স্থগিত করেছে। যদিও সামরিক দিক থেকে বিবেচনাক্রমে, এই নীতিটি গোলাবারুদসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের বিষয় আওতায় এনেছে, কিন্তু এটি এফএমএস এবং আগের লাইসেন্সকৃত এবং সামনে লাইসেন্স করা হবে এমন বানিজ্যিক সরবরাহগুলো আওতাভুক্ত করেনি। এরপরেও আমি আপনাকে এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত করতে চাই যে আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে আপনার থেকে স্বেচ্ছায় কোনকিছু গোপন করা বা আপনাকে দিগভ্রষ্ট করার কোন অভিপ্রায় আমাদের নেই।
পুরো বিষয়টির ওপর আমাদের অবস্থানের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা বিবৃতিটিতে দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি এতে প্রদত্ত তথ্য আপনার সাহায্যে লাগবে। আপনার কোন কাজে লাগতে পারি এমন বিশ্বাস থেকে যেকোন সময় আপনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আপনার একান্ত,
ডেভিড এম. এবশায়ার
সভাসংক্রান্ত সম্পর্কের সহকারী সম্পাদক
ভুক্তিঃ সামরিক সরবরাহ নীতির বিবৃতি
১ জুলাই ১৯৭১ – পাকিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরবরাহ নীতি
১৯৬৫ সালে যখন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্বেষভাব ছড়িয়েছিলো তখন উভয় দেশেই সামরিক সাজসরঞ্জাম সরবরাহের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পুনরায় শুরু করা কিছু সাধারণ সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাদে সকল ধরণের সাহায্য বন্ধ করা হয়েছিলো।
১৯৬৬ সালে নিষেধাজ্ঞাটি কিছুটা শিথিল করা হয় যার ফলে উভয় দেশেই অক্ষতিকর এবং যোগাযোগ, চিকিৎসা ও পরিবহনের জন্য সরঞ্জাম বিক্রয় করার অনুমতি দেয়া হয়।
১৯৬৭ সালে নীতিটি আরো কিছুটা শিথিল করে গোলাবারুদ এবং ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে যুক্তরাষ্ট্র বিমান ও ট্যাংকের মত যে সামরিক সরঞ্জামগুলো সরবরাহ করতো তার অতিরিক্ত অংশগুলো বিক্রয়ের জন্যে অনুমতি দেয়া হয়। উনিশশো সত্তরের অক্টোবরে, এককালীন ব্যতিক্রম হিসেবে মারণাস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞাটি জারি রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এসকল সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানে তিনশ সাঁজোয়া যান এবং প্রায় বিশটি বিমান পাঠানো অনুমোদিত হয়।
পাকিস্তানের সাথে একটা গঠনমূলক রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই পরিমিত পরিমাণের সামরিক সরবরাহ জারি রাখার নীতিটি গ্রহণ করা হয়। আমরা এও নিশ্চিত করতে চাইছিলাম যে পাকিস্তানে যেন অন্য কোন সামরিক সরবরাহের উৎসের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল হতে বাধ্য না হয়।
পররাষ্ট্র সামরিক বিক্রয় কর্মসূচি (এফএমএস) অথবা উৎপাদক কিংবা পরিবেশকদের কাছ থেকে পাকিস্তান সরকার বাণিজ্যিকভাবে যুদ্ধোপকরণের তালিকা ক্রয় করে থাকে। এফএমএস কর্মসূচির আওতায়, প্রতিরক্ষা দফতরের মজুদ থেকে সরাসরি কিংবা প্রতিরক্ষা দফতরের বানিজ্যিক ঠিকাদারদের কাছ থেকে উপকরণগুলো ক্রয় করা হয়। রফতানির আগে, যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধির কাছে এফএমএস কর্মসূচির আওতায় সরবরাহকৃত অথবা বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহকৃত সকল উপকরণ রফতানির জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে।
কিছু কিছু উপকরণ সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই কাজে লাগে (যেমনঃ নির্দিষ্ট ধরণের গাড়ি এবং ট্রাকের অতিরিক্ত অংশ)। যদিও এগুলো যুদ্ধোপকরণের তালিকায় নেই তবুও বাণিজ্য দফতরের লাইসেন্সের প্রয়োজন হতে পারে।
পূর্ব পাকিস্তানে ২৫-২৬ মার্চে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তানে সামরিক সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা কিছু নির্দিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নিয়েছি। কোন আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা হলেও, নিম্নলিখিত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাগুলো এপ্রিলের প্রারম্ভেই নেয়া হয়েছেঃ
(ক) প্রতিরক্ষা দফতরের মজুদ হতে এফএমএস উপকরণের সরবরাহের ওপর লাগাম দেয়া হয়েছে; এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে এই ধরণের কোন উপকরণ ছাড় পায়নি।
(খ) এফএমএস অথবা বাণিজ্যিক বিক্রয় উভয় ক্ষেত্রেই যুদ্ধোপকরণের তালিকায় যে সকল উপকরণ আছে সেগুলোর নতুন লাইসেন্স প্রদান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের (একবছরের জন্য বৈধ) নবায়নের ওপর স্বরাষ্ট্র দফতরের যুদ্ধোপকরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কার্যালয় হতে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।
(গ) অক্টোবরে ঘোষিত এককালীন ব্যতিক্রম হিসেবে অস্ত্র সরবরাহের নীতির ওপর যেকোন ব্যবস্থা নেয়া স্থগিত করা হয়েছে; এর আওতাভুক্ত কোন উপকরণ পাকিস্তানে বা পাকিস্তানের কোন প্রতিনিধির কাছে সরবরাহ করা হয়নি। সরবরাহের জন্য কোন তফসিলও ঘোষনা করা হয়নি।
এপ্রিলের প্রারম্ভে এসকল অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নেবার আগে, পাকিস্তান সরকার অথবা এর প্রতিনিধিরা কিছু উপকরণের বৈধ অনুমতি এবং অধিকার নিয়েছে যা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে বলবত আছে। এ ছাড়াও, এপ্রিলের প্রারম্ভে এসব ব্যবস্থা নেবার আগে, এফএমএস-র ডিওডি বাণিজ্যিক ঠিকাদার এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক সরবরাহকারীদের ইস্যুকৃত বৈধ লাইসেন্সগুলো এখনো বলবত আছে। কিছু কিছু উপকরণ যা পাকিস্তান সরকারের বৈধ সম্পত্তি সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানে জাহাজের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে আরো সামরিক সরবরাহ ভবিষ্যতে পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
পাকিস্তানে আমাদের সামগ্রিক সামরিক সরবরাহের নীতি ঘনিষ্ঠ পর্যালোচনায় থাকবে।