শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সিনেটর কেনেডীর কাছে লিখিত পররাষ্ট্র দপ্তরের পত্রগুচ্ছ | সিনেট জুডিশিয়ারী কমিটির শরণার্থী উপকমিটির রিপোর্টঃপরিশিষ্ট-৪ | ২৮ জুন, ১৯৭১ |
(সিনেট জুডিশিয়ারী কমিটির শরণার্থী উপকমিটির রিপোর্ট পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের ত্রাণ সমস্যাঃ পরিশিষ্ট ১, ২৮শে জুন, ১৯৭১)
রাষ্ট্র বিভাগ,
ওয়াশিংটন,ডি.সি.,২০শে এপ্রিল,১৯৭১
মাননীয় এডওয়ার্ড এম কেনেডি,সভাপতি,
শরণার্থী উপকমিটি
জুডিশিয়ারী কমিটি
সিনেটর
ওয়াশিংটন,ডি.সি.।
প্রিয় সিনেটর কেনেডিঃ মাননীয় সচিব আমাকে আপনার ৬ই এপ্রিল,১৯৭১-এর চিঠির উত্তর দিতে বলেছেন যা আপনি পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক দ্বন্দ্ব ও এই অবস্থায় আপনার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করবেন।
আমরা পূর্ব পাকিস্তানের এই পরিস্থিতিতে আমাদের সকল তথ্য সম্পূর্ণরুপে আপনার সাথে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।সেই সূত্রে আমি আনন্দিত যে ডেপুটি সহকারী সচিব ক্রিস্টোফার ভ্যান হোলেন-এর অনুষঙ্গী হয়ে এইড-এর মাননীয় হারবার্ট রীস ও বিভাগের মাননীয় ক্লিভ ফুলার পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক নিয়ে গত সপ্তাহে আলোচনা করেছেন কমিটি সদস্য মাননীয় ডেল ডা্হ্ হানি ও মাননীয় জেরী টিনকার এর সাথে।সহকারী সচিব সিসকো আপনার চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করবেন।
মাননীয় ভ্যান হোলেন সভায় যেভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন,আমরা পূর্ব পাকিস্তান সম্বন্ধে আপনার উদ্বেগ অনুধাবন করছি এবং সেখানকার এই পরিস্থিতি সম্বন্ধে নীরব নই।২৫শে মার্চ সামরিক যুদ্ধ শুরুর সময় থেকে এই এলাকায় মৃত্যু ও ধ্বংসের কারণে আমাদের যে উদ্বেগ,বিভিন্ন উপলক্ষে রাষ্ট্রের মুখপাত্র বিভাগ তাতে গুরুত্ব আরোপ করেছে,আমাদের ইচ্ছা পাকিস্তান সরকারকে সহায়তা করা একটি আন্তর্জাতিক মানবিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে,এবং আশা রাখি একটি রাজনৈতিক বাসস্থানের।
পূর্ব পাকিস্তানে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবহারেও আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি,যদিও,উল্লেখ্য,আমাদের তথ্য অনুযায়ী এই সকল অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত।এটা ধারণা করা যাচ্ছে যে অস্ত্র বেশ কিছু সংখ্যক দেশ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে,যার মধ্যে চীন ইউএসএসআর-ও অন্তর্ভুক্ত,এবং যুক্তরাজ্য থেকেও অস্ত্র আসছে।যেহেতু ১৯৬৫ সাল থেকে আমরা পাকিস্তানের মানচিত্রের আভিমুখ্যের উপর একটি সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা স্থাপন করেছি,আমরা কোনোরকম মারাত্মক সামরিক মারণাস্ত্র পাকিস্তানে পাঠাইনি।গত অক্টোবর-এ আমরা একবার পাকিস্তানকে সীমিত পরিমাণে মারণাস্ত্র বিক্রয় করার ব্যতিক্রমী ঘোষণা দিয়েছিলাম।এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছুই প্রদান করা হয়নি এবং এমনকিছু প্রক্রিয়াধীন-ও নেই।গত ছয় সপ্তাহ যাবত এই বিষয়ে কোনো প্রায়োগিক আলোচনা হয়নি।বিষয়টি পর্যালোচনাধীন রয়েছে।
উপরন্তু,আমাদের একটি ছোট কার্যক্রম রয়েছে যার মাধ্যমে নগদ ও ধারে অপ্রাণঘাতী কিছু সামরিক অস্ত্রের সাথে কিছু অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ ও গুলি পাকিস্তানে বিক্রয় করব।প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে আমাদের জানানো হয়েছে যে এইসব বস্তুর
২১৮
একটাও পাকিস্তান সরকার বা তার প্রতিনিধিদের প্রদান করা হয়নি যখন ২৫শে,২৬শে মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব হয়েছে এবং বর্তমানে এমন কোনো বণ্টন তালিকাভুক্ত হয়নি।
আপনার মত,আমরা পূর্ব পাকিস্তানে আসন্ন খাদ্যসংকট ও সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের খবর সুচিহ্নিত করেছি।আমরা এই সম্ভাব্য সমস্যা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।শেষ হিসাব অনুযায়ী,পাকিস্তান সরকারের তহবিলে খাদ্যশস্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ লক্ষ টন।অথবা স্বাভাবিক হারে শহুরে এলাকার চার মাসের যোগান।যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশ হতে ২ লক্ষ টনের অধিক যাওয়ার পথে।আরও ৩ লক্ষ টন যুক্তরাষ্ট্রের শস্য অনুমোদন করা হয়েছে এবং যত শীঘ্র পূর্ব পাকিস্তানে মাল খালাসের ও শস্য চালনের স্থান সংকুলান হবে তত শীঘ্রই সেসব পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।এই মুহূর্তে সমস্যা যোগান নয়,বণ্টন।তাই,আমরা পাকিস্তান সরকার কে তাড়না দিচ্ছি যাতে শস্য খালাসের সবরকম পদক্ষেপ নেয় ও বণ্টন প্রক্রিয়া শুরু করে যাতে পুরো পূর্ব পাকিস্তানে দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত উপায়ে খাদ্য বিলি করা সম্ভব হয়।যদি ভবিষ্যতে প্রয়োজন পড়ে,আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্যই অতিরিক্ত চালান পিএল-৪৮০ পাঠানোর বিষয়ে বিবেচনা করব।
মাননীয় ভ্যান হোলেন-এর সভার সময়,আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত অভিমুখে কোনো শরণার্থীদের বাস্তবিক প্রবাহ ছিল না।তখন হতে,সংবাদ প্রতিবেদনসমূহ ইঙ্গিত করছে যে পাকিস্তানি সৈন্য তাদের অবস্থান দৃঢ় করছে এবং ভারত সীমান্তের দিকে সরে এসেছে।তার ফলে,ভারত অভিমুখে শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রবাহ তৈরি হয়েছে।আমরা ভারত সরকারকে এই পরিস্থতির হালনাগাদ তথ্য প্রদান করতে বলেছি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন শরণার্থী ইউএন হাই কমিশনার,রেডক্রস সোসাইটি সংঘ,বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এদের পক্ষ হতে যেকোনো প্রয়োজনীয় ত্রাণসংক্রান্ত সহযোগিতা করতে আমরা আমাদের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছি।
এই সম্ভাব্য গুরুতর পরিস্থিতির আলোকে শরণার্থীদের চাহিদা ও খাদ্যসংকট চাহিদার যতটা উন্নতি হচ্ছে যদিও,পূর্ব পাকিস্তান ও শরণার্থীদের জন্য ত্রাণের একটি সক্রিয় ও একটানা আন্তঃনিয়োগ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।আমরা ব্যবহার্য সম্পদ তালিকাভুক্ত করছি যাতে আমরা ও অন্য দেশ এইসব চাহিদা পূরণ লক্ষ্যের নিকটস্থ হতে পারে।
আমরা পূর্ব পাকিস্তানের উপর রাষ্ট্রবিভাগের বিবৃতির একটি সংকলন অনুলিপির ভিতরে রেখে আপনার কর্মচারীদের প্রদান করেছি।এটি সেখানকার পরিস্থিতির বিষয়ে আমাদের দুর্ভাবনা-সম্বন্ধীয়,আমাদের আশা যে পাকিস্তান সরকার নিজেকে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা প্রদানে উৎসর্গ করবেন এবং আমাদের উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহারে।আমরা এই উদ্বেগ বিভিন্ন উপলক্ষে এখানে ও ইসলামাবাদ,উভয় স্থানে পাকিস্তান সরকারকে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছি,এবং ভবিষ্যতেও তা করে যাব।
আমরা পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতিতে খুব নিবিড়ভাবে নজর রাখব এবং এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আপনার সদস্যদের সাথেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখব যাতে আপনি ও আপনার কর্মচারীগণ আগ্রহী।
আপনার অনুগত,
ডেভিড এম অ্যাবশায়ার
কংগ্রেশনাল রিলেশন এর সহকারী সচিব
সংযুক্তিঃ
সংবাদ মুখপাত্রের বিবৃতি।
২১৯
রাষ্ট্রবিভাগ
ওয়াশিংটন, ডিসি , ১০ই মে, ১৯৭১
মাননীয় এডওয়ার্ড এম কেনেডি
চেয়ারম্যান,শরণার্থী উপসমিতি
বিচারকবর্গ সমিতি
ইউএস সিনেট
ওয়াশিংটন, ডিসি।
মাননীয় চেয়ারম্যানঃ আমি আপনাকে অগ্রগতির বিষয়ে হালনাগাদ করতে চাই যেহেতু আমার ২০শে এপ্রিলের চিঠি পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হওয়া মানবিক সহায়তার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমাদের পারস্পরিক আগ্রহকে প্রভাবিত করে।আমি প্রাথমিকভাবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতগামী ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের জরুরি ত্রাণ উদ্যোগের দিকে লক্ষ্য রাখছি।
ভারতে পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থী
পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত অভিমুখী শরণার্থী প্রবাহ গত তিন সপ্তাহে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।ভারত সরকার জানিয়েছে মোট সংখ্যা এখন ১৮ লক্ষ।যদিও আমাদের কাছে কোনও সঠিক সংখ্যা নেই,তবু ক্যাম্পে অন্ততপক্ষে ৫ লক্ষ ২৬ হাজার রয়েছে বলা হচ্ছে-যার বেশিরভাগ-ই পশ্চিমবঙ্গে।
ইউএন-এর প্রধান সচিব ইউ থান্ট এর নিকট ভারতের ইউএন প্রতিনিধি সেন এর পাঠানো একটি চিঠিতে ভারত ২৩শে এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শরণার্থীদের জন্য ইউএন এর সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন।মাননীয় প্রধান সচিব এই আবেদন অর্পণ করেছেন শরণার্থী ইউএন হাই কমিশনার-এর প্রিন্স সাদরুদ্দিন আগা খান কে,যিনি ৫ই মে নয়াদিল্লিতে প্রয়োজনীয় বস্তুর চাহিদা ধার্য করতে এবং আন্তর্জাতিক কাজের পরিকল্পনা উন্নয়ন করতে একটি বিশেষ তিন-ব্যক্তির দল প্রেরণ করেছেন।আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার ও হাই কমিশনার উভয়কেই বলেছি যে আমরা এই শরণার্থীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ উদ্যোগে অংশ নিতে চাই।আমরা বিশ্বাস করি যে এই ত্রাণ উদ্যোগ সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক ও অরাজনৈতিক হওয়া উচিত,আন্তর্জাতিক ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের সংশ্লিষ্ট প্রদত্ত সুবিধার সাথে চাহিদার বৈষয়িক পরিমাপ তৈরি এবং ত্রাণ যোগান সুবিধার ন্যায়সঙ্গত তদারকির মাধ্যমে।
যখন এই ইউএনএইচসিআর উদ্যোগ সংগঠিত হচ্ছে,একই সাথে আমরা পশ্চিমবঙ্গের ২ লক্ষ ১৭ হাজার শরণার্থীদের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রদান করা শুরু করেছি।এই সহায়তা তিনটি আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন-কেয়ার,ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসেস এবং চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস/লুথেরান ওয়ার্ল্ড রিলিফ-যারা ইতিমধ্যে ভারতে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে,তাদের মাধ্যমে বিলি করা হচ্ছে।এই স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো ভারতে বিদ্যমান পিএল-১৫০ সত্ত্ব ২ তহবিলের নিকটস্থ হচ্ছে,যেগুলো পুনরায় পূর্ণ করা হচ্ছে।এই পরিস্থিতিতে খাদ্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু যা আমরা সরবরাহ করতে পারি,এবং এই প্রত্যাশিত চাহিদা পূরণে অতিরিক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।এইসব খাদ্য সহায়তা শরণার্থী ইউএন হাই কমিশনার-এর দ্বারা সংগঠিত আন্তর্জাতিক ত্রাণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রদান করা হবে।আমরা পাকিস্তান সরকারকে শরণার্থীদের জন্য সত্ত্ব ২ সহায়তার কথা জানিয়েছি এবং শরণার্থীদের ত্রাণ সুবিধা বণ্টনে আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নিযুক্ত থাকাতে কোনো আপত্তি ওঠেনি।
এই পর্যন্ত আমরা আন্তর্জাতিক ত্রাণ উদ্যোগে প্রাথমিক অনুদান হিসেবে ২৫ মিলিয়ন পর্যন্ত খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার অনুমোদন পেয়েছি।
সেই সময় যেসব আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের প্রতিনিধিরা কিছু শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন তারা কোনো গুরুতর খাদ্য সংকট ও কোনো অস্বাভাবিক রোগের লক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেননি,যেমন কলেরা বা বসন্ত।
২২০
অতিরিক্ত শরণার্থী প্রবাহ বৃদ্ধি অবিরত থাকতে পারে,বিশেষ করে,অন্ততপক্ষে কিছু সপ্তাহের মধ্যে বর্ষাকালের শুরু পর্যন্ত,যখন সামরিক ক্রিয়া ও ভ্রমণ দুটোই অধিক কষ্টসাধ্য হবে।এই কারণে,আমরা ইউএনএইচসিআর ও ভারত সরকার উভয়কেই আন্তর্জাতিক ত্রাণ উদ্যোগ যত দ্রুত সম্ভব মঞ্চস্থ করার তাড়না দিয়েছি।বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এতে সাড়া দিয়েছে ভারতে চর্বিহীন গুড়ো দুধ ও ভোজ্যতেলের সকল মজুত শরণার্থীদের ভোজনের জন্য ভারত সরকারকে অনুমোদন প্রদানের মাধ্যমে।গম ও চালের প্রসঙ্গে,ঐ সরকার বলেছে তাদের যথেষ্ট মজুত আছে এবং শরণার্থীদের জন্য তা সহজলভ্য করা হবে,এই প্রত্যাশার সাথে যে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি দ্বারা এই সরবরাহ পুনরায় পূর্ণ করা হবে।
পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ
পূর্ব পাকিস্তানের জনজীবনে বেসামরিক বিশৃঙ্খলা ও সাধারণ ভাঙ্গনের কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আমরা তা নিয়ে গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে আছি।আপনি অবগত আছেন যে,আমরা আমাদের উদ্বেগ বিভিন্ন উপলক্ষে প্রকাশ্যে এবং পাকিস্তান সরকার,যুক্তরাষ্ট্র,অন্যান্য আগ্রহী দেশের সরকার,এবং আমেরিকান ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা কে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছি।মানবিক ত্রাণ উদ্যোগ নিয়ে আমরা তাদের সকলের সাথে আলোচনা করেছি এবং অনিশ্চয়তা পরিকল্পনায় যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।
এসব উদ্যোগ নিতে ও অনিশ্চয়তার জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে,আমরা বুঝতে পারি যে মূল সমস্যা হল সরকার ও জনগণের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া।যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের সম্পদ সহজলভ্য হচ্ছে,ততক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সমিতি একা এসব চাহিদা পূরণ করতে পারবে না।
আমরা এতদিন পর্যন্ত যা যা করেছি তার সারসংক্ষেপ প্রদান করছি,আমরাঃ
যদি পাকিস্তান সরকার অনুরোধ করে,তবে ইউএন প্রধান সচিব ইউ থান্ট এর পয়লা এপ্রিলে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক তহবিলের প্রস্তাবের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে সংযুক্ত করেছি।
আশাবাদ ব্যক্ত করেছি যে,আন্তর্জাতিক সমিতির হয়ে পাকিস্তান সরকার নিজে সহায়তার প্রস্তাব দিবে।
পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্যশস্য পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পুনরায় পরিদর্শন করেছি এবং পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিমাপ নিশ্চিত করেছি যে প্রধান স্বল্পমেয়াদী সমস্যা হল উন্নত অভ্যন্তরীণ বণ্টনব্যবস্থাঃ নির্বাপক বন্দরে ভীড়,অন্তর্দেশীয় যাতায়াত পুনঃনির্মাণ,সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তাদের কাজ পুনরায় চালু করার প্রকল্প।
পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সাথে আলোচনা করেছি কিভাবে এই বণ্টন সমস্যার সমাধান করা যায়,এবং কিভাবে অন্যান্যদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকার-ও সহযোগী হয়ে উঠতে পারে।
যত শীঘ্রই স্থানীয় পরিস্থিতি ঘূর্ণিঝড় বিপর্যস্ত এলাকার সাথে পূর্ব পাকিস্তান উপকূলে পুনর্বাসনের অনুকুল হয়,তখনই আমরা পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছি,যেখানে খাদ্যযোগানের জরুরি চাহিদা তৈরি হয়েছে।আমরা ৭.৫ মিলিয়ন ডলার ও ১০০ মিলিয়নের অধিক যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন পাকিস্তানি মুদ্রা যা পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য কংগ্রেস সহজলভ্য করে দিয়েছে,তার উপর ভরসা করতে পারি।আমরা ১,৫০,০০০ টন খাদ্যশস্য বিতরণ চুক্তি স্বাক্ষরের পদক্ষেপ নিতে পারি ঘূর্ণিঝড় বিপর্যস্ত এলাকা পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে।
.
ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেইট
ওয়াশিংটন ডিসি, জুন ১৫, ১৯৭১
জনাব এডওয়ার্ড এম কেনেডি, চেয়ারম্যান,
রিফিউজি বিষয়ক উপকমিটি
আমেরিকান সিনেটের আইন বিষয়ক কমিটি
মাননীয় চেয়ারম্যানঃ পূর্ব পাকিস্তান এবং ভারতগামী শরণার্থীদের বিষয়ে ২৭ মে লেখা চিঠি এবং এই ভয়ানক সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা বিষয়ে পরামর্শের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
প্রথমেই, আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দুরবস্থা এবং ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের বিষয়ে আপনার সমবেদনাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার একমত। আমরা সরাসরি এবং অন্যান্য দেশের সহযোগিতায় উক্ত এলাকায় শান্তি ও মানবিক ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি। আমাদের এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
আমি এখানে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেইটের ১২ জুনের প্রেস রিলিজ সংযুক্ত করছি। যা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের বিষয়ে নেয়া আমাদের পদক্ষেপ সমর্থন করে। এটি পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সংক্রান্ত ইউ,এস নীতির তিনটি মৌলিক উপাদানও বর্ণনা করে। এটা প্রমাণ করে যে, দুই দেশের জরুরি চাহিদার জন্য যখনই আমাদের অনুরোধ করা হয়েছে তখনই আমরা দ্রুত ও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছি। নিম্নলিখিত অতিরিক্ত মন্তব্য আমাদের কার্যক্রমকে হালনাগাদ করবে এবং আপনার উত্থাপিত নির্দিষ্ট পয়েন্টে সাড়াদানে সহায়তা করবে।
আপনার চিঠিতে আপনি পৃথক সরকার এবং পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তায় রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেছেন। আমরা পাকিস্তান সরকারের সাথে প্রকাশ্য এবং গোপন আলোচনায় এই ধরণের একটি সমাধানের জন্য আলোচনা করে যাচ্ছি। আপনি হয়ত লক্ষ্য করেছেন যে, করাচিতে ২৪ মে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের অভিপ্রায় জানিয়েছেন। আপনি জানেন যে, যদিও জাতিসংঘ এই পরিস্থিতির রাজনৈতিক দিকে হস্তক্ষেপ করতে পারেনা কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতে মানবিক ত্রাণ সহায়তা এই অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।
আমরা ভারতে শরণার্থীদের পালিয়ে আসার প্রেক্ষাপট স্বীকার করছি এবং যারা পালিয়ে এসেছে তাদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত যাওয়ার কথা চিন্তা করছি। আমরা এই বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সাথে কথা বলেছি এবং খেয়াল করা জরুরী যে দেশে ফেরত আসতে চাওয়া রিফিউজিদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে এবং শরণার্থীদের জন্য সীমান্তে অভ্যর্থনা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আমরা এটা লক্ষ্য করে সন্তুষ্ট যে, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান পাকিস্তান ও ভারত উভয় রাষ্ট্রই পরিদর্শন করছেন এবং রিপোর্ট হয়েছে যে শরণার্থীদের প্রথম দলটি পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত আসতে যাচ্ছে।
এই সময়ের মধ্যে আমরা পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাব সহায়তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, যা আপনার দ্বিতীয় পরামর্শ ছিল। আমরা একমত যে, অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য এই ধরণের কর্মকাণ্ড শুরু করা জরুরী। আপনার বর্ণনানুসারে পাকিস্তান খাদ্যশস্য ও জল পরিবহনে সাহায্য চেয়েছে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি সমন্বিত ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য আমরা যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। চিকিৎসা সরঞ্জাম সহায়তার জন্য পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন অনুরোধ করা হয় নি।
তৃতীয়ত, আপনি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক তৎপরতার কথা বলেছেন। উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসন করে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আমরা যথাযথ কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করেছিলাম এবং তা এখনো চালিয়ে যাচ্ছি।
শেষত, ভারতে শরণার্থী সমস্যার প্রেক্ষিতে যেকোন চাহিদা তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই তা পূরণে আমরা সাড়া দিচ্ছি। আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রচেষ্টা কাঠামোর মাঝে প্রাথমিকভাবে আমাদের প্রচেষ্টা শুরু হয় এবং এতে কোন প্রকার বিলম্ব করা হয় নি। অন্তর্বর্তী সময় অর্থাৎ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আমরা ভারতে অবস্থারত উদ্বাস্তুদের জন্য খাদ্য যোগান দেয়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে টাইটেল ২ খাদ্য সরবরাহ করেছি। এরপর থেকে আমরা প্রতিদিন ১২,৫০,০০০ রিফিউজিদের খাদ্য সরবরাহ করছি। একইভাবে রিফিউজিদের ত্রিপুরা থেকে আসাম নিয়ে আসা এবং আসাম থেকে ত্রিপুরায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য আমরা চারটি সি-১৩০ বিমান দিয়েছি। ভারত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের মাধ্যমে আমাদের নিকট এই অনুরোধ পাঠায়। উদ্বাস্তুদের মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া কলেরা প্রতিরোধের জন্য বিমানের মাধ্যমে ইউএস উৎপাদিত দশ লক্ষ কলেরা ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে। অব্যাহত জরুরী অবস্থার স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা আরো ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের খাদ্য ও অর্থ সহায়তা অনুমোদন করেছি। এর ফলে আমাদের প্রদত্ত সাহায্যের পরিমাণ দাড়িয়েছে সর্বমোট ১৭.৫ মিলিয়ন ডলারে।
আপনি জানেন যে, জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুরোধের সাথে সাথেই ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের ত্রান সহায়তার জন্য ইউএস সরকারের বরাদ্দকৃত ২.৫ মিলিয়ন ডলার হতে ৫ লক্ষ ডলার ইউএনএইচসিআরকে দেয়া হয়েছে। আমরা হাইকমিশনের কিছু কার্যক্রম ও ব্যয়ের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাব। কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক সহায়তা কাঠামোর মধ্যে ইউএস স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে সরাসরি ত্রাণ সহায়তাও অব্যাহত রাখব।
অনুরূপভাবে, পূর্ব পাকিস্তানে আমরা একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে দ্বিপাক্ষিকভাবে কার্যক্রম প্রসারিত করছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, বন্দরে অবস্থানরত নৌযান হতে খাদ্যদ্রব্য অভ্যন্তরীণ বিতরণ পয়েন্টে বহন করার জন্য আমরা পাকিস্তান সরকারকে ছয় মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছি। আরো খাদ্যদ্রব্যের চালান বন্দরে আসার সাথে সাথেই আমরা দ্রুত তা সরবরাহ করার জন্য তৈরি আছি।
২২ মে ত্রাণ সহায়তার জন্য জাতিসংঘের নিকট পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব একজন বিশেষ দূতকে ইসলামাবাদ পাঠিয়েছেন। আমরা বুঝতে পারি যে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ইউএন এর একজন বিশেষ প্রতিনিধিকে আন্তর্জাতিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য ঢাকায় সংস্থাপন করা হয়েছে।
আপনার মত আমাদেরও উদ্দেশ্য হল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়া উদ্বাস্তুদের জন্য কার্যকর ত্রাণ নিশ্চিত করা। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার মানবিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে সকল সম্পদ দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সরবরাহ করছে।
দক্ষিণ এশিয়ার শরণার্থী ও ত্রাণ বিষয়ে আপনার বোধগম্য ও প্রকৃত আগ্রহের কারণে আমরা এই বিষয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে সাথে আপনাকে জানাব।
যখনই আপনি মনে করেন, আমরা কোনরূপ সহায়তা করতে পারি তখনই দয়াকরে আমাদের অবগত করুন।
বিনীত
ডেবিড এম এবশিরস
কংগ্রেশনাল রিলেশনসের সহকারী সচিব
সংযুক্তি
প্রেস রিলিজ, জুন ১২।