You dont have javascript enabled! Please enable it!

যুদ্ধে কখনো হারি নি-কিন্তু নাগপুরের কোন যুদ্ধে আমি জিতিনিঃ
কাদের সিদ্দিকী 

কাদের বাহিনীর মোট লড়াইয়ের সংখ্যা তিনশরও বেশী। প্রত্যেকটি যুদ্ধ হামলা কিংবা স্যাবোটাজ অপারেশনই ছিল কোন না কোন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তবুও এর মধ্যে কয়েকটি লড়াই-এর স্মৃতি মনে দাগ কেটে রয়েছে। সে কথাই বলছিলেন কাদের সিদ্দিকী। ১১ই আগষ্ট কমান্ডার হাবিবের নেতৃত্বে কাদের বাহিনী একটি দল ভূয়াপুরের কাছে মাটিকাটায় ধলেশ্বরীতে পাকবাহিনীর অস্ত্রবাহী জাহাজের ওপর হামলা চালাল। জাহাজটির নাম আর এস ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স, এলসি-৩। ঢাকা থেকে রংপুরের সেনানিবাসে যাচ্ছিল ২১ কোটি টাকার অস্ত্র নিয়ে। সঙ্গে আরও কয়েকটি জাহাজ ছিল। কিন্তু কাদের বাহিনীর যোদ্ধারা সিরাজকান্দির উত্তরে মাটিকাটা চরে নদী তীরবর্তী দুটি বাড়ি থেকে ষ্টেনগান, এলএমজি আর মর্টার দিয়ে হামলা চালিয়েছিল সঠিক লক্ষ্যবস্তুর উপর। ঘায়েল হলো জাহাজ, কুপোকাত হলো জাহাজের অধিনায়ক আমানুল্লাহ খান, খতম হলো শতাধিক খান সেনা। কাদের বাহিনী ছিনিয়ে নিল ২১ কোটির অস্ত্র ও গোলাবারুদ যার মধ্যে ছিল ১২০ এম এম ২ ইঞ্চি ও ৩ ইঞ্চি মর্টার, ৮৩ এম এম ক্যালেন্ডার সাইজ ভারী কামান ও প্রচুর রাইফেল। এরপর পাক বাহিনী প্রচণ্ড আক্রোশে পাল্টা হামলা চালিয়েছিল। দুটো এফ-৮৬ স্যাবর জেট তাদেরকে কভার দিতে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। ২১ কোটি টাকার অস্ত্র কাদের বাহিনী তাদের সদর নিয়ে চলে গেল। এই যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে কাদের সিদ্দিকীও মাটিকাটায় ছিলেন।

ব্যাক্তিগতভাবে যে সব যুদ্ধ করেছেন তার মধ্যে মনে দাগ কাটার মতো কয়েকটি যুদ্ধের কথা কাদের সিদ্দিকী বললেন। একটি যুদ্ধ হল আগষ্টে ধলাপাড়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী আহত হন। ২০শে নভেম্বর আড়াই হাজার পাকসেনা অর্থ্যাৎ পুরো একটি বিগ্রেডকে ঢাকা-টাঙ্গাইল রোড থেকে হটিয়ে দিয়ে করটিয়া পর্যন্ত এলাকা কব্জায় রেখে ২৩ ঘণ্টায় ১৭টি সেতু ধ্বংস করে দেয় কাদের বাহিনী। পাক বাহিনী পাল্টা বিমান আক্রমণ চালায় কাদের সিদ্দিকী জানান, এত সামনাসামনি যুদ্ধ এর আগে আমি কোন দিন করিনি। ওরা একবার এগিয়ে আসছে, আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। আবার আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ওরা পিছু হটছে। এভাবে পাঁচ ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর পাক সেনারা হেরে যায়। কাদের বাহিনী পাকসেনাদের কয়েক মাইল পিছু হটিয়ে দিয়ে আসে।

কাদের সিদ্দিকীর ব্যাক্তিগত অংশগ্রহ্ন-সমৃদ্ধ যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে ধকল গেছে নাগপুরের যুদ্ধে। কাদের সিদ্দিকী আমাকে বললেন, আমার জন্য টাঙ্গাইল জেলায় একটি দুর্ভাগ্যজনক থানা ছিল নাগরপুর। আমি জীবনে কোন যুদ্ধেই হারিনি। কিন্তু নাগরপুর থানার কোন যুদ্ধেই জিতিনি। ১৭ই অক্টোবর আমি নাগরপুর অভিযান করেছিলাম। সেদিন আমার মারা যাওয়ার মত অবস্থা। কোন রকমে বেঁচে যাই। তারপরও আমি অভিযান চালাই। সেখানেও আমি হেরে যাই। ৩০শে নভেম্বর বেলা প্রায় সাড়ে ১২টায় নাগরপুর থানা দফতরের উপর হামলা করি। আমাদের মনে ছিল প্রচণ্ড উৎসাহ। নাগরপুর থানায় ৬৫ জন সৈন্য রয়েছে-তাও মিলিশিয়া। আর আমাদের হল ২৫০ জন যোদ্ধা। ভাবলাম, আজ হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে থানায় উঠবো। কিন্তু পারলাম না। ২টা তিন ইঞ্চি মর্টার, ২টা আড়াই ইঞ্চি মর্টার, ৭/৮টি ২ ইঞ্চি মর্টার, ৪টা গ্রেনেড নিক্ষেপকারী রাইফেল আমাদের সাথে। এ ছাড়া রয়েছে ১৯টি লাইট মেশিনগান। জীবনে এত এলএমজি আর কোথাও ব্যবহার করিনি। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ছাড়া কোন সিংগলশট অস্ত্রও আমরা ব্যবহার করিনি। কিন্তু থানাটির অবস্থান ছিল ভারী বিদঘুটে। সম্মুখে ফাঁকা জায়গা। কভার নেয়ার মতো কোন স্থান নেই। ফলে এগোনো যায় না। আর শত্রুরা মরিচা থেকে ফায়ার করছে। আমি ১৫৮ রাউণ্ড ৩ ইঞ্চি মর্টারের গোলাবর্ষন করি। কিন্তু একটি গোলাও থানার ওপরে ফেলতে পারলাম না। আমি এমন ব্যর্থ আর কোথাও হয়নি। একশ গজ দূর থেকে ৫৪ রাউণ্ড দুই ইঞ্চি মর্টারের ফায়ারও করেছি। কিন্তু একটাও লক্ষ্যস্থলে পড়েনি। ২রা ডিসেম্বর পর্যন্ত হামলা চালালাম। কিন্তু পাক সেনাদের মরিচা থেকে ডিবপার্জ করতে পারলাম না। এত প্রস্তুতির পরও সবচেয়ে বেশী ধকল আমার এখানে গেছে। আসল চাইনিজ ৮৩ ব্লেণ্ড সাউণ্ড কিন্তু তার ফ্লাশ প্রোটেক্ট করার জন্য যে কভার থাকে তা নেই। রাউণ্ড ভরলাম ফায়ার করলাম। থানায় শত্রুদের একটা মরিচা উড়ে গেল। কিন্তু আমাকেও ধাক্কা মেরে হাত তিনেক পেছনে ফেলে দিল। আমার মাথার টুপি উড়িয়ে নিয়ে ফেলল প্রায় পনের হাত পিছনে।

৩রা ডিসেম্বর পাক বাহিনীর রিইনফোর্সমেন্ট কন্টিনজেন্ট এগিয়ে এলো ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইল। কাদের সিদ্দিকী এগিয়ে গেলেন এলাসিন গুদারা ঘাটে পাক বাহিনীকে বাধা দিতে। কিন্তু সময়ের সামান্য হেরফের তিনি গুদারা ঘাটের ওপারে পাক বাহিনীকে বাধা দিতে পারলেন না। পাক বাহিনী এপারে চলে এলো। কাদের বাহিনী সুবিধামত পজিশন নিতে পারলেন না। কাদের সিদ্দিকী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য। আবার সবকিছু ঐ এলাকায় সুসংগঠিত হয়ে গেল। ৩রা ডিসেম্বর মধ্য রাতে কাদের সিদ্দিকী ছিলেন কেদারপুরে। শেষ রাতে গোলা আর বোমাবর্ষনের শব্দ শুনতে পেলেন। খনিক পরই মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল বিমান। সঙ্গীদের বললেন কাদের সিদ্দিকী, কাল থেকে নতুন সুখবর হবে। সঙ্গীরা এ কথার অর্থ জানতে চাইলেন। কাদের সিদ্দিকী বললেন। এই যে দেখলে না আমাদের বিমান শত্রুদের উপর আক্রমণ হেনে চলে গেলো। এরকম আঘাত হানলেই কাজ হবে। বাদবাকি আমরা পারব। পরের দিন কাদের সিদ্দিকী নবতর পরিস্থিতিতে সবাইকে সংগঠিত করলেন।

কাদের সিদ্দিকী নতুন পরিকল্পনা নিলেন ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে যে সেতুগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তার নিচু দিয়ে যে রাস্তা হয়েছে তাতেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হবে। সেখানে এন্টি ট্যাংক মাইন বসানো হবে এবং এই মাইন প্রতিরক্ষার জন্য এর চারপাশে বসানো হবে একাধিক এন্টি পারসোনেল মাইন। প্রতি রাতে এই মাইন বসানোর নির্দেশ দেয়া হল। কাদের বাহিনীর যোদ্ধারা জালের মতো মাইন বিছিয়ে ফেললো। সঙ্গে সঙ্গে কাদের সিদ্দিকী আরেকটি পরিকল্পনা নিলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের সেতুগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তারপর টাঙ্গাইল দখল করতে হবে। উল্লেখ্য, ২০শে নভেম্বর টাঙ্গাইল দখলের পরিকল্পনা কাদের সিদ্দিকীর ছিল। ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহের সড়কের সেতুগুলো একযোগে ভেঙ্গে ফেলা হবে- মধুপুর থেকে শুরু করে ৯টা সেতু ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অপাশের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে হাত দিতে পারেনি।

যাহোক, এবার কাদের সিদ্দিকী সেতু ভাঙ্গার জন্য নতুন করে পরিকল্পনা নিলেন। তিনি ভাবলেন, ঢাকায় এখন শত্রুদের ওপর বিমান আঘাত হানা হবে; সীমান্ত ছেড়ে পাকবাহিনী আসবে না এবং এই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেতু ভেঙ্গে পাকবাহিনী যোগাযোগের পথ বিচ্ছিন্ন করে টাঙ্গাইল তিনি দখল করবেন। ৪ঠা ডিসেম্বর কাদের সিদ্দিকী মার্চ শুরু করলেন। তখন কামালপুরে সম্মিলিত বাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর যুদ্ধ চলছে। কাদের সিদ্দিকী স্থির করলেন তিনি মধুপুর দখল করে পুংলী সেতু পর্যন্ত আসবেন।

কাদের সিদ্দিকী বললেন, ৭ই ডিসেম্বর আমি নিকরাইল থেকে কোথায় কি করা হবে তার পরিকল্পনা করলাম। স্থির করলাম আমার ৫ হাজার যোদ্ধাকে নিয়ে এবারকার পরবর্তী পর্যায়ের অপারেশন চালাবো। আর সব যোদ্ধা থাকবে ডিফেন্সে এবং এই ৫ হাজার করবে এ্যাকশন। এর আগে ৬ই ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ৭ই ডিসেম্বর আমি নিকরাইলে জনসভা করলাম। কুড়ি থেকে ত্রিশ হাজার লোক হল। সভায় জনগণকে বললাম, আপনাদের সাথে আর দেখা হবে কিনা জানি না। বাংলাদেশ আজ স্বীকৃতি পেয়েছে। কাদের সিদ্দিকী বললেন, ৭ই ডিসেম্বর রাতে সম্মিলিত বাহিনীতে ভারতীয় বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সানত সিং আমাকে অয়ারলেসে যোগাযোগ করে জানালেন, আমরা জামালপুর পর্যন্ত এসে গেছি, ব্রহ্মপুত্র নদী আমরা পার হতে পারছি না। আপনি জামালপুরের দক্ষিন দিক থেকে পাকবাহিনীর উপর হামলা করুন আর আমরা উত্তর দিক থেকে হামলা করছি। আমি তাই জামালপুর রওয়ানা হলাম। কিন্তু ধনবাড়ী পর্যন্ত গিয়ে মত পরিবর্তন করলাম। আমি ঘুরে পথ পরিবর্তন করলাম। ৯ই ডিসেম্বর ব্রিগেডিয়ার সানত সিংকে অয়ারলেসে জানালামঃ আমি আপনার প্রস্তাব মানতে পারলাম না। কিন্তু ঢাকা থেকে পাকবাহিনী যেন ফোর্স পাঠাতে না পারে আমি সেই চেষ্টা করছি। আমি কথা দিলাম, পাক বাহিনীর একটিও সৈন্য যদি এই পথে এইদিকে আসতে পারে তবে আমি আইনত দণ্ড নেবো। আপনি আমাদের একটু উপকার করুন- গোপালপুরে আমাদের একটু এয়ার কভার দিন।

কাদের সিদ্দিকী বললেন, তাঁরা আমাদের কথায় রাজী হলেন। ১০ই ডিসেম্বর সকাল বেলা আমরা ঘাটাইল থানায় হামলা করলাম। বিকেল সাড়ে চারটায় থানা ঘাঁটির উপর হামলা করলাম। সেদিনই ঘাটাইলের পতন হলো। এদিকে সকাল ১০টা-১১টায় গোপালপুরে এয়ার কভার দেওয়ার কথা, আমার বাহিনীর যোদ্ধারা সেখানে অপেক্ষা করছে। কিন্তু বিমানের দেখা নেই। আমাদের কোন কনফার্মও করেনি। আমার ছেলেরা গোপালপুর ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে কব্জা করে নিতে পারে। কিন্তু তারা বিমান হামলার জন্য অপেক্ষা করছে। পরে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। বলা সাড়ে তিনটার দিকে আমার ছেলেরা শত্রুর ঘাঁটির উপর আক্রমণ করলো। পতন হলো গোপালপুরের।

বলছিলেন কাদের সিদ্দিকীঃ এদিকে জামালপুর আর আমাদের সাহায্যের দরকার হয়নি সম্মিলিত বাহিনীর। জামালপুর শত্রুর অবস্থানের উপর সম্মিলিত বাহিনীর বিমান এক হাজার পাউন্ডের দুটি বোমাবর্ষন করে। এতে ব্রক্ষপুত্র নদীর তীরে শত্রুদের প্রায় ৩৮টি মরিচা ধসে একেবারে পুকুরের মতো হয়ে যায়। এরপর পাকবাহিনী পালাতে শুরু করে। এদিকে রাস্তাটি এলেঙ্গা পর্যন্ত আমাদের দখলে এসেছে। টাঙ্গাইলে পাকবাহিনী রযেছে। পলাতক পাকবাহিনীর কনভয়ের উপর সম্মিলিত বাহিনীর বিমান স্ট্রাফিং করে গেল। ১১ ডিসেম্বর ভোর বেলায় আমরা পরিকল্পনা নিলাম আজ টাঙ্গাইল দখল করতেই হবে। কমান্ডার হাবিবের নেতৃত্বে একটি বাহিনীকে পাঠানো হলো ময়মনসিংহ থেকে পাকবাহিনীর আগমনকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য। আগের রাতেই খবর পেয়েছি পাকবাহিনীর কনভয় যেতে পারছেনা। টাঙ্গাইল-ঢাকা রোডে পাতা আমাদের মাইনের জালের ফাঁদে তারা আটকা পড়েছে। প্রত্যেকটি সেতুর নিচের ডাইভারসন রোডে রয়েছে মাইন। ভাতকুড়া ব্রীজের নীচে একটি মাইনের ঘায়েই পড়ে গেল এগারটি গাড়ি। রোড ক্লিয়ার নেই। টাঙ্গাইল থেকে ভাতকুড়া হয়ে কালিহাতি পর্যন্ত লাইনআপ হয়ে রয়েছে শত্রুদের কনভয়ের গাড়ী। কালিহাতী থানা আমাদের ছেলেদের দখলে। আমরা এগিয়ে এলাম। আমি ১১ই ডিসেম্বর আবার স্মমিলিত বাহিনীর বিমানকে টাঙ্গাইল থেকে এলাঙ্গা পর্যন্ত বিমান হামলা ও এয়ার কভারের কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, দিচ্ছেন, এদিকে কমান্ডার সবুরকে রেকি পার্টি নিয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা এগিয়ে গেছে। ভয় হলো বিমান হামলা না আবার ভূলে তার উপর হয়। আল্লাহর রহমত, এলাঙ্গা থেকে অল্প একটু এ পাশে সবুর হল্ট হয়েছে। হল্ট এ জন্য করেছে যে ওপাশে পাকবাহিনী রয়েছে এক ব্যাটালিয়ন। আটকা পড়েছে। সবুরকে নির্দেশ দিলাম একটু পিছিয়ে আসার জন্য। এর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিমান হামলা হলো। সে কি মার! পাকবাহিনী যেখানে পালিয়েছে সেখানেই তার উপর হামলা। শত্রুরা দিশেহারা হয়ে পড়লো। আমরা ডবল মার্চ করে এগিয়ে গেলাম। আমাদের দেখে পাকবাহিনীর সেকি দৌড়। পাকবাহিনী যে এমন দৌড়াতে পারে তা না দেখলে বোঝা সম্ভব নয়। আমরা তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপই করলাম না। ধরাতো ওরা পড়বেই। আমাদের বাহিনী সড়ক ধরে এগিয়ে চললো। আমাদের বাহিনী তারপর পুংলী ব্রীজে পৌঁছলো। সে সময় ওখানে ভারতীয় বাহিনীর ছত্রীসেনা নামলো। অনেক এলাকা জুড়ে তারা নামলো। একটু পরে খবর আসলো ভারতীয় বাহিনী এসে পড়েছে। আমি ভাবতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি তারা আসতে পারবে। আমাকে তারা জিজ্ঞাসা করলেন টাঙ্গাইলের খবর কি? টাঙ্গাইলের দায়িত্ব তো আমার। একটু সবুর করুন। খানিক পর খবর দিচ্ছি। পাকবাহিনীর ফেলে আসা বাসে উঠলাম। এসে দেখি গোলাগুলি চলছে শহরে। পাকবাহিনীর তিনশ সৈন্য রয়েছে শহরে। আমার বাহিনীর যোদ্ধাদের সঙ্গে পাল্টা গুলি বিনিময় হচ্ছে। কিন্তু আত্মসমর্পন করছে না। বলছে যে, হয় ভারতীয় বাহিনী, নয়তো কাদের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করবে। আমি গিয়ে আহবান জানালাম আত্মসমর্পনের জন্যে। পাকবাহিনীর কমান্ডার এসে আত্মসমর্পন করে বললেন ‘যো আপ করে’ ভারতীয় বাহিনীর কাছে খবর গেল, এবার আসতে পারেন। টাঙ্গাইল ক্লিয়ার। অবশ্য টাঙ্গাইল সকালেই ক্লিয়ার হয়েছিল। আমার শুধু অন্য সব দায়িত্বে আটকে থাকায় আসতে দেরি হয়েছিল। ভারতীয় বাহিনী টাঙ্গাইল এলো। গোড়াই পর্যন্ত আমি অপারেশন প্লান করে দিয়েছিলাম। খবর পেলাম গোড়াই পর্যন্ত সব ক্লিয়ার।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!