খান সেনাদের ওপর মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ তীব্রতর হয়েছেঃ
আরও সাত শতাধিক সৈন্য খতম
স্বাধীন বাংলাদেশ বেতারের খবরে প্রকাশ,হানাদারবাহিনী বাংলাদেশে যে বর্বরোচিত ও সুপরিকল্পিত গণহত্যা চালিয়েছে তারই অংশ হিসাবে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও তাদের সমর্থকদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এই নির্মম অত্যাচারের হাত থেকে আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ পিতামাতাও রেহাই পায়নি। গত সাতদিন চট্টগ্রাম রনাঙ্গনে প্রায় একশত ৫০ জন পাক হানাদার মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের হাতে নিহত হয়েছে এবং বহু স্থান থেকে পাকসেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র জানিয়েছে। সমগ্র পুর্ব রনাঙ্গনে গেরিলাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজারে বহু পাকসেনা হতাহত হয়েছে। এদিকে মর্টার ও মেশিনগানসহ আক্রমন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ফেনীর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ২০০ জন পাকসেনাকে হত্যা করেছেন।
স্বাধীনতাকামী তরুণ যোদ্ধারা গত ১৯ শে জুন সিলেট সেক্টরে একটি এলাকায় পাক-হানাদারদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে ১৩ জন পাক সেনা খতম করেন এবং প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৩ জন পাকসেনাকে আটক করেছেন। এর আগেরদিন প্রচণ্ড সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী সিলেটের কয়েকটি স্থানে আক্রমন চালিয়ে ২২তম রেজিমেন্টের একজন সৈন্যকেও আটক করেছেন।
মুক্তিবাহিনী রংপুরে বজরাপাড়ায় পাকসেনাদের উপর অতর্কিত গেরিলা আক্রমন চালিয়ে পাকসেনাদের নাজেহাল করে ছেড়েছেন। এই আক্রমনে অনেক খানসেনা হতাহত হয়েছে। সেই দিনই পাকসেনারা মৃত সৈন্যদের লাশ ও আহত সৈন্যদের নওগাঁয় নিয়ে যায়। এই আক্রমনে একজন অফিসারসহ দুইজন পাকসেনাকে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা গ্রেফতার করেছেন। কয়েকদিন আগে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা ঠাকুরগাঁওয়ের কাছে মর্টার ও মেশিনগান থেকে মুক্তি ছাউনির উপর আচমকা গুলি চালায়। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। গত দুই সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে অধিকসংখ্যক গাড়ী ও সৈন্য নিয়ে পাকসেনাদের চলাফেরা করতে দেখা যায়। কুষ্টিয়া রনাঙ্গনে মেহেরপুর এলাকায় এক দুঃসাহসিক আক্রমন চালিয়ে মুক্তিবাহিনী কমপক্ষে ৩০ জন পাকসেনাকে খতম করেছেন, সেখানকার কুতুবপুরে মুক্তিবাহিনী খানসেনাদের ওপর আকস্মিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ১০ জন খানসেনাকে হত্যা করেন। গত ১৫ ই জুন নাজিরাকোটায় এক প্লাটুন পাকসৈন্যকে আক্রমন করে মুক্তিবাহিনীর অসমবাহিনীর যোদ্ধারা ২০ জন দুশমন সৈন্যকে খতম করেছেন।
স্বাধীন বাংলা বেতারের খবরে প্রকাশ করে, সাতক্ষীরার নিকট দুশমন সৈন্যদের ঘাটির ওপর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমন চালিয়েছেন। এ এলাকায় কয়েকটি আউটপোষ্টেও আমাদের মুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড আক্রমন চালিয়ে দস্যু সৈন্যদের অনেককেই হতাহত করেছেন।
গত ১২ই জুন ভোমরা সেক্টরের কলারোয়ায় মুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড আক্রমন চালিয়ে খানসেনাকে খতম করেছেন। মুক্তিবাহীনি ঐ দিন রাতে আরেক অভিযানে ৬০ জন খানসেনাকে হত্যা করেছেন।কলারোয়া ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও তথাকথিত শান্তি কমিটির প্রেসিডেন্ট ওয়াজেদ আলী চৌধুরীকে মুক্তিবাহীনির গেরিলা যোদ্ধারা খতম করেছেন।
মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশ দক্ষিণ পশ্চিম খণ্ডে খানসেনাদের উপর ব্যাপক আক্রমন চালিয়ে মেহেরপুরের নিকটে এক প্লাটুন খানসেনাকে খতম করেছেন। মুক্তিবাহিনী মেহেরপুর শহর থেকে প্রায় দুমাইল দূরে কামদেবপুর গ্রামে ইছাখালী সীমান্ত চৌকি দখল করে নিয়েছেন।এতদাঞ্চলে মর্টার থেকে গুলিবর্ষণ করে মুক্তিবাহীনি শত্রুসেনাদের এক প্লাটুন সৈন্য খতম করে দিয়েছেন।নিহতদের মধ্যে কয়েকজন পদস্থ অফিসারও রয়েছে।
-জয়বাংলা ১ম বর্ষ, ৭ম সংখ্যা, ২৫ জুন, ১৯৭১