You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
লেবার পার্টি কতৃক পশ্চিম পাকিস্তানের ভুমিকার সমালোচনা টাইমস অফ ইন্ডিয়া ৪ অক্টোবর, ১৯৭১।

লেবার প্রতিনিধির পাকিস্তানের প্রতি ইঙ্গিত
পশ্চিম পাকিস্তানে সাহায্য পাঠানো প্রতিরোধ করতে আহব্বান

ব্রাইটন, ৪ অক্টোবর, পিটিআই এর এক রিপোর্টে জানা যায় আজ লেবার পার্টির নির্বাহী কমিটি তাদের জাতীয় সম্মেলনে পাকিস্তানকে নিয়ে এক বিবৃতি প্রদান করে যেখানে পূর্ব বাংলায় চলমান ঘটনাসমূহের উল্লেখ ছিলো । বিবৃতিটি বিবেচনার জন্য উত্থাপন করা হয়েছিলো এবং তা বৃহস্পতিবারের সম্মেলনে গৃহীত হয় ।

বিবৃতিটিতে পূর্ব বাংলায় চলমান পরস্থিতিতে সরাসরি যুক্ত হয়ে উদ্ভূত সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে কাজ করতে জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয় । এখানে আরো উল্লেখ করা হয় সমাধানটি যেনো জনগনের মঙ্গলের দিক বিবেচনা করে করা হয় এবং তা যেনো তাদের জন্য গ্রহণযোগ্য হয় ।আরো উল্লেখ করা হয় , একটি সমাধান হতে পারে যদি পূর্ব বাংলার বর্তমানে নিপীড়িত হতে থাকা ও জেলে বন্দী থাকা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি প্রদানের মাধ্যমে এবং বিশেষভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি প্রদান এবং তাদের সাথে আলোচনা করার মাধ্যমে ।

বিবৃতিতে তারা এইড-পাকিস্তান তথা পশ্চিম পাকিস্তানে সাহায্য পাঠানোর সাথে যেসব দেশ বা প্রতিষ্ঠান জড়িত তাদের পূর্ব বাংলার চলমান পরিস্থিতির সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোন ধরনের সাহায্য বিশেষ করে যেকোন ধরনের মানবিক সাহায্য পাঠানো থেকে বিরত থাকতে আহব্বান জানান । দীর্ঘ মেয়াদে সাহায্য পাঠালে তা হবে একটি নিন্দিত সামরিক শাসনকে ভর্তুকি প্রদান করা ।

বিবৃতিতে শরণার্থীদের সাহায্য পাঠানোর ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভুকিকা অপর্যাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।ভারতে শরণার্থীদের যে পরিমাণ সাহায্য করছে তা ভারতের একার প্রতি বৈষম্যমুলক ও বোঝা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে । দলটি এই ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারকে আরো অধিক হারে সাহায্য পাঠাতে অনুরোধ জানিয়েছে ।

আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি আরো উল্লেখ করেনঃ বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রতিনিধিদের কাছে একটি আবেদন প্রদান করার জন্য সকালে কনফারেন্স হলের বাইরে উপস্থিত হয়েছিলেন । তারা তাদের আবেদনে পাঁচটি বিষয় তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে , বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি আর্মির অপসারন ,জাতিসংঘে ব্রিটেন সহ অন্যান্য দেশের গণহত্যা সনদের উপর বাংলাদেশের পরিস্থিতি উত্থাপন করা , পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি আর্মি অপসারন করা না পর্যন্ত ব্রিটেনের পশ্চিম পাকিস্তানে সাহায্য পাঠানো বন্ধ রাখা , আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশকে পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক সাহায্য না পাঠাতে প্ররোচিত করা এবং সর্বশেষ ব্রিটেন সহ অন্যান্য “ সভ্য দেশ ” কে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে আহব্বান করা ।

রেন্টার ও এএফপি থেকে প্রাপ্তঃ একজন ডমিনিকান যাজক ফাদার জেন উভস জলিপ আট দিন ইন্ডিয়া ও পূর্ব বাংলা সফর করে আজকে প্যারিসে বলেছেন পূর্ব বাংলায় উদ্ভূত সমস্যর সমাধান একমাত্র সামরিকভাবেই সম্ভব । তিনি উল্লেখ করেন, ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার্থে পূর্ব বাংলার নেতার সাথে আলোচনার রাস্তা পরিত্যাগ করে এই সমস্যা সামরিকভাবেই সামাধান করতে চাইছেন । ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস মুভমেন্ট নামক সংগঠনের অধীনে এই সফর শেষে তিনি আরো বলেন , “ পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশ এর স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করে । বাংলাদেশ সরকার সেনাবাহিনী গঠন করছে এবং সেনা নিয়োগের জন্য সকল শরণার্থী ক্যাম্পে অফিস স্থাপন করেছে । সেখানে তরুনরা সামরিক পোষাক পরে রয়েছে এং পশ্চিম পাকিস্তান আর্মির কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে করে আনা হয়েছে ।“ তিনি আরো যোগ করেন ,মুক্তিবাহিনী উত্তরে ভারত আয়তাধিন ১৩৬০ বর্গ কলোমিটার সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে এবং এই দলে সৈন্য সংখ্যা ৮৫০০০ । ৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমেও সমান আকারের আরেকটি বিভাগ মোতায়েন রয়েছে ।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক দূত প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান জেনেভাতে বলেছেন , পূর্ব বাংলার শরণার্থীদের এই বৃহৎ এবং অমানবিক সমস্যা মোকাবিলায় জরুরি সাহায্য প্রয়োজন । জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক নির্বাহী কমিটির ১০ দিন ব্যাপী সভায় উপস্থিত ৩১ টি দেশের প্রতিনিধিদের তিনি বলেন ,এই বছরে বৈশ্বিক শরণার্থী সমস্যা আরো ভয়াবহ এবং ক্রমবর্ধমান বিস্ফোরক হয়ে উঠেছে । তিনি আরো উল্লেখ করেন বাংলাদেশী শরণার্থী সমস্যায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আশাব্যাঞ্জক মাত্রায় সাহায্য পাওয়া গিয়েছে যার পরিমাণ ১১৫ মিলিওন ডলার এবং এই ব্যাপারে এখনো আরো সাহায্য প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন । বর্তমানে সেখানে যেসব জিনিস প্রয়োজন সেগুলো জরুরিভাবে পাঠানোর জন্য তিনি লিস্ট আকারে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে পাঠাবেন বলে আরো উল্লেখ করেন ।
এই পরিস্থিতি উত্তরনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো বেশি সাহায্য সহযোগীতা ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন এবং এই ব্যাপারে সবার আরো অধিক মনযোগী হওয়া প্রয়োজন । সাম্প্রতিক বন্যা শরণার্থী ক্যাম্পের মারাত্তক ক্ষয়ক্ষতি করেছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হবার ফলে সমস্যা আরো ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে । দুর্বল বৃদ্ধ এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব আরো মারাত্বক আকারে পড়বে বলে প্রিন্স আগা খান উল্লেখ করেন ।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!