You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর মুখপাত্রের বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিবৃতি (সংকলিত) পররাষ্ট্র দপ্তর মার্চ-এপ্রিল, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তান সংকট
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর মুখপাত্রের বিবৃতি
মার্চ ২৬
“অত্যন্ত নিবিড়ভাবে আমরা এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি”।
মার্চ ৩১
“ইসলামাবাদ দূতাবাসের একজন পদস্থ কর্মকর্তা প্রবাসী সম্পর্ক মন্ত্রনালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তার নিকট এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেন। ফলে আমরা অবগত হলাম যে যা ঘটছে অর্থাৎ প্রকৃত ঘটনা কাটাছেড়া করা হচ্ছে। আমরা অনুধাবন করলাম যে আমেরিকান সাংবাদিকেরা যে সব বৈধ এবং বাস্তব খবর সংগ্রহ করছে সেগুলোর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে”।
এপ্রিল ২
“পাকিস্তানের অধিবাসীদের বর্নিত জীবন নাশ, ক্ষয়-ক্ষতি এবং দূঃখ-কষ্ট জনিত ভোগান্তিতে আমরা স্বভাবতই উদ্বিগ্ন”।
“এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের গতকালের দেয়া বিবৃতি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতির প্রেক্ষিতে পাকিস্তান সরকারের অনুরোধক্রমে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে গৃহিত মানব সেবার যে কোন উদ্যোগকে স্বাগত জানাবো”।
“আমরা মনে করি যা ঘটছে তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়”।
এপ্রিল ৫
“এটি আমাদের আশা যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পূনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে”।
“পাকিস্তানের অধিবাসীদের বর্নিত জীবন নাশ, ক্ষয়-ক্ষতি এবং দূঃখ-কষ্ট জনিত ভোগান্তিতে আমরা স্বভাবতই উদ্বিগ্ন।
আমরা ঊ থান্ট এর ৩১ মার্চের বিবৃতি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছি এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে পাকিস্তান সরকারের অনুরোধক্রমে অবশ্যই আমরা বলছি যে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহিত মানব সেবার যে কোন উদ্যোগকে আমরা সহমর্মিতার সাথে বিবেচনা করব”।
এপ্রিল ৬
“স্বভাবতই এই সব পরিস্থিতিতে আমেরিকান অস্ত্র প্রয়োগের যে কোন সাধারন প্রস্তাবের বিষয়ে আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন”।
প্রধান বিভাগীয় বিবৃতি (MAIN DEPARTMENT STATEMENT)
এপ্রিল ৭
“বর্তমান পরিস্থিতির শুরু হতেই , পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত হওয়া প্রাণহানি এবং ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়ে বিভিন্নভাবে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি এবং আমরা আশা প্রকাশ করছি যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্টিত হবে”।
>13>52>202
“এই পরিস্থিতির উপর নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রাপ্তির অসুবিধা সত্বেও যখন, এটি ক্রমবর্ধমান স্পষ্ট হয়ে উঠে যে এখানে উল্লেখযোগ্য পরিমানে হতাহত ও ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে, হতাহত এবং ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান নির্ধারন করার যথাযথ কোন উপায় যদিও আমাদের ছিলনা।
যারা সাম্প্রতিক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জন্য আমাদের সহানুভূতি। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক জীবন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের অবিরত বিশ্বাস সংঘাত নিরসনের জন্য সাধ্যের মধ্যে নেয়া যে কোন পদক্ষেপ এবং একটি শান্তিপূর্ণ উপযোজন অর্জন গুরুত্বপুর্ণ।
শীঘ্রই সাম্প্রতিক ঘটনা দ্বারা সৃষ্ট দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করি। এ প্রসঙ্গে আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দেয়া সাহায্য প্রস্তাব পাকিস্তান সরকারের নিজের জন্যই হিতকর হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের যে কোন আন্তর্জাতিক মানবিক প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত আছে। আমরা পাকিস্তান সরকারের সাথে এই বিষয়ে আলচনা করেছি এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে”।
“পাকিস্তান সরকারের থেকে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তার কোন অনুরোধ আছে বলে আমি মনে করিনা, আমরা আশা অব্যাহত রাখছি যে, যে সকল প্রস্তাব আছে এবং যেগুলো আসন্ন সে সকল প্রস্তাব পাকিস্তান সকারের জন্য হিতকর হবে”।
“সাংবাদিকদের বের করে দেয়া হয়েছে, তাদের বৈধ সংবাদ সংগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের ক্যামেরা নোট ইত্যাদি তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে , আমরা এই ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা এই সকল ব্যক্তিগত সম্পদ ফেরত দিতে বলেছি”।
এপ্রিল ১২
“কিছু প্রস্তাবনা অনুযায়ী পাকিস্তানের সাথে চলমান বৃহৎ কোন সামরিক সহায়তা কার্যক্রম আমাদের নেই। ১৯৬৫ সাল থেকেই এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গত অক্টোবরের একমাত্র ব্যতিক্রমী ঘোষনা অনুযায়ী বিবরন ও দামের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি এখনো আলোচনাধীন।
সরবরাহ লাইনে সরবরাহের মতো কোন সরঞ্জাম নেই, আবারও বলছি কোন সরঞ্জাম নেইএবং উদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে কোন সরঞ্জাম সরবরাহ করাও হয়নি। বাস্তবে ছয় সপ্তাহ ধরে এ বিষয়ে কৌশলগত কোন আলোচনাই হচ্ছেনা।
পাকিস্তানের জন্য, নগদ প্রাধান্য সম্পন্ন, আমাদের একটি শিষ্ট বিক্রয় কার্যক্রম ছিল, প্রাণঘাতী নয় এ রকম সামরিক সরঞ্জাম , সরঞ্জামের খুচরা যন্ত্রাংশ এবং কিছু গোলা-বারুদ ইতিমধ্যে পাকিস্তানীদের হাঁতে পৌঁছেছে। যেই চুক্তির ভিত্তিতে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এটি সম্পন্ন হয়েছিল বর্তমান সংকট শুরু হওয়ার পূর্বে এবং এই সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান সরকারের সাথে নতুন কোন কার্যক্রমের বিষয়ে আমি জ্ঞাত নই। এই চুক্তির অধীনে সম্পন্ন হওয়া চালান নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টিও আমাদের পর্যালোচনায় রয়েছে।
সংক্ষেপে বলা যায়, জাতি হিসেবে পাকিস্তানের সাথে আমাদের যে সারগর্ভ সামরিক সহায়তা কার্যক্রম রয়েছে তা ভ্রান্ত”।
এপ্রিল ১৩
“সর্বসমেতভাবে পাকিস্তানে খাদ্য সরবরাহ এখন পর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে। এ কথাও ঠিক যে, স্থানীয়ভাবে কোন সংকট রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনা। কিন্তু একটি সাধারণ প্রস্তাব হিসেবে এটি বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ব্যাপক ভিত্তিতে কোন দূর্ভিক্ষ নেই এবং এটি ভেবেই আমরা স্বস্তি বোধ করছি।বর্তমানে ৭ লক্ষ টন খাদ্য মজুদ রয়েছে অর্থাৎ চার মাসের স্বাভাবিক যোগান মজুদ আছে। উপরন্তু আরো ২ লক্ষ টন রয়েছে জলের উপরে যার অধিকাংশই রয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের বন্দর সমুহে। যুক্তরাষ্ট্রের আরো ৩ লক্ষ টন শস্যের অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিতরনের জন্য সরবরাহ করা হবে। যদি প্রমাণিত হয় ভবিষ্যত চাহিদা এর চেয়েও অনেক বেশি, তাহলে আমরা অবশ্যই, অতিরিক্ত পিএল-৪৮০ চালানের বিষয় ও বিবেচনা করবো। যদি প্রয়োজনীয় মনে হয় তাহলে আমরা অবিলম্বে এটি সরবরাহের মত অবস্থায় রয়েছি।
এখন, কৃষি বিভাগ গতকাল জানিয়েছে যে , যতটা সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে চালান শুরু করার ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন পূর্ব পাকিস্তানের বন্দরের জরাজীর্নতা দূর করা এবং পন্য খালাস ও বন্টন ব্যবস্থা শিথিল করার জন্য পাকিস্তান সরকারের নিকট আমরা নির্দেষনা পাঠিয়েছি। বলা হচ্ছে এই সমস্ত সমস্যা যোগান ব্যবস্থা নিয়ে নয় বরং পূর্ব পাকিস্তানে পন্য খালাস ও বন্টন ব্যবস্থা নিয়ে কারন রেল, নৌ এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে এবং ডকে তীব্র খালাসী সংকট রয়েছে।
এখন, আমরা পাকিস্তান সরকারের প্রতি বন্টন সমস্যা সমাধানে জোর গুরুত্ব দিচ্ছি, পূর্ব পাকিস্তানে সহায়তা প্রদান করার যে কোন আন্তর্জাতিক মানবিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি এবং আমরা জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি”।
এপ্রিল ১৫
পাকিস্তানের উপর প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র পাকিস্তানে সরবরাহ করা হচ্ছে এবং খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এতে আমরা মর্মাহত। এই দাবিগুলো সত্য নয়।
প্রথমত, আমাদের কাছে থাকা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে বলতে পারি , পূর্ব পাকিস্তানে কোন ব্যাপক দূর্ভিক্ষের অস্তিত্ব নেই, যদিও স্থানীয় ঘাটতি থাকতে পারে। যোগান কোন সমস্যা নয় এটি বন্টন ও বন্দরের জরাজীর্নতার কারনে ।জরুরী ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধানে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আমরা উল্লেখযোগ্য সময় ধরে কাজ করছি। প্রচুর পরিমানে ইউ এস পিএল-৪৮০ গম সহ ৯ লক্ষ টন শস্য সরকারের নিকট হয় পূর্ব পাকিস্তানে অথবা তার বন্দরে অথবা গভীর সমুদ্রে মজুদ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ৩ লক্ষ টন শস্যের অনুমোদন রয়েছে এবং যতটা সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে বিলি করার জন্য সরবরাহ করা হবে এবং যদি আরো প্রয়োজন পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে এটি নিয়ে কাজ করবে। আমরা বলেছি এবং আমাদের সদিচ্ছার কথা পুনঃব্যক্ত করছি যে কোন অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক মানবিক ত্রাণ প্রচেষ্টায় আমাদের সমর্থনের কথা। পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে সম্যক অবগত আছে।
মার্কিন অস্ত্রের প্রশ্নে , ১৯৬৫ সাল হতেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। গত অক্টোবরের সাময়িক ব্যতিক্রমী ঘোষনা অনুযায়ী কোন অস্ত্র বিতরন করা হয়নি এবং সরবরাহ লাইনেও কোন অস্ত্র নেই। ১৯৬৬-৬৭ সাল হতেই , পাকিস্তানের সঙ্গে বিদেশী সামরিক সরঞ্জাম বিক্রয় চুক্তির অধীনে , খুব স্বল্প পরিমানে কিছু জিনিস যেমন- যোগাযোগের, চিকিৎসার , পরিবহন সরঞ্জাম হিসেবে খুচরা যন্ত্রাংশ ও অস্ত্রের গোলা-বারুদ প্রদান করা হয়েছে ১৯৬৫ সালের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পূর্বেই পাকিস্তানে চলে গেছে। গোলা-বারুদ প্রশ্নে সম্মানের সাথেই জানাচ্ছি যে, মোট উপাদানের ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি গোলা-বারুদ নেই, আমরা প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে অবগত হয়েছি পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধির নিকট সরবরাহ করা হয়নি এবং এই ধরনের সরবরাহের কোন কিছুই এখন নির্ধারিত হয়নি। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এই সংকটের শুরু থেকে কোন অস্ত্রই পাকিস্তান সরকারকে প্রদান করা হয়নি এবং বিতরনের বিষয়টি উন্নয়নের আলোকেই পর্যালোচনার জন্য রাখা হবে।
শরনার্থী সমস্যা
এপ্রিল ২৭
এখানে (নিউইয়র্ক) এবং নতুন দিল্লী উভয় স্থানেই ভারত সরকারের সাথে আমরা এ বিষয়ে আলাপ করেছি এবং এ বিষয় নিয়ে আমরা আমাদের সাধ্যমত তৎপর রয়েছি সম্ভবত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অথবা আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সংস্থার তত্ত্বাবধানে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে থেকে কিছু আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার উপরে। তবে এখনো বিস্তারিত কিছুই ঠিক হয়নি।
আমি বিশ্বাস করি, তিনটি বা তার অধিক সেচ্ছাসেবী সংস্থা থাকতে পারে, কিন্তু আমার জানামতে তিনটি সেচ্ছাসেবী সংস্থা – ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস; চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস; এবং কেয়ার (CARE) আমাদের সম্মতিক্রমে যাদের ভারতে মানব সেবার কার্যক্রম রয়েছে তারা তাদের কিছু মালপত্র যা তারা তাদের স্বাভাবিক প্রকল্পসমূহে ব্যবহার করত তা দিয়ে পশ্চিম বাংলায় শরনার্থীদের জন্য ত্রাণ প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে, যা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পশ্চিম বাংলায় আশ্রয় নেয়া ১৫০০০০(দেড় লাখ) শরনার্থীর কাজে লাগছে।
“ভারতীয় একটি উৎস থেকে আমি একটি হিসাব পেয়েছি যাতে দেখা যায় পশ্চিম বাংলা ও আসাম রাজ্যে ৫ লক্ষেরও অধিক শরনার্থী আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবেই জানাচ্ছি যে, এ বিষয়ে আমাদের নিজেদের কোন স্বাধীন/বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান/হিসাব নেই”।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!