শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
কুয়ালালামপুর কমনওয়েলথ সংসদীয় সম্মেলনে মিঃ আর্থার বটম্লের বক্তৃতা | বাংলাদেশ ডকুমেন্টস | ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
কুয়ালালামপুর, কমনওয়েলথ সংসদীয় সম্মেলনে মিঃ আর্থার বটম্লে(ব্রিটেন)-এর বক্তৃতা
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
…. কিন্তু আমি মনে করি, আবারও যেসব ভুল-ত্রুটি হয়েছে তা খুব সাধারণ কারণে হয়েছে। যখন সেনাবাহিনী আসলো, তখন প্রথমেই তারা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করেছিল, এবং থানার অভিমুখে রওনা হয়েছিল। এখন, সরকারী সূত্রমতে, যখন থানার কাছাকাছি এসেছিল, তখন পুলিশেরা সৈন্যদের উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। কিন্তু আমি একটি দ্বিতীয় গল্প শুনেছি যেটিতে ছিল যে, এই সামরিক নেতাদের মধ্যে এক অহংকারী, আত্মরম্ভী নেতা পুলিশদের অস্ত্র সমর্পণের দাবি জানান, এবং পুলিশ প্রধান বলেন, “কার নির্দেশে?”। এরপরই আবারও আরেকটি দাবি ওঠে, “অবিলম্বে অস্ত্র ফেরত পাঠাতে হবে, যদি তা না করা হয়, তাহলে আমরা গুলিবর্ষণ করবো।” এবং গুলিবৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানীর পুলিশ সদস্যরা ও সৈন্যবাহিনীর পশ্চিম পাকিস্তানিরা মনে করলো যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত সৈন্যবাহিনী তাদের সবাইকে কচুকাটা করবে। এবং এই কারনে, আমরা এই পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছি যেখানে এসব লোক দেশের রাষ্ট্রপতির ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। এবং এখানে সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই যে তারা এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যেখানে আইন-শৃংখলা ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু একজন বেসামরিক প্রশাসক যিনি কিনা এই কঠিন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা উত্তরণে ব্যবস্থা নিতে পারতেন, তার বদলে একজন সামরিক কমান্ডার, জেনারেল টিক্কা খান-কে বসানো হল, যাকে সরানো হয়েছে বলে আমি খুবই আনন্দিত। যখন আমি জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেছিলাম, তিনি বলেছিলেন যে, যদি এই সৈন্যবাহিনীকে যে কেউ কোনরকম বিপর্যয়ে ফেলার জন্যে চেষ্টা করে, তাহলে তৎক্ষনাৎ তাদেরকে গুলি করে মারার নির্দেশ প্রযোজ্য হবে। এই নীতি অনুসরণ না করার জন্যে আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম। আর ঠিক এই নীতির কারনেই, শহর ও গ্রামে যেসব সৈন্যবাহিনী ছিল, যারা এমন ধরণের নেতৃত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল, তারা বন্য পশুর মত আচরণ শুরু করলো এবং এর ফলে হাজার হাজার ভীত-সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুসলিমরা প্রথমে গেল, তারপরেই হিন্দুরা। হিন্দুদের ব্যপারটা বোঝাই যাচ্ছিল কারন তারা এ ধরণের পরিস্থিতির সাথে আগে থেকেই পরিচিত ছিল। এবং এই কারনে আপনি এমন এক পরিস্থিতির শিকার যেখানে লাখ লাখ শরণার্থী পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত তার নিজের কোনো কারণ ছাড়াই সম্ভবত একটি দেশের পক্ষে সবথেকে বড় একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। আমি শরণার্থী শিবির দেখেছি, এখানে ভারতীয় প্রশাসনের অসাধারণ সব কাজ আমি দেখেছি। তারা খাদ্য ও সরঞ্জামে অপ্রতুল। এটি সত্যি যে বৈশ্বিক সাহায্য আসছে, কিন্তু অপর্যাপ্ত। উদাহরণস্বরূপ, আমার নিজের দেশ, ৮ মিলিয়ন পাউন্ড-এর সমপরিমাণ সাহায্য ভারতকে এবং ১ মিলিয়ন পাউন্ড পাকিস্তানকে দিয়েছে, এবং আমি আস্থার সঙ্গে বলতে পারি, আমরা আরও সাহায্য দিতে যাচ্ছি। ভারতের এই সমস্যা এমন একটি সমস্যা যেটা সব কমনওয়েলথভুক্ত দেশের মাঝে ভাগ করে নেয়া উচিত ছিল এবং পালাক্রমে সকল কমনওয়েলথভুক্ত দেশের উচিত ছিল জাতিসংঘের ওপর সামগ্রিকভাবে চাপ অব্যাহত রাখা…..।
…. সবশেষে আমি এটা বলতে চাই যে, মিঃ প্রেসিডেন্ট, বিশ্বের এই অংশে আমরা শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব শুধুমাত্র যদি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, পূর্ব পাকিস্তানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি, যিনি তার জনগণের হয়ে কথা বলতে সক্ষম, শেখ মুজিব-কে, স্বীকৃতি প্রদান করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডেন্টকে বলেছি এবং আমি এখানে আবারও বলি, একজনের উচিত ব্রিটিশ ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আমরা একদিন একজনকে জেলখানায় বন্দি করি এবং তার পরের দিন সে জাতির নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বৃটিশ ওভারসীস সোশ্যালিস্ট ফেলোশীপ সমিতি আয়োজিত সভায় বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বাংলাদেশ প্রশ্নে বক্তৃতাদানের আমন্ত্রণপত্র লেবার পার্টি ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
লেবার পার্টি
২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
বিচারপতি জনার চৌধুরী
বাংলাদেশ অফিস
১১ গোরিং স্ট্রিট,
লন্ডন, ইস্টার্ন সেন্ট্রাল ৩।
জনাব,
বৃটিশ ওভারসীস সোশ্যালিস্ট ফেলোশীপ
আমি আপনার কাছে নিশ্চিত করার জন্যে লিখছি যে, আপনার সাথে এই প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান, জনাব ডালজিৎ শিবাই এর সাথে টেলিফোনে কথা হয়েছিল যেন তিনি ব্রিটিশ ওভারসিজ সোশ্যালিস্ট ফেলোশিপ এবং বাংলাদেশের এমপি মিঃ পিটার শোর-এর যৌথ প্রচেষ্টায় ৫ই অক্টোবর, রোজ মঙ্গলবার, বিকাল ৫:১৫ মিনিটে, ব্রাইটনের লিউস রোড; ব্রাইটন লেবার ক্লাবে আয়োজিত একটি মিটিংয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। আমি বুঝতে পারছি যে, আপনি লেবার পার্টির সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে চান এবং আপনার থাকার জন্যে ব্রাইটন, কিংস রোডের বেডফোর্ড হোটেলে ৩রা অক্টোবর থেকে ৫ম অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং দেয়া হয়েছে ।
লেবার পার্টির সদস্য এবং ব্রিটেনের অভিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে ব্রিটিশ ওভারসিজ সোশ্যালিস্ট ফেলোশিপ প্রতিষ্ঠানটি লেবার পার্টির ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং সাম্প্রতিক সময়ে, এই প্রতিষ্ঠানটি লেবার পার্টির সদস্যদের মাঝে পররাষ্ট্র বিষয়ের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানানোর জন্যে জোর দিয়েছে। এই ফেলোশিপের চেয়ারম্যান, এমপি মিস জোয়ান লেস্টর, যিনি ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটি এবং লেবার গভর্ণমেন্ট-এর একজন সদস্য।
আমি ব্রাইটনে মঙ্গলবার উপস্থিত থাকবো এবং আপনার সাথে সাক্ষাতের জন্যে অপেক্ষা করবো।
আপনার অনুগত,
টিম রিডৌট
সেক্রেটারি।