You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.05 | বাংলাদেশের ঘটনাবলীর ওপর তিনজন এমপি’র বক্তব্য | মান্থলী কনটেম্পারারী ও হিন্দুস্তান টাইমস - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের ঘটনাবলীর ওপর তিনজন এমপি’র বক্তব্য মান্থলী কনটেম্পারারী ও হিন্দুস্তান টাইমস ৫ও৬ আগস্ট,১৯৭১

লর্ড ফিনার ব্রোকওয়ে, লন্ডন, আগস্ট ৬
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে হিটলারের সময় হতে আজ পর্যন্ত গনতন্ত্রকে নির্লজ্জভাবে প্রত্যাখানের নজির হলো পাকিস্তানী সামরিক জ্যান্তা কর্তৃক পূর্ববঙ্গে সামরিক হস্তক্ষেপ । বিশ্বের ধনী রাষ্টগুলোর জন্য এটা সত্যি লজ্জাজনক যে, জনদূর্ভোগ লাঘবের জন্য তারা সঠিকসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পূর্ববঙ্গের হত্যাযজ্ঞ ছিল হিরোশিমার ট্রাজেডির পর সংগঠিত পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম।
মিঃ রেগিনাল্ড প্রিনটিক, লেবার এম পি, লন্ডন, আগস্ট ৫
বৃটেন ও অন্যান্য দেশগুলোর উচিত ভারতকে নতুনভাবে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া যার মাধ্যমে ভারত শরণার্থী শিবিরে পূর্ববাংলার সত্তর লাখের ও অধিক শরণার্থীকে সামাল দিতে পারে। এটা একটা সম্ভাব্য সামরিক সমাধানকে বাঁধা দানের সাথে সাথে জনহিতকর কাজের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। পূর্ববাংলায় সংগঠিত ট্রাজেডির আকার ও ভয়াবহতা নিরূপন করা এতই দূরহ যে তা কল্পনা করাও অসম্ভব। প্রথম দর্শনে আমি বলতে পারি যে, এ রকম ভয়াবহ ঘটনা আমি কখনও দেখিনি এবং আশা করব যেন ভবিষ্যতে এমন নৃশংস ঘটনার সম্মুখিন না হই।
শরণার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিতদের নিয়ে গঠিত মুক্তি ফৌজ গেরিলারা এসব অঞ্চলে সাফল্য লাভ করছে, আমার মনে হয় অধিকাংশ জনগনই এদের পক্ষে। পাকিস্তানের অবস্থান শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ যা সমগ্র মানব জাতির জন্য মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম দিতে পারে।
মিঃ ডোনাল্ড চেজওর্থ, লেবার এম.পি,নয়া দিল্লি, আগস্ট ৬
(শ্রী পৃথিব চক্রবর্তীর সাথে সাক্ষাতকার ও ‘দি হিন্দস্তান টাইমস’ ৭ আগস্ট প্রকাশিত)
একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ অবশ্যম্ভাবী। পাকিস্তানী সামরিক জান্তাদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সমঝোতার কোন লক্ষণ দেখা যায়নি বরং এরা এর বিরোদ্ধে কাজ করিছল। সামরিক জ্যান্তাদের নৃশংসতার একটাই পরিনতি যা গেরিলাদের যুদ্ধের প্রতিজ্ঞাকে অনড় ও মনোবলকে চাঙ্গা করছে। ফরাসীদের বিরোদ্ধে আলজেরীয় গেরিলাদের যুদ্ধ কৌশলের চেয়েও মুক্তি ফৌজ গেরিলাদের যুদ্ধ কৌশল উচুমানের ও অধিক কার্যকর ছিল বলে মনে হয়েছে। গেরিলাদের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনঃস্থাপনে পাকিস্তানী সামরিক জ্যান্তাদের দক্ষতা আলজেরিয়ায় ফরাসী বাহিনীর চেয়ে নিম্নমানের ছিল। রেলওয়ে যেগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করা ছিল তার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত।
ইসলামাবাদের সামরিক জ্যান্তা ও বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের সমঝোতার সম্ভাবনা অনেক আগেই শেষ হয়েছে, তাদের নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা বাংলাদেশের জনগনের মনোবলকে আরো দৃঢ় করছে পশ্চিম পাকিস্তানের শৃংঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত ও স্বাধীন করতে।
ভারতের সাথে যুদ্ধ ছাড়া আর বিশেষ কোন সুবিধা পাকিস্তানী নেতারা কিভাবে আশা করতে পারে আমার তা একেবারেই বোধগম্য নয়। আমার বিশ্বাস বিশ্ব জনমত মুক্তি ফৌজকে সহায়তার অজুহাতে পাকিস্তানী বাহিনীর ভারতের বিরোদ্ধে সামরিক হস্তক্ষপকে মেনে নেবে না। যে কেউ চাইলেই দেখতে পারে যে, মুক্তি ফৌজের অপারেশন বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে সংগঠিত হচ্ছে।