You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.12 |কুমিল্লা শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা | যুগান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

কুমিল্লা শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা

আগরতলা, ১১ জুন (পি, টি, আই) বাংলাদেশের মুক্তিফৌজ কুমিল্লা শহরটি গতকাল দখল করে। আবার স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়েছে। এই সঙ্গে নানা অঞ্চলে গেরিলা তৎপরতা ও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। ইউ এন আই জানাচ্ছেন সারা বাংলাদেশ জুড়ে শেখ মুজিবের মুক্তিফৌজ গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে বলে সীমান্তের ওপারে মুক্তিবাহিনীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে খবর এসেছে। পাক সামরিক প্রশাসন শহরে ৭১ ঘ্নটার সামরিক আইন জারী করে নির্বিচারে অধিবাসীদের বন্দী করেছে।

সীমান্তের ওপার থেকে জানা গেছে, মুক্তিফৌজ পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, হাবিব ব্যাঙ্ক লিমিটেড, মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক, জজ কোর্ট এবং টাউন হল ভবনে গ্রেনেড আক্রমণ চালায়। গেরিলা বাহিনী কুমিল্লা শহরের দক্ষিণাঞ্চলে একটি রেল ইঞ্জিন উড়িয়ে দিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

মুক্তিবাহিনীর সূত্র থেকে জানা যায় যে গত ৬ ই জুন মুক্তিফৌজ চট্রগ্রাম জেলায় সৌলাৎপুরে পাকসেনা সমাবেশের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ৩৬ জন শত্রুসেনাকে খতম করে। ৫ই জুন শ্রীহট্রের তেলিপাড়া খন্ডে মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাক বাহিনীর প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে পাকবাহিনী আক্রমণের চাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পশ্চাদপসারণ করে, তবে পালাবার সময় তারা জীবন ও সম্পত্তির বেশ ক্ষতি করে যায়। গত ৩রা জুন লাকসাম অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী হঠাৎ একটি আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীর অনেককে খতম করেছে। শত্রু পক্ষের বেশকিছু মিজো এবং চাকমা সেনাও নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী তবলছড়িতে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিনিয়ে নেয়। এই অঞ্চলে পাক সেনাদের অমানুষিক অত্যাচার স্বত্বেও বাঙালি অধিবাসীরা দৃঢ় মনোবল নিয়ে তাদের মোকাবেলা করছেন, মহিলা এবং কিশোরীরাও মুক্তিবাহিনীর সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।

কুমিল্লা জেলার ননীপুর ও ফকিরহাটে গুপ্তস্থান হটাৎ আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিফৌজের গেরিলা দল ২০ জন পাকসেনাকে খতম করে। মিয়ার বাজারে ও মুক্তিফৌজের হাতে পাক হানাদার বাহিনীর আটজন মারা পড়ে। এখানে তিন ঘণ্টা লড়াই চলে। পাকসেনারা মর্টার ও মেশিনগানে চালিয়ে মুক্তিফৌজের পাঁচজন যোদ্ধাকে আহত করে। শ্রীহট্ট জেলার মির্জাপুরে মুক্তিবাহিনী মেশিনগান ও মর্টার চালিয়ে পাকসেনাদলের একজন অফিসার ও দশজন সৈন্যকে হত্যা করে।

দিনাজপুরেও গেরিলা তৎপরতাঃ রায়হগঞ্জ, ১০ জুন গেরিলা ইউনিট দিনাজপুরে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে তৎপর হয়ে উঠছে। ছোট ছোট দল গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিফৌজ পাক দখলদার বাহিনীকে যথেষ্ট বিব্রত করে তুলেছে। কয়েকদিন আগে ঠাকুরগাঁও মহকুমা এলাকায় রুহিয়া রেল স্টেশন থেকে ১ ফার্লং দক্ষিনে ৫০ ফুট দীর্ঘ রেল লাইন মুক্তিফৌজ ডিনামাইট দিয়ে উরিয়ে দেয়। পাক সেনাবাহিনীর লোকেরা গুলি চালাতে থাকে। মুক্তিফৌজ গেরিলারা পিছন থেকে পাক সৈন্যদের আক্রমণ করে ৭ জনকে হত্যা করে। ওই এলাকার মঙ্গলপুর ও বাজানহারের মধ্যবর্তী একটি রেলওয়ে ব্রিজ উড়িয়ে দেয় এবং রুহিয়া থেকে ৪/৫ মাইল দূরে একটি গুরুতবপূর্ণ সড়ক সেতুও তারা উরিয়ে দেয়। বোচাগঞ্জ, পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈলে গেরিলা বাহিনী বেশ কয়েকজন পাক সেনাদের তাঁবেদার গুপ্তচরকে খতম করে।

-যুগান্তর, ১২ জুন, ১৯৭১