You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযোদ্ধারা দেশের মাটি থেকে পাক হানাদারদের
উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর

কলকাতা, ১০ জুন- গণপ্রজাতন্ত্রী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী জনাব এম মনসুর আলী বাংলাদেশের পুর্বাঞ্চলে চার দিনব্যাপী সফরের পর আজ মুজিবনগরে প্রত্যাবর্তন করে বলেছেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা দেশের মাটি থেকে পাক হানাদারদের উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর।”

ঐ সফরের সময় তিনি মুক্তিফৌজ নিয়ন্ত্রিত কতিপয় শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, ঐ শিবিরসমূহে তিনি “তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অদম্য মনোবল ও অনমনীয় দৃঢ়তা” পরিলক্ষিত করেছেন। এই খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রচার করেছে।

পাক’ স্বাগত কেন্দ্র গুলি বন্দী শিবিরের সঙ্গে তুলনীয়ঃ আকাশবাণী’র খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র বাংলাদেশের পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক (শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য) প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত ‘স্বাগত কেন্দ্র’ গুলিকে বন্দী শিবিরের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি ভারতের পথে আসার সময় বহু সংখ্যক শরণার্থীকে পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ জোর করে ঐ স্বাগত কেন্দ্র গুলিতে ধরে নিয়ে গেছে।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিকের অধিকাংশ বাঙালি কর্মচারী ছাঁটাইঃ ঢাকা থেকে পাকসামরিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ইংরাজী দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকার অধিকাংশ বাঙালি কর্মচারীকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে বলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ প্রচার করেছে। পাক অধিকৃত বাংলাদেশে সামরিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ঐ সকল পত্রিকার কোন গ্রাহক নেই। সামরিক কর্তারা পত্রিকার ২০০০ কপি কিনে নেন, মাঝে মাঝে সেনাদের মধ্যে বিমান থেকে ওগুলো ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু সাধারণ নিরপেক্ষ কোন বেসামরিক পাঠক নেই।

পাক নৃশংসতার বিরুদ্ধে ডন পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদকের কণ্ঠস্বর করাচীর ডন পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক জনাব আলী জাফরী আজ লণ্ডনে বাংলাদেশে সংঘটিত পাক নৃশংসতার বিরুদ্ধে দৃপ্ত প্রতিবাদ জানিয়ে জনসাধারণের কাছে এই মর্মে আবেদন জানিয়েছেন যে, তাঁরা যেন ইংল্যাণ্ড ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী টেষ্ট ম্যাচগুলি বয়কট করেন।

জনাব আলী জাফরী ইতিপুর্বে পাকিস্তানে ব্যাক্তি স্বাধীনতা অপহরণের প্রতিবাদে পাক নাগরিকত্ব বর্জন করেছিলেন।

চুয়াডাঙ্গায় পাক সেনাদের মধ্যে “সেম সাইড’’ কলকাতা, ১০ জুন বাংলাদেশের গেরিলাবাহিনীর তৎপরতা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। গেরিলাদের হাতে মার খেয়ে পাক হানাদাররা নিজেদের মধ্যে সেম সাইড করে বসেছে। চুয়াডাঙ্গার কাছে দুই দল পাক সৈন্যের পরস্পর সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আজ সন্ধ্যায় ঐ সংবাদের কথা উল্লেখ করে চুয়াডাঙ্গার শেয়ালমারীতে গেরিলা বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সংবাদ দিয়েছে।

প্রকাশ, গত ৫ জুন শেয়ালমারীতে মাইন বিস্ফোরণে ২ টি সামরিক ট্রাক ধ্বংস হয়ে ২৯ জন পাকহানাদার নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। হানাদাররা জীবননগরের দিকে যাচ্ছিল। ঐ মাইন বিস্ফোরণের শব্দে ভীত পাক হানাদাররা জীবননগর দর্শনা থেকে ঘটনাস্থলে দিক আসে। দুই পক্ষেই পরস্পর মুক্তিসেনা বলে ভুল করে এবং পরস্পরের উপর গুলি চালাতে থাকে। ফলে ১৩ জন পাকহানাদার নিজেদের গুলিতেই আহত হয়।

-কালান্তর, ১১ জুন ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!