কমান্ডোদের চোরাগোপ্তা আক্রমণ বহু পাকসৈন্য খতম
বহরমপুরে (পঃবঙ্গ), ১৭ মে (পি টি আই)- গতকাল মুক্তিফৌজের কমান্ডোরা রাজশাহীতে আকস্মিকভাবে হানা দিয়ে অন্তত ২৫ পাকিস্তানী সামরিক শিক্ষার্থীকে খতম করেছে। আহত করেছে ৭০ জনকে। ওপার বাংলাদেশ থেকে পাওয়া এক খবরে আজ বলা হয়েছে যে, কমান্ডোর মর্টার ও হালকা মেশিনগান নিয়ে আকস্মিকভাবে রাজশাহী পুলিশ লাইণে হানা দিলে উক্ত সামরিক শিক্ষার্থীদের সেনারা পাল্টা মর্টার ও ভারী কামান দাগালে কমান্ডোরা পালিয়ে যায়। তাদের কোনও ক্ষতি হয়নি।
আগরতলা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, মুক্তিফৌজের কমান্ডোরা গতকাল ও আজ বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব খণ্ডে বিভিন্ন সৈন্য ঘাঁটিতে হানা দিয়ে ৬টি জল ও স্থলচর ট্রাক দখল করেছেন। তাছাড়া, একটি ট্রাক ধ্বংস করে প্রায় ৮০ জন সেনাকে খতম করেছেন। মুক্তিফৌজের সহিত সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ মহলের সুত্র থেকে পাওয়া আরও সংবাদে জানা গিয়েছে যে, কুমিল্লা জেলার কসবায় মুক্তিফৌজ তিনটি পাকিস্তানী সামরিক ট্রাক দখল করে নিয়েছেন। হঠাৎ হানা দিয়ে কমান্ডোরা একজন ক্যাপ্টেন সমেত ২৮ জন সৈন্যকে খতম করেছেন।
শ্রীহট্ট সেক্টরে ৬০ জন সৈন্যসহ একটি ট্রাক ধ্বংস হয়েছে এবং ৩টি ট্রাক কমান্ডোদের দখলে এসেছে। তবে শেষোক্ত ক্ষেত্রে কোনও সৈন্যহানি না হলেও পলায়নপর সৈন্যরা প্রচুরসংখ্যক মাঝারি মেশিনগানের বুলেট ও কয়েকটি বন্দক ফেলে রেখে যায়। ঐ একই সুত্রে জানা যায় যে, মুক্তিযোদ্ধারা লাকসাম- নোয়াখালী রোডে রাখীর কাছে একটি সেতু উড়িয়ে দেন।
ইতিমধ্যে আগরতলা থেকে আর একটি খবরে প্রকাশ, পাকিস্তানী সেনারা সীমান্ত পেরিয়ে যাবার সময় দুটি পরিবারের ১৩ ব্যাক্তিকে গুলি করে খুন করেছে।
পি-টি-আই’র এক খবরে জানা যায়, বাংলাদেশের উত্তর- পশ্চিমে রংপুর খণ্ডে স্বাধীনতা যোদ্ধারা রামনগর এলাকায় একটি পাক টহলদার বাহিনীর উপর চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালিয়ে একজন পাকিস্তানী মেজরকে সাবাড় করেন। এই আক্রমণে কয়েকজন পাকসৈন্য আহত হয়। লালমনিরহাট এলাকায় মুক্তিফৌজ হাতবান্দা ও বাউরার মধ্যে একটি রেলসেতু উড়িয়ে দেয়।
ফেনীর দক্ষিনে পাক-সেনাদেড় সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষ পি-টি- আই’র খবরে আরও জানা যায়, যে কুমিল্লা খণ্ডে মুক্তিফৌজ ফেনীর ২০ কিলোমিটার দক্ষিনে একটি স্থাণে একটি পাকিস্তানী সেনাদলের উপর আক্রমণ চালালে সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। গঙ্গাসাগর এলাকাতেও পাক-সেনাদের সঙ্গে মুক্তিফৌজের গুলি বিনিময় হয়।
আগরতলা থেকে ইউ-এন-আই জানাচ্ছেঃ সীমান্তের ওপর থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়েছে যে, মাধবপুর শ্রীহট্ট সড়কে মুক্তিফৌজদেড় গেরিলা বাহিনী গত ক’দিনে পাকসেনাদের দুটি কনভয়ের উপর আক্রমণ চালিয়ে ১২০ জন পাকসৈন্যকে খতম করেছেন। প্রথম কনভয়টি আক্রান্ত হয় শ্রীহট্টের নালুয়া গ্রামের নিকট। ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান গেরিলা বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। এই আক্রমণের প্রায় ৭০জন পাকসৈন্য নিহত হয়।
-যুগান্তর, ১৮ মে ১৯৭১