You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.10 | কুমিল্লা ও আখাউড়ায় তিনদিন তুমুল লড়াইঃ তিনশ’ পাকসেনা খতম | যুগান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

কুমিল্লা ও আখাউড়ায় তিনদিন তুমুল লড়াইঃ
তিনশ’ পাকসেনা খতম

আগরতলা, ৯ই মে (ইউএনআই)- আখাউড়ায় মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাকহানাদার বাহিনীর আজ তিনদিন ধরে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত পাকবাহিনীর প্রায় দু’শ সেনা নিহত হয়েছে বলে মুক্তিফৌজের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। কোহিমায় শ্রুত স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে যে, আখাউড়া ও কুমিল্লা খণ্ডে বাংলাদেশের মুক্তিফৌজের হাতে তিনশ পাক হানাদার নিহত হয়েছে। বেতারে আরও বলা হয়, বিপুল সংখ্যায় সেনা খতমের ফলে পাকবাহিনীর বেলুচি সৈন্যদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত সূত্রে প্রকাশ, মুক্তিফৌজের দু’জন সেনা নিহত, তিনজন আহত এবং দু’জন নিখোঁজ হয়েছেন।

পাক হানাদার বাহিনী আখাউড়া- আগরতলা চেক পোস্টের এক হাজার গজের মধ্যে এসেছে। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী চেকপোস্টের কাছেই ঘাঁটি আগলে রয়েছে, তাই এই জায়গাটিই পাক বাহিনীর আক্রমণের লক্ষ্য। বাংলাদেশের সূত্রে প্রকাশ, পাক বাহিনীর তিন কোম্পানী সেনার দ্বারা অর্ধ চন্দ্রাকৃতি ব্যুহ রচনা করে মুক্তিফৌজের এক কোম্পানী সেনাকে চেকপোষ্ট এলাকা থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করছে। আখাউড়া শহরে অতিরিক্ত এক কোম্পানী পাকসেনা মোতায়েন রাখা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, ত্রিপুরা-বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেবার প্রেয়াসে পাকবাহিনী বিপুলসংখ্যক সেনাদল নিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেছে। এই উদ্দেশ্যেই তারা রামগড় দখলের পর আজ হটাৎ আখাউড়া ও বিবিরবাজার এলাকায় আঘাত হেনেছে।

একটি বড়সড় পাকবাহিনী আখাউড়া শহর থেকে এগিয়ে আগরতলা চেকপোস্ট থেকে মাইল খানেক দূরে জাঘীশার সেতুর কাছে উপস্থিত হয়েছে। বিপরীত দিকে, আজ সকালে মুক্তিফৌজ আগরতলা চেকপোস্টের আড়াই মাইল দূরে ফকিরমুড়া সীমান্ত ফাড়িটি দখল করে নিয়েছে। সকাল থেকেই আখাউড়ার রাজাপুর অঞ্চলে দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই চলতে থাকে।

কুমিল্লা খণ্ডে লড়াইঃ সীমানার এপারে দাঁড়িয়েও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কামানের গোলার শব্দ চারদিকে কাঁপিয়ে তুলছে। ওদিকে আগরতলা থেকে ৬ মাইল দূরে আখাউড়া উপখণ্ডে এখনও যুদ্ধ চলছে। মুক্তিফৌজের গেরিলা কমাণ্ডোরা সাফল্যের সঙ্গে শত্রুসৈন্যদের প্রচুর সংখ্যায় হতাহত করছেন। তবে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রবল গোলাবর্ষণের মুখে তারা ফকিরমুড়া থেকে প্রথম পশ্চাদপসারণ করতে বাধ্য হন। আগে ৭ই মে মুক্তিবাহিনী গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে শত্রুসৈন্যদের কসবা ও আখাউড়ার মধ্যবর্তী রাজাপুর গ্রাম থেকে বিতাড়িত করে দেন।

কৃষ্ণনগরের খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের পশ্চিমাংশে কুষ্টিয়া খণ্ডে ৭ই মে মুক্তিফৌজ আর পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের মধ্যে গুলি বিনিময়ে অন্তত ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে ও বাংকার বিধ্বস্ত হয়েছে। রাত ১টা থেকে এক ঘন্টা ধরে এই গুলি বিনিময় চলে।

আজ সকালে সীমান্তের অপর পারের এক খবরে বলা হয়েছে যে, মুক্তিফৌজ গত শুক্রবার থেকে মেহেরপুর উপখণ্ডে ভৈরব নদীর পূর্বতীরে পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাটির উপর শেল বর্ষণ করছে। মুক্তিফৌজের তরফের কেউ হতাহত হননি।

মুক্তিবাহিনীর চোরাগোপ্তা আক্রমণকারীরা গতকাল সন্ধ্যায় ভৈরব নদীর পশ্চিমতীরে মেহেরপুরের একটি গুপ্ত স্থান থেকে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে একজন সুবেদারসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানী সৈন্যকে হত্যা করেন। মুক্তিফৌজের গেরিলারা গতকাল রাত্রে দক্ষিণ-পশ্চিম খণ্ডে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে জয়রামপুরের কাছে রেলসেতু উড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে দর্শনার দিকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এবং পাকিস্তানের রসদ সরবরাহের পথ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশের কোনো এক স্থান থেকে খবর পাওয়া গেছে যে, ২৫ শে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫,০০০ পাকিস্তানী সৈন্য নিহত এবং ৩০,০০০ সৈন্য আহত হয়েছে বলে বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট নেতা জানিয়েছেন।

-যুগান্তর, ১০ মে, ১৯৭১