গেরিলা আক্রমণে রেলপথ ও সেতু ধ্বংস, তামাবিল হাতছাড়া
রায়গঞ্জ, ১৪মে- বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা গত ৩দিনে দিনাজপুর জেলায় রেলের ওপর কয়েক দফা গেরিলা আক্রমণ চালান বলে এখানে খবর পাওয়া গিয়াছে। গতকাল রাতে কমান্ডোর হিলির কাছে চারখাই ও ডাঙ্গাপাড়া ষ্টেশনের মধ্যে রেলপথ উড়িয়ে দেন। বুধবার তাঁরা ধামাইরহাটের কাছে একদল পাকসেনার ওপর গুলি চালিয়ে ৪জন সৈন্যকে খতম করেন। মুক্তিসংগ্রামীরা মঙ্গলবার জয়পুরহাটের কাছে ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি রেলসেতু উড়িয়ে দেন এবং একটি পাওয়ার হাউস ধ্বংস করেন। তাছাড়া পাঁচবিবি ষ্টেশনের কাছে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়।
দু’শরও বেশী খানসেনা খতমঃ আগরতলা, ১৪ মে আজ গভীর রাত্রে মুক্তিফৌজের সুত্রে পাওয়া খবর, চট্টগ্রাম ও ফেনীর মধ্যে শুভপুর এলাকায় মুক্তিফৌজের সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধে গতকালণ ২০০ জনেরও বেশী খান- সেনা খতম হয়েছে।
কৃষ্ণনগরের খবরঃ স্বল্পবিরতির পর মুক্তিফৌজের গেরিলা ও কমান্ডোরা বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাঁটিগুলির ওপর আবার আক্রমণ করেছেন।
সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, মুক্তিফৌজের গেরিলারা গতকাল রাতে উত্তর পশ্চিমে খণ্ডে কড়িগ্রামে পাক বাহিনীর ওপর দুবার আক্রমণ চালান। ৪জন পাকসৈন্য নিহত এবং ৬জন আহত হয়। কিছু অস্ত্রশস্ত্রও গেরিলার দখল করেছেন।
মুক্তিফৌজের একদল কমান্ডো ১২ মে রাতে কুষ্টিয়া জেলায় মেহেরপুর থেকে ৩ মাইল দূরে কালাচাঁদপুরে রাস্তার ওপর একটি বড় কালভার্ত উড়িয়ে দেন।
এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের উঃ পঃ সীমান্তে প্রদেশ থেকে আধা- সামরিক বাহিনীর লোকদের এনে পাকবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর একটি বেটেলিয়ানকে মোতায়েন করা হয়েছে। মেহেরপুর সীমান্তের পশ্চিম দিকে দৌলতদারের গ্রামে এবং চুয়াডাঙ্গা শহরে পাক- সৈন্যদের একটি বিরাট দল ঘাঁটি স্থাপন করেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে ৬০টি ট্রাক।
চুয়াডাঙ্গা- মেহেরপুরে পাকসেনাদের নৃশংসতাঃ কৃষ্ণনগরে আগত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পাক টহলদার বাহিনী রোজ মেহেরপুর- চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে ওঁৎ পেতে থাকে। তাঁরা বেপরোয়াভাবে নিরস্ত্র লোকদের হত্যা করে মৃতদেহগুলি গর্তে ফেলে দেয়। পাকসেনারা চুয়াডাঙ্গা মহকুমার দুটি গ্রাম বাদে আর মব এলাকা তছনছ করে দিয়েছে। ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং নারী নির্যাতন তাদের দৈনিক কাজ। পাকিস্তানী বর্বররা বহু তরুণীকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। মেহেরপুরে দুটি গ্রামে হানা দিয়া পাক সেনারা ১২ জনকে হত্যা করেছে। প্রকাশ, মুক্তিফৌজ বিভিন্ন অঞ্চলে এর আগে যেসব পরিখা খুঁড়েছিলেন, নিহত ব্যাক্তিদের মৃতদেহ ফেলে পাকসেনারা সেগুলি ভরে তুলেছে।
তামাবিল হাতছাড়াঃ ডাওকি থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়- তিনদিন প্রবল প্রতিরোধের পর মুক্তিফৌজ আজ তামাবিল থেকে হেটে গিয়েছে। তামাবিল এখন পাকবাহিনীর দখলে। তামাবিল শ্রীহট্ট খণ্ডে বাংলাদেশের শেষ চেকপোস্ট এবং ডাওকি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে।
আজ বেলা দেড়টা নাগাদ মুক্তিফৌজ সুবিধাজনক স্থানে সরে যান। পাকসেনারা তামাবিল দখলের পর বাংলাদেশের পতাকা ফেলে দিয়ে পাকিস্তানী পতাকা তোলে।
-আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৫মে, ১৯৭১।