You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৩২। পাকিস্তান আক্রমনের পর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বিবৃতি ভারতের লোক সভার কার্যবিবরণী ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১


প্রতিরক্ষা মন্ত্রী (শ্রী জগজীবন রাম)ঃ সম্মানিত সদস্যরা নিশ্চয়ি মনে করতে পারছেন, ৪ ডিসেম্বর আমি হাউসে কি বক্তব্য প্রদান করেছিলাম। আমি তখন বলেছিলাম যে পাকিস্তানের পূর্বপরিকল্পিত ভাবে আমাদের আক্রমন করে ক্ষতিসাধন করার যে উদ্দেশ্য ছিল, তা ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানী বাহিনী নিরন্তরভাবে আমাদের আক্রমন করার চেষ্টা করে গেছে এবং আমাদের প্রতিরক্ষার দুর্বলদিক খুজে বের করার চেষ্টা করে গেছে। আমরা পাকিস্তানী সেনাবাহিনির এই আগ্রাসী আক্রমনের উপযুক্ত জবাব দিতে তৎপর হয়েছি।

পাকিস্তানী বিমানবাহিনী আমাদের বিমানঘাঁটি গুলোতে হানা দিয়েছে, কিন্তু যে ক্ষতি তারা করতে পেরেছে, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ বিমানঘাটিগুলো দ্রুত মেরামত করে তাদের কার্যক্ষম করে তুলেছি। পাকিস্তানের আক্রমন ধীরে ধীরে কমে আসছে। আমরা তাদের বিমানঘাঁটি এবং বিমানের উপর যে আক্রমণগুলি চালিয়ে এসছি, এটি তার ফলাফল হতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত ৫২টি পাকিস্তানী যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছি এবং খুব সম্বভত আরো ৪টির ক্ষতি করেছি। ৩ জন পাকিস্তানী পাইলট আমাদের হেফাজতে আছে।

আমাদের বিমানবাহিনিকে গত দুইদিন ধরে ফরোয়ার্ড পজিশনে জড় করা হচ্ছে এবং তারা গ্রাউন্ড পজিশনে দারুন সহযোগিতা করছে। আমরা একি সাথে পাকিস্তানের যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছি, তাদের সাপ্লাই ডাম্প এবং তেল সংরক্ষণাগার গুলোতেও হামলা চালিয়ে ছিন্নভিন্ন করেছি সফলতার সাথে। সবমিলিয়ে আমরা ২২টি বিমান হারিয়েছি।

পাকিস্তান পুঞ্চে বারবার হামলা চালাচ্ছিল, আমরা তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছি। চাম্ব এলাকায় প্রচণ্ড চাপ ছিল, আমরা আমাদের ট্রুপ সরিয়ে মোনাওয়ার তাভি নদীতে বসিয়েছি। এই অবস্থান পরিবর্তনের পর যে যুদ্ধ হয়, তাতে পাকিস্তান ২৫টি ট্যাংক এবং জনবল হারিয়েছে। আমরা আখনুর এবং শাকারগরেও তাদেরকে পাল্টা চাপে রাখছি।

দেরা বাবা নানক ছিটমহল থেকেও পাকবাহিনীকে হটানো হয়েছে। রবির উপরে যে ব্রিজ আছে, তা এখন আমাদের দখলে আছে। পাকবাহিনীর লুকিয়ে সীমান্তের ভেতরে ঢোকার চেষ্টাও ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে।

অমৃতসর সেক্টরে, গুটিকয়েক পাকিস্তানী সীমান্তঘাটি আমরা আমাদের দখলে এনেছি। ফিরোজপুর এলাকায়, সেজ্রা ছিটমহল থেকে পাকবাহিনীকে হটানো হয়েছে। রাজস্থান সেক্টরে, পাকিস্তানের একটি আরমার্ড বাহিনী চেষ্টা করেছিল রামগর দখল করতে। পুরো বাহিনীকে লোঙ্গানাওয়ালাতে আটক করা হয় এবং লন্ডভন্ড করে দেয়া হয়। ২০টি ট্যাংক ধ্বংস করা হয় এবং আরো ৭টির ক্ষতিসাধন করা হয়। সিন্ধু থেকে দুইদিক দিয়ে তারা প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল, আমরা সেটা রুখে দিয়েছি। আমাদের ট্রুপ্স নানা পয়েন্টে এগিয়ে আছে, এবং আমরা নয়া চর থেকে মাত্র দশ মাইল পিছনে অবস্থান করছি। আমরা ইসলামগর দখল করেছি। এখন পর্যন্ত, আমরা ৯৬টি পাকিস্তানী ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছি।

পশ্চিমাংশে, আমাদের বাহিনী মুক্তিবাহিনীর সাথে একসাথে যুদ্ধ করছে। আমাদের হামলায়, পাকিস্তানী বাহিনী পিহু হটতে বাধ্য হচ্ছে। আজ সকালে যশোর বিমানঘাঁটি আমরা দখলে এনেছি। কালীগঞ্জের পশ্চিমের সকল এলাকা পাকবাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত হয়েছে। মেহেরপুর ভায়া ঝিনাইদহ তো গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। হিলি/দিনাজপুর এলাকা থেকে আমাদের বাহিনী রংপুর-বগুরা হাইওয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। লালমনিরহাট ও এই এলাকার বিমানঘাঁটি আমাদের দখলে চলে এসেছে। কুড়িগ্রাম, রংপুরের উত্তরাংস পাকবাহিনীর দখল থেকে মুক্ত হয়েছে। সম্মানিত সদস্যরা দুইদিন আগে আখাউড়া দখলের কথা জানেন। মৌলভিবাজার ও ব্রাক্ষনবারিয়ায় তাদের স্ট্র্যাটেজি সেন্টারগুলো ঘিরে ফেলা হয়েছে। গতকাল ফেনি থেকে সকল পাকিস্তানী সৈন্য অপসারিত হয়েছে। আমাদের বাহিনী এখন চাঁদপুর ফেরির দিকে আগাচ্ছে।

বাংলাদেশের আকাশ থেকে পাকিস্তানী বিমান বাহিনী সম্পূর্ণ মুছে ফেলে আমাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাগর থেকে সেনাবাহিনির বিভিন্ন সরঞ্জাম চট্টগ্রাম, চালনা, মংলা এবং খুলনায় জড় করা হচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে এখানকার পাকিস্তান বাহিনীর উপকূলবর্তী সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। সম্মানিত সদস্যরা ৪/৫ ডিসেম্বর রাতে ভারতীয় নেভির চালানো অপারেশনের কথা জানেন। দুইটি পাকিস্তানী যুদ্ধতরী ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আমার বিশ্বাস আরো একটি প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের নেভাল ফোরস করাচি সমুদ্রসীমার ১৫ মাইল ভিতরে চলে গিয়েছে। তাদের প্রচণ্ড গোলাবর্ষণে সমুদ্রে অবস্থানরত পাকিস্তানী নেভির ঘাটি ও তেলের ট্যাঙ্কগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বঙ্গপোসাগরে আমরা একটি পাকিস্তানী সাবমেরিন ডুবিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশে পাকিস্তানের দখলকৃত সমুদ্রসীমাগুলোতে ইস্টার্ন ফ্লিট অপারেশন চালাচ্ছে।

তিন বাহিনীই গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে নিয়োজিত। প্রতিটি পরিকল্পনায় তাদের যে দক্ষতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা, তা সন্তোষজনক।
জাতিসংঘের ব্যাপারে আই হাউসকে জানাতে চাচ্ছি, জাতিসংঘের বিমান সি-১৩০ কে ডিসেম্বর এর ৬ তারিখে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত নিরাপদ অনুমোদন দেয়া হয়। তারা তা কাজে লাগাতে পারেনি। নয়া দিল্লির জাতিসংঘ প্রতিনিধির অনুরোধে, ৭ ডিসেম্বর আবারো সকাল ৭টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত অনুমোদন দেয়া হয়। গত রাত ১০টা থেকে ঢাকায় কোন অপারেশন চালানো হয়নি। আমাদের জানানো হয়েছে যে, জাতিসংঘের একটি বিমান ঢাকা বিমানঘাটিতে বিপর্যস্ত হয়েছে। আমাদের এয়ার হেডকোয়ারটারগুলো জানিয়েছে যে কোন ভারতীয় বিমান সে সময় ঐ এলাকায় ছিলনা। আমি, সদস্যদের পক্ষ থেকে আমাদের বিরোচিত বাহিনীকে দেশরক্ষায় এই মহান অবদানের এবং শত্রুপক্ষকে পরাজিত করার জন্য অভিনন্দন জানাতে চাই।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!