You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৩০। পাকিস্তানের আক্রমণের পর যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিবৃতি ভারতের লোকসভায় কার্যবিবরণী ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট
পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিবৃতি
প্রসঙ্গঃ ভারতের উপর পাকিস্তানের আক্রমণ

প্রতিরক্ষামন্ত্রী (শ্রী জগজীবন রাম): আপনারা অবগত আছেন যে পাকিস্তান আমাদের উপর একটি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে।

পাকিস্তান বিমানবাহিনী বিকাল পাঁচটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে আমাদের বিমানঘাঁটি গুলোতে আগে বিমানহানা দিয়েছিলো। গতকাল পাকিস্তান বিমান আমাদের বারোটি বিমানঘাঁটিতে হানা দিয়েছে, এগুলো হলো: অমৃতসার, পাঠানকোট, শ্রীনগর, ফরিদজোট, হালওয়ারা, আম্বালা, আগ্রা, উত্তরলাই, যোধপুর, জামনগর, সার্ষা, এবং সারশাওয়া। গোদ্রা রোড, জাম্মু এবং বারমারের রেলওয়ে সংযোগও আক্রমণের শিকার হয়েছিলো। আক্রমণকারী বিমানগুলোর মধ্যে চারটি বিমানকে গুলি করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আমাদের কিছু রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো, ভূমিতে থাকা কোন বিমান আক্রান্ত হয়নি, একটি এলাকায় বসানো যন্ত্রপাতি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। আমাদের সকল বিমানঘাঁটি পুরোপুরি প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত। পূর্ব-পরিকল্পিত অগ্রে আক্রমণের মাধ্যমে মোটারকম ক্ষয়ক্ষতি আরোপ করার পাকিস্তানী উদ্দেশ্য প্রত্যাহত করা হয়েছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান বিমানঘাঁটিগুলোকে প্রতিশোধমূলক আক্রমণের মাধ্যমে জবাব দিয়েছিলো। প্রথম আক্রমণ গতরাত ১১:৫০ ঘটিকায় বাস্তবায়িত করা হয়েছিলো। চান্দেরি, শেরকোট, সারগোধা, মুরিদ, মিয়ানয়ালী, মাসরুর (রাওয়ালপিন্ডির কাছে) এবং চাঙে মাঙ্গা (লাহোরের কাছে) আক্রমণের শিকার হয়েছে। দলটি ভালো ফলাফল অর্জনের কথা জানিয়ে প্রতিবেদন জানিয়েছে। তারা মাটিতে থাকা কিছুসংখ্যক পাক-বিমান আঘাত করেছিলো এবং কিছু পেট্রোল ট্যাঙ্ক জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। সারগোধা বিমানঘাঁটিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাদীনে (কুচ) রাডার স্টেশনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি হান্টার, একটি এইচ এফ – ২৪ এবং একটি শুকোই ছাড়া আমাদের সকল বিমান ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে।

গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পাকসেনারা পুঞ্চ, সাম্ব জুরিয়ান, অমৃতসার, ফযিলকা এবং পাঠানকোটে আমাদের অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। পাকিস্তান বাহিনীর স্থল আক্রমণ সকল সেক্টরেই প্রতিহত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বর্ডার সেইফ ফোর্সের কিছু সংখ্যক যারা রবি নদীর সম্মুখীন ছিলো, তারা পশ্চাৎপদ হয়েছে। পাকিস্তানও নদীটির আমাদের পার্শ্বে তাদের বাহিনীর একই ধরণের অপসরণ ভোগ করেছে। পুঞ্চে আমরা পাঁচজন বন্দীকে নিয়েছি যারা ২৬ নাম্বার পদাতিক বাহিনীর। সাম্ব জুরিয়ানে পাকবাহিনী পশ্চাৎপদ হওয়ার সময় একজন মৃত এবং একজন আহত সৈনিককে রেখে যায়, দুজনেই পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ৪৩ নাম্বার পদাতিক বাহিনীর।

৪ঠা ডিসেম্বর ভোরের দিকে, আমাদের বাহিনী তিত্থালের পাঁচ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে একজন পাকিস্তানী প্রহরীকে বন্দী করেছিলো। উড়ি এবং হাজিপুরের মধ্যে একটি হিল ফিচার দখল করা হয়েছে। আমাদের বাহিনী একজন জে সি ও সহ ১৩ জন বন্দিকে আটক করেছে।

আখনুর থেকে ৩০ মাইল পশ্চিমে পাকবাহিনী অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদসহ এক বিশাল শক্তি নিয়ে কঠিন যুদ্ধে লিপ্ত। ছয়টি শত্রু ট্যাংকসহ ধ্বংস সহ, যেগুলোকে জ্বলতে দেখা গিয়েছিলো, অনেক হতাহত হয়েছে।

ফিরোজপুর সেক্টরে, পাকসেনাদলের আনুমানিক একটি ব্রিগেড আকাশ সহায়তা, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে ফিরোজপুর ও হুসাইনিওয়ালা এলাকায় আমাদের সেনাদলের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। আমাদের বাহিনী শত্রুদের উপর বিশাল হতাহতের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে সকল আক্রমণ প্রতিহত করেছে। আমাদেরও হতাহত হয়েছে এবং কিছু এলাকার দখল হারিয়েছি। হুসাইনিওয়ালা ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের বেশ কিছু পয়েন্টে গেছে এবং মুক্তিবাহিনীর সাথে একযোগে কাজ করছে। আমাদের বাহিনী মুক্তিবাহিনীর সাথে একত্রে ত্রিপুরা এবং কাচারে বিমানঘাঁটিসহ শমশেরনগর আওতায় নিয়েছে। আখাউড়ার চারপাশের এলাকাগুলোতে এখনও প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। আমাদের বাহিনী কুমিল্লা সেক্টরের সাঁইগঞ্জ এবং মজলিশপুর দখল করেছে। ঠাকুরগাঁও, দর্শনা এবং গাজীপুর এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে। একজন জে সি ও এবং ২৬ নাম্বার সম্মুখ শক্তি রাইফেল ব্যাটেলিয়নের একজন হাবিলদার-মেজরসহ ৪২ জন বন্দিকে ফুলবাড়িতে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বিমানঘাঁটিগুলোতে ভারতীয় বিমান বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে। এ পর্যন্ত ৮টি পাকিস্তানী স্যাবর জেট নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, চারটি ঢাকার কাছে এবং চারটি যশোরের কাছে। আমরা ২ জন যোদ্ধাকে হারিয়েছি।

ভারতীয় নৌবাহিনীর পূর্ব এবং পশ্চিম বহর এখন শত্রুদের যুদ্ধজাহাজ খোঁজার ও ধ্বংস করার এবং পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার উপকূলবর্তী যোগাযোগ পথ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে আছে এবং পশ্চিম পাকিস্তান বাহিনীকে সমুদ্র সহায়তা ভোগদখলের সমর্থন দেওয়া অস্বীকার করেছে। একটি পাকিস্তানী বাণিজ্য জাহাজ আমাদের বিনাশকারীদের একজনের হাতে আজ সকালে ধরা পড়েছিলো। নৌবাহিনীর কর্মচারিবৃন্দের একটি দল জাহাজ যাত্রা করেছে যেটিকে সবচেয়ে নিকটস্থ পোতাশ্রয়ের দিকে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

পূর্ব নৌবহরের ইউনিটগুলোও কক্সবাজারে আঘাত হেনেছে। আক্রমণটির ফলাফল হয়েছিলো বিমানঘাঁটি স্থাপনার বিধ্বস্ততা।

ভারতীয় নৌবাহিনী পাকিস্তান বন্দরসমূহের জন্য অভিপ্রেত সরবরাহের ব্যাপারে নিষিদ্ধ পণ্য নিয়ন্ত্রণ জারি করেছিলো। বাংলাদেশে পাকিস্তানের জন্য নিয়োজিত বন্দরসমূহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিকাল ৫:৪৭ ঘটিকা
তখন লোকসভা সোমবার সকাল দশটা, ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১, অগ্রহায়ন ১৫, ১৮৯৩ (সাকা) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!