You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২২৩। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা ভারতের লোকসভার কার্যবিবরণী ১২ জুলাই, ১৯৭১

১৭ টা ০২ মিনিট

জনগুরুত্তপূর্ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে

শ্রী জ্ঞ্যানেসশর প্রসাদ যাদব (কাটিহার)ঃ স্পিকার মহোদয়, আমি নিম্নলিখিত জরুরী জনগুরুত্তসম্পন্ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করছি এবং বিদেশ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি এ সম্পর্কে তার বিবৃতি প্রদানের জন্যঃ

‘প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ব্যাক্তিগত আদেশে পাকিস্তানকে সাড়ে তিন কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র প্রদানে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সিদ্ধান্ত’

পররাষ্ট্র মন্ত্রী (শ্রী শরণ সিং): সরকার সেনেটর চার্চের বিবৃতিটি ৭ জুলাই, ১৯৭১ দেখেছেন। আনুমানিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তান আসার জন্য পাইপলাইনে আছে। ৮ জুলাই, ১৯৭১, পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, “গত পাঁচ অর্থবছরে বছরে গড় আনুমানিক ৫ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র পাঠানো হয়েছে। ’

সিনেটর চার্চ একজন ভাল অবগতিসম্পন্ন সিনেটর এবং বিভিন্ন দেশে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে ভালো জানেন। এটা সম্ভব যে তার তথ্য সঠিক চিত্রের কাছাকছি। ডলারের পরিমাণ থেকে অস্ত্রের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারনা করা যায়না। সরকারি উত্স থেকে ক্রয় করলে অনেক সময় স্বাভাবিক বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কমে পাওয়া যায়। অনেক খুচরা যন্ত্রাংশ আছে যার দাম হয়ত সামান্য কিন্তু প্রাণঘাতী অস্ত্র হিসেবে অনেক বেশী সক্রিয়।

পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক সরঞ্জামের অব্যাহত সরবরাহের সম্পর্কে হাউসের সব বিভাগ অবগত আছে। আমি আশ্বাস দিতে চাই যে আমাদের মতামত মার্কিন সরকারের কাছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে।

সরকার মনে করে এই মুহুর্তে কোনো দেশের দ্বারা পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করা সেখানকার সামরিক শাসকদের দ্বারা বাংলাদেশে সঙ্ঘটিত নৃশংসতার ও গণহত্যার ধারাবাহিকতায় উৎসাহ দেয়ার শামিল। এটি বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের হস্তক্ষেপের শামিল। আমরা বাংলাদেশের শান্তি ও উপমহাদেশের স্থিতিশীলতা এবং সামগ্রিকভাবে এ অঞ্চলের পরিস্থিতিতে এ ধরনের নীতির প্রভাব সম্পর্কে মার্কিন সরকারকে জানিয়েছি।

শ্রী জ্ঞ্যানেসশর প্রসাদ যাদবঃ স্পিকার মহোদয়, সাম্রাজ্যবাদী অ্যামেরিকা ভিয়েতনাম ও কোরিয়ায় সৈন্য পাঠিয়ে হস্তক্ষেপ করার পেছনে সব সময় এই অজুহাত দেখিয়েছে যে, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য মানবিক মূল্যবোধ সংরক্ষণের জন্য এবং সম্প্রসারনবাদি চীনের দুরভিসন্ধি নস্যাৎ করার জন্যই তারা তা করছে কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে বলতে হচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই তিনটি ফ্যাক্টরই বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও অ্যামেরিকা সেখানে কিছু করছে না। সেখানে গণহত্যা চলছে, পাকিস্তানের আধিপত্যবাদি মনোভাবের দরুন তাদের অত্যাধিক শোষণে অর্থণৈতিক বৈষম্যের পাহাড় রচিত হয়েছে এবং সেখানকার সাত কোটি জনতা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এরূপ অবস্থায় অ্যামেরিকা আমাদেরকে প্রতিরক্ষা লাঘব করার উপদেশ দিচ্ছে, অন্যদিকে সে পাকিস্তানকে সর্বাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত করার প্রয়াস পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি আমাদের বিদেশ মন্ত্রী অ্যামেরিকা গিয়ে ভারতের মনোভাব, ভারত সরকারের নীতি তাদেরকে অবহিত করানোর চেষ্টা করেছে। এতে কোন লাভ হয়েছে কিনা জানিনা, তবে মার্কিন সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চ এ কথার রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট নিক্সনের আদেশের ৩ কোটি ৫৫ লক্ষ ডলার মূল্যের সমরাস্ত্র পাকিস্তানে পাঠানো হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, ১৯৭২ অর্থ বছরে অ্যামেরিকা অন্যান্য দেশে অস্ত্র সহায়তা কিংবা এ জাতীয় সহায়তাদানের যে পরিকল্পনা তৈরি করেছে তার মধ্যে বেশীর ভাগ, প্রায় ৫২ কোটি ডলারের সমরোপকরন পাকিস্তানকে দেয়া হবে। এমতাবস্থায় আমি জানতে চাই মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হেনরি কিসিঞ্জার ভারতে এসে প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে কি আলোচনা করেছেন? মার্কিন দূতের আলোচনার বিষয় বস্তু সম্পর্কে সংসদে এবং সমগ্র দেশকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে – তিনি কি ভারত সরকারকে কোন প্রকার আশ্বাস দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে এরূপ কিছু করা হবেনা? কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুকূলে পাকিস্তানের উপর প্রভাব বিস্তার করা হবে? এরূপ কোন কথা কি তিনি বলেছেন?

শ্রী শরণ সিং: আমি তার বক্তব্যের প্রথম অংশের সাথে একমত যেখানে তিনি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন এবং দেশের কথা বলেছেন এবং পাকিস্তানে মার্কিন সরকার কর্তৃক অব্যাহত অস্ত্র সরবরাহের ওপর উদ্বেগ এই হাউসে প্রকাশ করেছেন। শেষে তিনি দুই বা তিনটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন যার জবাব আমি দেব।

প্রথমত, পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করবে না এমন কোন নিশ্চয়তা কিসিঞ্জার দিয়েছে কিনা – যখন সে দিল্লীতে ছিল। আমি বলতে চাই তিনি আসলে পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলেন – কোন প্রতিশ্রুতি দিতে নয়।

শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত (আলিপুর): তিনি কি কোন ধরনের নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন?

শ্রী শরণ সিং: ড কিসিঞ্জারকে নিশ্চয়তার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।

শ্রী ইন্দ্রজিত গুপ্ত: কি ধরনের জিনিস তিনি খুঁজেছেন?

শ্রী শরণ সিং: এটা তিনি বলতে পারবেন, আমি না।

শ্রী সমর গুহ (কাঁথি):সংলাপ নিয়ে মন্ত্রী কি হাউসকে অবহিত করেছিলেন?

শ্রী শরণ সিং: দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে কিসিঞ্জারকে বাংলাদেশে সামরিক কর্ম বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানকে চাপ দিতে অনুরোধ করা হয়েছিল কিনা।

শ্রী পি কে দেও (কালাহান্ডি):মন্ত্রী কি সন্তুষ্ট আছেন?

শ্রী শরণ সিং; মোটেই না।

এই বিষয়টি ওয়াশিংটনে মার্কিন সরকারের কাছে আমরা খুব জোরালোভাবে তুলে ধরেছিলাম। তারা পাকিস্তানের সঙ্গে বিষয়টি দেখবে – কিন্তু যতক্ষণ আমরা কোন ফল পাচ্ছিনা ততক্ষণ আমরা তা মানিনা। তাছাড়া বাংলাদেশে নৃশংসতা অবিরত চলছে এবং আমি
শ্রী পি কে দেও কে বলেছি, আমি বুঝতে পারছিনা মার্কিন সরকার কি ব্যাবস্থা নিয়েছে এব্যাপারে।

শ্রী সমর গুহ: আপনি কি আপনার নিজের কাজে সন্তস্ট? বাংলাদেশ সম্পর্কে যা নিচ্ছেণ?

জনাব স্পিকার: আমি এই ধরনের ব্যাঘাত পছন্দ করি না।

শ্রী শরণ সিং: আমরা এটা থামাতে পারি। আমরা আজ অন্য কিছু আলোচনা করি।

জনাব স্পিকার: সন্মানিত মন্ত্রী আপনার তার দিকে মনোযোগ দেবার দরকার নেই।

শ্রী শরণ সিং: আমি একমত যে ১৯৫৪ সাল থেকে মার্কিন সরকার পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত তারা ১৭০০ থেকে ২০০০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। এভাবে পাকিস্তান তার সামরিক সক্ষমতা অর্জন করেছে। এবং বর্তমান সরবরাহ, বিশেষ করে বাংলাদেশে সামরিক কর্ম শুরুর পরে এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশের ঘটনার পর কিছু দেশ সাপ্লাই বন্ধ করেছে।

আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ থামানোর জন্য ধারাবাহিকভাবে অনুরোধ করে যাচ্ছি এমন কি যদি ২৫ মার্চের আগেও সেগুলো ইস্যু করা হয়ে থাকে – কিন্তু তারা তা শুনছে না।

সিনেটর টনি যার সম্পর্কে সন্মানিত সদস্য বলেছেন এবং আমরাও আজ ইউ এস এমব্যাসি থেকে জেনেছি – তা হল আমেরিকান পতাকাবাহী জাহাজে পাকিস্তানী সেনা বহন করা হচ্ছে। এটাই তিনি আমাদের আজ বলেছেন।

একজন সন্মানিত সদস্য: তারা আগামীকাল তা অস্বীকার করতে পারে।

শ্রী শরণ সিং: যদি তারা এটা আগামীকাল অস্বীকার করে আমি আগামীকাল তা জানাব যে তারা আজ এটা বলেছিল।

শ্রী জগন্নাথ রাও জোশী( শাজাপুর) ঃ স্পিকার মহোদয়, মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য শুনে রবীন্দ্রনাথের একটি মন্তব্য আমার মনে পরে গেল।

আমরা বিশ্বকে ভুল চোখে দেখি আর বলি যে আমরা প্রতারিত হয়েছি।

বস্তুত অ্যামেরিকা হোক, রাশিয়া হোক বা অন্য বৃহৎ শক্তি হোক, নিজ দেশের ব্যাপারে তাদের কৌশল কারও অজানা নয়। অ্যামেরিকায় গণতন্ত্র আছে বলে সিনেটররা বলতে পারেন। রাশিয়ার মোট সমাজতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র থাকার কারণে লুকিয়ে ছাপিয়ে কি হয় তা জানা যায়না। ১৯৫৪ সনে যখন অ্যামেরিকা SEATO & SENTO এর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানকে অস্ত্র দেবার সিদ্ধান্ত নেয় তখন অন্তত একটা অজুহাত ছিল।

এটা আসলে কমিউনিজমের বিরোধিতা করার একটা পদক্ষেপ ছিল।

১৯৫৪ সনে অন্তত এই কথা বলা যেতে পারে কিন্তু ১৯৬৫ সালের পর থেকে কম্যুনিস্ট রাষ্ট্র চীন রাশিয়া পাকিস্তানকে সাহায্য দিচ্ছে এবং অ্যামেরিকার অস্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাবহ্রিত হয়েছে। সকল দেশ পাকিস্তানকে অস্ত্র দিচ্ছে এবং মন্ত্রী মহোদয় ও জয় প্রকাশ নারায়ণ যারা বিদেশ ঘুরে এসেছেন – উভয়ের সারকথা হল – ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, অ্যামেরিকা, রাশিয়া, চীন ইত্যাদি কোন দেশই বাংলাদেশের ব্যাপারে পাকিস্তানকে প্রভাবিত করে ভারতে আগত শরনার্থিদের ফিরে যাবার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় সহায়তা দান তো দূরের কথা সেই পরিস্থিতি তৈরির জন্য কোন মতামতও প্রকাশ করছে না।

এটা স্বয়ং মার্কিন সিনেটরের কথা। এই পুরো বিবৃতির সার কথা হল – আমরা বাংলাদেশ পরিস্থিতে অ্যামেরিকার পলিসিকে বিপদজনক মনে করছি। তবে মন্ত্রীর এই ব্যাপারে সন্দেহ আছে।

অর্থাৎ শরনার্থিদের ফিরে যাবার ব্যাপারে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান ও সাহায্যদানের জন্য আমাদের পরামর্শ আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, একথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে চাপ সৃষ্টি করে শরনার্থিদের ফিরে যাবার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ইচ্ছা তাদের নেই। শুধু তাই নয়, দশ দিন পুর্বে আমার কাছে চিঠি এসেছে। ঐ চিঠিতে বলা হয়েছে ৮/৯ বছরের শিশু কিশোরীরা ভুখা মিছিলে অংশ নিচ্ছে এবং স্থানে স্থানে গিয়ে চাঁদা সংগ্রহ করছে। সেই চাঁদার সমস্ত অর্থ এই বলে লাহোরে পাঠানো হয়েছে যে, বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ যে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে তাতে পশ্চিম পাকিস্তানের লোকেরাই শরনার্থি হয়েছে। তাদের জন্য অ্যামেরিকায় অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে এবং সেই অর্থ সেখানে যাচ্ছে। আমি জানতে চাই, এ তথ্য কি সরকারের কাছে আছে?
অ্যামেরিকার কৌশল প্রত্যক্ষ করার পর আমি আমাদের মত প্রকাশ করতে চাই।

এসব কিছু ঘটার পর আমরা কি করব? পাকিস্তানের পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক হবে যাতে শরনার্থীরা ফিরে যেতে পারবে। এ ব্যাপারে আমাদের পরামর্শ যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে এ আলোকে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ কি হবে।

শ্রী শরণ সিং: স্যার, মননীয় সদস্য তার উদ্বোধনী বক্তব্যের প্রথম অংশে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে সমার্থক করার চেষ্টা করেছেন। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই তিনি তা করতে পারেন না। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, তারা বাংলাদেশের ঘটনার পরেও পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করবে কিন্তু অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার এবং তাদের মুখপাত্র স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন যে তারা বিশেষ করে এপ্রিল, ১৯৭০ এর পরে কোনো অস্ত্র পাকিস্তানে সরবরাহ করেননি।

শ্রী জগন্নাথ রাও যোশঃ তারা ভারত ও পাকিস্তানকে একইভাবে মাপেন। এটা আজকের কাগজেও আছে।

শ্রী শরণ সিং: কীভাবে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে এরা একই হয়? (বাধা)।

তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্নটিও কিছুটা অনুরূপ জটিল। কারণ তিনি বলেছেন ১৯৫৪ সালে সম্ভবত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু অজুহাত দেখিয়েছিল পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য যে এটা কমিউনিজমকে ঠেকানোর জন্য একটা চেষ্টা। কিন্তু তিনি ভালোভাবেই জানেন ওইসব ট্যাংক ও সরঞ্জাম কমিউনিজমের বিরুদ্ধে কখনোই ব্যবহার করা যেতে পারে না। আমরা জানতাম যে একমাত্র ভারতের বিপক্ষে সম্ভবত সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমিতে তারা এগুলো ব্যবহার করতে পারত। তাই আমি বুঝলাম না কেন সন্মানিত সদস্য এটা বললেন। আমরা জানতাম যে ১৯৫৪ সালে এই অস্ত্র আমাদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার করার জন্য পাকিস্তানে সরবরাহ করা হয়েছে, এবং সেই একই নীতি অব্যাহত আছে। সুতরাং, ১৯৫৪ সালে অস্ত্র পাঠানোর আর কোন অজুহাত নেই।

তিনি জিজ্ঞেস করেছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের পরিকল্পনা কি। এই প্রশ্ন অস্ত্র সরবরাহের সাথে সম্পর্কিত। আমরা একটি পুরো দিন এই বিতর্ক করেছি এবং আমি আমার বক্তৃতায় তা আর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।

শ্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীঃ স্পিকার মহোদয়, আমাদের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াশিংটন থেকে ফিরে আসার পর থেকে প্রতিদিন মার্কিন সরকারের নীতি সম্পর্কে এমন সব তথ্য উদ্ঘাটিত হচ্ছে যা ভারতের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমি একথা বলব না যে, এটি বিদেশ মন্ত্রীর সফরের ফল কিন্তু একথা অবশ্যই বলব যে তিনি ওয়াশিংটনকে প্রভাবিত করতে ব্যার্থ হয়েছেন। ওয়াশিংটন থেকে ফিরে এসে পালাম বিমান বন্দরে তাঁকে খুশী দেখাচ্ছিল। তিনি আশ্বাস দিলেন যে, মার্কিন নীতির পরিবর্তন হয়েছে। তারপরে জানা গেল যে জাহাজ যাচ্ছে। প্রথমে দুটি জাহাজ, আবার তিন জাহাজ তারপরে ৫ জাহাজ। এখন বলা হচ্ছে পাইপলাইনের সকল সাহায্য পৌঁছানো হবে। পাইপলাইন কত দীর্ঘ কে জানে। এও জানা সম্ভব হচ্ছে না যে তার ভেতরে কত অস্ত্র রয়েছে, কত যন্ত্রাংশ রয়েছে। মার্কিন সিনেটরদের কথাবার্তায় এসব জানা যাচ্ছে এবং এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে নিজ দূতাবাসকেও আমাদের অধিক সক্রিয় করে তোলা আবশ্যক। সিনেটর চার্চ যা বলেছেন, ‘ নিউ ইয়র্ক টাইমস/ সেটি সমর্থন করেছে। আমি বিদেশমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছি, একথা কি সত্য যে, অ্যামেরিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ সময়ে পাকিস্তানকে কোন অস্ত্র না দিতে প্রেসিডেন্টকে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সন নিজ ক্ষমতা বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, অ্যামেরিকার অস্ত্র যাবে। আমি জানতে চাই এব্যাপারে ভারত সরকারের বক্তব্য কি? আমি জানতে চাই মার্কিন সরকারের কৌশল ও মনোভাব সম্পর্কে তাদের অভিমত কি? বিদেশ মন্ত্রী মহোদয় বলছেন, এই অস্ত্র বাংলাদেশে গণহত্যা আরও বৃদ্ধি করবে। এতে আমি একমত। তবে আমি আরেক পা এগিয়ে গিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশে গণহত্যা চালানোর মত পর্যাপ্ত অস্ত্র পাকিস্তানের আগে থেকেই রয়েছে। এসব অস্ত্র আসছে যে কোন সময় ভারতের ওপর পাকিস্তানের আক্রমণের উদ্যেশ্য নিয়ে। এ আক্রমণ যে কোন স্থানে হতে পারে। জম্মু কাশ্মীরে, রাজস্থানে, গুজরাটেও হতে পারে। নচেৎ এসময় অস্ত্র প্রেরণের উদ্যেশ্য কি? অ্যামেরিকার মনোভাব কি? বিদেশমন্ত্রী মহোদয় বলছিলেন, রাশিয়া ও অ্যামেরিকাকে আমাদের এক সারিতে দেখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আজকের সংবাদপত্রে ইজভেস্তিয়ার খবর ছাপা হয়েছে – রাশিয়ার নেতা আমাদেরকেও বলেছেন, ধৈর্য ধর, পাকিস্তানকেও বলেছেন ধৈর্য ধর। এটা কি ভারত ও পাকিস্তানকে একই সারিতে রাখা হচ্ছেনা? এখন আমি দু তিনটি প্রশ্ন করতে চাই।

প্রথম প্রশ্ন এই যে, সরকার কি অ্যামেরিকাকে এযাবৎ কোন প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়েছেন? কূটনৈতিক পর্যায়ে লিখিত প্রতিবাদের গুরুত্ব ভিন্নতরই হয়।

ডঃ কিসিঞ্জার এখানে এসেছিলেন। তার কাজ পরামর্শ দেয়া। ভুল পরামর্শও তিনি দিতে পারেন। তিনি পরামর্শ দেবেন সেখানে আর এখানে তথ্য উদ্ধার করবেন। আমি জানতে চাই আমরা কি তাঁকে শরনার্থী শিবিরে গিয়ে একটু পরিদর্শন করে আসবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি? এটা করা হলেই তো তিনি তথ্য পেয়ে যেতেন? আগত লোকদের চেহারায় ভয় ও আতংকের যে সব কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে তিনি তা পড়ে নিতে পারতেন আর মন্ত্রী মহোদয়ের প্রয়োজন হতনা তাঁকে বুঝবার। আমরা তাঁকে কোন শরনার্থি শিবিরে না পাঠালে কি কারণে পাঠাইনি?

অ্যামেরিকা শরনার্থিদের জন্য আমাদেরকে সাহায্য দিচ্ছে আর পাকিস্তানকে দিচ্ছে অস্ত্র। এক অ্যামেরিকার দুই রূপ। আমি জানতে চাই, অ্যামেরিকার কৌশলের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য বিদেশমন্ত্রী কি কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেন? বিদেশ মন্ত্রী কি এই ঘোষনা দিতে প্রস্তুত আছেন যে, অ্যামেরিকা পাকিস্তানকে অস্ত্র দেয়া বন্ধ না করলে উদ্বাস্তুদের জন্য সে যত সাহায্য দিতে তৈরি থাক না কেন আমরা তা গ্রহণ করব না, আমরা তা ফেরত দেব? হামাগুড়ি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে চলার চেয়ে নিজ পায়ের ওপর ভর করে লড়তে লড়তে মরে যাওয়াই বেশী ভালো।

শ্রী শরণ সিং: প্রথম প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ। কিসিঞ্জার বলেছিলেন যে, তিনি খুব ব্যস্ত ছিলেন এবং তিনি শরণার্থী শিবির দেখতে যেতে পারবেন না। তার তৃতীয় প্রশ্ন, পরামর্শ সংক্রান্ত যে যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে তাই আমি ডিক্লেয়ার করব কিনা যে আমি উদ্বাস্তুদের জন্য কোনো সাহায্য তাদের থেকে গ্রহণ করব না। আমি দুঃখিত, আমি এটা করতে পারব না।

শ্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীঃ অ্যামেরিকাকে লিখিত প্রতিবাদপত্র দেয়া হলে তার প্রকৃতি কি এবং কবে দেয়া হয়েছে?

শ্রী শরণ সিংঃ ২৭ জুন ১৯৭১ তারিখে।

শ্রী ফুলচন্দ্র বর্মাঃ এটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। এর ওপর কমপক্ষে দুই ঘণ্টা ধরে আলোচনা হওয়া দরকার। এটি আমাদের দেশের জীবন মরণ সমস্যা। সংসদের সকলে চায় এর ওপর দুই ঘণ্টা ধরে আলোচনা হোক।

জনাব স্পিকারঃ যদি নিয়ম থাকে আমার অনুমতি দিতে বাঁধা নেই।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!