You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২২৭। পাক-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি এবং তিনিটি অনুপ্রবেশকারী পাকিস্তানী স্যাবর জেট বিমান সম্পর্কে আলোচনা ভারতের লোকসভার কার্যবিবরণী ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১

 

সূত্রঃ পাক-ভারত সীমান্তে অগ্রগতি এবং বিবৃত

সূত্রঃ তিনটি অনুপ্রবেশকারী পাকিস্তানী স্যাবরকে কলকাতার উত্তর-পূর্বে বয়রার কাছে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

শ্রী অটল বিহার বাজপেয়ী (গোয়ালিয়র): স্পীকার মহোদয়, আমি আপনার অনুমতি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার ও সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। পার্লামেন্ট অধিবেশন ১৫ তারিখে আরম্ভ হয়েছে। সেদিন একটি দৃষ্টি আকর্ষন মোশন ছিলো। জবাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সীমান্ত পরিস্থিতির উপর একটি বিবৃতি প্রদান করেছিলেন। আজ ২৩ তারিখ এসে গেছে। সীমান্তে অবিরাম পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক গতিবিধি চলছে। আমাদের আকাশ সীমা অতিক্রম করা হচ্ছে। কাল তো পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জাহাজ ভারতীয় সীমান্তের ৬৫ মাইল ভেতরে ঢুকে পড়েছে এবং আমাদের জেট বিমানগুলো তাকে ধাওয়া করেছে। আমাদের জওয়ান মারা যাচ্ছে, নিরপরাধ নাগরিক মৃত্যুর দুয়ারে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। দেশে একটা অঘোষিত যুদ্ধ পরিস্থিত রয়েছে। খুব আশ্চর্যের কথা, এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সংসদকে বিশ্বাস করা হয়নি। আমরা যা কিছু জানি তা কেবল সংবাদপত্রের মাধ্যমে। যে কথা সংবাদপত্রগুলোকে জানানো যায় সে ব্যাপারে এই সংসদকে বিশ্বাস করা যায় না? সংসদকে অন্ধকারে রেখে কি যুদ্ধ করা যাবে? আপনার কাছে আমার আবেদন, আপনি মন্ত্রী মহোদয়কে, প্রধানমন্ত্রীকে বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে সীমান্তের নতুন পরিস্থিতি সম্পর্কে সংসদকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দিন। যদি তিনি দৃষ্টি আকর্ষণীয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত না থাকেন, আমাদের প্রশ্নমালা হতে সরে থাকতে চান, তাহলে স্বয়ং এসে তিনি বিবৃতি দিতে পারেন, এবং আমরা আপনার অনুমতি নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা চাইতে পারি, কিন্তু সংসদের সঙ্গে এরূপ আচরণ করা না সংসদের মর্যাদার অনুকূল, না এই সংকটের সময়ে দেশের মনোবল অটুট রাখার সহায়ক। সংসদকে আমাদের সমানে রাখতে হবে। যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলি সম্পর্কে আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা চাই, সংবাদপত্রসমূহের সঙ্গে নয়।

শ্রী এস. এম. ব্যানার্জী (কানপুর): আমরা এই বিষয়ে একটি দৃষ্টি আকর্ষন মোশন পেশ করেছিলাম।

শ্রী সমর গুহ (কোন্তাই): জনাব, আমি একই বিষয়ে আপনার কাছে লিখেছি এবং আমি আশা করি, আপনি আমাকেও এই বিষয়ে কিছু বলার অনুমতি দিবেন। আমি এই বিষয়ে শুধুমাত্র একটি বিষয় যোগ করতে চাই।

ভারত মৈত্রী বেতার বলেছে যে গতকাল নদীর কোন এক জায়গায় একটি বড় সমর যুদ্ধ হয়েছিলো এবং পাঁচটি মধ্যমাকৃতির পাকিস্তানী যুদ্ধ জাহাজ ধ্বংস করা হয়েছিলো। প্রায় প্রতিদিনই আমরা পাকিস্তান বেতার থেকে জানতে পারছি যে যশোর সেক্টরে একটি সমর যুদ্ধ হয়েছিলো এবং কিছু সংখ্যক ভারতীয় বন্দী হয়েছে। পাকিস্তান বেতার শুধুমাত্র বন্দী অফিসারদের নামই প্রচার করছে না, তারা কিছু বন্দী অফিসারদের ধারণকৃত কণ্ঠস্বরও তৎক্ষণাৎ সরাসরি প্রচার করছে। আমিও কয়েকটি দৃষ্টি আকর্ষন মোশন দিয়েছি। একশর বেশি শরণার্থী হত্যা করা হয়েছে।

স্পীকার মহোদয়: প্রতিটি বিষয় নয়, শুধুমাত্র একটি বিষয়ের কথা আপনি উল্লেখ করেছেন। আমি শুধুমাত্র ঐ একটি বিষয়ই অনুমতি দিচ্ছি – সব নয়।

শ্রী সমর গুহ: প্রতিদিনই গোলাবর্ষণ চলছে যার ফলে সীমান্ত এলাকার কাছে ১০০ শরণার্থী খুন হয়েছে এবং এক হাজারের কাছাকাছি আহত হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্ত রেখার পাঁচ মাইলের মধ্যে ৯০ লাখ শরণার্থী রয়েছে। আমি অনুরোধ করবো যে, এই আইনসভাকে এ ব্যাপারে আস্থায় আনা উচিৎ যে কী হচ্ছে এবং আমাদের অবস্থান কী। সরকারের উচিৎ কোন বিবৃতি দেওয়া অথবা এই আইনসভায় কোন আলোচনা তৈরি করার অনুমতি দেওয়া।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের রাজ্য মন্ত্রী (প্রতিরক্ষা বিষয়ক), শ্রী বিদ্যা চরণ শুক্লা: এটা বলা ঠিক নয় যে আমরা পাকিস্তানের সাথে কোন অঘোষিত যুদ্ধে আছি কিংবা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোন শত্রুতার সম্পর্ক বিরাজ করছে (বাধা)। পাকিস্তান বিভিন্ন বিশ্ব রাজধানীসমূহে এবং জাতিসংঘে এটাই বলার চেষ্টা করছে যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক ধরনের যুদ্ধ চলছে এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক ধরনের বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করছে, যা কিনা একেবারেই ভুল। এখানে কোন অঘোষিত যুদ্ধ কিংবা এরকম কোন বিষয় নেই। যা কিছু যুদ্ধ চলছে তা পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে রাজ্যশাসন নিয়ে চলছে।

সেটাই হচ্ছে সঠিক বিষয়। পাকিস্তান বিশ্ব রাজধানীসমূহকে ও অন্যান্যদের প্রভাবিত করার জন্য ঐ বিগ্রহকে আন্তর্জাতিক করার চেষ্টায় বলছে যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি অঘোষিত যুদ্ধ চলছে, এবং এই জন্য জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোর এই ব্যাপারে সস্তক্ষেপ করতে আসা উচিত। আমি সকল সম্মানিত সদস্যদের অনুরোধ করবো যেন এধরনের পাকিস্তানী অপপ্রচারের শিকার না হন। এটি পাকিস্তানের চালিয়ে যাওয়া একটি অপপ্রচার ও মিথ্যা গুঁজব। (বাধা)

শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী: আমি এই বক্তব্যের বিরোধিতা জানাই। আমরা কোন পাকিস্তানী অপপ্রচারের শিকার হয়নি। এ ধরনের অভিসন্ধীর অভিযোগ খোঁজার তার কোন এখতিয়ার নেই।

শ্রী বিদ্যা চরণ শুক্লা: আমি কোন অভিসন্ধী খুঁজছি না। আমি সতর্ক করছি যে কারোরই এ ধরনের অপপ্রচারের ফাঁদে পা দেওয়া উচিৎ নয়। আমি এটি জোরালোভাবে প্রত্যাখান করছি যে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কোন অঘোষিত যুদ্ধ আছে। এটি বলা সম্পূর্ণরূপে ভুল। কারোরই কখনো এ ধরনের কথা বলা উচিৎ নয় কারণ সম্পূর্ণ বিষয়টি আন্তর্জাতিক করার জন্য এটি পাকিস্তানের একটি প্রচেষ্টা।

তথ্য দেওয়ার বিষয়ে, সীমান্তে যা কিছুই হয়েছে আমরা সময়ে সময়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ব্রিফিং করে জানিয়েছি। আমাদের বাহিনীগুলো সেখেনে রয়েছে। যখনই পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে কোন বহিরাক্রমণ হয়, আমরা তাদেরকে পশ্চাদপসরণ করি। যদি তারা কামান দাগে, তাহলে আমরা জবাব দেই এবং তাদের কামান থামিয়ে দেই। এ ধরনের বিষয়গুলো ঘটছে। মাঝে মাঝে আমরা সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ব্রিফিং করে জানাই যাতে করে জনগণ এবং জাতি এইসব বিষয়ে তথ্য জানতে পারে।

শ্রী ইন্দ্রজিৎ গৌতম (আলীপুর): আপনি কেন সংসদকে ব্রিফিং করছেন না?

শ্রী বিদ্যা চরণ শুক্লা: আমি এই বিষয়ে আসছি। বাংলাদেশের ভেতরে অনেক বিষয়ই ঘটছে। বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মাঝে মাঝে আমরা এই বিষয়ে তথ্য পাই। আমাদের নিজেদেরও তথ্যের উৎস রয়েছে। আমরা সংসদের সামনে আসতে ও জানাতে এক মুহূর্তও দ্বিধা করবো না যখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু অথবা এমন কিছু যা সংসদের মনযোগ দাবি করার মতো কিছু আমাদের সীমান্তে ঘটে। যেসব বিষয় ঘটছে তা নিয়ে একটি সরকারি ব্রিফিং আছে, এখানে গোলাবর্ষণ কিংবা সেখানে একটি বহিরাক্রমণ, যা কর্যকরীভাবে জবাব দেওয়া হয়েছে। যদি আমরা প্রতিদিনই আসি এবং কী হচ্ছে এই বিষয়ে বিবৃতি দেই, আমি মনে করি না যে আমরা কোন ভালো নজির রাখতে যাচ্ছি। যদি এখানে গুরুত্বপূর্ণ কোনকিছু থাকে অথবা এমনকিছু যা সত্যিই সংসদের মনযোগের দাবিদার, যত শীঘ্রই আমাদের নজরে আসবে, আমরা অবশ্যই তা সম্পর্কে সংসদকে জানাবো। এখন, আপনার অনুমতি নিয়ে, মহোদয়, আমি একটি বিবৃতি দিতে চাই।

সম্মানিত সদস্যগণ অবৈধ বিমান অনুপ্রবেশ সম্পর্কে অবগত আছেন যেটি গতকাল বিকালে কলকাতা থেকে ত্রিশ মাইল উত্তর-পূর্বে বয়রায় ঘটেছিলো।

এখানে, সম্মানিত সদস্য উল্লেখ করেছেন যে বিমানগুলো ত্রিশ মাইল ভেতরে প্রবেশ করেছিলো। এটি ত্রিশ মাইল নয়, তারা আমাদের রাজ্যের ত্রিশ মাইল ভেতরে অনুপ্রবেশ করেনি। তারা কয়েক কিলোমিটার এসেছিলো। এই ঘটনাটি ঘটেছিলো কলকাতা থেকে ত্রিশ মাইল দূরে।

আমাদের বিমান বাহিনীর গৃহীত প্রতিরোধ কার্যের বিস্তারিত এখন আমাদের হাতে আছে। আনুমানিক ১৪:৪৯ ঘটিকার দিকে চারটি পাকিস্তানী স্যাবরকে আমাদের সীমান্তের দিকে আসতে দেখা যায়। চার সদস্যের একটি মিশনকে আদেশ দেওয়া হয়েছিলো তাদেরকে প্রতিরোধ করতে। পাকিস্তানী বিমানপোত ভারতীয় আকাশ সীমার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে অনুপ্রবেশ করেছিলো। তাদেরকে ১৪:৫৯ ঘটিকায় সফলভাবে প্রতিরোধ ও হটিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এই ঘটনার সাথে জড়িত চারটি স্যাবরের মধ্যে তিনটি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানী বিমান চালকদের গাঁটবন্দী করা হয়েছিলো। তাদের মধ্যে দুজন, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পারভেজ মেহদী এবং ফ্লায়িং অফিসার খলিল আহমেদ আমাদের হেফাজতে আছে। আমাদের বাহিনীর কোন ক্ষতি হয়নি এবং তারা নিরাপদে তাদের ঘাঁটিতে ফিরে এসেছিলো।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমান চালকগণ, যারা এই স্যাবরগুলোকে উড়িয়ে দিয়েছিলো, তারা হলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ম্যাসি, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম. এ. গানপতী এবং ফ্লায়িং অফিসার লাজারাস।

শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী: এরপরেও পাকিস্তানের সাথে শত্রুতা নেই একথা বলা হাস্যস্পদ। আমি বিমান বাহিনীকে ধন্যবাদ দিতে চাই এজন্য যে তারা একটা কিছু করেছে। (বাধা)

স্পীকার মহোদয়: আমি এই লিখিত বিবরণীর একটি অভিমত চাই……

শ্রী এস. এম. ব্যানার্জী: মহোদয়, আমি এই সংসদের কাছে আবেদন করতে চাই যে এখানে আমাদের এমন কিছু বলা উচিৎ হবেনা, এমনকি কোন আভাসের মাধ্যমেও নয়, যা পাকিস্তানের অপপ্রচারের সমর্থন করতে পারে। আমাদেরকে এই বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। এই অনুরোধটি আমি সংসদে করতে চাই।

স্পীকার মহোদয়: এখন, মধ্যাহ্ন খাবারের পরে আমরা উড়িষ্যার ঘূর্ণিঝড় ধ্বস নিয়ে আলোচনা শুরু করবো। আমি কিছু সংখ্যক নাম পেয়েছি এবং আমি তাদের নিশ্চিত করছি যে তারা সবাই তাদের কথা বলার জন্য কয়েক মিনিট করে সময় পাবে এবং আমাদের এই বাগ্বিতণ্ডা শেষ করা উচিৎ হবেনা যতক্ষণ না তালিকা শেষ হচ্ছে। আমি আশা করবো আপনার সকলেই তাদেরকে উপযুক্ত সময় দিতে সহায়তা করবেন।

শ্রী এস. এম. ব্যানার্জী: মনে হচ্ছে কোন দল থেকেই উড়িষ্যার কোন প্রতিনিধি নেই, অন্যদেরকে সময় দেওয়া উচিৎ হবে।

স্পীকার মহোদয়: আমরা এখন মুলতবি করলাম এবং ২:৩০ মিনিটে পুনরায় মিলিত হবো।

শ্রী এস. এম. ব্যানার্জী: মহোদয়, আজকে মাননীয় মন্ত্রী সত্যিই এমন একটি বিবৃতি দিয়েছেন যা আমরা সকলেই বাহবা জানাই। কিন্তু সরকারের উচিৎ হবে এটা তার নিজ উদ্যোগে নেওয়া।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!