শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২২১। কয়েকটি দেশে সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি ও তার উপর আলোচনা | ভারতের লোক সভার কার্যবিবরণী | ২৫ জুন, ১৯৭১ |
মিঃ স্পিকারঃ এখন বক্তব্য রাখবেন, শ্রী শরন সিং।
শ্রী এস এম ব্যানারজি (কানপুর)ঃ স্যার, উনি বক্তব্য রাখার আগেই আমি অনুরোধ জানাচ্ছি যেন উনি পূর্বনির্ধারিত বক্তব্যের সাথে পাকিস্তানে তৃতীয় একটি জাহাজ প্রেরনের সত্যতা সম্পর্কেও বক্তব্য রাখেন। আমরা সকলেই এবিষয়ে চিন্তিত আছি। আমরা আপনার কাছেও লিখেছি (আলোচনায় বিঘ্ন)
পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী (শ্রী শরন সিং)ঃ ৫ থেকে ২২ জুন, ১৯৭১, এই সময়ের মধ্যে আমি মস্কো, বন, প্যারিস, অটোয়া, নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন এবং লন্ডন ভ্রমন করেছি। এই প্রতিটি রাজধানীতে আমি তাদের সরকার প্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ের সাথে বিশদ আলোচনায় বসেছি। জাতিসঙ্ঘের হেডকোয়ার্টারে গিয়ে আমি জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উ থান্ট এবং তার সহকর্মীদের সাথেও আলোচনা করেছি। এই প্রতিটি রাজধানীতেই আমি সরকার প্রধান বা পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ছাড়াও প্রচুর সংখ্যক সরকারি দলের অন্যান্য নেতাসমুহ, সাংবাদিক, সমাজ কর্মী এবং জনপ্রিয় নেতাদের সাথে দেখা করেছি।
কোন একজন সংসদ সদস্যঃ বাংলাদেশ
এসকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এবং মনযোগ পুরোটাই ছিল পূর্ব বাংলা থেকে আগত ৬ মিলিয়ন শরণার্থীর প্রবাহে ভারতে যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে, এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের গনহত্যায় পূর্ব বাংলায় যে ধারাবাহিক বিপর্যয় চলছে, সে বিষয়ে। আমার ভ্রমন শেষে মস্কো, বন, প্যারিস, ওয়াশিংটন এবং লন্ডনে এবিষয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে এবং এই বিবৃতিই তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরে নেয়া যায়। অটোয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিচেল শার্প হাউক অব কমন্সে একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যা থেকে তাদের প্রতিক্রিয়াও প্রতিফলিত হচ্ছে।
(এসকল বিবৃতির কপি হাউসের টেবিলে জমা দেয়া হয়েছে, গ্রন্থাগার- এলটি-৫৩৮/৭১)
আমার আলোচনা এবং ভ্রমনের ফলস্বরূপ যেসকল চুক্তিতে আমরা পৌছাতে পেরেছি তা হলঃ
১) পূর্ব বাংলায় সকল সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ সমস্যার কোন সামরিক সময়াধান নেই।
২) পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে শরণার্থীদের আগমন বন্ধ করতে হবে।
৩) শরণার্থীরা যেন নিজভুমিতে নিরাপদ ও শান্তিতে ফিরে যেতে পারে তার উপযুক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। এটি শুধুমাত্র তখনি সম্ভব হবে যদি শরণার্থীরা পূর্ব বাংলায় একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা পায়।
৪) পূর্ব বাংলার গনমানুষের অনুমোদিত রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আর কোন বিকল্প উপায় নেই।
৫) বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ এবং আমাদেরকে এ উপমহাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে কঠিন বিপদের সাথে লড়াই করতে হবে।
এটি সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত যে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব বাংলা থেকে প্রায় ৬ মিলিয়ন শরণার্থীর যে ঢল ভারতে এসেছে তা এদেশের সরকারের জন্য একটি অসহনীয় বোঝা হয়ে দারিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে অবশ্যই এর সমাধানে আর্থিক সহযোগিতাসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে হবে। যাত্রাপথের প্রতিটি শহরে আমি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তাদের ব্যাখ্যা করেছি যে, এই শরণার্থীরা পাকিস্তানেরি নাগরিক, যারা তাদের প্রদেশে সরকারের নিপীড়ন এবং অত্যাচারী আচরনের কারনে নিজ দেশ থেকে উৎখাত হয়েছে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করা মানে পরোক্ষভাবে পাকিস্তানেরি সহযোগিতা করা। আমি এটাও পরিষ্কার করে বলেছি এবং তা সর্বজনগৃহীতও হয়েছে যে এই মুহূর্তে পাকিস্তানকে সেনা সহায়তা দাওয়ার মানে হবে তাদের গনবিরোধী কার্যকলাপকে আরো উস্কে দেয়া। তাদেরকে অর্থনৈতিক সহায়তা দাওয়ার মানে হল তাদের এসকল শোচনীয় কার্যকলাপ দেখে না দেখার ভান করা।
কোন একজন সংসদ সদস্যঃ বাংলাদেশ (আলোচনায় বিঘ্ন)
শ্রী সমর গুহা (কাঠি)ঃ রাজ্যসভার সভাপতি একটি রুলিং জারি করেছেন যে পূর্ব বাংলাকে বাংলাদেশ বলে সংবোধন করতে হবে।
শ্রী শরন সিংঃ এই কয়েকদিনে আমি কি কি করেছি তার সবটাই চাক্ষুষ সাক্ষীবৃন্দ নিখুতভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং তা পুরো সপ্তাহ জুড়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। আমি এবিষয়েও নির্দিষ্ট করে জানিয়েছি যে এমুহূর্তে শুধুমাত্র আন্তরজাতিক তৎপরতায় মানবিক সাহায্য ছাড়া পাকিস্তানকে অন্য কোন আর্থিক সাহায্য দিলে তা সেদেশের ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী মিলিটারি শক্তি ব্যবহার করে সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপর যে অত্যাচার করছে তা বহাল রাখতে সাহায্য করবে, এবং তাদের অন্তর্বর্তী বিষয়ে দুঃখজনকভাবে হস্তক্ষেপ করা হবে।
প্রতিটি শহরেই তারা আমাদের দেশ এবং সরকারকে প্রশংসা করেছে। পূর্ব বাংলা এবং আমাদের দেশ, দুই স্থানেই আজ মানবসৃষ্ট দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় এই ব্রিহদাকারের শরণার্থী শিবিরকে দেখভাল করা ও আস্রয় দাওয়ার যে উদ্যোগ তা ইতিহাসে নজিরবিহিন। এহেন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সকলেই স্বীকার করেছেন যে, সম্পূর্ণ রুপে নির্দোষ হওা সত্ত্বেও আমাদের উপর বোঝা বহন করতে হচ্ছে, এবং খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে তা গোটা উপমহাদেশের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
শ্রী এস এম ব্যানারজিঃ আমার নেতা যে প্রশ্ন করবে, তা আমি করছিনা। কিন্তু আমি একটা বিষয় জানতে চাই। গতকাল তারা বিবৃতি দিয়েছে, আর আজকের পত্রিকায় এসেছে যে পাকিস্তানি সেনাদের জন্য সেনা সরঞ্জাম নিয়ে আমেরিকা থেকে তৃতীয় জাহাজটি রওনা হয়েছে। আগামিকাল আমাদের সভা নেই এবং তারপর দিনেও……
মিঃ স্পিকারঃ প্লিজ, না…
শ্রী এস এম ব্যানারজিঃ স্যার এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (আলোচনায় বিঘ্ন)
শ্রী প্রিয়া রনন দাস মুন্সি (সাউথ কলকাতা)ঃ স্যার, এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদের আলোচনা হওা অত্যন্ত জরুরি। (আলোচনায় বিঘ্ন)
মিঃ স্পিকারঃ আপনারা প্রতিদিন যা করছেন, তারি পুনরাবৃত্তি দেখার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি আজ আমার নেই। আপনারা যদি না চান, তাহলে অন্য কোন দিন করতে পারেন … (আলোচনায় বিঘ্ন)
শ্রী এস এম ব্যানারজিঃদয়া করে আমার কথা এক মিনিটের জন্য শুনুন।
মিঃ স্পিকারঃ আপনার সাম্নেই বিবৃতিটি রাখা আছে।
শ্রী এস এম ব্যানারজিঃ আমি স্টেটমেন্ট বিষয়ে কথা বলছিনা।
মিঃ স্পিকারঃ দুঃখিত, আমি আপনাকে কথা বলতে দিতে পারছিনা।
কিছু সম্মানিত সদস্য দাড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন।
মিঃ স্পিকারঃ এর কোন কিছুই রেকর্ডে যাবেনা। আমি কাউকেই কথা বলতে দিবনা, যদি আপনারা না বসেন। যতদুর বোঝা যাচ্ছে, বর্তমান বিষয়ে মন্ত্রিমশাই তার বক্তব্য প্রদান করে ফেলেছেন। গতকালকেই বলা হয়েছে যে পার্টীর লিডাররা প্রশ্ন তুলবে, যদি সেবিষয়ে আলোচনা করতে হয়, তাৎক্ষনিক তা করা হবে, কিন্তু তখন না যখন মন্ত্রিমশাই তার বক্তব্য পেশ করছেন, এবং তা হাউসের বিবেচনার আওতাধীন রয়েছে।
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এবং পরিবহন মন্ত্রী ঃ জনাব স্পিকার, আপনার অনুমতিক্রমে, প্রথম হাউসের সকল অধদপ্তরকেই জানাচ্ছি যে, এবিষয়ে আলোচনা জিইয়ে রাখার কোন ইচ্ছেই নেই। (আলোচনায় বিঘ্ন) আমি বলতে চাই, মন্ত্রীসাহেব একটি বক্তব্য দিয়েছেন। আপনি গতকাল বিরোধিদলের সাথে এবিষয়ে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মনীতি নির্ধারণ করেছেন। আপনি মাত্রই আমাদের বলেছেন যে আপনি সে অনুযায়ীই আগাতে চান। তারা যদি কোন আলোচনা চায়, তবে তা আলাদাভাবে বিবেচিত হবে।
শ্রী এস এম ব্যানারজিঃ তৃতীয় জাহাজের কি হবে?
শ্রী ভগত ঝা আজাদ (ভাগলপুর)ঃ আমরা সরকারের মতামত জানতে চাই।
শ্রী রাজ বাহাদুরঃ যেমনটি আমি বলেছিলাম, আমরা এবিষয়ে আর কোন আলোচনা রাখতে চাইনা।
শ্রী ভগত ঝা আজাদঃ যেহেতু সরকারও এ আলোচনায় একমত হয়েছে, সুতরাং, এখানে নতুন করে প্রশ্ন করার কোন দরকার নেই।
শ্রী পি কে দেও (কালাহান্দি) ঃ সকলের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে, আমাদের এখনি এবিষয়ে আলোচনা সেরে ফেলা উচিত। (আলোচনায় বিঘ্ন)
মিঃ স্পিকারঃ আমি কাউকেই অনুমতি দেইনি। কিন্তু যদি সদস্যরা এভাবে নিজে থেকেই কথা বলতে থাকেন, তাহলে আমরা আগাতে পারবোনা। যদি সবাই একসাথে কথা বলেন, আমি কিভাবে সবার কথা শুনবো?
শ্রী এস এম ব্যানারজিঃ পয়েন্ট অব অর্ডারের ভিত্তিতে……
মিঃ স্পিকারঃ আমি কথা বলছি, সুতরাং এখন কোন পয়েন্ট অফ অরডার নেই।
শ্রী দিনেন ভট্টাচার্য (সেরামপুর)ঃ আমেরিকা তৃতীয় একটি জাহাজ পাঠিয়েছে।
মিঃ স্পিকারঃ আমরা আবারো একবার মনে করি, গত পরশু, সকল সংসদীয় নেতাগন, সকল বিরোধীদলীয় নেতাগন এবং ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যগনসহ সকলে মিলে এবিষয়ে একমত হয়েছেন যে মাননীয় মন্ত্রী শুক্রবার এবিষয়ে বক্তব্য প্রদান করবেন, এবং প্রতিটি পার্টীর নেতারা এবিষয়ে প্রশ্ন করবেন। (আলোচনায় বিঘ্ন) আমি জানিনা, যে সদস্যরা এখন পর্যন্ত যেসকল আলোচনা হয়েছে তার উপর বিতর্কে অংশ নিতে ইচ্ছুক।
শ্রী শরন সিংঃ তারা এমন কোন চাপ সৃষ্টি করছেনা, আসুন এবিষয়টা বাদ দেই। তারা প্রশ্ন করতে আগ্রহী নন, সুতরাং বাদ দিন, আমাদের একটা আলাদা আলোচনা হওয়া দরকার, সেবিশয়ে আমারো কোন আপত্তি নেই। আমাকে হাউস এবং আপনার ইচ্ছানুসারে বরত্মান পরিস্থিতি পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করার সুযোগ দিন। মিঃ স্পিকার, এই বক্তব্য আমার ভ্রমন বিষয়ে দেয়া হয়েছিল। মনে হছে, সকলেই, এমনকি আমিও, অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছি। সুতরাং যদি তারা এবিষয়ে প্রশ্ন করতে না চায়, তাহলে বাদ দাওয়াই ভাল। আমরা এবিষয়ে আলাদা আলোচনা করাই ভাল।
শ্রী ভগত ঝা আজাদঃ আমরা অবশ্যই একটি আলাদা আলোচনা চাই, তবে তা এই বক্তব্যের উপরে নয়, বরং পাকিস্তানে আমেরিকা যে অস্ত্র সরবরাহ করছে, সে বিষয়ে। আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করতে চি, যা বক্তব্যে উল্লেখিত হয়নি।
শ্রী শরন সিংঃ এবিষয়ে আমরা সোমবার বা অন্য কোন্দিন আলোচনা করবো, তার মধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য যোগার করে ফেলতে পারবো বলে আশা করছি।
শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়িঃ আমরা বাংলাদেশ বিষয়েও আলোচনা করতে চাই। আলোচনা শুধুমাত্র অস্ত্র সরবরাহের মধ্যে আটকে না থেকে, বাংলাদেশ বিষয়েও হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এবিষয়ে সরকারের মনোভাব জানা খুবি প্রয়োজন।
শ্রী এইচ এন মুখারজি (কোলকাতা- উত্তরপূর্ব)ঃ আমি বলতে চাই যে যখন মন্ত্রিসাহেব কোন বক্তব্য দেন, সেটি হাউসের বক্তব্য হয়ে দারায়। একজন সদস্য হিসেবে আমি খুবি অন্যরকম একটি মন্তব্য করতে চাই এবিষয়ে। এর আগে বাংলাদেশ বিষয়ে যেসকল পররাষ্ট্র বিষয়ক বক্তব্য এসংসদে দেয়া হয়েছে, এ বক্তব্য কি সেগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাচ্ছেনা? বক্তব্যটা শুধুমাত্রই তার ভ্রমনের একটা সারসংক্ষেপ বিষয়ে আমাদের ধারনা দিচ্ছে। এ বিষয়ে একটি সরাসরি আলোচনা হওয়া খুবি প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, একেকজন ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তর দেয়ার যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার আর প্রয়োজন নেই, কেননা, সরকার বাংলাদেশ এবং তাদের পলিসি সম্পর্কে যেসকল বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা থেকে অনেকখানি সরে এসেছেন। তারপরো একটা বড় আলোচনার প্রয়োজন আছে, এবং তা অতি সত্বর হওয়া প্রয়োজন, কেননা, যেমনটি আমি বলেছিলাম যে বাহিরেও এমন একটি ধারনার সৃষ্টি হয়েছে যে সরকার তাদের প্রাক্তন অবস্থান থেকে সরে আসছেন।
শ্রী এস এম ব্যানারজিঃ ৩৬৭(২) ধারা অনুসারে, “হাউসের একটি বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে একটি পয়েন্ট অফ অর্ডার উত্থাপন করছি”
এই বিষয়টি হল, মন্ত্রীর পেশ করা বক্তব্য। যার ভিত্তিতে আপনি আমাদের প্রশ্ন করার অনুমোদন দিচ্ছেন। আমি যে প্রস্তাব উত্তাপন করতে যাচ্ছি, ৩৪০ ধারা অনুসারে, “কোন সদস্য যদি কোন প্রস্তাব উত্থাপন করেন, তবে যেকোন সময়ে তার উপর ভিত্তি করে চলমান বিতর্ক স্থগিতও করতে পারেন। “
শ্রী শরন সিং তার প্রস্তাব পেশ করেছেন।
শ্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী (গোয়ালিয়র) ঃ হাউসের সামনে কোন প্রস্তাব ই ছিলনা।
শ্রী এস এম ব্যানারজিঃ প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, এবং এখন আমাদের প্রশ্ন করতে হবে।
আমি প্রস্তাব পেশ করছি যে এই বিতর্ক এখনি স্থগিত করা হোক, এবং একটি পুরনাঙ্গ আলোচনা পেশ করা হোক।
মিঃ স্পিকারঃ কোন প্রস্তাব নেই, কোন বিতর্কও নেই।
শ্রী এস এম ব্যানারজিঃ আমেরিকা পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। এখন তৃতীয় একটি জাহাজ ও আসছে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, গতকালের বক্তব্যে, মাননীয় মন্ত্রীসাহেব এই সাম্রাজ্যবাদীদের এহেন নিষ্ঠুর ও দুর্বৃত্তজনক আচরনের সমালোচনা না করে, উল্টো তাদের মানবতার সনদ দিয়ে দিয়েছেন। তা উনি করছেন, করুক; কিন্তু আমরা এই হাউসের পক্ষ থেকে আমার বাংলাদেশের ভাইদের জন্য হলেও তাদের এখনি অভিযুক্ত করতে চাই, এবং এই মুহূর্তে।
জনৈক সম্মানিত সদস্যঃ এ বিষয় সরকার নির্ণয় করুক।
শ্রী সমর বাহাদুরঃ আমার জ্যেষ্ঠ সহকর্মী মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইতিমধ্যে তার অবস্থান পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন। তিনি অস্ত্র সরবরাহ বিষয়ে গতকাল একটি বক্তব্য দেন। এখন, খবর এসেছে যে তৃতীয় জাহাজটিও যাত্রা শুরু করেছে। আজকের বক্তব্যে উনার বিভিন্ন দেশের রাজধানীগুলো ভ্রমনের বর্ণনা এসেছে। সকলি এখানে পেশ করা হয়েছে। হাউস কোন আলোচনায় বস্তে চাইলে, আমরা অবশ্যই তা করতে রাজি আছি। আপনি সময় নির্ধারণ করে দিন, আমরা অবশ্যই তাতে সম্মত হব।
(শ্রী সাবিয়ার গুহ দাঁড়ালেন)
মিঃ স্পিকারঃ এই ভদ্রলোককে নিয়ে কি করা যায়, প্রতিবার উনি দাড়িয়ে যাচ্ছেন। (আলোচনায় বিঘ্ন)
শ্রী সমর গুইলাঃ পয়েন্ট অব অর্ডারের ভিত্তিতে।
মিঃ স্পিকারঃ যতক্ষন পর্যন্ত আমি পয়েন্ট অফ অর্ডার ঘোষণা না দিচ্ছি, ততক্ষন পর্যন্ত তা সে অনুযায়ী লিপিবদ্ধ হবে না। (আলোচনায় বিঘ্ন) আমার মনে হচ্ছে আমি অনেক লোকের ভিড়ের মধ্যে বসে আছি। আপনারা আলোচনা করতে চান। সে বিষয়ে মন্ত্রিমশাইর কোন আপত্তি নেই। কিন্তু, কি বিষয়ে আসলে আপনারা আলোচনা করবেন, বা তার উপযোগিতা কি? (আলোচনায় বিঘ্ন)
শ্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীঃ দয়া করে, আলোচনার বিষয়বস্তুকে সংক্ষিপ্ত করবেন না। কেননা, যে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে, তাতে সবি উল্লেখিত হয়েছে। অস্ত্র সরবরাহ, সরকারের বাংলাদেশ বিষয়ক মনোভাব, সবি এখানে বলা হয়েছে।
মিঃ স্পিকারঃ আলোচনার বিশয়বস্তু অনেক বিশদ।
শ্রী ভগত ঝা আযাদঃ ১৮৪ নং ধারার ভিত্তিতে…
মিঃ স্পিকারঃ যাই ধারা থাকুক না কেন। ।
শ্রী ভগত ঝা আযাদঃ ১৮৪ নং ধারা অনুসারে আমি বলতে চাই, আমাদেরকে এই বিষয়ে আলোচনা করতে দাওয়া হোক।
মিঃ স্পিকারঃ আমি তা নির্ধারণ করছি, দয়া করে বসুন।
শ্রী ভগত ঝা আজাদঃ আপনি আমাদের সাথে আপত্তিকর ব্যবহার করছেন। আপনি প্রস্তাবনা চেয়েছিলেন, আমি প্রস্তাব করছি যে ১৮৪ নং ধারা অনুসারে আমরা এ বক্তব্যের উপর আলোচনা করতে চাই।
মিঃ স্পিকারঃ তাহলে আর আপনার সরকারী পক্ষে বা বিরোধি পক্ষে থাকার মধ্যে পার্থক্য কি থাকল?
শ্রী ভগত ঝা আজাদঃ গতবারের লোকসভা আর এবারের লোকসভায় আপনার অবস্থানের কি পরিবর্তন! প্রতি মুহূর্তে আপনি আমাদের রুদ্ধ করে দিচ্ছেন। আমি এই লোকসভায় আছি সেই ১৯৫২ থেকে, যে আওলে আপনিও ছিলেন না।
মিঃ স্পিকারঃ আপনি জানেন যে আমরা হাউসে আলোচনার সময় নির্ধারণ করছি।
শ্রী ভগত ঝা আজাদঃ আপনি প্রস্তাবনা চেয়েছিলেন, এখন শুনতে না চাইলে কিভাবে সাজেশন দিব? আমি ১৮৪ ধারা অনুযায়ী আপনাকে প্রস্তাবনা দিচ্ছি, আপনি তা অন্যভাবে নিচ্ছেন। আমি খুবি অবাক হচ্ছি।
মিঃ স্পিকারঃ আমরা আলোচনা করব। কিন্তু কত সময় ধরে?
শ্রী রাজ বাহাদুরঃ দুই ঘন্টা সময়ই যথেষ্ট, নতুবা গোটা অনুষ্ঠানসূচী পুনরায় ঢেলে সাজাতে হবে।
শ্রী জ্যোতির্ময় বসু (ডায়মন্ড হারবার)ঃ ছয় ঘন্টা।
মিঃ স্পিকারঃ আজ কার্যদিবস নয়। আমরা কোন একটি কার্যদিবসে এ আলোচনাটি সম্পন্ন করতে চাই। আমরা এই আলোচনাটি সোমবারে করব। সারাদিন ধরে।
শ্রী সমর গুহঃ তাতে মুল প্রভাবটা কেটে যাবে। এটি খুবি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
শ্রী জ্যোতির্ময় বসুঃ আমরা আজ ৩.৩০ এ আলোচনা শুরু করে, সোমবারেও তা চালিয়ে যেতে পারি। কেননা, বিষয়টি খুবি জরুরি, আমরা এটিকে হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে পারিনা।