জীবনচিত্র নামঃ ডা. হেমচন্দ্ৰ বসাক
Dr. Heimchandra Basak
ডাকনামঃ বলাই
পিতার নামঃ ডা. পূৰ্ণ চন্দ্ৰ বসাক
পিতার পেশাঃ চিকিৎসা
মাতার নামঃ কালী দাসী
ভাইবোনের সংখ্যাঃ তিন ভাই ও দুই বোন;
নিজক্ৰম-প্রথম
ধর্মঃ সনাতন ধর্ম
স্থায়ী ঠিকানাঃ বাড়ি নং-১৫, গ্রাম-কাপুড়িয়াপট্টি
ওয়ার্ড নং-০২, ডাকঘর/উপজেলা/জেলা-নাটোর
শহীদ ডা. হেমচন্দ্ৰ বসাক
নিহত/নিখোঁজ হওয়ার সময় ঠিকানাঃ ঐ
জন্মঃ ১৫ এপ্রিল ১৯০৯ সাল
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
ম্যাট্রিকঃ ১৯২৫, মহারাজা জে.এন.উচ্চ বিদ্যালয়, নাটোর, প্রথম বিভাগ
আইএসসিঃ ১৯২৮, কলকাতা, ভারত, দ্বিতীয় বিভাগ
এলএমএফঃ ১৯৩৩, কলকাতা, ভারত, দ্বিতীয় বিভাগ
শখঃ
সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা
সমাজসেবাঃ স্কাউটিং
চাকরির বর্ণনাঃ
সরকারি, নাটোর মহকুমা সদর হাসপাতাল, নাটোর
হত্যাকারীর পরিচয়ঃ নাটোরন্থ অবাঙালি (বিহারি) গোষ্ঠী
নিহত/নিখোঁজ হওয়ার তারিখঃ ১২ এপ্রিল ১৯৭০ সাল
মরদেহঃ পাওয়া যায়নি। নাটোর পিটিআই ক্যাম্পাসে মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল বলে শোনা যায়।
স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ চিকিৎসক স্মৃতিফলকে নামাঙ্কিত আছে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ পাননি
স্ত্রীর নামঃ সুধারানী বসাক
সন্তান-সন্ততিঃ পাঁচজন; পুত্র-তিনজন, কন্যা-দু’জন
চন্ডী বসাকঃ এমএ-কলকাতা, এমবিবিএস-ঢাকা, অ্যাডভোকেট-কলকাতা
ডা. সুশান্ত কুমার বসাক (দেবু) বরাহনগর, কলকাতা
ডা. জয়ন্ত কুমার বসাকঃ এমবিবিএস, ময়মনসিংহ, প্ৰয়াত
ফেন্সী বসাকঃ বিএ, কলকাতা, গৃহিণী, কলকাতা
আরতী বসাকঃ বিএ, কলকাতা, গৃহিণী, কলকাতা
তথ্য প্রদানকারী
প্ৰদ্যুৎ কুমার বসাক (বাদল)
শহীদ চিকিৎসক ভাতিজা
কুলুড়িয়াপট্টি, নাটোর
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকাষ ৩৯৫
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকাষ ৩৯৬
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকাষ ৩৯৭
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকাষ ৩৯৮
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকাষ ৩৯৯
জীবনচিত্র নামঃ কাজল কুমার ভদ্র
Kajal Kumar Bhadra
পিতার নামঃ যতীন্দ্ৰ কুমার ভদ্র
পিতার পেশাঃ অ্যাডভোকেট, কুমিল্লা বার অ্যাসোসিয়েশন
মাতার নামঃ সুনীতি সুধা ভদ্র
ভাইবোনের সংখ্যাঃ চার ভাই ও ছয় বোন; নিজক্ৰম
তৃতীয়
ধর্মঃ হিন্দু
স্থায়ী ঠিকানাঃ নবীনগর, জেলা-কুমিল্লা
শহীদ মেডিকেল ছাত্র কাজল কুমার ভদ্র
নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ বাড়ি; ‘স্বপনপুরী’, সড়ক-নজরুল এভিনিউ, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা সদর, জেলা-কুমিল্লা
জন্মঃ ১৯৪৯, কুমিল্লা
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
এসএসসিঃ প্রথম বিভাগ, ১৯৬৫, কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালা
আইএসসিঃ প্রথম বিভাগ, ১৯৬৭, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ
এমবিবিএসঃ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় শহীদ
শখঃ তবলা বাদন, গান গাওয়া, ডাকটিকিট সংগ্ৰহ
সমাজসেবাঃ কুমিল্লা স্কাউটের সদস্য
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাঃ ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সংগঠন): মেডিকেলে অধ্যয়নকালে; সাংস্কৃতিক সম্পাদক
হত্যাকারীর পরিচয়ঃ প্রফেসর তোহা আহমেদ (মুসলিম লীগ নেতা ও রাজাকার) দ্বারা চিহ্নিতকরণ এবং পাকসেনার হাতে শহীদ হন
নিহত হওয়ার তারিখঃ ২৯ মার্চ ১৯৭১
মরদেহঃ পাওয়া যায়নি। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সব শহীদকে গগণকবর দেয়া হয়
স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ স্মৃতিস্তম্ভ, ভিক্টোরিয়া কলেজ স্মৃতিস্তম্ভ ও কুমিল্লা টাউন হলে অন্যান্য শহীদের সাথে নাম লিপিবদ্ধ আছে
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ভিক্টোরিয়া কলেজ
শিল্পকলা একাডেমী থেকে বিভিন্ন পুস্তকে শহীদের তালিকায় নাম প্রকাশ
বৈবাহিক অবস্থাঃ অবিবাহিত
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নিকটাত্মীয়ঃ যতীন্দ্ৰ কুমার ভদ্র (শহীদ কাজল কুমার ভদ্রের পিতা)
তথ্য প্রদানকারী
সতী চৌধুরী
শহীদ মেডিকেল ছাত্রের বড় বোন
১১৯, মণিপুরী পাড়া,
ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ৪০১
আ মা র ভাই।
শহীদ মেডিকেল ছাত্র কাজল কুমার ভদ্র।
সতী চৌধুরী
১৯৭১ সালের ১ মার্চ, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল। ইয়াহিয়া খান নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জন্য আহূত জাতীয় পরিষদের সভা মুলতবি ঘোষণা করলেন। সারা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিলেন। জনগণের প্রতিবাদ আর প্রতিরোধকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ২৫ মার্চ রাতে দেশজুড়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো পাকসেনারা। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন।
বাংলার আপামর জনগণ এই ডাকে সাড়া দিল। যার যা আছে, তাই নিয়ে পাকসেনাদের মোকাবেলা করল তারা। বাংলার কোটি মানুষের সাথে, সেদিন আমার ছোট ভাই কাজল কুমার ভদ্রও এগিয়ে আসে মুক্তির বিক্ষুব্ধ পথে। ২৭ এবং ২৮ মার্চ কুমিল্লা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে কাজল এবং তার সঙ্গীরা। স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনায় পরিকল্পনা চলতে থাকে। কিন্তু এই ব্যারিকেড দিয়ে পাকসেনাদের বহর ঠেকানো যায়নি। তারা ২৯ মার্চ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সামরিক যানবাহন নিয়ে এসে বোমা মেরে সব ব্যারিকেড ভেঙে দেয় তারা। কুমিল্লা শহরে সেদিন থেকেই শুরু হয় তাদের বাঙালি নিধন অপারেশন। রাজাকারদের মদদে তাদের প্রথম টার্গেট হয় আমাদের পরিবার।
২৯ মার্চ বেলা ১১টায় পাক সেনারা আমাদের কান্দিরপাড়ের বাড়ি আক্রমণ করে। সবকিছু তছনছ করার পর একজন আর্মি ক্যাপ্টেন ওই ব্যারিকেড দেয়ার অপরাধে কাজল আর রত্নকে (আমার আরেক ছোট ভাই, সে ছিল এসএসসি পরীক্ষার্থী) গুলি করে। তারা দু’জন জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ে। তারপর পাকসেনারা পৃথিবীর সবচেয়ে ভারি ওজনটা আমার পিতাকে (কুমিল্লার স্বনামধন্য অ্যাডভোকেট যতীন্দ্ৰ কুমার ভদ্র) তুলতে বলে। তারা আমার পিতাকে দিয়ে দুই পুত্রের দেহ গাড়িতে তোলায়। এরপর আমার পিতাসহ গাড়ি নিলে চলে যায়। তারা ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছলে সিভিল সার্জন বলেন, কাজল তখনও জীবিত আছে।
৪০২ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ
শহীদ মেডিকেল ছাত্র কাজল কুমার ভদ্র
এতে সেই মিলিটারি ক্যাপ্টেন সিভিল সার্জনের সামনে কাজলের মাথায় আবার গুলি করে। পরবর্তীকালে তারা আমার পিতাকেও সেখানে হত্যা করে এবং ক্যান্টনমেন্টের পেছনে গণকবর দেয়। হাসপাতাল ও ক্যান্টনমেন্টের অনেক প্রত্যক্ষদর্শী এসে আমাদের এই ঘটনার বর্ণনা দেয়। এই ঘটনায় এলাকায় ভয়ানক ভীতি সৃষ্টি হয়েছিল।
কাজলের মতো সাধারণ, সৎ, বিনয়ী আর মিষ্টিভাষী ছেলে খুব কম দেখা যেত। অত্যন্ত মেধাবী মেডিকেল স্টুডেন্ট ছিল সে। সেই সময় মেডিকেল কলেজের ছুটিতে রাজধানী থেকে কুমিল্লায় এসেছিল। মরণই তাকে ডেকে এনেছিল। ওটাই হলো তার শেষ আসা। মেডিকেল কলেজে সে ছিল একজন পরিশ্রমী ছাত্র। অনেক রোগীর পাশে বসে সে রাত কাটিয়ে দিতো। তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।
সংস্কৃতিমনা আর মুক্ত চেতনায় বিশ্বাসী ছিল সে। প্রায়ই বলত স্বাধীন দেশের কথা। ভাবতো স্বাধীন বাংলাদেশের কথা। ওর স্বপ্ন ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশে সে মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করবে। বাবা-মার সব স্বপ্ন পূরণ করবে।
কাজলের মতো ভাই খুব কম বোনের ভাগ্যে থাকে। আমি কাজলের সাহসিকতা আর বীরত্বের জন্য গর্বিত। তবু মাঝে মধ্যে খুব কষ্ট হয় যখন দেখি, এতগুলো বছর গেল তবু দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো না। আমি বিশ্বাস করি, যারা কাজল বা কাজলের মতো লাখো শহীদের হত্যার জন্য দায়ী একদিন এই মাটিতেই তাদের বিচার হবে।
প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ
ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মেডিকেল ছাত্র স্মৃতিফলক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ভবনে শোভিত।
খ. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা; বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনে (তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত মৃতিফলকে উৎকীর্ণ। (পবিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)
গ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র সম্পাদনা; হাসান হাফিজুর রহমান প্রকাশনা তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রকাশকালঃ আষাঢ় ১৩৯১, জুন ১৯৮৪; অষ্টম খন্ড; পূ. ৫৮৮-৫৮৯ ৷
ঘ. স্মৃতি ১৯৭১; সম্পাদনাঃ রশীদ হায়দার; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ৯ম খণ্ড; প্রথম পুনর্মুদ্রণ, প্রকাশকালঃ কার্তিক ১৪০৬, নভেম্বর ১৯৯৯; পৃ. ৬৫ ।
ঙ. দৈনিক পূর্বদেশঃ ১১ জুন ১৯৭২।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিত্সক জীবনকোষ ৪০৩
Reference: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ