You dont have javascript enabled! Please enable it!

জীবনচিত্র   নামঃ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই

Dr. Syed Abdul Hai

পিতার নামঃ সৈয়দ আফরুজউদ্দিন

মাতার নামঃ বেগম আসিয়া খাতুন

ভাইবোনের সংখ্যাঃ চার ভাই, চার বোননিজক্ৰম-

সপ্তম

ধর্মঃ ইসলাম

স্থায়ী ঠিকানাঃ বাড়ি-‘মিয়া বাড়ি’, শেরপুর সদর,

উপজেলা-শেরপুর, জেলা-জামালপুর

 

শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই

 

নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ অফিসার্স কোয়ার্টার, যশোর সেনানিবাস, যশোর

জন্মঃ ১ ডিসেম্বর, ১৯২৪ (আনুমানিক)

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

ম্যাট্রিকঃ গোবিন্দপুর পিস মেমোরিয়াল স্কুল, শেরপুর, ১৯৩৭

আইএসসিঃ জগন্নাথ কলেজ, ১৯৪০

এলএমএফঃ লিটন মেডিকেল স্কুল, ময়মনসিংহ, ১৯৪৫-৪৬?

এমবিঃ কলকাতা মেডিকেল কলেজ, ১৯৬৪?

শখঃ ক্রীড়ানুরাগী ছিলেন; তাঁর অধীন লোকদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করতেন

সমাজসেবাঃ ১৯৭০ সালে দক্ষিণ বাংলায় জলোচ্ছাস দুর্যোগের সময় ত্রাণকাজে সামরিক বাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

চাকরির বর্ণনাঃ কমান্ডিং অফিসার (লে. কর্নেল), ৭ম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স, যশোর সেনানিবাস, ১৯৭০-৭১

হত্যাকারীর পরিচয়ঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনী FFR রেজিমেন্টের সিপাহিরা

নিহত হওয়ার তারিখঃ ৩০ মার্চ, ১৯৭১

মরদেহঃ

প্রাপ্তি স্থানঃ সড়ক নং-৫, ধানমণ্ডির শ্বশুরালয়ে পাকসেনাদের কাছ থেকে গৃহীত

প্রাপ্তি তারিখঃ ৩১ মার্চ, ১৯৭১

কবরস্থানঃ আজিমপুর নতুন কবরস্থান, ঢাকা

স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ যশোর সেনানিবাসের সিএমএইচে খোলা হয়েছে ‘কর্নেল হাই ওয়ার্ড’

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ

স্ত্রীর নামঃ নাসিম হাই

বিয়েঃ জুন ১৯৫৫

সন্তান-সন্ততিঃ তিনজন (পুত্র)

সৈয়দ আশফাক হাইঃ চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র

সৈয়দ আদেল হাইঃ ডাক্তার, সেন্ট পলস মেডিকেল সেন্টার, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

সৈয়দ আরেফ হাইঃ ব্যাংকার, রয়েল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড

 

 

 

তথ্য প্রদানকারী

নাসিম হাই

শহীদ চিকিৎসকের স্ত্রী

35 West Way Edgware,

Middlesex, HA-8 9LA, UK

 

 

৩৭৭                                           মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

 

আমার স্বামী

শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই

নাসিম হাই

 

একাত্তরের সেই উন্মাতাল দিনগুলোতে আমরা ছিলাম যশোর ক্যান্টনমেন্টে।

আমার স্বামী সৈয়দ আবদুল হাই তখন মেডিকেল কোরের কর্নেল। প্রায় ৭-৮ বছর ধরে তিনি ডেপুটেশনে আফ্রিকা, ঘানা প্রভৃতি দেশ এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৭০ সালে দেশে ফিরে আসেন। তিনি ছিলেন সপ্তম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের একজন কমান্ডিং অফিসার। এরপর দ্রুত ঘনিয়ে আসে ২৯ মার্চের সেই কালরাত্রি। এই রাতের পাঁচ দিন পর যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে আমি ও আমার সন্তানরা ঢাকায় নিয়ে এসেছিলাম আমার স্বামীর নিথর প্রাণহীন দেহ।

স্মৃতিচারণ করতে বসে অনেক কথাই মনে পড়ে। পেছনে তাকালেই দেখতে পাই ১৯৫৫ সাল। আমি তখন ১৬ বছরের কিশোরী। পিতার কর্মস্থল ময়মনসিংহে বাস করি আমরা। সে বছরই ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে, পরীক্ষার ফল ঘোষিত হওয়ার আগেই নির্ধারিত হবে আমার জীবন-নাটকের ফলাফল। বাস্তবে তাই হলো। আমার গায়ে লাগানো হলো হলুদ। হাতে লাগানো হলো মেহেদির রঙ। বসলাম বিয়ের পিঁড়িতে। জীবননদীর গতি প্রবাহিত হতে থাকলে তার আপন ছন্দে। ধীরে ধীরে আমাদের ঘর আলোকিত করে একে একে এলো আশফাক, আদেল এবং আরেফ। সংসার হয়ে উঠলো সন্তানদের কলকাকলিতে মুখরিত। চেষ্টা করতে লাগলাম একজন যোগ্য মা হিসেবে সন্তানদের গড়ে তুলতে, সুযোগ্য স্ত্রী হয়ে স্বামীকে শক্তি ও অনুপ্রেরণা যোগাতে।

আমার বিয়ের পর ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফল ঘোষিত হয়। আজও স্পষ্ট দেখতে পাই, আমার সাফল্যে স্বামীর হাস্যোজ্জ্বল গর্বিত মুখ। আমার স্বামী যে সত্যি সত্যিই খুশি হয়েছিলেন, তার প্রমাণ অনেকবার পেয়েছি আমি। তাঁর আগ্রহ এবং সহযোগিতায় আমি ভর্তি হয়েছিলাম ঢাকার হলিক্রস কলেজে। সেখান থেকেই উত্তীর্ণ হই আই এ এবং বি এ। সৈয়দ আবদুল হাইয়ের বর্ণাঢ্য কর্মবহুল জীবনের সাথে আমার জীবনধারা মিলে যে স্রোত সৃষ্টি করেছিল, কলকল ধ্বনি

 

 

৩৭৮       মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

 

শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই

 

ভুলে তা প্রবাহিত হয় দীর্ঘ ষোলোটি বছর ধরে। কিন্তু আমার এই অনুপম দিনগুলোর যে এত দ্রুতই অবসান ঘটবে কে সে কথা ভেবেছিল!

আমার স্বামী কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের মতবাদ পোষণ করতেন না। কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ করতে শুনিনি কখনো। আমাদের পারিবারিক আলোচনাতেও কখনো রাজনৈতিক প্রসঙ্গ উঠতো না। তবে কর্নেল এম.এ.জি ওসমানীর সাথে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠতা। অন্তরঙ্গ পরিবেশে আলাপ করতেন তাঁরা দু’জন। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে বৈষম্যমূলক নীতি অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিয়ে ওসমানী তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর তীব্র ঘৃণা।

এদিকে দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। একাত্তরের ৭ মার্চের পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সৈন্য নিয়ে আসা হতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানেএই পদক্ষেপটি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি কর্নেল হাই। সন্দেহের দোলায় দুলছিলেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক শাসকবর্গের পরবর্তী কার্যকলাপ আরো ঘনীভূত করে তোলে তাঁর সন্দেহ।

২৫ মার্চের কালরাত্রি অতিক্রান্ত হওয়ার পরপরই ব্ৰিগেড কমান্ডারের নির্দেশ এলো, কোনো অবস্থাতেই যেন ঘর থেকে বের না হই। আমরা হয়ে গেলাম নিজভূমে পরবাসীক্যান্টনমেন্টের সব বাঙালি তখন কার্যত গৃহবন্দি। এই অবস্থাতেই চলে গেল ৪-৫ দিন। নিরাপত্তাহীনতা আর অনিশ্চয়তায় কাটছে প্রতিটি প্রহর। ৩০ মার্চ সকাল সাতটা। বেজে উঠলো আমাদের বাসার টেলিফোন। অফিসিয়াল ম্যাসেজ। সেনানিবাসে সিপাইরা নাকি গণ্ডগোল করছে। এদের নিবৃত্ত করে অস্ত্র সমর্পণে বাধ্য করার জন্য ডেকে পাঠানো হলো কর্নেল হাইকে। স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন কতো শান্ত ও গম্ভীর ছিলেন সামরিক কর্মকর্তা সৈয়দ হাই। ত্বরিত পোশাক পরলেন তিনি। তারপর বেরিয়ে গেলেন অতি ধীর পদক্ষেপে। তাঁর চলে যাওয়ার পথে আমি চেয়ে থাকলাম। কোথাও কোনো কোলাহল ছিল না। শান্ত পরিচ্ছন্ন পরিবেশকিন্তু একটা অজানা শঙ্কা আচ্ছন্ন করে রাখলো আমাকে, আমার সন্তানদের এবং আমাদের মতো অন্য আর সব বাঙালি পরিবারকে।

সময়ের কাঁটা যেন আর এগোচ্ছে না। আমাদের বাসায় তখন আমরা ছয়জন মানুষ-আমার তিন ছেলে আশফাক হাই (১৫), আদেল হাই (৬) ও আরেফ হাই (৫) ছাড়াও একজন আরদালি ও একজন মালিতবু আমার শরীর যেন ভয়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। তসবিদানার মতো গুণে চলেছি সময় ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ড ধরে ধরে। দুপুর বারোটার ঘরে ঘণ্টার কাঁটা এসে থামলো এক সময়। এর অল্পক্ষণ পরেই ডাক পড়লো আমাদের। আশপাশের অন্যান্য বাসা থেকে ও ডেকে নিয়ে যাওয়া হলো বাঙালি পরিবারগুলোকে এবং জড়ো করা হলো দাউদ পাবলিক হাই স্কুলে। সবার মধ্যেই দারুণ উৎকণ্ঠা। ওখানে পৌঁছার পর পাকিস্তানি অফিসারদের হাবভাব দেখে মনে হয়েছে যেন আমরা কেয়ামতের ময়দানে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এখানেও অপেক্ষাসময় যেন আর কাটতে চায় না। ভয়ে-আতঙ্কে শিউরে উঠছে সমস্ত শরীর। বাচ্চারা বারবার জড়িয়ে ধরছে আমাকে। জানতে চাচ্ছে তাদের আব্বু কোথায়? এই সময় হঠাৎ করে কানের পর্দায় আছড়ে পড়লো গোলাগুলির আওয়াজ। দ্রাম দ্রাম শব্দ কাঁপিয়ে তুললো অফিস এলাকাধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল ঐদিকটা। থরথর করে কাঁপছে যেন ঘরবাড়ি। তার সাথে পাল্লা দিয়ে কাঁপছি আমরা|

আমি জানি না, সেদিন আমাদের পুরো সময়টা কীভাবে কেটেছিলআমার জ্ঞান ছিল, না হারিয়ে ফেলেছিলাম, সেটা স্মরণ করতে পারছি না। তখন চারদিক আঁধার হয়ে আসছে। আমাদের মানসিক অবস্থা যখন এই রকম, তখন সেখানে উপস্থিত বাঙালি পরিবারগুলো যার যার ঘরে ফেরার অনুমতি পেলো। কিন্তু আমি যাবো কোথায়? আমার স্বামীকে সেই যে সাত-সকালে ডেকে নিয়ে যাওয়া হলো তারপর থেকে তার আর দেখা নেই। একটি ফোনও করেননি। তিনি কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন এবং কেনই-বা ঘরে আসছেন না, ব্যাপারটা জানতে আমি তখন হায়েনাদের কাছে ধরনা দেই। আমার ছেলেদেরও এরকম হাজারো প্রশ্ন। কিন্তু উত্তর দেবে কে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন করছি কিন্তু তাদের উত্তর দেয়ার কোনো গরজ নেই। আমার ছেলেরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। স্বামীর সংবাদ জানার জন্য আমার পাগলপ্রায় অবস্থা। যাকে-তাকে জিগ্যেস করছি তার অবস্থানগত সংবাদসবাই বলে, তারা জানে না। ব্ৰিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার দুররানির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। না, ব্যর্থ হই আমি। অফিসের লাইন পেতেও ব্যর্থ হই। কেননা, আমাদের

 

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ      ৩৭৯

 

শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই

 

টেলিফোন সংযোগ তখন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছেএক সময় সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসে। রাতের নিস্তব্ধতা ঘিরে ফেলে চারদিক। অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি আমার স্বামীর আগমন বার্তাররাত হচ্ছে গভীর থেকে গভীরতর। ঠিক এই সময় হঠাৎ সচল হয়ে উঠলো আমাদের টেলিফোন সেট। বেজে উঠল সশব্দে। উন্মাদের মতো ছুটে গিয়ে যেন জাপটে ধরলাম রিসিভার। নিজের মনে জোরে জোরে বললাম, ‘আল্লাহ, আমি যেন শুনতে পাই আমার স্বামীর গলার স্বর।’ কিন্তু আমার সমস্ত ইচ্ছাকে দলিতমথিত করে কথা বলেছিলেন ব্রিগেডিয়ার দুররানির স্ত্রী। একটি শুভ সংবাদের জন্য যখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত আমি, তখুনি আমাকে শুনতে হলে আমার জীবনের চরম দুঃসংবাদটি অর্থাৎ আমার সর্বস্ব হারিয়ে যাওয়ার খবর। আমার ছেলেদের এতিম করার সংবাদবাঁ হাতে ধরা রিসিভার ঝুলে থাকলো আমার কাঁধেপলকে আমি যেন হয়ে গেলাম নিশ্চুপ, নিশ্চল এক পাথরখণ্ড। আমার চোখে তখন শুধু অন্ধকার।

জানি না, কতক্ষণ পর আমি সম্বিৎ ফিরে পাই! কিন্তু মনে মনে আমি শক্ত হওয়ার সঙ্কল্প নিয়ে ফেলেছি। সেদিন মনে হয়েছিল সত্যিই আমি এক সৈনিকের স্ত্রী। সামলে নিই নিজেকে। যোগাযোগ করতে শুরু করি। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। আমার স্বামীর মৃতদেহের জন্য জোর দাবি জানাতে থাকিএকবার নয়, দু’বার নয়, তাদের কাছে অসংখ্যবার ফোন করলামবহু চেষ্টার পর অবশেষে তারা রাজি হলো মৃতদেহ ফিরিয়ে দিতে।

পরদিন ঝটিকা বেগে পাকিস্তানি সৈন্যরা এসে আমাকে আমাদের কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। একটি কার্গো বিমানে করে আমার স্বামীর লাশের সাথে আমাদের নিয়ে আসে ঢাকায়। কিন্তু দিনের বেলা বিমানবন্দর থেকে তারা লাশ বের করেনি। আমরাও বসে থাকলাম সেখানে। আমার স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে যখন বাসায় পৌঁছলাম, তখনকার হৃদয়বিদারক ঘটনা আমার ভাই ফারুক চৌধুরীর ‘দেশ-দেশান্তর’ গ্ৰন্থ থেকেই উদ্ধৃত করছিঃ

“একত্ৰিশে মার্চ কারফিউ জারিকৃত ঢাকায় রাত তখন বেশ ঘনিয়ে এসেছে। ন’টারও বেশি। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছেরাস্তাঘাটে যানবাহন ও জনমানব নেই। নীরব অন্ধকার রাত, আর রাতের নিস্তব্ধতাকে ভাঙছে শুধু ক’টি কুকুরের ডাক। আমাদের ধানমণ্ডি বাসার গেট বন্ধ। গেটে বা বাইরে কোনো আলো নেই। হঠাৎ শোনা গেল গেটের বাইরে গাড়ির শব্দ। দেখা গেল একটি মিলিটারি জিপ, রাতের অন্ধকার ভেদ করে যার হেডলাইট পড়ছে আমাদের গেটের এ পাশেগেটের তালা খুলে দিলেন আমাদের বুড়ো ড্রাইভার আবুল কাসেম। বাসার সবাই ভাবলেন হয়তো যশোর থেকে কর্নেল হাই আমাদের বোন নাসিম আর তাঁর তিন ছেলেকে ঢাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন-দেশে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। বাড়ির সবাই দরজা খুলে বাইরে ছুটে গেলেন। আমার বোন নাসিম দাঁড়িয়ে আছে জিপ গাড়ির সামনে তার দুই ছোট ছেলের হাত ধরে। বিশ্বের ব্যথাভরা তার অবয়ব। শান্ত কণ্ঠে বললো, আম্মা, আমার সব শেষ করে এসেছি।

তাঁর পেছন থেকে ছুটে এগিয়ে এলো বড় ছেলে আশফাক। বয়স তার পনেরো।

‘নানু, ওই যে বাবার কফিন।’ আঙুল দিয়ে সে দেখালো জিপের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিলিটারি ট্রাক আর তাঁর পেছনে আরও একটি মিলিটারি যান।

দ্রুত ক’জন মিলে কফিনকে নামালো ট্রাক থেকে। একজন বলে উঠলো, সব লোগ অন্দর চলিয়ে। কফিনটিকে রাখলো বসার ঘরের ঠিক মাঝামাঝি। তারা জানতো না ঠিক দু’মাস আগে একই জায়গায় রাখা ছিল দুর্ঘটনায় নিহত আমার বাবার কফিন।

‘কী হয়েছে, কেন এটা হয়েছে?’ জিগ্যেস করলো ইনাম।

‘ইনি একজন গাদ্দার, ‘সিপাহিদের একজন বলে উঠলোকান্নায় ভেঙে পড়লেন আমার মা।

‘আপনি কোনো শব্দ করবেন না।’ একজন সিপাহি তার মুখে হাত রেখে বললো, ‘এ ঘর থেকে যদি বাইরে কোনো আওয়াজ বেরোয়, আমরা এই লাশ নিয়ে যাবে।’

‘না, পারবে না নিয়ে যেতে আমার স্বামীর লাশ। যদি নাও, তাহলে আমার আর আমার তিন ছেলের লাশ তোমাদের নিয়ে যেতে হবে’, আশ্রয়হীন আমার বোন দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করলো এই কথাগুলো।

 

 

৩৮০       মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

 

শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই

 

‘কী করে এটা হলো?’  আবার জিগ্যেস করলো ইনাম।

‘আমরা জানি না, বললো একজন সিপাহি। ‘তবে ইনি গাদ্দারএ মৃতদেহ আপনাদের দাফন দিতে হবে এ বাড়ির পেছনেইনইলে আমরা কফিনকে ফেরত নিয়ে যাবো ক্যান্টনমেন্টে।’

‘তা হয় না,’ বললো ইনাম। ‘আমরা চাইবো আজিমপুরের গোরস্তানে আমার ভগ্নিপতির দাফন হোক।’

ইনামের মনে পড়লো দু’মাস আগে বাবা যখন মারা যান, তখন কর্নেল হাই বাবার কবরের জায়গা কেনার সময় বলেছিলেন, আমরা দুটো জায়গা কিনে নিই। আব্বার পাশেই আম্মার জন্য একটা জায়গা কিনে রাখি।

তাই করা হয়েছিল, আর তা মনে করেই ইনাম বললো, ‘না, আমরা আজিমপুরেই এই দাফন দেবোওখানে আমাদের জায়গা কেনা রয়েছে।

‘সে অনুমতি আমরা দিতে পারি না,’ বলে উঠলো ক্যাপ্টেন‘ইনি গাদ্দার আর একে কবরস্থানে দাফনের অনুমতি নিতে পারে একমাত্র মার্শাল ল’ কর্তৃপক্ষআপনি যদি আগামীকাল বিকেল পাঁচটার আগে সে অনুমতি আনতে পারেন, তাহলে টেলিফোনে আমাকে জানিয়ে দেবেন। নইলে কাল বিকেলে আমরা এ মৃতদেহ ফেরত নিয়ে যেতে বাধ্য হবোআর যদি অনুমতি পান, আমরাই লাশ নিয়ে যাবো আজিমপুরে।’ আরও বললো, আজ আর কাল এ বাসায় যেন কোনো কান্নাকাটি না হয়। পাড়ার লোক যেন কিছু জানতে না পারে।

আমাদের বুড়ো ড্রাইভার কাসেমের বাড়ি হুগলিতে। বিশুদ্ধ উর্দু বলতে পারতেন তিনি। তিনি সিপাহিদের বললেন, ‘ইনি মুসলমান। মুসলমানদের লাশের পাশে কোরআন শরীফ পাঠ করতে হয়।’ আমি পাশের মসজিদ থেকে দু’তিনজন মৌলভী সাহেবকে নিয়ে আসি।’

কাসেম ড্রাইভার আজ বেঁচে নেই। কিন্তু সেই গভীর অন্ধকার রাতে দু’জন সিপাহিকে সঙ্গে নিয়ে মৌলভী নিয়ে এসেছিলেন তিনি।

পরের দিন ইনাম বহুকষ্টে যোগাড় করেছিল মার্শাল ল’ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আজিমপুর গোরস্তানে দাফন করার অনুমতিদাফনের সময়ে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন আমাদের চার-পাঁচজন আত্মীয়। সঙ্গে ছিল দশ-বারোজন রাইফেলধারী সৈনিক। জানাজা হয়েছিল গোরস্তানেইতাতে অংশ নেয়নি পাহারারত সৈনিকরা, যদিও সে আহ্বান জানিয়েছিলেন আমাদের নির্ভীক ড্রাইভার আবুল কাসেম।

‘না, আমরা এ জানাজায় অংশ নিতে পারি না, কারণ ইনি গাদ্দার,’ বলেছিলেন সিপাহিদের একজন।

‘ইনি গাদ্দার নন, ইনি একজন সৈয়দ’- নিষ্ফল প্রতিবাদ করেছিলেন আবুল কাসেম।

না, বেয়নেট উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহারারত সৈনিকরা সেদিন শরিক হয়নি তাদের ভাষায় গাদ্দার অর্থাৎ দেশদ্রোহীর জানাজায়।’

এরপর তো আমার আর হারাবার কিছুই ছিল না। পরবর্তী রক্তঝরা দিনগুলো ঢাকাতেই কাটাই। যশোর ক্যান্টনমেন্টে আমার বাসার সমস্ত মালামাল পাকিস্তানি আর্মিরাই লুট করে নিয়ে যায়।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য বর্বরতার অবসান ঘটলো রেসকোর্স ময়দানে। আমার স্বামী কর্নেল হাইসহ ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রক্তিম হয়ে উঠলো স্বাধীনতার সূর্য। সেই স্বাধীন দেশে কর্নেল হাইয়ের উত্তরাধিকারী তিন সন্তানের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আমি ঝাপিয়ে পড়ি জীবন-সংগ্রামে। তাই ১৯৭২ সালে যোগ দিই ব্র্যাক নামক একটি বেসরকারি সংস্থায়এক বছর পর ১৯৭৩ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চাকরি নিয়ে চলে আসি লন্ডনে। আমার এই চাকরি পাওয়ার পেছনে ছিল জেনারেল এম এ জি ওসমানীর বিশেষ ভূমিকা।

স্বাধীন বাংলাদেশে আমার স্বামী শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই পেয়েছেন তার আত্মদানের স্বীকৃতি। যশোর সেনানিবাসের সিএমএইচে খোলা হয়েছে ‘কর্নেল হাই ওয়ার্ড।’ তাছাড়া সেই সেনানিবাসেই ‘গৌরবাঙ্গন’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কর্নেল হাইয়ের স্মৃতিসমূদ্ধ জাদুঘর। যশোর শহরে তাঁর নামে চিহ্নিত হয়েছে একটি রাস্তার নাম। আমার স্বামীর এটুকু স্মৃতি অবলম্বন করেই আজো বেঁচে আছি।

 

(*তাজুল মোহাম্মদ সম্পাদিত একাত্তরের স্মৃতিগুচ্ছ থেকে সঙ্কলিত)

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ      ৩৮১

 

আমার সহকর্মী

শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই

ডা. কর্নেল (অব.) সুলতান আহমেদ

 

শহীদ লে. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাইয়ের সাথে ১৯৭০ সালের আগস্ট থেকে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত আমার ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তাকে আমি আগে থেকেই আর্মি মেডিকেল কোরের একজন সিনিয়র অফিসার হিসেবে জানতাম১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আমি যশোরে সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) বদলি হই১ বছর পর ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে সপ্তম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সে পুনরায় বদলি হই, যার অধিনায়ক ছিলেন শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই। যেহেতু যশোর সিএমএইচ এবং সপ্তম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স কাছাকাছি ছিল, সেহেতু আমাদের পরস্পরের সাথে অফিসিয়াল কাজে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হতোপরে যখন সপ্তম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সে একত্রে কাজ করি তখন আরও ঘনিষ্ঠ হইতিনি কমান্ডিং অফিসার ছিলেন এবং আমি সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলাম।

১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে কুষ্টিয়া জেলায় কলেরা রোগ মহামারী আকারে দেখা দেয়। তখন আমরা কুষ্টিয়া জেলায় কয়েকটি মেডিকেল ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে কলেরা রোগীদের চিকিৎসায় এবং প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কখনো একা কখনো তার সাথে ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনে যেতামএর কিছুদিন পরই ‘৭০-এর জলোচ্ছাস হলো; দক্ষিণ বাংলার চরাঞ্চলে আমাদের ইউনিট ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেয়; সেখানেও ডা. আবদুল হাই ছিলেন খুবই তৎপর।

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিপুল বিজয়ে সমগ্র জাতির মধ্যে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত বাঙালি সদস্যরাও উৎসাহিত হয়েছিল। যে এবার বাঙালি তথা পূর্ব পাকিস্তানিরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারবেকর্নেল হাইও এই সময়ে খুবই উৎসাহী ও আশাবাদী ছিলেন। সিনিয়র অফিসার হিসেবে তিনি অন্যান্য বাঙালি অফিসার ও সৈন্যদের বাঙালি জাতির অধিকার আদায় বিষয়ে আশাবাদী বক্তব্য নিজেদের আলোচনার মধ্যে বলতেন।

৭ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর অসহযোগ আন্দোলনের ফলে

 

 

৩৮২       মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

 

শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই

 

পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিক ও অফিসারবৃন্দ একঘরে হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁদের মনোবল খুবই নিম্নস্তরে পৌঁছেছিল।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় কর্নেল হাই সপরিবারে নিজের গাড়িতে একবার ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকায় তিনি তার ব্যক্তিগত গাড়িতে কালো পতাকা বহন করে যশোর সেনানিবাসে ঢোকেন। সেনানিবাসের গেটে Check post-এ কর্মরত Security person গাড়িতে কালো পতাকা নিয়ে সেনানিবাসে ঢুকতে আপত্তি জানায়; কিন্তু তিনি তা অগ্রাহ্য করেন। কালো পতাকা নিয়েই গাড়ি চালিয়ে বাসায় আসেন। এতে স্বভাবতই পাকিস্তানি কমান্ডাররা তাঁর ওপর নাখোশ হন।

২৫ মার্চ ঢাকায় হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। ২৭ মার্চ যশোর সেনানিবাসে অবস্থিত পাকিস্তানি ব্যাটালিয়নকে যশোরের আশপাশে যেমন কুষ্টিয়া, খুলনায় Operation-এ পাঠানো হয়। যশােরে অবস্থিত একমাত্র বাঙালি ব্যাটালিয়ন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ক্যান্টনমেনটের বাইরে (কোটচাঁদপুরে) রাখা হয়েছিল। ২৯ মার্চ

সন্ধ্যায় প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সেনানিবাসে ফেরত আনা হয়।

৩০ মার্চ সকাল ৮টায় প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও সপ্তম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সকে (যার ৯০% অফিসার বাঙালি ও ৮০% সৈনিক বাঙালি ছিল) অস্ত্র সমর্পণ করার আদেশ দেয়া হয়। এতে বাঙালি সৈনিকরা ও অফিসাররা অন্ত্র সমর্পণ করতে আপত্তি করলে তাদের পাকিস্তানি ব্যাটালিয়ন দ্বারা আক্রমণ করা হয়সপ্তম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স ও প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাশাপাশি থাকায় উভয় ইউনিটের বাঙালি সৈনিকরা নিজেদের অস্ত্র জমা না দিয়ে পাকিস্তানিদের প্রতিহত করতে থাকে। এদের মধ্যে কিছু সৈনিক ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং অনেককে ক্যাম্পে নেয়ার পর হত্যা করা হয়। আবার অনেকে সেনানিবাস ছেড়ে ভারতের পথে পাড়ি দেয়। প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লে. আনোয়ার শহীদ হন এবং মেজর হাফিজউদ্দিন (পরবর্তীকালে বিএনপি নেতা ও পানিসম্পদ মন্ত্ৰী) মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

সপ্তম ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সে কর্মরত ১০-১১ জন অফিসারের মধ্যে একজন (ক্যাপ্টেন আবুল কালাম শেখ) ব্যতীত সবাই ডাক্তার। লে. কর্নেল হাই কমান্ডার এবং আমি সেকেন্ড ইন কমান্ড। সকাল ১০টার দিকে গোলাগুলি শুরু হলে আমরা সবাই আমাদের অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমাদের সদর দরজা ছিল বন্ধ।

বেলা আড়াইটা-তিনটার দিকে সদর দরজায় প্রচণ্ড ধাক্কা। ওরা দরজা খুলে দিতে বলছিলবলছিল যে ওরা আটক অফিসারদের উদ্ধার করতে এসেছে। আমরা করিডোর দিয়ে সারিবদ্ধভাবে সদর দরজার দিকে অগ্রসর হলাম; প্রথম সারিতে ডা. লে. কর্নেল হাই এবং ক্যাপ্টেন শেখ। দরজা খােলার সাথে সাথেই কমব্যাট ড্রেস পরিহিত দু’জন এবং অপরিচিত কয়েকজন অস্ত্রধারী ঐ দু’জনকে গুলি করে।

আমরা বাকিরা ভয়ে বিহ্বল হয়ে পেছনে ছুটে এসে দুটি কামরায় নিজেদের বন্দি করে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু কেউই আর কামরায় এসে বাকি ৯-১০ জনকে গুলি করলো না। ঐ অবস্থায় আমরা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ হয়ে রইলাম। বাইরে যথেষ্ট গােলাগুলি চলছিল। কামরার জানালার কাচ ভেঙে বুলেটের

 

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৩৮৩

 

শহীদ ডা. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাই

 

স্পিন্টার এসে সবাইকে কমবেশি ক্ষত-বিক্ষত করছিল।

সন্ধ্যা ৬টার পরে বাইরে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে গেল। এরপর পাকিস্তানি সৈনিকরা এসে আমাদের সবাইকে ধরে নিয়ে অন্তরীণ করে রাখে। ৩০ মার্চ আমাকে এসকর্ট করে সিএমএইচে নেয়া হয়। সেখান থেকে লে. কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাইয়ের মৃতদেহসহ আমাকে যশোর এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি, মিসেস হাই ও ওনাদের তিন ছেলেসহ মৃতদেহটি একটি ট্রান্সপোর্ট প্লেনে করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। মৃতদেহসহ কর্নেল হাইয়ের পরিবারকে ঢাকায় পাঠানোর সাক্ষী হিসেবে আমাকে রাখা হলো।

 

প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ

 

 

ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা; তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; প্রকাশকালঃ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২।

খ. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা; বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনে(তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)

গ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে, দলিলপত্র; সম্পাদনাঃ হাসান হাফিজুর রহমান; প্রকাশনাঃ তথ্য মন্ত্রণালয়, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; প্রকাশকালঃ আষাঢ় ১৩৯১; জুন ১৯৮৪; ৮ম খণ্ড; পৃ. ৭০৭।

ঘ. প্রথম পুনর্মিলনী স্মরণিকা, আর্মি মেডিকেল কোর; প্রকাশনাঃ আর্মি মেডিকেল কোর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী; প্রকাশকালঃ ১৩৯৫ বাংলা, ১৯৮৯ ইংরেজী।

ঙ. চারিতাভিধান; সম্পাদনাঃ সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ২য় সংস্করণ; প্রকাশকালঃ মাঘ ১৪০৩, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭; পৃ.৪১৭।

চ. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থ; প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী; ১ম পুনর্মুদ্রণ, প্রকাশকালঃ পৌষ ১৪০০, জানুয়ারী ১৯৯৪; পৃ. ৫৬।

ছ. শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ; সম্পাদনাঃ রশীদ হায়দার, প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী, প্রকাশকালঃ আগ্রহায়ণ ১৩৯২, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫; পৃ. ১০৪

ট. দৈনিক সংবাদ বিশেষ সংগ্রাহক সংখ্যা-৩, যেসব হত্যার বিচার হয়নি; পরিকল্পনায়ঃ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। প্রকাশকালঃ সোমবার ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৮; পৃ. ৪, ৯, ৩৫, ৩৯।

ঠ. মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস; সম্পাদনাঃ আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ।

ড. *একাত্তরের স্মৃতিগুচ্ছ; সম্পাদনাঃ তাজুল মোহাম্মদ; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ; প্রকাস্কালঃ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮; পৃ. ১৩।

 

৩৮৪       মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

Reference:  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!