You dont have javascript enabled! Please enable it! ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ | মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক - সংগ্রামের নোটবুক

জীবনচিত্র   নামঃ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ

Dr. Saleh Uddin Ahmed

ডাকনামঃ সালেহ

পিতার নামঃ আলহাজ মাওলানা রফিক উদ্দিন আহমদ

পিতার পেশাঃ ব্যবসায়

মাতার নামঃ আশরাফুন্নেছা খাতুন

ভাইবোনের সংখ্যাঃ চার ভাই ও চার বোন; নিজক্ৰম-দ্বিতীয়

ধর্মঃ ইসলাম

স্থায়ী ঠিকানাঃ বাড়ি নং-৪৯, অনির্বাণ বাণিজ্যিক এলাকা,

ডাকঘর/উপজেলা/জেলা-হবিগঞ্জ

 

শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ

 

নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ ঐ

জন্মঃ ১৩৪৬ বঙ্গাব্দ, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ

ম্যাট্রিকঃ প্রথম বিভাগ, ১৯৫৬, হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল, হবিগঞ্জ

আইএসসিঃ প্রথম বিভাগ, ১৯৫৯, সিলেট এম সি কলেজ

এমবিবিএসঃ ১৯৬৫, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

শখঃ বই পড়া, লন টেনিস খেলা

সমাজসেবাঃ হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্রাবস্থায় রবার স্কাউটের সদস্য হিসেবে প্রাদেশিক জাম্বুরিতে অংশগ্রহণ

চাকরির বর্ণনাঃ (বেসরকারি)

পরিচালকঃ আহমদ ক্লিনিক, ১৯৬৭-৭১

হত্যাকারীর নামঃ মেজর ইউসুফ, পাকিস্তান সেনাবাহিনী

নিহত হওয়ার তারিখঃ ২৯ এপ্রিল ১৯৭১

মরদেহঃ

প্রাপ্তি স্থানঃ রমজান মিয়ার বাড়ির প্রাঙ্গণ, গ্রাম-লস্করপুর, ইউনিয়ন-শায়েস্তাগঞ্জ, সিলেট

প্রাপ্তি সময়ঃ ডিসেম্বর, ১৯৭১

সন্ধানদানকারীর পরিচয়ঃ পৈল গ্রাম নির্বাসী গফুর মিয়ার সাহায্যে নিজেই সন্ধান পাই

কবরস্থানঃ পারিবারিক গোরস্তান, গ্রাম-নিজামপুর, হবিগঞ্জ সদর থানা

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ পাননি

বৈবাহিক অবস্থাঃ অবিবাহিত

 

 

তথ্য প্রদানকারী

ক. শাহাবুদ্দিন আহমদ

খ, ডা. সামছুদ্দিন আহমদ

শহীদ চিকিৎসকের ভাই

ক. আহমদ ফার্মেসি, চৌধুরী বাজার

ডাকঘর, জেলা-হবিগঞ্জ।

খ. লন্ডনে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিসক জীবনকোষ ৩৫৩

 

আমার ভাই

শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ

শাহাবুদ্দিন আহমদ

 

হত্যাকাণ্ডের পটভূমি

 

আমাদের বড় ভাই ডা. সালেহ উদ্দিন আহমেদ একজন বই পড়ুয়া মানুষ ছিলেন। বিশেষ করে চিকিৎসা শাস্ত্রের বই পড়তে পছন্দ করতেন। রোগীদের নিয়েই ছিল তাঁর সার্বিক চিন্তাভাবনা। ওষুধ কোম্পানিদের দেয়া স্যাম্পল ওষুধগুলো অকাতরে গরিব রোগীদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। গভীর রাতে চিকিৎসকের অভাবের সময় অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়ানোই ছিল তার অভ্যাস। বড় ভাই চিকিৎসা শাস্ত্রের বই ও চিকিৎসা সংক্রান্ত মাসিক/সাপ্তাহিক পত্রিকা নিয়মিত পড়তেন। অবসর সময়টুকু বই পড়ে ও লন টেনিস খেলে কাটাতেন। সমগ্র হবিগঞ্জ মহকুমার জনগণের চিকিৎসাসেবায় তিনি নিরলসভাবে ব্যস্ত থাকতেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন তিনি হবিগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের ডাকে সাড়া দিয়ে হবিগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের শহর কমিটির সভাপতি হিসেবে সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন এবং গড়ে তোলেন সম্মিলিত প্রতিরোধ। ১৯৭১ সালে হবিগঞ্জের শায়েস্তানগর রোডস্থ তৎকালীন এমপি মোস্তফা আলীর বাসভবনে স্থাপন করা হয় আওয়ামী লীগের কন্ট্রোল রুম। এপ্রিল মাস থেকে ঐ কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বভার ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদকে দেয়া হয়। তখন তাঁর চিকিৎসা পেশার পসার আকাশচুম্বী ছিল। তাঁর চিকিৎসা পেশার দায়িত্ব পালনের মধ্যেও তিনি কন্ট্রোল রুম থেকে মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সুচারুরূপে পরিচালনা করতে থাকেন। ঐ এপ্রিল মাসে হবিগঞ্জ মহকুমার জনসাধারণ সীমান্ত অতিক্রম করতে শুরু করে। সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য তাঁকে পাস ইস্যু করতে হতো। তাঁর কাছ থেকে পাস গ্রহণ করে নিরাপদে সীমান্তের ওপারে শরণার্থী শিবিরে চলে যাওয়া যেত। এভাবে হবিগঞ্জ প্রায় জনশূন্য হয়ে যায়। এক পর্যায়ে হবিগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ডা. সালেহ উদ্দিন সাহেবকে একা রেখেই সীমান্তের ওপারে চলে যান।

 

৩৫৪ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

 

শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ

 

১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর প্রায় ১২টায় বড় ভাই খাবার খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। বের হওয়ার সময় বাড়ির বাগানের গোলাপ ফুলগাছ থেকে তাঁর প্রিয় ফুল লাল গোলাপ ছিঁড়ে হাতে নিয়ে যান। তখন তাঁর সাথে আমার দেখা হয়, তাঁর সাথে আমার শেষ দেখা। ১৯৬৫ সালে আমাদের মাকে হারাই। বাড়ির কাজের লোকেরা আমাদের খাবার তৈরি করতো। কাজের লোক বড় ভাইয়ের দুপুরের খাবার টিফিন বক্সে রেখে গিয়েছিল। দুপুরে যখন বড় ভাই খাবার খেতে এসেছিলেন তখন যাবার ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। আমি আমাদের বাসার কেরোসিনের স্টোভে বড় ভাইয়ের খাবার গরম করে পরিবেশন করি। কে জানতে এই ছিল তার শেষে আহার! বাসা থেকে বের হয়ে সরাসরি কন্ট্রোল রুমে চলে যান। সেখানে সীমান্তের ওপারে যাওয়ার জন্য লোকেরা পাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। ঐদিন সীমান্তে যাওয়ার গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিকেল ৪টা বেজে যায়। ইতোমধ্যে পাকসেনারা শায়েস্তাগঞ্জ ঢুকে পড়ে। অবশেষে একটি ট্রাক পাওয়া যায়। বড় ভাই তার সহযোগী, আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট সদস্য হীরেন্দ্র চন্দ্র রায়কে নিয়ে ঐ ট্রাকযোগে সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু সেখানে পৌছানোর আগেই ওরা দু’জন শায়েস্তাগঞ্জ রেলক্রসিংয়ে পাকসেনাদের হাতে ধৃত হন। পাকসেনারা ডা. সালেহ উদ্দিনসহ তাঁর সহযোগীদের শায়েস্তাগঞ্জ হাই স্কুলে পাকসেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পাকসেনারা সন্ধ্যার পর তাঁদের সেখান থেকে লস্করপুর নিবাসী রমজান মিয়ার বাড়িতে নিয়ে এসে হত্যা করে এবং ঐ বাড়ির প্রাঙ্গণেই ডা. সালেহ উদ্দিন ও হীরেন্দ্র রায়কে মাটি চাপা দিয়ে রাখে।

হবিগঞ্জের অন্তর্গত পইল নিবাসী জনৈক গফুর মিয়ার সাহায্যে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে আমি ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদের মাটিচাপা লাশের খোঁজ পাই। পরে হবিগঞ্জের স্বনামধন্য চিকিৎসক ডা. তপন কুমার দাশগুপ্ত এমবিবিএস, ইপিএসইউর কয়েকজন ছাত্র, স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিকদের সাহায্য-সহযোগিতায় দু’জনের লাশ ওখান থেকে নিয়ে আসি। লাশ তোলার খনন কাজে ব্যক্তিগতভাবে ডা. তপন কুমার দাশগুপ্ত সাহায্য করেন, যার ঋণ কোনোদিন শোধ করা যাবে না। পরনের প্যান্ট, সাদা শার্ট, পকেটের উইংসাং কলম, ওভারকোটসহ আমার ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করি। পরে সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার লাশ দেখে রিপোর্ট দেন। তাঁর লাশ আমাদের গ্রামের বাড়ি নিজামপুরে পারিবারিক গোরস্তানে জানাজার নামাজ শেষে দাফন করা হয়।

 

ব্যক্তিমানুষ

ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ সহজ-সরল, সদালাপী, উদারমনা ও ধার্মিক মানুষ ছিলেনতিনি সবার কাছে অতি প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সততা ও আন্তরিকতার জন্য তিনি ছিলেন সবার কাছে অত্যন্ত শ্ৰদ্ধেয় ব্যক্তি।

 

চিকিৎসক

ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ চিকিৎসক হিসেবে স্বল্প সময়ের মধ্যে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। রোগীদের অবস্থা ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে শুনে তারপর সুচিকিৎসা দিতে সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। তাঁর অমায়িক ও আন্তরিক ব্যবহারের জন্য রোগীরা খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। এ এলাকার রোগীদের জন্য তিনি ছিলেন ভরসাস্থলতিনি একজন সফল সার্জন ছিলেন। ইনটেসটাইনাল পারফোরেশন, হার্নিয়া, জরায়ুতে টিউমার, চোখের নালি ইত্যাদিতে সফল অপারেশন করতে পারতেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে চারদিকে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ এমবিবিএস পাস করার পর সার্জারি, মেডিসিন, স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা, শিশুরোগ, নাক-কান-গলা ও চোখসহ বিভিন্ন বিভাগে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালের জানুয়ারির প্রথম ভাগেই তিনি ‘আহমদ ক্লিনিক’ নামে ক্লিনিক খুলে প্র্যাকটিস শুরু করেনচিকিৎসাশাস্ত্রে প্রায় সব বিভাগে জ্ঞান অর্জন করতে ডা. সালেহ উদ্দিনের মতো সচরাচর কাউকে দেখা যায় না। ছাত্রাবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বক্সীবাজারস্থ মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের দোতলায় ৪ সিটবিশিষ্ট ২০৪নং রুমে থাকতেন। বর্তমানে হবিগঞ্জে প্র্যাকটিসরত আলহাজ ডা. আবদুল হাসিম সাহেবও রুমমেট হিসেবে ছিলেন। কিছু কিছু রোগীর সাথে দেখা হয়, যারা দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর ধরে ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদের

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ   ৩৫৫

 

শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ

 

ব্যবস্থাপত্র অতিযত্ন সহকারে রেখেছেন এবং বর্তমানেও এই ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ সেবন করছেন। অনেক রোগীকে বড় ভাই লিখিত ব্যবস্থাপত্র দেখিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি। তাঁর বন্ধু-বান্ধবরা তার কথা স্মরণ করে প্রায়ই আফসোস করে, দুঃখ করে এবং ক্ৰন্দন করে।

দেশপ্রেমিক

পেশাগত ব্যস্ততার মধ্যেও মাতৃভূমির কল্যাণের জন্য ডা. সালেহ উদ্দিন আহমেদের যথেষ্ট ভূমিকার প্রমাণও পাওয়া যেত। ৬ দফা আন্দোলন ও ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ওই সময় থেকেই তিনি হবিগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগ শহর কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অফিসের কাগজপত্র নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিতে যাওয়ার সময় তিনি ও তাঁর সহকর্মী হীরেন্দ্র চন্দ্র রায় শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার রেলক্রসিংয়ের কাছে পাকসেনাদের হাতে ধৃত হন এবং এক কুখ্যাত দালালের অঙ্গুলি হেলনে দু’জনই শহীদ হন।

 

৩৫৬ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

 

সিলেটে গণহত্যা

শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ।

তাজুল মোহাম্মদ

 

খর প্রবাহিনী খোয়াই নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত হবিগঞ্জ শহর। প্রগতিশীল রাজনীতিতে যেমন হবিগঞ্জ একটা বিশিষ্ট ভূমিকার অধিকারী, তেমনি গৌরবদীপ্ত ভূমিকা পালন করে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও। মুক্তিযুদ্ধের চিফ অব স্টাফ কর্নেল (পরে মেজর জেনারেল) মো. আবদুর রব ছিলেন এই হবিগঞ্জের কৃতী সন্তান। তাছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধ সংগঠিত করা এবং একে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেয়ার সঙ্গে যাদের শ্রম ও মেধা জড়িত, তাঁদের অন্যতম হবিগঞ্জের সন্তান মেজর (পরে মেজর জেনারেল) চিত্তরঞ্জন দত্ত, মরহুম কমান্ড্যান্ট লতিফুর রহমান চৌধুরী (মানিক চৌধুরী), অ্যাডভোকেট আফছার আহমদ, মরহুম মোস্তফা আলী এমএনএ, এনামুল হক (মোস্তফা শহীদ) এমপি, চৌধুরী আবদুল হাই (সাবেক এমপি), ইউনুস চৌধুরী, শামসুল হুদা, গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন এমপিএ, মওলানা আসাদ আলী এমপিএ, সৈয়দ আফরোজ বখত, শহীদ ডা. সালেহউদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. শামসুল হোসেন (উমদা মিয়া), জনাব আলী, কৃপেন্দ্ৰ বৰ্মণ, ইয়াকুত চৌধুরী প্রমুখ।

মার্চে শমসেরনগর যুদ্ধ, এপ্রিলের শুরুতে শেরপুর এবং সিলেটে সংঘটিত যুদ্ধের পর আবার পাকবাহিনীর আগমন ঘটে হবিগঞ্জে। অনতিবিলম্বে তারা স্থানীয়ভাবে স্থাপন করে ক্যাম্প। পরিকল্পনা করতে থাকে গণহত্যা সংঘটনের। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে মুসলিম লীগের সভাপতি আবদুল বারি অ্যাডভোকেট, সৈয়দ কামরুল হাসান, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, মরহুম সঈদ উদ্দিন অ্যাডভোকেট, সৈয়দ কামরুল হাসান, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি কুকৰ্ম সম্পাদনের জন্য গঠিত হয় কুখ্যাত রাজাকার, আল বদর ও আল শামস ঘাতক বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে এরা হবিগঞ্জ শহরকে পরিণত করে এক বিভীষিকার রাজত্বে। স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক মেজর জেনারেল সিআর দত্ত, মরহুম কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী এমএনএ, মরহুম

 

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ      ৩৫৭

 

শহীদ ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ

 

মোস্তফা আলী এমএনএ ও ডা. আবুল হাসিমের বাসভবন পাকবাহিনীর নির্বিচার আক্রমণের শিকার হয়।

হবিগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি ছিলেন ডা. সালেহ আহমদ। হীরেন্দ্র কুমার রায়ও ছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মী। ২৯ এপ্রিল তাঁরা রওনা হন ভারতের উদ্দেশে। সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংগ্রহ করা কিছু টাকা। হবিগঞ্জ থেকে রওনা হওয়ার আগে তাঁদের টেলিফোনে বলা হয়েছিল যে, শায়েস্তাগঞ্জে ভারতীয় সৈন্য অবস্থান করছে। অথচ শায়েস্তাগঞ্জে তখন পাকবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্ৰণ বেশ পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। তাই হবিগঞ্জ থেকে সাত মাইল দূরবর্তী শায়েস্তাগঞ্জে পৌঁছেই তারা ধরা পড়ে যান পাক নরখাদকদের হাতে ধরা পড়ার পর ডা. সালেহ আহমদ নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, পেশাগত কাজে শিক্ষানবিশকে নিয়ে তিনি যাচ্ছেন একজন রোগীকে দেখতে। এরপর বিভিন্ন প্রশ্ন করে ডাক্তার হিসেবে তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয় তারা। তবুও তাঁর ডাক্তারি ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সগ্রহ করা টাকার গাদা পেয়েই আটক করে উভয়কে। মুখের ভেতর বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি করে হত্যা করে তাঁদের। তারপর মৃতদেহ দুটি পুঁতে রাখে একটি বাঁশঝাড়ের নিচে। স্বাধীনতার পর সেখান থেকে তাঁদের লাশ নিজ নিজ আত্মীয়স্বজনরা তুলে নিয়ে সকার করেন। ডা. সালেহউদ্দিন আহমদের লাশ নিজ গ্রাম নিজামপুরের পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।

 

(*লেখক : তাজুল মোহাম্মদ সম্পাদিত সিলেটে গণহত্যা থেকে সঙ্কলিত)

 

প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ

ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা; বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনে (তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত স্মৃতিফলকে উকীর্ণ। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)

খ. *সিলেটে গণহত্যা; লেখকঃ তাজুল মোহাম্মদ; প্রকাশনাঃ সাহিত্য প্রকাশ; প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৯; পৃ. ১৭০ |

 

৩৫৮       মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ

Reference:  মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ