জীবনচিত্র নামঃ ডা. শাহ্ আবদুল আজিজ
Dr. Shah Abdul Aziz
ডাকনামঃ আজিজ
পিতার নামঃ আমানতুল্লাহ্ শাহ্
পিতার পেশাঃ কৃষি
মাতার নামঃ নূরজাহান
ভাইবোনের সংখ্যাঃ তিন ভাই ও এক বোন; নিজক্ৰম-প্রথম
ধর্মঃ ইসলাম
স্থায়ী ঠিকানাঃ গ্রাম-ইসবপুর ইউনিয়ন/ডাকঘর-বিন্নাকুড়ি,
উপজেলা-চিরিরবন্দর, জেলা-দিনাজপুর
শহীদ ডা. শাহ্ আবদুল আজিজ
নিহত হওয়ার সময় ঠিকানাঃ গ্রাম-ইসবপুর ইউনিয়ন/ডাকঘর-বিন্নাকুড়ি, উপজেলা-চিরিরবন্দর, জেলা-দিনাজপুর
জন্মঃ ১৯২৯, নিজগ্রাম
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
ম্যাট্রিকঃ ১৯৪৬, দিনাজপুর জিলা স্কুল, দিনাজপুর
আইএসসিঃ ১৯৪৮, দিনাজপুর সুরেন্দ্র নাহা কলেজ
এলএমএফঃ ১৯৫৪, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (জিন্নাহ হল)
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাঃ
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগঃ ১৫ বছর, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান
হত্যাকারীর পরিচয়ঃ
নামঃ জিয়াউল
সংগঠনঃ রাজাকার
নিহত/নিখোঁজ হওয়ার তারিখঃ ৬ এপ্রিল, ১৯৭১
মরদেহঃ পাওয়া যায়নি
স্মৃতিফলক/স্মৃতিসৌধঃ বিন্নাকুড়ি বাজারের (উপজেলা-চিরিরবন্দর, জেলা-দিনাজপুর), বটতলায় ছোট স্মৃতিফলক ছিল। বিগত ২ বছর ধরে তা নেই
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হিসেবে সাহায্য/দান/পুরস্কারঃ পাননি
স্ত্রীর নামঃ নুরুন্নাহার বেগম
বিয়েঃ ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৩৫৫
সন্তান-সন্ততিঃ চারজন; তিন পুত্র ও এক কন্যা
এএসএম আহসান (মুন) স্নাতক, ব্যবসা
নিলুফার আরজুমান্দ বানুঃ স্নাতক, গৃহিণী
এএসএম ইয়াসিন (স্বপন) এইচএসসি, ব্যবসা
এএসএম ইয়ামিন (শিপন) এসএসসি, ব্যবসা
তথ্য প্রদানকারী
ডা. এএইচএম নূর(নিয়ন), বিডিএস
শহীদ চিকিৎসকের নাতি
১১/২, জয়নাগ রোড, বকশিবাজার
ঢাকা
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ৩৩৫
আমার দাদা
শহীদ ডা. শাহ্ আবদুল আজিজ
ডা. এএইচএম নূর (নিয়ন)
প্রায় অসম্ভবকে পেরিয়ে ওরা এসেছিল। ১৪৫ জন সৈন্যের বুটের মার্চ। ধূলা মাড়ানো ১৭ কিমি মাটির রাস্তা। ৬ এপ্রিল ১৯৭১-এর রোমহর্ষক এক কালো অস্পষ্ট রাত। শহীদ ডা. শাহ্ আবদুল আজিজ তখন তৰ্কালীন বিন্নাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান; থানা কাউন্সিলের সভাপতি। তাঁরই তত্ত্বাবধানে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ জমা রাখা হয়েছিল বিন্নাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে। এই অপরাধে পাকিস্তানি হানাদাররা ডা. শাহ্ আবদুল আজিজকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এলাকায় বিহারিদের দাপট সহ্য করতে না পেরে ২৩ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইমতিয়াজ বেগ। সেই জের ধরেই সৈয়দপুরের আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে এর উত্তাপ। শুরু হয় মেধাবী বাঙালি হত্যা। যার নির্মম শিকার ইসবপুর গ্রামের ডা. শাহ্ আবদুল আজিজ।
সৈয়দপুর থেকে ১৭ কিমি দূরে অবস্থিত এই গ্রামে যাওয়ার অর্ধেক রাস্তাই ছিল কাঁচা। সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গাড়ি রেখে হাঁটা শুরু করে। বাড়িটি চিনিয়ে দেয় জিয়াউল নামের এক বিশ্বাসঘাতক নরপশু। ১৪৫ জন পাকসৈন্য। ঘিরে ফেলে ডা. শাহ আবদুল আজিজের বাসা। বাড়ির পাহারাদাররা হানাদারদের উপস্থিতি টের পেয়ে ভেতরে খবর দেয়। বাড়ির সবাই আচমকা এই আক্রমণে হতবিহ্বল হয়ে যায়। সবাই পাশের বাড়ির দেয়াল টপকে ডা. আজিজকে একটি ঘরে লুকিয়ে রাখে। বাড়ির অন্য যুবকরাও লুকিয়ে পড়ে।
জিয়াউলকে নিয়ে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা অফিসার প্রবেশ করে বাসায়। ডা. আজিজের স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেয় টিনের ঘরের মাচায়। হানাদাররা পুরো বাড়ি তল্লাশি করেও খুঁজে পায় না ডা. আজিজকে। ক্লান্ত সৈন্যরা সিদ্ধান্ত নেয় ফিরে যাওয়ার। তখনই এক সৈনিকের নজরে আসে। সেই ঘরটি, যেখানে ডা. আজিজ ও একটি কিশোর অবস্থান করছিলেন। একজন অফিসার বলে যে, তাঁকে ঐ ঘরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, তাদের কথাবার্তা শুনে অতি আগ্রহে ঐ ঘরের জানালা খুলে কিশোর
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ৩৩৬
শহীদ ডা. শাহ আবদুল আজিজ
বলে ওঠে, ‘ডাক্তার সাহেব এই ঘরে নেই।’ কিশোরের কথা শুনে সন্দেহ ঘনীভূত হয় হানাদারদের সাথে সাথে ঐ ঘরে প্রবেশ করে হানাদাররা। খুঁজে পেয়ে ডা. আজিজকে সঙ্গে যেতে অনুরোধ করে একজন অফিসার। দাদা চলে যান ওদের সাথে। কারও সাথে শেষ কথাও বলে যেতে পারেননি।
পরিবারের সবাই যখন তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন ঠিক তখন ৮ এপ্রিল হানাদাররা ডা. আজিজের স্ত্রীকে বলে, ডাক্তার সাহেব পাকিস্তানি ক্যাম্পে আছেন। রোগী দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলে চশমা আর কলম নিয়ে যায় তারা।
এরপরে কতজনের কত কথা…। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁকে।
পাওয়া যায়নি শহীদ হিসেবে সরকার থেকে কোনো স্বীকৃতি। তবুও ছিল ছোট্ট একটি স্মৃতিফলক; ছোট ভাই তৈরি করেছিল বিন্নাকুড়ি বাজারে যেতে এক বটগাছের নিচে।
যে লোকটি সারা জীবন ব্যয় করেছে তাঁর চারপাশের অসহায় আর দুস্থ মানুষগুলোকে বটগাছের মতো ছায়া দিয়ে তাঁর স্মৃতিফলকই অবাঞ্ছিত মনে হয়েছিল কিছু অর্বাচীন যাযাবরের কাছে। বটগাছের কোমল ছায়া তাঁর স্মৃতিফলকের ভাগ্যে মেলেনি।
মুছে গেছে তাঁর স্মৃতিফলক। কিন্তু তাঁর স্মৃতি রয়ে গেছে আমাদের মনের কোনায়, যারা তাঁকে চিনতাম ব্যক্তিমানুষ হিসেবে, উদার দেশপ্রেমিক হিসেবে।
প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) ৫ম জাতীয় সম্মেলন ১৯৭৭ উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনির।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ৩৩৭
শহীদ ডা. শাহ্ আমিন হোসেন
(Star Weekend Magazine, November 16, 2007-এ প্রকাশিত আশা মেহরীন আমিন, শ্রাবন্তী এন আলী, হানা শামস আহমেদ এবং এলিটা করিম রচিত Revisiting the wounds of Liberation শীর্ষক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন থেকে সঙ্কলিত)
Forty-eight-year old Ruksana Begum was very young at the time, but she remembers the tension in the air, the despair amongst her family member and her grandmother wailing in the next room. They had just heard that many areas in Chittagong were attacked that day and lots of men were being taken away from their homes and killed. ‘My family hails from Chittagong and we were all worried about my paternal uncle
শহীদ ডা. শাহ্ আমিন হোসেন
who was a doctor’ says Ruksana. ‘He had sent my aunt and cousins to the village and had stayed back himself. This was the state of many families back then. The men could not leave their workplaces, but would send their families off to safety.’
Ruksana’s uncle, Dr. Shah Amin Hossain had just returned home that evening when a few men knocked on his door. ‘Back then, everyone was extra careful and would stay wary of everyone, including neighbours’, explains Ruksana. ‘Posers tricking people into coming out of their homes and informing the Pakistani army about the whereabouts of ones hidden were spreading like wildfire. According to the neighbours, two men in ordinary clothes came to pick up my uncle. They were completely helpless,’ Dr. Shah Amin’s body was never found. His family was stranded in the village for a while, after which they had to move from one relative’s place to another, until they reached Ruksana’s home in Wani Dhaka. ‘My aunt was devastated.’ she remembers. ‘But my father had lost it completely upon receiving the news about his younger brother. He stopped eating, going to work and mingling with people in the area. Eventually, my father died four months after the death of my uncle’.
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসকে জীবনকাষ ৩৩৯
শহীদ ডা. শৈলেন্দ্র কুমার সেন
ঢাকা জেলা আদালতের পেছনে কোতোয়ালি রোডের বাসিন্দা ডা. শৈলেন্দ্র কুমার সেন সবার কাছে এস কে সেন নামেই পরিচিত ছিলেন। ১৯১৩ অথবা ১৯১৪ সালে তিনি বিএসসি এবং পরে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ঢাকায় ফিরে তিনি ডাক্তারি পেশার সাথে বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজও করতে থাকেন। তাঁর প্রচেষ্টায় নারিন্দায় দুটি মাতৃসদন ও শিশু মঙ্গলালয় গড়ে ওঠে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারী ছিলেন। তিনি একাধিকবার জেলা রেডক্রস ও ঢাকা পৌরসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আজীবন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সার্জন হিসেবে কাজ করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘হিন্দু সৎকার সমিতি’ এখনো
শহীদ ডা. শৈলেন্দ্র কুমার সেন
কাজ করে চলেছে। ১৯৫৪ সালে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে যান। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি হলে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তাঁকে কারাগারে আটক রাখা হয়।
১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বিকেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে প্রথমে জগন্নাথ কলেজের একটি কক্ষে অমানুষিক নির্যাতন করে। ওই রাতেই শাঁখারীবাজারের একটি বাড়িতে আরো অনেকের সঙ্গে ডা. সেনকেও ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।
(*রশীদ হায়দার সম্পাদিত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ থেকে সঙ্কলিত)
প্রাসঙ্গিক উল্লেখযোগ্য তথ্যসূত্রঃ
ক. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা; তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রকাশকালঃ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২।
খ. মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা; বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যালয় বিএমএ ভবনে (তোপখানা রোড, ঢাকা) শোভিত স্মৃতিফলকে উৎকীর্ণ। (পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য)
গ. * শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ; সম্পাদনাঃ রশীদ হায়দার; প্রকাশনা : বাংলা একাডেমী; প্রকাশকালঃ অগ্রহায়ণ ১৩৯২, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫; পূ. ৯৪।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ ৩৪১
Reference: মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ – বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ