এখন মুক্তিসেনার কজায় টাঙ্গাইল জেলা
জয়ের পথে মুক্তিবাহিনী
(নিজস্ব সংবাদদাতা) অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় পক্ষে বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ পুষ্ট দুর্জয় মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে বাংলাদেশের। বিপুল এলাকা হানাদার সৈন্যদের কবলমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি রণাঙ্গন থেকেই ফ্যাসিস্ট ইয়াহিয়ার পাকিস্তানী সৈন্যরা পশ্চাদপসরণ করতে শুরু করেছে। স্থানীয় জনসাধারণের সক্রিয় সহযােগিতায় মুক্তিবাহিনী ব্যাপকভাবে পালটা আক্রমণ চালাচ্ছে। এর সংগে সংগে বাংলাদেশ গেরিলারা শত্রুকবলিত। এলাকাগুলােতে অবিরাম ভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়ে শত্রুসৈন্যদের সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যন্ত করে দিয়েছে। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মােকাবেলায় পাকিস্তানী সৈন্যদের মনােবল একেবারেই ভেংগে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকারের একজন মুখপত্র জানিয়েছেন যে, মুক্তিবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমণে বাংলাদেশের বিপুল এলাকা হানাদার সৈন্যদের কবলমুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দশ হাজার বর্গমাইল এলাকায় বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এইসব এলাকায় সাধারণ মানুষের কল্যাণে বাংলাদেশ সরকার কৃষি উন্নয়ন, টেষ্ট রিলিফ, হাসপাতাল স্থাপন, ডাকঘর চালু, পাট ব্যবসায়ের লাইসেন্স ইসু, জমির লেন-দেনের দলিল পত্র ছাড়াও হাট বাজার চালু করার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া থানা স্থাপন করা হয়েছে। এমনকী দুস্কৃতিকারীদের বিচারকার্যের পর আটক রাখার জন্য জেলখানা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে। উক্ত মুখপত্র আরও জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ সরকার অন্যান্য মুক্ত এলাকাতেও দ্রুত বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করার কাজে হাত দিয়েছেন। এদিকে মুক্তাঞ্চলের অর্থনীতি পুনরগঠনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বহু সংখ্যক অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যস্ত রয়েছেন। অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় পক্ষের সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য ঘটনা হচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে হানাদার সৈন্যদের বিতাড়ন। এই জেলার টাঙ্গাইল শহর আর মির্জাপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতীর থানা হেড কোয়াটার ছাড়া বাকী সমস্ত এলাকায় মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী বার। বার হামলা করে টাঙ্গাইলের প্রায় একান্নটী লড়াইয়ে পরাজয় বরণ করেছে। এরপর মুক্তিবাহিনীর পাল্টা হামলায় পাকিস্তানীরা ঢাকার দিকে পিছু হটতে শুরু করেছে।
ওরা দুর্জয় ওরা দুর্বার # ১:
২০ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯