You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.06.13 | বাকশাল গঠনের পরে কয়েকজন নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া | সাপ্তাহিক বিচিত্রা - সংগ্রামের নোটবুক

বাকশাল গঠনের পরে কয়েকজন নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া

জিল্লুর রহমান

গঠনতন্ত্রে জনসাধারণের আশাআকাংখার সত্যিকারের রুপায়ন ঘটেছে। অসাধারণ কোন আদর্শ ও লক্ষ্য অনুসরণ করবে গঠনতন্ত্রে তা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রটি স্বয়ং আন্তর্জাতিক ভাতৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। এই গঠনতন্ত্র সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ার পথ দেখাবে এবং এভাবেই জনসাধারণের জীবনে সুখ আসবে।

শেখ মণি

নয়া দলীয় গঠনতন্ত্র এক নতুন ও চমৎকার রাজনৈতিক বক্তব্য হাজির করেছে বা অনুসরণ করে। সমাজ অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করবে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অন্তর্ঘাতি প্রবণতা দুর করতে পারবে এবং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সংযোগ এবং ঐক্য আনতে পারবে। বাংলাদেশের চতুর্থ সংশোধনীর পরবর্তী সংবিধানের সাথে দলীয় গঠনতন্ত্র পাঠ ও বিশ্লেষণ করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্বিতীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে সমাজ গড়তে চান এই দুটি সংবিধানে যুগপৎ এবং এযোগে সেই সমাজের সার্বিক ধারণা দেয়া হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় দল গণসংগঠনগুলোর প্রতিনিধি এবং সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর অবিভাজ্য আকাংখা দলের মধ্যে রূপ পেয়েছে। গঠনতন্ত্রে সমাজ প্রগতির পথে দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য জাতিকে পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি ঘোষিত হয়েছে। গঠনতন্ত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিগত সংযোগ ও সাযুজ্য সাধন এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির এক স্প্রীতিপূর্ণ শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের অঙ্গীকার ঘোষিত হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা কাব্যে, গানে যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই সোনার বাংলা গড়ার জন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক ও বিপ্লবী নেতৃত্বে আমাদের মহান জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ভিত্তি রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও জাতীয় দলের গঠনতন্ত্রে রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংবিধানে যেমন সরকারী কাঠামো দেয়া হয়েছে তেমনি জাতির পিতার দেয়া দলীয় গঠনতন্তে আমাদের মহান জনগণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বৈষয়িক কল্যাণের নিশ্চয়তা ঘোষিত হয়েছে। অতীতে পাশ্চাত্যের ঔপনিবেশিক শাসক, পাকিস্তানী ও অপরাপর বিদেশী শাসকরা ভাগ করে শাসন করার বিদেশী এবং ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়া চাপিয়ে দিয়েছিল। আর সেই কারণে সমৃদ্ধ ও উর্বরা গাঙ্গেয় অববাহিকা ক্ষুধা, দারিদ, নিরক্ষরতা, রোগ ও মৃত্যুর ভূমিতে পরিণত ও হয়েছে। নয়া গঠনতন্ত্রে বিভেদ রোধের নিশ্চয়তা বিধান করা এ হয়েছে। আমাদের জনগণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং বৈষয়িক কল্যাণ সাধনের প্রগতিশীল বিভক্ত থাকতে চাই না। গঠনতন্ত্র সমগ্র জাতির সন্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে দেশ পূর্ণগঠনের পথ দেখিয়েছে। দীর্ঘদিনের বৈদেশিক অধীনতার উত্তরাধিকার ও অবক্ষয়ের উপর দাড়িয়ে আমাদের এ দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। তার সীমানার বাইরে কি ঘটে তা থেকে আজকেরদিনে কোন জাতিই বিচিছন্ন থাকতে পারে না। দরিদ্র দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বইৎ শক্তির জাত্যাভিমানজনিত হস্তক্ষেপ ও সমাজবাদী ও উপনিবেশবাদী হস্তক্ষেপ এখনও চলছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও স্বাধিকারকে অর্থবহ করে তুলতে হলে দ্রুত উন্নয়ন সাধনের জন্য দরিদ্র দেশগুলোকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। অন্যের আর্থিক সাহায্যের উপর নির্ভরতা একটি দেশকে পরিণামে দাতা দেশগুলোর উপর রাজনৈতিকভাবে নির্ভরশীল হওয়ার পথে ঠেলে দেয়। আজ দরিদ্র দেশগুলোর বেলায় একথা বেশী খাটে । তাই দ্রুত অগ্রগতির জন্য তাদের পরিশ্রমী হতে হবে। নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাঙালী জাতিকে বিদেশী আদর্শ ও মত- বাদের বিতর্ক ক্ষেত্রে পরিণত হতে দেয়া যায় না। বরং দ্রুত সামাজিক, অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সকল শক্তি ও প্রচেষ্টাকে একত্রিত ও নিবদ্ধ করতে হবে। শান্তি বিপন্ন হতে পারে তেমন চক্রান্তের সকল সুযোগ ও ছিদ্র বন্ধ করা স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের বিপ্লবী কর্তব্য। হস্তক্ষেপ সবসময় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অন্তঘাত ডেকে আনে। মুক্তি আনতে গিয়ে যে জাতির তিরিশ লক্ষ বীরসন্তানকে আত্মহুতি দিতে হয়েছে, সেই জাতি তার মাটিকে আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের লীলাক্ষেত্রে পরিণত করার সুযোগ দিতে পারে না। পৃথিবীর কোথাও কোন দেশ প্রেমিক প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জনগণ প্রতিক্রিয়াশীল, গোঁড়া নৈরাজ্যবাদী অথবা বিদেশী এজেন্টদের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে না। নয়া গঠনতন্ত্র দ্বিতীয় বিপ্লব অর্জনের আইনগত ভিত রচনা করেছে। এই গঠনতন্ত্র শোষিত গণতন্ত্রের বিকাশ সাধন সর্ব স্তরের মানুষের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। অনৈক্য বিভেদ এবং রাজনৈতিক ও অর্থ নৈতিক অন্তর্ঘাতপ্রবণতা দূর করারও সহায়ক হবে। জাতির সামনে একটি নতুন ও চমৎকার রাজনৈতিক আদর্শ উপস্থাপন করায় আমরা জাতির পিতার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই আদর্শ শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে এবং সমৃদ্ধ অর্জনে সহায়ক হবে এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড়াবে।

আবদুর রাজজাক

দেশের সংবিধামে জাতীয় সংহতি গড়ে তোলার সর্বোচ্চ পথ চিহ্নিত রয়েছে। রাষ্ট্রকে চার মূলনীতির বাস্তবায়ন এবং জাতীয় কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টিতে তা সহায়ক হবে। এছাড়া সাম্যের ভিত্তিতে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তা সাহায্য করবে।

 তোফায়েল আহমদ

 জাতির জনক যে ব্যবস্থা চালু করেছেন তা জাতীয় অর্থনীতির পুনর্গঠনে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এবং সাধারণ মানুষের দুঃখদুর্দশার অবসান নিশ্চিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর এ ব্যবস্থা জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি গড়ে তোলার সুযোগ এনেছে। দেশের স্বাধীনতা সংগামের দিনে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির যেমন একান্ত প্রয়োজন ছিলো তেমনি আজ জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রমের এই দিনে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর ব্যবস্থা সেই অতি প্রয়োজনীয় জাতীয় ঐক্য এনে দিয়েছে। আমরা সকলেই যদি পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে, সততার সঙ্গে কঠোর সংগ্রাম করি তাহলে বঙ্গবন্ধু যে উদ্দেশ্যে নয়া রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছেন তা সম্ভব হবে। শেখ শহীদ জাতীয় দলের গঠনতন্ত্রে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর আশাআকাংখা প্রতিফলিত হয়েছে। যে সব আদর্শ ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছাত্রসমাজ দীর্ঘ কাল ধরে সংগ্রাম করেছে গঠনতন্ত্রে তাও প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা ছাত্ররা মনে করি, নয়া গঠনতন্ত্র দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্য শোষিতের গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। গঠনতন্ত্র সর্বত্মক জাতীয় ঐক্য গঠনের অবস্থাও সৃষ্টি করেছে। ঐতিহাসিক ৭ই জুনে বঙ্গবন্ধুর উদ্ভাবিত নয়া রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্ত্বের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের সর্বত্মক সমর্থন ব্যক্ত হয়েছে। কৃষক ,বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গঠনের প্রতি যে স্বতঃস্ফত প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তাতে এটাই প্রমাণ হয়, সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন সফল হবেই। উপাচার্য মতিন চৌধুরী নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। এই ব্যবস্থা দেশের প্রশাসন এই জাতির ভাগ্য নির্ধারণে সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপকতম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে । বঙ্গবন্ধু একজন বাস্তববাদী রাজনীতিজ্ঞ। পরিস্থিতির বাস্তবভাব মোকাবিলা এবং বাংলাদেশের মত একটি নব্য স্বাধীনতালব্ধ জাতির প্রয়োজন মিটানোর জন্য তিনি এই নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছেন।

মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ

দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্য বস্তবায়নে এ একটি বড় পদক্ষেপ। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নীলিমা ইব্রাহিম দেশে একদলীয় ব্যবস্থার প্রচলন জাতীয় ঐক্য ও সংযোগ সাধনে সহায়ক হবে। এই ব্যবস্থা দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়নের সম্মিলিত প্রয়াসে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণের অধিকারকে নিশ্চিত করেছে। শাহ মোয়াজে্জম হোসেন নতুন ব্যবস্থার প্রচলন এবং দলীয় গঠনতন্ত্র এ দেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সাধারণ মানুষের আশাআকাংখা এতে প্রতিফলিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতিসমূহ বাক্ত হয়েছে।

২৭ জুন ১৯৭৫ তারিখে প্রকাশিত আরও কিছু সাক্ষাৎকার 

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সংঙ্গে সাক্ষাৎকার

আব্দুর রব সেরনিয়াবত

আব্দুর রব সেরনিয়াবত ১৯২১ সালের ২৮ শে মার্চ বরিশাল জেলার সেরাল গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৪১ সালে বরিশাল বি এম কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনাব সেরনিয়াবত আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। ঐ একই বছর তিনি বরিশাল জেলা আইন সমিতিতে যোগদান করেন। আব্দুর রব সেরনিয়াবত ১৯৪৪ সালে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৪৮ সালে মুসলিম লীগের বরিশাল জেলা সদর উত্তর মহকুমার শাখার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে বাঙ্গালী জাতির উপর পাকিস্তান সরকারের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে তিনি মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি যুব লীগে যোগ দেন। ১৯৫৩ সালের শেষ দিকে জনাব সেরনিয়াবত স্বতন্ত্র দল গঠন করেন এবং কেন্দ্রিয় কমিটির নির্বাচিত হন। ২/ক ধারার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে (অস্পষ্ট) জারি করেন। ১৯৫৬-৫৭ সালে তিনি গণতন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তিনি মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি বরিশাল জেলা ন্যাপের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তিনি (অস্পষ্ট) ভাগ করেন। জেল থেকে মুক্তি পাবার পর জনাব সেরনিয়াবত মরহুম সোহরওয়ার্দী সাহেবের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় গণতান্ত্রিক ফন্টে যোগ দেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি ঐ দলের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জনাব সেরনিয়াবাত ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দান করেন। ১৯৭০ সালে তিনি জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ একই বছর তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বধীনতা সংগ্রামে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং যুদ্ধকালীন অবস্থায় ৯ নং সেক্টরের সভপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মন্ত্রী সভায় জানাব সেরনিয়াবাত ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার ও রাজস্ব মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে বন : মৎস্য পশুপালন দফতরেরও দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়। আবদুর রব সেরনিয়াবাত বর্তমানে বন্যানিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ, বিদ্যুৎ, বন মৎস্য ও পশুপালন দফতরের মন্ত্রী। জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত সাহেবকে বিচিত্রার পক্ষ থেকে বরিশাল জেলায় বিদুৎ উন্নয়ন সম্পর্কিত কতিপয় প্রশ্ন করা হলে তিনি তার দফতর কর্তৃক গ্রহীত বিভিন্ন প্রকল্পকে নিম্নলিখিত জবাব প্রদান করনে। প্রশ্ন ভেড়ামারা-ফরিদপুর বরিশাল ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে ? উ : এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রুমানিয়া আর্থিক সাহায্য দানে সম্মত হয়েছে। প্রকল্পটির বিভিন্ন দিক নিয়ে রুমনির্যাত সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা আশা করছি, খুব শীঘ্রই রুমানিয়ার একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে। গোয়ালপাড়া, মংলা-বরিশাল মাদারীপুর-ফরিদপুর ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্ৰাপনের জন্য কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে কি ? উ : এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার জন্য স্বাধীনতার পরে জাপান সরকারের সঙ্গে যে চুক্তিটি স্বাক্ষরীত হয়েছিলো দেশ স্বাধীন হবার পর তা অবদি রিনিউ করা হয়নি। ফলে এই প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। জাপানী এক্সপার্ট এসেছে। আমরা এ ব্যপারে আলোচনা চলাবো। প্রঃ বরিশাল জেলার সঙ্গে অন্যান্য এলাকার বিদ্যুৎ যোগাযোগের ক্ষেত্রে গ্রহিত প্রকল্পগুলোর সম্পর্কে বলুন। উ : বরিশাল বাবুগঞ্জ বিদ্যুৎ যোগাযোগ স্থাপনের কাজ ইতি মধ্যেই শেষ হয়েছে। বরিশাল – উজিরপুর, বরিশাল-মাদারীপুর বরিশাল-নলছিটি, নলছিটিব, বাকেরগঞ্জ, ঝালকাঠি-কাউখালী এবং বরিশাল-পটুয়াখলী ৩৩ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ পুরোদমে চলছে। ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রঃ বৈদ্যুতিককরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জেলায় কত প্রকার কৃষি জমি পানি সেচের সুবিধা পাবে? উঃ এই মূহুর্তে বলা মুশকিল , তবে গ্রাম বৈদ্যুতিকরণ প্রকল্প কৃষি ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। যেমন ধরুন বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সাহায্য নিয়ে বরিশালে যে ইরিগেশন এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেট প্রোজেক্ট হচ্ছে সেখানে ব্যবহিত ২৫ শত লো-লিফট পাম্প (২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন) এবং ১ শত পাম্পিং স্টেশনকে (২৫ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন) যদি বিদ্যুৎ দ্বারা পরিচালিত করা হয় তবে শুধু এখানেই সারা বছর প্রায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার একর জমিতে বৈদ্যুতিক সিবিধয় পানি সেচের ব্যবস্থা হবে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আগামী ৫ বছৱের মধ্যেই দেশেরব কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহিত সকল পাওয়ার পাম্পকে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়ার তাগিদ রয়েছে।

মহিউদ্দিন আহমেদ

 বাংলাদেশ কষৃক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। মহিউদ্দিন আহমেদ রাজনৈতিক প্রেরণা লাভ করেছেন তাঁর পিতা মৌলবী আজাহার উদ্দিননের কাছ থেকে। বিচিত্রা প্রতিনিধির সঙ্গে এক সক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ১৯৪০ সালে হলওয়ে মনুমেন্ট উচ্ছেদ আন্দোলন করতে গিয়ে যখন গ্রেফতাব হই, তখন থেকেই আমার রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি। ১৯২৫ সালের ৮ই মার্চ মহিউদ্দিন আহমেদ জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি শ্য মা হক মন্ত্রি সভা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। ১৯৪৬ সালে রশীদ আলী দিবস আন্দোলনে গ্রেফতার হয়েছেন। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন দীর্ঘদিন। ১৯৪২ সালে নদীয়া জেলা ছাত্র লীগের সম্পাদক এবং ৪৩ সালে নিখিল বঙ্গ মুসলীম ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলীম লীগের কাউন্সিল সদস্য এবং ১৯৪৬ সলে বরিশাল জেলা মুসলিম। ছাত্র লীগের সম্পাদক এবং ৪৮ সালে জেলা মুসলীম লীগের সম্পাদক ছিলেন। স্বল্প সময়ের জন্য তিনি প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্পাদক থাকাকালে ১৯৫০ সালে গ্রেফতার হন। এ সময়ে তিনি সপ্তাহব্যাপী অনশন পালন করেন। ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনিও কারাগারে অনশন ধর্মঘট করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালে ন্যাপ গঠনের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ গুরিত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ন্যাপের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি সামরিক আইনে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ লাহোরে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল, বৈঠকে যোগদান করেছিলেন। স্বাধীনতার তিনি অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগে যে প্রদান করেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর বিশেষ দুত হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে বাংলাদেশের ঝাথ সংলীট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বর্তমানে তিনি বরিশাল এর কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য। বরিশালের রাজনৈতিক ঐতিহ্য সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে জনাব মহিউদ্দিন অহম্মদ বললেন, বহুদিক থেকে বরিশালের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বহ সামরাজ্যের উত্থান-পতনের কেন্দ্রস্থল এই বরিশাল। মোগল – পাঠান – পর্তুগীজ আর বারো ভূইয়া দের পদধূলি পড়েছে এখানে। পুরোনে লোকগথা থেকে বারিশালের সংগ্রামী ঐতিহ্যের কথা জানা যায়। ছোটবেলায় গান শুনতাম চাঁদ সদাগর আর গর্দান মাঝি সভবতঃ গর্দান মাঝি চাঁদ সদ গরের নৌ-বহরের সেনাধ্যক্ষ ছিলেন। বরিশালে এমনি বহু উপকথা রয়েছে। বরিশালের রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ দিক কোনটি—প্রশ্ন করা হললে জনাব মহিউদ্দিন বলেন বহু বিপ্লবী পুরুষ এখানে জন্ম নিয়েছেন। শেরে বাংলা, অশ্বিনী কুমার দত্ত, খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিনের মতে কৃতি পুরুষ এখানে জন্ম নিয়েছেন। এক সময় বা বরিশালকে অসহযোগ আন্দেলনের কেন্দ্র ভূমি বলা হোত। বরিশাল সম্পর্কে জনাব মহিউদ্দিন আহমদ আরো বলেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ভাই শ হ সুজা নলছিটির ওখান থেকে সমুদ্রের পাড় ধরে আর কানে চলে যান। দুই শত বছরের পরানো ম্যাপ দেখলে এই কথার সত্যতা প্রমাণ হবে। আগা বাকরের ছেলে আগা সাদেক বরিশালে রাজনৈতিক প্রতিনিধি ছিলেন। তার নামে কয় একটি রাস্তা এখনো রয়েছে। জনাব মহিউদ্দিন আহমদ বললেন ‘দীপের নাম টিয়া রং’, বইটি বরিশালের একটি দীপকে নিয়ে লেখা । সেখানে মোগল ও পর্তুগীজদের উল্লেখ আছে । বহু মুগ অজো বরিশালের দক্ষিণাঞ্চলে চাষ বাদ করছে । বরিশালের দক্ষিণাঞ্চলে ধানের যে ‘বপণপদ্ধতি’ যা বরিশালে প্রায় ১০০ বছরের পুরানো পদ্ধতি হিসবে প্রচলিত তাকে জাপানী পদ্ধতি নামে প্রসিদ করায় আমি আশ্চর্য হয়েছি । সম্ভবতঃ মগ ও পর্ত জিবদের কাছ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের লোকেরা ধান বপণের এই পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেছে যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে বরিশাল খুব পিছিয়ে আছে । এমন অনেক স্থান আছে জেলার ভেতর যেখানে যেতে চারদিন সময় লেগে যায়। শিল্প কারখানার দিক দিয়ে অসর এই জেলায় শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করলে বেকারত্বও বহুল পরিমাণ হ্রাস পাবে ।

 নুরুল ইসলাম মঞ্জুর

নুরুল ইসলাম মঞ্জুর বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ দফতরের প্রতিমন্ত্রী। ১৯৬৩ সাল থেকে আওয়ামী লীগ। অধুনালুপ্ত করে আসছেন। ৬৩ সালে অধুনালন্ত আওয়ামী লীগের সম্পাদক নিবার্চিত হবার পর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই পদেই বহাল ছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসাবেও দীর্ঘকাল বিভন্ন রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। (অস্পষ্ট) মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বরিশাল ফিরে আসেন। ১১ই ডিসেম্বর প্রায় অর্ধ হাজার পকসৈনা এবং তাদের অনুচররা তাঁর নিকট অত্মসমপর্ণ করে । ১২ই ডিসেম্বর দোয়ারিকায় ক্যাপ্টেন কাহার ২ শত পাক-বাহিনীর তার একটি দল নিয়ে তাঁর কাছে অত্মম্সমর্পণ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমান ১৯৭৩-এর অক্টোবরে জনাব মঞ্জুরের হাতে যোগাযোগ মন্ত্রণলয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব তুলে দেন। তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসা বিচিত্রার এ সংখ্যার জন্যে, আমরা মাননীয় যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জনাব নুরল ইসলাম মঞ্জুরকে বরিশালে রেল যোগাযোগ স্থাপন এবং সড়ক কে নির্মাণ সংকান্ত কতিপয় প্রশ্ন করলে, এক ঘরোয়া আলোচনায় তিনি তার জবাব প্রদান করেন। বিচিত্রা প্রতিনিধির সঙ্গে অলোচনাকালে জনাব মঞ্জুুর বলেন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে বরিশাল ফরিদপুর রেললাইন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমির ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। প্লাটফর্ম, লো-শেডিং নিয়ন্ত্রন রেলওয়ে কোয়ার্টার স্থাপনের জন্যে প্রয়েজনীয় জমি দখলের কাজও শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যেই মহামান্য রাস্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতা এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ঐকন্তিক প্রচেষ্টায় ফরিদপুর থেকে ভালমা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ‘৭৫-৭৬ আর্থিক বছরের মধ্যে ভালমা থেকে ভাঙা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ হবে। পরবর্তী পর্যায়ে ভালমা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রেস্তোরা স্থাপিত হবে। আরো ২টি বড় বীজ নির্মাণসহ বেশ কটি ছেটছোট ব্রিজি নির্মান হবে। জনাব মঞ্জুর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সামাগ্রিক উন্নতির কথা অলেচনা করেন এবং এক প্রসঙ্গে সুরভে চরের গভীর আন্তরিকতার বড় কথা উল্লেখ করেন। সম সড়ক এবং মহাসড়ক নিম্ন সংকেত এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বরিশাল – খুলনা মহাসড়ক নির্মাণের প্রস্তাব বিশেষ বিবেচনাধীন রয়েছে । ভোলা-চরফ্য সন-এর ৩৫ মাইল দীর্ঘ সড়কটিতে বরিশালের সঙ্গে সংযক্ত করা হচ্ছে । এই দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের সম্ভব্যতা পরীক্ষার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। এবং এর কাজ শীঘ্রই শুরু হবে জনাব মন্জুর বলেন, পিরোজপুর নাড়িরপার হয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সংক্ষিপ্ত সড়ক নির্মাণের কাজ এখন পুরোদমে চলছে এবং আশা করা যাচ্ছে আগামী ৭৬-এর প্রথম দিকেই এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে । জনাব মঞ্জুরে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রায় ২৫ মাইল দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইতিমধ্যেই ৮০ ভাগ মাটির কাজ শেষ হয়েছে। আর মাত্র ১ বছরের মধ্যেই এর সব কাজ শেষ হবে।

তোফায়েল আহাম্মদ

বাংলাদেশের যুব সমাজের কাছে একটি অতিপরিচিত নাম যুব নেতা জনাব তোফায়েল আহম্মদ ১৯৪৩ সলের ২২শে অক্টেবর বরিশালের ভোলায় জন্মগ্রহণ করেন । ব্রজমোহন কলেজে অধ্যয়নের সময়েই তিনি ছাত্র-রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে যে পাঁচজন ছাত্র নেতা বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন জনাব তোফায়েল তদের অন্যতম। এ সময় তিনি ছাত্র সংসদের (বি এম কলেজ) ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পরে ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনবিরোধে অন্দোলন বরিশাল বিএম কলেজ থেকেই শুরু হয়েছিলে । ১৯৬৪ সালে ইকবাল হল ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্মাদক এবং ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিক বিজ্ঞান বিভাগীয় সদস্যদের সহ-সভাপতি ছিলেন। জনাব তোফায়েল ইকবাল হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৬৬ সালে। ১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি হিসাবে স্বৈরাচরী আইয়ুব -মোনেমের বিরুদ্ধে ব্যাপক ছাত্র ও আন্দেলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ১৯৬৯ সালে দেশব্যাপী আইয়ুব-মোনেয়েম বিরোধী দুর্বার গণ-আন্দোলন শুরু হলে জনাব তোফায়েল আহম্মদ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসাবে এই অন্দলনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। ঐ একই বছর তিনি ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করে জনাব তোফায়েল ১৯৭০ সালে বরিশালের ভোলা থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তৎকালীন মুজিব বাহনীর অন্যতম অধিনায়ক হিসাবে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর এ পরই জনাব তোফায়েল আহম্মদকে তার রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ভোলা থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করে জনাব তোফায়েল আহম্মদকে বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব নিয়োগ করেন। যুব নেতা জনাব তোফায়েল অহম্মদ বর্তমানে রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী এবং জাতীয় যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক। জনাব তোফায়েলের জন্ম বরিশালের ভোলায়। তাকে বরিশাল সংক্রান্ত কতিপয় প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান জীবানন্দেরর বারিশাল বহু বিপ্লবী পুরুষের জন্ম দিয়েছে। বরিশাল আমার চেতনার একটুকরো মাটির দ্বীপ। শেরে বাংলার মতো কৃতি পুরুষের মাটিতে জন্মলাভ করে আমি আজে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, এক সময় বরিশাল বাংলার শষ্যভান্ডার। আজ যদি কৃষি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কাজে লাগানো যায়, সবাই যদি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কৃষি কার্টে অত্মনিয়োগ করে তবে আমার বিশ্বাস বরিশাল জেলায় উৎপাদিত শষ্য সমগ্র বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে পারবে। এই মুহুর্তে যুব সমাজের কর্তব্য কি হওয়া উচিত শীর্ষক এক প্রশ্নের জবাবে জনাব তোফায়েল আহাম্মদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের চরটি মৌলিক লক্ষ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে যুব সমাজ তথা সকল শ্রেণীর মানুষের জাতীয় কতব্য। এক একটি গ্রামকে এক একটি ইউনিট মনে করে সমবায়ের মাধ্যমে ৬৫ হাজার গ্রামকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ প্রেমিক মনোভাব নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির কাজে আত্মনিয়েগোর মাধ্যমেই আমরা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর আবহমান ও স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারি। সাক্ষাৎকার : ইকবাল হাসান

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1975.06.13-bichitra-2.pdf” title=”1975.06.13 bichitra”]