You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.06.13 | বাকশালের গঠনতন্ত্র | বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র - সংগ্রামের নোটবুক

বাকশালের গঠনতন্ত্র

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র

প্রথম ধারা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

 (১) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত একক জাতীয় দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগবাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র , ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি বিধান, নর-নারী ও ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান এবং মানব-সওার মর্যাদা ও মূল্যের স্বীকৃতি মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি , ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিলোপ সাধন, কৃষক ও শ্রমিকসহ মেহনতী ও অনগ্রসর জনগণের উপর শোষণ অবসানের জন্য পূর্ণ অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শোষণমুক্ত ও সুষম সাম্যভিত্তিক এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, সর্বাঙ্গীন গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি-ব্যবস্থার আমল সংস্কার ও ক্রমিক যান্ত্রিকীকরণ এবং সমবায় ভিত্তিতে চাষাবাদ পদ্ধতির প্রচলন, কৃষি ও শিল্পের প্রসার এবং উৎপাদন বৃদ্ধি, উৎপাদন ও বণ্টন নিয়ন্ত্রণে কৃষক-শ্রমিকের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান, মানুষের সাধারন জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ ও অধিকতর কর্মসংস্থান, বিপ্লবোওর সমাজের প্রয়োজনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ গণমুখী সার্বজনীন সুলভ গঠনাত্মক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন অন্ন-বস্ত্র -আশ্রয়-স্বাস্থ্যরক্ষাসহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারণের মৌলিক সমস্যাবলীর সমাধান, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বয়ম্ভর অর্থনীতির সুদৃঢ় ভিত্তি রচনা, ব্যক্তিগত সম্পত্তির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ, বিচার-ব্যবহার কালোপযোগী জনকল্যাণকর পরিবর্তন সাধন এবং গণজীবনের সর্বস্তর হইতে দূর্নীতির মূলোচ্ছেদ করা—এই সকল নীতিসমূহ ও উদ্দেশ্যাবলী সমগ্র জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত উদ্যম সৃষ্টির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পন্থায় বাস্তবে রূপায়িত করিতে অবিচল নিষ্ঠা, সততা, শৃঙ্খলা ও দৃঢ়তার সহিত সৰ্বতোভাবে আত্মনিয়োগ করিবে। ২) বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টায় সাহায্য ও সহযোগিতা করিবে এবং সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত মুক্তির সংগ্রামকে সমর্থন করিবে।

দ্বিতীয় ধারা প্রতীক

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের প্রতীক হইবে নৌকা।

তৃতীয় ধারা পতাকা

দলের পতাকা হইবে দুই-তৃতীয়াংশ সবুজ এবং এক-তৃতীয়াংশ লাল। সবুজের উপর চারটি লালবর্ণের তারকা খচিত থাকিবে।

চতুর্থ ধারা সংগঠন

নিন্মলিখিত সাংগঠনিক কমিটি বা সংস্থাসমূহের সমবায়ে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (জাতীয় দল) গঠিত হইবেঃ ১. (ক) জাতীয় দলের কার্যনির্বাহী কমিটি, (খ) জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, (গ) দলীয় কাউন্সিল, (ঘ) জেলা কমিটি, (ঙ) জেলা কাউন্সিল । (চ) থানা/আঞ্চলিক কমিটি, এবং (ছ) ইউনিয়ন/প্রাথমিক কমিটি।

ব্যাখ্যাঃ (১) দেশে বর্তমানে প্রচলিত প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে গঠিত মহকুমাসমূহের প্রত্যেকটি জাতীয় দল সংগঠনের নিমিত্ত একটি জেলারুপে পরিগণিত হইবে। ভবিষ্যতে সৃষ্ট প্রশাসনিক জেলাসমূহে এই উদ্দেশ্যে সাংগঠনিক জেলারূপে গণ্য হইবে। (২) এই গঠনতন্ত্রে দল বলিতে জাতীয় দলকেই (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ) বুঝাইবে।

 পঞ্চম ধারা সংগঠনের নীতি

 জাতীয় দলের শক্তি, সংহতি, ঐক্য ও সুষ্ঠ, বিকাশ এবং সচেতন নিয়মানুবর্তিতা অব্যাহত রাখিবার এবং নিশ্চিত করিবার জন্য সাংগঠনিক কার্যধারায় নিম্নলিখিতরূপে অবলম্বন একান্ত কাম্য এবং অপরিহার্য । (ক) এই গঠনতন্ত্রের একাদশ (৫) এবং দ্বাদশ (ঙ) ধারার বিধান সাপেক্ষে নিম্নতম স্তর হইতে উচ্চতম স্তর পর্যন্ত দলের প্রতিটি কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে হইবে। (খ) সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যগণের মতানুসারেই সংগঠনভুক্ত কমিটিসমূহের সিদ্ধান্তবলী গৃহীত হইবে এবং তৎসমুদয় সকল সদস্যেরই অবশ্য পালনীয়। নিম্নতন সংস্থা উচ্চতর কমিটির নির্দেশ মানিয়া চলিবে। দলের নির্দেশ প্রত্যেকের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। (গ) নিম্নতন কমিটিসমূহ উচ্চতর কমিটিগুলির নিকট নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করিবে এবং উহাদের পরামর্শ ও নির্দেশ গ্রহণ করিবে। উচ্চতর কমিটিগুলি নিয়মিত নিম্নতন কমিটিগুলিকে সামগ্রিক কার্যধারা, ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবহিত রাখিবে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করিবে। (ঘ) উচ্চতর কমিটিসমূহ নিম্মতন কমিটিসমূহের এবং সাধারণ সদস্যদের মতামত ও আলোচনার উপর গুরুত্ব আরোপ করিবে। (ঙ) দলের সকল স্তরে দলীয় নীতি, উহার প্রয়োগ ও কার্যাবলী সম্পর্কে খুলাখুলি আলোচনা ও পর্যালোচনা উৎসাহিত করা হইবে। (চ) দলীয় সিদ্ধান্তসমূহ সাধারণতঃ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণ করা হইবে। যদি তাহা সম্ভব না হয় তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহীত হইবে। (ছ) দলীর শাখা বা সংগঠনসমূহে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ অবশ্যই দলের উদ্দেশ্য কর্মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হইতে হইবে। (জ) নিয়মিত প্রশিক্ষণদানের মাধ্যমে আদর্শসচেতন একনিষ্ঠ কর্মী গড়িয়া তুলিতে হইবে।

ষষ্ঠ ধারা

সদস্যপদ (১) আঠার বৎসর ও তদূর্ধ্ব বয়স্ক বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক প্রথম ধারায় বর্ণিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কার্যসূচী মানিয়া চলিবে বলিয়া নির্ধারিত ফরমে লিখিত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদান করিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হইলে, জাতীয় দলের যে কোন নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকিলে, দলের যে কোন সংগঠনে কাজ করিতে প্রস্তুত থাকিল নিয়মিত দলের নির্দিষ্ট চাঁদা পরিশোধ করিতে সম্মত হইলে এবং দলের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নের দায়িত্বভার গ্রহণ করিতে রাজী থাকিলে এই ধারার (২) উপ-ধারায় উল্লিখিত বিধান সাপেক্ষে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের সদস্যপদ লাভ করিবার যোগ্য হইবেন, তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার (২) উপ-ধারায় বিধানসমূহ কার্যকর করিবার অর্থাৎ তৎসমূদয় সম্বন্ধে চড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবার দায়িত্ব জাতীয় দলের চেয়ারম্যান কিংবা তৎকর্তৃক মনোনীত বা নিযুক্ত কোন কমিটি বা প্রতিনিধিগণের উপর ন্যস্ত থাকিবে। (২) কোন নাগরিক সদস্যপদের অধিকারী হইবেন না বা থাকিবেন না, যদি– (ক) তিনি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন। (খ) তিনি নীতি বা নৈতিক স্থলনজনিত কোল ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া দড়িত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে। (গ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজসকারী (বিশেষ ট্রাইবুনাল) আদেশের অধীনে যে কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইয়া থাকেন এবং তিনি ঐরুপ কোনো অপরাধের জন্য বিচারাধীন থাকা অবস্থায় বিচারের নিষ্পত্তি না হইয়া থাকে কিংবা তাঁহার বিরুদ্ধে উপরোক্ত ধরণের কোন অপরাধ সম্পর্কিত অভিযোগ কোন সরকারী কর্তৃপক্ষের নিকট রুজু হইয়া থাকে । (ঘ) তিনি রাষ্ট্রের আদর্শবিরোধী, সমাজবিরোধী, জননিরাপত্তাবিরোধী ও হিংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত রহিয়াছেন বলিয়া প্রতীয়মান হয়। শাখা কমিটির নিকট নির্ধারিত ফরমে (৩) দলের সদস্যপদ প্রার্থীকে দলের প্রাথমিক বা শাখা কমিটির নিকট দরখাস্ত করিতে হইবে এবং বার্ষিক চাদা বাবদ মাত্র দুই টাকা দরখাস্তের সাহিত প্রদান করিতে হইবে। প্রার্থীর সহিত ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত দুইজন সদস্য দায়িত্বসহকারে সঠিক তথ্যাদিসহ ঐ দরখন্ত প্রত্যয়ন করিলে এবং প্রাথমিক বা শাখা কমিটি সদস্যের সাধারণ সভায় প্রাথমিক সদস্যপদ অনুমোদন লাভ করিলে তিনি উক্ত অনুমোদনে ব্ংসর পর্যন্ত প্রার্থী সদস্য বলিয়া গণ্য হইবেন। প্রাথমিক কমিটি, থানা কমিটি, জেলা কমিটি এবং কার্যনিবাহী কমিটি সরাসরিভাবেও কোন দরখাস্ত গ্রহণ করিতে এবং অনুরূপ উপায়ে তাহাকে প্রার্থীর সদস্যপদ প্রদান করিতে পারিবে।সংগঠনগুলির নিম্নতন শাখা বা ইউনিট প্রাথী-সদস্যের জন্য শুধুমাত্র জাতীয় দলের সংশ্লিষ্ট শাখা বা ইউনিটের কাছে সুপারিশ করিতে পারিবে। (8) প্রার্থী-সদস্যগণ আমন্ত্রণক্রমে দলীয় সভায় যোগদান করিতে এবং আলোচনায় অংশ গ্রহণ করিতে পারিবেন। তাঁহাদের উপর অর্পিত দায়িত্বপালনে তারা বাধ্য থাকিবে। তাহাদের কোন কমিটিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিবার, নির্বাচিত হইবার অথবা প্রস্তাবের উপর-ভোটদানের অধিকার থাকিবে না। (৫) (ক) দলের যে কমিটি যাহাকে প্রার্থী-সদস্যপদ প্রধান করিবে সেই কমিটি ঐ প্রার্থীর সদস্যের দলীয় আদর্শগত শিক্ষা-দীক্ষার এবং দলের গঠনতন্ত্র, কার্যক্রম, কর্মনীতি প্রভৃতি বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তদি সর্ম্পকে প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা করিতে হইবে এবং তিনি দলের যে কমিটির অন্তর্ভুক্ত উহাতে তাঁহার কার্যকলাপের উপর দৃষ্টি রাখিতে হইবে। প্রার্থী-সদস্যপদের মেয়াদ পূর্ণ হইলে সংশ্লিষ্ট কমিটি উক্ত প্রার্থী-সদস্যের উল্লেখিত শিক্ষাগত ও কার্যকলাপ সংক্রান্ত উৎকর্ষ বা উন্নতির মান বিবেচনা করিয়া তাহাকে পূর্ণ সদস্যপদ প্রদানের জন্য দলীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নিকট সুপারিশ করিতে পারিবে এবং প্রয়োজনবোধে তাহার সদস্যপদের মেয়াদ আরও এক বৎসর পর্যন্ত বৃদ্ধি অথবা প্রার্থী-সদস্যপদ বাতিল করিতে পারিবে। (খ) দলের নিম্মতন কমিটি বা ইউনিটগুলি উহাদের সংশ্লিষ্ট উচ্চতর কমিটির/কমিটি গুলোর মাধ্যমে কার্যনিবাহী কমিটির নিকট প্রার্থী-সদস্যগণকে পূর্ণসদস্যপদ দানের সুপারিশ করিবে, তবে উল্লেখ থাকে যে উপরোক্ত সুপারিশের একটি অনুলিপি সরাসরি কার্যনির্বাহী কমিটির নিকট প্রেরণ করিতে হইবে। কেবলমাত্র অঙ্গ-সংগঠনগুলির কেন্দ্রীয় কমিটি প্রাথী-সদস্যকে পূর্ণ সদস্যপদ দানের জন্য কার্যনির্বাহী কমিটির নিকট সুপারিশ করিতে পারিবে। এইরূপ প্রার্থী সম্পর্কে কার্যনির্বাহী কমিটি সংশ্লিষ্ট জেলা বা প্রাথমিক কমিটির পূর্ণ তথ্যসম্বলিত মতামত গ্রহণ করিবে। (গ) একমাত্র কার্যনির্বাহী কমিটি দলের পূর্ণ সদস্যপদ প্রদান করিতে পারিবে। (৬) কাহারও প্রার্থী-সদস্যভুক্তির আবেদনপত্র নিম্নতন কোন কমিটিতে প্রত্যাখ্যাত হইলে তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির নিকট তাঁহার আবেদনপত্র পুনর্বিবেচনার জন্য আপীল করিতে পারিবেন। (৭) কাহাকেও প্রার্থী সদস্যপদ প্রদান করা হইলে, তৎসম্পর্কে উর্ধত্বন কমিটি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির নিকট রিপোর্ট পেশ করিতে হইবে। কার্যনির্বাহী কমিটি বা জেলা কমিটি এই বিষয়ে নিম্মতন কমিটির সিদ্ধান্তের রদবদল করিতে পারিবে। (৮) দলের কোন সদস্য, তাঁহার নিজস্ব কমিটির অনুমতি লইয়া সদস্যপদ স্থানান্তরিত করিতে পারিবেন, তবে জেলা হইতে স্থানান্তর দাবী করিলে জেলা কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে। (৯) জাতীয় দল কর্তৃক মনোনীত না হইলে কেহ জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত কোন প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের জন্য মনোনীত হইবেন না। (১০) জাতীয় দলের চেয়ারম্যান বিশেষ বিবেচনায় যে কোন প্রার্থীকে সরাসরি পূর্ণ সদস্যপদ দিতে পারিবেন। কোন সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, আইনবলে গঠিত সংস্থা ও কর্পোরেশন প্রভৃতির কোন কর্মচারী সদস্যপদ প্রার্থী হইলে তাহাকে পূর্ণ সদস্যপদ কিংবা প্রার্থী-সদস্যপদ দানের ক্ষমতা জাতীয় দলের চেয়ারম্যানের উপর ন্যস্ত থাকিবে, তবে দেওয়ানী আদালতে বিচারকার্যে নিযুক্ত কোন কর্মচারী বা বিচারক আদৌ জাতীয় দলের সদস্যপদ প্রার্থী হইতে পারিবেন না। (১১) পূর্ণ সদস্যপদ প্রার্থীকে নিম্নবর্ণিত শর্তাবলী পালন করিতে হইবে এবং নির্ধারিত ফরমে লিপিবদ্ধ ঘোষণাপত্রে দস্তখত করিয়া অঙ্গীকারবদ্ধ হইতে হইবেঃ (ক) তিনি উনিশ বা তদূধ্ব বয়স্ক। (খ) তিনি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—এই নীতিসমূহে বিশ্বাসকরেন এবং তৎসমূহের বাস্তবায়নে কর্মরত আছেন। (গ)তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে একটি ঐক্যবদ্ধ অখণ্ড সমাজে বিশ্বাসী। (ঘ) তিনি দলের কেন্দ্রীয় অথবা জেলা কমিটি কর্তৃক যে কোন নির্ধারিত কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। (ঙ) তিনি বিষয়-সম্পত্তির সর্বোচ্চ সীমা নিয়ন্ত্রক কোন প্রচলিত আইনের দ্বারা নির্ধায়িত সর্বোচ্চ পরিমাণ সম্পত্তির অতিরিক্ত কোন সম্পত্তির মালিক নহেন। (চ) তিনি দলীয় সভা কিংবা বৈঠকের মাধ্যম ব্যতীত অন্য কোথায়ও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকাশ্যে বা গোপনে দলীয় সংগঠনসমূহের গ্রহীত কোন সিদ্ধান্ত, কর্মনীতি অথবা কার্যক্রমের প্রতি কোনরূপ সমালোচনা করেন না। (১২) কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশানুসারে কিংবা তৎকর্তৃক প্রণীত নিয়মাবলী অনুসারে থানা, আঞ্চলিক, প্রাথমিক কমিটি ও শাখাসমূহের প্রত্যেকটি উহার এলাকাধীন সদস্যগণের তালিকা সম্বলিত একটি রেজেষ্ট্রি বই রাখিবে এবং ঐ তালিকার একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির নিকট পাঠাইবে। জেলা কমিটিসমূহ ঐ সকল সদস্য তালিকায় অনুলিপি কার্যনির্বাহী কমিটির নিকট পাঠাইবে। (১৩) কার্যনির্বাহী কমিটি পূর্ণ সদস্যের উপর বার্ষিক চাঁদা ছাড়াও নির্দিষ্টহারে অনুদান বা অবশ্য দেয় অর্থ সাহায্য ধার্য ও আরোপ করিতে পারিবে। দলের সদস্যগণের প্রদত্ত সাকুল্য চাঁদার একটি অংশ কার্যনির্বাহী কমিটি লইবে এবং অবশিষ্ট অংশ বিভিন্ন স্তরের কমিটির মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে এবং তদুদ্দেশ্যে বিতরণের হার ও পদ্ধতি স্থির করিবে। উপরোল্লিখিত অনুদান বা অবশ্য দেয় সাহায্যের হার ও বণ্টন-বিধি কার্যনির্বাহী কমিটিই নির্ধারণ করিবে। সপ্তম ধারা সদস্যপদের কার্ড এবং চাঁদা (১) পূর্ণ সদস্যপদ লাভের পর সদস্যকে দলের সদস্যপদের কার্ড দেওয়া হইবে। পূর্ণ সদস্যের কার্ড সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত পার্টির কার্যনির্বাহী কমিটি গ্রহণ করিবে। (২) দলের কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত হারে কিংবা কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক প্রণতি নিয়মানুসারে প্রত্যেক পূর্ণ সদস্যকে তাহার আয়ের নির্দিষ্ট একটি অংশ দলের তহবিলে দান করিতে হইবে। (৩) বিশেষ ক্ষেত্রে কার্যনির্বাহী কমিটি সদস্যপদের দেয় চাঁদা এবং অনুদান মওকুফ করিতে পারিবে। অষ্টম ধারা সদস্যের কর্তব্য (১) দলের যে সংগঠনের তিনি সদস্য, সেই সংগঠনের কাজে তিনি নিয়মিতরূপে অংশগ্রহণ করিবেন। তিনি দলের নীতি, সিধান্ত ও নির্দেশ কার্যকরী করিবেন। ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে থাকিয়া তিনি জনগণ ও দলের স্বার্থের অনুকলে কাজ করিবেন। তিনি জনসংযোগের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্খা ও অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত হইবেন এবং তাহাদের বক্তব্য ও মতামত দলের নিকট রিপোর্ট করিবেন। পারস্পরিক মানবিক মর্যাদাবোধ ও সহানুভুতিপূর্ণ মনোভাব লইয়া জনগণের সহিত মেলামেশা করিয়া তাহাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক তিনি গড়িয়া তুলিবেন। তাহার ব্যক্তিগত ও সামাজিক কার্যকলাপে যাহাতে তাহার আচরণে সদাচার, সত্যপরায়ণতা, নৈতিকতা ও বিনয়-মাধূর্ষ প্রকাশ পায় সেইদিকে তাহাকে দৃষ্টি রাখিতে হইবে। (২) তিনি দলের আভ্যন্তরীণ ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করিতে সর্বদা তৎপর থাকিবেন, নিজের রাজনৈতিক এবং সমাজতন্ত্র সম্পর্কিত জ্ঞান ও সচেতনতার মান উন্নয়নে সদা সচেষ্ট থাকিবেন, দলের প্রচারিত পত্র-পত্রিকায় সাহিত্য পাঠ করিবেন এবং প্রচার করিবেন। তিনি দলের নিয়ম-শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র মানিয়া চলিবেন এবং দলের চাঁদা ও অনুদান নিয়মিতভাবে পরিশোধ করিবেন। (৩) তিনি গঠনমূলক আলোচনা ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্য পরিচর্চা পদ্ধতির উৎকর্ষ সাধন করিবেন। সমবেতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উহা কার্যকর করিবার তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ এবং দায়িত্ব পালন করবেন। (৪) তিনি নিষ্ঠা ও সততার সহিত নিজের পেশাগত কাজের যোগ্যতা ও দক্ষ ও বুদ্ধির জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিবেন। নবম ধারা সদস্যের অধিকার দলের সদস্য নিম্নলিখিত অধিকার ভোগ করিবেনঃ (১) তিনি দলীয় সংগঠনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে ও নির্বাচিত হইতে পারিবেন। (২) তিনি দলের কর্মনীতি ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত আলোচনায় স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন। (৩) দলের সভায় যে কোন সংগঠন বা সংস্থা এবং সদস্য ও নেতৃস্থানীয় কর্মীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা করিতে পারিবেন। (৪) দলের সম্মেলনে এবং দলের যে কোন উর্ধ্বতন সংগঠনের নিকট তিনি তাহার বিবৃতি, নিবন্ধ, প্রস্তাব ও আবেদন পেশ করিতে পারিবেন। (৫) কোন সদস্যের দল হইতে পদত্যাগের অধিকার থাকিবে, তবে পদত্যাগেচ্ছু সদস্য নিজের সংগঠনের নিকট কারণ দর্শাইয়া দরখাস্ত করিতে হইবে। কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে সংগঠন তাঁহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিতে পারে। পদত্যাগের পূর্বে সদস্য কার্ড, কাগজপত্র ও দলের অন্যান্য সম্পত্তি দল হইতে বহিস্কার করিবার মত কারণ থাকিলে এবং অভিযোগ আনয়ন করিলে তাহাকে পদত্যাগ বহিষ্কার বলিয়া গণ্য হইবে। এই বিষয়েও কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে। (৬) উপযুক্ত কারণ ব্যতীত দলের কোন সদস্য একটানা ছয় মাস কাল পর্যন্ত দলে কাজ-কর্ম না করিলে এবং/অথবা প্রতি বৎসর দলকে দেয় চাঁদা পরিশোধ না করিলে তাহার সদস্যপদ বাতিল করা যাইবে। দশম ধারা জাতীয় দলের কার্যনির্বাহী কমিটি (১)দলের সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতা কার্যনির্বাহী কমিটির উপর নাস্ত থাকিবে। (২) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারী জেনারেলসহ অনুর্ধ্ব পদ জন হইবে। কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি দুই চেয়ারম্যান মনোনীত হইবেন। (৩) চেয়ারম্যানের সরাসরি তত্বাবধানে কার্যনির্বাহী কমিটি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দৈনন্দিন কার্যাবলী সম্পাদন করিবে। চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংগনিক কাঠামো কার্যাবলী ও দায়িত্ব নিরুপন করিবেন। (৪) কার্যনির্বাহী কমিটি যৌথভাবে উহার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে এবং কমিটির প্রতেকে নিদিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন কাজের দায়িত্ব ও ক্ষমতা থাকিবে। সেক্রেটারী জেনারেল চেয়ারম্যানের তত্বাবধানে কার্যনির্বাহী কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পাদনে সর্বাধিক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিবেন। তিনি চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও কাউন্সিলর সভা আহবান করিবেন এবং কার্যবিবরণীর রিপোর্ট পেশ করিবেন। সেক্রেটারী ও কর্মরত সেক্রেটারী জেনারেলের নিয়ন্ত্রণ ও তত্বাবধানে কার্য সম্পাদন করিবেন। (৫) চেয়ারম্যান দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি উপ-কমিটি নিয়োগ করিবেন। উপ-কমিটির সদস্য কার্যনির্বাহী বা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হইবেন। (৬) কার্যনির্বাহী কমিটির একটি উপ-কমিটি দলের পার্লামেন্টারী বোর্ড হিসাবে করিবে। এই উপ-কমিটি চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত সদস্য দ্বারা গঠিত হইবে। (৭) কার্যনির্বাহী কমিটি উহার কর্তব্য পালনের জন্য বিভিন্ন উপ-পরিষদ ও বিভাগ করিতে পারিবে। প্রয়োজনবোধে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আহ্বান করা যাইতে পারে, তবে তাঁহারা ভোট দিতে পারিবেন কার্যনির্বাহী কমিটি উহার অধীনস্থ বিভিন্ন উপ-পরিষদ ও বিভাগের কার্যের নিয়মাবলী নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবে। (৮) কার্যনির্বাহী কমিটি দলের সদস্যদের অনুদান বা অবশ্য দেয় অর্থের হার স্থির করবে। (১) দলের পত্রিকা ও সাহিত্য প্রকাশনার দায়িত্ব কার্যনির্বাহী কমিটির উপর থাকিবে এবং দলের নামে অন্য কোন কমিটি উহা প্রকাশ করিতে পারিবে না। কার্যনির্বাহী দলের পত্রিকার সম্পাদক নিয়োগ করিবে। (১০) কার্যনির্বাহী কমিটি দলের সদস্যদের কার্ড বিতরণের ব্যবস্থা করিবে। (১১) কার্যনির্বাহী কমিটি জেলা কমিটিসমূহ অনুমোদন করিবে। (১২)কার্যনির্বাহী কমিটি দলের কাউন্সিলের প্রতিনিধি প্রেরণের সংখ্যানুপাত নিয়ন্ত্রণ করিবে। (১৩)কার্যনির্বাহী কমিটি অঙ্গ-সংগঠনগুলির জাতীয় সংগঠন/কার্যালয়গুলিকে নিয়ে ভাবে সাহায্য, পরামর্শ ও নির্দেশ দান করবে এবং উহাদের নীতি ও কার্যাবলীর তত্বাবধানে সমন্বয় সাধন করিবে। (১৪)কার্যনির্বাহী কমিটি জেলা কমিটি/দপ্তরগুলির কার্যের তদারক ও সমন্বয় করিবে। কার্যনির্বাহী কমিটি জেলা কমিটিগুলির কাজে সাহায্য, পরামর্শ ও নির্দেশ দান করবে। (১৫) কার্যনিবাহী কমিটি দলের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করিবে। (১৬)কার্যনির্বাহী কমিটি দলের তহবিলের হিসাব-নিকাশ রাখিবে। (১৭) বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল পার্লামেন্টারি পার্টি নির্বাহী কমিটির নিকট দায়ী থাকিবে। (১৮)কার্যনির্বাহী কমিটি সাধারণতঃ প্রতিমাসে একবার বৈঠকে মিলিত হইবে। একাদশ ধারা জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটি (১) কাউন্সিলের দুই অধিবেশনের অন্তর্বর্তীকালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি হইবে দলের প্রধান সংস্থা। দলের কাউন্সিলে যে সকল সাধারণ নীতি ও কার্যক্রম গৃহীত হইবে উহার প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন এবং কাউন্সিলের দুই অধিবেশনের মধ্যবর্তী সময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বদান এবং দলের নীতি ও গঠনতন্ত্র রক্ষণ কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব। কেন্দ্রীয় কমিটি উহার সময় কাজের জন্য একদিকে দলের চেয়ারম্যানের নিকট এবং অন্যদিকে দলের কাউন্সিলের নিকট দায়ী থাকিবে। সরকারী, আধা-সরকারী, সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন ও জনস্বার্থ সংক্রান্ত সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ সম্পকেই কেন্দ্রীয় কমিটি তদারক করিবে। (২) বৎসরে অন্ততঃ দুইবার কেন্দ্রীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হইবে (৩) কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় পূর্ববর্তী সভার কার্যবিবরণী অনুমোদনের জন্য উপস্হিত করিতে হইবে। (৪) কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির কাজের রিপোর্ট এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থিত করিতে হইবে। (৫) চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মধ্য হইতে দলের সেক্রেটারী জেনারেল, একাধিক সেক্রেটারী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং অন্যান্য দলীয় কর্মকর্তা নিয়োগ করিবেন এবং তাহাদের কার্যভার নিরূপণ করিবে। দ্বাদশ ধারা দলীয় কাউন্সিল (১) কাউন্সিল নিম্নবর্ণিত প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে গঠিত হইবেঃ (ক) কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্য, (খ) কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য, (গ) কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত কোটা অনুসারে জেলা কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ, (ঘ) কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত কোটা অনুসারে অঙ্গ-সংগঠনগুলি প্রতিনিধিবৃন্দ, (ঙ) কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত কোটা অনুসারে ষোড়শ (২) (খ) ধারায় বর্ণিত প্রাথমিক কমিটিসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ, এবং (চ) চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত অন্য পঞ্চাশজন দলীয় পূর্ণ সদস্য। কাউন্সিলের সদস্যদের কাউন্সিলার বলা হইবে এবং তাঁহারা পাঁচ বৎসর মেয়াদের জন্য বহাল থাকিবেন। (২) কাউন্সিলের আকার এবং বিভিন্ন জেলা কমিটি, অল্প-সংগঠন ও সংস্থা ইত্যাদি হইতে দলীয় কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে কার্যনির্বাহী কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে। তবে কোন অঙ্গ-সংগঠন জেলা কমিটি এবং প্রাথমিক কমিটি শুধুমাত্র পূর্ণ সদস্যদের মধ্য হইতে দলীয় কাউন্সিলার নির্বাচন করিবে। (৩) কাউন্সিল ইহার মেয়াদকালে অন্ততঃ দুইটি অধিবেশনে মিলিত হইবে। চেয়ারম্যান যে ফোন সময়ে কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করিতে পারিবেন। (৪)কাউন্সিল এর দায়িত্ব ও অধিকারঃ (ক) দলের মূলনীতি, কার্যক্রম, কর্মপন্থা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা ও চড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দলীয় কাউন্সিলের উপর ন্যস্ত থাকিবে। (খ) প্রয়োজনবোধে কাউন্সিল দলের কর্মী ও গঠনতন্ত্র সংশোধন করিতে পারিবে। (গ) কাউন্সিল কাৰ্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক উপস্থাপিত রাজনৈতিক, সাংগঠনিক এবং অন্যান্য রিপোর্ট, প্রস্তাব প্রভৃতির উপর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে। কাউন্সিলের অধিবেশনে যে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক মূল দলিল কার্যনির্বাহী কমিটি উপস্থাপন করিবে উহা কাউন্সিল অধিবেশনের অন্ততঃ দুই মাস পূর্বে সমগ্র দলের মধ্যে প্রচার করিতে হইবে। এই সম্পর্কে দলের প্রতিটি স্তরে আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হইবে। (খ) কার্যনির্বাহী কমিটি উহার কার্যাবলীর একটি রিপোর্ট কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থাপন করিবে। (ঙ) প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর কাউন্সিল কর্তৃক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচিত হইবেন। কেন্দ্রীয় কমিটির এক-তৃতীয়াংশ সদস্য চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত হইবেন। কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচনের পূর্বে উহার মোট সদস্য সংখ্যা কার্যনির্বাহী কমিটি নির্ধারণ করিবে। তয়োদশ ধারা জেলা কমিটি (১) জেলা কমিটি এই সম্মেলনের মধ্যবর্তীকালে জেলায় দলের কাজকর্ম পরিচালনা করিবে। এই কমিটির কাজকর্মের জন্য জেলা কাউন্সিলেম নিকট দায়ী থাকিবে। ২) একজন সম্পাদক, প্রয়োজনবোধে অনুর্ধ্ব পাঁচজন যুগ্ম-সম্পাদক এবং কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক সদস্য লইয়া জেলা কমিটি গঠিত হইবে। সম্পাদক জেলা কমিটির প্রধান হিসাবে কাজ করিবেন। (৩) জেলা কমিটির সভায় উহার তহবিলের হিসাব-নিকাশ পেশ করিতে হইবে। (৪) জেলা কমিটি নিম্নোক্ত দায়িত্ব পালন করিবেঃ (ক) নিম্নতম কমিটি ও শাখাসমূহের কাজ পরিদর্শন ও উহাদেব কাজে সাহায্যের ব্যবস্থা করা (খ)জেলার বিভিন্ন গণপ্রতিষ্ঠানের কার্য পরিচালনা, (গ) দলের পত্রিকা ও সাহিত্য প্রচার এবং উহায় হিসাবরক্ষণ, (ঘ) দলের তহবিল রক্ষণাবেক্ষণ, (ঙ) দলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান। (৫) জেলা কমিটি কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী কমিটির নিকট কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট পেশ করিবে। (৬) জেলা কমিটি কোন সদস্যের আসন শূন্য হইলে তৎস্থলে কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে একজন সদস্য নির্বাচন করিতে পারিবে। (৭) জেলাস্থ সকল অঙ্গ-সংগঠনগুলির কমিটি দলীয় জেলা কমিটির পূর্ণ নিয়মাবলী থাকিবে। (৮) প্রতি মাসে অন্ততঃ একবার জেলা কমিটির সভা আহূত হইবে। চতুদর্শ ধারা জেলা কাউন্সিল (১) জেলা কাউন্সিল জেলায় দলের সর্বোচ্চ সংস্থা। জেলা কমিটি প্রতিটি অন্তর জেলা কাউন্সিল অধিবেশনের ব্যবস্থা করিবে। এই কাউন্সিলের প্রতিনিধিত্ব নানা বিষয়ে নিয়মাবলী কার্যনির্বাহী কমিটি দ্বারা স্থিরীকৃত হইবে। দলীয় সদস্য জেলা কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা কার্যনির্বাহী কমিটি নির্ধারণ করিবে।কার্য নির্বাহীর অনুমোদনক্রমে জেলার বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারে। পূর্বতন প্রতিনিধিরাই বিশেষ অধিবেশনের প্রতিনিধি নির্বাচিত হইবেন। (২) জেলা কাউন্সিলের দায়িত্ব ও অধিকারঃ (ক) জেলা কমিটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্ট আলোচনা করা এবং সেই সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, (খ) কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখিয়া দলের ও জনসাধারণের দলীয় কার্যধারা নির্ধারণ করা, (গ) দলীয় কাউন্সিল ও বিশেষ সম্মেলনে প্রতিনিধি নির্বাচন করা, (ঘ) কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক প্রচারিত দলিল ও প্রস্তাবাদি সম্বন্ধে আলোচনা ও মত গ্রহণ করা, (ঙ) জেলা কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা করা, (চ) জেলা কাউন্সিল অধিবেশন পরিচালনার জন্য সভাপতিমণ্ডলী নির্বাচন করা।

পঞ্চদশ ধারা

 থানা/আঞ্চলিক কমিটি (১) দলের থানা কমিটি থানায় দলের সর্বোচ্চ সংস্থা। প্রতি মাসে অন্তন একবার কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হইবে। এই কমিটি জেলা কাউন্সিলের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। (২) থানা কমিটির সদস্য সংখ্যা কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত হইবে। (৩) একজন সম্পাদক, প্রয়োজনবোধে অনুর্ধ্ব তিনজন যুগ্ম-সম্পাদক এবং কার্যকর কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক সদস্য লইয়া থানা কমিটি গঠিত হইবে। (৪) প্রতি মাসে অন্ততঃ একবার থানা কমিটির সভা আহত হইবে। (৫) জেলা কমিটি কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে আঞ্চলিক কমিটি নির্ধারণ করিতে পারিবে। সাধারণভাবে প্রশাসনিক বিভাগ অনুসরণ করিয়া এই সীমানা নিয়ন্ত্রণ করা হইবে। জেলা কমিটি থানা/আঞ্চলিক কমিটির কাজের তদারক করিবে।তবে উল্লেখ যে কার্যনির্বাহী কমিটি নিম্নস্তরের কমিটিগুলো কাঠামো নির্ধারন করিয়া দিবে।

ষোড়শ ধারা

 ইউনিয়ন/প্রাথমিক কমিটি (১) বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে দলের প্রাথমিক কমিটি গঠিত হইবে। (২) (ক) দেশের কলকারখানা, শিল্প-সংস্থা, কৃষি-প্রতিষ্ঠান ও খামার সমবায় সহ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় সকল সদস্য সমবেতভাবে বা পৃথক পৃথকভাবেও প্রাথমিক কমিটি গঠিত হইতে পারে। (খ) চেয়ারম্যানের অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন সরকারী বা আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেশন, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা এবং সামরিক ও বেসামরিক সমূহে দলের প্রাথমিক কমিটি গঠিত হইতে পারে। কার্যনির্বাহী এই প্রাথমিক কমিটির সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করিয়া দিব (গ) দলের অন্তত পাঁচজন পূর্ণ সদস্য লইয়া প্রাথমিক কমিটি গঠিত হইবে। (ঘ) পরবর্তী (খ) দফায় বর্ণিত যে সকল সরকারী, আধা-সরকারী প্রভৃতি বাহিনীতে প্রাথমিক কমিটি গঠিত হইবে সেই সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ও প্রশাসনে যাহাতে দলের নীতি ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে কমিটির সক্রিয় প্রভাব প্রতিফলিত হয় এবং কর্মে সততা ও বিশ্বস্ততা,আইনানুবর্তিতা, দক্ষতা, নিয়মানুবর্তিতা ও উদ্যমশীলতার সঞ্চার হয় এবং আমলাতান্ত্রিক ভাবের অবসান ঘটে সেই দিকে কমিটিকে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করিতে হইবে। পূর্বোল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মধারায় কোথায়ও কোন দোষত্রুটি দেখা গেলে এবং ছোট বড় কোন কর্মচারীর কাজে কোনরপ গলদ ওশৈথিল্য পরিলক্ষিত হইলে সংশ্লিষ্ট দলীয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এবং প্রয়োজনবোধে চেয়ারম্যান কে সহ কমিটি তাহা জানাইবে। (৩)এলাকার জনগণের কিংবা প্রতিষ্ঠানের সদস্যবর্গের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ রক্ষা করা,জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধনে সদা তৎপর থাকা, এলাকার রাজনৈতিক কার্যকলাপ সংঘটিত হলে দলের গণ-ভিত্তি দৃঢ় করা, সংশ্লিষ্ট কর্মকেন্দ্রে দলের কাজে সংহত সুশৃংখল শান্তিপূর্ণ ও শক্তি বৃদ্ধি করা এবং দলের নীতি কার্যকর করা প্রতিটি প্রাথমিক কমিটির দায়িত্ব। (৪) দলের কাজের সুষ্ঠু অগ্রগতি ও সুবিধা বিধানের জন্য প্রাথমিক কমিটি কর্তৃক সদস্যদের কয়েকটি শাখায় ভাগ করা চলিবে। (৫) কমিটি শাখার সদস্যদের মধ্যে কাজ বণ্টন করিবে এবং কাজের তদারক করিবে।শাখাগুলির মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনার ব্যবস্থাও করা যাইতে পারে। (৬)প্রাথমিক কমিটির সাধারণ সভায় ইহার সম্পাদক এবং একজন সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত হইবে।প্রাথমিক কমিটির সদস্য সংখ্যা কুড়িজনে উর্ধ্বে হইলে একটি কার্যকরী কমিটি নির্বাচন করিতে হইবে এবং এই ব্যাপারে জেলা কমিটির নির্দেশানুসারে অগ্রসর হইতে হইবে। (৭)প্রতি মাসে অন্তত একবার প্রাথমিক কমিটির সাধারণ সভা বসিবে। এই সভায় সম্পাদক সকলের বিবেচনার জন্য একটি কাজের রিপোর্ট এবং প্রস্তাবাদি উপস্থাপন করিবেন। (৮) প্রাথমিক কমিটির সাধারণ সভা উর্ধ্বতন দলীয় সংগঠনের সম্মেলনের প্রতিনিধি নির্বাচন করিবে। (৯)পূর্ববর্তী (২) (খ) উপ-ধারায় বর্ণিত সরকারী বা আধা-সরকারী দফতর বা প্রতিষ্ঠানে এবং সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীতে গঠিত প্রাথমিক কমিটি সরাসরি কার্যনির্বাহী কমিটির তত্বাবধানে কাজ করিবে। (১০) প্রয়োজনবোধে প্রাথমিক কমিটির কোন সদস্য অন্য কোন কমিটির কাজের সহিত সংযুক্ত হইতে পারেন, তবে সেখানে তাঁহার ভোট দানের অধিকার থাকিবে না। (১১) প্রাথমিক কমিটি নিম্মরূপ কর্তব্য পালন করিবে। (ক) উর্ধ্বতন কমিটির নির্দেশ কার্যকর করা, (খ) দলের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্তগুলির পক্ষে দফতর, এলাকা, সংস্থাইত্যাদিতে জনমত সৃষ্টি করা, (গ) নিজস্ব এলাকার জনকল্যাণকর কাজে নিয়োজিত হওয়া, (ঘ) দলের পত্রিকা, সাহিত্য প্রকাশনা প্রভৃতি প্রচার ও বিক্রয় করা, (ঙ) স্থানীয় কর্মীদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, (চ) প্রাথমিক কমিটির সদস্যবৃন্দ উৎপাদনমূলক ও জাতিগঠনমূলক কার্যে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করিবেন। সপ্তদশ ধারা জাতীয় দলের বিশেষ সম্মেলন (১) জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ কোন জাতীয় সমস্যা আলোচনাকালে যে-কোন সময়ে চেয়ারম্যান দলের বিশেষ সম্মেলন আহ্বান করিতে পারেন। (২) চেয়ারম্যান, কাউন্সিলার এবং অন্যান্য ডেলিগেটগণের সমাবেশে বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইবে। তবে বিশেষ সম্মেলনে মোট যোগদানকার ডেলিগেটের সংখ্যা কাউন্সিলের মোট সদস্য সংখ্যার দ্বিগণের অধিক হইতে পারিবে না এবং প্রত্যেক জেলা, অঞ্চল, সংগঠন ও কমিটি হইতে প্রেরিত ডেলিগেটের সংখ্যা উক্ত জেলা, অঞ্চল, সংগঠন, অঙ্গ-সংগঠন এবং সংস্থা হইতে নির্বাচিত কাউন্সিল সদস্য সংখ্যার অধিক হইবে না। কার্যনির্বাহী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্য এবং সকল কাউন্সিলার দলের বিশেষ সম্মেলনে পদাধিকার বলে ডেলিগেট হইবেন। (৩) বিশেষ সম্মেলনের স্থান তারিখ, আলোচ্য কর্মসূচী ও ডেলিগেট নির্বাচন-পদ্ধতি কার্যনির্বাহী কমিটি স্থির করিবেন, তবে পূর্বান্হেই এই সকল বিষয়ে দলের চেয়ারম্যানের অনুমতি গ্রহণ করিতে হইবে। অষ্টাদশ ধারা কৃষক, শ্রমিক, মহিলা, যুব ও ছাত্র সংগঠন (১) জাতীয় দলে নিম্নলিখিত অঙ্গ-সংগঠনগুলি থাকিবে এবং উহারা দলের আদর্শ ও নীতি – মানিয়া চলিবেঃ (ক) জাতীয় কৃষক লীগ , (খ) জাতীয় শ্রমিক লীগ, (গ) জাতীয় মহিলা লীগ , (ঘ) জাতীয় যুব লীগ , এবং (ঙ) জাতীয় ছাত্র লীগ। (২) প্রয়োজনবোধে চেয়ারম্যান অন্যান্য ক্ষেত্রেও অঙ্গ-সংগঠন, সংস্থা বা উপ-কমিটি গঠন করিতে পারেন। (৩) এই অংশ-সংগঠনগুলি নির্বাহী কমিটির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে কার্য সম্পাদন করিতে এই গঠনতন্ত্র কার্যকরী হওয়ার অব্যবহিত পর কার্যনির্বাহী কমিটি (১) উপধারায় উল্লেখিত অঙ্গ-সংগঠনগুলির গঠন, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করিবে। ঊনবিংশতি ধারা নিয়মাবলী প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কমিশন (১) প্রয়োজনবোধে দলের সর্বতোমুখী কার্যধারা নিয়ন্ত্রিত করিবার জন্য এই গঠনতন্ত্রের কাঠামোর মধ্যে কার্যনির্বাহী কমিটি প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী প্রণয়ন করিতে পারিবে। (২) কার্যনির্বাহী কমিটি দলের সমগ্র কার্যাবলীর সুষ্ঠু, সমন্বিত, সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত পরিচালনা নিশ্চিত করিবার জন্য আবশ্যক মনে করিলে নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন করিতে পারিবে। বিংশতি ধারা দলীয় শৃঙ্খলা ১) দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য চেয়ারম্যান একটি উপ-কমিটি নিয়োগ করিবেন। কার্যনির্বাহী বা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এই উপ-কমিটির সদস্য হইবেন। (২) কোন সদস্য দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য, কর্মসূচী, গঠনতন্ত্র, নিয়মাবলী ও দলের স্বার্থের পরিপন্থী কার্যকলাপে অংশগ্রহন করিলে অর্থাৎ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিলে শৃঙ্খলা উপ-কমিটি বিরুদ্ধে তদন্ত করিয়া শাস্তিমুলক ব্যবস্থাদি গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যানের নিকট সুপারিশ করিবে। (৩)শৃঙ্খলা সম্পর্কিত উপ-কমিটি কোন সদস্যের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের ও অসদাচরণের অভিযোগ সরাসরি গ্রহণ করিতে পারিবে। (৪) চেয়ারম্যানের নিকট যে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপীল করা যাইবে। (৫)শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত সদস্যকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অন্ততঃ পনরো দিন মেয়াদী কারণ দর্শাইবার লিখিত নোটিশ দিতে হইবে। (৬) কোন সদস্যের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি প্রদানের জন্য দলের নিন্মতন সে সংস্থা লিখিত অনুরোধপত্র জেলা কমিটির নিকট পাঠাইবে। জেলা কমিটি এই সম্পর্কে সিধান্ত গ্রহণ করিয়া উক্ত বিষয় বিবেচনাপূর্বক চড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য শৃঙ্খলা উপ-কমিটির নিকট পাঠাইবে। তম্ব্যতীত কোন প্রতিষ্ঠানের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আমি শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা বোধ করিলে জেলা কমিটি স্বয়ং সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করিয়া বিষয়টি বিবেচনাপর্বক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য শৃঙ্খলা উপ-কমিটির নিকট প্রেরণ করিবে। (৭) শৃঙ্খলাভঙ্গমূলক কোন কাজ করিলে দলের কোন সংস্থা বা সংগঠন উহার অন্তর্ভুক্ত ও অধীনস্থ সদস্যকে সতর্ক করা, নিন্দা করা, এমনকি দল হইতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পাৰিলে। এই ব্যাপারে উর্ধ্বতন সংস্থা বা কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে। তবে অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকিবে। অনুরূপ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা উপ-কমিটির নিকট আপীল করা যাইবে। (৮) গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গ , দলের নীতি ও সিদ্ধান্ত না মানা, দলের পক্ষে ক্ষতিকর কার্যকলাপে নিযুক্ত থাকা প্রভৃতি অপরাধে কার্যনির্বাহী কমিটি উহার নিম্নতরের যে কোন কমিটি বাতিল করিতে পারে। কোন কমিটি এইভাবে বাতিল হইলে কার্যনির্বাহী কমিটি নতুন নির্বাচন পরিচালনা করিতে বা নতুন কমিটি মনোনীত করিতে পারিবে। (৯) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের প্রতিকার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা চেয়ারম্যানের উপর ন্যস্ত থাকিবে। (১০) যে কোন শাস্তি প্রদান ও মওকুফ করিবার ক্ষমতা চেয়ারম্যানের থাকিবে। একবিংশতি ধারা দলের তহবিল (১) (ক) সদস্যগণের অন্তর্ভুক্তিকালীন দেয় চাঁদা ও অনুদান। (খ) প্রার্থী-সদস্যদের দেয় চাঁদা। (গ) সংসদে নির্বাচিত সদস্যগণের চাঁদা : (ঘ) দলীয় পত্রিকা ও সাহিত্য প্রকাশনা বা পুস্তিকাদি বিক্রয়লদ্ধ অর্থ ; (ঙ) এককালীন দান বা সাহায্য ; (চ) সরকারী অনুদান বা বাজেট বরাদ্দ। (২) দলের তহবিল পরিচালনার দায়িত্ব সেক্রেটারী জেনারেলের উপর ন্যস্ত থাকিবে। এই কার্যে তাহাকে সহায়তাদানের জন্য সরকারী অর্থ উপদেষ্টা ও হিসাবরক্ষক নিয়োগ করা যাইবে। (৩) দলের ব্যাংক একাউন্ট সেক্রেটারী জেনারেল এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তা যৌথভাবে পরিচালনা করিবেন। দ্বাবিংশতি ধারা গঠনতন্ত্রের সংশোধন ও ব্যাখ্যা (১) দলের কাউন্সিল কর্তৃক গঠনতন্ত্রের সংশোধন, পরিবহন ও পরিবর্ধন সাধন করা। ধাইবে। আবশ্যক মনে করিলে পরবতী কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে চেয়ারম্যান গঠন প্রথম ধারা ব্যতীত অন্যান্য ধারার সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করিতে পারিবেন।। (২) চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ব্যাখ্যাদান করিবেন এবং গঠনতন্তে কোন বিষয়ের সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকিলে সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারিবেন। চয়োবিংশ ধারা অস্থায়ী বিধানাবলী (১) রাষ্ট্রপতির নিম্নবর্ণিত আদেশাবলীর সহিত সামঞ্জস্য রক্ষা করিয়াই কেন্দ্রীয় এবং কার্যনির্বাহী কমিটি নিজ নিজ কার্য পরিচালনা করিবেঃ (ক) এস, আর, ও নং ৮৮-এল-২৪শে ফেরুয়ারী, ১৯৭৫; (খ) এস, আর, ও নং ৮৯-এল-২৪শে ফেরুয়ারী, ১৯৭৫; (গ) এস, আর, ও নং ৯০-এল-২৪শে ফেরুয়ারী, ১৯৭৫; (ঘ) এস, আর, ও নং ৯১-এল-২৪শে ফেরুয়ারী, ১৯৭৫; (ঙ) এস, আর, ও নং ৯২-এল-২৪শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৫; (চ), এস, আর, ও নং ৯৩-এল-২৪শে ফেরী , ১৯৭৫। (২) জাতীয় দল সম্পর্কিত ইতিমধ্যে গৃহতি সমুদয় ব্যবস্থাদি এবং জারীকৃত অন্যান্য আদেশাবলী এই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গৃহতি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে। চতুবিংশতি ধারা

 দলীয় কাউন্সিল

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ছয় পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সমন্বয়ে গঠিত হবে। কাউন্সিলের সদস্যদের কাউন্সিলের বলা হবে। তারা পাঁচ বছর মেয়েদের জন্য বহাল থাকবেন। কাউন্সিল তার মেয়াদকালে অন্ততঃ দুটি অধিবেশনে মিলিত হবে। চেয়ারম্যান যে কোন সময়ে কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে পারবেন । দলের মূলনীতি, কার্যকম, কর্মপথ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা ও চূড়ান্ত সিধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কাউন্সিলের উপর ন্যস্ত থাকবে। প্রয়োজনবোধে দলের কর্মী ও গঠনতন্ত্র কাউন্সিল সংশোধন করতে পারবে। এছাড়া কাউন্সিলের রয়েছে এ অন্যান্য দায়িত্ব ও অধিকার। যাদেরকে নিয়ে কাউন্সিল গঠিত হবে তারা হলেনঃ ১। কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্য ২। কেদীয় কমিটির সকল সদস্য ৩। কার্যনির্বাহী কমিটির নির্ধারিত কোট অনুসারে জেলা কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ, ৪। কার্যনির্বাহী কমিটির নির্ধারিত কোটা অনুসারে অঙ্গ-সংগঠন গুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ ৫। কার্যনির্বাহী কমিটির নির্ধারিত কোটা অনুসারে ষোড়শ (দুই) (খ) ধারায় বর্ণিত প্রাথমিক কমিটিসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং ৬। চেয়ারম্যানের মনোনীত অনুর্ধ দলীয় সদস্য। বিশেষ সম্মেলন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ জাতীর সমস্যা অলোচনার জন্যে যে কোন সময় দলের বিশেষ সম্মেলন ডাকতে পারেন। বিশেষ সম্মেলনের স্থান, তারিখআলোচ্য কর্মসূচী ও ডেলিগেট নির্বাচন পদ্ধতি কার্যনির্বাহী কমিটি স্থির করবেন। তবে এসব বিষয়ে আগেই দলের চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে হবে ।

 প্রতীক ও পতাকা

 বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের প্রজ্ঞাক হবে নৌকা। দলের পতাকা হবে সবুজ ও লাল রঙের সঙ্গে চার তারকা। পতাকার দুইতৃতীয়াংশ হলে সবুজ এবং এক তৃতীয়াংশ লাল । সবুজের উপর খচিত থাকবে চারটি লাল বর্ণের তারকা।

বিবিধ

(১) চেয়ারম্যান জাতীয় দলের কার্যনির্বাহী ও কেন্দ্র কমেটির সভায় এবং কাউন্সিল অধিবেশনে ও বিশেষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করিবেন। কোন অধিবেশন বা সভায় তিনি উপস্থিত থাকিতে অসমর্থ হইলে উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করিবার জন্য নির্বাহী কমিটির সদস্যক্ষের ও মধ্য হইতে যে কোন সদস্যকে দায়িত্ব দিতে পারেন। (২) দলীয় কোন সংগঠন, কমিটি কিংবা সংস্থার কোন সদস্যপদ অন্য হইলে পথ তৎস্থলে চেয়ারম্যান নতুন সদস্য নিয়োগ করিতে পারিবেন। (৩) জেলা, থানা, আঞ্চলিক, ইউনিয়ন এবং প্রাথমিক কমিটিসমূহের সাংগঠনিক কাঠামো সংশ্লিষ্ট সংস্থার সদস্যসংখ্যার অনুপাতে এবং অনান্য অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যনির্বাহী কমিটি কতৃক নির্ধারিত হইবে। (৪) অষ্টাদশ ধারায় বর্ণিত অঙ্গ-সংগঠন, সংস্থা এ কমিটি সর্বতোভাবে, সর্বস্তরে এবং সববিষয়ে জাতীয় দলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃত্বসম্পন্ন কমিটির পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রন ও তত্ত্বাবধানে কার্য সম্পাদন করিবে।

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1975.06.13-bichitra-1.pdf” title=”1975.06.13 bichitra”]