শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২১৬। সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আক্রমণাত্মক তৎপরতা সম্পর্কে বিতর্ক | ভারতের লোকসভার কার্যবিবরণী | ২৪ মে, ১৯৭১ |
মৌখিক প্রশ্ন-উত্তর
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ভারী-সৈন্য চলাফেরা এবং মোতায়েন প্রসঙ্গে।
১. শ্রী আর. এস. পান্ডেঃ
শ্রী এস. এম. কৃষ্ণাঃ
রক্ষামন্ত্রী কি উল্লেখ করবেনঃ
(ক) সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের বিভিন্ন সেক্টরে পাকিস্তানি বাহিনীর ভারী-সৈন্য চলাফেরা ও মোতায়েন করা হয়েছে কিনা;
(খ) পাকিস্তানি বাহিনী উস্কানিমূলক কর্ম চরিতার্থ করতে এবং ভারতীয় অঞ্চলের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে কিনা; এবং
(গ) যদি তাই হয়ে থাকে, তার বিবরণ এবং সীমান্তে পাকিস্তান দ্বারা সৃষ্ট অবস্থা মোকাবেলা করতে সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা?
রক্ষামন্ত্রী (শ্রী জগজীবন রাম): (ক) হইতে (গ): কোন অস্বাভাবিক চলাফেরা বা পাকিস্তানি সেনার মোতায়েন ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পরিলক্ষিত হয়নি। তবে পূর্ববাংলার সীমান্ত সংলগ্ন কিছু সেক্টর বরাবর পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের দ্বারা যেকোন ভাবেই হউক, কিছু অস্বাভাবিক কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২৫শে মার্চ হতে ৭টি ভিন্ন সময়ে পূর্ব সেক্টরের ভারতীয় অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনী অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। সেখানে সীমান্ত এলাকাজুড়ে গুলীবর্ষণের ৪৩টি ঘটনা এবং ৩টি অপহরণের ঘটনা হয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানি বিমান দ্বারা ১৬বার আকাশ-সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা হয়েছে। এইসব ঘটনায় পাকিস্তান সরকারের কাছে ১৯টি প্রতিবাদ দায়ের করা হয়েছ। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে সীমান্তে সর্বদা সতর্কটহল বজায় রাখার এবং পাকিস্তানি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে।
শ্রী রাম সহায় পান্ডেঃ মাননীয় স্পীকার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহাশয় তাঁর জবাবে পাকিস্তানের দ্বারা সংঘঠিত আক্রমনের কথা উল্লেখ করেছেন। আমি জানতে চাই, পাকিস্তানের নিয়মিত সেনাবাহিনী আমাদের পূর্বক্ষেত্রে সাতবার আক্রমণ চালিয়েছে আমরা তাঁর কি জবাব দিয়েছি? এটা কি আন্তর্জাতিক রীতিনীতির বরখেলার নয়? এটা কি ভারতীয় সার্বভৌম সত্তার অবমাননা নয়? এসব যদি সত্যি হয় তাহলে আমরা সামরিক ব্যবস্থা কি নিয়েছি? আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কি অভিযোগ করেছহি এবং আমি এও জানতে চাই যদি এ রকম আক্রমন অব্যাহত থাকে তবে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) পরিস্থিতির মুকাবেলা করতে সক্ষম হবে কি? যদি নাহয় তাহলে…পাকিস্তানের নিয়মিত বাহিনীর বিপরীতে আমরা নিজেদের নিয়মিত বাহিনী সমাবেশ করব না? না করলে তা কি কারণে?
শ্রী জগজীবন রামঃ সদস্য মহোদয়ের প্রশ্নের প্রথমাংশের উত্তর মূল জবাবের মধ্যেই সন্নিহিত রয়েছে। একথা আমি অবশ্যই বলব যে, আমাদের পূর্ব সীমান্তে যা কিছু ঘটছে তাকে পূর্ব বাংলা কিংবা বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে চাই, তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আমরা ওই প্রশ্নকে দেখতে পারিনা। বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের স্বাধীনতার জন্য পণ করেছে সংসদ তা জ্ঞাত আছে। এ কথাও সংসদের জানা আছে যে, যখন সেখানকার জনগণ নিজেদের সংকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হল তখন পাকিস্তানী হামলা চলল এবং সেখানে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল, ইস্ত বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরোধীতা করল, মোকাবেলা করল, সংঘর্ষ হলো, যুদ্ধ হলো। এ কথাও সত্যি যে পাকিস্তানী শক্তি বহুদিন যাবত এদেরকে দাবিয়ে রাখার ফলে এরা সফল হতে পারেনি। তারা কিছুটা পিছিয়ে পড়ে এবং সৈন্যদের দ্বারা যখন তাদের উপর বর্বরতাপূর্ণ হামলা হল তখন আমাদের দেশে আরও শরনার্থী আশ্রয় নিল। এরূপ অবস্থাতেও তাদের ওপর গুলি চলল। কিছু লোক পালিয়ে এসে পড়ল এখানে। আমি বলেছি আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী এর প্রতিবাদ পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছে। সংসদকে আমি প্রত্যায়িত করতে চাই সীমান্তে আমাদের যে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী রয়েছে তারা আমাদের সীমান্ত রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত এবং যখনই প্রয়োজন হবে তারা অনুপ্রবেশ রুখবার জন্য পদক্ষেপ নেবে।
শ্রী রাম সহায় পান্ডেঃ আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মহাশয়ের কাছের জানতে চাই, আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিধান সভায় যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তা তাঁর দৃষ্টি কি-না, বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, করিমগঞ্জে সেক্টরে পাকিস্তানী সৈন্যের বিরাট সমাবেশ হচ্ছে। সৈন্য সমাবেশের ফলে সেখানে যে বিপদের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে সেদিকেও তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন। এসব যদি সত্য হয় তবে ওই প্রশ্নই আমি দ্বিতীয়বার উচ্চারন করতে চাই যে রক্ষী বাহিনীর স্থলে আপনি কি নিয়মিত বাহিনী পাঠানোর ব্যবস্থা নেবেন?
শ্রী জগজীবন রামঃ আমি বলেছি গত পরশু আমি নিজে করিমগঞ্জে ছিলাম সেখানে আগত শরনার্থীদের অবস্থা দেখবার জন্য আমি সেখানে গিয়েছিলাম। …পাকিস্তান বাহিনী সীমান্ত ফাঁড়িতে কিছু সৈন্য রাখছে। সীমান্ত ফাঁড়িতে সৈন্য রাখতে হলে অল্প সৈন্য রাখা যায় না। কমপক্ষে হলেও তাদেরকে এক কোম্পানী কিংবা তাঁর কাছাকছি সংখ্যায় রাখতে হবে কেননা, আগাগোড়াই তাদের সামনে এই বিপদ লেগে রয়েছে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক লোকেরা তাদের প্রতিরোধ করতে থাকবে। এজন্য পাকিস্তান সীমান্ত ফাঁড়িতে সৈন্য রাখতে গেলেই পর্যাপ্ত সংখ্যায় রাখে। তার সার্বক্ষনিক আশঙ্কা হচ্ছে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য অকুতোভয় তারা চুপ মেরে বসে থাকবেনা। আমি বলেছি, আমাদের সীমান্তের অপর দিকের কয়েকটি বিরোধী দেশের সৈন্যদের তৎপরতা চলছে সেদিকে সর্বক্ষন আমার দৃষ্টি রয়েছে আর আমাদের সীমান্তের এদিকে আমি জরুরী ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শ্রী এস এম কৃষ্ণঃ স্যার, মাননীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অসন্তোষ জানিয়ে বলেন যে, সীমান্তের ওপর ঘটে চলা বিপক্ষীয় এসব অত্যুত্তেজিত কার্যকলাপগুলো আমাদের একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। আমি মাননীয় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইছি, সীমান্তের দায়িত্বে নিয়োজিত পাকিস্তানি সৈন্যরা নিয়মিত পাক-সেনা কর্তৃক প্রতিস্থাপিত হয়েছে এমন কোন কিছু মন্ত্রণালয়ের নজরে পরেছে কিনা।
দ্বিতীয়ত, পরিখা খনন এবং বাংকার নির্মাণ করে পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের উপর একটি যুদ্ধাবস্থার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এবং তিনি আরো যোগ করেন, সামরিক আইন প্রয়োগের সাম্প্রতিক ঘোষণা, সীমান্তের পাঁচ মাইল ব্যাপী এলাকাজুড়ে রাতে কারফিউ জারী করা, বেসামরিক এলাকাবাসীদের খালি করতে বাধ্য করা, যাতে সেনা-সদস্যরা ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারে। সুতরাং, এই সব কার্যক্রম পরিলক্ষে, আমি দেশের মাননীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী থেকে একটি নিশ্চয়তা চাই, যে সীমান্তের পর্যাপ্ত রূপে যত্ন নেওয়া হবে এবং শত্রু পক্ষের এই সব উস্কানিমূলক কার্যকলাপের বিপরীতে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর তরফ হতে যথোপযুক্ত প্রতিউত্তর দেয়া হবে।
শ্রী জগজীবন রামঃ আমার নতুন কিছু যোগ করে বলার নেই। পাকিস্তানের পশ্চিম সেক্টর প্রসঙ্গে, আমি আগেই বলেছি যে, সেখানে কোনদিকে অস্বাভাবিক সৈন্য সমাগম হয়নি। যখন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সীমান্তের কাছাকাছি পোস্ট করা হয়, তখন সেখানে স্বাভাবিক নিয়মেই নির্দিষ্ট আনাগোনা হয়; সেখানে সীমান্তের পার্শ্বে তাদের নির্দিষ্ট বাংকার বা রাস্তা মেরামত হয়। এটা নিয়ে তেমন উৎকণ্ঠিত হবার কিছু নেই। পূর্ব সীমান্ত প্রসঙ্গে, সেখানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পূর্ব সীমান্তে সমাবৃত হয়েছে, যেমনটি সংসদ অবগত আছে যে, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ভারত ও পূর্ববাংলার সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত ছিলো।
স্বভাবতই যখন সেখানে স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু হয়, তখন সেই মুক্তিযুদ্ধের অগ্রভাগে ছিলো ইষ্টপাকিস্তান রাইফেলস এবং ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট। স্বাভাবিক ভাবেই, পাকিস্তান কে ইষ্টপাকিস্তান রাইফেলস কে প্রতিস্থাপন করেছে নিয়মিত সেনাবাহিনী দ্বারা। সে তথ্য আমাদের জানা রয়েছে, এবং আমি আগেই বলেছি যে, সেই দেশের সৈন্যদের সীমান্ত জুড়ে তদতিরিক্ত গতিবিধির প্রত্যক্ষ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ সক্ষমতা সৃষ্টি করা হচ্ছে সীমান্তের এপারে।
কিছু সম্মানিত সদস্যগণ উঠে দাঁড়ালে –
জনাব স্পিকারঃ অর্ডার, অর্ডার.
শ্রী কে বালাকৃষ্ণানঃ স্যার, আমি একটা পয়েন্ট অব অর্ডার উত্থাপন করছি। বিশ্বের কোথাও এমন কোন সংসদ কি রয়েছে, যেখানে প্রতিরক্ষার বিষয়াবলী নিয়ে এই রকম আলোচনা করা হয়েছে? (বিরাম)
জনাব স্পিকারঃ আমি অনেক সংসদ দেখেছি; আমি একজন সদস্যকে এই রকম একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে দেখিনি।
ডঃ রনেন সেনঃ স্যার, আমি মাননীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী থেকে জানতে পারে কিনা যে, এটা কি এটা সত্য যে, আমাদের অঞ্চল অবিরত আক্রমণ এবং সীমানা লঙ্ঘন করে ভারত সীমানার ভিতরের স্থান দখল করা হচ্ছে? এটা স্মরণ করা উচিত যে পাকিস্তানী বাহিনী আক্রমণ করে বয়রা এলাকায় ভারতের সীমানার ভিতরে এসে আমার নির্বাচনী আসনের এলাকায় আসে, এবং পাঁচজন লোককে হত্যা করে।
জনাব স্পীকারঃ অর্ডার, অর্ডার।
ডঃ রনেন সেনঃ শুধুমাত্র এক মিনিট। ১৯শে মে, তারা বনগাঁ-পেট্রাপোল এর চেকপোস্ট এলাকায় বোমাবর্ষণ করে, আমি কি এই সব সত্ত্বেও জানতে পারি যে, এইসব ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর প্রতি সরকারের নির্দেশনা কি – এই আক্রমণের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা বা এই আক্রমণ প্রতিহত করা নাকি শুধু নয়াদিল্লি শহর থেকে নোট পাঠানো? আমি মাননীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী থেকে এর উত্তর জানতে চাই।
শ্রী জাগজীবন রামঃ যদি মাননীয় সদস্য মূল উত্তর শুনে থাকেন, তাহলে সেটা তিনি আমার শেষতম বাক্যটিতে পাবেন যেখানে আমি বলেছি যে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে মোকাবেলা করতে নির্দেশাবলী দেয়া আছে। (বিরাম)
শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী………
শ্রী জগজীবন রাম: আমি আমার জবাবে এটাই পড়েছিলাম।
“পাকিস্তানের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশাবলী দেয়া আছে”।
এটা পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে যে, যদি একটিও অনুপ্রবেশ হয়, অনুপ্রবেশকারীদের আমাদের সীমানার বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে। তাহলে সেখানে বিমান অনুপ্রবেশের হয় এবং যদি তারা সাড়া না দেয় এবং ফেরৎ না যায়, তাদের গুলি করে ভূপাতিত করা হবে। যেটা বেশ সুস্পষ্ট।
বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি
৩। শ্রী সারীউ পান্ডেঃ
শ্রী কে লাক্কাপ্পাঃ
শ্রী মুখতিয়ার সিং মালিকঃ
বিদেশমন্ত্রী কি উল্লেখ করবেনঃ
(ক) সরকার বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি দিতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে; এবং
(খ) যদি না হয়ে থাকে, বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে যাওয়া হবে?
বিদেশমন্ত্রী (শ্রী শরণ সিং): (ক) ও (খ). বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের স্বীকৃতি প্রশ্নে ভারত সরকার ক্রমাগত পর্যালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতীয় পূর্ববাংলার সীমান্ত এলাকাজুড়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দ্বারা অনুপ্রবেশ তথা জরুরী জনগুরুত্বসম্পন্ন কাজের কথায় মনোযোগ আকর্ষণ করছি।
শ্রী পি কে দেও (কালাহান্ডি): স্যার, আমি জরুরী জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে গৃহমন্ত্রী মনোযোগ আকর্ষণ করছি এবং আমি অনুরোধ করছি এই ব্যাপারে তিনি একটি বিবৃতি দেবেনঃ
“প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় পূর্ববাংলার সীমান্তবর্তী ভারতীয় অঞ্চলে পাকিস্তানি সৈন্যরা অনুপ্রবেশ করে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সদস্যসহ বেশকিছু নাগরিককে হত্যা করা, বহুসংখ্যক সম্পত্তির ধ্বংস সাধন এবং এই অঞ্চলে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান দ্বারা ভারতীয় আকাশ-সীমা লঙ্ঘণ।”
শ্রী রাম নিবাস মির্ধাঃ জনাব স্পিকার স্যার, এই সংসদ গত অধিবেশনে সর্বসম্মত রেজল্যুশন পাস করে আমাদের জনমানুষের পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি ও সমর্থন প্রকাশ করেছিল। সংসদ গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ববাংলায় ঘটেচলা হৃদয় বিদারক ঘটনা সম্পর্কে অবগত। পাকিস্তানের যুদ্ধ মেশিন তার বোধহীন প্রচারণা জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার জন্য নিরপরাধ নারী, পুরুষ ও শিশুদের পদদলিত করছে। যথাযথভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্মম নিপীড়ন বিশ্বকে মর্মাহত করেছে, যারা জনপ্রিয় এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং আকার দিতে চেষ্টা করছেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার সামরিক সম্প্রসারণের নিমিত্তে ইন্দো পূর্ববাংলার সীমান্তবর্তী ভারতীয় এলাকায় ৭ বার অনুপ্রবেশ ঘটায় এবং ৪৩টি ঘটনায় আমাদের সীমান্তের দিকে গুলীবর্ষণের পুনরারম্ভ করে। সীমান্তে বিএসএফ এর টহলের উপর আক্রমণ হয় এবং যাদের ভেতর ৪ জন সদস্য নিহত হয়, ২১ জন সদস্য বিভিন্নরকম জখম, এবং ৫ জন সদস্য অপহৃত হয়; ১৬ জন সাধারণ মানুষ নিহত এবং ১০৫ জন আহত হয় এই সব ঘটনায়। ভারতীয় এলাকাস্থিত বেশকিছু সংখ্যক কুঁড়েঘর, বসতবাড়ী অগ্নিসংযোগকৃত অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিএসএফ এর ২টা পোষ্ট এবং ১টা রেলস্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যান্য সহায়সম্পত্তি এবং গবাদিপশুও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এমন কি শরণার্থীরা, যাদের পূর্ববাংলায় ঘটে চলা নিপীড়ন চালিয়ে শরণাগত হতে বাধ্য করা হয়েছে, তারাও এর থেকে রেহাই পায়নি। তাদের ভেতর ১৪ জন নিহত হয় এবং ৬৭ জনের মতো আহত হয় এই সব ঘটনায়। কঠোর প্রতিবাদ দায়ের করা হয়েছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে এবং আমাদের ক্ষতিপূরণ পাবার অধিকারের দাবী করা হয়েছে।
৩০-৩-১৯৭১ হতে সেখানে পাকিস্তানি বিমান দ্বারা পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের ভারতীয় আকাশ-সীমা এগারোবার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাতবার প্রতিবাদ ইতিমধ্যেই দায়ের করা হয়েছে এবং অন্যান্য ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ খুব শীঘ্রই দায়ের করা হচ্ছে।
আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী পূর্ববাংলার সঙ্গে ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত হয়ে দৃঢ়চিত্তে ও দৃঢ়তার সঙ্গে সব ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন এবং তাৎক্ষণিক ভাবে অনুপ্রবেশকারীদের বহিষ্কারে নিয়োজিত রয়েছেন। যদিও এ ধরনের অবিরাম আক্রমণাত্মক হামলা ও ভারতীয় অঞ্চলে অনুপ্রবেশ এবং আমাদের বায়ুসীমা লঙ্ঘনের মধ্যে দিয়ে অবশ্যই এই অঞ্চলের শান্তিরক্ষার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। এমনকি আমাদের এলাকাজুড়ে পূর্ববাংলা হতে শরণার্থীদের ক্রমাগত বিরাট আন্তঃপ্রবাহ, যা আমরা মানবিকতার ভিত্তিতে মোকাবেলা করছি, সরাসরিভাবেই যেটা পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানিদের নৃশংসতার ফল, এবং এই অঞ্চলের জায়গা ও নিরাপত্তা বিপন্ন করে পাশাপাশি আমাদের সম্পদ ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভয়ঙ্কর চাপে ফেলে দিয়ে আমাদের জন্যেও গুরুত্বর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এই সকল শরনার্থীদের নিরাপদে তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা সম্ভাব্য সকল পথে হাটছি। এসব গুরুত্বর ঘটনার মুখে পাকিস্তান কতৃক স্বাভাবিক অবস্থার দাবি অর্থহীন।
আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সম্পূর্ণরূপে তাদের দায়িত্বে নিবেদিত এবং সীমান্তজুড়ে সবসময় সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। আমি সংসদকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা সতর্কভাবে এসব উন্নয়ন দেখছি এবং আমাদের দেশ ও আমাদের জনগণের স্বার্থের অখণ্ডতা রক্ষার্থে আমরা যেকোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দ্বিধা করবো না।
শ্রী পি কে দেওঃ স্যার, ৩১শে মার্চে এই সংসদ থেকে স্বীকৃত পাওয়া একটি সর্বসম্মত রেজল্যুশনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় ঘটে যাওয়া গণহত্যা সম্পর্কে আমরা আমাদের যন্ত্রণা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছি, একই সময়ে, পূর্ব বাংলায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগনের প্রকৃত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আমরা বিশ্বের সকল সরকারকে একটা গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি, পঞ্চান্ন দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রসন্নতার এই পঞ্চান্ন দিনে, মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য কিছু মন্ত্রীর সামরিক আস্ফালন ছাড়া তেমন কিছুই করা হয়নি। এই মধ্যবর্তী সময় ভারতীয় কূটনীতির দেউলিয়াত্ব উন্মুক্ত করে দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে এই প্রশ্ন উত্থাপন করার কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে আমরা দেখতে পাই, পাকিস্তান একটি দেশের শোকসঙ্গীত চুরি করেছে এবং চীন, তুরস্ক, ইরান ও সৌদি আরবের সমর্থন সুনিশ্চিত করেছে। এমনকি আমাদের বন্ধু জয়া প্রকাশ নারায়ণকে ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক একটা সাক্ষাৎকার প্রদান করেননি যখন তিনি এই উদ্দেশ্যেই সেখানে সফর করেন।
এই সময়ের মধ্যে তিন মিলিয়নের বেশি উদ্বাস্তু এখানে এসেছে। যা এই দেশের অর্থনীতিতে একটি খুব গুরুত্বর সমস্যা তৈরি করেছে। এটা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং উত্তেজনা প্রণোদিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি পাঠ বেশ বেদনাদায়ক হয়েছিল।
পূর্ববাংলার গণ অভ্যুত্থান দমনে ব্যর্থ হয়ে, এই দুই অঞ্চলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পাকিস্তান এসব বিদ্বেষকে অবলম্বন করে এই দেশে সামরিক মহড়ার উস্কানি দিচ্ছে যেমন ভারতের প্রতি বিদ্বেষ থেকে ব্যর্থ পাকিস্তানের জন্ম। এটা একটা কারণে হতে পারে। আমাদের এই ধরণের সামরিক মহড়ার ফাঁদে পড়া ঠিক হবে না কারণ এখানে আমরা ও এদেশের ক্ষমতা দুটোই শোষিত হবে এবং এই দেশ দ্বিতীয় ভিয়েতনামে পরিণত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসব বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখে, যখন দলত্যাগী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে জন্ম যন্ত্রণা ফেলে উদ্ভূত হয়, আমাদের বিধিসম্মত স্বীকৃতি এর প্রধান অংশ না হতে পারে, কিন্তু এই দেশের নিরাপত্তা বিবেচনায় মাত্র তিনটি বিকল্প পথ আছে যা আমাদের জন্য উন্মুক্ত। প্রথমত, সীমান্ত সংঘর্ষ স্থানীয়করণ এবং কঠোর হস্তে দমন। দ্বিতীয়ত, সরকারকে ব্যাপক সামরিক সংঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত যদি তারা এই অনুপ্রবেশ ও আকাশ-সীমা লঙ্ঘন বন্ধ করতে না পারে। যে সময়ে আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির বিবেচনায় আছি। সেসময়য়ে একই সাজানো ভাববিলাসী বিবৃতি দেওয়া উচিত হবেনা, যেমনটি করেছিলেন পণ্ডিত জওয়াহারলাল নেহেরু সিংহল যাওয়ার সময় যে চীনাদের বাইরে নিক্ষেপ করা হবে। সেই লাঞ্ছনার ক্ষত এখনো আমাদের মুখ থেকে মুছে যায়নি। আমরা সেটার পুনরাবৃত্তি চাই না। তৃতীয় বিকল্প হিসাবে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত করা যেতে পারে যাতে কিছু প্রভাব পড়ে এবং পাকিস্তানের ওপর চাপ দেওয়া যায়। অথবা কেন তারা এই বিষয়টা নিয়ে গড়িমসি করবে, আমি সরকারের কাছ থেকে দ্ব্যর্থহীন উত্তর পেতে চাই। এটা সমগ্র দেশের জন্য উদ্বেগের ব্যাপার।
শ্রী রাম নিয়াজ মির্ধাঃ সরকার এই ব্যাপারে আত্মসন্তুষ্টিতে রয়েছে এটা বলা ঠিক নয়। বিশ্বের সরকারদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব শরণার্থী নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সমস্যার মোকাবেলা করতে সহায়তা পাঠানোর জন্য আপীল জারি করেছে। উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘ কমিশনের প্রতিনিধি একটি অন-স্পট জরিপ করার জন্য এখানে ছিল। সব বিশ্বশক্তির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তাদের জানাচ্ছি। সুতরাং, এই ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রসন্নতার প্রশ্নই ওঠে না।
পাকিস্তান যেকোন রকম উস্কানি প্রদান করতে পারে। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে পারি যে, আমরা কোনো প্রান্ত থেকে আসা কোনো প্রকার উস্কানির কাছে নতিস্বীকার করবো না বরং দৃঢ়চিত্তে ও দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করবো যেমনটা আমরা এখন পর্যন্ত করে আসছি। সেখানে ঘটা এসব অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অনুরূপ ঘটনার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে সীমান্তে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া আছে। যখন কিছু ঘটবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সম্ভাব্য এব্যাপারে যেকেউ নিশ্চিত থাকতে পারে।
শ্রী পি কে দেওঃ এটি খুব অসন্তোষজনক উত্তর।
শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তঃ স্যার, সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন হল, পাকিস্তান সরকারের দ্বারা আমাদের নাগরিকদের হত্যা বা সামরিক বা কূটনৈতিক উস্কানিসহ আমাদের সীমানার মধ্যে অনুপ্রবেশ, আকাশ-সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে ভারত সরকার কি এখনও পারস্পরিক নীতি মেনে চলছে নাকি এই নীতি বাদ দেওয়া হয়েছে? আমি শুধু এটুকুই জানতে চাই।
উদাহরণস্বরূপ, সেখানে স্থল নিয়ম আছে। আমি তাদের যতদূর জানি, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাভাবিক শান্ত সময়ে স্থলনীতি অনুযায়ী উভয় পক্ষের নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে পাঁচ কিমি দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সীমানা অনুযায়ী, পারস্পরিক চুক্তি মাধ্যমে নো ম্যান্স ল্যান্ড থাকবে যেখানে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বে থাকা সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীরা টহল দিতে পারবে। নিয়মিত সেনাবাহিনীরা দুই পাশের আন্তর্জাতিক সীমানার সেই পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে যাওয়ার কথা নয়।
এখন, এই বিষয়ে আমার প্রথম প্রশ্ন, যেমনটা একটু আগে মাননীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বললেন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এসব স্থলনীতি লঙ্ঘন করছে, এবং সীমান্তের অনেক জায়গায় তারা একেবারে আন্তর্জাতিক সীমান্তপ্রদেশে মধ্যে এসে সেখানে তাদের পদ প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ক্ষেত্রে সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নীতি বাতিল করা হয়েছে নাকি তারা একতরফাভাবে এটা মেনে চলার চেষ্টা করছে যখন পাক-বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমান্তে আসছে, সেখানে শুধুমাত্র সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীরা থাকতে পারবে আমাদের এই নীতি বেশকিছু বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে যা ইতোমধ্যে ঘটেছে।
এ ব্যাপারে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, পারস্পরিক নীতির আলোকে আমি জানতে চাই আমাদের ডেপুটি হাই কমিশনারকে ঢাকায় পদে বহাল রাখার কারণ কি? এর কারণ কি? ঢাকায় তিনি গ্রহণযোগ্য নন। তারা তাকে বের করে দিয়েছে। অবশ্যই, আপনি তাকে ফিরিয়ে আনতে পারেন না। সেটা অন্য ব্যাপার। সে সেখানে অন্তরায়িত। আপনি এখনো তাকে ঢাকাতে রেখছেন। যেখানে পশ্চিম বাংলায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার বাংলাদেশের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেছে। সে আর পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেনা। কিন্তু জনাব মাসুদ যাকে ইসলামাবাদ থেকে কলকাতায় জনাব হুসাইন আলির পরিবর্তে নতুন ডেপুটি হাই কমিশনার হিসাবে পাঠানো হয়েছিল, তাকে ভিয়াইপি হিসাবে দেখা হচ্ছে অথচ তাকে কলকাতার কেউ চায়না। তাকে একটা হোটেলে দেখা গেছে যেখানে তিনি অবস্থান করছিলেন। ওয়েটার তাকে পরিবেশন করতে অস্বীকার করে। সে আত্মগোপনকারীর মত কলকাতায় এখান থেকে ওখানে ঘুরতো। কিন্তু এই সরকার তাকে ভিআইপির গুরুত্ব দিচ্ছে। মাসুদ এখানে ভিআইপির মর্যাদা পাচ্ছে। তিনি কলকাতার বিভিন্ন স্থানে একজন আত্মগোপনকারীর মত দৌড়ে থাকতো। কিন্তু তিনি এই সরকার কর্তৃক ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়। মাসুদকে এখানে একটি ভিআইপি হিসেবে গণ্য করা হয়। অথচ এটা পশ্চিমবঙ্গে ইসলামাবাদের ডেপুটি হাইকমিশনার পদ যেখানে আমাদের ঢাকায় আমাদের ডেপুটি হাই কমিশনার কে “আমরা আপনাকে এখানে চাইনা” বলে বের করে দেওয়া হয়েছে যেটা ঢাকায় অবস্থিত। আমরা উনাকে পুনরায় স্মরণ করতে বলছিনা। তাঁর জায়গায় কি আমরা নতুন ডেপুটি হাইকমিশনার নিয়োগ দিচ্ছি? পশ্চিমবঙ্গের পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার তাদের প্রতি তার অ-আনুগত্য ঘোষণা করেছে এবং বাংলাদেশের প্রতি তার আনুগত্য ঘোষণা করেছে। আমি জানি না কি ধরনের নীতি এই সব বিষয়ে অনুসৃত হচ্ছে। সেখানে কি এরূপ কোন পারস্পরিক নীতি আছে? সরকার কেন ঢাকা থেকে ডেপুটি হাইকমিশনার প্রত্যাহারের কথা বলছেনা? আমি জানি না কেন সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী যথাসময়ে কাজ করতে পারেনি। আমি জানিনা তাদের কি ধরণের নির্দেশ দেওয়া ছিল। এটা ঘটেছে বেনাপোল ও পেট্রাপোলে এবং এটা সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তারা বলেন, পাকিস্তানি সেনারা কাস্টমস ফাড়ি সংলগ্ন রেল লাইনের উপরে আসলেও সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীরা তাদের গুলি করেনি।
সুতরাং আমি জানতে চাই, কি ধরণের পারস্পরিক নীতি আপনি অনুসরণ করতে চাচ্ছেন? পাকিস্তান কতৃক এসব স্থলনীতির লঙ্ঘন সম্পর্কে আপনি কি করতে যাচ্ছেন? আপনি কি একতরফা ভাবে এসব নীতি মেনে চলবেন।
শ্রী রাম নিয়াজ মির্ধাঃ স্থলনীতি প্রসঙ্গে বলতে হয়, এসব নিয়ম সীমান্তের উভয় পক্ষের বাহিনীর নিরাপত্তা আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করে। স্থলনীতি নিজেদের বিরোধ মীমাংসা বা দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধ সংঘটিত হলে তা থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করে। এসব স্থলনীতির প্রচুর লঙ্ঘন ইতোমধ্যে হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা বিরোধ মীমাংসা করতে আলোচনা সভা করেছি। কিন্তু, আমি বলতে পারি, আসলে এটা স্থলনীতি লঙ্ঘনের বাইরে অনেক চলে গেছে।
প্রকৃতপক্ষে, এসব স্থলনীতি শুধুমাত্র সীমান্তে স্বাভাবিক টহল দেওয়ার সময়ে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার জন্য। কিন্তু সীমান্তে এখন যে পরিস্থিতি তা এসব স্থলনীতির অধীনে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।
শ্রী ইন্দারাজ আইটি গুপ্তঃ আমরা কি এখনো একতরফাভাবে এসব স্থলনীতি মেনে চলবো। সে হ্যা বা না বলতে পারে। উত্তর যদি “না” হয় তাইলে কেন?
শ্রী রাম নিয়াজ মৃধাঃ আমি এব্যাপারে ইতোমধ্যে বলেছি……
শ্রী রাম নিয়াজ মৃধাঃ একতরফাভাবে নিয়ম লঙ্ঘন বা এসব স্থলনীতি মেনে নেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। স্থলনীতিগুলো স্বাভাবিক সময়ের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ব্যবহার করা হয়। স্বাভাবিক স্থলনিয়ম যেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, পরিস্থিতি তার থেকে অনেক খারাপ। লঙ্ঘন প্রসঙ্গে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া আছে।
বিদেশ মন্ত্রী (শ্রী শরণ সিং): ঢাকায় আমাদের উদ্দেশ্য ও কলকাতায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনের উদ্দেশ্য, আমি আশা করি কোন সন্দেহ নাই যে সংসদ এই দুটো মিশন বন্ধ করার সিন্ধান্ত নিয়েছে, আমরা আমাদের ঢাকা মিশন স্থগিত করেছি। পাকিস্তানকে কলকাতায় তাদের মিশন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বস্তুত, এই কর্মকর্তারা এবং ঢাকা ও কলকাতায় তাদের কর্মীরা তাদের প্রত্যাবর্তন ও নিজ নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার চুক্তির জন্য অপেক্ষা করছে।
আমরা যখন এই সীমান্ত অনুপ্রবেশ ও আমাদের জায়গাতে বায়ু লঙ্ঘনের ব্যাপারে শুনেছি তখন আমাদের চোখ দিয়ে ফোটায় ফোটায় রক্ত ঝরেছিল। আমি নিশ্চিত যে মাননীয় মন্ত্রীর উত্তরে সংসদের কোন সদস্য সন্তুষ্ট হননি। সেখানে প্রায় ৪৩টি অনুপ্রবেশ এবং ১৬টি আকাশ-সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। মাননীয় মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, সব বায়ু লঙ্ঘনের ঘটনা আমাদের বাংলার সীমান্তগুলোতেই ঘটেছে। তিনি আরো বলেন যে, তিনি এই দেশের অখন্ডতা অক্ষত রক্ষার্থে যেকোন প্রকার দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবেন না। কিন্তু আমি বলছি, মাননীয় মন্ত্রী যাই বলে থাকুন না কেন মূল ব্যাপার এটা নয়। আমার পয়েন্ট প্রতিপন্ন করার জন্য, আপনাকে ১২ই এপ্রিলে পাকিস্তান টাইমস প্রকাশিত খবরে মনোযোগ আকর্ষন করছি।
তারা বলছে;
“দুই ভারতীয় বিএসএফ কোম্পানি যশোর জেলায় নিশ্চিহ্ন হয়েছে…
বন্দী সিপাহীরা তথ্য প্রকাশ করেছে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দুটি কোম্পানী যারা পাকিস্তান সীমানার মধ্যে ভাল কার্য্যক্রম চালাচ্ছিল তারা গতকাল যশোর জেলার বেনাপোল এলাকায় যুদ্ধ করার সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী কতৃক নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
শ্রী এস এম ব্যানার্জীঃ এটা মিথ্যা।
শ্রী এন কে সঙ্গীঃ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়ঃ
“…. ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দুই জোয়ানকে জীবিত বন্দী করা হয়েছে।
এবং তারা আটক করা দুইজন সিপাহীর নাম বলেছে মোহন লাল এবং পঞ্চ।
পার্লামেন্টারী এফেয়ার্স এবং শিপিং ও পরিবহন মন্ত্রী (শ্রী রাজ বাহাদুর): বিদেশের প্রতি কারো আস্থা নাই, অন্য দেশে কেউ এটা বিশ্বাস করেনা, কেউ এখানে বিশ্বাস রাখেনা। তাই এটা এখানে উল্লেখের দরকার কি? এটা শুধুমাত্র তাদের অপপ্রচার। এবং মাননীয় মন্ত্রী কেন এসব অপ্প্রচার বিশ্বাস করবে? (বিরাম)
শ্রী এন কে সঙ্গীঃ তারা এসব জনগনের ছবি তাদের পত্রিকায় ছেপেছে। আমি শুধু বলবো, এসব নিয়ে উত্তেজিত হওয়ার প্রয়োজন নাই। এটা শুধুমাত্র তাদের পত্রিকায় যা দেখা যাচ্ছে কিন্তু তারা যা বলেছে আমি এক মুহুর্তের জন্যেও সেটা মেনে নেবোনা। আমরা বড় ধরনের ধোকার শিকার হচ্ছি, তাই আমরা তাদের সেখানে নিয়ে যাবো। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই যেহেতু আমাদের সিমান্তরক্ষী বাহিনী সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তাই মাননীয় মন্ত্রীর কাছ থেকে আমাদের কিছু জবাব পাওয়া উচিত কারণ আমি এই ব্যাপারটা নিয়েই আলোচনা করছি।
শ্রী রাজ বাহাদুরঃ এটা কেন এখানে উল্লেখ করতে হবে?
শ্রী এন কে সঙ্গীঃ আমি জানতে চাই এটা কি সত্য যে, এই মানুষগুলোকে বন্দী করা হয়েছে……
জনাব স্পীকারঃ মাননীয় সদস্য আপনি বসতে পারেন। আমি তাকে অনুমতি দিচ্ছি……
শ্রী কে এন তিওয়ারি (বেতিয়াহ): পুরো ব্যাপারটা মুছে ফেলা দরকার।
শ্রী এন কে সঙ্গীঃ মাননীয় মন্ত্রী যদি চান যে আমি এখান থেকে কিছু না বলি, আমি কিছু মনে করবোনা। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক অনুপ্রবেশের ব্যাপারে আমি মাননীয় মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই কারণ এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এটা এই কারণে নয় যে তারা আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চারজন সদস্যকে হত্যা করেছে…
শ্রী কে এন তিওয়ারিঃ আমি বলবো এই ধরনের বিষয়গুলো নথি থেকে মুছে ফেলা উচিত।
শ্রী এন কে সঙ্গীঃ আমি শুধুমাত্র আমার প্রশ্নে আসছি।
মি স্পীকারঃ এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে মাননীয় সদস্যের আমার অনুমতি নেওয়া উচিত।
শ্রী এন কে সঙ্গীঃ যদি কোন অভিযোগ থাকে, তাহলে আমি এটা নিয়ে কোন কথা বলবো না। কিন্তু মূল বিষয় হলো পাকিস্তানী বাহিনী কতৃক অনুপ্রবেশ এবং আমাদের দেশের আইন লঙ্ঘন নিয়ে সদস্যদের মন অনেক উত্তেজিত, এবং সেখানে এসব নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে মাননীয় মন্ত্রী সেটা স্বীকার করেছেন, অথচ সেটা নিয়ে কোন কার্যকারী পদক্ষেপের ব্যাপারে আমরা কথা বলতে পারছিনা, আমরা তাদের গুলি করে মেরে ফেলতে পারছিনা, আমরা কোন পাকিস্তানী বাহিনীর লোককে ধরতে পারছিনা, যদিও তারা আমাদের এলাকায় প্রবেশ করেছে। এটা সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমরা অবশ্যই তাদের এলাকায় যেতে চাইনা, কিন্তু যখন তারা আমাদের এলাকায় আসছে, আমি মনে করি আমাদের সিমান্তরক্ষী বাহিনীর উচিত তাদের থেকে কৈফিয়ত নেওয়া। এটা এমন একটা বিষয় যেটা জনগনের মনে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। যদি আমরা তাদের থেকে কৈফিয়ত না নিতে পারি তাহলে সিমান্তরক্ষী বাহিনী রাখার কোন প্রয়োজন দেখিনা। আমি কি মাননীয় মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করতে পারি যে তিনি পূর্ব বাংলা সীমান্তে আমাদের সেনাবাহিনী রেখে তাদের ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা যখন তারা অনুপ্রবেশ করবে কারণ আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের কৈফিয়ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে? আমরা জেনেছি যে ৩০শে এপ্রিলে কুচবিহারের সব জনগণ এসব আক্রমণের জন্যে চলে গেছে। আমি কি জানতে পারি, এর জন্য সরকার ভারতীয় নাগরিক যারা সীমান্তে আছে এবং তাদের বাড়িঘর, পরিবারের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে তাদেরকে কোন ক্ষতিপূরণ দেবে কিনা! আমি কি এটা জানতে পারি যে শীঘ্রই সরকার সীমান্তরক্ষী বাহিনী সরিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করবে কিনা! আমি পৃথক পৃথক উত্তর চাই।
শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী (গোয়ালিয়র): মাননীয় স্পীকার, মন্ত্রী মহোদয় যে জবাব দিয়েছেন তা শুধু নৈরাশ্যজনক নয় লজ্জাজনকও বটে। এই অধিবেশন সর্বসম্মতিক্রমে একটি সংকল্প ব্যক্ত করেছিল সেটি ছিল এই যে, আমরা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধরত পূর্ব বাংলার বীর জনতার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করব, তাদের সমর্থন দেব, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সহায়তা করা তো দুরের কথা আমরা নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করতে পারছিনা। আমরা পাকিস্তানের অনুপ্রবেশ রুখতে পারছিনা। আমরা নিজেদের আকাশ সীমা লঙ্ঘনের নিষেধাজ্ঞা বলবত করতে পারছিনা। বহুলোক আমাদের সীমান্তে ঢুকে পড়ে আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর লোকজনদের ধরে নিয়ে গেছে, তারা আমাদের দুজন পত্রবাহককে বন্দী করে রেখেছে, তারা ৪৭বার সীমান্ত অতিক্রম করেছে। এ অবস্থায় সরকার বলুন, যখন পাকিস্তানী সৈন্য আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে এসেছিল আমরা কি তাদের মধ্যে একজনকেও গ্রেফতার করেছি?……সৈন্যকেও গ্রেফতার করতে পারিনি, আমরা একটি পাকিস্তানী বিমানকে ভুপাতিত করতে পারিনি। সীমান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত এ কথা যথেষ্ট নয়। ব্যবস্থা পর্যাপ্ত হলে তা দেখানোও চাই।
আমার প্রশ্ন এই যে, সরকার কি মনে করেন সীমান্ত রক্ষীবাহিনী এসব পাকিস্তানী হামলার জবাব দিতে সমর্থ! সীমান্ত রক্ষীবাহিনী ভাল কাজ করেছে, আমি সীমান্তে দেখে এসেছি, কিন্তু যখন পাকিস্তান তার নিজ সৈন্যবাহিনী সীমান্তে নিয়ে এসেছে তখন সৈন্যের সঙ্গে কেবল সৈন্যই ত বুঝতে পারে। সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর পক্ষে সৈন্যের মোকাবিলা করা কঠিন হবে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কাছে আমরা এটা আশা করতে পারি না যে তারা পাকিস্তানী বিমান ভূপাতিত করবে, তাদের কাছে ANTI-AIRCRAFT GN নেই। যখন পাকিস্তান নিজ সৈন্য আমাদের মাটির উপর নিয়ে এসেছে তখন সীমান্ত অতিক্রম করার জবাব দেবার জন্য আমাদেরকেও কি সৈন্য সীমান্তে নিয়ে যেতে হবে না? সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক তৎপরতার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবার জন্য কি সুস্পষ্ট আদেশ দেয়া হয়নি? প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে যে অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বিশ্ব রাষ্ট্রসমূহকে সে ব্যাপারে কিছু করতে হবে। আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, আমাদের দেশ নিজে কি করছে যা আমাওরা অন্য দেশসমূহের নিকট হতে আশা করছি। বাংলাদেশের প্রশ্নে আমরা যদি এগিয়ে না আসি তথা বিশ্ব রাষ্ট্রসমূহের প্রতিক্ষায় চেয়ে থাকি তাহলে বাংলাদেশের জনগনের প্রতি আমরা কর্তব্য সম্পাদন করতে পারবো না।
আমার প্রশ্ন ছিল স্বীকৃতিদানের ব্যাপারে, কিন্তু তা দেয়া হয়নি। আমি কর্মবিরতির প্রস্তাবসমূহের তথ্য জানিয়েছি…
শ্রী এস এন ব্যনার্জীঃ আমরাও জানিয়েছি।
স্পীকারঃ সেটা আমরা পরে দেখব।
শ্রী রাম নিবাস মির্ধাঃ সীমান্তে সৈন্য পাঠানোর প্রশ্নে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মহাশয় কিছু পূর্বেই সংসদকে অবহিত করেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সীমান্ত রক্ষী বাহিনী সক্ষম কিনা এ ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি যে তারা সর্বতোভাবে সক্ষম। আজও সীমান্তের যে অবস্থা, তারা তা মোকাবিলা করতে পারবে, যদি দরকার হয় তাহলে সেখানে সৈন্যও পাঠানো যেতে পারে তথা অধিকতর কার্যব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু সীমান্ত রক্ষীবাহিনীকে বর্তমানে যে কাজ অর্পন করা হয়েছে তা করতে সক্ষম নয় একথা বলা অনুচিত হবে।
আরডিঃ মূলতবী প্রস্তাব
১২.৪০
জনাব স্পীকারঃ শ্রী হনুমান্থিয়া
শ্রী জ্যোতির্ময় বসু (ডায়মন্ড হার্বার): আমাদের একটি মূলতবী প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
জনাব স্পীকারঃ আপনি কি দয়া করে বসবেন?
শ্রী সমর গুহ (কোণটাই) আমাকেও একটি মূলতবী প্রস্তাবের নোটিশ দেয়া হয়েছে।
শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীঃ এখন আপনার কাছে আবেদন করা সুযোগ এসে গেছে। আমি জানতে পেরেছি যে আপনি বাংলাদেশের স্বীকৃতির ব্যাপারে আমাদের মূলতবী প্রস্তাব অনুমোদন করা সংগত মনে করেননি। আমি আবেদন জানাচ্ছি আপনি নিজ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন। এটি খুব গুরুত্বর প্রশ্ন। অধিবেশন একটি সংকল্প ব্যক্ত করেছিল। সরকার তদানুযায়ী আচরন প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের ৩৩ লক্ষ অধিবাসী আমাদের দেশে এসে পড়েছে। পাকিস্তান বিনা উস্কানীতে হামলা শুরু করে দিয়েছে। আমি চাই আপনি আমার কর্মবিরতি প্রস্তাব মেনে নিন এবং আমাকে সরকারের নিন্দা করার সুযোগ দিন।
জনাব স্পিকারঃ আমি কি আপনাকে পুনরায় আসন গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করতে পারি। একটি মূলতবী প্রস্তাব অনেক গুরুত্বপূর্ন হয়ে যায় যখন সংবিধান এবং আইন দ্বারা নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্ম ব্যর্থতায় পরিণত হয়। এখানে এক্ষেত্রে, কোন স্বীকৃতি কর্তব্যের কোন অংশ নয়। এটা তাদের বিবেচনার অংশ, অবশ্যই, যখন আপনার সাথে আমার দেখা হবে, (বিরাম)
আমি আপনাকে পুরো অবস্থা ব্যাখ্যা করেছি যে আমি নিজেও কিছু আলোচনার ইচ্ছে পোষণ করি, এবং আমি, আজ বা আগামীকাল আপনার পছন্দের যে কোনো আলোচনা করার জন্য প্রস্তুত আছি, কিন্তু মুলতবি প্রস্তাবের মাধ্যমে নয় কারণ একটি মূলতবী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা তখনই হতে পারে যখন সরকার ব্যার্থ হয়। (বিরাম) দায়িত্ব পালনে সরকারের ব্যর্থতা। (বিরাম) আপনি কি দয়া করে বসবেন? সংবিধান ও আইন কতৃক প্রণীত দায়িত্ব পালনে সরকারের ব্যার্থতা। এখানে এটা ব্যার্থতা নয়, কারণ স্বীকৃতি সংবিধান প্রণীত দায়িত্বের অংশ নয়, (বিরাম) আমি আলোচনা করার অনুমতি দিতে প্রস্তুত। (বিরাম)
একজন সম্মানিত সদস্যঃ মূলতবী প্রস্তাব।
জনাব স্পীকারঃ আমি প্রস্তুত নই।
শ্রী জ্যোতির্ময় বসুঃ আমি আরো একবার আপনাকে অনুরোধ করছি মূলতবী প্রস্তাব স্বীকার করে নেয়ার জন্য, আজ নাহলেও অন্য দিন।
জনাব স্পীকারঃ না, না, এটা বিবেচনার যোগ্য নয়, আইন অনুযায়ী এটা স্বীকার্য নয়, (বিরাম) যদি আপনি চান তাহলে আপনার পছন্দমত যেকোন একটি সময় নির্ধারন করে এই বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। (বিরাম)
সংসদীয় দরিয়া তথা নৌবহন ও পরিবহণ মন্ত্রী (শ্রী রাজ বাহাদুর): আজ বিকাল ৩টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে একটা বিবৃতি দিবেন। আমরা এই ব্যাপারে আলোচনায় একমত (বিরাম) যেটা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে ঘটছে (বিরাম) কারণ এটা আমাদের প্রভাবিত করছে।
শ্রী জ্যোতির্ময় বসুঃ এটা এক ধরণের প্রতারনা।
শ্রী রাজ বাহাদুরঃ এখানে প্রতারনার কোন প্রশ্নই আসেনা।
শ্রী জ্যোতির্ময় বসুঃ এটা তর্কের বিষয় নয়।
শ্রী রাজ বাহাদুরঃ এ বিষয়ে উনারাও একমত ছিলেন, জনাব (বিরাম)।
জনাব স্পীকারঃ অনুগ্রহ করে তাকে থামাবেন না।
শ্রী রাজ বাহাদুরঃ আমরা একমত; এই বিষয়ে আলোচনা জন্য আমরা শ্রী জ্যোতির্ময় বসুর চ্যালেঞ্জ গ্রহন করলাম এই সংসদে আজ অথবা আগামীকাল।
শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীঃ আমার একটি আবেদন আছে। এই প্রশ্নেও আপনি এমন কোন রুলিং দেবেন না যা আমাদের মূলতবী প্রস্তাব আনার অধিকারকে খর্ব করবে। আপনি আমাদের মূলতবী প্রস্তাব শুনুন। তার ভাষা এই যে “৩১শে মার্চ লোকসভায় প্রণীত রেজ্যুলেশনের বাস্তবায়ন”। যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার উপর আলোচনা করতে চাই, স্বীকৃতি না দেয়ার যে অবস্থা উদ্ভব হয়েছে তার উপর আলোচনা করতে চাই। মূলতবী প্রস্তাব এখানে না আসলে আর কোথায় আসবে?
শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত (আলীপুর) ১ আমি আইনের দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
জনাব স্পীকারঃ আমি যা দিয়েছি, সেটা নিয়ে কোনো পুনর্বিবেচনায় যাচ্ছি না।
শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তঃ আপনি কি বলছেন, “আপনি যদি চান”, কারণ নিয়ম বলে।
জনাব স্পীকার ২ আপনি যদি চান তাহলে, আজ অথবা কাল আপনার পছন্দের যেকোন সময় আমি আলোচনা করতে পারি কিন্তু মুলতবি প্রস্তাবের সাহায্যে নয়। একটি মূলতবি প্রস্তাব এ ব্যাপারে অনুমোদনযোগ্য।
শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত ১ ৫৬ ধারার অধীনে।
জনাব স্পীকারঃ ৫৬ ধারা আমি দেখেছি।
শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত ১ এটা জনগুরুত্বসম্পন্ন একটি জরুরী ব্যাপার। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা সংবিধানে বাধ্যবাধকতা নাও হতে পারে।
……জনগুরুত্বসম্পন্ন একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে সংসদ কার্যক্রম মূলতবীর একটি প্রস্তাব করা যেতে পারে।
জনাব স্পীকারঃ সেখানে অনেক বিধি-বিধান আছে যা আমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করেছি, এবং আমি তাতে সম্মতি দেইনি।
শ্রী জ্যোতির্ময় বসুঃ ৫৬ ধারা অনুযায়ী, আমাদের আপনার সম্মতি পাওয়ার অধিকার আছে।
জনাব স্পীকারঃ আমি এ ব্যাপারে একটি আলোচনা করার অনুমতি দিতে প্রস্তুত, আজ, কাল অথবা যেকোন সময়।
শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীঃ মূলতবী প্রস্তাব অন্য জিনিস। আমরা সরকারের নিন্দা করতে চাই।
স্পীকারঃ সেখানেও করতে পারেন।
শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তঃ (মুলতবী) প্রস্তাবে পর্যাপ্ত সমর্থন থাকার পরেও, আমি এটা স্বীকার না করার জন্য কোনো কারণ দেখিনা।
জনাব স্পিকারঃ আমি আগেই বলছি, যেকোন সময় আলোচনা করতে আমার কোন আপত্তি নাই (বিরাম)।
শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীঃ মূলতবী প্রস্তাব আনা আমাদের অধিকার। আমরা আপনার সঙ্গে একমত নই। নিজেদের বিরোধিতা প্রকাশ করার জন্য আমরা ধর্মঘট করতে চাই।
শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্তঃ প্রতিবাদে আমরাও ধর্মঘট করছি।
এরপর, শ্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী, শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত ও অন্যান্য কিছু সম্মানিত সদস্য বাসা ত্যাগ করলেন।
শ্রী জে, বি, ধৌতে (নাগপুর):…………………
জনাব স্পিকারঃ মাত্র দুই ঘণ্টা আগে সদস্য শপথ গ্রহণ করেছেন আর তিনি আমাকে উপদেশ দিচ্ছেন! দয়া করে বসুন। আমি এতে সম্মতি দেইনি।