শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
২০৭। বাংলাদেশ প্রশ্নে জাতিসঙ্ঘের তৃতীয় কমিটিতে চীন কর্তৃক পাকিস্তানের পক্ষে ভুমিকা গ্রহনের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা | রাজ্যসভার কার্যবিবরণী | ২৩ নভেম্বর ১৯৭১ |
বাংলাদেশ প্রশ্নে জাতিসঙ্ঘের তৃতীয় কমিটিতে চীন কর্তৃক পাকিস্তানের পক্ষে ভুমিকা গ্রহনের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা
একটি জরুরী ও জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ
জাতিসঙ্ঘের তৃতীয় কমিটিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে চীনা প্রতিনিধির পাকিস্তান কে সমর্থন প্রসঙ্গে।
শ্রী লোকনাথ মিশরা(উরিশ্যা)ঃ জনাব, জাতিসঙ্ঘের তৃতীয় কমিটিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে চীনা প্রতিনিধির পাকিস্তান কে সমর্থন এবং এ বিষয়ে ভারতীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র বিশয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
পররাষ্ট্র বিশয়ক মন্ত্রী (সর্দার শরন সিং)ঃ জনাব, ভারত সরকার চিনা প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের শরণার্থী প্রসঙ্গে জাতিসঙ্ঘের তৃতীয় কমিটির বিতর্কে যে বক্তব্য রেখেছে, তা সম্পরকে অবগত আছে। বক্তব্যের এক কপি এই মুহূর্তে হাউসের টেবিলেই রয়েছে। এ বক্তব্য কোনভাবেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল না।
বাংলাদেশের মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার দাবীকে দমন করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানি সেনার যে নৃশংসতা তার ফলেই এই শরণার্থী সমস্যা তৈরি হয়েছে। বহিরাগতদের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে যে দোষারোপ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সমাধান তখনি সম্ভব হবে যখন পসচিম পাকিস্তানি সেনা শাসকরা তাদের সেনাশাসন প্রত্যাহার করে নিরবাচিত গনপ্রতিনিধিদের সাথে বসে একটি রাজনৈতিক সুরাহা করবেন। এই কারনেই আমরা প্রতিনিয়ত পাকিস্তানের এই সমস্যাকে ভারত-পাকিস্তানের বিরোধ হিসেবে প্রচার করার চেষ্টাকে প্রতিহত করে আসছি। এই লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের দায়িত্ব ভারতের কাছে একটি অসহনীয় বোঝাস্বরুপ, ফলে ভারত সরকার এই শরণার্থীদের নিরাপদে সম্মানের সাথে তাদের নিজেদের ভূখণ্ডে যতদ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।
এই লক্ষ লক্ষ শরণার্থী যে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির সম্মুখিন হয়েছে, যে কারনে তারা সারা পৃথিবীর মানুষের সমবেদনা ও সমর্থন পাচ্ছে, তা কোনভাবেই অস্বীকার বা মুছে ফেলা যাবে না। জাতিসঙ্গ নিজে তাদের জন্য ত্রান সরবরাহ করছে। অনেক রাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের সেক্রেতারি-জেনারেল এর সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। বিদেশিদের মন্তব্যে আমরা মুল বিষয় থেকে আমাদের মনোযোগ হারিয়ে ফেললে চলবে না। যদি মুল সমস্যার কথা ভাবা হয়, তাহলে পৃথিবীর কোন দেশ, যাদের বিন্দুমাত্র মানবতা ও ন্যায়বিচার এর প্রতি আস্থা আছে, তাদেরকে নিজেদেরকে এসব বৈদেশিক মন্তব্য ও অযথা তর্কে বিচলিত হতে দিবেনা। বাস্তবের সাথে মিল নেই, এমন ধরনের দোষারোপ করে আসলে কোন লাভ হবেনা। ভারত গর্বের সাথে বলতে পারে যে তারা কখনওই, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না এমনকি পরোক্ষভাবে এধরনের কোন দোষারোপও অনুমোদন করেনা। ভারত আশা করে যে, কোন দেশ, বা কোন পরাশক্তি এ অঞ্চলের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবেনা।
বিবৃতিঃ
পূর্ব পাকিস্তান প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিগণ কথা বলেছেন। চীনা প্রতিনিধিদলও এবিশয়ে তাদের মন্তব্য ব্যাক্ত করতে চায়। চিনা সরকার ও তার জনগণ, সবসময়ই বিশ্বাস করে যে কোন দেশের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তারা নিজেরাই সমাধান করবে। যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তা সম্পূর্ণই পাকিস্তানের নিজস্ব বিষয় এবং তা শুধু মাত্র পাকিস্তানের পক্ষেই সমাধান করা সম্ভব, কোন দেশেরি এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র নাক গলানো উচিত নয়। যে শরণার্থী প্রসঙ্গটি বর্তমানে এসেছে, তার কারন একটি নির্দিষ্ট দেশ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে এবং এই উপমহাদেশে অস্থিরতার সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার ক্রমাগত এ পরিস্থিতি এবং শরণার্থী সমস্যার সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আলোচ্য এই দেশটি সকল প্রস্তাবই বাতিল করে দিয়েছে। তারা এই শরণার্থী ইস্যু থেকে যথাসম্ভব সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ক্ষেত্রে এবং পূর্ব পাকিস্তানিদের তাদের ঘরে ফিরে গিয়ে একটা সুরাহার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রেও। চীনা সরকার এবং জনগন, অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলানোর পন্থা সম্পপরকে ভালভাবে অবগত আছে। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে যে একটি নির্দিষ্ট দেশ তিব্বতে এধরনের একটি বিদ্রোহ ঘটানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু চিনা জনগন কঠোরভাবে তা দমন করেছে। তারা চিনা অধিবাসীগণকে তাদের দেশে আসার জন্য উৎসাহিত করেছিল এবং এভাবেই তিব্বতি শরণার্থীদের প্রশ্ন তুলেছিল। আমরা বলতে চাই যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। শুধুমাত্র এভাবেই শরনারথিদেরকে তাদের নিজ ভূখণ্ডে ফিরিয়ে নিতে সাহায্য করা হবে। চিনা সরকার সবসময়ি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মান্য করে এসেছে এবং এভাবে শরণার্থীর প্রশ্ন তুলে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছে। পকিস্তানের রাজ্যসমুহের কলহের সমাধান পাকিস্তানেই হবে, কেননা পাক্সিতানের মানুশ দেশপ্রেমিক, যেকোন ধরনের হস্তক্ষেপের বিরোধী এবং তারা অবশয়ি তাদের নিজের সমস্যার সমাধান নিজেরাই সমাধান করতে পারবে।
শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ আমি এবিষয়ে ভারতীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাচ্ছিলাম। পররাষ্ট্র বিশয়ক মন্ত্রী এ বিষয়ে বক্তব্য আকারে যা বলেছেন, তাই হাউসে এবং তার বাইরে বারবার পঠিত হচ্ছে গত তিন মাস ধরে। সুতরাং চীনা সরকারের এই উল্লেখযোগ্য মণোভাব পরিবর্তনের পরেও আমরা সেই বক্তব্যে বিশেষ কোন পরিবরতন লক্ষ্য করছিনা। আমি নির্দিষ্টভাবে যা জানতে চাই, তা হচ্ছেঃ আমাদের সরকার যখন চিন সরকারের সাথে সকল উদ্যোগই অত্যন্ত নম্রতার সাথে গ্রহন করছে, সে সময় যখন সমাজতান্ত্রিক চীন সরকার এমন একটি বক্তব্য জাতিসঙ্ঘে দিচ্ছে, তার জবাব হিসেবে ভার সরকার কি প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছে? এখন, জনাব, আমি সেই নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়াটি জানতে চাই, তারপর আমি কিছু প্রশ্ন করবো…
সর্দার শরন সিংঃ আমি খুবি স্পষ্টভাবে আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি যে চীনা প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে যেসব দোষারোপ করেছে, তা অন্যান্য দোষারোপগুলোর মতই ভিত্তিহীন। এটি খুবি স্পষ্ট একটি প্রতিক্রিয়া।
মিঃ চেয়ারম্যানঃ মিঃ মিশ্রা, আপনি এখন প্রশ্ন করতে পারেন…
শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ আমি একটাই প্রশ্ন করবো, সেটা করতে যত সময়ি লাগুক না কেন…
মিঃ চেয়ারম্যানঃ একটি প্রশ্ন করুন।
শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ স্যার, শুধুমাত্র কিছু বিষয় স্পষ্ট করে নিতে জানতে চাচ্ছি, পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হলে চায়না এবং ভারতের মধ্যবর্তী কুটনৈতিক সম্পর্ক রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে মজবুত করার একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এমন সময়ে যখন দেখা যাচ্ছে, সমাজতান্ত্রিক চীনা সরকার আমাদের সম্পর্কে এধরনের শত্রুভাবাপন্ন বক্তব্য রাখছে এবং তারা বাংলাদেশ ইস্যুটাকে সম্পূর্ণভাবে চাপা দিতে চাচ্ছে। এই কঠিন সময়ে যখন আমরা বাংলাদেশি শরনারথীদের ভারবহন করতে গিয়ে আরথিকভাবে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন তারা আমাদের সাহায্য করার বদলে তারা বাংলাদেশের এই আন্দোলন চাপা দেওয়ার মনোভাব প্রকাশ করছে।
শ্রী দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্তঃ বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলন।
শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ জি, বাংলাদেশ আন্দোলন। এই আন্দোলনের সুত্রপাত বাংলাদেশের একটি অবাধ ও বৈধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এ নির্বাচনে শেখ মুজিবর রহমান সরবাধিক আসনে বিজয় লাভ করেন, যাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, এবং যার থেকে এই আন্দোলনের সুত্রপাত। আমি আশা করেছিলাম, ভারত সরকারের এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া আরো সুসংহত হবে, এবং এমন একতি দেশ হিসেবে নিজেকে সরকার প্রকাশ করবে, যা মানুষের স্বাধীনতার জন্য লরে যাচ্ছে, যখন অন্য একটি দেশ সেক্ষেত্রে অন্তরায়ের সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
মিঃ চেয়ারম্যানঃ ঠিক আছে, এটি একটি খুবি ভাল প্রশ্ন।
শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ এটিই শুধুমাত্র প্রশ্ন নয়, স্যার, একি সাথে আমি জানতে পেরেছি যে চীনা সরকার ভারত সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করছে, যেন তারা তিব্বতি শরণার্থী এবং তাদের দালাইলামাকে পাঠানো সাহায্য বন্ধ করে বা অন্তত কমিয়ে দেয়। আমাকে বলা হয়েছে…
মিঃ চেয়ারম্যানঃ আপনার প্রশ্নটি কি?
শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ এই বিষয় থেকেই প্রশ্নটি আসছে।
মিঃ চেয়ারম্যানঃ না, না, আপনার প্রশ্নটি কি?
শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ আমি জানতে চাই যে এটী সঠিক কিনা? (মাঝখানে কেউ একজন কথা বলছেন)
আমি ট্রেজারি বেঞ্চে আপিল করব। তাদের অধৈর্য হওার কোন কারন নেই। আমি তাদের নেতাদের সাথে কথা বলেছি, এবং মুদ্রা দুই পিঠি আমাদের পক্ষে।
এখন স্যার আমি জানতে চাই, চায়না সরকারের চাপের মুখে, এই সাহায্য কি আসলেই বন্ধ হয়ে যাবে কিনা? ভারত সরকারের প্রতি হিংসা বা মহানুভবতা, যাই হোক না কেন, তার কারনে আরো একটি দেশকে উত্যক্ত মনে হচ্ছে, যারা প্রতি বছর ৮ কোটির সমমুল্যের ওয়াগন আমদানি করত, এবং বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করত। সেই দেশটি হচ্ছে তাইওয়ান, যাদের সকল কুটনৈতিক সফর বাতিল করা হয়েছে, এমনকি তাইওয়ানিজ সিটিজেনদের ট্রাভেল ভিসা, হয়ত তারা তাজমহল দেখতে আসতো, তাও বন্ধ করে দিয়েছে। কেন, এক্টী দেশের সরকার হিংসায় সকম কুটনৈতিক মিশন বন্ধ করে দিবে, তাদের লোকদের আশা বন্ধ করে দিবে, যেখানে ভারত সরকার তাদের সাথে বানিজ্য করছে, এবং আমরা পাবলিক সেক্টরে তাদের কাছ থেকে থেকে ৮ কোটির সমমুল্যের বৈদেশিক মুদ্রা পাচ্ছে।
সর্দার শরন সিংঃ স্যার, আমাকে স্বীকার করতেই হচ্ছে যে, অনেক মনোযোগ দিয়ে উনার প্রশ্ন শুনার পরেও আমার পক্ষে বুঝা কঠিন হয়ে পরেছে, যে উনার আসল প্রশ্নটা কি। উনি উনার চিন্তা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে উনার মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন, কিন্তু জবাব দেয়ার মত কোন নির্দিষ্ট প্রশ্ন আমাকে করেননি। উনি বেশ কিছু মন্তব্য করেছে, যার একটা বা দুইটা বিষয়ে হয়ত আমি খুবি সংক্ষেপ মন্তব্য করবো। প্রথম বিহস্য হল, সম্পরকের ক্ষেত্রে মনোভাব, অনেক সময়, সপরকের উন্নয়নের জন্য, যা সবসময়ি প্রয়োজন, আমরা নির্দিষ্ট বীষোয়ে গুরুত্ব দাওয়া প্রয়োজন হলেও, সামগ্রিক বিষয়ে আলোকপাত করি। একটি বক্তব্য, যা আমাদের পছন্দ হয়নি, তা কোনভাবেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার একটি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেনা।
শ্রী দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্তঃ গত ছয় বছর এর পর…
মিঃ চেয়ারম্যানঃ দয়া করে, উনাকে শেষ করতে দিন।
শ্রী দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্তঃ আমরা ছয় বছর ধরে অপেক্ষা করছি।
সর্দার শরন সিংঃ আরো একটি প্রশ্ন, যা তিনি উত্থাপন করেছেন তা হল, তাইওয়ানিজদের ট্যুরিস্ট ভিসা আমাদের বন্ধ করা উচিত হবে কি না। যদি সম্প্রতি একটি ঘটনার কথা সম্মানিত সদস্যের মনে না থেকে থাকে, আমি আবারো বিষয়টি পরিস্কার করে নিতে চাই। তাইওয়ানিজদের একটি গ্রুপ এখানে একটি কনফারেন্সে অংশ নিতে আস্তে চেয়েছিল, এই একটি আন-অফিশিয়াল কনফারেন্সে ছিল, এবং তারা আমাদের হংকং এর মিশনে ভিসা এর জন্য এপ্লাই করেছিল এবং প্রচলিত নিয়মে তাদের ভিসা বাতিল হয়েছে। তারপর এই লোকগুলোই ব্যাংককে এসে দাবী করে যে তারা ট্যুরিস্ট হিসাবে আসতে চায়, এবং তাদের ভিসা দেয়া হয়। তারা যদি কনফারেন্সে অংশ নেয়ার জন্যই এসে থাকে, তাহলে এটা তাদের ভুল হয়েছে যে তারা আমাদের মিশনকে ভুল তথ্য দিয়েছে। তারা শুধুই ট্যুরিস্ট ছিল না। সুতরাং, এটাই আমাদের পলিসি এবং আমরা তাই মেনে চলবো। গনপ্রজাতন্ত্রী চীন এসে আমাদের মনের কোথাও তাইওয়ান বিষয়ক আমাদের পলিসি নিয়ে যেন সন্দেহ তৈরি করতে না পারে। আমি এই বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলতে চাই, যে আমরা বিশ্বাস করি যে চিন একটাই, গনপ্রজাতন্ত্রী চীন হচ্ছে, দেশটির বৈধ সরকার। আমরা তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেইনি এবং আমরা দ্বৈত চায়নার থিওরী মেনে নিতে পারবোনা।
শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ তিব্বতি শরণার্থীদের ত্রান এর কি হবে?
সর্দার শরন সিংঃ তিব্বতি শরণার্থীদের নিয়ে এখানে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেউ। আমি শুধু মাননীয় সদস্যকে জানানোর জন্য বলতে চাই যে তাদের ত্রান সরবরাহ কমানোর কোন পদক্ষেপ আমরা নেইনি।
(মিঃ ডেপুটী চেয়ারম্যান, আসন গ্রহন করছেন)
শ্রী এন। জি, গোরাই (মহারাষ্ট্র)ঃ আমি জানিনা, তাইওয়ান ইস্যু কিভাবে আস্লো, কিন্তু এই দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়টিকে সঠিকদিকে নিয়ে যেতে, আমি চিনা ডেলিগেশন দলের নেতার কিছু কথা পরে শোনাতে চাই।
সর্দার শরন সিংঃ আমি তার একটি কপি টেবিলে দিয়েছি।
শ্রী এন। জি, গোরাই ঃ কিন্তু আমি কিছু বিষয়, যা সে বলেছে, তার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই। তিনিও বলেছেন যে এই তথাকথিত শরণার্থী ইস্যু যা বর্তমান সময়ে তৈরি হয়েছে, তা একটি নির্দিষ্ট দেশের পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানর ফলাফল, এবং একি সাথে উপমহাদেশে অস্থিরতা তৈরির কারন। সুতরাং তিনি বেশ পরিষ্কারভাবেই ভারতকে বর্তমান পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার বিরোধের জন্য দায়ী করছেন। শুধু তাই নয়, পুরো এলাকাতেই যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, তার জন্য দায়ী করছেন। এই গেল এক নম্বর।
তারপর তিনি ভারতকে আরো আগ্রাসী ভাবে দোষারোপ করে গেছেন। মিঃ ফু হাও বলেছেন, তারা এই শরণার্থী ইস্যু থেকে যথাসম্ভব সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ক্ষেত্রে এবং পূর্ব পাকিস্তানিদের তাদের ঘরে ফিরে গিয়ে একটা সুরাহার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রেও। এটি হচ্ছে, দোষারোপ নাম্বার দুই। যে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে শরণার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়া প্রতিরোধ করছি।
তৃতীয় দোষারোপ হচ্ছে, যতদুর চিনা মানুষদের কথা বিবেচনা করা যায়, এটা তাদের জন্য নতুন কিছুই নয়, যেহেতু ভারত একি পন্থায় তিব্বত ইস্যুতে নাক গলানোর চেষ্টা করেছে, এবং সে কারনে ভারত ও চায়নার মধ্যবর্তী সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
এই ছিল, ভারতের বিপক্ষে তাদের সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ। স্যার, এই অভিযোগগুলোই আমরা চায়নার সাথে সম্পর্ক এর উন্নয়নের জন্য যে উদ্যোগগুলো নিয়েছি, তার তাৎপর্য ব্যক্ত করছে। আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, এবং প্রধানমন্ত্রীকেও যদি সঠিকভাবে সব জানানো হত, তিনিও বলতেন যে আসাই-চিন সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসা যেতে পারে। পত্র-পত্রিকায় তাই লেখা হচ্ছিল, যদিও আমি জানিনা, তাকে সঠিকভাবে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিনা। এর মানে হচ্ছে যে সেই পণ্ডিত নেহরু এর আমলে চিনের সাথে আমাদের যে ঝামেলা শুরু হয়েছিল, সেই আক্সাই চিন ইস্যু নিয়ে আমরা আলোচনার টেবিলে বসে এর সমাধান করতে আগ্রহী। এটি ছিল চিনকে দেয়া আমাদের প্রস্তাব। যেহেতু আমরা সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছি, আমি জানতে চাই, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কি এ বিষয়ে নোট রাখছেন কিনা, যে এসকল দোষারোপ এর কি ফল হতে পারে। প্রতিটা বাক্যে একটি বিষাক্ত মনোভাব রয়েছে। প্রতিটি বাক্য অত্যন্ত তীক্ষ্ণ এবং গত ৬ মাসে ভারত যে ইমেজ তৈরি করেছে, তা তারা ধংস করে দিতে চায়। আমাদের চেষ্টা ছিল, প্রতিটি দেশে যেয়ে তাদের বোঝানো যে এটি পাকিস্তান এবগ ভারতের মধ্যকার কোন বিষয় নয়, মিলিটারি জান্তার দমন-পীড়ন নিতির ফলাফল। ভারত ও চায়, যে শরণার্থীরা ফিরে যাক, কিন্তু অবশ্যই ইসলামাবাদ মিলিটারি জান্তাকে তার মনোভাব পরিবরতন করতে হবে। এখন চিনা প্রতিনিধিরা এই চেষ্টা পুরোটা গুড়িয়ে দিতে চাইছে এবং যা কিছু ঘটেছে তার সবটার জন্য ভারতকে দায়ী করেছে। আমি এইসব দেখে বলতে চাই, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই যে তারা যেন খেয়াল করে যে চিন গত কয়েকবছর ধরে একি ধরনের মনোভাব পোশন করে আসছে, এবং আজো তার কোন পরিবরতন হয়নি। এটি শুধুমাত্র ভারতকে দোষারোপ ই করেনি, তারা তিব্বতি ইস্যুর উদাহরন টেনে প্রমান করতে চাচ্ছেন যে, ভারতের পলিসিই এমন যে আমরা এধুরনের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজেদের দুরভিসন্ধি হাসিল করতে চাই। আমি জানতে চাই, এধরনের অভিযোগ, বিশেষত যখন তা জাতিসঙ্ঘের মতন একটা আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে করা হয়েছে, তা এই সম্পর্কের উন্নয়নের উদ্যোগের ক্ষেত্রে কি ভুমিকা পালন করবে?
সর্দার শরন সিংঃ জনাব, আমি বলতে চাই যে সম্মানিত সদস্য চীনা প্রতিনিধিদের তৃতীয় জাতিসঙ্ঘের কমিটিতে প্রদান করা বক্তব্য থেকে যে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন, এই তিনটি পয়েন্ট এর ক্ষেত্রেই ভারত সরকার পরিষ্কার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আমি প্রথমেই তা উল্লেখ করেছি, এবং আমার মনে হয়না, সুনির্দিষ্ট বাক্যগুলি পুনরায় উল্লেখের প্রয়োজন আছে।
কিন্তু, যেহেতু তিনি নির্দিষ্ট কিছু দোষারোপের কথা উল্লেখ করেছেন, তাই উল্লেখ্য যে, প্রথম অভিযোগের উত্তর হচ্ছে যে বহিরাগত হস্তক্ষেপের কারনে এই শরণার্থী সমস্যা তৈরি হয়েছে, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দ্বিতীয়টির উত্তর হচ্ছে আমরা শরণার্থীদের ফিরে যাওয়াকে প্রতিরোধ করেছি। তৃতীয় অভিযোগের উত্তর বক্তব্যের তৃতীয় প্যারাতে আছে, যা আমি পড়ে শুনাচ্ছিঃ
এই লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের দায়িত্ব ভারতের কাছে একটি অসহনীয় বোঝাস্বরুপ, ফলে ভারত সরকার এই শরণার্থীদের নিরাপদে সম্মানের সাথে তাদের নিজেদের ভূখণ্ডে যতদ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।
এই তৃতীয় পয়েন্টের জবাব সর্বশেষ প্যারাতেও দাওয়া আছে, যেখানে বলা আছে যে, আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি যে অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় আমরা হস্তক্ষেপ কখনই করিনি, এবং আমরা এধরনের যেকোন পদক্ষেপকে প্রতিহত করি। সুতরাং এ বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট যে সম্মানিত সদস্য যেসক্কল পয়েন্ট উল্লেখ করেছে, তার সবগুলোর প্রতিক্রিয়া আমি ইতিমধ্যে ব্যক্ত করেছি। সম্মানিত সদস্য আরো বলছেন, যে আমি বিষয়টি গুরুতবের সাথে দেখছি কিনা, এবং আমি বলতে চাই যে আমি অবশ্যই বিষয়টি গুরুতবের সাথে দেখছি, এবং সেকারনেই সরকারের সকল প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত স্পষ্টভাবে দাওয়া হয়েছে, তা সঠিক বা ভুল যাই হোক না কেন।
শ্রী এন। জি, গোরাই ঃ এই প্রতিক্রিয়াটি অত্যন্ত বেশি তির্যক, ফলে ভারত ও চায়নার মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক হওা সম্ববপর নয়।
সর্দার শরন সিংঃ যদি আমরা এই বিশ্বাস নিয়ে আগাই যে তির্যক বক্তব্য দিয়েই কোন দেশ আমাদের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে পারে, তবে আমরা আমাদের এবং পৃথিবীর সব রাষ্ট্রকেই খাটো করে দেখছি। একি সাথে এমন দেশ থাকবে, যারা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করবে, আবার এমন দেশও থাকবে যারা সমর্থন করবে না। কিন্তু, আমরা অবশ্যই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করব, এবং তাই করা হয়েছে। একি সাথে আমরা একটি উপযুক্ত বক্তব্য পেশ করবো, যদি ইতিমধ্যে আমাদের ইউ এন প্রতিনিধি তা ফোরামে না করে থাকে।
অন্যান্য পয়েন্ট এর মধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেন, সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা নিয়ে। আমার মনে হয় এক্ষেত্রে আমরা যথাযথ উদ্যোগই নিব, এবং চীন বিরোধিতা করার কারনে আমাদের কখনই নিজেদের নীতিমালা থেকে সরে যাওয়া উচিত হবেনা। এই বিহস্যের উপর ভিত্তি করে আমাদের আগানো কখনই সঠিক হবে না। আমার মনে হয়, তারপরো আমাদের আশা করার যথেষ্ট কারন আছে যে চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে।
শ্রী এন। জি, গোরাই ঃ আপনি কি আক্সাই চিনের উপর কোন প্রস্তাব তৈরি করেছেন?
সর্দার শরন সিংঃ না আমরা এবিষয়ে কোন প্রস্তাবনা তৈরি করিনি।
রাজ্যসভা ২৩শে নভেম্বর, ১৯৭১
শ্রী সীতারাম কেশরী (বিহার)ঃ উপ-সভাপতি মহাশয়, জাতিসঙ্ঘে চীনের প্রতিনিধি যে ভাশন দিয়েছেন যার ভিত্তিতে এই দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব তথা আপনার বক্তব্য এসেছে, আমি কি জানতে পারি তাদের এই বক্তব্য স্বত্বেও আমরা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নরমালাইজ করব? চীনা প্রতিনিধি তার ভাষণে কি এ কথাও বলেছেন যে পাকিস্তান ও ভারত যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলে তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করবে? যদি এমন কোন বক্তব্য না দিয়ে থাকেন, তবে শুধুমাত্র জাতিসংঘে প্রদত্ত একটি বক্তব্যের দরুন, এবং নিজেদের ভুলকে আমাদের ভুল বলে অভিহিত করার অরথাত শরণার্থী সমস্যার ব্যাপারে তারা যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং বলেছে, তিব্বতে যেসব শরণার্থী এসেছিল তাদের নিয়ে ভারত তাই করেছিল, যা সে আজ করছে। এর দ্বারা আমি ধরে নেব যে, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হলে চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করবে আর যদি এমন আভাস না পাওয়া যায় তাহলে চীনের সঙ্গে সুসম্পরক গড়ার নীতি অব্যাহত না রাখা কি সমীচীন?
সর্দার শরন সিংঃ জনাব, আমি চিনা প্রতিনিধির বক্তব্যের আসল কপিটি হাউসের টেবিলে জমা দিয়েছি। তিনি পুরো বিশয়টির উপর তার নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন এবং তিনিই তার দৃষ্টিভঙ্গির দায় বহন করেন।
শ্রী সীতারাম কেশরী (বিহার)ঃ তাহলে কি আমি এই ধরে নিব যে, তাদের সাথে যুদ্ধের কোন সম্ভাবন নেই এবং তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সহযোগিতা লাভের সম্ভাবনা আছে?
সর্দার শরন সিংঃ সে বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করব না।
শ্রী প্রণব কুমার মুখারজীঃ জনাব, মন্ত্রিমশায় তার উত্তরের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে জাতিসঙ্ঘে চিনা দুতের যে বক্তব্য, তা কোনভাবে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন পরিবর্তন আনবেনা। তার এ বক্তব্যের উপর ভিত্তি করেই আমি জানতে চাই যে চীনের সাথে এই সম্পর্ক উন্নয়নের যে পরিকল্পনা, সে বিষয়ে চীন সরকারের সাথে কি ভারত সরকার কোনক্ষেত্রে একমত হতে পেরেছে কিনা?
দ্বিতীয়ত, আমি জানতে চাই, ভারত সরকার এক্ষেত্রে দুতাবাসের মাধ্যমে বা কোন বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের মাধ্যমে চীনা সরকারকে বাংলাদেশ এবং শরণার্থীদের সত্যিকারের সমস্যাগুলো তুলে ধরবার জন্য কোন কুটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করেছে কিনা, যেন চীন সরকার কোনভাবেই বাংলাদেশ ও তিব্বতের শরণার্থীদের একীভূত না করে ফেলেন, যেমনটা তারা এখন পর্যন্ত ভাবছে বলেই মনে হচ্ছে? সেক্ষেত্রে আমি জানতে চাইব, যে এক্ষেত্রে সরকার কি কি উদ্যোগ গ্রহন করছে?
সর্দার শরন সিংঃ আপনার প্রশ্নের শেষাংশের উত্তরের ক্ষেত্রে বলছি, আমরা বাংলাদেশ বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। আমরা আমাদের অবস্থান পিকিং এ এবং দিল্লীতে অবস্থানকারী তাদের রাষ্ট্রপ্রতিনিধিকেও জানিয়েছি। আমরা এই চেষ্টা চালিয়ে যাব, এবং যোগাযোগ রক্ষা করে যাব। নতুন উদ্ভুত এই পরিস্থিতেও আমরা আমাদের অবস্থান তাদের জানাবো।
শ্রী প্রণব কুমার মুখারজীঃ প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইকে কোন পত্র দিয়েছেন, যেমনটা তিনি অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে করেছেন?
সর্দার শরন সিংঃ প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার প্রধানকেও বারতা পাঠিয়েছেন।
শ্রী প্রণব কুমার মুখারজীঃ সেটি ছিল, জাতিসঙ্ঘে অন্তর্ভুক্ত হওার জন্য অভিনন্দন বার্তা, আমি জানতে চাচ্ছি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে।
সর্দার শরন সিংঃ পুরবেই বাংলাদেশ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে, এবং এই প্রচেষ্টা ধারাবাহিকভাবে চলবে। আমরা যদি কোন দেশকে আমাদের কথা নাও বুঝাতে পারি, তারপরও আমরা বারবারই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তাদেরকে ব্যাখ্যা করে যাব।
শ্রী এন। শ্রী রামা রেড্ডি (মহিশুর)ঃ জনাব, আমরা চীন প্রতিনিধিদলের জাতিসঙ্ঘের তৃতীয় কমিটিতে প্রদত্ত বক্তব্যের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছি। এই কমিটি এমন একটি কমিটি যেখানে মানবিক বিষয়সমুহ বিবেচিত হবে বলে বলা হয়েছিল। কমিটি সেই এক কোটি মানুষের কথা ভাবছিল যারা তাদের ভিটামাটি ছেড়ে ভারতে এসে আশ্রয় চেয়েছে। আমরাও মানবিকতার খাতিরেই বলেছি যে আমরা এই মানুশগুলোকে আশ্রয় ও সাহায্য দেব। এমন একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে বিবেচনার সময়ে চীন এধরনের রাজনৈতিক প্রশ্ন ও ঘোষণা দিচ্ছে যে এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং ভারতের হস্তক্ষেপ করা উচিত হয়নি, যা অত্যন্ত গুরুতর একটি অভিযোগ। আমি এটিকে হালকাভাবে নিতে পারছিনা।
দ্বিতীয়ত, চীন আরো বলছে যে আমরা বিধ্বংসী কার্যক্রম চালাচ্ছি এবং শরণার্থীদের তাদের নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে প্রতিহত করছি। এ শরণার্থীদের সাহায্য করতে যেয়ে যে বিশাল অঙ্কের ব্যয় আমাদের হচ্ছে, যে ত্যাগ আমরা স্বীকার করেছি, তার কোন কিছুই তারা বিবেচনা না করে, উলটো বলছেন আমরা বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড করছি। আমার মনে হয়, এবার আমাদের ব্যবস্থা নাওয়া উচিত, এবং তা অবশ্যই বিনিত চিঠির মাধ্যমে নয়। একসময় আমরা বলতাম হিন্দী-চীনি ভাই ভাই, এবং তারপর কি হল, অক্ষয় চীন দখল করে ভারতের উপর হামলা করা হল। আমরা ভাল করেই চায়নার ব্যবহার জানি। তারা সবসময়ই বিশ্বাসঘাতকতা করে এসেছে। ভারত সরকার যতই চিনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করুক না কেন, আমি আমার মনভাব লুকাতে পারবনা। আমার মনে হয়না, আমাদের কোন চেষ্টাই প্রয়াত শ্রদ্ধেয় জওহরলাল নেহরু এর চেয়ে বেশি হবে। তিনি তার সাধ্যমত ভারন-চীনের সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন বিশ্বাসঘাতকতা। রুটির বদলে আমাদের দিকে পাথর মারা হয়েছে। এটি আমাদের অভিজ্ঞতা, এবং তারাও কোন ব্যতিক্রম না করে জাতিসঙ্ঘে প্রবেশ করে প্রথম বক্তব্যেই এসব বলেছে। আমরা সর্বচ্চো চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার ফলাফল হাতেনাতে পাওা শুরু হয়েছে। এরপরও কি আমাদের সরকার বিনিত কিছু চিঠি পাঠিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে? তারা কি এরপরও এ বিশয়টাকে গুরুত্বের সাথে নিবেনা? কেন একটি প্রতিবাদ পত্র পাঠানো হচ্ছেনা? যখন সারা পৃথিবী এই এক কোটি শরণার্থীদের সমস্যাকে মানবিক সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের পাশে সাহায্য নিয়ে দারিয়েছে, তখন কেবল মাত্র চীন এমন একটি বক্তব্য রেখেছে। এমনকি তিউনিশিয়াও এমন কোন বক্তব্য দেয়নি। চীন তাদের প্রথম বক্তব্যে এধরনের মন্তব্য করাটা একটি সুস্পষ্ট হুমকি। আমরা হিন্দি-চিনি ভাই ভাই আমলের কথা জানি। আমার মনে হয় সেই দিনগুলো আবার ফেরত আসছে। আমি ভেবছিলাম সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত আসবে এবং বন্ধুভাবপন্নতা বেড়ে যাবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ চিঠি আদান-প্রদান হচ্ছে। এসব কিছু আমাদের ভাবিয়েছিল যে আমরা একটি ভিন্ন পথে হাটছি এবং চিনের সাথে বন্ধুত্ব সম্ভব, কিন্তু খুব দ্রুতই সে চিন্তার অবসান ঘটল। ভারত সরকার বিশয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত যে চীন তাদের প্রথম বক্তব্যেই এধরনের কথা বলছে, এবং তাদেরকে একটি প্রতিবাদ পত্র পাঠানো উচিত উল্লেখ করে যে ভারত কোন বিধ্বংসী কার্যক্রম করছেনা। ভারত যা করছে, তা মানবতার খাতিরে। এক কোটি মানুষ মিলিটারি জান্তার অত্যাচারে তাদের ভিটামাটি ছেরেছে। আমাদের বিষয়টি খুবি গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। বিনয়িভাবে কাজ হবেনা, ভারতকে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
মিঃ ডেপুটি চেয়ারম্যানঃ আপনার প্রশ্নটা কি?
শ্রী এন। শ্রী রামা রেড্ডিঃ ভারত কি শুধুমাত্র চিঠি লিখেই সন্তুষ্ট থাকবে, নাকি তারা কোন প্রতিবাদ পত্র পাঠাবে?
সর্দার শরন সিংঃ প্রতিবাদ পত্র পাঠানোর কোন প্রয়োজন নেই। আমি আমাদের কথাগুলো অত্যন্ত স্পষ্টভাবে জানিয়েছি। জাতিসংঘ ফোরামে প্রতিটি দেশই তাদের বক্তব্য জানাতে পারে। আমরা সেখানেই আমাদের বক্তব্য রাখব, এবং এ বিষয়ে প্রতিবাদ পত্র পাঠানোর কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই।
শ্রী এন। শ্রী রামা রেড্ডিঃ এধুরনের ঘটনা শুধুই সুচনা। আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামে আছি। আমাদেরকে চীন প্রতিনিধির উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ বিবেচনা করতে হবে।
সর্দার শরন সিংঃ জি জনাব, আমরা তাইই করেছি। এবং আমি আমাদের সম্মানিত সদস্যের প্রতিটি বক্তব্যও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি।
শ্রী ভুপেশ গুপ্তঃ চীন আমেরিকার সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখুক, আমাদের তাতে কোন আপত্তি নেই, কিন্তু তা যেন রাশিয়ার বিরোধিতার উপর ভিত্তি করে না হয়। বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে এমন কারো পক্ষে বাংলাদেশের এই আন্দোলনের বিরোধিতা করা ও ইয়াহিয়া খানের সমর্থন করা সম্ভব না। এটি আমাদের সবারি দায়িত্বশীলতার একটি বিশাল পরীক্ষা। আমি দেখেছি যে বর্ডার এরিয়াতে মুক্তিবাহিনী রাজাকারদের কাছ থেকে চায়নিজ অটোমেটিক রাইফেল বাজেয়াপ্ত করছে। মাও বলেছিলেন, বন্দুকের নল শক্তির উৎস। এখন মনে হচ্ছে বন্দুকের নলের এই শক্তি ইয়াহিয়া খান তার শক্তি অক্ষত রাখার কাজে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ থিওরি কাজে আসছেনা।
যদি সরকার সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চায়, তবে তা ভাল। যদি নিতীমালা অনুযায়ী করা হয়, তবে এর মধ্যে কোন ভুল নেই। যেমনটি তিনি বলছেন, আমাদের উস্কানিতে ভুললে চলবে না। আমি এই বিষয়ে মন্ত্রিসাহেবের সাথে সম্পূর্ণ একমত যে আমাদের মনে রাখতে হবে যে ইয়াহিয়া খান তার নীলনকশার বাস্তবায়ন করার জন্যই এর ফায়দা লুটতে চাইবে। এটাও মনে রাখতে হবে যে ভুট্টোর চায়না সফরকালে তিনি আশানুরূপ ফলাফল পাননি। সারা পৃথিবীর সাংবাদিকরা সে সফরে গিয়ে বলেছেন, ভুট্টো কিছু পাননি। এমনকি কোন আশ্বস্ততাও না। আমি এটাতে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইনা। কিন্তু আমার মনে হয় চায়না কিছু অন্তর্বর্তী সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা লিন পিয়াও এবং অন্যান্য অন্তর্বর্তী শক্তিগুলোর মধ্যকার কোন্দলের কথা শুনেছি। আমাদের পলিসি নেয়ার আগে এসকল বিষয়গুলোই বিবেচনা করতে হবে। আমার বন্ধু সদস্য সরকারকে তাদের ক্ষতি বিষয়ে উদ্বিগ্ন হতে বলেছেন। আমি, সরকার এক্ষেত্রে যে অবস্থান নিয়েছে, তা সম্পূর্ণ সমর্থন করি এবং আমি আশা করবো, আমার সহকর্মীর উপদেশ না শুনে সরকার এ বিষয়ে জ্ঞান ও ধৈর্যের পরিচয় দিবে। আমি একটু অবাক হয়েছি। যখন ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি আসলো, আমার বন্ধু তখন চীনের সাথে বন্ধুত্ব চাচ্ছিলেন। যদি রাশিয়া হয়, তবে চীন কেন নয়, এই ছিল তার মনোভাব। আজ তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছেন। আমি জানিনা, এর মানে কি। আমি বিশ্বাস করি সর্দার শরন সিং একজন অত্যন্ত বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং বর্তমান এই কঠিন পরিস্থিতিতে পারলামেন্ট থেকে তাকে যথাসম্ভব সমর্থন জানানো প্রয়োজন। এসময়ে আমাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার মনোভাব পরিত্যাগ করা উচিত। বাংলাদেশের মানুষ ও জাতীয় স্বার্থের কথাই মুখ্য হওা উচিত যখন আমরা বৈদেশিক পলিসি বিষয়ে বা বিশ্বব্যাপী চলমান ঘটনাসমুহ বিশ্লেষণ করবো।
শ্রী থিল্লাই ভিল্লালানঃ জনাব, আমি শুধুমাত্র একটিই প্রশ্ন করতে চাই। যে তির্যক বক্তব্য চিনা প্রতিনিধি জাতিসঙ্ঘে দিয়েছেন, তা বহুবছর ধরে আমরা যে ভাবমূর্তি তৈরি করে এসেছিলাম, তা ধংস করে দিয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সারা বিশ্বে এ বক্তব্যের কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে? আমি স্পষ্টভাবে জানতে চাই যে এর ফলে যেসব দেশ আমাদের সমর্থন করছিল, তাদের চিন্তায় কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা।
সর্দার শরন সিংঃ জনাব, আমাদের জানামতে, আমাদের সমর্থন করে এমন কোন দেশের আচরনে কোন ধরনের পরিবর্তন আসেনি। কেউ বলেনি যে এই ঘটনা সম্পর্কে তাদের মুল্যায়ন বা চিন্তাধারায় কোন পরিবর্তন হয়েছে। এই বক্তব্যের সুত্র ধরে কোন পরিবর্তনের কথা কেউ আমাদের জানায়নি।
শ্রী পিতাম্বর দাসঃ মহোদয়, একটি ছোট্ট কথা আমি জিজ্ঞেস করবো। চীন আমাদের প্রতিবেশি, পাকিস্তানও আমাদের প্রতিবেশি। প্রতিবেশীর সম্পর্ক বজায় রাখা নিজের জন্য লাভজনক হয় এবং সকলেই চায় ভাল সম্পর্ক থাকুক, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দুর্ভাগ্য প্রতিষ্ঠাকাল হতে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা স্বত্বেও সম্পর্ক ভাল হচ্ছেনা। পাকিস্তান আমাদেরকে এক নম্বর শত্রু বলে অভিহিত করেছে। এবং যখনি সুযোগ পেয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালিয়েছে। চীনের সঙ্গে আমাদের মিত্রতার সম্পর্ক ছিল, আর এমন দিন ও এল যখন সে সম্পর্ক ছিন্ন হল। ১৯৬২ সালে আমাদের উপর যখন আক্রমন করা হয় তখন এই পরামরশ দেয়া হয়েছিল যে চীনা আক্রমনকালে পাকিস্তানের সঙ্গে যেকোন ভাবে মিত্রতার সম্পর্ক গড়ে রাখা হোক কেননা দুই প্রতিবেশীর সাথে যুগপৎ ভাবে বিবাদ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সেটি কারো কাম্যও নয়। এতদুর পরামরশ দেয়া হয়েছিল যে যদি পাকিস্তানকে কাশ্মীর দিয়েও খুশি করা যায় তবু ভাল কেননা চীনের সঙ্গে বিবাদ আছে। অতঃপর যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বিরোধ হল, তখন এতদুর পর্যন্ত বলা হল যে আক্সায়ে চীন সম্পর্কেও আলোচনা করা হোক। আমি একথা বলছিনা যে, কেউ চিনকে আক্সায়ে চীন দিয়ে দিতে বলেছে (আমি অতদুর যাব না)। হ্যা আক্সায়ে চীন প্রশ্নে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যদি কাজ চলে তবে সম্পর্কের পুনরুদ্ধারের জন্য সেটি অত্যন্ত ভাল কাজ হবে। এই পরামর্শ রাখা যায়।
অতএব আমি বলতে চাই, এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে চীনের সঙ্গে যখন আমাদের বিরোধ বাধে তখন কিছু না কিছু নিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে চলুন, আর যখন পাকিস্তানের সাথে বিরোধ আসন্ন তখন চীনের সঙ্গে আপোষ করে সম্পর্ক রেখে চলুন। আমরা যখন এই আবর্তে পড়ে গেছি তখন তা থেকে বের হবার জন্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কি ভাবছেন এবং তার পরামর্শ কি?
সর্দার শরন সিংঃ জনাব, সম্পর্কের উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে যাব, এমন কোন পলিসি আমরা গ্রহন করিনি। অবস্থান পরিবর্তন করা একটি ভুল প্রচেষ্টা এবং এছারাও সম্পর্কের উন্নয়ন সম্ভব।
শ্রী পিতাম্বর দাসঃ সেটি মতবাদের বিষয়।
সর্দার শরন সিংঃ এটি সিদ্ধান্তের বিষয়। পার্লামেন্ট এবং সরকারের সিদ্ধান্ত। মুখ্য বিশয়গুল সবসময়ি আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব। আলোচনা এভাবেই হয়। যেকোন অবস্থায় বা সময়েই এমন উপদেশ দাওয়া ভুল হবে যে কাশ্মীর বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটান বা তার পরিকল্পনা করবো। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি অনৈতিক উপদেশ। আমরা কখনই এই পরিকল্পনা করবো না। আমরা সবসময় কাশ্মিরকে ভারতের অন্তর্বর্তী অংশ ভেবে এসেছি। এই বিষয়ে কোন ব্যত্যয়ের সুযোগ নেই। এমনকি এখন যখন চীনের সাথে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশির সম্পর্ক স্থাপন করতে চাচ্ছি, আমাদের সরকারের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে, এবং চাইলে সরকার তা পরিবর্তন করবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা উদ্দেশ্য আমাদের প্রতিবেশি বিষয়ে বেশ স্পষ্ট, যে আমাদেরকে আমাদের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। কিন্তু তা আমাদের অবস্থান বজায় রেখেই করতে হবে এবং এই উদ্ভুত সমস্যাগুলোর জন্য আমরা পলিসির এই উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হবনা। এই সমস্যাগুলো অসম্ভব বাস্তব, কখনও অসহ্য, কিন্তু বিষয় হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের জন্য সম্মানজনক উপায়ে আমাদের পলিসি বাস্তবায়ন এবং লক্ষ্য অর্জন করা বেশি জরুরি হয়ে পড়ে। এবং সেটি আমাদের স্বার্থ পরিত্যাগ করা ছাড়াও করা সম্ভব।
মিঃ ডেপুটি চেয়ারম্যানঃ মিঃ পুরি, শেষ প্রশ্ন।
শ্রী দেভ দত্ত পুরী (হরিয়ানা)ঃ প্রথমত আমি সদস্যের অনুরোধ জানাবো এমন সময়ে এত স্পর্শকাতর বা এত খুদ্র মন-মানসিকতার পরিচয় না দিতে, যখন আমরা দেখছি যে চীন আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করছে, এবং এ বিষয়ে আমরা এতই কাতর হয়ে পরেছি যে আমরা আমাদের এলাকাসমুহ বিক্রয় করা, বা এমন আরো অনেক ধরনের পরিকল্পনা করা শুরু করবো। একি সাথে আমি সরকারের কাছে থেকে পরিষ্কার, স্পষ্ট নিশ্চয়তা চাই যে তারা বাংলাদেশের করা পাকিস্তানের এই অরাজকতার দরুন, তাদের একঘরে করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে, চীন যাই বলুকনা কেন। এই নিশ্চয়তা আমি সরকারের কাছ থেকে চাই। একি সাথে আমি জানতে চাই, যে হতে পারে ঐ তাইওয়ানিজ ব্যাক্তিরা অন্যায় পন্থায় তাদের ভিসা নিয়েছে, কিন্তু কোনভাবে কি তাদের ভুল সংশোধনের সুযোগ দেওা যাবে না?
সর্দার শরন সিংঃ স্যার প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলছি, আমার মনে হয়, পাকিস্তানি সেনা শাসকদের এই অত্যাচার তাদের নিজেদের জনগণেরই গনতান্ত্রিক অধিকারকে দমন করছে, যার কারনে আজ পাকিস্তান একঘরে হয়ে পরেছে। পৃথিবী পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পেরেছে এবং পাকিস্তানি মিলিটারির পক্ষে সমর্থন খুবি নগন্য। মুলত একারনেই তারা একঘরে।
এবং আমার মনে হয় পাকিস্তানকে সমর্থন করে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলে তা গৃহীত হবেনা, কেননা তারা নিজস্ব উপায়ে ঘটনাবিবরন প্রত্যক্ষ করে গেছে। এবং আমার মনে আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের এ পরিস্থিতিতে কি জরুরী সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা রাখে।
আর তাইওয়ানিজদের বিষয়ে আমি বলবো, যে এই বিষয়ে আমরা কখনই অসহায় নই। আমরা চাইলে তাদের বের করে দিতে পারতাম, কিন্তু তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং তারা দেশ ত্যাগ করে চলে গিয়েছে ইতিমধ্যে।