গেরিলাদের সফল অভিযান অব্যাহত
(নিজস্ব সংবাদদাতা) নবাবগঞ্জ ঃ গত ২৯শে অক্টোবর আমাদের মুক্তিবাহিনীর আটজন দুর্ধর্ষ গেরিলা নবাবগঞ্জ থানায় এক আক্রমণ চালিয়ে পাকহানাদার ও বদর বাহিনীর ৫২ জনকে হত্যা করে এবং ২৮ জন রাজাকারকে অস্ত্রশস্ত্র সহ বন্দী করে। এ সংঘর্ষে আমাদের মুক্তিবাহিনীর একজন বীরযােদ্ধা শহীদ এবং অপর একজন সামান্য আহত হন। | লৌহজং গত ২৬শে অক্টোবর শত্রু সৈন্যবাহী দুটি স্পীডবােট শ্রীনগর থেকে লৌহজং অভিমুখে যাত্রা করলে আমাদের বীর গেরিলারা পথিমধ্যে গােয়ালিনী মান্দ্রা বাজারের নিকট এক প্রবল আক্রমণ চালিয়ে ৩৬ জন হানাদার সৈন্যকে নিহত এবং ৮ জনকে বন্দী করে। নিহতদের মধ্যে সুবেদার কোরবান আলী এবং লেন্সনায়ক মােনসের খান ও রয়েছে। এ সংঘর্ষে দুটি হালকা মেশিনগান ও ৩৪টি রাইফেলসহ বেশ কিছু গােলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। শ্রীনগর ও গত ২৪ শে অক্টোবর শ্রীনগর থানার কামার খােলা গ্রামে আমাদের মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা পাকসেনা ও রাজাকারদের একটি দলের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা করে। ছদ্মবেশী রাজাকার ধৃত ও নিহত গত ২৫শে অক্টোবর আমাদের গেরিলারা শেখরনগরে একটি স্পীড বােটে তল্লাসী চালিয়ে ছদ্মবেশী দু’জন বিহারী রাজাকার গ্রেফতার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের হত্যা করা হয়। সংবাদে প্রকাশ কয়েকদিন আগে গােয়েন্দাগিরি করতে এসে আরেকজন রাজাকার চুরাইনের জাগ্রত জনতার হাতে ধরা পড়ে প্রাণ দেয়।
দালাল নিধন ঃ গত ১৫ই অকটোবর আমাদের মুক্তিবাহিনীর হাতে হানাদার বাহিনীর দিশারী কুখ্যাত দালাল মাওলানা আহমদউল্লাহ ও তার ছেলে বাহরুল ধরা পড়লে তাদেরকে গণ আদালতে উপস্থিত করা হয়। দেশমাতৃকার প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও বেঈমানীর প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। রাজাকারদের আত্মসমর্পণ জয়পাড়া থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানাচ্ছেন গত ২৬ শে অক্টোবর কিনাই মােল্লার ছেলে সহ ১২ জন রাজাকার অস্ত্রশস্ত্র সহ মুক্তি বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে। হানাদার দস্যুদের বর্বরতা গত ২৬শে অক্টোবর দুটি বড় লঞ্চ বােঝাই হানাদার দস্যুরা শেখরনগর ও তার আশে পাশে গ্রামগুলিতে নিরস্ত্র জনগণের উপর বেপরােয়াভাবে গুলি বর্ষণ করে, ফলে ২০ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে দু’জন মহিলা এবং একটি শিশুও রয়েছে। ঘনশ্যামপুরে দু’জন মহিলার মধ্যে একজন আট দিনের শিশু সন্তানকে রেখে বাঁচার জন্য পুকুরে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু হানাদারদের শ্যেনদৃষ্টি ওঁরা এড়াতে পারল না। দুটি বুলেট ওঁদের বক্ষ বিদীর্ণ করে চিরতরে ‘মা’। ডাক শােনা বন্ধ করে দিল। হানাদারদের নৃশংসতার এখানেই শেষ নয়-শেখরনগর ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে অসংখ্য ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে বাংলার অসংখ্য মেহনতী মানুষকে ওরা। আশ্রয়হীন করে দেয়।
বাংলাদেশ (৪) ১:১
৩১ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯