You dont have javascript enabled! Please enable it!

কমনওয়েলথ সম্মেলন
বঙ্গবন্ধু তৃতীয় বিশ্বের বক্তব্য তুলে ধরছেন

সাম্প্রতিক কমনওয়েলথ সম্মেলনের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বিজয় সম্পর্কে নতুন করে মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কমনওয়েলথ সম্মেলন শেষে বিজয়ীর গৌরব নিয়ে ফিরে এসেছেন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের বক্তব্যের স্বীকৃতি এবং ইশতিহারে অন্তর্ভুক্তি এক দিকে যেমন ন্যায়নীতির বিজয় ঘোষণা করেছে,তেমনি এর মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কুটনৈতিক সাফল্যের পরিচয়। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশ হয়েও বঙ্গবন্ধু এই সম্মেলনে বাংলাদেশের বক্তব্যকে তুলে ধরেছেন যুক্তির মাধ্যমে, তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম দেশ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির স্বকীয়তার।

কমনওয়েলথ সম্মেলনে নৈতিক বিজয় অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ বিজয় আকষ্মিক নয়৷ স্বাধীনতার পর থেকেই শান্তি, স্বাধীনতা ও প্রগতির স্বার্থে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে নীতিমালা অনুসরণ করছে, এ বিজয় তারই সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া৷

উপমহাদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জড়িত বলেই, এ প্রশ্ন ছাড়াও অন্যান্য প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন তা কমনওয়েলথের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি অর্জন করতে পেরেছে বলেই, বঙ্গবন্ধু মুক্তিকামী জনগণের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি বলিষ্ঠ সমর্থন জানাতে পেরেছেন। শুধু তাই নয়, নামিবিয়া ও জিম্বাবুয়ে মুক্তির লড়াইয়ে নিয়োজিত স্বাধীনতা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে এদেশীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেনছেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও প্রকৌশল কলেজ এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বার এসব দেশের তরুণদের জন্য খোলা সম্ভব হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এই সংগ্রামী মনোভাব পোষণ করা।

ছোট দেশ হলেও সে সীমাবদ্ধতা অন্যায়ের বিরূদ্ধে প্রতিবাদে বাংলাদেশের জন্য কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। মুক্তির শর্ত হিসেবে বঙ্গবন্ধু অভিমত প্রকাশ করেন, শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পাশাপাশি সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রস্তুতিও অব্যাহত রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্য অসংগতিপূর্ণ নয়।

এ বক্তব্যের স্বার্থকতা প্রমাণ করতে হলে, আমাদের যেতে হবে অতীতে – ১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে। পাকিস্তানী কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু যেদিন ফিরে এলেন, সেদিন থেকেই তিনি পররাষ্ট্র নীতির এই মৌলিক উপাদান – জোট নিরপেক্ষতা এবং অন্যায়ের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ এই দুটোর উপর গুরুত্ব আরোপ করে এসেছেন। বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, আজকের বিশ্ব বৈদেশিক শক্তির প্রভাব মুক্ত হয়ে টিকে থাকতে হলে এ নীতি অনুসরণ ভিন্ন অন্য কোন পথ নেই।

উপমহাদেশের প্রসঙ্গ থেকে শুরু করে বিশ্বের সর্বত্র যেখানেই উত্তেজনা দেখা দিয়েছে কিংবা যেখানেই মুক্তিকামী মানুষ মুক্তির জন্য লড়াই করছে, সেখানেই বাংলাদেশ এ নীতিমালা অনুসরণ করছে।

কম্বোডিয়ার রাজকীয় সরকার এবং ভিয়েতনামের বিপ্লবী সরকারের প্রতি স্বীকৃতি প্রদান। পৃথিবীর অনেক দেশ যখন এ ব্যাপারে দ্বন্দের সম্মুখীন হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ সাহসীকতার সাথে স্বীকৃতি জানিয়েছে এ দুটি সরকারকে। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে অব্যাহত রেখেছে সমর্থন কি জাতিসংঘ চত্বরে, কি আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে। কেননা, বঙ্গবন্ধু জানতেন, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।

আলজিয়ার্সের জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনেও বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র নীতি ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। সেই সম্মেলনেই বঙ্গবন্ধু কম্বোডিয়ার রাষ্ট্র প্রধান প্রিন্স সিহানুককে জানিয়েছেন তার সমর্থনের কথা।

বলেছেন, কম্বোডিয়ার জনগণের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনের কথা।

ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনেও, বঙ্গবন্ধু একই ভাবে, মুসলিম রাষ্ট্র গুলোর স্বার্থ কে বিবেচনা করে তার বক্তব্য রেখেছেন।

পরিশেষে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। এই সম্মেলনেই বঙ্গবন্ধু বলিষ্ঠতার সঙ্গে উন্নতিশীল দেশগুলোর বক্তব্য তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, উন্নতিশীল দেশ সমূহের প্রতি ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রতিবিধান করে তুলতে হবে।

উন্নতিশীল দেশগুলোর স্বার্থেই নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তার কারণ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিরাট অর্থনৈতিক বৈষম্য গোটা পৃথিবীর জন্যই মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করে চলেছে। এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যখন দারিদ্র ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত, তখন কোন কোন দেশ প্রাচুর্যে ভারাক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মানের জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে। এই বৈষম্য দূর করার জন্য অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যতদিন পর্যন্ত বৈষম্য বজায় থাকবে ততদিন বিপন্ন হতে থাকবে মানবতা।

নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বান উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ভেবে দেখতে হবে। এ বক্তব্য যে ইতিমধ্যেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে নাড়া দিয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে। তারা এজন্য স্বাগত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে। অপরদিকে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্বীকৃতি মিলেছে কমনওয়েলথ সম্মেলন শেষে প্রকাশিত ইশতেহারে। ইশতেহারে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য স্থান পেয়েছে। একক বক্তব্য বলে নয়, বঙ্গবন্ধু সমষ্টিগত ভাবে তৃতীয় বিশ্বের বক্তব্য তুলে ধরেছেন বলেই।

বঙ্গবন্ধু সব সময় একই বক্তব্য রেখেছেন। বর্তমান কমনওয়েলথ সম্মেলনেও, অতীতের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, বাংলাদেশ উপমহাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিকীকরণের পক্ষপাতী।

তিনি উপমহাদেশের শান্তি ও সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য তার দেশ কে সাবেক পাকিস্তানের সম্পদের ন্যায্য অংশ হস্তান্তর করার এবং ৬৩ হাজার পাকিস্তানী পরিবার যারা পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেছে, তাদের পাকিস্তানে ফেরত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু বলেন, এই অমীমাংসিত আশু নিষ্পত্তি করা গেলে তা উপমহাদেশে সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে ও আমাদের এই অঞ্চলে শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে৷

বাংলাদেশের এই ন্যায়সংগত দাবীর প্রতি সমর্থন মিলেছে, কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন শেষে প্রকাশিত ইশতেহারে। ইশতেহারে এ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রধান প্রধান প্রশ্নে বাংলাদেশের নীতি অনুমোদিত হয়েছে৷

বিগত তিন বছরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা বঙ্গবন্ধু অনুসৃত পররাষ্ট্র নীতির ফসল। আগামী দিনেও এই বিজয় অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের জন্য নিয়ে আসবে নতুন গৌরব।

***

দেশ দেশান্তর

বঙ্গবন্ধুর কাছে সিহানুকের বাণীঃ যুক্তরাষ্ট্রের দস্যুতা

কম্বোডিয়ার খেমার রুজ বাহিনীর চূড়ান্ত বিজয়ের পর পরই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রিন্স সিহানুকের প্রতি এক অভিনন্দন বাণী পাঠান। গত ১৬ ই মে বঙ্গবন্ধুর সে বাণীর জবাবে সন্তোষ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রিন্স সিহানুকও একটি বার্তা পাঠান বঙ্গবন্ধুর কাছে। সিহানুক তার বাণীতে বলেনঃ সাম্রাজ্যবাদ ও তার শিখন্ডীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় উপলক্ষে পাঠানো বাংলাদেশের মহান নেতার বাণী কম্বোডিয়ার জনগণ, সংযুক্ত জাতীয় ফ্রন্ট, কম্বোডিয়ার জাতীয় ইউনিয়নের রাজকীয় সরকার ও জাতীয় গণমুক্তি বাহিনী গভীর কৃতজ্ঞতা ও উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।

সিহানুক বলেনঃ আপনাকে গভীর ভাতৃপ্রতিম শুভেচ্ছার আশ্বাস দিচ্ছি।

তিনি বলেনঃ আমাদের দুই দেশ কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশের জনগণের মৈত্রী সম্পর্কের উন্নয়নে আমরা আনন্দিত।

মায়াগুয়েজঃ

নমপেনের কেন্দ্রীয় শাসন তার গণমুক্তি বাহিনী তার হাতে নেয় ১৭ ই এপ্রিল। গণমুক্তি বাহিনীর বিজয়ের পর সিহানুক এখনও অবস্থান করছেন পিকিংয়ে। ইতিমধ্যে নমপেনের জাতীয় রাজকীয় ইউনিয়ন সরকার দেশের পুনর্গঠনমূলক কাজ শুরু করেছেন। নীতি নির্ধারনী ভাষণে থিউ সমদান বলেছিলেনঃ কম্বোডিয়া সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর থেকে কোন ধরণের ঋণ নেবে না। এবং বিদেশ – নীতি নির্ধারণের ব্যপারে কম্বোডিয়া – চীন মৈত্রীকে স্ট্র্যাটেজিক ভিত্তি হিসেবে দেখবে। রাষ্ট্র প্রধান সিহানুকও পিকিং থেকে একই কথা বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সাথে কম্বোডিয়ার আগামী কয়েক বছরের কোন সম্পর্ক হবে না। এভাবে যখন সবকিছু ঠিকঠাক চলছে, কম্বোডিয়ার জনগণ যখন নতুন উদ্দীপনায় মুক্ত দেশের মাটিতে নতুন জীবন শুরু করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে তখন বহির্বিশ্বে বিরূপ এক প্রচারণা চলতে থাকে। গত ১২ ই মে হঠাৎ ‘ম্যাগগুয়েজ’ নামে একটি মার্কিন জাহাজ কম্বোডীয় সমুদ্রোপকূলে প্রবেশ করে এবং কম্বোডীয় নৌ বাহিনীর হাতে জাহাজটি আটক হয়। সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচার চলতে থাকে, দূর সমুদ্র থেকে কম্বোডীয় নৌ বাহিনী জোর করে তাদের বন্দরে নিয়ে আটক করে রেখেছে। এই যুক্তির উপরই শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের নগ্ন দস্যুতা। প্রেসিডেন্ট ফোর্ড তড়িঘড়ি করে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কম্বোডিয়ার প্রতি ‘ভয়ানক পরিণতি’ র হুমকি প্রদর্শন করেন এবং অবিলম্বে জাহাজটি ফেরত দিতে বলেন। তার পরই ফোর্ড জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বান করেন এবং এক হাজার নৌ সেনাকে ওকিনাওয়া থেকে থাইল্যান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে সংকট দেখা দেওয়ার সাথে সাথে থাই প্রধান মন্ত্রী কুরকুত প্রমেজ বলেন, মায়াগুয়েজ উদ্ধারের ব্যাপারে কম্বোডিয়ার থাই ঘাঁটি উটাপাও হতে কোন রকম হামলা চালাতে দেয়া হবে না যুক্তরাষ্ট্রকে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত উটাপাও থাই ঘাঁটি থেকেই মার্কিনী জেট এবং বোমারু বিমানগুলো উড়ে কম্বোডিয়ার মূল ভূখণ্ডে হামলা চালায়। কম্বোডিয়ার তিন টি গানবোট ডুবিয়ে দেয়। শান্তিপূর্ণ আলাপ আলোচনার পথে না গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নির্লজ্জ দস্যুবৃত্তির আশ্রয় গ্রহন করে। এর কারণ, বৃহদাকার এই জাহাজটি ছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার। মায়াগুয়েজকে কম্বোডিয়া অবশেষে ছেড়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ধৃত থাই এবং মার্কিনী নৌ সেনাদের কাছে থেকে এ স্বীকৃতি আদায় করে নেয় যে, তারা সিআইএ – এর চর। কম্বোডিয়ার তথ্যমন্ত্রী হু নিম যে ভাষ্য দেন, তাতেই এই তথ্য জানা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের এই গানবোট এবং নৌ গুপ্তচরবৃত্তি ও দস্যুতা আজ নতুন নয়। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ‘৬৮ এবং ‘৭২ এ এমনি ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। এবারের ঘটনাও যুক্তরাষ্ট্র নিন্দিত হয়েছে জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্র গণচীন, উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম কর্তৃক।

এবারের মায়াগুয়েজ ঘটনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, থাই মার্কিন সম্পর্কের অবনতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক – রিপাবলিকান পার্টির মতৈক্য। যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনা সৃষ্টি করেছে নিজ উদ্যোগে। তার লক্ষ্য ছিল, বিশ্বব্যাপী তার উপর নির্ভরশীলদের এটা বোঝানো যে যুক্তরাষ্ট্রের সংকটে আর পিছিয়ে পড়বে না। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো অবশ্য এতে যে খুব খুশী হয়নি তা বোঝা গেছে, থাইল্যান্ডের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায়। ফিলিপাইনও এতে খুব একটা সন্তুষ্ট হয় নি৷ থাইল্যান্ড সরাসরি বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রকে বিনা অনুমতিতে উটাপাও ঘাঁটি ব্যবহারের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। মায়াগুয়েজ ঘটনার পর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দুটো দেশ থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইন এবার আরো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, কত তাড়াতাড়ি মার্কিন ঘাঁটির আপন তাদের মাটি থেকে দূর করা যায় তার জন্য। শেষ কথায় বলা যায়, মায়াগুয়েজ সংকটে কম্বোডিয়ার গানবোট ডুবল না – ডুবেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্র নীতি। কারণ বেপরোয়া দস্যুতার মধ্যে দিয়ে পরাজিতের মনোভাবই ফুটে উঠেছে।

[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1975.05.23-bichitra.pdf” title=”1975.05.23 bichitra”]

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!