You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.25 | মস্কো, বন, প্যারিস, অটোয়া, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন এবং লন্ডন সফর শেষে প্রত্যাগত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২০০। মস্কো, বন, প্যারিস, অটোয়া, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন এবং লন্ডন সফর শেষে প্রত্যাগত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৫শে জুন, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ২৫শে জুন লোকরাজ্য সভায় ৬ই জুন হতে ২২শে জুন পর্যন্ত মস্কো, বন, প্যারিস, অটোয়া, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডি. সি. এবং লন্ডন সফর শেষে প্রত্যাগত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি

১৯৭১ সালের ৬ই জুন হতে ২২শে জুনের মধ্যে আমি মস্কো, বন, প্যারিস, অটোয়া, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন এবং লন্ডন ভ্রমণ করেছে, এই সময়ে এই প্রত্যেকটি রাজধানীতে সরকার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ মহাসচিব উ- থান্ট এবং তার সহকর্মীদের সাথে আমার আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি রাজধানীতেই অনেক সরকারী নেতা, আইনজীবি, সম্পাদক, সমাজকর্মী এবং নেতৃস্থানীয় মতবাদীদের সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে।

এইসব আলোচনার মূল মনোযোগ ছিল এবং যাতে জোর আলোচনা হয়েছে তার পুরোটাই হচ্ছে পূর্বববঙ্গ হতে ৬০ লক্ষাধিক উদ্বাস্তুর অনুপ্রবেশের ফলে ভারতের জন্য দায়জনক গুরুতর পরিস্থতির সৃষ্টি এবং আমাদের অঞ্চলে এই সঙ্কট অব্যাহত থাকার কারণ হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক যন্ত্র দ্বারা পূর্ববঙ্গে ব্যাপক হত্যাকান্ড চালানো।

আমার ভ্রমণ শেষেই আমাদের সাথে আশ্বাস স্বরূপ মস্কো, বন, প্যারিস, ওয়াশিংটন এবং লন্ডন তাদের নিজ দেশের সরকারের পক্ষে বিবৃতি দেয় এবং এতে এটাই আয়োজক দেশের সাধারণত যে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত তাই প্রকাশ করে। অটোয়াতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিচেল শার্প কানাডিয়ান হাউজ অব কমন্সে যে বিবৃতি দেন তা তাদের অবস্থানকে ইঙ্গিত করে।

এইসব বিবৃতির অনুলিপিগুলো মন্ত্রণালয়ের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

আমার দ্বারা পরিদর্শিত দেশের সরকারের সংগে আমার আলোচনার ফগলস্বরূপ চুক্তির নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের উপর আলোকপাত করা হয়ঃ

(১) এটাই যে, এতে কোন প্রকার সামরিক সমাধান হতে পারে না এবং অবিলম্বে পূর্ববঙ্গে সমস্ত সামরিক কার্যকলাপ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

(২) এটাই যে, অবিলম্বেই পূর্ববঙ্গ হতে উদ্বাস্তুদের ভারতে আগমণ বন্ধ করতে হবে।

(৩) এটাই যে, উদ্বাস্তুরা তাদের ঘরে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ অবশ্যই তৈরী করতে হবে এবং এটা তখনই সম্ভব হবে যখন উদ্বাস্তুদের পূর্ববঙ্গে তাদের নিজেদের ঘরে নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

(৪) এটাই যে, রাজনৈতিক সমাধান পূর্ববঙ্গের লোকদের কাছে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার একমাত্র পথ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

(৫) বর্তমান পরিস্থিতি এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ এবং বিপদে পরিপূর্ণ।

পূর্ববঙ্গ হতে ৬০ লক্ষাধিক ব্যাপক উদ্বাস্তুর ভারতে অনুপ্রবেশ যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ঘটে যায় তা অসহনীয় এবং এটা যে ভারত সরকারের কাছে সম্পদের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই আর্থিক এবং সহানুভূতি উভয় প্রকারের সহযোগীতা করা জন্য সর্বসম্মতভাবেই সম্মত হয়।

প্রতিতি রাজধানীতেই আমি এটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি যে, পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের জন্য যে কোন রকমের সহযোগীতা মূলত পাকিস্তানের প্রতি সহযোগীতা, যারা সেই দেশের জাতীয়তার জন্য তাদের দেশেরই সরকারের একটি অংশের ইচ্ছাকৃত এবং উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ডের জন্য উচ্ছেদ হয়েছিল। আমি পরিষ্কার করে আরো জানিয়েছি যে যা সর্বসম্মতভাবেই গৃহীত হয় তা হচ্ছে, এই ক্রান্তিলগ্নে পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের প্রতি কোন প্রকারের সামরিক সহায়তা তাদের গণবিরোধী কার্যকলাপকে টিকিয়ে রাখতে এবং উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের প্রতি কোন প্রকারের আর্থিক সহায়তা করার মানেই হচ্ছে পূর্ব বঙ্গে তাদের করা গুরুতর অন্যায় কাজগুলো না দেখার ভান করা যা এতোটাই স্পষ্ট এবং এতোটাই অখন্ডনীয় যে এই কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিশ্বের সংবাদ মাধ্যম তা প্রকাশ করে আসছে। এছাড়াও আমি আরো বলেছি যে, আসলে কোন আর্থিক সাহায্য ব্যতীত আন্তর্জাতিক নজরদারিতে মানবিকতার বিচারে সামরিক যন্ত্র দ্বারা পূর্ব বঙ্গে নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু জনতা যা বর্তমানে সেই দেশেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার উপর নিপীড়নে চালিয়ে যাওয়ার উপর প্রভাব ফেলবে এবং এইভাবে তা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার মতো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরী করবে।

এই সমস্ত রাজধানীতে আমি ভারত সরকার এবং জনগণ কর্তৃক এই ব্যাপক উদ্বাস্তু অনুপ্রবেশের ঘটনায় প্রদর্শিত উদারতার দারুণ সমাদর দেখতে পাই, পূর্ব বঙ্গের জনগণ এবং সেই সাথে সেই দেশের জন্যেও মনুষ্য সৃষ্ট এই দুঃখজনক পরিস্থিতি যা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন হিসেব স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতির গুরুত্ব এবং আমাদের কোন অপরাধ করা ছাড়াই আমাদের উপর যে বিশাল বোঝা চেপে বসেছে এবং যদি বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুততার সাথে নিয়ন্ত্রণে আনা না হতো তবে তা এই সমগ্র অঞ্চলের মানুষ ও নিরাপত্তার জন্য যে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতো তা সবর্ত্রই স্বীকৃত হয়।