You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২০৫। ইয়াহিয়া খান কর্তৃক শেখ মুজিবর রহমানের বিচার এবং প্রাণদণ্ডের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা ও প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি রাজ্যসভার কার্যবিবরণী ১২ আগস্ট ১৯৭১

একটি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণঃ
পাকিস্তানি সামরিক আইনের আওতায় শেখ মুজিবর রহমানের বিচারঃ

মাননীয় সভাপতিঃ শ্রী আদভানিজি, এবং শ্রী ভান্ডারিজি, দয়া করে এখানে নয়।

শ্রী পিতাম্বর দাস (উত্তর প্রদেশ)ঃ আমরা পরে সুযোগ নেব। আগে দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়টি পেশ করা হোক।

শ্রী লোকনাথ মিশরা (উরিষ্যা)ঃ মাননীয় সভাপতি, আমি শেখ মুজিবর রহমানের সামরিক আইনের আওতায় বিচার এবং তার মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হুমকি প্রসঙ্গে মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী (শ্রী সুরেন্দার পাল সিং)ঃ মিঃ চেয়ারম্যান স্যার…
শ্রী লোকনাথ মিশরাঃ আমি আপত্তি জানাচ্ছি। আমি পেপারে পরলাম যে পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী আজ ইন্দোনেশিয়া সফরে গেছেন, তিনি নিসচয়ি জানতেন যে আজ এবিষয়ে আলোচনা হবে।

শ্রী জোয়াকিম আল্ভা (প্রার্থী)ঃ উনি কোন ছুটি কাটাতে যাননি।

মাননীয় সভাপতিঃ উনি আমাকে জানিয়েছেন, চিঠি লিখেছেন।

শ্রী লোকনাথ মিশরাঃ উনি কি আপনার অনুমতি নিয়েছিলেন?

মাননীয় সভাপতিঃ জি।

শ্রী লোকনাথ মিশরাঃ তাহলে দয়া করে আপনি ঘোষণা দিন যে তিনি আপনার অনুমতি নিয়েছেন এবং তার অনুপস্থিতিতে…
মাননীয় সভাপতিঃ কিন্তু, মিঃ সুরেন্দার পাল সিং ও একজন মন্ত্রী।

শ্রী লোকনাথ মিশরাঃ আমি জানি, আমি মন্ত্রীদের তালিকা দেখেছি এবং আমি জানি যে তিনিও একজন মন্ত্রী। কিন্তু আমাকে অবশ্যই আমার প্রতিবাদটি অন রেকর্ড রাখতে হত কেননা পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী অনুপস্থিত আছেন।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ আমি আরো জানাচ্ছি যে শনিবারের বিতর্ক পরিচালনা করবেন, মিঃ জগজীবন রাম। জি বলুন, মন্ত্রিসাহেব…

শ্রী সুরেন্দার পাল সিংঃ স্যার, রিপোর্ট অনুসারে গত ১১ই অগাস্ট পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার অভিযোগে পশ্চিম পাকিস্তানে শেখ মুজিবর রহমানের ট্রায়াল কোর্ট মার্শাল শুরু হয়েছে। ট্রায়ালটি ভিডিওতে ধারন করা হচ্ছে এবং কোন বহিরাগত সহায়তা মুজিবকে দেয়া হচ্ছে না।

এর আগেও নানা বক্তব্যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান হুমকি দিয়েছেন যে তাকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হতে পারে এবং তিনি এও বলেছেন যে তিনি নিশ্চিত নন যে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ভবিষ্যতে আবার একত্রিত হবার সময়ে শেখ মুজিবর রহমান জিবিত থাকবে কিনা। আমাদের সরকার এবিষয়ে যথেষ্ট বিচলিত আছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, এর আগে নিজ বক্তব্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে শেখ মুজিবর রহমান ই পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী যখন জাতীয় পরিশদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন জিতে নিয়ে শেখ মুজিব স্পষ্টভাবেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, গোটা পাকিস্তানেই শেখ মুজিবর রহমান একচ্ছত্রভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবছর ২৫ মার্চের পর কি হ্যেছে, তা গোটা বিশ্ব জানে। সামরিক বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের রাজনৈতিক মতামতকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকারসমুহ কেড়ে নেয়া হয়েছে। শেখ মুজিবকে নির্বাচিত এবং অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে ঘোষণা না করে পাকিস্তানে গনহত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। এহেন নজির চলমান সময়ে আমরা দেখিনি। শেখ মুজিবর রহমানকে একটি ভুয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করার মাধ্যমে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে, এবং সারা পৃথিবীর উচিত এর প্রতিবাদ করা। আমরা বারবার শেখ মুজিবর রহমান ও তার পরিবারের, গ্রেফতার থাকাকালীন তাদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা বিষয়ে আমাদের বিচলতা প্রকাশ করেছি। আমরা আমাদের জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল এবং অন্যান্য বিদেশী সরকারের কাছে আমাদের গভীর আশংকা ও চিন্তা জানিয়েছি এবং এবিষয়ে পাকিস্তান সরকারের উপর তাদের প্রভাব খাটানর প্রস্তাব দিয়েছি। এমুহূর্তে শেখ মুজিবর রহমান বা তার পরিবারের কোন ক্ষতি হলে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা চরম আক্রমণাত্মক হয়ে পরবে এবং এর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে পাকিস্তান সরকার। আমরা চাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এর এই অবস্থানের বিরুদ্ধে বিশ্বের মানবতাবাদীগণ বিবেকের তারনায় হলেও রুখে দাড়াক। আমরা চাই এ অন্যায় বিচার এখনি বন্ধ হোক এবং পাকিস্তানের সরকারকে বলে দিতে চাই যে, এর ফল ভাল হবেনা।

শ্রী লোকনাথ মিশরাঃ স্যার, অবশ্যই সরকারের এ চিন্তা যুক্তিযুক্ত। প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত কতজন দেশের মন্ত্রিকে ইয়াহিয়া খানের শেখ মুজিবর রহমানকে সাজানো বিচারে মৃত্যুদণ্ড দাওয়ার চেষ্টার এবিষয়টি চিঠিতে জানিয়েছেন? আমি আশ করবো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চয়ই আজকের পত্রিকায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব উথান্ট এর অভূতপূর্ব বক্তব্য শুনেছেন। একদিকে তিনি বলছেন এই বিচারকার্য পাকিস্তানের বাইরেও অনুরিত হতে পারে, আবার একি বক্তব্যে তিনি বলছেন এ বিচার পাকিস্তানের জুডিশিয়ারির কর্মদক্ষতার মধ্যে। আমাদের সরকার এবং সকলেই জানে যে এটি শুধুমাত্র পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর আন্তর্জাতিক একটা প্রভাব আছে, এবং উথান্ট সে সম্পর্কে অবগত, কিন্তু মনে হচ্ছে তিনি জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব হওয়া স্বত্বেও এবিষয়ে কিছু করতে পারবেন না। এখন সমস্যা হচ্ছে শেখ মুজিবের কিছু হলে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনিকে নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পরবে। ধরে নিলাম যে ইয়াহিয়া খান তার খেয়াল খুশি মত এমন কিছুই করতে যাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে ভারত সরকারের কি উচিত হবেনা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং উথান্টকে একটি আল্টিমেটাম দাওয়া? মুজিবকে হত্যা করলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কখনই আর শান্ত হবেনা, আর তা নাহলে যেসকল শরণার্থী আছে বর্তমানে ভারতে, তারা কখনই আর নিজ ভুমিতে ফেরত যাবেনা, ভারত সরকার ও তাদের ফেরত পাঠাতে সক্ষম হবেনা। এমন একটি সময় ভারত সরকারের কখনই উচিত হবেনা চুপচাপ বসে থেকে কি হচ্ছে তা দেখতে থাকা। সেটা কি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং উথান্টকে জানানো হয়েছে, হয়ে থাকলে উথান্ট এবিষয়ে কি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন? ভারত সরকার কি এবিষয়ে উথান্ট এর কাছ থেকে কোন তথ্য পেয়েছে?

শ্রী সুরেন্দার পাল সিংঃ স্যার, আমি কি সর্বশেষ প্রশ্নটির উত্তরটি সবার আগে বিবেচনা করতে পারি? মাননীয় সদস্য তার বিবেচনা থেকে বলছেন যে ভারত এখানে নিরব অবস্থান নিয়েছে এবং তারা সবকিছুই নীরবে দেখে যাচ্ছেন। কিন্তু এটি সত্য নয়, ঘটনাবলি তা বলেনা। যখনি এবিশয়টা আমাদের নজরে এসেছে, আমরা পৃথিবীর সরবত্র আমাদের বন্ধুভাবাপন্ন দেশে এখবরটি দিয়েছি। সকল মিশনেও এখবর পৌছান হয়েছে, আমাদের যত স্পেশাল ডেলিগেশন বাইরে গেছে, তারাও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। মাননীয় সদস্য ইতিমধ্যে জানেন যে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দুইটি দেশের প্রধানের কাছে চিঠি লিখেছেন। একিভাবে আমাদের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্টের কাছে চিঠি লিখেছেন।

শ্রী লোকনাথ মিশরাঃ ফলাফল কি হয়েছে?

শ্রী সুরেন্দার পাল সিংঃ আমি ফলাফলে আসছি। স্যার, আমাদের সকল বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের কাছে আমরা এই নিশ্চয়তা পেয়েছি যে তারা পাকিস্তান সরকারকে এই ভয়াবহ কাজ থেকে সরিয়ে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। বংলাদেশ বিষয়ে তাদের রাজনৈতিক ভাবনা যাই থাকুকনা কেন, শেখ মুজিবের মুক্তি বিষয়ে তাদের কোন দ্বিমত নেই, এবং মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে তারা সকলেই বিশ্বাস করেন যে শেখ মুজিবকে বাচাতে হবে। তারা আমাদের বলেছে যে তারা অবশ্যই তাদের প্রভাব খাটাবে, এখন তারা কিভাবে এটা করবে, কততুকু করেছে, ৎ বলা আমাদের জন্য কঠিন। আমরা শুধু আশা করতে পারি যে তারা তাদের প্রভাবের ব্যবহার করবে এক্ষেত্রে বা করছে। এই প্রভাবের আদৌ কোন ফলাফল হবে কিনা পাকিস্তান সরকারের উপর, তা বলাও খুব কথীন, কেননা এটি নরভর করছে পাকিস্তান বিশ্ব জনমতের কতটুকু তোয়াক্কা করে তার উপর। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা যা বলে, আমি খুব একটা আশাবাদী নই, কিন্তু আমরা আশা করে যাচ্ছি।

শ্রী লোকনাথ মিস্রাঃ স্যার আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই

মিঃ চেয়ারম্যানঃ কেবল মাত্র একটি প্রশ্ন

শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ এর মধ্যে থেকেই স্যার।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ না না, আমি নিয়ম ভংগ করতে পারি না।

শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ স্যার, আপনি দৃষ্টি আকর্ষণের ক্ষেত্রে দুইটি প্রশ্ন অনুমোদন করেছেন,

মিঃ চেয়ারম্যানঃ না কখনই না, আমি নিয়মের বাইরে যেতে পারবোনা।

শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ সেক্ষেত্রে আমি নিশ্চয়ই একটি বিশাল প্রশ্ন করে ফেলেছি

মিঃ চেয়ারম্যানঃ জি, আপনি বোধহয় তা করেছেন।

শ্রী এন রামা রেডি (মহিশুর)ঃ সকল জাতির মানে কি? জাতিসংঘের সকল সদস্য? আপনি কি সকল জাতি বলতে তাই বুঝেন?

মিঃ চেয়ারম্যানঃ দয়া করে…

শ্রী এন রামা রেডি: স্যার আমাকে অবশ্যই মাননীয় সদস্যের ব্যাখ্যা চাই।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ তিনি অন্য কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় আপনাকে ব্যাখ্যা দিয়ে দিবেন। মাননীয় মন্ত্রী, আপনি অবশ্যই তা করবেন।

শ্রী রাজনারায়ন (উত্তর প্রদেশ)ঃ আমি জানতে চাই, ভারত সরকার কি শেখ মুজিবর রহমানের জীবনের হুমকিকে ভারতের জনগনের জীবনের হুমকি বলে মনে করেন। শেখ মুজিবর রহমানের জীবনের উপর যদি কোন বিপদ আসে তবে ভারত সরকার কি বিশ্বকে এক সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেবেন যে আমরা সেটা আমাদের জনগনের জীবনের উপর বিপদ মনে করবো? একে আপনার স্বত্বার উপর বিপদ মনে করে এবং অনুরুপভাবে জনসাধারনের গভীর উদবেগ প্রকাশ করে তিনি কি ইয়াহিয়া খাঁর সামরিক জঙ্গিশাহির (তানাশাহি) মোকাবেলা করবেন? ভারত সরকার কি সুনির্দিষ্ট, সুসংবদ্ধ পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

শ্রী মহাবীর ত্যাগী (উত্তর প্রদেশ)ঃ নিয়েছে। হাউস এ বলেননি। মাফ করবেন। নিয়েছেন।

শ্রী রাজনারায়নঃ ত্যাগী মহাশয় এমন মানবতার প্রশ্নেও আপনি এরুপ বলছেন। মহোদয়, যেহেতু এই দুই রাষ্ট্রই কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত তাই ভারত সরকার কি কমনওয়েলথকে জানিয়েছে যে শেখ মুজিবর রহমানের জীবনের উপর কোন বিপদ নেমে আসলে ভারত কমনওয়েলথের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে। আমি মনে করি ভারত সরকার সময়মত পদক্ষেপ নিলে হয়ত এ যাবত শেখ মুজিবর রহমানের উপর এরুপ হামলা চলতনা। আজ সকালে মিঃ উথান্ট এর ভাষন আমরা পড়েছি। এনিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছিলাম, উথান্টের এই ভাষনের পড়ে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া কি? উথান্ট বলেছেন যে তিনি আইনের সিমিত পরিধির মধ্যে কাজ করছেন। ভারত সরকার বলছেন যে তিনি পুরোপুরিভাবে পাকিস্তানের নেতা। তিনি সম্পুরন্তঃই পাকিস্তানের। আমি সম্পূর্ণ পাকিস্তান শব্দের তাৎপর্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। কেননা আজ মিঃ গ্রোমিকো ও সর্দার শরন সিং তথা রুশ সরকার ও ভারত সরকার ও এর যে যুক্ত ইশ্তেহার বেরিয়েছে, সুধিবৃন্দ আপনারা তা পরে থাকবেন, তাতে এক অভিনব কথা বলা হয়েছেঃ সমগ্র পাকিস্তানের জনগনের একটি রাজনৈতিক সমাধান হোক।

মিঃ আকবর আলী খান (অন্ধ্র প্রদেশ)ঃ পূর্ব পাকিস্তান।

শ্রী রাজনারায়নঃ সম্পূর্ণ পাকিস্তান। ওতা একটু ভাল করে পরুন। আপনি নবাব সাহেব, তাই আপনি গোটা ইশ্তেহারটা পরে দেখেননি। ঐখানে লেখা হয়েছে যে সারা পাকিস্তানের জনগনের একটা রাজনৈতিক সমাধান হোক। এই সমগ্র পাকিস্তানের জন্য রাজনৈতিক সমাধানের ইশ্তেহার কি মুজিবর রহমানের জীবনের ঝুকি বৃদ্ধি করছেনা। আমি সরকারের কাছে সম্পূর্ণ পাকিস্তানের জন্য রাজনৈতিক সমাধানের অর্থ কি তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবী করছি এবং এও বলছি যে এই ইস্তেহারও মুজিবর রহমানের জীবনের ঝুকি বাড়িয়েছে।

মহোদয়, সংযুক্ত রাষ্ট্র থাক বা না থাক (তাতে কিছু যায় আসে না) আমি চাই ভারত সরকার তার জনগনের কন্ঠের সাথে সুর মিলিয়ে সোচ্চার হোন যে যদি মুজিবর রহমানের জীবনের উপর বিপদ এসে পরে তবে সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘের দুর্গতিও অনুরুপভাবেই হবে। সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘ থাকার আর প্রয়োজন কি, তার মানবাধিকার ঘোষণার মুল্য কি, একদিকে মানবাধিকার ঘোষণা বিদ্যমান অন্যদিকে মুজিবর রহমানের ফাঁসির মামলা চলছে।

সভাপতিঃ আপনার প্রশ্ন কি। প্রশ্ন করুন।
শ্রী রাজনারায়নঃ আমি জানতে চাই, ভারত সরকারের মনোভাব কি। একটি প্রশ্নের দ্বারা এর উত্তর মিলবে না, এটি সকল মানুষের জীবনের মুল্যের প্রশ্ন। তিনি জনগনের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছেন খোদ সরকারই হিসেবে। সবাধিন বাংলাদেশের ১৬৯টি সিটের মধ্যে ১৬৭টী সিট লাভ করেছেন, যা শতকরা ৮৯.৮ ভাগ এবং তিনি প্রায় ৮৪ ভাগ ভোত পেয়েছেন। ঐ স্বাধীনতাকামী মানুষ এভাবে ফাঁসির দন্ড পাবে আর আমরা নিজেদের স্বাধীন বলে দাবি করবো।

মহোদয় সরকার কি অবগত আছেন, গতকালি এখানে গান্ধির মাঠের কাছে এক জনসভায় দের লক্ষ জনতার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হচ্ছে? ভারত সরকারের কাছে আমাদের এই দাবী যে, মুজিবর রহমানের জীবন নাশের আশংকা দেখা দিলে সরকার নিজের জনগনের জীবনের উপর হুমকি মনে করে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। সরকার এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করলে আমরা তার সহযোগিতা করব, সরকার কি এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল?

শ্রী সুন্দর পাল সিঙ্ঘঃ সভাপতি মহোদয়, শেখ মুজিবর রহমানের জীবন বিপদাপন্ন এটা সুনিসচিত কিন্তু মাননীয় সংসদ সদস্যের মন্তব্য যে আমরা এ ব্যাপারে নিরুদবিগ্ন ও উদাসিন, তা একদমি ঠিক নয়। এব্যাপারে আমরাও অনেক চিন্তাভাবনা করছি। আম্রাও চাই যেন তিনি প্রানে বেচে যান এবং তার জন্য চেষ্টা করছি। তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, তার জীবন বিপদাপন্ন এবং এরুপ কোন দুরঘটোনা যদি ঘটে যায় তাহলে তা আমাদের জন্য বিপদজনক হবে কিনা। এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে ট্রায়ালের পর যদি তার ফাঁসি হয় তাহলে তার প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত গুরুতর হবে। সর্বত্রই তার প্রভাব পরবে, আমাদের দেশেও পরবে। এজন্য আমরা চাই যে এরকম ভুল পদক্ষেপ যেন না নেওয়া হয়।

এখন, মাননীয় সভাপতি, প্রশ্ন এই যে, এই কাজ হতে পাকিস্তান সরকারকে কিভাবে বিরত রাখা যায়। আমি প্রথমে বলছি, আমরা সম্ভাব্য সরবপ্রকার চেষ্টা করেছু আমাদের দ্বারা যা সম্ভব। অন্যাব্য রাষতের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। এব্যাপারে আমাদের মতামত জানিয়েছি এবং সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল করেছি, অতএব আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের কাছেও লিখেছি, তারাও একে একে বলেছেন যে আমরাও চাই এমন ট্র্যাজেডি যেন না হয়। রাজনৈতিক দিক থেকে একটি ভাল সমাধান আশা করছেন তারা। শেখ মুজিবর রহমানে জীবনের প্রশ্নে সকলেই ভাবছেন যে এই ট্রায়াল হওয়া উচিত নয়। তার জীবন রক্ষা করা প্রয়োজন। এখন এ ব্যাপারে তিনি কি করছেন একথা বলা মুশকিল।

সভাপতি মহোদয়, মাননীয় সদস্য বলেছেন, মুক্ত বিবৃতির ফলে তার জীবন নাশের আশংকা আরো বেড়ে গেছে আমি একথা মানতে প্রস্তুত নই। এব্যাপারে আমাদের যা করনীয় আমরা তা করে যাচ্ছি। আমাদের আরো কি করতে হবে এমন কোন পরামর্শ থাকলে তা শোনার জন্য প্রস্তুত আছি।

শ্রী আকবর আলি খানঃ স্যার, আমি কি এর ব্যাখ্যা দিতে পারি? মিঃ বজনারায়ন দোষারোপ করেছেন যে আমি ভুল বক্তব্য দিয়েছি। এই যে দেখুন পত্রিকা। এখানে লেখা আছে, পূর্ব পাকিস্তান, গোটা পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং তিনি ঠিক বলছেন।

শ্রী পিতাম্বর দাসঃ স্যার, যখন থেকে এই বক্তব্যগুলো হাউসে জমা দেয়া হয়েছে, তখন থেকেই আমরা এর সাথে দ্বিমতপোষণ করি কিনা, সেই বিষয়টি অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে পরেছে। দ্বিমত থাকলেও, এই বক্তব্যগুলোই সংরক্ষিত হবে।

শ্রী আকবর আলি খানঃ কিন্তু, বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

শ্রী পিতাম্বর দাসঃ স্যার আমি বলছি যে, এই বক্তব্যসমুহের ব্যাখ্যার সাথে আমরা একমত নাকি না, সেটি ভিন্ন বিষয়, কোন প্রেক্ষাপটে এই বক্তব্য দেয়া হয়েছে, তাও ভিন্ন বিষয়। মুল বিষয় হচ্ছে, এই বক্তব্যগুলোই হাউসে সংরক্ষিত হবে।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ ঠিক আছে।

শ্রী আকবর আলি খানঃ স্যার, আপনি অনুমতি দিলে আমি পরে শুনাতে পারি।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ তার কোন প্রয়োজন নেই।

শ্রী পিতাম্বর দাসঃ যদিও ব্যাখ্যা দাওয়া হয়েছে যে “গোটা পাকিস্তানের মানুষ” বলে আর কোন কিছুর অস্তিতব নেই, তারপরো স্যার কথাগুলো রয়ে গেছে।

শ্রী রাজনারায়নঃ আমার একটা প্রশ্নের উত্তর পাইনি। মহোদয় দয়া করে শুনুন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ভারত সরকার কি কমনওয়েলথকে লিখেছেন যে, শেখ মুজিবর রহমানের জীবনের উপর কোন বিপদ আসলে আমরা কমনওয়েলথ ত্যাগ করবো। এর সঙ্গে আমি দ্বিতীয় প্রশ্নো করেছিলাম যে ভারত সরকার একথা বলে দিয়েছে যে শেখ মুজিবের জীবন বিপদাপন্ন হলে জাতিসংঘকেও লীগ অব নেশন্স এর পরিনতি বরন করতে হবে? এর উত্তর মেলেনি। এর সঙ্গে সঙ্গে আমি বলেছি যে, ইশ্তেহার প্রকাশিত হয়েছে- ইশ্তেহার সম্পর্কে আগামী পরশুর বিতর্কে বাকী সব কথা বলবো, এখন তার সুচনা করছি মাত্র- ঐ ইশ্তেহারে শেখ মুজিবর রহমানের নাম কেন উল্লেখ হয়নি।

শ্রী সুরেন্দ্রপাল সিঙ্ঘঃ তার কোণ প্রশ্নের উত্তর দিব মাননীয় সভাপতি? … কমনওয়েলথকে জানানো হয়েছে আমি আগেও বলেছি আর (কমনওয়েলথ থেকে) আলাদা হয়ে যাওয়ার প্রশ্ন ভিন্ন, মাননীয় সভাপতি…
শ্রী রাজনারায়নঃ দেখুন দুইটি প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে। যারা হৈচৈ করছে, আপনি তাদের থামাচ্ছেন না। মহোদয় যদি এখানে কেউ হৈচৈ করে আমাকে শুদ্ধ ও বৈধ প্রশ্ন করতে না দেন, তাহলে কিভাবে কাজ চলবে?

সভাপতিঃ আপনার প্রশ্ন হয়ে গেছে এবং তিনি এর উত্তর দিয়ে দিয়েছেন।

শ্রী কৃষাণ কান্ত( হরিয়ানা)ঃ স্যার পয়েন্ট অফ অর্ডারের ভিত্তিতে বলতে চাইছি যে এটি খুবি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, প্রয়োজনীয় বিষয় এবং শুধুমাত্র একটি দলের বিষয় নয়। সুতরাং স্যার, আপনি কি মাননীয় সদস্যদের অনুরোধ করবেন যেন তারা এমনভাবে প্রশ্ন তুলে যে মনে হয় এটি আসলেই একটি জাতীয় ইস্যু। এটি মোটেই একটি দলের বিষয় নয়।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ আমিও তাই আশা করি। আমি মাননীয় সদস্যদের অনুরোধ করবো যে তারা যেন স্মরনে রাখেন যে এই বিষয়টিকে জাতীয় ইস্যু হিসেবেই গন্য করা উচিত, কেননা এটি খুবি প্রয়োজনীয় ইস্যু যা আরো বড় বড় ইস্যুতে আশংকার জন্ম দিচ্ছে। প্রশ্নগুলোও জাতীয় প্রশ্নের আঙ্গিকে করা হোক।

(শ্রী রাজনারাইন কথা বলে যাচ্ছেন)

মিঃ চেয়ারম্যানঃ মিঃ রাজনারাইন, দয়া করে বসুন। কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করবেন না।

শ্রী রাজনারায়নঃ আমি বসবো না, আমি করজোরে মিনতি করছি, আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বলুন। আমি ভারতের জনগনের প্রতি বিশ্বস্ত, আমি ভারতের সরকারের প্রতি বিশ্বস্ত নই। এটি মুজিবর রহমানের জীবনের প্রশ্ন।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ আমি চাই আপনি হাউস থেকে চলে যান। আমি সদস্যদের বারবার বলছি বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না, এবং তিনি তা করেই যাচ্ছেন। আমি তাকে হাউস থেকে চলে যেতে বলছি।

শ্রী এ জি কুলকারনি (মহারাষ্ট্র)ঃ এই ব্যাক্তিকে তার দল থেকেও বের করে দেয়া হয়েছে।
(আলোচনায় বিঘ্ন)

মিঃ চেয়ারম্যানঃ মিঃ রাজনারাইন, আমি আবারো আপনাকে বলছি, আপনি হাউস থেকে চলে যান কারন আপনি হাউসের কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন।

শ্রী পিতাম্বর দাসঃ ভোট নেয়ার আগে আমি কিছু নিবেদন করতে চাই। আমি নিবেদন করবো, পরিস্থিতির নাজুকতা রাজনারায়ন বাবুর অনুমান করা উচিত। মুজিবর রহমানের ব্যাপারে সকলের ভাবনাচিন্তা অনুরুপ। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছে তাতে পরিশদের কোন সদস্যই রাজনারায়ন বাবুকে সমর্থন করা ভাল মনে করবেন না। সুতরাং আমি তকে অনুরোধ জানাচ্ছি যে অবস্থার নাজুকতা উপলব্ধি করে তিনি এবিষয়কে ভোটাভুটিতে নাওয়ার সুযোগ দিবেন না এবং সভাপতির আদেশ পালন করবেন।

শ্রী রাজনারায়নঃ পীতাম্বর বাবুর বিবেচনাবোধকে আমি মুল্য দেই কিন্তু একি সাথে আমি বলতে চাই যে, প্রধানমন্ত্রী মহোদয় এখানে আছে কিন্তু বাংলাদেশের স্বীকৃতির ব্যাপারে তিনি একটা কথাও বলছেন না। মুজিবর রহমানের প্রান রক্কার জন্যও কিছু বলছেন না, আমার প্রশ্নগুলোর একটিও উত্তর দিচ্ছেন না।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ আমি মিঃ রাজনারাইনের নামে বারবার হাউসের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করার অভিযোগ করছি।

সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এবং পরিবহন ও শিপিং মন্ত্রী (শ্রী ওম মেহতা)ঃ স্যার, আমি অভিযোগটি পেশ করার অনুমতি চাচ্ছি- “ এই অধিবেশনে হাউসের পরবরতী সকল কার্যক্রম থেকে শ্রী রাজনারাইনকে বরখাস্ত করা হল’।

প্রশ্নটি প্রস্তাবিত হল।
(বাংলা)

মিঃ চেয়ারম্যানঃ প্রস্তাবটি হল- “এই অধিবেশনে হাউসের পরবরতী সকল কার্যক্রম থেকে শ্রী রাজনারাইনকে বরখাস্ত করা হল”
প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ এই অধিবেশনে হাউসের পরবরতী সকল কার্যক্রম থেকে এই সদস্যকে বরখাস্ত করা হল। মিঃ রাজনারাইন, এখন আপনি দয়া করে হাউস থেকে চলে যান।
(শ্রী রাজনারাইন কথা বলে যাচ্ছেন)

মিঃ চেয়ারম্যানঃ অন্যথায় আমি মার্শালকে ডেকে আপনাকে বাইরে দিয়ে আসতে বলতে বাধ্য হব। আমি আশা করি যে মার্শাল ডেকে উনাকে বের করে দেয়া উচিত, সেবিষয়ে হাউস ও একমত হবে।

(শ্রী রাজনারাইন চলে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে, মার্শাল তাকে তুলে হাউসের বাইরে বের করে দিয়ে আসলেন)

মিঃ চেয়ারম্যানঃ আশা করি হাউস বুঝতে পারবে যে, এ সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবি কষ্টকর ছিল, কিন্তু এ পরিস্থিতে এছারা আর কিছু করার ছিলনা।

শ্রী কে চন্দ্রশেখরন (কেরালা)ঃ গতকাল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে তিনি ছড়ি নিয়ে হাউসে আসবেন না, উনি আজো ছড়ি নিয়ে এসেছেন।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ এ বিষয়ে আর কোন কথা নয়। সাংসদীয় আইন আমাকে এবিষয়ে আর কিছু করার এক্তিয়ার দেয়নি।

শ্রী এন জি গোরি (মহারাষ্ট্র)ঃ স্যার, আমি কি আমার দলের তরফ থেকে এবিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারি? এর সাথে আমাদের কোন সংযোগ নেই, এবং যদি আপনার মনে হয়ে থাকে যে এর জন্য কোনভাবে আমরা দায়ী, আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।

শ্রী এ জি কুলকারনিঃ স্যার আমি খুবি দুঃখিত।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ দয়া করে এবিষয়ে আর কথা বারাবেন না।

শ্রী এ জি কুলকারনিঃ স্যার, আমি কি সরকারের কাছে জানতে পারি যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে কথা বলার পর তিনি কোন বক্তব্য দিয়েছেন কিনা? মিঃ উথান্ট? মনে হচ্ছে, উনাকে বিষয়টি অনুমোদন করা ও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রচন্ড চাপের মুখে রাখা হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন দেশের প্রধানের কাছে চিঠি লিখেছেন। সেসকল চিঠির বিষয়বস্তু কি হাউসে প্রকাশ করা হবে? যদি প্রকাশ করা যায়, তাহলে তা ইতিমধ্যে করে ফেলা উচিত।

দ্বিতীয়ত, মিঃ ইয়াহিয়া খান একজন বদ্ধ উন্মাদ। তিনি এবিষয়ে মানবতার ডাক কিংবা কুটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বক্তব্য, কিছুই শুনবেন না। প্রাদেশিক মন্ত্রী বা মাননীয় সদস্য, কেউ একজন কি বলবেন যে আজ রাশিয়ার মিঃ গ্রমিকো ও বিবৃতি দিয়েছেন যে তারা মুজিবর রহমানের প্রান বাচানোর জন্য তাদের প্রভাব ব্যবহার করবে। প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আলোচনা চলা কালীন, মিঃ গ্রমিকো কি কোথাও উল্লেখ করেছেন যে তারা আসলে এবিষয়ে কিধরনের ব্যবস্থা নিবেন। এটি খুবি গুরুত্বপূর্ণ স্যার, আমি অনুরোধ করছি যে রাশিয়া এবিষয়ে কিভাবে আমাদের সাহায্য করবে, তার বিষয়ে কোন ধারনা থেকে থাকলে তা উল্লেখ করা হোক।

শ্রী সুরেন্দার পাল সিংঃ স্যার, মিঃ গ্রমিকো তা সর্বশেষ দিল্লি ভ্রমনের সময় এবিষয়ে কথা উঠেছিল, এবং তিনি আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে ফিরে গিয়েই তিনি তার দেশের সরকারের সাথে কথা বলবেন, ও তার সরকার এবিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।

শ্রী এ জি কুলকারনিঃ যথাযথ ব্যবস্থাটা কি?
শ্রী সুরেন্দার পাল সিংঃ এখন সেটি ব্যাখ্যা করা তো বেশ জটিল কাজ। তিনি বলেছেন যে তিনি তার সরবোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করবেন যেন পাকিস্তান একাজ থেকে বিরত হয় এবং মুজিবর রহমান প্রানে বেচে যান।

আর প্রধানমন্ত্রীর চিঠিপ্রসঙ্গে বলতে চাই, সেগুলো প্রকাশ করা আমার এক্তিয়ারে নেই। যেমনটি আমি আগেই বলেছিলাম যে, প্রধানমন্ত্রী সকল বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছেই লিখেছেন, এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, এর ফলাফল কতটা ভয়াবহ হবে তা তাদের জানিয়েছেন এবং একি সাথে তাদের জানিয়েছেন যে তাদের অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিত। তিনি আশা করেন যে তারা অত্যন্ত দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্ত করে নিয়ে আসবেন।

শ্রী ভুপেশ গুপ্ত (পশ্চিম বঙ্গ)ঃ স্যার, যখন আমি এই দৃষ্টি আকর্ষণ নোটিস দিয়েছিলাম, আমার ঘুনাক্ষরেও সরকার বা কারো সাথে ষরযন্ত্রে জরিয়ে পরার কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। কিন্তু এই বিশয়টির সাথে আমাদের আবেগ জড়িত আছে। অনেকেই হয়ত বাংলাদেশ বিষয়ে আমাদের অবস্থান মেনে নিতে পারেন না, কিন্তু আবার অনেকেই দেশপ্রেমিক ও মহান নেতা শেখ মুজিবর রহমানের জীবন বাচানোর এই বিষয়ে আমাদের যে অনুভুতি কাজ করছে, তা বুঝতে পারবেন। যা ঘটেছে, তার জন্য আমি দুঃখিত। এখন, যেমনটি আমি বলেছিলাম যে আমি কোন ব্যাখ্যা করতে বা শুনতে চাইনা। পত্রিকার খবর এবং সরকার পরযায়ের বিভিন্ন সদস্যদের কাছে থেকে পাওয়া তথ্যর ভিত্তিতে আমি নিজের তরফ থেকে বলতে পারি যে নিঃসন্দেহে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানকে বাচাতে চেষ্টার কোন ত্রুটি করছেনা। আমি শুধুমাত্র তাদের এচেষ্টার পূর্ণ সমর্থন এবং একাত্মতা ঘোষণা করতে পারি। সবকিছু বলা এবং করার পরে, আমরা কেবলি এখানে অনানুষ্ঠানিকভাবে আমাদের মতামত প্রকাশ করতে পারব, এবং সরকারও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে তার মতামত প্রকাশ করে শেখ মুজিবর রহমানের প্রান বাচানোর জন্য যথাযথ উদ্যোগ নাওয়া হোক তা চাইতে পারবে। যদিও আমি জানিনা, যে আমরা কতদুর পর্যন্ত করতে পারবো, এবং আসলে কি করতে পারব। এবিষয়ে কাজ করার জন্য সবচাইতে উপযুক্ত ব্যাক্তি হচ্ছেন, আমাদের দেশের সরকারপ্রধান, ভারতে প্রধানমন্ত্রী, এবং তিনিই কাজ করে যাচ্ছেন। সুতরাং, তার যদি আদৌ কিছু বলার থাকে, তবে তিনি কি বলবেন এবং কাকে বলবেন, তা আমি তার উপরি ছেড়ে দিব।

কিন্তু এবিষয়ে আমার একটি বা দুইটি পর্যালোচনা আমি জানাতে চাই, যদিও বারবারই বলেছি যে এবিষয়ে সরকারই সবচেয়ে ভাল জানেন এবং আমি কোন ব্যাখ্যা চাইনা। আমি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি মেনেছি, তারাও আমারটা মেনে নিয়েছেন, এবিষয়ে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু, আমি কিছুতেই সেক্রেটারি জেনারেল মহোদয়ের কথার সাথে জোর করেও একমত হতে পারছিনা যে, ইয়াহিয়া তার দেশের বিচারব্যবস্থা অনুযায়ীই এই বিচারকাজ শুরু করেছেন। আপনারা জানেন, আমার বলার প্রয়োজন নেই যে আন্তর্জাতিক আইনে ও অন্যান্য আইন ছাড়াও নানবিধ কারনে এ বিচার সমর্থনযোগ্য নয়। আমার সরকার যথার্থই চিনহিত করতে পেরেছে যে, পাকিস্তান যুক্ত থাকাকালীন যেই ব্যক্তি শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী বলে ঘোষণা দিয়েছিল, সেই একি ব্যাক্তি এখন তাকে মারবার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আজ তাকে কার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা বা যুদ্ধ শুরু করার অভিযোগ অভিযুক্ত করা হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হচ্ছে, তা আমি জানিনা। এটি কোন বিচারাধীন হত্যা নয়, বরং এটি একটি ঠান্ডা মাথার খুন, যা কোন অংশে আন্তর্জাতিক অপরাধের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আমি আন্তর্জাতিক সকল গোষ্ঠিকে এটাই বলতে চাই যে, লিখে নিন, এটা কোন বিচারাধীন হত্যা নয়, এটি ৫ লক্ষ মানুষের গনহত্যারই ধারাবাহিকতা, যা চূড়ান্তে পৌছবে ইয়াহিয়া খান কর্তৃক এই মহান নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। স্যার, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি, এবং আশা করছি যে বিশ্ববাসী, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং অন্যান্য সকলে মিলে যথেষ্ট সাহসের সাথেই এই মহান নেতার দিকে উদ্যত খুনির হাত রুখে দিতে সক্ষম হবে। অন্যান্য দেশের কথা বলতে গেলে বলবো যে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে সরকার তাদের চিঠি দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যাক্তিগতভাবে বিভিন্ন দেশের প্রধানদের কাছে চিঠি লিখেছেন। এটি নিঃসন্দেহে সারা পৃথিবীতে একটি জনমতামতের সৃষ্টি করবে এবং কেবন এটিই এখন শেখ মুজিবর রহমানের হত্যাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে। আমার মনে হয় আমাদের এসকল উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়া উচিত এবং সংসদের শেষ দিনে এসে যার যার বক্তব্য পেশ করা উচিত। আমার মনে হয়না এবিষয়ে বেশি কিছু বলার আছে। সকলেই জানে যে জাতীয় এই ইস্যুতে আজ সরকার এবং জনতা এক হয়েছে, এবং আমরা আশা করি যে এই ৫৫ কোটি মানুষ ও তাদের সরকারের কথা সারাদেশে এবং সারা পৃথিবীতে আমাদের যত বন্ধু আছে, সকলের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হবে। আমি শুধু এটূকুই বলতে চাই যে, আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সোভিয়েত জনগণ বা তাদের সরকারও আমাদের সাথে একি অবস্থানে দারিয়েছে, যেখানে আমরা সকলেই এমন একটি মুল্যবান প্রান বাচানোর চেষ্টা করছি, যার উপর অধিকার আছে সমগ্র মানবজাতির। আজ মুজিবর রহমানের জীবনের উপর সমগ্র মানবজাতির অমুল্য অধিকার। সুতরাং, আজ যে আমরা এখানে আমাদের ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তা প্রকাশ করতে এক হয়েছি, তা কেবল একটি প্রান বাচানোর জন্য নয়, বরং একটি ঐতিহ্য, মানবজাতির অধিকার বাচানোর জন্য। আজ আমাদের এই জাতীয় সমাবেশকে সমর্থন দেয়া সারা প্রিথিবীর জন্য কর্তব্য, সারা পৃথিবীতে এমনভাবে গনজাগরন সৃষ্টি করতে হবে যেন আধুনিক সভ্যতা ও মানবজাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হত্যা করার পরিকল্পনা খুনি ইয়াহিয়া খান কখনই বাস্তবায়ন করতে না পারে। আমি আশা করি এখানে উপস্থিত সকলেরি একি ধরনের অনুভুতি কাজ করছে এ বিষয়ে। এবং আমি আরো আশা করি যে আমাদের তরফ থেকে, সারা দেশের তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে দুশ্চিন্তা ও ক্ষোভ প্রকাশ করবেন এবং গোটা মানবজাতির সম্পদ, এই মহান দেশপ্রেমী ও মহৎ মানুষটিকে হত্যা করার যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন।

শ্রী লোকনাথ মিশ্রাঃ আজ সর্দার শরন সিং উপস্থিত নেই তা মিঃ ভুপেশ গুপ্তর বক্তব্য শুনতে শুনতে ভুলেই গিয়েছিলাম।

শ্রী চিত্ত বসু (পশ্চিম বঙ্গ)ঃ মিঃ চেয়ারম্যান, আমি বলতে চাই যে অতিসত্বর একটি বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এই দুঃখ শুধুমাত্র বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের নয়, বরং তা আমাদের দেশের সাধারন মানুষের জন্যও বেদনাদায়ক। এটি শুধু আমাদের নয়, বরং সারা মানবজাতির জন্য একটি শোকাবহ ঘটনা হবে। একজন শ্রেষ্ঠতম যোদ্ধা ধীরপায়ে ফাসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর কোন মুক্তিযোদ্ধা আজ শান্তভাবে বসে থাকতে পারবে না। সুতরাং আজ এখানে অনেকেই যে অনুভুতি প্রকাশ করলেন, শুধু হাউস নয়, হাউসের বাইরেও, তার যথাযথ সম্মান দিতে হবে এবং সরকারের উচিত সামগ্রিকভাবে এদেশের জনগনের মনোভাব আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে অবহিত করা।

আমার অনুভুতি ব্যাক্ত করার পাশাপাশি আমি এও জানতে চাই যে, হাউসের বাইরে এবং এখানেও অনেকবারি পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে কোন কোন দেশ, আমি নাম উল্লেখ করবনা, মনে করেন যে শেখ মুজিবর রহমানের এ বিচার পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী বিষয়। জংলী বর্বরদের আইন ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানে কোন আইন নেই্‌, তারকাখচিত চেম্বার ছাড়া তাদের কোন আদালত নেই। যদি কোন আদালত পশ্চিম পাকিস্তানে এ বিষয়ে থেকে থাকে তবে তা হল একটি বন্দি আদালত যার রায় বহু আগেই নির্ধারণ হয়ে গেছে। যেমনটি আমি আগেই বলেছিলাম যে খুব দ্রুতই একটি শোকাবহ ঘটনা ঘতবে। এই পরিস্থিতিতে পৃথিবীর পরাশক্তিদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। আমি কি জানতে পারি যে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে কি বলছে? আমি যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলছি কারন আমি নিশ্চিত যে…

একজন সম্মানিত সদস্য বলছেন- চায়নাও…

শ্রী চিত্ত বসুঃ আমি সে বিষয়ে আসছি। আমি নিসচিত যে যুক্তরাশ্ত্রের ধারাবাহিক ও স্থায়ী সমর্থন, সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া পাকিস্তানের পক্ষে কখনোই এতদুর আগানো সম্ভব হত না। সুতরাং আমি বলতে চাই যে ইয়াহিয়া খান যেমন অপরাধী, প্রেসিডেন্ট নিক্সনও এবিষয়ে কোন অংশে কম অপরাধী নয়। সুতরাং আমি জানতে চাই যে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র কি বলেছে? এই সুত্রতায় আমি আরো জানতে চাই, এবিষয়ে চায়না সরকারকে কোন চিঠি দেয়া হয়েছে কিনা? আমরা যখন বন্ধু বা শত্রু সকল রাষ্ট্রকেই আজ মানবতার এ বিপর্যয় ঠাকাতে আহবান জানাচ্ছি তখন চায়না সরকারকেও এই মহান নেতাকে বাচানোর আবেদন জানিয়ে কোন চিঠি দেয়া হয়েছে কিনা, আমি জানতে চাই। যদি দেয়া হয়ে থাকে, তবে তারা কি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে?

সবসেষে, যদি পুরো পৃথিবী ব্যর্থ হয়, যদি জাতিসঙ্ঘ শেখ মুজিবর রহমানের প্রান বাচাতে ব্যর্থ হয়ে যায়, তবে আমরা কি তৈরি আছি এমন উদ্যোগ নিতে যেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়াস ব্যর্থ না হয়ে যায়, যেন মহান বীর স্বাধীনতা যোদ্ধাদের দাবি ভুলুন্ঠিত না হয়ে যায়? জাতি হিসেবে আমরাও স্বাধীনতার জন্য লড়েছি, এবং আজো সারা বিশ্বের সকল স্বাধীনতা যোদ্ধাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি, এবং ভারতের সরকারের নেত্রিতবে ভারতের মানুষ অবশ্যই সেইসকল স্বাধীনতা যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াবে, যারা তাদের স্বাধীনতার জন্য লরছে, এবং তাদের এ প্রয়াস কোনভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবেনা। এবং এর সুত্রতায় আমাদের শুধু সহমর্মিতা প্রকাশ করলে চলবে না, বরং স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার যোদ্ধাদের পক্ষে, তাদের রক্ষায় কঠোর কিছু উদ্যোগ নিতে হবে।

শ্রী সুরেন্দ্র পাল সিংঃ স্যার, সরকার বাংলাদেশ বিষয়ে যথেষ্ট সহযোগী মনোভাব পোষণ করে সে বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহই নেই। এখন পর্যন্ত কতিপয় পরিস্থিতিতেই তা প্রমানিত হয়েছে যে বাগ্লাদেশের এই আন্দোলনে আমরা তাদের পাশে আছি, তাদের অনুভুতি ও আদর্শকে সমর্থন জানাচ্ছি, এবং আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব হচ্ছে আমরা তাই করছি। তাদেরকে সহযোগিতায় যা যা করা সম্ভব, আমরা করে যাচ্ছি। এখন মাননীয় মন্ত্রী বলছেন যে পাকিস্তানে বর্তমানে চলমান এই বিচারের ফলাফলস্বরূপ শেখ মুজিবর রহমানের ফাসি হতে পারে বা তার মৃত্যুদণ্ড অবিসম্ভাবী, এমনটি হলে তা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হবে।

আমিও মাননীয় মন্ত্রীর সাথে একমত যে যদি এই কাপুরুষোচিত এবং মানবতাবিরোধি কাজটি পাকিস্তানী সরকার করে, তবে তা শুধু পাকিস্তান বা বাংলাদেশের জন্য না, বরং ভারত এবং সারা পৃথিবীর গনতন্ত্র ও শান্তিকামী মানুষের জন্য অত্যন্ত দুঃখের হবে। বাংলাদেশের মানুষের সাথে নিজেদের একাত্মতা প্রকাশ করতে ভারত সরকার কয়েকবারি বলেছে, তারা বাংলাদেশের মানুষের মতই একজন হয়ে তাদের পাশে দারাচ্ছে। এও বলেছে যে আমরা তাদের প্রতি সহমরমী এবং আমরা তাদের সমর্থন করি।

তারপর সম্মানিত সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র ও চায়নার এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন। স্যার, সদস্যরা ইতিমধ্যে জানেন যে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করছে, সুতরাং তাদের অবস্থান তাদের কাছে পরিষ্কার হওয়ার কথা। এ বিষয়ে হাউসে আগেই কথা হয়েছে।

শ্রী এন রামা রেড্ডীঃ সেটি একটি ভিন্ন বিষয় ছিল।

শ্রী সুরেন্দ্র পাল সিংঃ এই নির্দিষ্ট মানবিক বিষয়টিতে, যদি আমি সঠিক বুঝে থাকি, তারাও বলেছেন যে তারা শেখ মুজিবের বিচার বিষয়ে চিন্তিত আছেন এবং তারা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করবেন যেন পাকিস্তান আর বিষয়ে আর সামনে না আগায় ও শেখ মুজিব প্রানে বেচে যান।

চায়নার ক্ষেত্রে আপনারা জানেন যে এই বিষয়ে তাদের দৃষ্টিকোণ অনমনীয় ও পক্ষপাতযুক্ত, যদিও আমরা পিকিং এ আমাদের সিডিএর মাধ্যমে তাদেরকে আমাদের অবস্থান এবং নিতীমালা পাঠিয়েছি। চায়না পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে, সুতরাং আমার মনে হয়না কোন চিঠি দিয়ে আমরা আমাদের উদ্দ্যেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারবো, তাদের ক্ষেত্রে। তা করার ক্ষেত্রে আমাদের জানতে হবে, আমাদের চিঠিকে কিভাবে গ্রহন করা হবে। মনে হয়না তেমন একটা কাজে আসবে, তাও আমাদের উনাদের জানাতেই হবে যে আমরা কোন ধরনের নীতি অবলম্বন করছি।

শ্রী এন রামা রেড্ডীঃ বঙ্গবন্ধুর জীবন বাচাতে একটি আপিল করা কি যথার্থ হবেনা? প্রধানমন্ত্রী কি এই বিষয়ে তাদের লেখার কথাটি বিবেচনা করবেন?

মিঃ চেয়ারম্যানঃ মিঃ নিরেন ঘোষ।
শ্রী নিরেন ঘোষঃ আমি স্বীকার করি যে এটি আসলেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এবং আমরা যখন এই দৃষ্টি আকর্ষণ অধিবেশন ডেকেছি, তখনো আমরা জানিনা যে সরকার আসলে কি করছে এবিষয়ে। আজকের পত্রিকা আমাদের কিছুটা ধারনা দিচ্ছে। আর যেহেতু ঘটনাটি আমারি পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘটছে, এটি অতিরিক্ত করে উল্লেখ করার কিছু নেই দেশের সকল মানুষই এবিষয়ে একত্রিত হয়েছে। এটিও এখন পরিষ্কার যে এটি কোন বিচারবিভাগীয় বিচার নয়। এটি একটি রাজনৈতিক বিচার। এবং যদি তাকে হত্যা করা হয় তবে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় একক পার্টির নির্বাচিত নেতাকে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করা হবে। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, তা একজনকে হত্যা করা হবে না। পাকিস্তানের এতটুকু পর্যন্তই অস্তিত্ব ছিল। এখন তা পশ্চিম পাকিস্তান আর বাংলাদেশ হয়ে গেছে। সুতরাং পাকিস্তান বলতে কি বুঝাবে ভবিষ্যতে তা এখন নিরধারিত হয়ে গেছে আর যা ছিল তা অতিত হয়ে গেছে। এখন এখানে আছে দুইটি দেশ। পশ্চিম পাকিস্তান আর বাংলাদেশ। এখন, আমি যেই প্রশ্নটি করতে চাই তা হল যে আমরা কি ইয়াহিয়া খানের হাত রুখে দিতে নির্দিষ্ট আরো কিছু উদ্যোগ নিতে পারিনা? এমুহূর্তে শুধুমাত্র ক্ষোভ বা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে কোন লাভ হবেনা, এমন কিছু করতে হবে যেন তা ইয়াহিয়ার হাতকে রুখে দেয়, যেন সে শেখ মুজিবের বিচার আর আগাতে না পারে, এবং এই সাথেই এই কথাটা উঠছে যে বিশ্বের অনেক দেশের মধ্যে অন্যতম যেসব শক্তিশালি দেশগুলো আছে, তাদের এবিষয়ে কিছু বলার থাকতে পারে। আর সেজন্যই আমি জানতে চাই যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কি শুধুমাত্র উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা যথেষ্ট? আমরা জানি যে এখন পর্যন্ত তারা যে ভুমিকা পালন করেছে, তা সকল পার্টির দ্বারা তিরস্কৃত হয়েছে, সকল রাজনৈতিক অবস্থানের কাছে, এবং ভারতের জনগন দ্বারা তিরস্কৃত হয়েছে। তারা আমাদের, এই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন আচরন করেছে। এখন এই বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ যে যুক্তরাষ্ট্র কি শুধু উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেই পার পেয়ে যাবে, নাকি সারা পৃথিবীর সব দেশকে একত্রিত করে ইয়াহিয়া খানকে বলবে যে এই বিচার বন্ধ করতে হবেনা। এটা একটা ভুয়া বিচার। এটা একটা রাজনৈতিক বিচার। এটি কোন বিচারবিভাগীয় বিচার নয়। সুতরাং তুমি এটা করতে পারোনা। আমি এই প্রশ্নটাই করতে চাই এবং এবিষয়ে আমাদের সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাই…

শ্রী আকবর আলী খানঃ চায়নাকেও তা করতে বলা হোক।

শ্রী নিরেন ঘোষঃ অবশ্যই চায়নাকেও তা করতে বলতে হবে। আমরা এবিষয়ে চায়নার সাথে কোন চুক্তি করিনি। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিব। আমার প্রস্তাব সম্পূর্ণ আলাদা, আমি জানতে চাই যে আমাদের সংসদ কি পৃথিবীর সকল দেশের সংসদের কাছে, সকল সরকারের কাছে এ বিষয়ে একটি আপিল করতে পারেনা?
একজন সম্মানিত সদস্যঃ চায়নাতে কোন সংসদ নাই।

শ্রী নিরেন ঘোষঃ উনি জানেন না, উনার ইচ্ছা না থাকলেও, চায়নাতে সংসদ আছে।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ আপনি বিরক্ত না হয়ে আপনার প্রশ্ন পেশ করুন।

শ্রী নিরেন ঘোশঃ আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতের সংসদের কি পৃথিবীর সকল দেশের সরকার ও সংসদের কাছে আপিল করা উচিত নয়? আমরা কি নির্দিষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্র, চায়না, ফ্রান্স ও জাপান এসব দেশের কাছে আবেদন করবোনা? এইসব দেশগুলো যদি একটি শক্ত অবস্থান নেয় এবং বলে যে ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের বিচারটি আর আগাতে পারবেনা, তাহলে, ইয়াহিয়া খানের এই বিচার আগানোর কোন শক্তি থাকবেনা, সুতরাং আমাদের অবশ্যই এই প্রশ্নটি সন্দেহাতীতভাবে করতে হবে। এবিষয়কে এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই। একারনেই আমি এবিষয়ে সরকারের মতামত জানতে চাই। আমরা জানি যে আজি শেষ দিন, লোকসভা আজি মুলতুবি করা হবে। যদি কোন আপিল করা হয়, তাহলে তো আজি করতে হবে, কাল আমরা তা করতে পারবোনা।

দ্বিতীয়ত, এই বিষয়টি কি জাতিসংঘে আলোচিত হওয়া উচিত নয়? আমি সোভিয়েত ইউনিওনের উপর চাপ প্রয়োগ করার কথা বলছিনা। কিন্তু তারা কি এই বিষয়টি তুলতে পারেনা? প্রতিরক্ষা কাউন্সিলে কোনভাবে এই বিষয়টি তুলে কি আলোচনা করা যায়না, এবং সেখান থেকে তারা ইয়াহিয়া খানকে কিছু নির্দেশনা জানাতে পারেন তাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে। সেটি কিছুটা কর্তৃত্বপূর্ণ হবে। কোন না কোন ভাবে এটি স্পষ্ট যে যদি প্রতিরক্ষা মিশন তাদের এবিষয়ে কথা বলার জন্য ডাকে, তারা এবিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারবেনা, তাদের মতামত দিতেই হবে। এমনটি করা আসলেই উচিত হবে কিনা, বা আমরা ফোরামকে এমনটি করতে রাজি করাতে পারবো কিনা, সে প্রশ্ন আমি ভারত সরকারের কাছেই রাখতে চাই এবং বলতে চাই যে সময় চলে যাচ্ছে, অন্তিম সময়ে আমরা অবস্থান করছি, এক দুইদিনের মধ্যে সব শেষ হয়ে যাবে। তারা মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দিতে পারে, আবার নাও দিতে পারে। সেটি মুল বিষয় নয়, আমরা ইয়াহিয়া খানকে মুজিবর রহমানের ভাগ্য নির্ধারণ করতে দিতে পারিনা। এটাই মুল বিষয় এবং এখন এই ইতিহাসের দোরগোড়াতেই আমরা এসে থেমে আছি। সময় খুবি অল্প। যদি আরো তাৎপর্যপূর্ণ কোন উদ্যোগ নিতে হয়, তবে তা এখনি এবং দ্রুত কোন ধরনের কালখেপন না করে করে ফেলতে হবে।

শ্রী সুরেন্দ্র পাল সিংঃ সম্মানিত সদস্যের সাথে আমিওপ একমত যে শেখ মুজিবের জীবন অত্যন্ত মুল্যবান। এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে আমরা সবাইই একিরকমি ভাবছি। আমরা তার জীবন বাচাতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি। যেমনটা মাননীয় সদস্য বলেছেন, এটা করার একটা পন্থা হল, যদি পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো একজোট হয়ে পাকিস্তানকে এবিষয়ে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখতে বাধ্য করে। আম্রাও তাই আশা করে যাচ্ছি। একারনেই চায়নার সরকার বাদে সকল দেশের সরকারের কাছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুইটি করে চিঠি লিখেছেন। আমরা তাদের সক্রিয় করার সকল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যেন তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করে এই বীর দেশপ্রেমিকের জীবন বাচাতে উদ্যোগ নেন এবং এগিয়ে আসেন। সেটাই করা হচ্ছে। কিন্তু, সম্মানিত সদস্য নিশ্চয়ই জানেন যে পরাশক্তিরা তাদের ইচ্ছেনুযায়ী উদ্যোগ নিবেন। তারা আমাদের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। তারা আসলে কি করছে বা কোন উপায়ে করছে তা বলা আমাদের জন্য খুবি কঠিন, আমরা শুধু আশা করতে পারি যে তারা তার জীবন বাচাতে কিছু করবে।

আর সংসদের আপিলের কথা বলতে গেলে বলতে হবে, আমি এক্ষেত্রে সম্পূর্ণই সংসদের উপর নিরভরশীল। যদি তারা এধরনের কোন প্রস্তাব আনে যে সকল সংসদের কাছে আপিল করতে হবে, তাহলে তা করা হবে, এবং সরকার তা সানন্দেই গ্রহন করা হবে, কেননা এটি সরকারের হাত আরও শক্ত করবে।

জাতিসংঘে এই বিষয়টি তোলা নিয়ে বলতে হয়, আমাদের সরকার এবিষয়টি নিয়ে ভাবছে এবং এখনো এটি বিবেচনাধীন আছে। আমরা কোনভাবেই এই প্রস্তাব জাতিসংঘে নেবার বিপক্ষে নেই। কিন্তু এটি বেশ জটিল একটি বিষয়। অনেক দেশের সাথে আলোচনায় বস্তে হবে এবং যখন আমরা বুঝবো যে সকলের চিন্তা আমাদের অনুকুলে আছে, তখনি কেবল আম্রা এটাকে ফোরামে নিব। এটি আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি বিবেচনাধীন ই রয়েছে।

বিরোধি দলিয় নেতা ( শ্রী এম এস গুরু পদস্বামী)ঃ আমি এই বিচারটিকে সাধারন কোন বিচার হিসেবে দেখছিনা, একজন নেতা, একজন ব্যাক্তি বা একজন বিপ্লবীর বিচার নয়, আমি এই বিচারকে বলব খোদ স্বাধীনতাকেই কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়েছে। স্যার, ইতিহাসে এমন কোন বিচারের নজির নেই। এমন একটি নজির আছে, যা ঘটেছিল ১০০ বছর আগে আর তা ছিল জোয়ান ওব আরকের বিচার। একটি মহৎ উদ্দেশ্যে নিজেকে উতসরগ করার জন্য তার বিচার হয়েছিল, অরাজকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তার বিচার হয়েছিল।

স্যার মুজিবের ট্রায়াল আমাকে সেই কথাই মনে করায় দিচ্ছে, আরেকটি বিচার যার সাথে এর কিঞ্চিত মিল আছে তা হল, রানি এনি বলেইনের বিচার, তাকেও মনগড়া অভিযোগে ফাসিয়ে তার স্বামী মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। স্যার এই বিচারের তুলনা আর কোন কিছুর সাথেই হয়না। মুজিবকে পাকিস্তানে যুদ্দ শুরু করার কিছু ভুল অভিযোগে ফাসানো হয়েছে। যেখানে এই বিষয়টি এখন পাকিস্তানীরাই পরিষ্কার নয়, সেখানে কি করে এই বিচার এখনও চলছে? এটি একটি মতামতের বিষয় হয়ে পারে। আমার বন্ধু মহদোয় শ্রী নিরেন ঘোষ বলছেন যে পাকিস্তানের কোন অধকার নেই এই বিচার করার, কিন্তু ঘটনা হল, বিচার চলছে।

স্যার আমি সরকারের উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানাই। আমি এও বলতে চাই যে তাকে বাচাতে যে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা হয়ত যথেষ্ট হবেনা, বা বাংলাদেশ ও ভারতের কাজে আসবেনা। আমি এটা বলছি কারন এই মহৎ ব্যাক্তিটির জীবনের সাথে ভারত এবং বাংলাদেশ, দুই দেশে উন্নয়নই জড়িত। এটি কখনই কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, কিন্তু তারপরো আমি বলব যে প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগগুলো নিয়েছেন তার জন্য তাকে ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ, তাও এক্ষেত্রে আরো কিছু করা প্রয়োজন। স্যার, আমি মনে করি মুলতুবি করার আগে সারা বিশ্বের কাছে আমরা সংসদ থেকে আপিল জানাই যেন তারা এবিষয়ে অতিসত্বর ব্যবস্থা নেয়।

দ্বিতীয়ত স্যার, আমাদের পৃথিবীকে বলা উচিত যে এই ব্যাক্তিকে হত্যা করা হলে তা আরো রক্তপাত ঘটাবে এবং আরো বিশালাকারের বিপ্লবের সুত্রপাত হবে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পরবে। আমাদের তাদের বলা উচিত যে এই মহৎ ব্যাক্তির ক্ষতিসাধন হয় এমন যেকোন কাজ পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করবে। আমাদের জানানো উচিত কি হবে। এবং স্যার, আমি বলতে চাই যে এই বিষয়টিকে জাতিসংঘে উত্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি। আমি জানি যে জাতিসংঘের মহাসচিবের বক্তব্য মোটেও সন্তোষজনক নয়। তিনি কথাকে শুধুই এদিক অইদিক ঘিরাচ্ছেন, এর ফলাফল বা নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি সচেতন নন।

স্যার, প্রতিটি গোষ্ঠী ও প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতার অক্ষুন্নতা রক্ষার দায় জাতিসংঘের। জাতিসঙ্ঘই এই মতবাদকে গ্রহন করেছে। যদি কোথাও স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়, তাহলে তা সবখানেই হয়। এই মতবাদ জাতিসঙ্ঘই দিয়েছে। আমার মনে হয়, দেশ হিসাবে, বিশেষত আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উচিত অতিসত্বর মহাসচিবকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে সচেতন করা। যদি এই মহৎ নেতার জীবন হুমকির মুখে পরে, তবে জাতিসঙ্ঘকেও তাদের নীরব থাকার দায় বহন করতে হবে। জাতিসঙ্ঘ ব্যর্থ হয়েছে, এবং আমরা তাদের এবিষয়ে ব্যর্থ হবার মত আর কোন সুযোগ দিতে পারবোনা। এই পাশবিক, অশুদ্ধ, ও নিশঠুর সেচ্ছাচারিতার অন্ত যদি এই মহৎ ব্যক্তির জীবন হরনের মাধ্যমে ঘটে, তবে তা হবে সবচাইতে দুঃখজনক বিষয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, যে নিঃসন্দেহে উনি অনেক করেছেন, কিন্তু উনি যেন এখানেই থেমে না যান। আমি অনুরোধ করবো, শুধু চিঠি প্রেরন করেই উনি ক্ষান্ত হবেন না, প্রয়োজন পরলে উনি বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে বা জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে নিজে কথা বলবেন। স্যার, আমি কি আশা করতে পারি যে তিনি এদেশের মানুষ ও সংসদের প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বের সামনে দাড়াবেন এবং এই মহৎ ব্যাক্তির এহেন নির্মম পরিনতি ঠেকাবেন?

ডঃ ভাই মহাবীর (দিল্লী)ঃ মহোদয়, সরকার আছেন, যা কিছু করা সম্ভব তা করা হচ্ছে, আর এই পরিষদে সকল দলের প্রতিনিধিগন বলেছেন, এখনকার গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকার অধিক থেকে অধিক্তর যা কিছু পারেন যেন করেন, আমি মনে করি এখানেই প্রসঙ্গের ইতি টানা উচিত নয়। বিষয়টি আরো এগিয়ে নেয়া আবশ্যক নতুবা এখান থেকে আমরা কাজ সেরে চলে যাব আর ইয়াহিয়া খান ঐদিকে তার দুরভিসন্ধি চালিয়ে যাবেন। আমি মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, দেশবাসীর প্রত্যাসা ছিল প্রকাশিত যুক্ত ইশ্তেহারের ভাষা আরো দৃঢ় হবে, শেখ মুজিবের প্রান রক্ষা ও মুক্তি প্রসঙ্গ অত্যন্ত কারযকরিভাবে উল্লেখিত হবে। মনে হয়, এ প্রসঙ্গে আমাদের সরকারের বক্তব্য আগে যা ছিল তা থেকে আরো নমনীয় হয়ে গেছে। হতে পারে, সাংবিধানিক দিক থেকে কোন অপারগতা ছিল, মহোদয়, প্রশ্নটি কোন বিশেষ সাংবিধানিক অপারগতায় আবদ্ধ থাকার মত নয়। মন্ত্রী বলেছেন, মিঃ গ্রোমিকো দেশে ফিরে গিয়ে তার সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ কি নেয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করার অঙ্গীকার করেছেন। দুদিন আগে সর্দার শরন সিংহকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, মুজিবর রহমান সম্পর্কে মিঃ গ্রোমিকো কি বলেছেন, আসবাসের স্বরে তিনি বললেন, গ্রোমিকো অত্যন্ত জোরালো ভাষায় তার মনোভাব ব্যক্ত করে বলেছেন যে এমনটি হতে পারেনা। যদি সত্যি সত্যি তিনি এমন্টী বলে থাকতেন তবে আজ মুক্ত ইশ্তেহারে তার প্রভাব পরত। দুর্ভাগ্য বলতে হবে যে, মিঃ গ্রোমিকো দেশে ফিরে যাবেন, তার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন, তারপর তার সরকার এবিষয়ে কি ব্যবস্থা গ্রহন করবে, তা জানা যাবে, এত বেশি সময় আমাদের হাতে নেই। মার্শাল ল পদ্ধতি সিভিল লিটিগেশন বা সিভিল কেস এর মত নয়। ইয়াহিয়া খান যখন নিজেই বিচারক সেজে বসেছেন, নিজেই সবকিছু করছেন, তখন কে আর কার কাছে কি অভিযোগ করবে। অতএব মহোদয়, আমি প্রশ্ন করতে চাই, সরকার কি যথাযথভাবে বুঝতে পেরেছেন যে, সোভিয়েত সঙ্ঘ এর বেশি কিছু করতে পারবেনা যা তার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়। আমি বুঝি যে তারা এর বেশি করতে পারে, বা করা উচিত।

মহোদয় আজ ইয়াহিয়া খাঁ শেখ মুজিবর রহমানকে রাশ্ত্রদ্রোহিরুপে শাস্তি দেবার চেষ্টা করছে কিন্তু প্রকৃত অবস্থা হল, শেখ মুজিব একটি দেশের রাষ্ট্র প্রধান হয়ে গেছেন। তিনি নবগঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, তাকে এভাবে হত্যা করার যে প্রয়াশ চলছে, তা আন্তর্জাতিক বিশ্বের জন্য কলংকজনক, কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা আজ কোন কিছু করতে পারছিনা কেননা আমাদের সরকার এখনও মনে করেন না যে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের সময় হয়েছে। মহোদয়, আমি প্রস্তাব দিতে চাই যে, একটি সময়ের জন্য সরকার প্রতীক্ষারত, নুন্যপক্ষে এই ট্রায়াল এর ফলেই সেটী আজ সমাগত। সরকার এই সময়কে স্বীকৃতির জন্য নির্ধারণ করুন। এর চেয়ে বিলম্ব করার কোন অবকাশ সম্ভবত আর নেই।

আমার শেষ কথা যা ভুপেশ মহাশয় বলেছেন, আমার মিত্ররাও বলেছেন, বিশ্ব জনমত এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করুক অবশ্য পাকিস্তানে যে ধরনের জঙ্গীশাহি প্রতিষ্ঠিত তার উপর বিশ্বজনমত কতখানি কার্যকরী হবে আমি জানিনা, তবু আমি মনে করি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব রয়েছে এবং তারি উচিত পাকিস্তানকে বাধ্য করা ও থামানো। আমাদের সরকার তাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিন যে, যুক্তরাশ্ত্র এ যাবত পাকিস্তানকে উপরে উঠানর জন্য এবং তাকে অস্ত্র দিয়ে যা কিছু করেছে এবং তাতে আমাদের যা ক্ষতি হয়েছে, শেখ মুজিবের বিচার করতে দিলে অনুরুপ ক্ষতি আমেরিকা আরো সংযোজিত করবে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র কে কি বলে দেয়া হবে যে তাদের সঙ্গে আমাদের বর্তমান সম্পর্ক যেন নিয়ন্ত্রনের বাইরে না চলে যায় সেজন্য আমেরিকার উচিত তার হ্রিদয়ের বন্ধুকে থামানো। আমেরিকাই পারে থামাতে কেননা তারাই পাকিস্তানকে অস্ত্র দিয়েছে। তারাই পাকিস্তানের মস্তিষ্কের বিকার ঘটিয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে এই ভাষায় জানিয়ে দিয়ে তাকে আসন্ন দুরঘটনা থামাতে বাধ্য করি।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ মিঃ গোরি
শ্রী জোয়াকিম আলভাঃ স্যার, আমি কেবন এক মিনিত চাই।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ না না।

শ্রী এন জি গোরিঃ আমার বন্ধু শ্রী ভুপেশ গুপ্ত, মিঃ বসু এবং অন্যান্য সম্মানিত সদস্যরা আজ এখানে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তার সাথে সম্পূর্ণ একমত। স্যার, যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তা হল জনতার বাতিল করা সরকার সেই ব্যাক্তিকে ফাসির কাষ্ঠে পাঠাচ্ছে, যাকে জনতা সাদরে নেতার আসনে বসিয়েছে। স্যার, যদি শেখ মুজিব এর মৃত্যু হয়, তবে তিনি ঠিকই ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন, কিন্তু পাকিস্তানের মৃত্যু ঘটবে। স্যার, আমি অত্যন্ত শোকার্ত যে যেই মানুষটির ত্যাগ এবং মর্যাদা আমাদের কারো পক্ষে মুখের ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব হবেনা, আজ সে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে, আশা করি তার এমন পরিনতিও মহিমান্বিত হবে।

আমি এখনও আশা করছি যে তিনি প্রানে বেচে যাবেন, এবং মিঃ নিরেন ঘোষের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে চাই যে, যেমনটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা করেছিলাম, সেভাবে এখনও একটি প্রস্তাব গ্রহন করা হোক, এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে হাউসের একটি সদস্য এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেনা, কেননা, ইস্লামাবাদে যা ঘটছে তাতে প্রত্যেকেই শোকাহত এবং অপমানিত। আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে এটি। প্রধানমন্ত্রীই হবেন এই প্রস্তাব আনার জন্য সবচাইতে উপযুক্ত ব্যাক্তি। তিনি অবশ্যই নিশ্চিত থাকতে পারেন যে তিনি সকলের সমর্থন পাবেন এবিষয়ে। আমি সরকারের কাছে আরেক্তি জিনিস জানতে চাই যে তারা কি কোনভাবে জাতিসংঘের প্রতিরক্ষা কাউন্সিলে একটি জরুরি অধিবেশন ডাকার জন্য প্রভাব খাটাতে পারেননা? কেননা, জাতিসঙ্ঘকেও জানতে হবে যে যা হতে চলেছে, তা এই উপমহাদেশকে প্রচণ্ড রকমের অস্থিতিশীল অবস্থায় ফেলবে, মানুষ আরো দুরদশার সম্মুখীন হবে এবং আরো রক্তপাত ঘটবে। এখানে শুধু শেখ মুজিবের প্রশ্ন নয়, বরং যে সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব তিনি করেন, তাদেরো জীবনের প্রশ্ন, এবং সেকারনেই আমি বলবো যে প্রধানমন্ত্রী কিংবা অন্য কোন বন্ধু রাষ্ট্র যেমন সোভিয়েত ইউনিওন অবিলম্বে জাতিসংঘে একটি জরুরি সভা ডাকার ব্যবস্থা করুন।

শ্রী আকবর আলি খানঃ শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানের সিঙ্ঘভাগ লোক তাই চায়।

শ্রী এন জি গোরিঃ জি, এবং তৃতীয় পরামর্শ হচ্ছে, আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো যে তিনি ঊথান্টকে লিখে অনুরোধ করুন যেন তিনি অতিসত্বর ইসলামাবাদে যাত্রা করেন এবং কোন মৃত্যুদণ্ড প্রক্রিয়াধীন থাকলে তা অতিসত্বর বন্ধ করেন। জাতিসঙ্ঘ থেকে ইসলামাবাদ আসার ঝক্কি নেওয়াটা জরুরি কেননা, এটি সেরকমি জরুরি একটি বিষয়। উনি যদি উনার আগের মহাসচিবের উদাহরন ও দেখেন, মিঃ ড্যাগ হ্যামারশোলজ কঙ্গর পরিস্থিতি শান্ত করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন। এখন তারচেয়েও খারাপ অবস্থা। আমি এই পরামর্শ দিতে চাই এবং জানতে চাই যে সরকার আদৌ এমনটি করতে চায় কিনা।

প্রধানমন্ত্রী (শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী)ঃ স্যার, আজ সম্পূর্ণ হাউস একি মনোভাব পোষণ করছে, এবং আজ সবাই একটি বিষয়ে একমত হবার মতন একটি ঘটনা ঘটেছে। আমিও সম্মানিত সদস্যদের মতই উৎকণ্ঠিত এবং আমি বিরোধি দলের সদস্যদের প্রতি অভিবাদন জানাই যে তারা আজ এই বিষয়ে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আমরা খুবি কঠিন একটি পরিস্থিতিতে আছি। অনেক ধরনের পরামর্শ আমরা পেয়েছি, এবং এমন ধরনের পরামর্শ যা অনুযায়ী কাজ করতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা যদি হাউসে একটি প্রস্তাব আনি বা আমি যদি বলি মিঃ উ থান্ট কে ইসলামাবাদ যেতে, তাতে কোন আপত্তি নেই, কিন্তু আমার একমাত্র প্রশ্ন হচ্ছে তাতে আদৌ কোন লাভ হবে কিনা, বা ফলাফল কি হবে? তাদের সামরিক বাহিনী যেভাবে আচরন করেছে তা আমরা সবাই দেখেছি এবং শুনেছি, এবং এহেন আচরন অব্যাহত থাকলে আমাদের অনুভুতি বা আমরা শান্তির জন্য যে প্রস্তাবই আনিনা কেন, তার শুধুই অসম্মান করা হবে। উ থান্ট এর বক্তব্য শুনে আমার মনে এ প্রশ্নও আসে যে আদৌ তিনি সেখানে যেতে রাজি আছেন কিনা।

শ্রী এন জি গোরিঃ তিনি পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেননি কখনি।

শ্রী এ ডি মনি (মধ্য প্রদেশ)ঃ অন্তত এটি একটি জনমত গড়ে তুলবে।

শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ঃ আমি আগেই বলেছি যে তাকে বলতে আমার কোন আপত্তি নেই। আমি শুধুই ভাবছি যে এতে আদৌ কোন ফল হবে কিনা, আমার চিঠি পেয়ে তিনি আসলেই যাবেন কিনা। আমাদেরকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে যেহেতু মুজিবের সকল আন্দোলনকে আমরা সমর্থন জানিয়েছি, আমরা এবিষয়ে কোন উদ্যোগ নিলে তা পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের আরো খেপিয়ে তুলবে। সুতরাং যেভাবে মাননীয় সদস্যরা পরামর্শ দিচ্ছেন, আমার মনে হয় ফলাফল বিবেচনা করে আমাদের উচিত হবেনা এতটা জোরালো গলায় এবিষয় কোন উদ্যোগ নেয়া বা কিছু বলা। আমরা এবিষয়ে যতই আপত্তি করবো, ততই তারা আরো জেদি হয়ে উঠবে। জেদি বলাটাও ভুল হবে, কেননা জেদ অন্যধরনের একটি বিষয়, আমার বলা উচিত যে তারা যতই শুনবে মানুষ তাদের বিরোধিতা করছে, ততই তারা একাজটি করতে আরো বেশি উৎসাহিত হবে। এটি সেরকমি একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে যাচ্ছে।

আমরা কি করবো, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নাওার আগে কিছু প্রশ্ন অবশ্যই বিবেচনা করা প্রয়োজন। আমার মনে হয়, আমরা সারা পৃথিবীকে জানিয়েছি যে কি ঘটছে, এই পুরো এলাকায় তার কি ফলাফল হতে পারে, বিশেষত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা যা ধারনা করছি। আমরা কাউকে এবিষয়ে জানানর কোন ত্রুটি করিনি যে বাংলাদেশের সাথে যা হচ্ছে, তা অপুরনীয়। কিছু একটা ঘটতে চলেছে এবং ইতিহাসের শিক্ষা থেকে আমরা বলতে পারি যে পশ্চিম পাকিস্তান যা করেছে, তার ফল কখনই তাদের আশানুরূপ হবেনা, বরং তার বিপরীত ফল বয়ে আনবে। সম্মানিত সদস্যরা ইতিমধ্যে বলেছেন যে দেশের জন্য প্রান দেয়া মানে সবকিছুর শেষ নয়, বরং শুরু। এটি মানুষকে অমর করে দেয় এবং তার আন্দোলনকে আরো বেগবান করে দেয়। কিছু বিষয়ে আরো চিন্তার প্রয়োজন আছে, এবং যদি বিরোধী দলিয় নেতারা চান, আমরা এবিষয়ে বসে কথা বলতে পারি। আমি আগেই বলেছি যে তাদের পরামর্শ গ্রহন করতে আমার একদমি আপত্তি নেই, কিন্তু তার আগে আমি তাদেরকে আমার আশংকার বিশয়গুলি জানাতে চাই।

এখন, অনেক সদস্যি জানতে চেয়েছেন যে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন নেতাদের কাছ থেকে আমাদের আহবানের কি জবাব পেয়েছি। বেশিরভাগ সরকারই কি করছে সে বিষয়ে কোন কথা বলতে চায়না। তারা শুধুমাত্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা এবিষয়ে কাজ করছে বা এবিষয়ে উদ্যোগ নিবে। শুধুমাত্র নিজেদের অবস্থান জানানো, বা ইয়াহিয়ার কাছে ছিটি লিখে জানানোর বদলে তারাও এমন কোন পন্থার কথা ভাবছেন যা আসলেই ফলাফল বয়ে আনবে। আমার বিশ্বাস অনেকগুলি দেশের সরকারই এখন এবিষয়ে কাজ করছেন, কিন্তু কিভাবে সেটি আমরা জানিনা। পরিস্থিতি যেধরনের চাপ সৃষ্টি করছে, তাতে মনে হচ্ছেনা খুব বেশি ফলদায়ক কিছু করা হচ্ছে। পাকিস্তানী সামরিক শাসকরা যে অবস্থানে আছে, তাতে কোন সরকার যদি তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেও, তাতে আদৌ তারা সাড়া দিবে কিনা, সেসব প্রশ্নও আছে, এবং আমার মনে হয় তারা সেগুলি বিবেচনা করেই মনোস্থির করবে।

আমি শুধু একটি বিষয় উত্থাপন করতে চাই আপনাদের কাছে, এটি পুরোপুরি ভাবে শেখ মুজিব বা এই বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। বিষয়টি হল, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মানুষ সবসময়ি আমাদের কাছে ভিন্নভাবে গন্য হবে। অবশ্যই পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষদের সাথে আমাদের কোন বিবাদ নেই এবং এই মিলিটারি সরকার বাংলাদেশে যেমন অরাজকতা চালিয়েছে, তেমনি তাদেরও রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমি বেশি কিছু বলতে পারবোনা। আমরা জানি যে জাতিসঙ্ঘ যা করা উচিত ছিল, তা করেনি। শুধু আজকে না, আমরা তাদের অনেক দুর্বলতা আগেও নানা সময়ে নানা ঘটনায় দেখেছি, কিন্তু সবসময়ি সেগুলোকে দুর্বলতা বলে চালিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, আমরা এটিকে একটি সঙ্ঘ হিসেবেই সমর্থন করে এসেছি, কেননা এই ফোরামের মত আর কোন ফোরাম নেই। যে মতামতগুলি এসেছে, তা সবি অনেক আগে থেকেই দেখছি আমরা। মাননীয় সদস্য শ্রী গুরুপদস্বামী জোয়ান অব আরকের কথা যথার্থই বলেছেন, যেখানে তাকেও এমন একটি সাজানো বিচারের মাধ্যমে আগুনে পুরিয়ে মারা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তাকে সন্ত আখ্যা দেওয়া হয় এবং সে গোটা জাতির জন্য নায়িকা বনে যায়। আমার মনে হয়না যে কোন হুমকি বা শর্তে কাজ হবে। যদি কাজ হতও, তবুও কাউকে শর্ত বা হুমকি দাওয়া নিঃসন্দেহে আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পরেনা। তারপরো আমরা সেটা বা অন্যান্য পন্থাগুলো অবলম্বন করব যদি হাউস এবিষয়ে একমত হয় যে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসঙ্ঘ বা কমনওয়েলথ, যে কাউকেই যদি এহেন চুড়ান্ত শর্ত আমরা দেই, তবে তা কার্যকর হবে। আমরা যতই শক্তভাবে, নির্ভুলভাবে বা উৎকণ্ঠার সাথে বলিনা কেন, আমাদের ভাবতে হবে যে এটা আমরা কোন ধরনের ভাষা ব্যবহার করছি তার উপর নির্ভর করছেনা কেননা কেউই সাংবিধানিকভাবে বা আইনত এবিষয়ে বাধ্য নয়।

এখন একমাত্র মুখ্য বিষয় হচ্ছে একজন ব্যক্তির জীবন বাচানো, যার বিষয়ে ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে, যে তিনি একজন নন, বরং তারচেয়েও অনেক বেশি, একজন মুক্তিযোদ্ধার বিপ্লবের চেয়েও বেশি তার তাৎপর্য। তিনি বিপ্লবের প্রতীক এবং তার বর্তমান পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য না প্রিথিবীর সবার জন্য বিয়োগান্তক একটি ঘটনা। কিন্তু তারচেয়েও বড় এবং আসল দুঃখের বিষয় হয়ে দারায়, যখন দেখি বিশ্বের অন্যান্য জাতিসমুহ এখানে কি ঘটছে সে বিষয়ে একদমি নির্লিপ্ত। সুতরাং আমি সেইসব সদস্যদের সমর্থন জানাই যারা আজ বলেছেন যে এই বিষয়ে অবশ্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং আমিও একমত যে আমাদের এবিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসা উচিত এবং সবার মতামত নিয়ে এবিষয়ে আর কি করা যেতে পারে তা দেখা উচিত।

মিঃ চেয়ারম্যানঃ আমি শুধু একবাক্যে বলতে চাই, আমিও সকলের মতই ভারাক্রান্ত এবং চিন্তিত। সভ্য জগতে এমন বিচার যে নজিরবিহীন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমার মনে হয় এটি মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ করা হবে যদি এমন একটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী বিচার সম্পন্ন করা হয় এবং অভিযুক্তকে দন্ডিত করা হয়।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!