You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.21 | পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতি | রাজ্যসভার কার্য বিবরণী - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২০৩। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতি রাজ্যসভার কার্য বিবরণী ২১ জুলাই, ১৯৭১

জরুরী জনগুরুত্বসম্পন্ন একটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেবার আহবান
খবরে প্রকাশ – পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন

শ্রী এন জি গোরে (মহারাষ্ট্র): স্যার, আপনার অনুমতি নিয়ে, আমি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকির ব্যাপারে প্রকাশিত সংবাদ এবং ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী (সরদার শরণ সিং); জনাব চেয়ারম্যান, স্যার, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেছেন যে, ‘যদি ভারত পূর্ব পাকিস্তানের কোনো অংশ দখল করার কোন চেষ্টা করে তাহলে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন। ’

পাকিস্তান মাঝেমাঝে বিশ্বকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা দেবার চেষ্টা করে। তারা বলে যে বাংলাদেশের সৃষ্ট ঘটনা মূলত পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার একটি ব্যাপার কিন্তু এটি আসলে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসক ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যকার সমস্যা। এটা পাকিস্তানী শাসকদের নিজেদের কর্ম। বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নৃশংসতায় সেখানে আজ ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিমধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ সমাধানে পৌঁছানো গেলেই শুধুমাত্র পাকিস্তানের সামরিক শাসক এই ঘোলাটে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ লাভ করতে পারে।

তাই পাকিস্তান এটা স্বীকার করতে যত দেরি করবে ততোই বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যক্রম চলতে থাকবে এবং বাড়তে থাকবে। যখন মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের কোন অঞ্চল মুক্ত করতে সফল হবে এবং পাকিস্তান এটিকে আমাদের আক্রমণ করার জন্য একটি অজুহাত হিসাবে দেখাবে তখন আমিও স্পষ্ট করতে চাই যে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত আছি।

পাকিস্তানের কোনো অংশ বাজেয়াপ্ত করার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁর লোকদের এবং বিশ্ববাসীকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছেন। অথবা এধরনের অন্যায্য ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে ভারতের বিপক্ষে একটি আগ্রাসনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শ্রী এন জি গোরে: স্যার, আমি এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিকারণ আমার মনে হয় আমাদের পুরো কৌশল সম্পর্কে আবার চিন্তা করতে হবে। প্রথমেই আমি উল্লেখ করতে চাই যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার বক্তব্যের কোন অযাচিত শব্দ ব্যাবহার করেন নাই কারণ তিনি সাক্ষাতকার দিয়েছেন জনাব নেভিল ম্যাক্সওয়েলের কাছে যিনি এই সংবাদের লেখক এবং যাকে আমরা খুব ভালোভাবে জানি। তিনি(ইয়াহিয়া) বলেন, যদি ভারত পূর্ব বাংলায় তার হস্তক্ষেপ জোরদার করার চেষ্টা করে, তাহলে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করবেন এবং বিশ্ববাসীকে সে বিষয়টা নজরে রাখতে বলেন। আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, তিনি এই হুমকি প্রভাব বুঝতে চেষ্টা করেছেন কিনা। মাত্র কয়েক দিন আগে আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন যে ভারতের প্রস্তুতি খুব ভাল কিন্তু এই আশ্বাস জেনারেল ইয়াহিয়া খানের উপর কোন প্রভাব বা ছাপ ফেলেছে বলে আমার মনে হচ্ছেনা। তিনি যথেষ্ট সাহসীভাবে বলেছেন। “আমি একটি সাধারণ যুদ্ধ ঘোষণা করব’ এবং তিনি আরও জানান ” আমি একা নই “।

অর্থাৎ তিনি সত্যিই শুধু আমাদের উপর নয় বরং সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষন করেই বলেছেন যে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। সুতরাং গোটা ব্যাপারটা নিতান্তই পরিহাসের বিষয় যে বাংলাদেশের জনগণের সমস্যা এখন আমাদের জন্যও একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আমাদের পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। আমি জানতে চাই সরকার কতদিন এভাবে বসে থাকবে যেখানে তারা প্রতিনিয়ত আমাদের মাথা হেঁট করার প্রয়াসে লিপ্ত। আমরা সব শরণার্থীদের গ্রহণ করছি। এবং উদ্বাস্তুদের সংখ্যা সম্পর্কে গতকালই শরণার্থীদের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী বলেছিলেন যে জানিনা কখন এই অন্তঃপ্রবাহ থামবে। শুধু তাই নয়, তিনি বলেন, এই সংখ্যা ইতিমধ্যে ৭০ লাখে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, আশা করা যায় বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে যার ফলে আরও লাখ লাখ লোক আসবে। কাজেই পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ভারতকে সবসময় এদেরকে গ্রহণ করেই যেতে হবে। তার উপর আবার ইয়াহিয়া খান যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন এবং তিনি এও বলছেন যে, তিনি একা নন। কিন্তু আমাদের প্রতিক্রিয়া কী? প্রতিক্রিয়ায় এটাই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে যা লোকসভায় বলা হয়েছে – অর্থাৎ যদি আমরা আক্রান্ত হই তাহলে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করব। এটা কি যথেষ্ট হল? আমরা কি ইতিমধ্যে আক্রান্ত নই? ৭০ লক্ষ উদ্বাস্তুদের প্রবেশ রীতিমত একটা সিভিল অনুপ্রেবেশ। এখন যদি এই অনুপ্রবেশ চলতেই থাকে তাহলে এক সময় এই দেশের গোটা অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। সাম্প্রদায়িক বিবাদ চলবে। আর এসব হলে বিশ্বের কাছে আমরা হব লাঞ্ছিত। যখন এত কিছু ঘটছে তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোকসভায় যে উত্তর দিয়েছিলেন আজও তাই বলছেন যে যদি আমরা আক্রান্ত হই তবে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করব। কখন আপনি আত্মরক্ষামূলক অবস্থান ছেড়ে দেবেন? কখন আপনি খোলাখুলিভাবে বিশ্বকে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলবেন যে ভারত তার ধৈর্য্যের সীমায় পৌঁছেছে, আমরা এখন আর কোন কিছু সহ্য করতে পারব না, আমরা আর কোনও নাগরিক অনুপ্রবেশ অথবা অন্য কোন আক্রমণ সহ্য করব না এবং আমরা পূর্ববাংলার লোকদের আমাদের দেশ থেকে সরিয়ে তাদের দেশে পুনর্বাসন করতে চেষ্টা করব এবং যদি এটার মানে যুদ্ধ হয় তবে আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। এসব না বলে তিনি বলছেন যে, আমরা নিজেদের রক্ষা করে যাব। এবং ইয়াহিয়া খান বলে যে, সে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। আমি জানতে চাই ভারত কোন অবস্থান নেবে।

শ্রী গোধে মূরাহারি (উত্তরপ্রদেশ): কী ঘটছে তার নোট নিতে হবে।
সরদার শরণ সিং: আমি আশা করি তিনি আমার কাছে তার প্রশ্নের উত্তর আশা করেন না। যতদূর আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছেন – আমি বিবৃতিতে খুব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছি – এবং আমি সন্মানিত সদস্যের কাছে অনুরধ করব শুধুমাত্র বাকপটুতা দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করার চেষ্টা করবেন না।

শ্রী চিত্তরঞ্জন বসু: (পশ্চিম বঙ্গ): মন্ত্রীর কাছ থেকে তাহলে কোন উত্তর পেলাম না।

শ্রী চিত্তরঞ্জন বসু: আমি কি সন্মানিত মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে জিজ্ঞেস করতে পারি যে বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতির প্রশ্নটি অনেক বড় এবং জরুরী বিবেচনা করেন কিনা?
সরদার শরণ সিং: আপনি রোজই এটা জিজ্ঞেস করছেন কেন?

শ্রী চিত্ত বসু: তিনি বলেন যে প্রতিদিন আমি এই প্রশ্ন করি। আমি রোজ তা বলি তার কারণ হল যদি ভারত সরকার সত্যিই এই দেশের জনগণের কাছে এবং বাংলাদেশের মানুষের কাছে অঙ্গীকার বদ্ধ থাকে তাহলে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। তারা বলে আসছে যে, তারা সময় মত স্বীকৃতির প্রশ্ন বিবেচনা করবে। তারা সেটাকে অগ্রাহ্য করছেন না। আমি যদি ভুল না বলে থাকি তবে আমার মনে হয় এক বা দুই দিন আগেই তারা বলেছিলেন আমরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার বিপক্ষে নই। কিন্তু আমার প্রশ্ন সেটা ছিলোনা। আমার প্রশ্ন ছিল তারা আগামীকাল নয় আজ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবেন কিনা? কারণ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এটা তাদের কাছে তুলনামূলকভাবে বড় ও গুরুত্তপূর্ন জরুরী বিষয় বলে মনে হয় কিনা।

আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল এই। আমি এই মুহুর্তে এরকম একটা চুক্তিতে আছি যে আমাদের সরকার পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ চায়না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের যারা নিজেদের দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে তাদের উপাদানগত ভাবেও সাহায্য করতে পারব না। ইয়াহিয়ার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কি মুক্তিযোদ্ধাদের চাওয়া বস্তুগত সাহায্য দিতেও শৈথিল্য দেখাবে? এই মুহুর্তে এটা বিশ্ববাসীর কাছে ও বাংলাদেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট করা উচিত যে ভারত সরকার তাদের সব বস্তুগত সাহায্য দিতে এবং বাংলাদেশে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর।

আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল এই। পাকিস্তান এখন হুমকি দিয়েছে যে তারা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে। এটা কি সত্য নয় যে তারা ইতিমধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের সম্পত্তির ক্ষতি ঘটাচ্ছে? তারা কি অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেনি? আমি কি সরকারের কাছে জানতে পারি যে পাকিস্তান যে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে আমাদের সরকারের প্রতিক্রিয়া কি?

তার উপর আবার জনাব ইয়াহিয়া খান বলেছেন যে তিনি একা নন। এটা দিয়ে তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? আমাদের সরকার কি পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করার ব্যাপারে পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে কোন সংযোগ দেখতে পাচ্ছেন না? যদি তা দেখে থাকেন তাহলে আমি কি জানতে পারি যে আমাদের সরকার এই তিনটি বড় শক্তি যেভাবে একতাবদ্ধ হয়েছে তার বিপরীতে এটাকে প্রতিহত করার জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের মতামত ভারতের অবস্থানের পক্ষে আনার ব্যাপারে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?

সরদার শরণ সিং: স্যার, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে আমরা আজ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি করার জন্য প্রস্তুত আছি কিনা। আমি দুঃখিত, আমার উত্তরটি ‘না’ বোধক।

শ্রী চিত্ত বসু: আগামীকাল?

সরদার শরণ সিং: আগামীকালও তাই। তাই এই প্রশ্ন আবার এবং আবার জিজ্ঞাসা করবেন না। দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করা হয়েছে –

শ্রী রাজনারায়ণ: আগামীকাল যদি না হয়, তাহলে আগামী পরশু।

সরদার শরণ সিং: দ্বিতীয় যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তার উত্তরে বলছি এই সংসদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যথেষ্ট সমর্থন ও সহানুভূতি দেখানোর জন প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেছে এবং আমরা সেই রেজোলিউশন বাস্তবায়ন করার জন্য সবকিছু করে যাচ্ছি।

তৃতীয় পয়েন্ট; তিনি যা উল্লেখ করেছেন যে পাকিস্তানি সামরিক শাসক ইতিমধ্যে ভারতীয় এলাকায় মানুষকে ঠেলে প্রবেশ করিয়ে একরকম বেসামরিক আগ্রাসন চালাচ্ছে যারা মূলত একটি বড় অংকের শরণার্থী হিসেবে বিবেচ্য হচ্ছে। উদ্বাস্তুদের ব্যাপারে আমি সন্দেহাতীতভাবে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি।

এই শরণার্থীরা অস্থায়ী ভিত্তিতে আমাদের এখানে আছে। তাদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে এবং এই কারণেই আমরা অবিচলিতভাবে এই নীতি অবলম্বন করছি যে বাংলাদেশে তাদের ফিরে যাবার অনুকূল অবস্থা তৈরি করা উচিত যাতে তারা ফিরে যাবার ব্যাপারে নিরাপদ বোধ করে। আর এটি শুধুমাত্র সম্ভব যখন বাংলাদেশের ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। এই নীতিটি আমরা অবলম্বন করেছি এবং এই অনুযায়ী আমরা অগ্রসর হব। এটা সত্য যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার বিবৃতিতে বলেছেন, যে তারা একা নন। এবং সন্মানিত সদস্য আমার মুখ দিয়ে এটা বলাতে চান যে তাদের সাথে আর যারা আছে তারা কারা। এই ব্যাপারটি আমরা এই পদ্ধতিতে আলোচনা করতে পারিনা। কোনো সন্দেহ নেই যে নির্দিষ্ট কিছু দেশ একদম খোলাখুলি বিবৃতি দিয়েছে যে তারা পাকিস্তানের সাথে আছে। পাকিস্তানও নির্দিষ্ট একটি জোটের সদস্য। কিন্তু এটা এখানে বলে আমাদের কোন উদ্যেশ্য হাসিল হবেনা। আপনি মূল্যায়ন করতে পারেন কিন্তু জনসম্মুখে কে কে পাকিস্তানের সাথে আছে এটা বলে আসলে কোন লাভ নেই।

জনাব. চেয়ারম্যান: জনাব কুলকার্নি

শ্রী চিত্ত বসু: এই হুমকির বিরুদ্ধে এবং পাশাপাশি আমাদের অবস্থানের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের ব্যাপারে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে?

চেয়ারম্যান: দয়া করে বসুন জনাব
সরদার শরণ সিং: আমরা ইতোমধ্যে দিল্লিতে বিদেশি সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে, জাতিসংঘ তাদের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করার সকল চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে গিয়ে প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলছি।
জনাব. চেয়ারম্যান: জনাব কুলকার্নি

শ্রী এ জি কুলকার্নি (মহারাষ্ট্র.): স্যার, আমি কি সরকারকে জিজ্ঞেস করতে পারি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুলোকে নিজেদের পক্ষে আনতে তারা কতটুকু আশাবাদী?
(জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান অবস্থান নিলেন)

শ্রী এ জি কুল্কার্নি: স্যার, বাংলাদেশ ইস্যু সমাধানে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সরকারের কার্যক্রম প্রায় নিঃস্পৃহ হয়ে গেছে। শুনতে ভালোই লাগে যখন আমি দেখি সরকার মিলিটারি একশনে যাবে কিনা এই প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর দিতে পারেনা। প্রশংসার দাবিদার তিনি। কিন্তু স্যার, এটা বললে কি বাড়াবাড়ি হবে যে এটা সমস্ত ভারতীয় জনগণের মনের কথা? আমি জানতে চাই কিনা সরকার সচেতন চাই এই সব শত্রুতার মূলে আছে আমেরিকা – তারা কি সেটার ব্যাপারে সচেতন আছেন? আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলতে চাই আমেরিকার আচরণের ব্যাপারে যাদের কারণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, যিনি ১৯৬৫ সালে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি ননসেন্সর মত আবারো ভারত আক্রমণের মত কথা বলার সাহস পান। সরকারের অবশ্যই উচিৎ সাহসের সাথে তার প্রতিক্রিয়া দেখানো এবং যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে যেন সেটা স্মরণ করিয়ে দিতে বলা হয়। এতে আমাদের শক্তির বাহুল্যতা প্রকাশিত হচ্ছেনা। দ্বিতীয়ত, আমি জানতে চাই সরকার এটা লক্ষ্য করেছেন কিনা যে আমেরিকার মত ইংল্যান্ড আর রাশিয়াও কিন্তু ইয়াহিয়া খানের নৃশংসতা থামাতে কোন কিছু করেনি। রাশিয়ার কাছে যে পরিমাণ প্রত্যাশা ছিল সেই অনুযায়ী তারা এগিয়ে আসেনি। অতএব স্যার, সরকারকে পুরো বাংলাদেশের সমস্যা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের উচিৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে রিকল করা। এতে করে আমেরিকান জনগণের মনে কিছু প্রভাব পড়বে এবং কিছু ফলপ্রসূ সংলাপ শুরু হবে।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আমি মনে করি ইতিমধ্যে তিনি আমাদের রাষ্ট্রদূতকে রিকল সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। কাজেই একই প্রশ্ন পুনরাবৃত্তি করার দরকার নাই। মন্ত্রী ইতিমধ্যে জবাব দিয়েছেন।

শ্রী এ জি কুল্কার্নি: আমি এটা একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উত্থাপন করেছিলাম।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: যাই হোক এটা তিনি জবাব দিয়েছেন যে রাষ্ট্রদূতকে রিকল করা হবে না।

শ্রী এ জি কুলকার্নি: প্রশ্নটা রাষ্ট্রদূত বরখাস্ত সংক্রান্ত ছিল। আমি রাষ্ট্রদূতকে সাময়িকভাবে রিকল করার জন্য বলেছি।

সরদার শরণ সিং: স্যার, আমি মনে করি না আমাদের রাষ্ট্রদূতকে রিকল করাটা কোন ভালো কাজ হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে এই পরামর্শে কাজ করলেও সাধারণত তেমন ফল হয় না এবং অভিজ্ঞতা বলে যে এতে তেমন সাহায্য হবেনা। আমরা এমনকি পাকিস্তান থেকে আমাদের এ্যাম্বাসেডর আমাদের হাই কমিশনারকে রিকল করিনি এবং পিকিং এও একটি মিশন রাখা আছে। অতএব, এটি আমাদের জিনয় সঠিক হবে না এবং আমরা একটি নির্দিস্ট সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত কে রিকল করার পলিসির সাথে একমত না। একটি খুব বাস্তবসম্মত পরামর্শ নয়। সেটাই তিনি দাবী করেছেন।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: জনাব লোকনাথ মিশ্র।

শ্রী বিজু পাটনায়েক (উড়িষ্যা):মন্ত্রী মহোদয় কি আশ্বস্ত করার মত অবস্থায় আছেন?

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আমি জনাব লোকনাথ মিশ্রকে ডেকেছি।

শ্রী বিজু পাটনায়েক: আমি শুধু একটি বিষয় পরিষ্কার করে জানতে চাচ্ছিলাম।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আমি আমাকে আমার সামনের তালিকা অনুসরণ করতে হবে।

শ্রী বিজু পাটনায়েক: আমি বক্তৃতা করছি না। আমি শুধু একটি বিষয় পরিষ্কার করে জানতে চাচ্ছিলাম।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আমি মনে করি জনাব মিশ্র শুধু একটি ক্লারিফিকেশন চাচ্ছেন।

শ্রী বিজু পাটনায়েক: আমি শুধুমাত্র মন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চাই।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: না, না, দয়া করে বসুন।

শ্রী এ ডি মনি (মধ্য প্রদেশ): স্যার, সে হাউজে খুব কমই আসে। আপনি কি তাকে দয়া করে অনুমতি দিন।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আসলে সবার আগে আমাকে তালিকা অনুসরণ করতে হবে।

শ্রী ভি আনান্দান (তামিলনাড়ু): তিনি কোন প্রশ্ন করতে চাচ্ছেন না। তিনি শুধুমাত্র একটি ক্ল্যারিফিকেশন চাচ্ছেন এবং আপনি তাকে অনুমতি দিতে পারেন।

শ্রী বিজু পাটনায়েক: আমি মন্ত্রীর কাছে জানতে যদি তিনি দয়া করে ক্ল্যারিফাই করেন।

শ্রী এ পি চ্যাটার্জি (পশ্চিম বাঙ্গাল): পয়েন্ট অব অর্ডার। আমি আশা করি আমার বন্ধু এটাকে অন্যভাবে নেবেন না। রীতি হচ্ছে আপনি আগে লিস্ট কল করবেন এবং এক সময় হতাশ হতে হবে। যদি অন্য কেউ ক্ল্যারিফিকেশন চান তাহলে চাইতে পারেন। আমি মনে করি সম্মানিত সদস্য ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। অবশ্যই তিনি ব্যাখ্যা চাইবার জন্য এনটাইটেলড।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: ঠিক আছে, জনাব পাটনায়েক, দয়া করে বসুন। এখন বলবেন মিস্টার মিশ্র।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র (উড়িষ্যা); চৌ এন লাই – এর মত আগ্রাসককে ফেভার করে অ্যামেরিকা বিশ্বের গণতন্ত্রের সাথে প্রতারণা করেছেন। সে ইয়াহিয়া খানকে সমর্থন দিয়েছে, যা পাকিস্তানকে ভারতের সাথে যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহসী করেছে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুব আত্মসন্তুষ্টিতে আছেন – তিনি বলেছেন যুদ্ধ হলে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নেব এবং আক্রমণ থেকে নিজেদের প্রতিরোধ করব। আমি জানিনা যে লোকটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে বসেন তিনি কখনো তার সাথে একমত হন কিনা – এমনকি তা যদি পার্লামেন্টের বাইরেও হয়। তিনি সব সময় এভাবে কথা বলেন যে আমরা সব কিছুর জন্য প্রস্তুত আছি। আমরাও জনাব কৃষ্ণা মেননের কাছ থেকে ১৯৬২ এর আগে থেকে এরকমটাই শুনে আসছি। যেহেতু সভাপতির প্রশ্রয়ে মন্ত্রী মহোদয় জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির বিবরণ জানাতে বাধ্য নন, তাই এসবই সংসদের সদস্যদের থেকে গোপন রাখা হয়েছে এবং কেউই সতিকার অর্থে জানে না যে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি নামক প্যান্ডোরার বাক্সে আসলে কি আছে।

শ্রী পি সি মিত্র (বিহার): আপনি জানেন যে, ভারতর কোন প্রতিরক্ষা ক্ষমতা নাই।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: শ্রী মিত্রের অতিরিক্ত ঝকঝকে ভাব তাকে কোথাও পৌঁছে দেবেনা – না এখানে না পাকিস্তানে।

আমি নিজেই আমার প্রশ্নের জবাব চালিয়ে যেতে চাই। পাকিস্তান ইতিমধ্যে আমাদের একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। চিনের ক্ষেত্রেও তাই। এতসব হুমকির বিপরীতে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাব। ভারত একটি চীনা ক্লাস রুমের ছাত্র নয় যে চীনা সরকার ভারতকে সতর্কবাণী দেবে। আমরা সেইসব হুমকি প্রত্যাখ্যান করব এবং সেগুলো বর্জ্য কাগজের মত ঝুড়ির মধ্যে নিক্ষেপ করব। এর বাইরে ইয়াহিয়া খান হুমকি দেয়ার সাহস পাচ্ছে – এমনভাবে মনে হচ্ছে যেন তিনিই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক।

শ্রী এ পি জেইন (উত্তরপ্রদেশ): এটা একেবারেই হাইপোথিটিকাল।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আপনি ব্যাঘাতের উত্তর দেবেন না। আপনি আপনার প্রশ্ন করুন।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: আমি শ্রী অজিত প্রসাদ জৈনের মন্তব্যে আপত্তি জানাচ্ছি। তার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল এবং এখনও তিনি দায়িত্বজ্ঞানহীন। অতএব, আমি আপত্তি জানাচ্ছি। তার মত অবস্থা সম্পন্ন মানুষের এরকম বিষয়ে আরও সহনশীল হওয়া উচিত। মিনিস্টারশিপের জন্য তার এরকমভাবে সিরিয়াস না হলেও চলে।

শ্রী এ পি জেইন: আমি আগেই বলেছি এটা হাইপোথিটিকাল।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: আমি সরদার শরণ সিং থেকে উত্তর আশা করি – শ্রী অজিত প্রসাদ জেইন এর থেকে না। কারণ তিনি মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি আর হিসাবে নেন না।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আপনি আপনার প্রশ্ন করুন।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: শ্রী অজিত প্রসাদ জেইন, যতদূর ভারত সরকার অবগত আছে, তা অপর্যাপ্ত, তাতে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর জন্য সেটা যতই আনুগত্য প্রকাশ করুক না কেন।

সরদার শরণ সিং: এই ব্যাপারে আপনি ভুল করছেন।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র – তিনি কংগ্রেস পার্টির মধ্যে কেউ হবেন হয়ত।

সরদার শরণ সিং: তার অবস্থান অনেক ভালো – যতটা আপনাকে আপনার পার্টিতে গন্য করা হয়তার চাইতেও বেশী।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: কিন্তু এখন পর্যন্ত এই হাউস যতোটা অবগত তাতে মনে হয় আমি শ্রী অজিত প্রসাদ জেইন এর কোন নোটিশ গ্রহণ করিনি। .

শ্রী লোকনাথ মিশ্র; সঠিকভাবেই দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের জনগণ গেরিলা যুদ্ধ করছে এবং ধরা যাক যদি কোন অঞ্চল তারা দখল করে নেয় তখন ইয়াহিয়া খান বলবেন যে এটা হয়েছে ভারতের ইন্ধনে এবং এর পরে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করবেন ভারতের বিরুদ্ধে। সেই সময় সরদার শরণ শিং আসলে কি বক্তব্য দেবেন? সম্ভবত এটাও শ্রী অজিত প্রসাদ সিং এর উর্বর মস্তিষ্কের হাইপোথিটিকাল প্রশ্ন।

শ্রী এ পি জেইন: ইয়স বলেছেন আপনি আমার নোটিশ নেবেন না। তাহলে আমি যা বলি তা শুনছেন কেন? ধন্যবাদ, আমাকে তার মাথায় রাখার জন্য।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র; এই ধরনের পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া কি হবে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবসময় বড় বড় বিবৃতি দেন যে আমাদের পাশে আরো কিছু দেশ আছে। তিনি কি এরকম কারো নাম বলতে পারবেন? আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ হব যদি তিনি এমন কোন নাম বলতে পারেন।

সরদার শরণ সিং: প্রথম প্রশ্নের বিষয়ে আমি আমার বক্তব্যের ৩ নং প্যারা দেখতে বলছি। দ্বিতীয় প্রশ্ন এই বাইরে আসে না।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: আমাদের কাছে তার বক্তব্যের কপি নাই। আমি এই ব্যাপারে আপত্তি জানাচ্ছি।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আপনি বিবৃতি শুনেছেন।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: আমি কিভাবে তৃতীয় অনুচ্ছেদ জানব? বিবৃতি তিনি পেশ করেছেন এবং তার নিজেরই টাইপ করা।

সরদার শরণ সিং : আমি এটা পড়ব।
“মুক্তিযোদ্ধারা যখন বাংলাদেশের কোন অঞ্চল সফলভাবে মুক্ত করছিল এবং পাকিস্তান সেটিকে আমাদের আক্রমণ করার জন্য একটি অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করছিল তখন আমি স্পষ্টভাবে বলেছি আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত আছি। ’

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: সেটা কি সব প্রশ্নের উত্তর দেবে?

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশটা কি? আপনি কি এমন কোন দেশের নাম বলতে পারেন যারা ভারতের সাথে আছে?

সরদার শরণ সিং: এর থেকে সেটা আসেনা।

সরদার লোকনাথ মিশ্র: ধরুন যুদ্ধ পরিস্থিতি আরম্ভ হল। পয়েন্ট অব অর্ডারে উপর বলছি।
সরদার শরণ সিং: এভাবে চলতে পারেন। আমি দুঃখিত এসবের জন্য। আমি এইসব আলোচনার মধ্যে প্রবেশ করতে চাচ্ছিনা।

স্যার, এটা অবাক ব্যাপার যে এত হাল্কা ভাবে আলোচনা হচ্ছে। এটা আমাদের জনস্বার্থে নয় ………
(বাধা)

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: স্যার, এই ভদ্রলোক বলার কে?
(বাধা)

সরদার শরণ সিং: এসব জিনিস জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য নয় এবং আমি এসব প্রকাশ করব না।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: স্যার, উনি এটা বলার কে? স্যার, সে তার সীমা অতিক্রম করে ফেলছে।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যানঃ তিনি বলছেন যে, এটা আমাদের জাতীয় স্বার্থের বিরোধী হবে যদি
ঐ সমস্ত বিষয় যা আপনি জিজ্ঞাসা করেছেন টা জনসম্মুখে প্রচারিত হয়।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: তাহলে সেগুলো যদি না জানানো হয় তাও কি জনস্বার্থে হবে?

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: তিনি তো সেটাই বলছেন।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: স্যার, আপনি কি এ বিষয়ে একমত? যদি তাই হয়, তাহলে আমরা এখানে কেন এসেছি?
(বাধা)

শ্রী পিতম্বর দাস (উত্তরপ্রদেশ): স্যার, অন্তত একটি বিষয় খুব পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। তিনি সম্ভবত নাম বলতে পারবেন না। কিন্তু আমরা যে একা নই এটা বলার মত অবস্থাও কি আছে? তিনি কি বলবেন সেটা?

সরদার শরণ সিং: আমি ইতিমধ্যে একথা বলেছি।

শ্রী লোকনাথ মিশ্র: কতগুলো দেশ আমাদের দিকে আছে বলে তিনি মনে করেন?

জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান: তিনি বলেছেন যে ভারত একা নয়। এটাই তিনি বলেছেন।
(বাধা)

ডঃ. ভাই মহাবীর(দিল্লি) মন্ত্রী একা নন। তার পাশে অন্যান্য অনেক মন্ত্রী আছে।

সরদার শরণ সিং: হ্যাঁ, আমি একা নই। ডঃ ভাই মহাবীর আমার সঙ্গে আছেন।

জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান: হ্যাঁ, জনাব ভাণ্ডারী

সরদার শরণ সিং: প্রকৃতপক্ষে তিনি আমাকে কোনো প্রশ্ন না জিজ্ঞাসা করেই কল্পনাপ্রসূত ধারণা থেকে আমার সাথে তর্ক জুড়ে দিয়েছেন। যখন আপনার নিজের নিরাপত্তা হুমকির মুখে সি মুহুর্তে আপনি নিশ্চই আপনার পরিকল্পনা সবার সামনে বলে দিতে পারেন না। শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি করতে যাব।

শ্রী সুন্দর সিং ভান্ডারি- অন্তত পাকিস্তান তাদের ইন্ডিকেট করছে।

শ্রী এ পি চ্যাটার্জি: আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতি শুনেছি। বিবৃতিতে যদি বোঝানো হয় যে প্ররোচনা সত্ত্বেও আমরা বাংলাদেশে সেনা পাঠাব না, আমাদের দেশ বাংলাদেশে সেনা পাঠানোর ব্যাপারে প্ররোচিত হবেনা তাহলে আমাদের দল প্রস্তাব এর সঙ্গে একমত। আমাদের পার্টির প্রস্তাব হচ্ছে ভারত সরকারের বাংলাদেশে কোনো সেনা পাঠানো উচিত হবে না। কিন্তু আমি সন্মানিত মন্ত্রীকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। বাংলাদেশে গেরিলারা যে যুদ্ধ চালাচ্ছে তাতে আমাদের সরকার বলেছিল তাদেরকে সর্বভাবে সহায়তা প্রদান করা হবে – তাহলে কি ধরে নেব যে সরকার এটিকে আর চালু রাখবেন না?
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল: যদি সরকার এই অবস্থান নেয় তাহলে গেরিলারা বাংলাদেশের ভিতরে গিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে যেসব সরঞ্জাম আটক করে আমাদের সীমান্তের কাছে নিয়ে আসছে তার কি নিশ্চয়তা আছে যে সেই সব অস্ত্র কমিউনিস্টদের হাতে পরবেনা? এটা কি সত্য নয়?

আমার তৃতীয় প্রশ্ন হল: এটা সত্য যে গেরিলা বাংলাদেশে যাচ্ছে, পাকিস্তানীদের সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ফেরত আসছে যা এই সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে এবং যখন তারা আবার সেখানে যাবে এই সরকার তাদের হাতে কি শুধুমাত্র ২০৩ বুলেট ও সাধারণ অস্ত্র দিচ্ছেন? তারা কি বাজেয়াপ্ত অস্ত্র দিচ্ছেন না?

শ্রী আকবর আলি খান (অন্ধ্র প্রদেশ): আমি কি সন্মানিত সদস্যের নিকট প্রশ্নগুলো পুনর্বিবেচনা করার ব্যাপারে আপীল করিতে পারি?

শ্রী এ পি চ্যাটার্জি: আমি কি জিজ্ঞাসা করতে পারি যে এভাবেই কি সরকার গেরিলাদের বাংলাদেশের যুদ্ধে সমর্থন করছে? আমার শেষ প্রশ্ন হল সন্মানিত মন্ত্রী বলেছেন গেরিলারা যদি …

শ্রী এ জি কুলকার্নি: এই প্রশ্নের কী দরকার?

শ্রী এ পি চ্যাটার্জি: আমি প্রশ্ন করার জন্যই এনটাইটেলড। আমার শেষ প্রশ্ন গেরিলারা যখন কোন অঞ্চল মুক্ত করবে তখন যদি পাকিস্তান সেই অংশ পুনরুদ্ধার সহ ভারতের মাটিতে আক্রমণ চালায় তখন সরকার কি করবে? এগুলোই আমার প্রশ্ন।

সরদার শরণ সিং: আমি দুঃখিত, তিনি যা যা বলেছেন তার সব সত্য নয়। এগুলো সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়নি। তাই এগুলো সঠিক না। তিনি সম্পূর্ন ভুল ধারণা থেকে এই প্রশ্ন করেছেন — (বিঘ্ন) .. আমাকে উত্তর দিতে দিন।

শ্রী এ পি চ্যাটার্জি: এটা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে ভারত সরকার গেরিলাদের থেকে পাওয়া পাকিস্তানীদের অস্ত্র নিজেরা বাজেয়াপ্ত করছেন। আমি গেরিলাদের একজন সক্রিয় নেতার সাথে কথা বলেছি। আপনার বাংলাদেশের সংগ্রাম সাবোটাজ করছেন।

সরদার শরণ সিং: আমি সাধারণত ভাববাণী করতে অভ্যস্ত নই কিন্তু আমি নিশ্চিত যে মাননীয় সদস্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও আমাদের বিরুদ্ধে এরকম কথা বলে বেড়াতে পারেন – এবং আমি এরকম না করার অনুরধ করছি।

শ্রী এ পি চ্যাটার্জি: পয়েন্ট অব অর্ডারে উপর।

শ্রী নিরেন ঘোষ (পশ্চিম বঙ্গ): এটা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার সময়।

সরদার শরণ সিং: এটা জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সময়।

শ্রী এ.পি. চ্যাটার্জি: আমি চার্জ করছি: আমি চার্জ করছি যে জনাব শরণ সিং আমেরিকানদের বেতনভুক্ত একজন ব্যক্তি। তাই তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে যুদ্ধ করছেন।
(বাধা)

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আপনি এই হাউসে দায়িত্বহীন বিবৃতি দিতে পারেন না। দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতি দেয়া বড় ভুল।

শ্রী এ জি কুলকার্নি: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেয়া যেকোন মন্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হবে। সরঞ্জামাদি সহ অন্যান্য ব্যাপারে যা বলা হয়েছে সেটা রাজনৈতিক। সেটা প্রসিডিংসের বাইরে যাবে। এটা আন্তর্জাতিক যা আমাদের ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।
(বাধা)

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: অর্ডার প্লিজ।

শ্রী এ জি কুলকারনি: আমি নিজের অবস্থানে আছি। আমাকে শেষ করতে দিন। জনাব চ্যাটার্জীর দৃষ্টিভঙ্গি চীনা এবং নকশালদের মত লাগছে। এগুলো সবই রেকর্ডভুক্ত আছে। এগুলো এক্সপাঞ্জ করা দরকার। জনাব শরণ সিং তাকে সঠিক উত্তর দিয়েছেন। জনাব চ্যাটার্জি যা যা বলেছেন সব রেকর্ডের বাইরে থাকা উচিৎ। রেকর্ড থেকে কেটে দেয়া উচিৎ।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: বসুন প্লিজ।

বিরোধী দলের নেতা (শ্রী এম এস গুরুপদস্বামী): আমি বলতে চাই আমাদের সবাই এটা নিয়ে সচেতন কিন্তু তবুও আমরা কত জটিলভাবে বিতর্ক করছি এটা নিয়ে। কেউ দলীয় মনোভাব দেখাচ্ছেনা। সবাই দলের স্বার্থ বাদ দিয়ে জাতীয় স্বার্থ নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী। আমি দুঃখিত একথা বলে যে, আজ জনাব চ্যাটার্জি যা কিছু বললেন তা কোন নীতি প্রণয়নে সাহায্য করবে না বা আমাদের মনোভাব পালটাতে সাহায্য করবেনা – এমনকি ইস্যুটিকে নতুন ভাবে ভাবার কোন উপকরণও দেয়না। পাশাপাশি তার প্রশ্ন আমাদের কিছু বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। আমি নিশ্চিত সেগুলো আন্তর্জাতিক নয় কিন্তু আমার অনুরোধ থাকবে, একজন সদস্য হিসেবে, এমন একটি গুরুত্বহীন ইস্যু না তুলতে – যে মুহুর্তে আমরা খুব গুরুত্তপূর্ন একটা জাতীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছি – তাতে সরকারের সাথে আমাদের মতৈক্য থাকুক বা না থাকুক। আমাদের এমন সব কথা থেকে এই মুহুর্তে বিরত থাকা উচিৎ যাতে করে এসব কথায় আমরা ও আমাদের দেশবাসী হেয় প্রতিপন্ন না হয় এবং আমরা যাতে আমাদের মূল ইস্যু থেকে বিচ্যুত হয়ে না যাই। তাই বিরোধী দলের একজন সদস্য হিসেবে আমি জনাব চ্যাটার্জিকে অনুরোধ করছি সত্য মিথ্যা যাই হোক না কেন তিনি যা কিছু বলেছেন সেগুলো যেন তিনি আর এই হাউজে উথাপন না করেন।

শ্রী এ জি কুল্কার্নি: এটা কেটে দেয়া উচিত।

শ্রী এম এস গুরুপদস্বামি: আমি কেটে দেওয়ার জন্য বলিনা। আমাদের এই ইস্যুতে বিতর্ক না করলেই হল। আমি বলব যে, তিনি যেন এই প্রশ্ন আর না করেন এবং মন্ত্রীর পক্ষ থেকেও কোন উত্তরের দরকার নেই। যাই হোক না কেন আমাদের মধ্যে পার্থক্য হতে পারে – তবু আমরা কাঠামোর মধ্যে থেকে আমাদের মন্তব্য করব – যা বরাবর অনুসরণ করা হয়েছে – এবং আমি আশা করি এবং ভরসা করি আমার সহকর্মী, শ্রীযুক্ত চ্যাটার্জি, তার অবস্থান বুঝে নিয়ে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন এবং এই প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকবেন।

শ্রী নিরেন ঘোষ: স্যার, আমি বলতে পারি …….

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: দয়া করে বসুন।

শ্রী নিরেন ঘোষ: তিনি এই মাত্র যা বলেছেন সে ব্যাপারে আমার কিছু বলা দরকার।

মিস্টার ডেপুটি চেয়ারম্যান: জনাব নিরেন ঘোষ দয়া করে বসুন।

শ্রী নিরেন ঘোষ: তারপর কি? আমি বলার আছে …..

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আমি দাঁড়িয়ে আছি, দয়া করে বসুন।

জনাব গুরুপদস্বামি যেমনটি বললেন আমরা শুধু একটি জাতীয় নীতি তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। এবং আমাদের সব সময় চেষ্টা করা উচিৎ এই দৃষ্টিকোণ থেকে – যাতে করে আমাদের কোন প্রশ্ন বা বক্তব্য জাতীয় স্বার্থের বাইরে না হয়। যদি জাতীয়স্বার্থ বিরোধী কিছু হবার সম্ভবনা থাকে তাহলে আমি সন্মানিত সদস্যদের অনুরোধ করব সেগুলো থেকে বিরত থাকতে।

সন্মানিত সদস্য জনাব চ্যাটার্জি সরদার শরণ সিং সম্পর্কে কিছু খুব আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন – যে মুহুর্তে আমরা এই হাউসে আমাদের কর্তব্য পালন করতে এসেছি……..
শ্রী এ পি চ্যাটার্জি: আমি আমার বক্তব্য উঠিয়ে নেব যদি তিনি শুধু একটি শব্দ তুলে নেন – তা হল ‘জাতীয় স্বার্থ বিরোধী’।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: ……. সন্মানিত সদস্য, হাউসে যথাযথ ভাষা ব্যবহার করা উচিত। আমাদের সবার বিবেচনা করা উচিত যে, আমরা যা কিছু করব তা যেন আমাদের জাতীয় স্বার্থের কোন ক্ষতি না করে।

এখন, শ্রীযুক্ত ভূপেশ গুপ্ত।

শ্রী এ জি কুলকার্নি: রেকর্ডের কি হবে? রেকর্ড সংশোধন করা উচিত।

মিস্টার ডেপুটি চেয়ারম্যান: আমি রেকর্ড দেখব – দেখছি কী করা যায়।

শ্রী নিরেন ঘোষ: স্যার, আমি বলতে চাই, আগে আপনি আমার কথা শুনুন – তার পরে আপনার পর্যবেক্ষণ জানান। জনাব গুরুপদস্বামির কথার পরেই আপনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উঠে দাঁড়ালেন এবং চেয়ার থেকে ……

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: একজন সদস্য কিছু বললেই সবাইকেই বলতে দিতে হবে বিষয়টা এমন নয়।

শ্রী নিরেন ঘোষ: দয়া করে আমাকে শেষ করার সুযোগ দিন যেখান থেকে আপনি শেষ করতে বলেছিলেন। এটা ঠিক যে এই প্রশ্নের একটি সর্বসম্মত উত্তর হওয়া উচিৎ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আপনি, পাশাপাশি এই হাউস, এবং সমগ্র দেশ জানে যে সরকার তা করছে না। সেটাই সমস্যা – সেটাই পার্থক্য। তারা দেশকে বিভক্ত করতে সফল। স্যার, একটি নামকরা পত্রিকা – স্টেটসম্যান – হেডলাইন করেছে যা জনাব চ্যাটার্জি উল্লেখ করেছেন এবং এখন পর্যন্ত তার কোনো হা-সূচক বা অস্বীকৃতি জানিয়ে কোন জবাব আসেনি।

জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান তিনি ইতিমধ্যে আজ তা অস্বীকার করছেন।
শ্রী নিরেন ঘোষ: আজ থেকে পনের দিন আগে রিপোর্ট করা হয়েছিল এবং এটি একটি রাজনৈতিক কাগজ নয়।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: সব ঠিক আছে। তিনি এখন তা অস্বীকার করেছেন।

শ্রী নিরেন ঘোষ: আমরা অভিজ্ঞতা বলে যে আমরা বিভেদ সৃষ্টিকারী কর্মকান্ডে জড়িত। ভারত সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বিভেদ সৃষ্টিকারী কর্মকান্ডে জড়িত এবং তাতে সংসদ সদস্যদের বলার অধিকার কি নেই? এটা কি পার্লামেন্টের সদস্য হিসাবে বিশ্বাসঘাতকতা নয়? যেহেতু আমরা তা দেশকে জানাচ্ছিনা। এটা সবসময় মনে রাখা উচিত।

সরদার শরণ সিং: আমি কখনোই তা বলিনি। আমি কি বিষয়টা ক্লিয়ার করতে পারি? আমি কখনো বলিনি যে কোন সদস্য জাতীয় স্বার্থ বিরোধী। কিন্তু আমি বলতে চাই, এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আমাদের জাতীয় স্বার্থের মধ্যে পড়েনা।

শ্রী নিরেন ঘোষ: আপনি শব্দটি ব্যাবহার করেছেন।

সরদার শরণ সিং: যা কিছু আমাদের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী হবে তাই এন্টিন্যাশনাল।

শ্রী নিরেন ঘোষ: রেকর্ড দেখুন।

সরদার শরণ: আমি এন্টি ন্যাশনাল কিছু বলিনি – বরং তিনি বলেছেন

শ্রী ভূপেশ (পশ্চিম বঙ্গ): ইয়াহিয়া খান – আমি তাকে আজকাল প্রেসিডেন্ট বলিনা – যেই মুহুর্তে পিকিং ও ওয়াশিংটন থেকে ঘোষণা এল যে মিস্টার নিক্সন চিন সফর করবেন ঠিক সেই মুহুর্তে ঘোষণাটি দিলেন। অর্থাৎ নিক্সন সাহেবের চিন সফর আর ইয়াহিয়ার ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে। ইয়াহিয়া খান যখন নিক্সনের সফরের প্রাক্বালে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দিলেন সেই সময়ে আমরা ভেবেছিলাম ওয়াশিংটন পিকিং সম্পর্কের উন্নতিতে হয়ত আন্তর্জাতিক চাপ কিছুটা হলেও কমবে। আমরা খুশি যে অন্তত ভিয়েতনামে পিপলস পার্টি নেতৃত্বে আছে। “ম্যান ড্যান” এর সম্পাদকীয়তে যা বলা হয়েছিল তেমন একটি খবর গতকাল এখানকার পত্রিকায় এসেছে যেখানে বলা হয়েছে বড় শক্তিগুলো এক হচ্ছে ছোট ছোট কিছু জাতির ভাগ্যের বিনিময়ে। স্যার, তারপরেও ভিয়েতনাম নীতি থেকে সরে গিয়ে নিক্সন পলিসি এখন চিনের দিকে মন দিচ্ছে সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। এতে বোঝা যায় ভারতের কার্যকর বন্ধু হল —

ডঃ. ভাই বহাবীর: েসবে মধ্যে কি মনোযোগ আকর্শনের মত কিছু আছে?

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: দয়া করে আমাকে বিরক্ত করবেন না।

জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান: দয়া করে তাকে বিরক্ত করবেন না।

ডঃ. ভাই মহাবীর: আপনি দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত কিছু বলছেন না – কিন্তু …..
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আমি বলছি তার প্রমাণ আপনি কথা বলছেন। কীভাবে কথা বলতে হবে তা আমাকে শেখাতে হবেনা। আপনি যখন অনেক কিছু বলেন আমি কথা বলিনা। যখনি আমি বলা শুরু করি আমার বন্ধু উঠে দাঁড়ায়।
(বাধা)

ডঃ. ভাই মহাবীর : এমনকি আপনি ইউএসএসআর এর কথাও নিয়ে আসছেন।

শিরি ভূপেশ গুপ্ত- এটা আপত্তিকর। তারা কোন বন্ধু চায় না। তারা আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চায়। এটাই আমি বলতে চেয়েছি। যদি আপনি সত্যি তা অনুধাবন করতে চান তাহলে নিক্সনের চিন সফরের দিকে চোখ রাখুন।

শ্রী মহাবীর ত্যাগী (উত্তরপ্রদেশ): ইয়াহিয়া খানের সুরে কথা বলবেন না.।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আমি মনে করি আপনি চেঙ্গিস খানের সুরে কথা বলেন। জনাব নিক্সন সফর করতে যাচ্ছেন। আমি একটি জিনিস বুঝতে পারছি না। কেন সরদার শরণ সিং বলে যে, তিনি চীনা কূটনীতিকে স্বাগত জানান? এর মূল রহস্যটা কি? তিনি এটাকে স্বাগত জানান কিন্তু আমরা এর ভিতরের ব্যাপারটা জানতে চাই। আমি এর ভেতরে ম্যাকিয়াভেলিজম ছাড়া আর কিছু দেখিনা। এটা বিশ্ব শান্তির জন্য ক্ষতিকর। এতে আন্তর্জাতিক চাপ কমবে না – বিশেষ করে আমাদের স্বার্থের জন্য তা চরম ক্ষতিকারক।

স্বাভাবিকভাবেই, স্যার, স্বাগত জানানোর কিছু নেই। আমি বিশ্বাস করি কিছু স্মার্ট আইসিএস অফিসার সচিবালয়ে বসে এই শব্দগুচ্ছ উদ্ভাবন করেছে – “কূটনীতির স্টাইলকে স্বাগত জানানো উচিৎ” এটায় আইসিএস এর বিশেষত্ব। সরদার শরণ সিং আরো জ্ঞ্যানি ও পরিপক্ক একজন মানুষ। তার এসব গ্রহণ করা উচিত নয় সচিবালয় থেকে এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের কাছে এই ধরনের জিনিস পৌঁছানো উচিৎ নয়। চীনা কূটনীতির কোন সৌন্দর্য নাই। এটা খুব খারাপ। একজন কমিউনিস্ট হিসেবে আমি লজ্জিত বোধ করি যে চিনের মত একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাথে গান বোট পলিসিতে যায় – যাদের হাত ভিয়েতনামিদের রক্তে রঞ্জিত। এবং তারাই বার পাকিস্তানী সৈন্যদের রসদ পাঠাচ্ছে। তাই আমি মনে করি ….

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আপনি আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্টাইল পার্ট শেষ হয়েছে। আমি এর জন্য সর্দার শরণ সিং কে দোষারোপ করিনা কারণ আমার মনে হয়েছে যে তিনি কিছু খুব স্মার্ট শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন মাত্র। তিনি এবং আপনিও – আপনারা মোটা দাগে একই কাজ করছেন।
এখন প্রশ্ন উঠছে। আমার বন্ধু এখানে তা উল্লেখ করেছেন। এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য যে যদি আপনি পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান অঞ্চলের কোনো অংশ দখল নিতে চেষ্টা করেন তাহলে আমরা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। এটাকে আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয় ‘creations of casus bell’ যখন মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল দখলে নিয়ে ঢাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে – তখনো পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য ও ইসলামাবাদ বলছে যে ভারত তা করছে। তাই এই ঘোষণাকে ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবেই নেয়া উচিৎ। এর পেছনে এটাই উদ্যেশ্য। এটাই প্রস্তুতি।

এখন স্যার, আমি মনে করি এটা তার আমাদের দেশ আক্রমণের একটি পূর্ব প্রস্তুতি। এতে আমাদের হতাশ ঝোলে চলবেনা। আমি তার সাথে একমত। তাড়া যদি তা করে তবে আমাদেরও প্রস্তুত হতে হবে। তারা এমন বিবৃতি দিচ্ছেন যে ভারত মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করছে। তারা এসব বলে ভারতকে ব্ল্যাক মেইল করার চেষ্টা করছেন। স্যার, বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাদের মুক্তিবাহিনীই ছিনিয়ে নেবে – তাদের দেশের মানুষের প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি এখানে জড়িত আছে।

দুপুর ১ টা

আমার এতে কোন সন্দেহ নাই। আমরা পাকিস্তানের সাথে কোন যুদ্ধে লিপ্ত না। আমরা পাকিস্তানের ভিতরে সশস্ত্র হস্তক্ষেপ করছিনা। তবে একটি জাতি হিসেবে, মানুষ হিসেবে, বন্ধু হিসেবে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে সম্পূর্ন সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটাই আমাদের পরিষ্কার অবস্থান হওয়া উচিৎ।

স্যার, এই বিবৃতি ভারতকে ক্ষিপ্ত করার জন্যও কাজে লাগবে। তাই আমি সর্দার শরণ সিং এর সাথে একমত যে তাড়াহুড়া না করে আমাদের বুঝতে হবে জেনারেল ইয়াহিয়া খান এই ধরনের বিবৃতি তৈরীর পিছনের মূল উদ্দেশ্য কি। তিনি হয়ত ভাবছেন এই ধরণের মন্তব্য করার ফলে আমাদের জনগণ আন্দোলনে নামবে এবং আমাদের এমন কিছু করতে বলবে যা তাদের মূল উদ্যেশ্য। আমি মনে করি আমাদের কারও হাতের খেলনা হয়ে খেলা উচিৎ না।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: যথেষ্ট হয়েছে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আমাকে শেষ করতে দিন। জনাব ইয়াহিয়া খানের এটাই উদ্যেশ্য। অতএব এখানে দুইটি বিষয় পরিষ্কার উঠে আসে। ইয়াহিয়া খানের বিবৃতি থেকে আমি মনে করি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশকে আমাদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত। সম্ভব হলে আজ। কারণ জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার কাজের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করছেন। একটি মিথ্যা ক্ষেত্র। নিশ্চই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে আমাদের অবস্থান আরও স্পষ্ট হবে। এতে করে ভারত এখনকার চাইতে আমি সরকারের সাহায্যের ব্যাপারে উল্লেখ করছিনা। অতএব স্বীকৃতি জরুরী। ব্যাপক সহায়তা দেয়া উচিত। শুধু এপাশ থেকে নয় – ওদের পক্ষেও হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সু- সুসজ্জিত, একটি সত্যিকারের ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট সংগঠিত করে ক্ষমতার কেন্দ্রে যেতে সহায়ক হবে। আমাদের সেই ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া উচিত। স্যার, আমি মনে করি এই বক্তব্য থেকে আমরা এই দুটি সিদ্ধান্তে আসতে পারি……

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: যথেষ্ট হল।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত ………….. এবং আমাদের হতাশ বা উত্তেজিত হওয়া উচিত নয়।

অবশেষে, এখানে কোন আবেদনের প্রয়োজন নেই। আমি সম্পূর্ণভাবে একমত যে আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে পরিস্থিতি বিবেচনা করছি; সমাধান করার চেষ্টা করছি; একটি কণ্ঠে, এক ব্যক্তি হিসাবে কাজ করতে চাই যা আমাদের দেশের সমগ্র মানুষের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করবে এবং সেভাবে বিশ্বাবাসীর কাছে প্রকাশিত হবে।

স্যার, এই ব্যাপারটি সম্পূরক হিসেবে নিষ্পত্তি করা হবে না। এই ধরনের আন্তর্জাতিক প্রশ্ন সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে বা মন্ত্রীবর্গের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে বা সিদ্ধান্ত দিয়ে হবেনা। কিছু বিষয় নিয়ে সংসদে কথা বলা উচিত। আর কিছু আছে যেগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে বলা উচিৎ না। তবে তাদের জন্য সরকার ও বিরোধী দলের বাইরেও আরও অনেক পথ আছে। এভাবেই করা উচিত ……..
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: ঠিক আছে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: হ্যাঁ, স্যার, এটা খুব সঙ্কটাবস্থা। অ্যামেরিকা, চিন এবং পাকিস্তান আমাদের বিরুদ্ধে এক হয়েছে। তাদের হালকা ভাবে দেখবেন না। আশা করি এব্যাপারে হতাশ হতে হবেনা যে বিশ্বে ভারতের পক্ষে কেউ নেই। ওইসব দেশের বাইরেও আরও দেশ আছে যারা বন্ধু হিসেবে এগিয়ে আসবে। আসুন আমরা সেই আত্মবিশ্বাস রাখি। প্রকৃত বন্ধু চেনার এখন আসল সময়। আমাদের বন্ধু আছে কারণ আমাদের অবস্থান সন্মাজনক ও সৎ। তাছাড়া আমরা জাতিসংঘের চার্টার মেনে চলি। আমি নিশ্চিত পৃথিবীর বিবেক নষ্ট হয়ে যায়নি এবং এমন শত শত জাতি আছে। আসুন আমরা সবাইকে ডাকি – দেখি কে কে আমাদের সাথে আছে আর কে নাই —

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান – দয়া করে বসুন। মনে হয় অনেক হয়েছে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: সবশেষে, সরকারকে সবসময় বিরোধী দলের মতামত নেওয়া উচিত, তাদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিৎ – কারণ তাদের অনেক ক্ষোভ ও অন্যান্য বিষয়াদি থাকে। তারা অনেক মতামত থাকে যেটাকে অনেকে অপব্যবহার করতে পারে এবং ভালো উদ্যেশ্য নস্যাৎ করে দিতে পারে। আমি মনে করি সরকারকে এ ব্যাপারে যথাযথ প্রচেষ্টা বজায় রাখা উচিত। বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা শুধুমাত্র জাতীয় বিবেক জাগিয়ে তোলার জন্য নয় বরং নিশ্চিত করা যে এটা বাস্তবায়িত হবে। একই সময়ে আমরা আমাদের প্রভাব বিস্তার বজায় রাখব ……….

জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান: মনে হয় যথেষ্ট হয়েছে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত; দয়া করে আমাকে বিরক্ত করবেন না। আমি শেষ করছি। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সব রকমের সাহায্য দেয়া উচিৎ যাতে করে তারা একটি ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট এর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে। এটাই চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পূর্বশর্ত।

সরদার শরণ সিং: আমি অনেক ধন্যবাদ জানাই অনেকগুলো বিষয় সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করার জন্য। আমি তার কিছু প্রস্তাবনা যত্নের সাথে গ্রহণ করলাম।

জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান: জনাব পাটনায়েক।

শ্রী বিজু পাটানায়েক (উড়িষ্যা): আমি শুধুমাত্র এক একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে চাই।

শ্রী সীতারাম কেশরী (বিহার): আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান; আমি ইতিমধ্যে আপনার দলের একজন সদস্যকে ডেকেছি।

শ্রী বিজু পাটনায়েক: আমি দুঃখিত যে মাননীয় মন্ত্রী বিবৃতি দিলেন যে তিনি আজ অথবা আগামীকাল বাংলাদেশকে স্বীকৃতির ব্যাপারে কিছু করবেন না। তিনি কি বুঝতে পারেন যে, যখন এই বিবৃতি বিশ্বের প্রেসে প্রকাশিত হবে তখন পাকিস্তান এর প্রতিক্রিয়া কি হবে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলের অবস্থা কি হবে? প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞতার সাথে বলেছেন যে এই শরণার্থী অন্তঃপ্রবাহ মাত্র ছয় মাস থাকবে।

তিনি একটি সময় সীমা বেঁধে দিয়েছেন যে যদি ছয় মাসের মধ্যে এটা সমাধান না করা হয় তখন ভারত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। পাশাপাশি বিশ্ব বিবেকের উপর আরও প্রভাব তৈরি করতে মন্ত্রীবর্গ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করছেন। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি অন্তত এই বিবৃতিটি একটু পুনর্বিবেচনা করবেন যে তিনি বললেন, “আমি বাংলাদেশকে আজ অথবা আগামীকাল স্বীকৃতি দেবনা”? কারণ আমি মনে করি, এই কথা তিনি এখানে এখন পর্যন্ত যত কথা বলেছেন তার বিপক্ষে যায় – ভারতের সকল মন্ত্রীরা যা বলেছেন তার বিপক্ষে যায় – এমনকি পার্লামেন্টের দুইটি হাউজে যত বিবৃতি দেয়া হয়েছে সেগুলোর বিপক্ষে যায়। প্রধানমন্ত্রী ছয় মাসের কথা বলেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী তার বিজ্ঞতার আলোকে আরও ৩ মাস বাড়াতে পারেন। কিন্তু ‘আজ নয়, আগামী কালও নয়’ – এই কথা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও পার্লামেন্টের রেজোল্যুশনের বিপক্ষেই চলে যায়। তাই আমি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে তার বক্তব্যের এই অংশটুকু পুনর্বিবেচনার আবেদন করছি।

সরদার শরণ সিং: আমি কি একটু বিষয়টা স্পষ্ট করতে পারি? আমি সন্মানিত সদস্যেকে বলতে চাই শুধুমাত্র ঐ গুরুত্বের জন্যই আমি এই কথা আবার এবং বারবার বলব। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে ‘আগামীকাল’ বলতে আমি বোঝাইনি যে ‘কোনোদিনও না’। আজ বুধবার, কাল বৃহস্পতিবার। আমি শুধু এই দুই দিনের কথা বলেছি। আর তা বলার কারণ আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন ‘আপনি কি আজ স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছেন? ’ – তখন আমি বলেছিলাম – ‘না’।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান – তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে “আগামীকাল” দ্বারা তিনি শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার বুঝিয়েছেন।

শ্রী গোদে মুরাহারি: আমি মনে করি জনাব শরণ সিং এর একথা বলার অধিকার নাই যে আগামীকালও স্বীকৃতি দেয়া হবেনা। এই সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। তিনি কিভাবে বলেন যে “আগামীকাল আমি স্বীকৃতি দেব না। ’? তিনি সম্পূর্ন ভুল বলেছেন। তার এমন বলা ঠিক হয়নি। তিনি বলতে পারতেন ‘ এই মুহুর্তে আমার স্বীকৃতি দেয়ার কোন ইচ্ছা নেই। ’ কিন্তু তিনি অনুমান করেও বলতে পারেন না যে তিনি এই সন্ধ্যায় – এমনকি আগামীকালও স্বীকৃতি দেবেন না। কেবিনেট পরবর্তি ঘণ্টায় এটা বিবেচনা করতে পারে।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: সম্ভবত মাননীয় মন্ত্রী সরকারের মনের খবর ভালো জানেন।

সরদার শরণ সিং: যদি সে রকম হয়, আমি হাউসে এসে ঘোষণা দেব।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: জনাব রাজ নারায়ন –

শ্রী মহাবীর ত্যাগী: আমি ধরে নিচ্ছি যে তারা যথাযথ সময়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিবেন।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: জনাব রাজ নারায়ন –

শ্রী রাজ নারায়ণ – মহোদয় আমি বিনয়ের সাথে বিশেষভাবে আপনার কাছে নিবেদন করছি একটা প্রস্তাব পাস করার পর তার ভাষা ও ভাব বিস্মৃত হব এমন কোন কু অভ্যাস আমরা গড়ে তুলব না। আমি আপনার অনুমতি নিয়ে ঐ প্রস্তাবের একটা অংশ পড়তে চাই যাতে এই পরিষদের সন্মানিত সদস্য এবং সরকারী সদস্যগণও সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত প্রস্তাবটি হৃদয়ঙ্গম করত ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নির্ধারন করেন।

‘ভারতের ভৌগোলিক অবস্থা ও ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শত শত বর্ষের প্রাচীন সম্পর্কে এই উপমহাদেশের জনগণ আবদ্ধ হওয়ার কারণে এই পরিষদ তার আপন সীমান্তের এত কাছাকাছি ঘটমান ভয়াবহ ব্যাপার সম্পর্কে উদাসীন থাকতে পারেনা। ’

এই একটি মাত্র বাক্য যথার্থভাবেই দিকদর্শন করে যে আমরা এবং পূর্ব বাংলার জনগণ, বাংলাদেশের জনগণ এক। আমাদের সংস্কার ও সম্পর্ক শত শত বর্ষের পুরাতন। আমাদের ইতিহাস, আমাদের ভূগোল এই প্রমাণ করে যে, আমরা এক ছিলাম, আমি চাই সর্দার শরণ সিং একথাও হৃদয়ঙ্গম করুন। ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ জুনে যে প্রস্তাব পাশ হবার পর ভারত পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল ঐ প্রস্তাবের ভাষাও আমি এখানে পরে শোনাতে চাই। সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি তার জন্মলগ্ন থেকে এক অখণ্ড স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখেছে যা অর্জন করতে লক্ষ লক্ষ নরনারী কষ্ট সয়েছে। যে ভারতের স্বপ্ন আমরা দেখেছি তাকে ইতিহাস, ভূগোল সমুদ্র ও পাহাড় এক সত্তা বানিয়েছে।

আমি চাই সর্দার শরণ শিং এসব কথা স্মরণ করে জবাব দেবেন এ প্রস্তাব পাশ করার পর সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

উপ- সভাপতি- ঠিক আছে এরূপ প্রশ্ন করুন।

শ্রী রাজনারায়ণ- দ্বিতীয় প্রস্তাব শুনুন।

উপ-সভাপতি – প্রস্তাব সকলের জানা আছে।

শ্রী রাজনারায়ণ – এই সভা গণতান্ত্রিক জীবন ব্যাবস্থার জন্য পূর্ব বাংলার জনগণের সংগ্রামের প্রতি নিজের গভীর সহানুভূতি ও একাত্মতা ব্যাক্ত করছে একাত্মতা অর্থ ভারত ও স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মা এক স্বাধীন বাংলাদেশের ওপর হামলা আমরা নিজেদের ওপর হামলা মনে করি এটি ঐ প্রস্তাবের ভাষা ও তাৎপর্য। একাত্মতার অন্য কোন অর্থ নেই। একাত্ত সন্দটির মানে এই যে, আমরা ও বাংলাদেশের লোক এক। এই একাত্ত শব্দটি নেয়ার পর ও এই সরকার চার মাস পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় রয়েছেন এর অর্থ আমি বুঝি না।

দ্বিতীয় কথা আমি বলতে চাই, প্রস্তাবের শেষাংশে রয়েছে এই সভা তাদের আশ্বাস দিচ্ছে যে তাদের সংগ্রাম ও ত্যাগ ভারতের জনগণের আন্তরিক সহানুভূতি ও সমর্থন লাভ করেছে। এতদূর সমর্থন দানের প্রস্তাব পাশ করার পর ভারত সরকার স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নে পাশ কাটিয়ে চলেছেন এই সরকার কি ঐ প্রস্তাবের প্রতি বিশ্বস্ত? আমি চাই, সর্দার শরণ সিং মহাশয়, তার মধ্যে যদি ‘সেন্স অব রিস্পন্সিবিলিটি’ (দায়িত্ববোধ) অবশিষ্ট থাকে অকপটে স্বীকার করবেন যে, ভারতের বিধানসভার সদস্যদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সর্দার শরণ সিং কি জানেন উত্তর প্রদেশ বিহার রাজস্থান যেখানে যেখানে তাদের দলের সরকার আছেন তারা প্রস্তাব পাশ করেছেন। স্বীকৃতি দেবার জন্য প্রস্তাব পাশ করেছেন উত্তর প্রদেশ, বিহার, বাংলা, রাজস্থান। সে সময় সেখানে সেখানে অধিবেশন বসেছে প্রায় জায়গাতেই প্রস্তাব পাশ হয়েছে।

উপ-সভাপতি – ঠিক আছে রাজনারায়ন বাবু এখন শেষ করুন, বসে পরুন।

শ্রী রাজনারায়ণঃ কিন্তু সরকার এযাবৎ তাদের মর্যাদা দেননি। তাই আমি বলতে চাই এসব কিছু সত্ত্বেও এই সরকার আজ অবধি স্বীকৃতি দেয়ার কথা ঘোষণা করছেন না। আজও সর্দার শরণ সিং বৃহস্পতি, শুক্র, শনিবারের কথা বলেছেন – ‘today after tomorrow’ – এরূপ বলা কি সর্দার জি’র পক্ষে বলা শোভনীয়? আমি বলি মোটেই না — আজ ইয়াহিয়া খাঁ অ্যামেরিকা ও চিনের নতুন সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে ঘোষণা করেছেন, মুক্তি সেনারাও যদি বাংলাদেশের কোন অংশ দখল করে নেয় তাহলে আমরা তাকে হামলা মনে করব এবং সাধারণ আক্রমণ হিসাবে তার জবাব দেব। এত কিছুর পরে সর্দার শরণ সিং এর একথা বলতে কি অসুবিধা যে বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানের আক্রমণ ভারত তার নিজের ওপর আক্রমণ বলে মনে করে। জার্মানি পোল্যান্ডের ওপর হামলা করল। ইংল্যান্ড বলল আমরা এটা নিজেদের ওপর হামলা বলে মনে করব। আজ আমাদের প্রতিবেশী দেশ বলছে ভারতের সাথে আমাদের একাত্মতা আছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কি বারবার চাইছেন না যে ভারত তাদেরকে স্বীকৃতি দিক?

সর্দার শরণ সিং- ইনি ত্ব সবার চেয়ে ওপরে গেলেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী(শ্রী জগজিবন রাম)- চ্যাটার্জিকেও মাত করে দিলেন।

শ্রী নবল কিশোর – আমি সব সময় মাত করি।

শ্রী নবল কিশোর – আমি বলেছি যে, পাকিস্তান এরূপ করেছে।

শ্রী নবল কিশোর – আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি আগে আগেই কোন স্ট্রং একশন নেবেন?

শ্রী ভুপেশ গুপ্ত – আমি তার সাথে সম্পূর্ন একমত স্যার।

সর্দার শরণ সিং – স্যার আমি মনে করিনা যে তিনি কোন প্রশ্ন করেছেন। তিনি শুধু মাত্র তার কিছু নির্দিস্ট দর্শন প্রকাশ করেছেন।

স্যার, আমি নির্দিস্টভাবে তার ১/২ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই। তিনি বলেছেন পাকিস্তান জম্মু কাশ্মীর অথবা আমাদের অন্য কোন অঞ্চলের উপর আক্রমণ করতে পারে। এই ব্যাপারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন যে আমরা আমাদের এলাকা প্রতিরক্ষার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছি। আপনি আর কোন প্রতিরক্ষা সংগঠিত করার কথা আশা করতে পারেন না।

শ্রী এন জি গোরে – তিনি একজন জেনারেলের নাম উল্লেখ করেছেন।

সরদার শরণ সিং: এক বা দুই জেনারেল – কোন বিষয় না।

সর্দার স্মরণ: না, তিনি শুধুমাত্র জানতে চান আপনারা এয়েই ব্যাপারে সচেতন কিনা।

সরদার শরণ সিং: আমরা এটা নিয়ে সচেতন এবং আমরা তার চেয়ে বেশী পরিমাণে এটা নিয়ে সচেতন।

শ্রী এন জি গোরে: স্বাভাবিকভাবেই এমনই হওয়া উচিত।

সরদার শরণ সিং: এখন, স্যার, তিনি পার্লামেন্টের রেজোলিউশন সম্পর্কে ও আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। আমি তাকে বিনীতভাবে কলিং-দৃষ্টি আকর্ষণ নোটিশ দেখতে বলছি। এটি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের যুদ্ধের হুমকি সম্পর্কিত এবং এ সব কলিং এটেনশন নোটিশ ছাড়া উঠে আসে না। সুতরাং, আমাদের প্রাসঙ্গিকতার কিছু নিয়ম খেয়াল করতে হবে।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: জনাব নাওয়াল কিশোর।

শ্রী নাওয়াল কিশোর: স্যার আমি কোনো প্রশ্ন করার আগে একটি ছোট্ট অনুরোধ করতে চাই। সেটি হল দয়া করে সম্ভব হলে এই কলিং-এটেনশন মোশনের সময়টা পরিবর্তন করবেন। বিশেষ করে যখন সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়। এটা শুধুমাত্র আমার একটা অনুরোধ। এখন যতদূর মন্ত্রী জ্ঞ্যাত আছেন – আমি জিজ্ঞেস করছি।

শ্রী সুন্দর সিং ভাণ্ডারী: এর সংস্লিস্টতা কি? আমরা জানতে চাই, স্যার।
জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান – তিনি শুধুমাত্র একটি প্রস্তাবনা রেখেছেন।
শ্রী সুন্দর সিং ভান্ডারি: যখন তিনি বলেন যে এই সময়ে এটা করা উচিত হবে না, বিশেষ করে যখন তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কিছু বলেন, এর দ্বারা তিনি কি বোঝাতে চান?

শ্রী নাওয়াল কিশোর (উত্তরপ্রদেশ): আমি আপনাকে অনুরোধ করেছি মাত্র। এখানেই শেষ। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন তিনি বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল ঘটনার ব্যাপারে তার উদাসীনতা আমাদের অকপটে বলতে রাজি কিনা এবং তার সরকার কি কোন পদক্ষেপ নেবে কিনা? কারণ এমন গল্প প্রচলিত আছে যে ভারত সরকার কখনোই কোন ক্রিয়া করেনা – শুধু প্রতিক্রিয়া দেখায়।

স্যার, প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চিন সফরের ঘোষণার পর, পাকিস্তান তার অবস্থান আত্মরক্ষামূলক থেকে পরিবর্তিত করে আক্রমণাত্মক করেছেন এবং আমাদের যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন। এবং তবু এখনও আমাদের সরকারের কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না। শুধুমাত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে যখন আমরা আক্রান্ত হব তখন তা প্রতিহত করা হবে। আমি কি জানতে পারি সরকার এখন অবিলম্বে বাংলাদেশে শুধু সামরিক সরবরাহ নয় বরং সৈন্য মোতায়েন করবেন কিনা?

সরদার শরণ সিং: সরকার কেবল প্রতিক্রিয়া দেয় কিন্তু কখনো কাজ করে না – এটা বড্ড পুরনো কথা। একজন সিনিয়র সদস্য শুধু পুরনো এসব শব্দগুচ্ছগুলো উচ্চারণ করবেন এবং সেই ফ্রেমে একটি প্রশ্ন করবেন এতে করে তার জ্যেষ্ঠতা ও স্বকীয়তা বরং রক্ষিত হয় না।

দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি তিনি জিজ্ঞাসা করেছেন – আমরা কি আত্মরক্ষামূলক অবস্থান থেকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে নিজেদের পরিবর্তন করতে যাচ্ছি কিনা …….

সরদার শরণ সিং: আমাদের নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সেটাই প্রতিরক্ষার সেরা পথ।

সরদার শরণ সিং: তখন সে বলবে যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় নাই। এটাই সেই প্রতিক্রিয়া যা আমি এই হাউজে দিচ্ছি। গতকাল আমি অন্যান্য হাউসে বিবৃতি দিয়েছি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি বিবৃতি ছিল এবং আমিও আমার বিবৃতি দিয়েছি। এটাই প্রতিক্রিয়া ……..
(বাধা)

আমি কি মাননীয় সদস্যকে আরেকবার চিন্তা করতে বলতে পারি? অন্তত যখন তিনি বাসায় ফিরেন – তিনি যা বলেছেন তার প্রায়োগিক প্রভাব তিনি কি একটু ভেবে দেখবেন? আমি নিশ্চিত যে তিনি আমার সাথে একমত হবেন যে এই প্রশ্ন অসৎ চিন্তায় করা হয়েছে। আপনার সেই প্রকৃতির কোনো ধারণা করা পোষণ করা উচিৎ নয় এবং আপনি যখন কোন ধরনের পরামর্শ দেবেন তখন তার প্রায়োগিক প্রভাব বোঝার চেষ্টা করা উচিত। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে কোন শান্ত মুহূর্তে তিনি আমার সঙ্গে একমত হবেন যে এই ফর্মে প্রশ্ন করা উচিত নয় বা কীভাবে উত্তর দিতে হয় সেটাও। আমি শুধু তাকে আবার এই ব্যাপারে ভাবার অনুরোধ করব। এবং আমাকে কিছু বলার দরকার নেই। সেভাবে প্রশ্ন করাটাই বোকামি।

তৃতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে, আমি কোন উত্তর দিতে চাই না।

শ্রী মহীতোষ পুরকায়স্থ (আসাম): আমি কি সন্মানিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে পারি তিনি একটি খবরের ব্যাপারে জানেন কিনা- যেটি করাচির ‘দৈনিক ডন’ পত্রিকার প্রথম পাতায় ৯ জুন ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে – সেখানে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী ডঃ কিসিঞ্জারের একটি বিবৃতি রয়েছে। সেটি নিম্নরূপ-

“বিদেশী কূটনৈতিক সার্কেলের মতে ……..”
সরদার শরণ সিং: আমরা কেন আমাদের সংসদে পাকিস্তানের পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করব?

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আপনি শুধুমাত্র প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আপনি এটা পরছেন কেন? পড়ার দরকার নাই। শুধু আপনার প্রশ্ন করুন।
শ্রী মহীতোষ পুরকায়স্থ: পটভূমি জানা প্রয়োজনীয়।

জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: কেন আপনি এটা উদ্ধৃত করতে চান?

সরদার শরণ সিং: আপনি কেন পাকিস্তানের পয়েন্ট এখানে ফরোয়ার্ড করতে চান?

শ্রী মহীতোষ পুরকায়স্থ: ফরেন সার্কেলের মতে, মার্কিন কর্মকর্তারা, অর্থাৎ ডঃ কিসিঞ্জার এবং আরও কয়েকজন, সীমান্তে একটি জাতিসংঘ বাহিনী পাঠানোর ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছেন – যাতে করে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই ডঃ কিসিঞ্জার যখন এখানে এসেছিলেন তিনি কি আমাদের সরকারের নেতাদের সঙ্গে এই বিষয়ে কোন আলোচনা করেছিলেন কিনা এবং আমি আরও জানতে চাই জাতিসংঘ বাহিনীকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পোস্ট করার জন্য কোন পথ প্রস্তুত করার চিন্তা তাদের আছে কিনা – যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান যুদ্ধের কথা বলছেন।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান- কীভাবে এমন এক প্রশ্নের উত্তর দেয়া যেতে পারে?