শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯৭। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ থেকে বিরত থাকার ভারতীয় আহ্বান ব্রিটেন কর্তৃক প্রত্যাখ্যানের ওপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং এর বিবৃতি | রাজ্যসভার কার্যবিবরণী | ১ জুন, ১৯৭১ |
জরুরী জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ
যুক্তরাজ্যের সরকার কর্তৃক পাকিস্তান এইড স্থগিত করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান
শ্রী এন আর মুনিস্বামি (তামিলনাড়ু): স্যার, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। যুক্তরাজ্যের সরকার সম্প্রতি পাকিস্তান এইড স্থগিত করার জন্য ভারতের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে – সেই ব্যাপারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী (সরদার শরণ সিং):
জনাব চেয়ারম্যান, স্যার, পূর্ব বাংলা বিষয়ে ভারত সরকার ব্রিটিশ সরকার সহ বিদেশি সরকারগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। আমরা যে বিষয়টির উপর জোর দিয়েছি সেটা হল তারা যেন পাকিস্তান শাসককে পূর্ববাংলার নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করতে বলে এবং এটাকে বল প্রয়োগ না করে রাজনৈতিকভাবে সমাধার চেষ্টা করে। আমরা তাদের আরও বলেছি যে পাকিস্তান যদি তাদের উপর নিপীড়ন চালাতে থাকে তাহলে এক সময় তাদের মাঝে ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং সামরিক খাতে ব্যয় বাড়বে এবং এইভাবে দ্বন্দ্ব দীর্ঘায়িত হবে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলা হয়েছে যে, একটি রাজনৈতিক সমাধান করার জন্য ব্রিটিশ সরকার সম্ভাব্য সব কিছু করবেন। এবং পলিসি মোতাবেক শুধু সাহায্য নয় বরং রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তারা আরও মনে করে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার হবার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের অর্থনীতির পুনর্গঠন সম্ভব না।
শ্রী এন আর মুনিস্বামি: বিবৃতি থেকে আমি জানলাম যে প্রস্তাব শুধুমাত্র ইউ.কে. নয় বরং অন্য বিশ্বশক্তিগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছিল।
[জনাব.ডেপুটি চেয়ারম্যান আসন গ্রহণ করলেন]
বাস্তবে এটা তাদের আমাদের প্রস্তাব অস্বীকার করার কৌশল মাত্র। আপনি এটাকে প্রত্যাখ্যান বলেন আর নাই বলেন তারা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে নাই। ভারত ও ইংল্যান্ডের এই অবস্থানে বাংলাদেশের সমস্যা বিশ্বের অন্যতম জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে এবং এটা স্থিতি অবস্থায় আসতে দির্ঘ সময় লেগে যাবে। আমি মাননীয় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইব এই অবস্থায় রাজনৈতিক নিষ্পত্তির বদলে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের সাথে আলোচনা করে অথবা ইউ এন ও ও অন্য কোন এজেন্সির সাথে আলোচনা করে কিছু একটা সমাধান করা যায় কিনা। আমি আরও একটি বিষয় জানতে চাই – সেটা হল অন্য দেশগুলোর সাথে আলোচনা করে শরনার্থিদের প্রবেশ ঠেকানো যায় কিনা সেটাও ভেবে দেখবেন কিনা।
শ্রী শরণ সিং: সন্মানিত সদস্য তথ্যভিত্তিক তেমন কিছু জানতে চান নাই। তিনি কিছু সাজেশন দিয়েছেন। আমরা সেগুলো সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে দেখব যাতে সেগুলো থেকে কোনভাবে উপকৃত হওয়া যায় কিনা।
শ্রী এন আর মুনিস্বামিঃ আমি যে সব পরামর্শ দিয়েছি ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া কী?
সরদার শরণ সিং: আমাদের প্রতিক্রিয়া যে আমরা তাঁর পরামর্শ বিবেচনা করব।
শ্রী এ জি কুলকার্নি (মহারাষ্ট্র): স্যার, মন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন তা সবচেয়ে দুঃখজনক। এটা আসল ইস্যুকে এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া কিছু নয়। এবং তিনি ইংল্যান্ডের ভুলটি এড়িয়ে যাচ্ছেন এবং ব্যাপারটি হজম করতে চাচ্ছেন।
স্যার, আমি সরকারের কাছে জানতে চাই তারা কি বাংলাদেশ বিষয়ে আন্তর্জাতিক দেশগুলোকে যথাযথভাবে সচেতন করতে সমর্থ হচ্ছেন কিনা এবং বিশ্বশক্তিগুলোর কেউ কি ভারতকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবার মানসিকতা দেখাচ্ছে কিনা। স্যার, রোডেশিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকায় হত্যাকাণ্ড এবং এই ধরনের অবিচার কিন্তু চলছে তবু কোন বিশ্বশক্তি নিজস্ব জাতীয় স্বার্থে, সাহস নিয়ে তাদের সাহায্য করতে আসছেনা। তাই স্যার, আমি জানতে চাই ……
শ্রী এ ডি মানি (মধ্য প্রদেশ): স্যার, ‘.. “
শ্রী এ জি কুলকার্নি: আপনি কি চান জনাব মনি?
শ্রী এ ডি মনি: আমি শুধুমাত্র আপনার সমর্থন বাড়াতে চাচ্ছিলাম।
শ্রী এ জি কুলকার্নি: আপনার সমর্থন আমার প্রয়োজন নাই।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: অর্ডার অর্ডার প্লিজ।
শ্রী এ জি কুল্কার্নি: আমি নিজেকে খুব ভাল সমর্থন করতে পারি। স্যার, আমি সরকারের কাছে বিশেষ করে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে তারা আমার সাথে একমত কিনা যে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে জাগিয়ে তুলতে বা তাদের সহানুভূতি জাগানোর চেষ্টা ব্যার্থ হয়েছে এবং বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ভুল করছে এবং সরকার আমার প্রস্তাব সম্মত হবেন কিনা। স্যার, খুব সম্প্রতি আমি বিদেশে গিয়েছিলাম……
শাড়ি ভুপেশ গুপ্ত (পশ্চিম বঙ্গ): আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?
শ্রী এ জি কুল্কার্নি: আমি আপনাকে পরে বলব। সেখানে আমি দেখেছি, স্যার, যে ইউকে সরকার কমনওয়েলথের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে এবং এটা কমনওয়েলথ এর মাধ্যমেই আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ যুক্তরাজ্যের প্রভাবের সাথে সাথে যুক্ত। এবং একই কারণে তারা আমেরিকানদের প্রভাবিত করছে এবং আমেরিকানরা তাদের লাইনে যাচ্ছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্যার, তাই আমি জানতে চাই সরকার যুক্তরাজ্যকে তাদের মনোভাব পুনর্বিবেচনা করার অবেদন করবে কিনা।
স্যার, আমি জানতে চাই ভারত সরকার ইউ.কে. সরকারের প্রতি জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিনা। কারণ জনাব উইলসন শ্রী জে প্রকাশকে
বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে বিষয়টি অ্যাড্রেস করতে বাঁধা দিচ্ছেন। এটা খুব অপমানজনক এবং আমরা এটা হজম করতে পারি না। তারা কালপ্রিট এবং এটি যুক্তরাজ্য সরকারের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের প্রকাশ। তাতে তারা লেবার গ্রুপ হোক অথবা কনজারভেটিভ গ্রুপ – যাই হোক না কেন। স্যার, আমার কথা হল ভারত সরকার এই বিষয়ে আমাদের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেবে কিনা এবং পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষকে তাদের নিজস্ব একটি সরকার গঠন করতে সাহায্য করবে কিনা।
তারপর, আমার তৃতীয় বিষয়টি হল – স্যার …….
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: আমি মনে করি এই যথেষ্ট।
শ্রী এ জি কুল্কার্নি: স্যার, আমার শেষ পয়েন্টে আমি বলতে চাই সরকার সচেতন যে এখন পর্যন্ত ১২ কোটি রুপি পাওয়া গেছে। আমি মনে করি এটা খুব টলায়মান সমস্যা এবং যে টাকা আমরা পেয়েছি তা খুবই নাজুক। সুতরাং, ভারত সরকার বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিবে কিনা? অন্য দেশের দরজায় কোড়া না নেড়ে – শুধুমাত্র তাদের সহানুভূতি আদায় কোনা করে নিজেরা কোন পদক্ষেপ নেবেন কিনা? কারণ তারা এই ইস্যুতে জোরালভাবে এগিয়ে আসছেন না – তারা ভারতকে সাহায্য করছেন না – — (বাঁধা)
শ্রী বাবুভাই এম ছিনাই (গুজরাট): স্যার, আমি পয়েন্ট অব অর্ডারে আছি। দৃষ্টি আকর্ষণের সময় একজন সদস্যকে শুধুমাত্র কোন কিছুর ব্যাখ্যা করার অনুমতি দেওয়া হয়। তাকে কি এত দীর্ঘ বক্তৃতা করতে দেয়া যায়? তিনি বলেন যে, তিনি সব মনোপলি (একচেটিয়া) এবং মনপলিস্ট বিরোধী। কিন্তু তিনি নিজেই একচেটিয়াভাবে হাউসের সময় নিয়ে নিচ্ছেন।
(বাধা)
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: এটা, ঠিক মতই আছে সির।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: অর্ডার, অর্ডার প্লিজ।
শ্রী বাবুভাই এম ছিনাই: জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান, স্যার, আমি জনাব ভূপেশ গুপ্তর রুলিং চাই না; আমি শুধুমাত্র আপনার রুলিং চাই।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: এটা এই রুলিংএর ব্যাপারেই বলেছি। আমি বলেছি সব ঠিক আছে। যদি তাকে কম বলতে দেয়া হয় এটা জাতীয় সার্থের সাথে অন্যায় করা হবে।
(বাধা)
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: অর্ডার, অর্ডার প্লিজ। সন্মানিত সদস্যগণ দির্ঘক্ষন মোট দেবেন না বলেই আশা করি। এবং আশা করি তারা শুধুমাত্র প্রশ্ন করেই ক্ষান্ত দেবেন যাতে করে আরও বেশী সংখ্যক সদস্য অংশগ্রহণ করতে পারেন।
কিছু সদস্য: হ্যাঁ, স্যার।
সরদার শরণ সিং: স্যার, আমি সন্মানিত সদস্যের সাথে একমত। কারণ তিনি পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সামান্য প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনি যে বলেছেন যে ইউ.কে. কমনওয়েলথ এর প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে সেটা হয় ঠিক নাও হতে পারে।
শ্রী এ জি কুলকার্নি: কেন নয়?
সরদার শরণ সিং: আমি এটা মানতে পারছিনা। বোঝার চেষ্টা করুন। প্রথম কথা হল সন্মানিত সদস্য ইউ.কে. দ্বারা অনুমোদিত কোন ব্যাক্তি না যে তিনি যে কথাটি বলেছেন যে ইংল্যান্ড আগ্রহ হারিয়েছেন সেই কথাই সঠিক হবে। আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেই জানি যে তাদের আগ্রহ আছে।
এরপর দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি তিনি জিজ্ঞাসা করেছেন – যে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে কোন শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিনা —
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্যার, পয়েন্ট অব অর্ডারে উপর বলছি। মাননীয় মন্ত্রীর এই জিনিস এভাবে বলা উচিৎ হয়নি … (বিঘ্ন)। তিনি বলেছেন যে তিনি ইউ কে অনুমোদিত কোন ব্যাক্তি নন – যে বলার অধিকার রাখে যে ইউ কে আগ্রহ হারিয়েছে। তাহলে আমি বলতে পারি কেউ কি কোন অধিকার রাখেন একথা বলতে যে ইসলামাবাদ গণতন্ত্রের উপর বিশ্বাস হারিয়েছে? —
(বাধা)
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: অর্ডার, অর্ডার প্লিজ।
শ্রী চিতা বসু (পশ্চিম বঙ্গ): উত্তর শুনুন ….
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: দয়া করে বসুন, জনাব চিত্ত বসু।
সরদার শরণ সিং: তারপর তিনি যে বলেছেন আমি যেন দক্ষিণ ব্লক দ্বারা পরিচালিত না হই যেটা ফরেন সার্ভিস সদস্যদের জন্য অন্যায় সেখানেও আমার আপত্তি আছে। একবার এটাও ভাবুন যে কোন মন্ত্রী বা সরকার তাদের অধিনস্ত কর্মচারির কথায় বা কোন ফরেন সার্ভিসের কর্মচারির কথায় চলবে না। সরকার সম্পর্কে আমরা যে কোন ধারণা পোষণ করতেই পারি। কিন্তু ফরেন সার্ভিসের লোকদের নিয়ে সেরকম কিছু বলার সুযোগ নাই। কারণ তারা শুধুমাত্র সরকারের পলিসি অনুযায়ী কাজ করেন এবং সেই পলিসি বাস্তবায়ন করার জন্য দায়বদ্ধ।
ডঃ. ভাই মহাবীর (দিল্লি): এটা মন্ত্রীদের জন্যও খুব চাটুকার ধরনের ব্যাপার।
সরদার শরণ সিং: আমি জানি না। এটা হতে পারে, সম্ভবত, বিরোধী দলের জন্য। আমার কি সেভাবে বিষয়টি দেখা উচিৎ?
এরপর তিনি বলেছেন আমাদের কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি জানি না তিনি কি বুঝিয়েছেন –
শ্রী এ জি কুলকার্নি: বাংলাদেশে …..
সরদার শরণ সিং: বাংলাদেশের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। আপনি ইউ.কে. সম্পর্কে আমাদের মনোভাব নিয়ে বলছিলেন। প্রশ্ন হল সমস্যা সমাধানে আমরা অন্য আর কি করতে পারতাম। অবশ্যই আমাদের এই ইস্যুতে বিশ্বকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের বিশ্ব মতামত জোগাড় করতে হবে যাতে পাকিস্তান শাসকদের নিরস্ত্র মানুষের উপর সেনা শাসন ও নির্যাতন বন্ধ করা যায় এবং এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে করে যেসকল শরণার্থীরা এখানে আছে তারা দেশে ফিরে যাবার ব্যাপারে নিরাপদ বোধ করে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে যাতে করে সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আমরা আদায় করতে পারি কারণ আমাদের অবস্থা দৃঢ় ও সঠিক। শরনার্থিদের জন্য বাইরে থেকে যে অর্থই আসুক না কেন আসল বিষয় হল তাদের সমর্থনের প্রকাশ।
সর্বশেষে, তিনি যে প্রশ্ন করেছেন তাঁর জবাব আমার সামর্থ্যের বাইরে। তিনি বলেছেন যে, যদি এই ব্যাপারে ইউ.কে. এর সঙ্গে বোঝাপড়া সম্পন্ন না করা যায় তাহলে বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান করা যাবে না। আমি মনে করি বাংলাদেশ ইস্যুতে আমাদেরকে তিনি এত অসহায় না মনে করলেও চলবে। এবং সমর্থন একটি দেশের সম্পূর্ন নিজস্ব ব্যাপার। যদি কোন দেশের সমর্থন আমাদের অনুকূলে না হয় আমরা সেটাকে কারেক্ট করার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আমাদের নিজেদের আরও অনেক পলিসি আছে। এবং সহজ ভাবে বলতে পারি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যাই হোক না কেন আমাদের ব্যাবস্থা আছে। আমি সন্মানিত সদস্যের প্রতি বলতে চাই এটা সঠিক এপ্রোচ নয় —
(বাধা)
শ্রী এ জি কুলকার্নি: জনাব উইলসন একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশে বক্তব্যকালে জনাব জয় প্রকাশকে যে বাঁধা প্রদান করেছেন সেই ব্যাপারে আমি সরকারের মনোভাব সম্পর্কে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে চাই। সেই ব্যাপারে সরকারের কি বলার আছে …..
(বাধা)
সরদার শরণ সিং: স্যার, আমরা সেই আচরণের ব্যাপারে কঠোর আপত্তি জানাই।
শ্রী লোকনাথ মিশ্র (উড়িষ্যা): তাদের অবস্থান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি থেকে বোঝা যায় যে পাকিস্তান সফলভাবে বিদেশে মিথ্যা প্রচার করতে সক্ষম হয়েছে – অন্যদিকে ভারত সত্যতাকেও প্রচার করতে পারেনি।
আমরা বিদেশে সত্য কথা বিক্রি করতে পারিনি আর পাকিস্তান অসত্য ও মিথ্যা বিক্রি খুব সফলভাবে সেরেছে।
শ্রী এ ডি খ্রি মনি: সত্য বিক্রি করা কঠিন।
শ্রী লোকনাথ মিশ্র: সত্য বিক্রি করা কঠিন নয়। (বাধা) এটা জনাব মনির জন্য কঠিন হতে পারে। কিন্তু এটা একটি সরকারের জন্য কঠিন নয়।
যা আমি বলতে চাই তা হল, সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের সব ভালো সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, আমরা যুক্তরাজ্য সরকারকে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার কথায় ইমপ্রেস করতে পারিনি। পাশাপাশি পাকিস্তানকে দেয়া যেকোন সাহায্য এখন সঙ্ঘটিত কুকর্ম আরও বাড়িয়ে তুলবে। আমরা তাদের কাছে সত্য তুলে ধরতে পারিনি। এটা হতে পারে সেখানে আমাদের হাই কমিশনারের ব্যর্থতা। এটা হতে পারে সমগ্র বিশ্বের মিডিয়াতে সরকারের প্রচারিত পাবলিসিটির ফসল। কেননা সব দেশ আমাদের অবিশ্বাস করতে শুরু করেছে যদিও আমরা সত্যের উপর আছি। অতএব স্বতন্ত্র পার্টি যাই বলছে তাই সত্য হচ্ছে। মনে হচ্ছে বিশ্বে আমাদের কোন বন্ধু নেই – আর যারা ছিল তারাও একে একে সরে যাচ্ছে।
শ্রী এ ডি মনি- স্বতন্ত্র দল ব্যাতিত।
শ্রী লোকনাথ মিশ্র: শুধু মিস্টার মনি না, স্বতন্ত্র পার্টি সরকারের বন্ধু, যারা হাউজের ফ্লোরে ভালো কথা বলে।
ডাঃ জেড এ আহমদ (উত্তরপ্রদেশ): স্বতন্ত্র পার্টি সব বন্ধু হারিয়েছে।
শ্রী লোকনাথ মিশ্র: স্বতন্ত্র পার্টির হয়ত সব বন্ধু হারিয়েছে কিন্তু স্বতন্ত্র পার্টি সবার সাথে বন্ধুর মত কথা বলে। আমরা ভণ্ড না।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: স্বতন্ত্র পার্টি টাকা এবং বন্ধু সবই হারিয়েছে।
শ্রী লোকনাথ মিশ্র: পরিশেষে আপনারা অনেক হারিয়েছেন এবং এখনও হারাচ্ছেন। জনাব ভূপেশ গুপ্ত খুব ইদানীং উপলব্ধি করেছেন যে তিনি মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ও তার দলকে হারাতে চলছেন। তিনি মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর দলের সঙ্গে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ হতে চাইছেন। এখন তিনি বুঝতে পারছেন যে তিনি তার বন্ধু এবং টাকা সবই হারাচ্ছেন।
এখন আমাকে বলছেন যে সরকার সব বন্ধু হারিয়েছে। তাই আমি কাউকে বাংলাদেশের সত্য বিষয়গুলো বোঝাতে পারছিনা। মিডিয়াতে প্রচারের জন্য সরকার কি ব্যাবস্থা নিয়েছে?
শ্রী শীল ভদ্র ইয়াজি (বিহার): দয়া করে সংবাদপত্রে বিশ্বের মতামত দেখুন। তাহলে জানতে পারবেন যে আমাদেরও বন্ধু আছে।
শ্রী লোকনাথ মিশ্র: আপনি কি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি বা আমাদের পররাষ্ট্র সম্পর্কে কিছু বুঝেন? দয়া করে যা বুঝেন না বা বোঝার ক্ষমতা নেই সেখানে ঢোকার চেষ্টা করবেন না।
স্যার, আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে বিশেষভাবে জানতে চাই প্রচার মাধ্যমে প্রচারের জন্য তিনি কোন বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা? এখন তিনি বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে যাচ্ছেন। আমি এতে খুশি এবং আশা করি সেই সব দেশের সরকার ও জনগণকে সত্যটা জানিয়ে তাদের ইমপ্রেস করতে পারবেন। কিন্তু তার প্ররোচনা দীর্ঘস্থায়ী প্ররোচনা নাও হতে পারে। আমাদের দূতাবাসগুলোকে সক্রিয় হতে হবে এবং নির্দিস্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। তার দেশ সফরে বিষয়গুলো তরান্বিত হবে। নিশ্চই তিনি যাবেন এবং ওইসব সরকারকে ইমপ্রেস করতে চেষ্টা করবেন। এবং আমাদের প্রচারের জন্য মিডিয়াতে কি ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে যাতে করে যেখানে আমাদের কিছু স্বার্থ আছে তারা আগে থেকে একটি ধারণা পেয়ে রাখতে পারে।
শ্রী আকবর আলি খান (অন্ধ্র প্রদেশ): আপনার প্রস্তাব কী?
শ্রী লোকনাথ মিশ্র: ওইসব দেশে সরকারী প্রচার মাধ্যমগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। এটা আমরা এখনো করতে পারিনি। তাতে সমস্যা কি? দয়া করে মাননীয় মন্ত্রী কি বিষয়টা দেখবেন? বারবার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরে তিনি কি একটু খুঁজে দেখবেন যে ফাঁকটা কোথায়? যদি আমাদের প্রচার মিডিয়া দুর্বল হয় তবে তাদের একটিভ করার জন্য কি করা যেতে পারে? তিনি কি এই ব্যাপার দয়া করে কিছু করবেন?
সরদার শরণ সিং: স্যার, মাননীয় সদস্য ব্যার্থতা সম্পর্কে যা বলেছেন তা সঠিক নয়। ব্যার্থতা বা পিছিয়ে পড়া সব সময় পাবলিসিটির দুর্বলতার জন্য হয় না। যেমন স্বতন্ত্র পার্টি প্রচার অনেক ভালো করলেও নির্বাচনে হেরেছে। অতএব পাবলিসিটি সব সময় ভালো ফল বয়ে আনেনা। সন্মানিত সদস্য বলেছেন আমরা সঠিকভাবে সত্যকে বিক্রি করতে পারছিনা। সমস্যা হল বিক্রি করতে হলে একজন ক্রেতা আর বিক্রেতা লাগে। আর যখন ক্রেতা হয় আমার একজন বন্ধু তখন বিক্রি করা একটু সমস্যা হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ আমি একটি ধারণা দেবার চেষ্টা করছি যাতে আমরা এবিষয়ে একটি জাতীয় নীতি করতে পারি কিন্তু আমি এই ধারণা আমার বন্ধুদের কাছে বিক্রি করতে পারছিনা। এতে আমার কোন ভুল নেই। দেশ এই পলিসি সমর্থন দেয়। অতএব বিক্রি শুধুমাত্র বিক্রেতার উপর নির্ভর করে না, বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাস্টমারের উপর নির্ভর করে। তাছাড়া অন্যান্য সরকারের তাদের নিজস্ব পলিসি আছে। আমি বলতে চাই যে আমরা প্রচারে ব্যার্থ হইনি। আমার মনে হয় সন্মানিত সদস্য জানেন যে আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমগুলো নিরপেক্ষভাবে বাংলাদেশের আসল অবস্থা, মিলিটারি কর্তৃক সৃষ্ট গণহত্যা এবং রাজনৈতিক অবস্থা ফুটিয়ে তুলেছে। এটা খুব সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মূল প্রশংসা আমাদের প্রেসের প্রতি। তাছাড়া পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপীয় প্রেস – বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানির প্রেসও প্রশংসার দাবিদার। এসব দেশে সাধারণত প্রেসের প্রচার যথেষ্ট হয়েছে। এবং তারা সঠিকভাবে পরিস্থিতি ফুটিয়ে তুলেছে। বলার প্রয়োজন নেই যে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া খুব শ্লথ হয়েছে। অবশ্য কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া। এক্ষেত্রে আমি সন্মানের সাথে প্রেসিডেন্ট পদ্গরনির কথা উল্লেখ করতে চাই যিনি স্পষ্টভাবে ও সঠিকভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে জানিয়েছেন পলিসি পরিবর্তন করতে – যেহেতু সাধারণ নিরীহ মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে। বিশ্বনেতারা এই ব্যাপারে সতর্ক যে যদি তারা পাকিস্তানকে ওপেন স্টেটমেন্ট দেন হয়ত সেটা পাকিস্তান নাও রাখতে পারে। তারা মনে করেন পাকিস্তানের উপর তাদের প্রভাব কমে যাচ্ছে। আমরা তাদের বলেছি এটা সঠিক নয়। পাকিস্তান সরকারকে যদি খোলাখুলি নিন্দা করা হয় তাহলে চুপি চুপি সমালোচনা করার চাইতে বেশী ইফেক্ট হবে। অতএব এই বিষয়টা আরও ভালো ভাবে অনুধাবন করতে হবে। তাই আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং আমরা ব্যার্থ হয়ে গেছি এসব এখনি বলা যাবেনা। এটা আমাদের দির্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতা যেখানে আমাদের ক্রমাগত আমাদের পলিসি প্রচার করতে হবে যা আমরা নির্ধারন করে রেখেছি।
শ্রী জগদীশ প্রসাদ মাথুর (রাজস্থান) ঃ মাননীয় মন্ত্রী এখন বললেন যে আমাদের প্রতি প্রথিবির অধিকাংশ দেশের প্রইক্রিয়া অনুকূল। তিনি কেবল রাশিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের নিন্দা করেছেন। কিন্তু রাশিয়ার পরবর্তি স্টেটমেন্ট থেকে মনে হচ্ছে সেও পাকিস্তানের প্রতি নরম সুরে কথা বলছে। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে পৃথিবীর কোন দেশই – কি প্রাচ্যের – কি পাশ্চাত্যের – এ যাবত আমাদের নীতি ও প্রস্তাবের সমর্থনে কোন বক্তব্য রাখেনি। ইংল্যান্ড সম্পর্কে আপনি যতোটুকু বলেছেন শুধু পার্লামেন্টের ভেতরে যে আলোচনা হয়েছে তাঁরই রেফারেন্স দিয়ে নিজের বক্তব্য জোরালো করেছেন। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাদের যে চিঠি লিখেছিলেন তার জবাবে কি তারা লিখিতভাবে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন? যদি করে থাকেন তাহলে তা ‘হ্যা’ বাচক সূচক না ‘না’ বাচক সূচক? মাননীয় মন্ত্রী কি অনুগ্রহ পুর্বক সে পত্র সংসদে আনবেন? শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণের সন্মানের প্রশ্নে উল্যেখ্য যে শুধু হেলসিংকিতেই নয় আরব দেশগুলিতেও তাকে অপমান করা হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের একান্ত বন্ধুরাস্ট্র মিশরের প্রেসিডেন্ট দুদিন অপেক্ষা করার পরেও নীতিগত কারণে তার সাথে সাক্ষাতকার দিতে সম্মত হননি। এ থেকে সুস্পষ্ট হয় যে শুধু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য নয় বরং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিও আমাদের প্রতি যে মনোভাব পোষণ করেছে সেজন্য দায়ী আমাদের নীতি। মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আবেদন, তিনি বলুন, ২৫ মার্চ, যখন থেকে বাংলাদেশের যুদ্ধ শুরু হয়েছে পৃথিবীর কোন দেশ – রাশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা বা চিন কেউ কি পাকিস্তানকে আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে সহযোগিতা করে?
সর্দার শরণ সিং: আমি মাননীয় সদস্যের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত নই। রাশিয়ার কিছু নেতাদের বক্তব্য রাষ্ট্রপতি পদ্গরনির দেয়া বক্তব্য থেকে ভিন্ন হতে পারে। আমি এই দৃষ্টিভঙ্গির সত্যতা সম্পর্কে সন্দিহান। দ্বিতীয়ত আমি বলতে চাই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর লেখা চিঠি সম্পর্কে। এই চিঠিগুলো প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সরকারপ্রধানকে লিখেছিলেন যার মধ্যে বেশ কিছুর উত্তর আমরা পেয়েছি। বাকি উত্তরগুলো অপেক্ষমাণ আছে। কিন্তু এসব চিঠি জনসম্মুখে প্রকাশ করা নিয়মবহির্ভুত – যা আমরা সবাই জানি। এবং এসংক্রান্ত কোন কপি পেশ করা হবেনা।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: এটা সম্মেলন হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি প্রকাশ করেছিলেন। এতে আমরা সন্তুষ্ট না।
সরদার শরণ সিং: এই বিশেষ ক্ষেত্রে চিঠি প্রকাশ করার কোন চিন্তা আমাদের নেই। তৃতীয় প্রশ্ন সম্পর্কে বলতে চাই – এটা ঠিক যে শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণ সংযুক্ত আরব রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট সাদাতের সঙ্গে এপয়েন্টমেন্ট পাননি। আমি এর জন্য দুঃখিত কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে ওই সময়ে তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংগ্রামের প্রেক্ষাপট কি ছিল – তারা তখন তাদের সরকার গঠনের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিল যেখানে তারা তাদের অনেক উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একশন নিচ্ছিলেন —
সরদার শরণ সিং: সে সময়ে কঠিন ছিল আসলে। আপনি যদি ফাইল দেখেন তাহলে একমত হবেন যে, সময়জ্ঞান সঠিক ছিলোনা – কারণ কায়রোতে তখন এইসব পরিবর্তনের কাজ চলছিল যা মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকার জন্য তারা সময় দিতে পারেনি।
শ্রী আকবর আলি খান: তারা তাদের সহানুভূতি এবং অন্তর্বেদনা প্রকাশ করতে পারতেন।
সরদার শরণ সিং: আমি আপনার সাথে একমত এবং আপনার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই তাদের সেরকম কিছু করা উচিৎ ছিল। শেষ প্রশ্ন ছিল পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু করার পড় থেকে কোনো দেশ তাদের কোনো অস্ত্র দিয়েছিল কিনা? আমাদের উৎস থেকে পাওয়া একমাত্র তথ্য হল চীন থেকে তারা অস্ত্র পেয়েছিল। আমরা এই ব্যাপারে আসলে সচেতন না যে তারা কোন কোন দেশের কাছ থেকে অস্ত্র পেয়েছে। আমি অর্থনৈতিক এইড সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না কারণ আমি সত্যিই কোন তথ্য দিতে পারবোনা।
শ্রী আকবর আলি খান: তুরস্ক ও ইরান সম্পর্কে?
সরদার শরণ সিং: আমি বলতে পারব না যে তারা ইরান ও তুরস্ক থেকে মিলিটারি একশন শুরুর পরে কোনো অস্ত্র সাহায্য পেয়েছে কিনা।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: এখানে কেউ বলেনি যে বাংলাদেশ সংগ্রামের প্রতি আমাদের মনোভাব যুক্তরাজ্য সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। তবে স্যার, যুক্তরাজ্য যে মনোভাব দেখাচ্ছে তা ভারত এবং যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে। এবং সেই প্রেক্ষাপটে আমরা তাকে প্রশ্ন করছি। ব্রিটিশ সরকার যা করেছে তা নতুন কিছু নয়। ভারত-চীন সংঘাতের সময়ে আপনাদের মনে আছে জনাব ডানকান স্যান্ডি হঠাৎ দিল্লী ও করাচীতে আসেন ভারতকে ফাঁদে ফেলতে। তিনি কিছু কুখ্যাত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করাতে এসেছিলেন যেখানে আমরা কাশ্মীর সহ আমাদের কিছু জাতীয় অবস্থানের বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করেছিলাম। তারা ভারতের বিপক্ষে কাজ করেছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তারা আবারো আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা পশ্চিমা দেশগুলোকে আমাদের বিরুদ্ধে নেবার চেষ্টা করেছিল – যা আমাদের সবার জানা। বস্তুত আমরা ভারতের তথাকথিত কমনওয়েলথ বন্ধু দ্বারা আগ্রাসনের স্বীকার হয়েছিলাম। এখন আবার আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ব্রিটিশ সরকার প্রকাশ্যে ইয়াহিয়া খান ব্যাক আপ দিচ্ছেন এবং একটি ভারতবিরোধী প্রচারণার আভাস দিচ্ছেন। ব্রিটিশ কাগজপত্র কি লিখেছে সেটা কোন বিষয় না। এমনকি লেবার পার্টির অনেক মানুষ ইয়াহিয়া খান কর্তৃক সঙ্ঘটিত জবাই ও গণহত্যার বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হয়েছে। শুধুমাত্র ব্রিটিশ সরকার কি অবস্থান নিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ জনগণের মতের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সজাগ। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমাদের কূটনীতি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা হয়ত ভাল বিক্রেতা কিন্তু তারা সবচেয়ে আশাহীন, সবচেয়ে পঙ্কিল ক্রেতা যাদের সাথে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। এই সুপারিশই আমি করছি। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি খুব শক্তিশালী কিছু বলেছেন কিন্তু ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন দলের একজন মন্ত্রী বা কোন ব্যক্তি ইয়াহিয়া খান বা তার অপরাধের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন নাই। এর বিপরীতে, তারা ইয়াহিয়া খানের কাছে আত্মসমর্পণ করে রাজনৈতিক সমাধান করার কথা বলছেন। সেটাই তাদের ধারণা। ইয়াহিয়া খানের অনুসারীরা ইংল্যান্ডের পূর্ব পাকিস্তানীদের সমর্থকদের দমনের চেষ্টা করছেন। সেটাও ঘটছে। তারা টাকা দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যখন অন্যরা বন্ধ করে দিয়েছে তখন ব্রিটেন ইয়াহিয়া খানকে রিলিফের নামে অতিরিক্ত ফান্ড দিতে সিন্ধান্ত নিয়েছে। এই অর্থ পাকিস্তানীদের মনোবল যেমন শক্ত করবে তেমনি পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত সেনাদের পেছনে ব্যয় করা হবে। এগুলো গুরুতর বিষয় এবং সরকার তাদের প্রতি কোন নীতি গ্রহণ করছেনা। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? এটাই আমরা জিজ্ঞেস করছিলাম। এখনও কেন ভারত কমনওয়েলথের মধ্যে থাকবে? প্রতিবার আমাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, লাথি মারা হয়েছে, আক্রান্ত করেছে এবং বিশ্বাসঘাতকতা করেছে কিন্তু এখনো আমরা কমনওয়েলথের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছি। আমরা মনোযোগ আকর্ষনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আমি জানতে চাই কেন সরকার ইউ.কে. এর বিরুদ্ধে একটি নির্দিস্ত পরিকল্পনা নিচ্ছেনা? বিশেষ করে দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপারে। আমি মনে করি, সির, তারা যা করছেন তাতে আমাদের উচিৎ ব্রিটিশ নাগরিকদের আমাদের দেশে ভিসা ও অন্যান্য যাবতীয় সুবিধা দেয়া বন্ধ করে দেয়া উচিৎ – শুধুমাত্র যারা ভারতীয়দের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ তারা ছাড়া। ব্রিটেন এখন আমাদের কাছ থেকে যেসকল ছাড় পায় সেগুলোও বন্ধ করে দেয়া উচিৎ।
আমাদের উচিৎ তাদের মুদ্রা আমাদের এখানে রেমিট করা বন্ধ করে দেয়া এবং অন্যান্য মুনাফা থামিয়ে দেয়া – যতক্ষণ না আমরা উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধান করতে পারি – যা আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তান। এটাও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের একটি চাল। আমাদের সত্যিই এখানে বসবাসরত সকল ইম্পেরিয়ালিস্ট – বিশেষ করে ব্রিটিশদের দেশ ছাড়ার কথা বলা উচিৎ। কারণ আমরা জানি তারা তারিক আলির মত লোকদেরকেও এখানে পাঠাচ্ছে যারা আমাদের ক্ষতি করতে চেয়েছিল। এসব পদক্ষেপ আমরা এখনি নিতে পারি। তাছাড়া এখানে ব্রিটিশ ইনভেস্টরদের সম্পদ জব্দ করে নিয়ে সেগুলো দিয়ে উদ্বাস্তুদের সাহায্যে কাজে লাগানো উচিৎ। প্রতি বছর তেল ও কয়লাখনি থেকে কোটি কোটি রুপি তারা নিয়ে যাচ্ছে। কেন আমরা সেগুলো দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের রিলিফের জন্য কাজে লাগাব না? এরকম ব্যাবস্থা আমরা নিতেই পারি। আমাদের অবশ্যই সচিবালয় থেকে তাদের প্রত্যাহার করা উচিত, কমনওয়েলথ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করা উচিত, যুক্তরাজ্য সঙ্গে আমাদের সমগ্র সম্পর্ক নতুনভাবে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কমনওয়েলথ নিয়মিতভাবে আমাদের সাথে যে আচরণ করছে তা ক্রমাগত জাতীয় স্বার্থের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠছে।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: দয়া করে শেষ করুন।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: অতএব, আমি বলতে চাই, সরকার শুধুমাত্র দৃঢ়ভাবে আপত্তি জানাবে তাই নয় – আমাদের জাতীয় ক্ষোভ, অনুভূতি প্রকাশ করতে হবে। ইয়াহিয়া খানের সাথে বৃটিশ সরকারের আনুকূল্যের কারণে আমাদের সাথে তাদের কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থণৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এটাই আপনাদের কাছে দাবি করছি। এটাই হবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোতকৃষ্ট পথ। এগুলো আমার কিছু প্রস্তাবনা। সরকারের উচিৎ তার অবস্থান স্পষ্ট করা।
সরদার শরণ সিং: আমি মনে করি নতুন কোন শত্রু না বাড়িয়ে এই মুহুর্তে আমাদের উচিৎ বাংলাদেশ সম্পর্কিত বর্তমান পরিস্থিতির সমাধানে আমাদের শক্তি ব্যয় করা। তিনি যা প্রস্তাব দিয়েছেন সেগুলো অবশ্যই ভালো কিন্তু এখন আমাদের বাংলাদেশ সংক্রান্ত সমস্যা ছাড়া নতুন কোন দেশের সাথে বিরোধিতা করা ঠিক হবেনা। সেটা ভিন্ন ইস্যু। সেটার সাথে এটাকে মেলানো ঠিক হবেনা।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: তারা এই হত্যার প্ররোচনা দিচ্ছে। ব্রিটিশ সরকার হিথ সরকার গঠন করার পড় থেকেই এই পলিসি শুরু করেছে। আপনি জানেন তারা ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। এশিয়া বিরোধী মনোভাব পোষণ করে। এবং এখন তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রতিহিংসামূলক নীতি ব্যবহার করছেন। তারা চায় বাংলাদেশের মানুষ শোষিত হোক যা চলমান আক্রমণের জন্য হচ্ছে- অর্থাৎ এতে করে এশিয়ান জনগণ – বা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান প্রকাশ পায়।
সরদার শরণ সিং: যোগ করার আর কিছুই নেই।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: জনাব গোরে।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: কোন উত্তর নাই? এটাই এই পার্লামেন্টের সমস্যা। যখন ব্রিটিশদের আলোচনা ওঠে আমাদের মন্ত্রীরা নীরব থাকেন। এটাই সমস্যা। গত দশ বছর ধরে আমি এটাই দেখছি। যখন ব্রিটেনের কথা ওঠে তারা পুরো চুপ থাকেন। জিনিসটাকে ইভেড করেন তারা।
সরদার শরণ সিং: আমি বলব সন্মানিত সদস্যের এই পর্যবেক্ষণ খুবই নির্দয়। গুরুত্তপূর্ন বিষয়ে আমাদের সন্দেহাতীত এবং পরিষ্কার অবস্থান রয়েছে। রোডেশিয়া ইস্যু, দক্ষিণ আফ্রিকাতে অস্ত্র সরবরাহ এবং সর্বপরি কলনিয়ালিজমে আমরা ব্রিটিশদের বিরোধিতা করেছি। আমি মনে করি এখন আমাদের মূল সমস্যার দিকে আলোকপাত করা উচিৎ। আমি আবারো বলছি – নতুন করে কোন শত্রু বাড়াতে চাইনা।
ডঃ. ভাই মানাবির: কিন্তু কি দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: আপনি বলেছেন একটি দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলা হচ্ছে। দ্বিতীয় মানে কী? আমরা কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বুঝিয়েছি?
শ্রী এন জি গোরে (মহারাষ্ট্র): যতক্ষণ এই ফ্রন্ট না থামে ততক্ষণ আমি প্রশ্ন করব না।
স্যার, এই প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ যেহেতু আমরা জানতে পারলাম যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো থেকে শুরু করে লন্ডন, প্যারিস ও ওয়াশিংটন সহ বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে যাচ্ছেন। আমি তার কাছে জানতে চাই এই মিশনে তিনি মনে মনে কি আশা পুষে রেখেছেন? কারণ ২৫ মার্চ থেকে যখন ইয়াহিয়া খান সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করেছে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নিঃশেষ করার জন্য তখন দুইটি ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত – কোন দেশ বাংলাদেশের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেনি। তারা এলোমেলোভাবে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি ত্রাণ দেবার ব্যাপারেও কোন দেশ এগিয়ে আসেনি। এটা এক নাম্বার।
অপরটি হল – যখন উদ্বাস্তুরা প্রবেশ শুরু করল – যার সংখ্যা এখন চার মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে – কোন দেশ বড় কোন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসলনা। স্যার, আমরা আমাদের প্রতিনিধিদের বাইরে পাঠিয়েছি। একজন মন্ত্রী ইতিমধ্যে বিদেশে আছেন এবং এখন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে বাইরে যাচ্ছেন। আমি জানি না এই ভিজিটের উদ্দেশ্য কি। এটা কি শরণার্থীদের জন্য আরও সাহায্য চাইতে? নাকি ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে যে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে সেটা বন্ধ করতে? আমি জানতে চাই কি উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাজেট অধিবেশনের মত গুরুত্তপূর্ণ সেশন রেখে সফরে যাচ্ছেন। তাছাড়া আমরা জানি, আমরা মানুষকে বোঝাতে বারবার ব্যার্থ হচ্ছি। কেউ কেউ বলেছেন যে আমাদের প্রচার মাধ্যম সঠিকভাবে কাজ করছে না। আমি এমন মনে করি না। পাবলিসিটি তার কাজ করেছে। পররাষ্ট্র সংবাদদাতারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আছে। তারা বিস্তারিত রিপোর্ট করেছেন। গোটা ব্যাপারটা হল চীন বা রাশিয়া বা ইংল্যান্ড অথবা আমেরিকা বা ফ্রান্স – তারা তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য নিযুক্ত আছে – কারণ এটা তাদের পলিসি যে তারা তাদের নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে। এটা সবকিছুর উর্ধে। বাংলাদেশে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে জেনেও তারা কেউ এতে জড়িত হতে প্রস্তুত নন। বাংলাদেশ কৌরব সভায় দ্রৌপদির মত অবস্থায় আছে। সবাই জানে যে যা ঘটছে তা খারাপ – কিন্তু কেউ এটা বন্ধ করার জন্য কিছু করছেনা। আমি মাননীয় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই – এটা কি এখন স্পষ্ট নয় যে আপনার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার অজুহাতে আপনার লাইনে কেউ আসছে না? তারা কোন সাহায্যে এগিয়ে আসতে যাচ্ছে না এবং আপনি যদি মনে করেন যে তারা উদ্বাস্তুদের জন্য বড় রকমের কোন সাহায্য দেবে – এটাও তারা করতে যাচ্ছেনা। এবং উদ্বাস্তুদের সমস্যা আমাদের জন্য একটি খুব দীর্ঘ মেয়াদি মাথা ব্যাথা হতে যাচ্ছে। এবং শুধুমাত্র ভারতীয়দের এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে।
স্যার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর চিঠির ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এই চিঠি প্রকাশ করা যাবেনা। আমি তার সাথে একমত। কিন্তু এটা সত্য যে, যখন চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়ে ছিল তখন চীনের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার সব চিঠি একটি শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। আমি মনে করি সেরকম সময় এসেছে। .. (বাধা)। না, না, বিরোধের অনেক আগে এটা হয়েছিল – ১৯৬২ সালে। চিঠি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। একটির পর একটি – মোট ৩ টা শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছিল।
স্যার, আমি সুপারিশ করব: বাংলাদেশকে নিরাপদে রাখার জন্য ভারত কি কি করছে এবং পাশাপাশি বিশ্বের অন্য দেশগুলো কি করছে সেগুলো মিলিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন যাতে সমস্ত বিশ্ব তা জানতে পারে। জনাব জয়া প্রকাশ নারায়নের সাথে সঙ্ঘটিত সেই ঘটনা ও তাদের প্রতিক্রিয়াও উল্লেখ থাকতে হবে। এই দুই/ তিনটা বিষয়ের উপর আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
সদর শরণ সিং: স্যার এটা সত্য যে কিছু রাজধানী সফরের প্রস্তাব আছে। আমি জানি সংসদ থেকে দুরে যাওয়া কঠিন কাজ।
কিন্তু সামগ্রিক স্বার্থে আমাকে এটা করতে হবে। কিন্তু এখনো কোন চুক্তি হয় নাই। তাই আমি এই বিষয়ে বিশদ কিছু বলতে পারব না। চেষ্টা করব পাকিস্তানের ঘটনাবলি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং সব সমস্যা তুলে ধরতে। সুতরাং এটি এখন বলা যাবেনা যে আমি একটি নির্দিষ্ট জিনিস অর্জন করে আসব। এতে এইটুকু হবে যে বিশ্ব নেতারা তাদের গুরুত্ব বুঝতে পারবেন – ঘটনার সত্য অবস্থা জানবেন – অবস্থার উন্নতি কীভাবে করা যায় এই চেষ্টা করবেন – যাতে করে মিলিটারি একশন বন্ধ করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায়।
শ্রী এন জি গোরে: আপনি একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য অনুরোধ করবেন।
সরদার শরণ সিং: আমাকে আমি যা বলতে যাচ্ছি তার সব জিজ্ঞাসা করবেন না। সব এখনো ঠিক হয় নাই।
তারপর স্যার, তিনি খুব প্রাসঙ্গিক একটি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন যে অন্যান্য দেশ তাদের স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করবে যা তাদের কাছে সবচেয়ে ভালো মনে হবে। এটাই আন্তর্জাতিক জীবনের কঠিন বাস্তবতা। তবে সেখানে যথেষ্ট সুযোগ আছে। হয়ত শুধু নিজেদের স্বার্থ নির্নয় বাদেও তারা এমন কোন দরকারি জিনিস মিস করলেন যা আমাদের বা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। এবং এটা গুরুত্তপূর্ন যে সেরকম বিষয় তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সব শেষে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি আমার অবস্থান পরিবর্তন না করতে পারার জন্য যা আমি আগেই বলেছি। সেটা হল আমরা প্রধানমন্ত্রী যে চিঠি লিখেছেন বা যে উত্তর পেয়েছেন সেসকল পত্র প্রকাশ করছিনা।
ডঃ. কে ম্যাথিউ কুরিয়ারন (কেরল): স্যার, মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন, তার এই সফরের একটি উদ্দেশ্য হল বিদেশি সরকারগুলোর বাংলাদেশের সমস্যার প্রতি ইমপ্রেস করা। কিন্তু তিনি একটি বিষয় স্পষ্টভাবে বলেননি যে তিনি ভারত যে বাংলাদেশেকে স্বীকৃতি দিতে চায় সেই ব্যাপারে বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে ইমপ্রেস করবেন কিনা। তা না হলে তারা কীভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতির ব্যাপারটা শুরু করবে? ভারত যে বাংলাদেশের বিপ্লবীদের সব উপাদান, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দেবে সেই ব্যাপারে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ইমপ্রেস করতে চেষ্টা করবে কিনা? আমি মাননীয় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই ভারত কীভাবে যুক্তরাজ্যকে পাকিস্তানকে সাহায্য দিতে বন্ধ করতে অনুরোধ করবে?
ভারত সরকার ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক সাহায্য, বেসরকারী একচেটিয়া পুঁজির জন্য যুক্তরাজ্যের কাছে ঋণগ্রস্ত। আমি জানতে চাই ভারত কি ইংল্যান্ডকে পাকিস্তানকে সাহায্য না করার অনুরোধ করবে কিনা যেখানে সে নিজেই বন্দরনায়েক সরকারকে অস্ত্র সাপ্লাই দিচ্ছে যেখানকার জনগণ আমি এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে সিংহল বিদ্রোহের ব্যাপারে আমি কোন পক্ষ নিচ্ছি না। সেখানকার অবস্থা যাই হোক না কেন ভারতের জন্য বাইরের দেশে অস্ত্র সাপ্লাই দেয়া লজ্জার বিষয়। আমি জানতে চাই নীতিগত কি জোর তার আছে ইংল্যান্ডকে পাকিস্তানকে সহায়তা বন্ধ করার অনুরোধ করার ব্যাপারে যেখানে ভারত নিজেই তেমন কাজ করছে।
সরদার শরণ সিং: আমি মাননীয় সদস্য যে প্রশ্ন করেছেন তার নৈতিক মানের উপর আপিল করতে চাই। এটা খুবই দু: খজনক যে মাননীয় সদস্য এভাবে চিন্তা করছেন এবং আমি অন্যদের অনুরোধ করব এভাবে ভাবতে —
ডঃ. কে ম্যাথিউ কুরিয়ান: আপনার জন্য দু: খজনক।
সরদার শরণ সিং …. এধরনের প্রকাশভঙ্গী খুব বিপজ্জনক এবং তা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। আমি তাকে এটা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করব।
ডঃ. Kকে ম্যাথিউ কুরিয়ান: জাতীয় স্বার্থ? কার জাতীয় স্বার্থ? জনগণের জাতীয় স্বার্থ?
সরদার শরণ সিং: আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করতে বলব যে বাংলাদেশ ও সিংহল ক্ষেত্রে আমাদের মনোভাব একই রকম কিনা? বাংলাদেশে আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করছি কারণ তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব করছে। আমাদের অবস্থান একেবারে অভিন্ন। এভাবে চিন্তা করার সমস্যা হল .. (বাধা) উত্তেজিত হবেন না।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত: জনাব শরণ সিং, এই একটি খুব বুদ্ধিমানের মত তর্ক নয়।
সরদার শরণ সিং: তাহলে আসুন তর্ক বন্ধ করি। আমি বলতে চাই যে এধরনের প্রশ্ন করার নৈতিক অধিকার সম্মানিত সদস্যদের নেই। আমরা পুরোপুরি আমাদের অধিকারের মধ্যে আছি – নৈতিক ও সাংবিধানিক ভাবে। আমরা যে পথ ধরেছি সেটাই আমরা চালিয়ে যাব।
জনাব ডেপুটি চেয়ারম্যান, রাজ নারায়ণ বাবু, এখন আপনি প্রশ্ন করুন।
শ্রী রাজ নারায়ণ (উত্তর প্রদেশ) : আমি জানতে চাই, ভারত সরকার বিদেশী রাষ্ট্র নায়কদের কাছে যেসব চিঠি লিখেছেন সেগুলোতে আমরা অধিকভাবে ‘পলিটিকাল সল্যুশন’ বা ‘পলিটিকাল সেটেলমেন্ট’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে কিনা? সমাচার পত্রিকার সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে ‘রাজনৈতিক সমাধান’ করতে হবে। আমি জানতে চাই যে, এই রাজনৈতিক সমাধানের স্বরূপ কি? রাজনৈতিক সমাধানের অর্থ কি? এই রাজনৈতিক সমাধানে কি সন্নিবেশ করতে হবে? এর অর্থ কি এই যে আগ্রাসন অতি সত্বর বন্ধ করতে হবে? স্বাধীন বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী বিদেশী হামলা কি এখানেই শেষ? সমস্ত সৈন্য সেখান থেকে অপসারিত হবে আর স্বাধীন বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্বাধিনিতা নিয়ে চলবে? আমি যা বলছি ভারত সরকারের রাজনৈতিক সমাধানের অর্থ কি এটাই? আর আমি জানতে চাচ্ছি এই ‘পলিটিকাল সেটেলমেন্ট’ শব্দটি কখন থেকে এসেছে? স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশ্নে পলিটিকাল সেটেলমেন্ট শব্দটির ব্যাবহার প্রথমে ভারত সরকার করেছে, না রাশিয়া, অ্যামেরিকা বা ব্রিটেন এটি আবিষ্কার করেছে? পলিটিকাল সেটেলমেন্ট শব্দটি এরূপ অস্পষ্ট ও অনিশ্চিত যে এর একটি অর্থ বেরিয়ে আসতে পারে। একটি অর্থ আওয়ামীলীগের ৬ দফা পরিকল্পনায় পৌঁছাতে পারে। এও হতে পারে যে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক রূপে উভয়ের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে এজন্য আমি খোলা মনে প্রথমে জানতে চাই যে ভারতের সরকারী দফতরে রাজনৈতিক সমাধানের কি ব্যাখ্যা রয়েছে? সরকারের মনোভাব ও একজন ভারতীয় নাগরিকের মনোভাব কি অভিন্ন? স্বাধীন বাংলাদেশের ব্যাপারে আমাদের পরিষ্কার মনোভাব হচ্ছে – সেখানে সম্পূর্ণভাবে বিদেশী শক্তি, আজ যারা সেখানে অবস্থান করেছে, সমস্ত শক্তি সরিয়ে নেবে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রূপে আপন অস্তিত্বে টিকে থাকবে। দুজন সোশ্যালিস্ট আছেন। একজন ইন্দিরা গান্ধী, অপরজন ব্রিটিশ লেবার পার্টি। উভয় সোশ্যালিস্ট আজ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বতন্ত্র দাবী রাখার প্রয়াসী। আমি সর্দার শরণ সিং এর কাছে জানতে চাই আপনি কেন বিদেশে যান? কি বুঝাবার আছে তাদেরকে? ভারত সরকার অপেক্ষা কেউ কম জানেনা। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ আছে যে, আজ স্বাধীন বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা সম্পর্কে অবহিত নয়? স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে সকলে খবর রাখে। জাতীয় স্বার্থেই সকল দেশ নিজেদের কথা ভাববে। তাহলে আমাদের জাতীয় স্বার্থ কি? আমি বিদেশ মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে জানতে চাই, ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় কল্যানার্থে কী ভাবছেন? স্বাধীন বাংলাদেশ টিকে থাকা বা তার লুপ্ত হওয়া ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পক্ষে? আমি প্রথমে এটিই দেখতে চাই যে, ভারতের রাষ্ট্রীয় কল্যাণ ভারত সরকার কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন? এই সাথে আমি এও বলতে চাই, যারা কমনওয়েলথ কমনওয়েলথ বলে চিৎকার করছেন (আমি আগাগোঁড়াই যার বিরোধী ছিলাম) যতক্ষণ কমনওয়েলথের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের স্বাধীন বিদেশ নীতি হবে না। আমার চোখের সামনে এখন এই পরিস্থিতি। এ সময় ব্রিটিশ সরকার যা কিছু করেছে সর্দার শরণ সিং হুবহু এখানে ওইসব করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
সর্দার শরণ সিং: সম্পূর্ন ভুল কথা আপনি বলেছেন।
শ্রী রাজ নারায়ণ: আমি জানতে চাই, ভারত সরকার আজও একথা মানেন কিনা যে, হিন্দুস্তান বিভক্ত হল, এবং ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি হল, এতে ব্রিটেন, রাশিয়া, অ্যামেরিকা তিন দেশেরই চক্রান্ত ছিল? এটা ভিন্ন কথা যে হিন্দু মুসলিম বিদেশের আশংকা বেড়েছিল, এটা ভিন্ন কথা যে মোঃ জিন্নাহ নাছোড় হয়েছিলেন এবং নেহেরুজি বৃদ্ধ বয়সে ক্ষমতা লাভের জন্য প্রলুব্ধ হয়েছিলেন, এতদসত্তেও রুশ, অ্যামেরিকা ও ব্রিটেন এই ত্রিরাষ্ট্রই চাইত ভারত এক বৃহৎ রাষ্ট্ররূপে যেন না থাকতে পারে এবং দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। সুতরাং তারা কীভাবে মেনে নেবে যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক যা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টে সঙ্ঘটিত অস্বাভাবিক দেশ বিভাগের বিলুপ্ত ঘটাবে। এজন্য ব্রিটেন, রুশ, অ্যামেরিকা এরা সকলে চাইবে যে পাকিস্তানের সাহায্য লাভ অব্যাহত থাকে। ব্রিটেন স্পষ্টভাবে যা বলেছে আমাদের সর্দার শরণ সিং কি তা জানেন না – পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাবস্থাকে সে ধ্বংস হতে দেবেনা? পাকিস্তানের অর্থনণৈতিক কাঠামও অটুট রাখার জন্য ব্রিটেন পূর্ন প্রচেষ্টা চালাবে একথা পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে। অতএব, আমি জানতে চাই, এই সরকার, আজ স্বাধীন বাংলাদেশ সম্পর্কে কি পরিকল্পনা মনে মনে পোষণ করেছেন? সর্দার শরণ সিং কোন রূপরেখা নিয়ে বিদেশে যাবেন? বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধানদের কি কথা বলবেন? এবং স্বাধীন বাংলাদেশে কোন ধরণের সেটেলমেন্ট করানোর উদ্যোগ নেবেন?
উপ-সভাপতিঃ আপনার প্রশ্ন শেষ।
শ্রী রাজ নারায়নঃ আমি কামনা করি এবং বিদেশী মন্ত্রী মহোদয়কে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, তিনি যখন বিদেশে যাবেন তখন কি বলবেন যে বাংলাদেশ স্বাধীন।
উপ-সভাপতিঃ মন্তব্যপূর্ন কথা যা আছে বলুন কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বলুন।
শ্রী রাজনারায়নঃ আমি বলতে চাই যে ভারত সরকার কি বিদেশে একথা অকপটে বলবে না যে বাংলাদেশ এখন স্বাধীন, পশ্চিম পাকিস্তান তার উপর চড়াও রয়েছে, পশ্চিম পাকিস্তানের হামলা মুক্ত করতে হবে, তার সৈন্য ফিরিয়ে নিতে হবে এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে আমরা স্বীকৃতি দেব —
উপ-সভাপতিঃ ঠিক আছে বলুন। পুনরুক্তি হচ্ছে রাজ নারায়ণ বাবু।
শ্রী রাজ নারায়নঃ এখন ব্রিটেন, রুশ এবং অ্যামেরিকার মনোভাব জানার জন্য আমরা প্রস্তুত নই, আমরা জানি ভারতের এই অকপট মনোভাব রয়েছে যে স্বাধীন বাংলাদেশকে এযাবৎ স্বীকৃতি না দিয়ে ভারত সরকার ভুল করেছে। ২৫ মার্চ হতে আমরা অনাবশ্যক শব্দজাল বিছিয়ে চলছি।
উপ-সভাপতিঃ ঠিক আছে রাজ নারায়ণ বাবু, আপনি বসে যান।
শ্রী রাজ নারায়নঃ জুন ম্যাস এসে গেল। আমি চাই ভারত সরকার আন্তরিকভাবে এসব কথার জবাব দেবেন।
উপ-সভাপতিঃ জনাব শরণ সিং আপনি কি এই পয়েন্টে কিছু বলতে চান?
সর্দার শরণ সিং ঃ দোয়া করে অপেক্ষা করুন। কিছু সমালোচনা ছিল। কিন্তু মনে হয় এটা ভাল মত অবগত করা হয় নাই। মাদের অবস্থান হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সেখানে যে অপারেশন চালাচ্ছে এবং তারা যা করছে তা বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করবে না। তাই এর একটি সমাধান বের করতে হবে। কোন সামরিক কায়দায় নয়। এটাই বিশ্বের আরও অনেক অবস্থায় প্রকাশ করা হয়েছে। ক্রমাগত সামরিক শাসনের প্রভাব ভালো নয় এবং এর বেশী ধারনা করা সন্মানিত সদস্যের জন্য ভালো হবেনা। আমরা একটি নির্দিস্ট সমাধান চাই। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে এটি বাংলাদেশের জনগণ এবং তাদের সেনা শাসকদের মধ্যকার একটি বিষয় – যাদের সাথে তারা এখন লড়াই করছে।
শ্রী রাজ নারায়নঃ যে কেউ বলতে পারে।
জনাব. ডেপুটি চেয়ারম্যান: জনাব রাজনারায়ণ, তাকে শেষ করতে দিন দয়া করে।
সদর শরণ সিং: আমি সন্মানিত সদস্যের কাছে আবেদন করব বিষয়টি তাদের কাছে ছেড়ে দেবার – যাতে তারাই এর সমাধান বেড় করে- এবং তাদেরকে পথ বাতলে দেয়া আমাদের কাজ নয়। তারা ইতিমধ্যে বেশ ভাল ভাবে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, মওলানা ভাসানী ও বাংলাদেশের কয়েকজন নেতা এই ব্যাপারে তাদের মনোভাব স্পষ্ট করেছনে। এবং আমাদেরও তাদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা উচিৎ যে সেনা শাসন বন্ধ করা উচিৎ। এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে – যা কিনা সম্পূর্ন বেসামরিক এবং ন্যায়সঙ্গত। আমাদের অবস্থান সঠিক এবং কৈফিয়তমূলক নয়।
শ্রী দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্ত (পশ্চিম বঙ্গ): এটা আমাদের সমস্যা এবং এটা উপলব্ধি করা উচিত।
সরদার শরণ সিং: যতদূর আমরা উদ্বিগ্ন তাতে এটিকে আমাদের সেটেল করতে হবে। আমরা বলি নাই যে আমরা সেটেল করতে যাচ্ছিনা। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী, ২৪ মে তার বিবৃতিতে পরিষ্কার করেছেন –
“যদি জগতের কারো কোন চিন্তা-ভাবনা না থাকে তাহলে আমরা সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা করা দরকার আমরা তা নিশ্চিত করব …”
শ্রী দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্ত: কিভাবে?
সরদার শরণ সিং: “… এবং আমাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবন রক্ষ করব। “
শ্রী দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্ত: কিভাবে এবং কখন …
(বাধা)
সরদার শরণ সিং: আপনি কি জিজ্ঞেস করেছেন কিভাবে এবং কখন …?
শ্রী দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্ত: হ্যাঁ।
সরদার শরণ সিং: কিভাবে এবং কখন? এটা আমাদের জন্য রেখে দেয়া উচিত। আপনার সেটা করার কোনো ক্ষমতা নেই।
শ্রী দ্বিজেন্দ্রলাল সেনগুপ্ত: এটা আপনার একচেটিয়া বিষয়? …. (বাধা) সরকার একেবারে ব্যর্থ হয়েছে। আমি বলছি ব্যর্থ হয়েছে।
সরদার শরণ সিং: আমি দুঃখিত, আমি আপনার বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত না। এছাড়া সন্মানিত সদস্য শুধুমাত্র একটি প্রশ্ন করেছেন। তিনি কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছেন – সরকার বাংলাদেশ ইস্যুতে দেশে বা বিদেশে কি বলতে যাচ্ছেন? এই ব্যাপারে আমাদের মনোভাব …
শ্রী মহাবীর ত্যাগী (উত্তরপ্রদেশ): সরকার কি অন্যান্য সরকারকে জানাবে যে এই বিশাল পরিমাণ শরণার্থীদের জন্য আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকার জায়গা চাই?
সরদার শরণ সিং: আমি বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি না। শ্রী রাজনারায়ণ বাংলাদেশ ইস্যুতে আমাদের মনোভাব সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি মনে করি —-
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত আছে: বাংলাদেশের জনগণের দেশ স্বাধীন করা ছাড়া তাদের ভাগ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। আসুন এর থেকে বিচ্যুত না হই।
সরদার শরণ সিং: সরকার বাঙলা দেশ সম্পর্ক তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমার বন্ধু শ্রী রাজনারায়ণ সেদিন ওয়াক আউট করেছিলেন। আমি তাকে অনুরোধ করব সেদিনকার কার্যবিবরণী পড়ে দেখার।