You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৯৬। ভারতে পাকিস্তানের বিপ্লবী তারিক আলীর গোপন উপস্থিতি এবং কোলকাতায় তার বক্তৃতার ওপর আলোচনা রাজ্য সভার কার্যবিবরণী ৩১শে মে, ১৯৭১

কোলকাতায় পাকিস্তানের বিপ্লবী তারিক আলীর গোপন উপস্থিতি এবং বিবৃতির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে

জনাব এ.জি. কুলকার্নি (মহারাষ্ট্র): মহাশয়, ১০-৫-১৯৭১ তারিখের পত্রিকায় একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রকাশ সম্পর্কে ইতিপূর্বেই আমি উল্লেখ করেছিলাম। প্রায় একই রকমের সংবাদ সীমান্তবর্তী এলাকা হতেও আসছে এবং পূর্ববঙ্গে যে বাংলাদেশ সংগ্রাম করছে তা আসাম সীমান্তের দিকে অগ্রসর হতে পারে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই বিবৃতি দিয়েছেন। মূলত আমি চাইছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মনোযোগ জনাব তারিক আলীর বিবৃতির প্রতি আকর্ষিত হউক যিনি গোপনে ভারতের কোলকাতায় অবস্থান করছিলেন। তিনি পাকিস্তানের একজন বিপ্লবী নেতা। তিনি গোপনে ভারতে অবস্থান করেছিলেন এবং নক্সালপন্থীদের সাথে আলাপআলোচনা চালিয়েছিলেন। তিনি কী বলেছিলেন তা আমি এখানে উদ্বৃত করতে চাই। তিনি ঐক্যবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক বাংলা গঠনের পথ সুগম করতে পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় বঙ্গেই বিপ্লবী ফ্রন্ট সৃষ্টির প্রস্তাব রেখেছিলেন। এটা আমাদের সরকারের নীতিনির্ধারণের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। তাই আমি এখন জানতে চাই এই বিষয়ে সরকার কী করতে চাইছে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত (পশ্চিমবঙ্গ): জনাব উপ-সভাপতি, এইটা হচ্ছে সেই বিষয় যা নিয়ে সরকারকে আপনার নির্দেশনা দেওয়া উচিৎ। হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডে গত পরশু তারিক আলীর একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে এবং শুধুমাত্র কিছু লোকের দ্বারা এই কথিত সাক্ষাৎকারের আয়োজন নিয়ে কিছু বলা ছাড়া বাকি সমস্তই কথাই সেই নিবন্ধে বলা হয়েছে। তারিক আলী ভারতের নাগরিক নয়, তাহলে সে কিভাবে ভারতে এলো? কে তাকে ভিসা দিয়েছে? সে কিভাবে এখানে প্রবেশ করেছে? এর কিছুই জানা যাচ্ছে না যদিও সরকারের উচিৎ এই সব কিছু সম্পর্কে জানা। এটা হচ্ছে একটি প্রসঙ্গ। দ্বিতীয়ত, আমি জানতে চাই যে তারিক আলী কিভাবে ফিরে গিয়েছে তা বৃটিশ সরকার হতে আমাদের সরকার জেনে নিয়েছে -সে অবশ্যই সাগরপথে অথবা আকাশপথে ফিরে গিয়েছে। সেটাও বৃটিশ সরকার হতে জেনে নেওয়া যেতে পারে। স্পষ্টতই সে সংহতিনাশক আদর্শবাণী নিয়েই তিনি এখানে এসেছিল যা হতে পারে বাংলাদেশের সংগ্রামের জন্য ক্ষতিকারক, যা সবারই ক্ষতি করতে পারে। সে বলেন, বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ সত্ত্বা, সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং স্বাধীন হতে হবে। সে পশ্চিমবঙ্গকে ভারত হতে আলাদা করতে চায়। এটা অতি অবশ্যই সংহতিনাশক আদর্শনীতি এবং কেউ একজনকে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিৎ। বর্তমানে বাংলাদেশের সংগ্রামের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই ধরণের আদর্শনীতি খুবই ক্ষতিকারক। এই বিষয়ে সততা, স্বতঃপ্রবৃত্তের মধ্যে সরকারের অগ্রসর হওয়া উচিৎ। আমি খুবই আনন্দিত যে আমার বন্ধু বিষয়টি এখানে উত্থাপন করেছে। দাবী অনুযায়ী তারিক আলীকে এখানে পাঠানো হয়েছে যাকে ট্রয়োৎস্কাইৎস ইন্টারন্যাশনাল নামে ডাকা হয় যা যেকোন মহান সংগ্রামকে ধ্বংস করার জন্য বহুল পরিচিত। সে যা বলেছে “ আমি এখানে এই বিশেষ কাজ এবং উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছি”। সবাই জানে যে এই তরুণ প্রাণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুবই সক্ষম একজন ব্যক্তি এবং নিশ্চিতভাবেই সে বেশ অনিষ্ট সাধন করতে পারে। পাকিস্তান এবং অন্যান্য আরো বিষয় নিয়ে তার বই আমি পড়েছি। আমি ঠিক জানি না কেন্দ্রীয় সরকার কি পর্যবেক্ষণ করছে। ই বিষয়টিকে তাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিৎ, কেননা এর পিছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে। বর্তমান সময়ে ভারত হতে বের হয়ে এসে আলাদা সত্ত্বা হিসেবে দুই বাংলাকে সমাজতান্ত্রিক বাংলা হিসেবে একত্রিত করার এই আদর্শনীতি সামান্যই ক্ষতিকারক। আমার মনে হয় এই নিয়ে রাজনৈতিকভাবে এবং আদর্শগতভাবে লড়া উচিৎ। সরকারের উচিৎ এই বিষয়কে স্মরণে রাখা এবং এর গতিবিধি অনুসরণ করা কেননা তারিক আলী ইংল্যান্ড হয়ে এখানে এসেছে। সে অবশ্যই সুযোগ সিবিধা পেয়েছে। কেউ একজন অবশ্যই তাকে এখানে আসার সুযোগ করে দিয়েছে; অন্যথায় এই ব্যক্তিকে ইংল্যান্ডেই অনুসরণ করা হতো। ফ্রান্স বা জার্মানীতে তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তাহলে এটা কি করে সম্ভব যে বৃটিশ সরকার তাকে এই মুহূর্তে বিমানবন্দরে বা জাহাজে করে বের হয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে? তার অন্য সদিচ্ছা নিয়ে আমি কোন প্রশ্ন উত্থাপন করছি না। তার রাজনীতি সত্যিকার অর্থেই ভীষণ বাজে। এই প্রশ্নের মোকাবিলা সরকারের করা উচিৎ।

শ্রী কৃশান কান্ত (হরিয়ানা): মহাশয়, অতি দ্রুতই দেশের অনেক মানুষের মনে এই প্রশ্ন তৈরী হচ্ছে। আমি খুবই দুঃখের সাথে জানাচ্ছি এই পর্যন্ত তারিক আলী ভারতে এসেছিল কি আসেনি তা নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোন প্রকারের বিবৃতিই আসেনি। আমার মনে হয় মোহাম্মদ তোহা এবং তারিক আলীকে জড়িয়ে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয়কেই দূর্বল করার জন্য এটা চাইনিজদের একটা গভীর চক্রান্ত যাতে চাইনিজরা এই এলাকার জল ঘোলা করে তাদের মাছ শিকার করে নিতে পারে। আমি জানতে আগ্রহী যে তারিক আলী এখানে কি করে এলো এবং কিভাবেই বা সে তার নিবন্ধ লিখার জন্য ফিরে যেতে পারলো।

শ্রী ভূপেশ গুপ্তঃ ফিরে যেতে পারাটা অতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়,

শ্রী কৃশান কান্তঃ এখানে আসা, লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করা এবং ফিরে যাওয়ার পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে যাতে এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়।

শ্রী এ.জি. কুলকার্নিঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন এখানে। তাঁর একটি বিবৃতি দেওয়া উচিৎ। অবশ্যই তাঁকে কিছু বলতে হবে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্তঃ ট্রয়োৎস্কাইৎস তাকে এখানে পাঠিয়েছে। যখন স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন ট্রয়োৎস্কাইৎস এটাকে বিনষ্ট করেছিল। যখন ফ্রান্সের যুক্ত ফ্রন্ট ফ্যাসিজম ও হিটলারে বিরুদ্ধে লড়ছিল এই ট্রয়োৎস্কাইৎস সেই যুক্ত ফ্রন্টকে বিনষ্ট করেছিল। এই ট্রয়োৎস্কাইৎস’র ইতিহাসই হচ্ছে মহান সংগ্রামের বিনষ্ট সাধন করা। তাই আমি এই ভয়টাই পাচ্ছি যে, এখানে; এই দেশেও এমনতরো প্রচেষ্টা চালাতে পারে।

শ্রী কৃশান কান্তঃ মন্ত্রীকে বিবৃতি প্রদান করতেই হবে।

শ্রী কে.সি. পান্ট- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীঃ এই বিষয়টির উত্থান সম্পর্কে আমাদের কাছে কোন রকমের তথ্যই ছিল না। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি কোন প্রকারের বিবৃতি দিতে পারবো না।

শ্রী এ.জি. কুলকার্নিঃ আপনি কি তদন্তের জন্য প্রতিজ্ঞা করতে পারবেন? আমি বুঝতে পারছি তাঁর কাছে কোন প্রকারের তথ্য ছিল না। কিন্তু যখনই সংসদের সদস্যরা এই বিষয়টি তাঁর গোচরে এনেছেন, তখন এই বিষয়ে তাঁর উচিৎ তদন্ত করা। এটা একটা জাতীয় দাবী।

জনাব উপ-সভাপতিঃ যে বিষয়টি এখানে উত্থাপিত হয়েছে তা নিয়ে সরকারের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ? আপনি কি কোন বিবৃতি দিতে চান?

শ্রী কে.সি.পান্টঃ সদস্যদের জন্য প্রশ্ন উত্থাপন, জ্ঞাতার্থে প্রজ্ঞাপন জারির ইত্যাদিতে অনেক রকমের পথই এখানে খোলা আছে। এখানেই যে এই বিষয়টি উত্থাপনের পারঙ্গম হবে তা নিয়ে আমাদের আগে থেকে কোন প্রকারের ধারণা ছিল না। আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে এবং দেখতে হবে যে আমরা এখানে যাই বলি না কেন তা সঠিকভাবেই বলা হয়েছে এবং সেই উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসার জন্য আমাদের পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে থাকতে হবে। বিবৃতি প্রদান করাটা উচিৎ হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আমাদের কিছু মহীয়ান বন্ধুদের দ্বারা যে ভাবের সাথে তা প্রকাশ করা হয়েছে তার সাথে আমি সহমত পোষণ করছি যে, বিবাদের বিরুদ্ধে যা বাংলাদেশের আন্দোলন নিয়ে সফল হতে যা কিছুই বলা হয়েছে বা করা হয়েছে অথবা যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের দেশের ঐক্যবদ্ধতায় ফাটল ধরাতে চায় যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যা আমাদেরকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে এবং এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজনীয় তা অবশ্যই নেওয়া হবে।

সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে পত্র চালাচালির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি প্রসঙ্গে।

শ্রী ভূপেশ গুপ্ত (পশ্চিমবঙ্গ): সংসদ সদস্য হিসেবে সমগ্র দেশের জনতা হতে যে আমরা অনেক চিঠিপত্র পাই সেই বিষটাকে আপনার বিবেচনায় আনা উচিৎ। আজ ‘প্যাট্রিয়ট’ এ একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যাতে বলা হয়েছে যে অন্ধ্র প্রদেশের জেল হতে কিছু রাজনৈতিক কর্মচারী যারা উপজাতি সম্প্রদায়ের তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত স্মারকলিপির একটি অনুলিপি আমার কাছে প্রেরণ করেছে। এর আরো একটি অনুলিপি আমাদের দলের সাধারণ সচিব শ্রী রাজেশ্বর রাও বরাবর পাঠানো হয়েছে। আমি তার সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি। না শ্রী রাজেশ্বর রাও আর না আমি, কেউই জেল হতে বন্দীদের প্রেরিত উল্লেখিত চিঠির অনুলিপিটা পেয়েছি। অবস্থানুযায়ী মনে হচ্ছে এই যোগাযোগের মাধ্যমে তারা উল্লেখ করেছে যে তারা নকশাল্পন্থী হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা তাদের রাজনৈতিক দর্শন বদলে ফেলেছে এবং সেই ভ্রান্ত কৌশল বর্জন করেছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলো? অতি অবশ্যই এই প্রতিবন্ধকতা কেন্দ্রীয় সরকার অথবা প্রাদেশিক সরকারের কারো দ্বারা গঠেছে। অতএব, এই মর্মে আমি আপনার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর অনুরোধ জানাচ্ছি যে, আমাদের দলের সাধারণ সচিব ও সংসদ সদস্য হিসেবে আমার বরাবরে জেল হতে কিছু রাজনৈতিক বন্দীদের দ্বারা প্রেরিত এই যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পিছনে দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে এই বিষয়ে তাঁদের হস্তক্ষেপ করা উচিৎ। আমি আশা করছি যে, এ নিয়ে তদন্ত করা হবে।

জনাব উপ-সভাপতিঃ এখন মধ্যাহ্ন ভোজের সময়।

শ্রী ভূপেশ গুপ্তঃ আমি কী চিঠিটা পেতে পারি? এটা আমার বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছিল।

সংসদীয় বিষয়ক বিভাগের এবং শিপিং ও পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শ্রী ওম মেহতাঃ আমি চেষ্টা করবো।

জনাব উপ-সভাপতিঃ মধ্যাহ্ন ভোজের পরে আমরা আবার শুরু করবো। রাজ্যসভা দুপুর ২:১৫ পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হলো।

দুপুর একটা বাজার বিশ মিনিটে রাজ্য সভার তখন মুলতবি ঘোষিত হলো।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!