শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯৩। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কতৃক উত্থাপিত প্রস্তাব | রাজ্য সভার কার্য বিবরণী | ৩১ মার্চ, ১৯৭১ |
নং ৮ মার্চ ৩১, ১৯৭১
সিদ্ধান্ত: পূর্ব বাংলার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পারমানবিক শক্তি বিষয়ক মন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, এবং তথ্যমন্ত্রী (শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী):
চেয়ারম্যান মহোদয়, আমাদের প্রতিবেশী পূর্ব বাংলার সাহসী জনগনের জীবনে নির্বাচনে জয় লাভের পর থেকে যেই শোকাবহ রাত নেমে এসেছে, সেখানে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এর প্রতি আমাদের উদ্বেগ এবং তাদের প্রতি আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ, সমবেদনা আমাদেরকে আজ ঐক্যবদ্ধ করেছে। আমি এখানে লোকসভা থেকে একটি সিদ্ধান্ত পাশ করতে চাই, যা আমরা বিরোধীদলের নেতাদের সাথে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি এবং আমি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে আমরা সবাই এব্যাপারে একমতে পৌঁছেছি।
মহোদয়, আমি নিম্ন লিখিত সিদ্ধান্ত এই মহান লোকসভাতে পাশ করতে উত্থাপন করছি:
“এই পার্লামেন্ট পূর্ব বাংলার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর জন্য গভীর উদ্বেগ এবং শোক প্রকাশ করছে। পূর্ব বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্খাকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেবার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সেখানে নির্মমভাবে আক্রমণ চালিয়েছে। পাকিস্তানের সরকার ১৯৭০ এর ডিসেম্বরে সেখানকার মানুষ যেই রায় দিয়েছে তার প্রতি কোন শ্রদ্ধা না করে বরং সেখানকার জনগনের ম্যান্ডেটকে বিদ্রুপ করার পথ বেছে নিয়েছে।
পাকিস্তানের সরকার শুধু যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাই নয়, বরং জাতীয় পরিষদ (ন্যাশনাল এসেম্বলী) কে তার নিয়মতান্ত্রিক এবং সার্বভৌম ভূমিকা পালনের পথও রুদ্ধ করে দিয়েছে। বেয়নেট, মেশিনগান, ট্যাংক, আর্টিলারি এবং যুদ্ধবিমান দিয়ে নির্লজ্জ্বভাবে পূর্ব বাংলার মানুষকে দমন করা হচ্ছে।
ভারতের সরকার ও জনগণ সবসময় পাকিস্তানের সাথে শান্তিপূর্ণ, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এবং স্বাভাবিক সম্পর্ক চেয়েছে। কিন্তু এই উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে শত শত বছরের যে ইতিহাস, সংস্কৃতির এবং ঐতিহ্যের বন্ধন আছে, সেখানে ভারতের দায় আছে এবং এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের সীমানার ওপর পাশে যে নির্মম অত্যাচার এবং ধংসযজ্ঞ চলছে, তা দেখে ও এই পার্লামেন্ট চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, নিরীহ এবং নিরস্ত্র জনগনের উপরে যেই মাত্রায় অত্যাচার এবং ধংসযজ্ঞ চলছে, তার নজির সদূর অতীতে পাওয়া মুশকিল।
শান্তি এবং মানবাধিকারের প্রতি ভারতের স্থায়ী অঙ্গীকার থেকে এই সংসদ পূর্ব বাংলার জনগনের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এই সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সংহতি এবং সহানুভূতি জানাচ্ছে এবং এই সংসদ পূর্ব বাংলার নিরস্ত্র জনগনের উপরে যে হত্যাযোগ্য এবং বলপ্রয়োগ চলছে, তা অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। এই সংসদ একই সাথে সমগ্র পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সরকার এবং জনগনের কাছে আবেদন জানাচ্ছে যেন তারা পাকিস্তানের সরকারের উপরে এই ধংসযোগ্য ও গণহত্যা বন্ধ করতে সকল সম্ভব চাপ প্রয়োগ করে।
এই সংসদ সুদৃঢ় প্রত্যয় রাখে যে পূর্ব বাংলার ৭৫ মিলিয়ন মানুষের ঐতিহাসিক জয় হবেই। এই সংসদ তাদের আশ্বস্ত করছে যে, তাদের এই সংগ্রাম এবং আত্বত্যাগের পথে তারা ভারতের জনগনের পূর্ণ সমর্থন এবং আন্তরিক সহযোগিতা পাবে।
প্রশ্ন উত্থাপন করা হলো এবং সংসদের প্রতিক্রিয়া গৃহীত হলো।
চেয়ারম্যান মহোদয়: এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করা হলো।
শ্রী মহাবীর ত্যাগী (উত্তর প্রদেশ): আন্তরিক অভিনন্দন।