শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৯৪। বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর আগমনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর বিবৃতি | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২৪ মে, ১৯৭১ |
২৪ মে, ১৯৭১ তারিখে রাজ্যসভায় কল এটেনশন নোটিশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর আগমনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্রী শ্রী ডি ডি পুরির বিবৃতি।
পুর্ব বাংলার অভ্যন্তরীণ গোলযোগ এবং তৎ পরবর্তি ১৯৭১ এর মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে পাকিস্তানি আর্মির নির্মম অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে বিপুল সংখ্যক শরনার্থী পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার বর্ডার দিয়ে প্রবেশ করছে। শরনার্থী সংখ্যা এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্বল্প ছিল, যা এর পর থেকে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। শরনার্থী অনুপ্রবেশের হার কী হারে বাড়ছে তা নিচের পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমেয়ঃ
(১) সপ্তাহান্ত …………… ১৭-০৪-১৯৭১ ১, ১৯, ৫৬৬ জন
(২) সপ্তাহান্ত …………… ২৪-০৪-১৯৭১ ৫, ৩৬, ৩০৮ জন
(৩) সপ্তাহান্ত …………… ০১-০৫-১৯৭১ ১২, ৫১, ৫৪৪ জন
(৪) সপ্তাহান্ত …………… ০৭-০৫-১৯৭১ ১৫, ৭২, ২২০ জন
(৫) সপ্তাহান্ত …………… ১৪-০৫-১৯৭১ ২৬, ৬৯, ২২৬ জন
(৬) সপ্তাহান্ত …………… ২১-০৫-১৯৭১ ৩৪, ৩৫, ২৪৩ জন
২১-০৫-১৯৭১ পর্যন্ত প্রায় ৩৪.৩৫ লক্ষ শরনার্থী পুর্ব বাংলা থেকে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। এর প্রায় অর্ধেক রিলিফ ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে, আর বাকি অর্ধেক তাদের বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনের বাসায় উঠেছে।
ভারত সরকার মানবাধিকার প্রেক্ষাপট স্মরণে নিয়ে শরনার্থীদের আশ্রয় এবং খাদ্যের যোগান দেবার জন্য রিলিফ কার্যক্রম প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং মহামারি নিয়ন্ত্রনের বন্দোবস্ত করেছে। শিশু, নারী, গর্ভবতী এবং অসুস্থদের জন্য গুড়ো দুধ বিতরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরো প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন বস্র ও বাসন-কোসন বিতরনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই রিলিফ কার্যক্রমের জন্য যে ভীষণ ব্যয় নির্বাহের দরকার হয়ে পড়েছে, যেখানে শরনার্থী ও তার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় রিলিফের পরিমান প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তা ভারতের অর্থনীতির উপর ব্যপক চাপ প্রয়োগ করছে। তাই, ভারত সরকার তার দূতাবাস সমুহের মাধ্যমে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, যেন এই বিপুল সংখ্যক শরনার্থীর দায়ভার গ্রহন করে।
ভারত সরকার মনে করে এই শরনার্থীরা তাদের নিজ মাতৃভূমিতে ৬ মাসের ভেতর ফিরে যেতে পারবে, ততদিনে পুর্ব বাংলার অভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটে যাবে। সেই হিসেবে, ভারত সরকার ১৩২ কোটি রুপি এই ৬ মাসের রিলিফ কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ করেছে। এই হিসাব UNHRC এর প্রতিনিধিদলের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, যারা পশ্চিম বাংলা, আসাম এবং ত্রিপুরা দিয়ে আগত শরনার্থীদের রিলিফ ক্যাম্পগুলো সম্প্রতি বর্ডারে গিয়ে পর্যবেক্ষন করে গিয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষন এবং হিসাব অনুযায়ী এর মধ্যে তারা জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতি সদয় হয়ে পুর্ব বাংলার শরনার্থীদের জন্য এই রিলিফ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আহবান জানিয়েছে। আশা করছি আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে এবং অন্যান্য দেশগুলো শীঘ্রই মানুষের এই বিয়োগান্ত ঘটনায় ভারত সরকারের সহায়তা কার্যক্রমের পাশে এসে দাঁড়াবে।
এই বিশাল রিলিফ কার্যক্রমের সমস্যাবলী মোকাবেলা করার জন্য এর মধ্যে পশ্চিম বাংলার কলকাতায় একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে পুনর্বাসন অধিদপ্তরের একটি শাখা সচিবালয় খোলা হয়েছে। এই শাখা সচিবালয় বর্ডার স্টেট গুলোর সরকারের সাথে কাজের সমন্বয় করে রিলফ কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার সরকার এই কঠিন পরিস্থিতিতে যথাসাধ্য কাজ করছে এবং ত্রাণ সরবরাহ করছে, যার প্রতি ভারত সরকারের পূর্ন সমর্থন রয়েছে।