শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৮৮। বাংলাদেশ প্রশ্নে জয়প্রকাশ নারায়ণের বিবৃতিসমূহ সংকলন | কোয়েস্ট | সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে
জয়প্রকাশ নারায়ন
কয়েকটি কারন জয়প্রকাশ নারায়ণকে গভীরভাবে আন্দোলিত করেছে এবং তাকে বাংলাদেশ সমস্যায় প্রগাঢ়ভাবে জড়িয়ে ফেলেছে। মুক্তিযোদ্ধা, ইন্ডিয়ান কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক পার্টির প্রতিষ্ঠাতা-সচিব, সার্বোযায়া নেতা, ইন্ডিয়ান সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য, জে.পি। একজন প্রদীপ্ত গান্ধী একজন অনুসারী বাংলাদেশে ইয়াহিয়া খানের দলের দ্বারা সংগঠিত গনহত্যার স্পষ্টাস্পষ্টি নিন্দা জানান। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিকেও সমর্থন দিয়ে আসছেন। অন্যান্যদের থেকেও বেশি, জে.পি. দেশে এবং বিদেশ উভয়খানেই বাংলাদেশের পক্ষে জনগণের মতামত উত্থিত করতে, সক্ষম হোন।
আমরা নিম্নে জে.পি. এর বাংলাদেশ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনের প্রতিলিপি বর্ণনা দিলাম (জোর দিয়ে)।
নয়া-দিল্লী, মার্চ ১৬, ১৯৭১
ভুল বোঝাবুঝির ভয় থেকেই আমি পূর্ব পাকিস্তানের অগ্রগতি নিয়ে মন্তব্য করতে দ্বিধাবোধ করছিলাম, কিন্তু আজ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা আপীল পড়ে আমি প্রতিক্রিয়ায় কিছু কথা বলতে তাড়িত হই।
প্রথমতই, যে অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষকে দিয়েছে তার জন্য শেখের আমি আমার গভীর প্রশংসা করতে চাই।
ইতিহাসে এমন অন্যকোন নেতার উদাহরণ পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যাবে যিনি তার পিছনে তার সকল মানুষকে মুষ্টিবদ্ধভাবে একত্রিত করতে সফল হয়েছেন যা শেখ মুজিবর রহমান করতে পেরেছেন।
ইতিহাসে এখনো এমন উদাহরণ খুজে পাওয়া কঠিন হবে যেখানে অপ্রতিরোধ্য সমর্থন প্রবল উত্তেজনার মুখেও ধৈর্য ও জ্ঞান দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে।
যেহেতু গান্ধিজী অসহিংস আন্দোলনের সুবিশাল ক্ষমতার দাড়িপাল্লা শেখ মুজিবর রহমানের নিকট বর্নণা দিয়ে ছিলেন।
আমাকে ইহা পরিষ্কার করতে দিন যে যেমন আমি আমার দেশের রাষ্ট্রীয় ন্যায়পরায়ন্তায় বিশ্বাস করি, আমি পাকিস্তান ভঙ্গ দেখার ইচ্ছা পোষণ করি না। শেখ মুজিবর রহমান নিজে তার রাষ্ট্রের জন্য পুর্ণ স্বায়ত্তশাসন ব্যতিত বেশি কিছু চাচ্ছেন না তা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তান শাসনের গণহত্যা অংশ হলেও, তিনি বিচ্ছিন্নতার শেষ পদক্ষেপ নেয়া হতে নিবৃত্ত হয়েছেন। এটাই তার রাষ্ট্রপরিচালনা দক্ষতার পরিমাপ। তাকে তার স্ব-আরোপিত সীমানার বাহিরে ঠেলে দেয়া দায়ভার সম্পুর্ন পাশ্চিম পাকিস্তানের বেসামরিক এবং সামরিক শক্তির। আমরা মনে করি যে তাকে খুব বেশিদূর জোর করা তাদের বুদ্ধিমানের কাজ হবে না
সীতাবদিয়ারা, মার্চ ২৭, ১৯৭১
সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে আমি ধারণা করেছিলাম যে পাকিস্তান বিশ্বের সামরিক এবং আমলাতান্ত্রিক নেতাদের শেখ মুজিবর রহমান এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সহ্যের সীমানার বাহিরে ধাক্কা না দেয়ার পর্যাপ্ত জ্ঞান রয়েছে। ঘটনাগুলো প্রত্যাশাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং যাকে মোলায়েমভাবে বলা যে ইয়াহিয়া খান কঠোর সেনাশাসনের হুকুম দেন কিন্তু যা বাস্তবে তা গোটা জনগণের উপর একটি সামরিক হুমকি।
পরিস্থিতির কিছু দিক গণতান্ত্রিক জনগণের সাথে এবং বিশ্বের সরকারদের সাথে বিশেষভাবে আলোচনা করা উচিত, যথা যে শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সমাবেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন এবং পূর্ব অঞ্চলে শতকরা ৯৮.৮ ভাগ আসন জয় করেন, গণতন্ত্রের সকল অনুশাসন দ্বারা পাকিস্তানের ন্যায়সঙ্গত শাসক এবং আরো যেহেতু বাংলাদেশ পাকিস্তান জনসংখ্যার শতকরা ৫৮ ভাগ সেহেতু ইহা বাস্তব যে যুক্ত পাকিস্তানে সংখ্যালঘুরাই সংখ্যাগরিষঠদের দমন করার চেষ্টা করতেছে।
বাস্তবে সংখ্যালঘুরা অবশ্যই খুব অল্প কারন বাতুলতাগ্রস্থ পশ্চিম পাঞ্জাবি মুসলিমরা ব্যতিত, সিন্ধুর জনগণ, পূর্ব-পশ্চিমের সীমান্ত এবং বেলুচিস্তানকে সামরিক সৈরতন্ত্রের পিছনে তাদের একত্র হতে দেখা যাচ্ছে না এবং তারা সবাই স্বায়ত্তশাসনের বিভিন্ন মাত্রার দাবি জানাচ্ছে।
এপ্রিল ২, ১৯৭১
যাহোক, সময় এসে পড়েছে, এখন এটা অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে খুব নিছক সমাধানের অভিব্যক্তি এবং সহানুভূতির অঙ্গিকার দিয়ে বেশি কার্যকরি উদ্দেশ্য সাধন করা যাবে না। অঙ্গীকারগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার জন্য উপলক্ষ্য কি? বস্তুগত সমর্থনে সব ধরণের ত্রাণ এবং সীমান্ত খুলে দেয়ার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে যারা পাড়ি দিতে চায়…… কিন্তু এটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম চলছে তা যেন পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পদপিষ্ট না হয়। এই উদ্দেশ্যের জন্য আর বিলম্ব না করে প্রয়োজনীয় সবরকমের সাহায্য করা উচিত। সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেয়া এখন সরকারের উপর বর্তায়। আমি এটাই বলতে পারি যে আমাদের ইতিহাস জ্ঞান ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর বোধ বলে যে বাংলাদেশকে অবিলম্বে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিলে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গতি ভঙ্গ হবে না। জনাব চাগলা এবং জনাব কৃষ্ণ মেননের মতপ্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক আইনজীবীও একই রকম অভিপ্রায় নিয়েছেন।
শেখ মুজিবর রহমান সরকারের সত্যতা বৈধতা প্রমাণে আরেকটি গুনক হিসাবে আনতে হবে। সাম্যবাদি কোন দেশে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনে শেখের আওয়ামিলীগের মত এই ধরনের বা তার কাছাকাছি বিজয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোন থেকে শেখ মুজিবর রহমান সরকার ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসন থেকে প্রশ্নাতীতভাবেই বেশি বৈধ। অতএব, যারা একতা এবং সাংবিধানিকতার নামে পশ্চিম পাকিস্তানকে সমর্থন করছে তা আসলে উপনিবৈশিক এবং সামরিকতন্ত্রকে সমর্থন করছে। নিঃশেষ করে যারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো, যেমন- আফ্রিকা এবং এশিয়া, যারা বিপ্লব ও মানুষ নিয়ে অনেক আলোচনা করেন। এটা কি ইতিহাসের গুরুতর দুঃখজনক ঘটনা হবে না যদি এই গণঅভ্যুথ্যান সেনাবাহিনী, জনগণ বিরোধী শক্তি দ্বারা পদপিষ্ট হয়?
জে.পি. মে-জুন ১৯৭১, বাংলাদেশ ইস্যুতে বিদেশে জনগণের মতামত তৈরী করতে কয়েকটি দেশে ভ্রমণে যান। তিনি কায়রো, রোম, বেলগ্রেড, মস্কো, হেলসিঙ্কি, স্টকহোম, বন, প্যারিস, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক, ওতায়া, ভ্যানকিউবার, টোকিও, জাকার্তা, সিঙ্গাপুর এবং কুয়ালালামপুর ভ্রমণ করেন। ফেরার পর, তিনি শান্তি জারি করেন। “আমরা নিচে বিবৃতির সারাংস দিয়ে দিলাম।
আমি শান্তির জন্য সর্ব সেবা সংঘ এবং গান্ধি শান্তি ফাউন্ডশনের অনুকূলে এই মিশনের দায়িত্ব নিলাম। আমি প্রকৃতপক্ষে, সবার নিকট, তাদের থেকে আর্থিক এবং অন্যান্য পরামর্শমূলক সহায়তা পাওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞ।
সমানভাবেই, আমাকে অবশ্যই সফর করা সকল রাজধানীগুলোয় আমাদের দেশের প্রতিনিধিদের নিকট হতে পাওয়া সকল প্রকার সাহায্য এবং আতিথেয়তার জন্য উষ্ণ প্রশংসা প্রকাশ করতে হবে। বিশেষ করে তাদের এবং ইন্ডিয়ার সরকারকে যারা আমাদের মিশন যতটা সম্ভব কার্যকরী করতে সহায়তা করেছেন।
ইহা শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য ভিক্ষা অথবা শুধুই মানবিক ভোগান্তির সম্পর্কিত আলোচনা ছিল না এবং আমি যে শ্রমসাধ্য সফরের দায়িত্ব নিয়েছিলাম তা বিশ্বের নৈতিক বিবেকবোধ জাগানোর জন্য ছিল। ইন্ডিয়ায় পালিয়ে আসা লক্ষাধিক শরণার্থীদের ত্রানের জন্য, বাংলাদেশে ভয়ের বশীভূত হয়ে চলে আসা এমন আরো লক্ষাধিকের এবং যারা সেখানে দুর্ভিক্ষ এবং মহামারির মুখোমুখি তাদের জন্য ত্রাণ অবশ্যই জরুরী, এবং স্বাভাবিকভাবেই আমি এই সম্পর্কে কথা বলেছি। বিশ্ব নৈতিক বিবেকের যা অবশিষ্ট আছে, কায়রো ব্যতিত, সব জায়গায় প্রেস করা হয়ে গিয়েছে, এবং আমি মনে করি, একটি দারুন কাজ হয়েছে।
আমার বড় চিন্তা ছিল রাজনৈতিক সমস্যার জড়ানোর সাথে এবং তাদের জরুরী সমাধানের প্রয়োজনীয়তা, কারণ আমি যাদের সাথেই সাক্ষাত করেছি তাদের কাছেই দেখিয়েছি, শরণার্থী সমস্যা এবং মানবিক সমস্যা শুধু মাত্র রাজনৈতিক সমস্যার দ্বারাই তৈরী হচ্ছিল।
ওয়ার্ল্ড প্রেস ছাড়াও অন্যান্য তথ্য উৎসসহ তাদের নিজস্ব কূটনৈতিক চ্যানেলের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি দেখেছি যে রাজনৈতিক দিক বিবেচনা থেকে সরকার মোটামোটি ভাল মতামত দিয়েছেন। আমি মনে করি, এটা সাধারণত অনুভূত হয় যে পাকিস্তানের সরকার বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক রায় দমন করতে তাদের পাশবিক সামর্থ্য ব্যবহার করছে যা একতাবদ্ধ জাতি হিসেবে পাকিস্তানের টিকে থাকার অবস্থাকে ঝুকিতে ফেলেছে। এখনো, আমি দেখেছি; কিছু সরকারের মুখপাত্ররা খড়কুটো চেপে ধরে আছেন এই আশায় যে দুই পক্ষের মধ্যে এখনো কিছু সংযোগ সংরক্ষিত আছে। অতএব, তাদের সবাই পাকিস্তানের মিলিটারি অভিযান বন্ধ করার জন্য জোর করছেন এবং রাজনৈতিক সমঝোতা চাচ্ছেন -এ টা বাংলাদেশের নেতৃত্বের সাথে ওয়াশিংটনের জনপ্রিয় শর্ত ছিল। কিন্তু যখন প্রশ্ন করা হয় তারা তা অস্বীকার করে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনারা যে কাজ করেছে তারপরেও কোন আত্নসম্মানবোধ সম্পন্ন বাঙালী পশ্চিম পাকিস্তানের শুভ কামনা করবে না।
বিষয়টা এই যে, এবং এই দেশে এটা পরিষ্কারভাবে বুঝতে দেওয়া উচিত যে, বর্তমানে পরাশক্তিদের সবাই বিশ্বে স্থাপিত শক্তির সাম্যর স্থিতিবস্থা সংরক্ষন করার জন্য উদ্ধিগ্ন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশেষ করে দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে সাম্যতা সংরক্ষন করতে উতসাহী যা তাদের তৈরী করা সুচিন্তিত নীতি দ্বারা পাকিস্তানকে জোরদার করে ইন্ডিয়াকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা।
যেকোন ঘটনায় ভারত তাৎক্ষনিকভাবে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং পাকিস্তান যুদ্ধের কর্মফল ভোগ করতে পারে, এবং আমি কোথাও প্রমাণ পেলাম না যে কেউ আমাদের জন্য বিপদ থেকে বাচার সমাধান বের করতে প্রস্তুত হয়েছে।
শরণার্থীদের দেখাশুনা করার কিছু অর্থনৈতিক বোঝার জন্য তারা হয়ত আমাদের প্রস্তাবিত পরিমাণ সাহায্যের অংশীদার হবে যদিও আমাদের প্রস্তাবিত পরিমাণ তাদের কাছে অতিরঞ্জিত হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে কিন্তু এটা নিশ্চত যে সামাজিক এবং রাজনৈতিক বোঝা ইন্ডিয়াকে একাই টানতে হবে। এবং শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন এইসব বোঝা অর্থনৈতিক বোঝার চাইতেও কতটা ভারী।
সব মিলিয়ে আমার এই সফরটিকে বলা যায়, ইন্ডিয়ানদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে আমরা আমাদের্ সমস্যা সমাধানে অন্যের সাহায্য আশা করতে পারি না। তা আমাদের নিজেরকেই করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে যদি বাংলাদেশের মানুষের উপর দমন অব্যাহত থাকে, ্তাহলে তার সকল প্রভাব অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে আমাদের উপর পড়বে। তাই স্বভাবতই এটা আমাদের জাতীয় আগ্রহে পরিণত হবে। পাকিস্তান ভাঙলে ইন্ডিয়ার জাতীয় স্বার্থ কিনা এটা সেই প্রশ্ন না। ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং তার উপদেষ্টাগণ তাদের পাকিস্তান জাতীয়তা ভেঙ্গে ফেলেছেন। এই প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হবে যে পশ্চিম পাকিস্তান জোড়পূর্বক বাংলাদেশ দখল করবে কিনা, তার সকল বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রভাব আমাদের উপর পড়বে। আমার দৃষ্টিকোন থেকে আমার মনে এটা বেশ পরিষ্কার যে এইটা ভারতের স্বার্থের জন্য বিরাট একটা বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দাঁড়াবে যার পরিণতি খুব বেশি ভাল হবে না।
বিদেশে সফরকালীন সময়ে আমি দেখতে পেলাম বেশিভাগ মানুষই প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সমস্যা সামলানো এবং তার রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য বাহবা দিচ্ছে। আমিও এর জন্য তার প্রশংসা করি। কিন্তু তাকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যদি সময় এখনই না আসে। পূর্ব-বঙ্গকে পাকিস্তানের ত্রাস থেকে বাচানো এবং তাদের হারানো গণতন্ত্র বাচানোর জন্য কোন কল্যানময় অভিপ্রায়মূলক কাজ দেখা যায় না, কিন্তু ইয়াহিয়া খানকে তার অভ্যন্তরীন বিশৃঙ্খলা এদেশে রপ্তানি করা থেকে রোধ করা এবং তাদের জনসংখ্যার পূনর্গঠন, আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক সংস্কারের পথে আমাদের বাঁধা দিচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই তার সময় বলতে হবে। কারন তিনি তার জায়গা থেকে সব খুটিনাটি ব্যাপার জানেন। আমার মৌলিক বিবেচনা পরিষ্কার এবং এটাও মাথায় রাখার আবেদন রাখলাম।
আমরা নিচে জে.পির জুলাই ২৭, ১৯৭১-এ নয়া দিল্লী থেকে প্রকাশ পাওয়া সংবাদ সংলাপ নিচে উল্লেখ করলাম। এই বিবৃতি মনে হয় যেমন প্রচার বিস্তৃতি হওয়ার কথা ছিল তা পায় নি। (জোর দিয়ে)।
“একটি ঘুঘু পাখি বাজপাখিতে পরিণত হল”, “একজন ভাড়াটে নৈকি”- এভাবেই আমি পত্রিকার অংশে বর্ণনা করেছি। অন্যরা আমাকে বিব্রতর অবস্থায় ফেলার এবং প্রধানমন্ত্রীকে কলংকিত করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে; এবং অন্তত একটি বোম্বের মিথ্যাচারী সাপ্তাহিক সুপারিশ করেছে যে আমার বাংলাদেশ ভঙ্গিমা দ্বারা ইন্দিরাজীকে চাপে ফেলে ভারতের পরবর্তি প্রেসিডেন্ট বানানোর আশা করছি। বিশেষ করে মুসলিম প্রেস, কিছু ব্যতিক্রম ব্যতিত, আমার বিরুদ্ধে আক্রমনাত্বক অবস্থান নিচ্ছে, আমি যখনই সুযোগ পাবো, আমি আশা করি বাংলাদেশ প্রশ্নে আরো পূর্নাঙ্গ লিখবো। এখানে, আমি শুধু আমার অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে এবং সত্য আবেদন তুলে ধরার ইচ্ছা করেছি।
আমি নিশ্চিতভাবে অস্বীকার করছি যে আমি কখনই পাকিস্তান যুদ্ধের পক্ষপাতি ছিলাম না। প্রকৃতপক্ষে যখন থেকে প্রথমবারের মত আমি সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছি তখন থেকেই আমি এর বিরোধীতা করে আসছি, কিন্তু যেহেতু এমনটা হয়েছে, শিরোনামে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। এইটাই শুধু আমার কাছে প্রবলভাবে অন্যায় না সাথে জনগণের মনে গভীরভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং যা এই সংকটপূর্ন ও অসম্ভাবী মুহূর্তে খুব প্রয়োজনীয় জাতীয় প্রচেষ্টা নাজুক করে। বর্তমান সংকট খুবই গুরুতর যে হয়ত্ এই জাতিকে এই থেকে কঠিন, ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী এবং সম্মানিত ক্ষমতাশীলভাবে অভ্যুদিত হতে হবে অথবা নীতিনষ্ট, বিভ্রান্ত এবং মেরুদন্ডহীন দূর্বলের মত বিশ্ব দ্বারা আর কখনো গুরূত্বের সাথে গ্রহনযোগ্য হবে না। অতএব, কাউকে এই সমস্যায় কাউকে বিভ্রান্ত করা চেষ্টা করতে দেয়া যাবে না।
আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিরুদ্ধে কিন্তু আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিকভাবে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতির পক্ষপাত করতেছি। এইটা সত্য যে যখন প্রশ্ন করা হয় যদি সরকারের স্বীকৃতি এবং মুক্তিবাহিনীর জন্য উম্মুক সহায়তা হয়ত ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে যুদ্ধে প্ররোচিত করবে না, আমি স্বীকার করতেছি যে সেখানে নিশ্চিত পরিত্রাণ নাই, কিন্তু এইটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
যদি এই বলি যে ইন্ডিয়ার উচিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ার যুদ্ধ ঘোষনা দেয়া তাহলে আমি নিশ্চিতভাবেই ভাড়াটেনৈকির মত সমান হবে। কিন্তু এমনকি নিয়তিও জানে এদেশের কেউই ভাড়াটেনৈকি নয়। একমাত্র পার্থক্য, আমি এখন পর্যন্ত বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে, আমারমত সমমনা জনগণ এবং ইন্ডিয়ার সরকার সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতেছে যখন থেকে হয়ত স্বীকৃতি দেয়া যাবে, আমরা বলতেছি যে সঠিক সময় এখনই।
আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত অথবা সুনামহানী অথবা আমাকে চাকুরি দেওয়ার জন্য জোর করা চাই না, এই ধরনের নীচ পরামর্শ হিসেবে নেওয়া যাবে না। কিন্তু যেহেতু তাদের পত্রিকায় দেখা গিয়েছে এবং দলছুট পাঠকদের বিভ্রান্ত করতে চায় তাই আমাকে ইহা পরিষ্কার করতে দেন যে রাজনৈতিক কুড়াল নেই পেষাই করার, না আমি কোন অফিসের জন্য প্রার্থী, এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে না আমার ব্যক্তিগত স্নেহ ও কদর রয়েছে। আসলে, “বাংলাদেশ প্রশ্নে, আমার অনুভূতি তা যা আমাদের মধ্যে সম্পূর্ন বোধগম্য, এবং আমি যে জনগণের চাপ আমি তাতক্ষনিক অথবা যথাসময়ে স্বীকৃতি দেয়ার অনুকূলে তৈরী করতে সহায়তা করতেছি তা কোনভাবেই বিব্রত করবে না।
এই আকুতি করি যে আমি বাংলাদেশ ইস্যূ থেকে দলীয় রাজনীতি আলাদা রাখার ইচ্ছা রাখি। লোক সভার চলতি অধিবেশনের খুব শুরুতেই সে তার এই বিষয়ের বিবৃতিতে, প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন যে “এই অবস্থা পক্ষপাতভুক্ত মনন অথবা দলীয় রাজনীতির শর্তাবলী দিয়ে ঠেকানো যাবে না”। লোক সভা দ্বারা পাস করানো সর্বসম্মত সমাধান ছিল এই অভিগমনের দারুন শুরু। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত সম্প্রতি বিভেদ সৃষ্টিকর উপসর্গ দেখা গিয়েছে, এমনকি পক্ষপাতভুক্ত অগ্রসরও। ইহা অত্যন্ত বোধগম্য যে, বাংলাদেশের মত নির্দলীয় এমনকি দলীয় ইস্যূর পার্থক্যও, সময়ের পরম্পরায় উদিত হতে পারে, বিশেষত সরকারের দৃষ্টিকোনও কার্যকরী প্রক্রিয়া গ্রহণ করতেও দ্বিধা করতে শুরু করেছে। এখানে প্রধান দুই সারির মত রয়েছে। এক হচ্ছে ক্ষমতাশীন দল কংগ্রেস যারা নীতিগত ভাবে স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধী নয় কিন্তু বাস্তবে তা প্রধানমন্ত্রীর উপরেই সময় নির্ধারনে কোন কোন বিষয় আসবে তা পরিষ্কারভাবে উপযুক্ত চিন্তা করায় ন্যস্ত। অন্য সারির গঠন প্রায় এর ঘোর বিপরীত।
এর সাথে অনেক নির্দলীয় সংস্থা এবং আমার মত ব্যক্তিত্বরা আছেন যারা অনুভব করেন যে স্বীকৃতির সময় এখন এবং এখনই। যদিও জাতির মনে এই দুঃখজনক বিভাগ ঘটতে সুযোগ দিয়েছে, মতপার্থক্য খুব ভালো নয়।
যখন কনগ্রেস(আর) জনগনের মতামত তাদের নিজস্ব দিকে সচল করবে, অন্যের অধিকার যেন একই রকম হয় এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। পরবর্তীকালে, যাইহোক, যদি তারা গুরুত্বের সাথে গ্রহণ হতে চায় তাদের অবশ্যই যুক্তফ্রন্টে উপস্থিত হতে হবে। ভারতীয় জনসংঘের সভাপতি শ্রী অটল বিহারী বাজপাই, খুশিমনেই তার দলের কার্যক্রমের ১২ই আগস্টের সময়সূচী সর্বদলীয় অথবা নির্দলীয় ব্যাপারে রুপান্তর করেন। আমি সকল দলের এবং ব্যক্তিত্বদের নিকট গঠনমূলক আহবানের আবেদন করছি।
প্রথমত প্যান-আরব্যের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল অটোমান সম্রাজ্য থেকে স্বাধীন হওয়া, এবং এটা সাধিত হয়েছে সম্রাজ্যের কেন্দ্র, তুরস্কের মধ্যকার একমাত্র ক্রমবর্ধমান বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য। আরব জাতীয়তাবাদী এবং তুরষ্কের সংস্কারবাদী সমবায়ের সিক্রেট সংঘ এবং উন্নতি কমিটি সিক্রেট এসোসিয়েশনের দ্বারা যারা তরুন তুর্কীদের ১৯০৮-৯ এ লিবারেল কার্যক্রমের ক্ষমতায় নিয়ে বিভিন্ন জাতিগত, ধর্মগত এবং জাতীয় দলগুলোর সমতার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তরুন তুর্কিদের উগ্র জাতীয়তাবাদ আরবদের মোহমুক্ত করে, তারা তখন স্বায়ত্তশাসনকে তাদের লক্ষ্য হিসেবে গৃহীত করেন। খ্রিষ্টানদের নেতৃত্ব আন্দোলন মুসলিমদের সাথে সম্পৃক্ত করা উচিত যারা কিনা নতুন ভাবাদর্শগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। পরন্তু, তরুনদের সংকীর্ণ পালা আরব মুসলিমদের বিচ্ছিন্ন করে এবং যতটুক খ্রিষ্টানদের করেছিল। অটোমাইজেশন পলিসি অর্থ হলো আরবী ভাষা এবং সাহিত্যকে এবং তুর্কির প্রশাসন এবং শিক্ষাকে অনুতসাহিত করা। এই উন্নয়ন অটোমান প্রচেষ্টার ব্যর্থতার পথ সুগম করে, নিজেকে সংঘবদ্ধ শক্তি হতে রক্ষা করতে ১৯১৪ সালের যুদ্ধ স্থিত করে।
মরোরে বার্জার, দ্যা আরব ওয়ার্ল্ড টুডে, ডাবলডে এন্ড কোম্পানি
নিউ ইয়র্ক ১৯৬২, পৃঃ ৩৩৮