You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৮৫। বাংলাদেশ প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নমনীয় বলে জাতিসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় কমিটির অভিযোগ দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া ১১ অক্টোবর ১৯৭১

সরকার বাংলাদেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকা করতে যাচ্ছে, জনসংঘের অভিযোগ
(দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া)

মাদ্রাজ, ১০ই অক্টোবর- জনসংঘের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি আজ কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিযুক্ত করে বলে, “বাংলাদেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা” এবং সিমলায় জনাব শরণ সিং এর বিবৃতিতে “পাকিস্তান কাঠামোর মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা” আহ্বান ছিল “একটি লজ্জাজনক ঘটনা।”

একটি রেজল্যুশনে বাংলাদেশ বিষয়ক কমিটি থেকে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে জাদুর পরশ নিয়ে আসা ভারত-সোভিয়েত চুক্তি অকেজো প্রমাণিত হয়েছে’।

আজকের আলোচনায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জনাব এল কে আদভানি, কর্মপরিষদের সদস্য ও জনসংঘ পার্লামেন্টারি দলের সম্পাদক, বলেন- এই প্রথমবার একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা, জনাব শরণ সিং, পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছেন।

জনাব আদভানি বলেন, প্রায় সকল দলই বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে যেখানে ভারত সরকারও অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু তারা সময়ক্ষেপণ করছে বলে মনেহয়।
শরণ সিং এর বিবৃতি তাদের কমিটির কাছে বিস্ময় হয়ে এসেছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ‘এই বিবৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের সাথে বিস্বাসঘাতকতা করতে তারা প্রস্তুত হয়েছে’।

ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি

তার ধারনামতে, বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত সরকারের অবস্থা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এমনকি ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি হওয়ার পর সরকারের কিছু নেতা সোভিয়েতকে ভারত সরকারের সাথে একই রকম চিন্তা করানোর ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। কিন্তু মস্কোতে ইন্দিরা গান্ধী যাওয়ার পর বুঝতে পারেন, রাশিয়া তার অবস্থান থেকে নড়তে প্রস্তুত না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতিতে সাক্ষর করার পরই সোভিয়েত চাপের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেন যেখানের কিছু বাক্যাংশ হচ্ছে ‘সমগ্র পাকিস্তান’ এবং ‘পাকিস্তানের কাঠামোর ভিতরে থেকে’। আদভানি দাবী করেন, এই বাক্যাংশগুলো থেকে বুঝতে পারা যায় যে সোভিয়েত এবং আমেরিকা অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী।

বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অভিবাসীরা ৬ মাসের ভেতর তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাবে কিন্তু তা না হয়ে এখনো স্রোতের মতো মানুষ ভারতে প্রবেশ করছে। আরো বলা হয়, ‘বর্ষার পরপরই ইয়াহিয়ার ট্যাঙ্ক তাজা রক্তের নৃশংসতা শুরু করবে যা এইদেশে গুরুতর প্রভাব ফেলবে’।

স্বীকৃতির আবেদন

আদভানি বলেন, মুক্তিবাহিনীর কোনভাবেই সেনাবাহিনীকে ধংস বা হটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। যদি বাংলাদেশকে স্বাধীন হতে হয় তবে সরকারের সাথে সরকারের সমঝোতার মাধ্যমে ভারতের উচিত প্রথমেই স্বীকৃতি দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য এমনকি অস্ত্র, ট্যাঙ্ক, বিমান ও জাহাজ দেয়া।

রেজুলুশন থেকে অক্টোবরের ৯ তারিখের সোভিয়েত-আলজেরিয়ার একটি যৌথ বিবৃতি তুলে ধরা হয় যেখানে বলা হয়, ‘জাতিয় সংহতি এবং পাকিস্তানের অখন্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা’ এবং ভারত-পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ‘তাসখন্দ বৈঠকের চেতনা থেকে সমস্যা সমাধানে দুই দেশের উচিত শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে হাঁটা’।

‘তাসখন্দ এর আবেদন শুধুমাত্র বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং মারা যাওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথেই বিশ্বাসঘাকতা করা না, ভারতের জাতিয় স্বার্থের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করা।

আদভানি জানান, কার্যকরী কমিটি বাংলাদেশ ইস্যু এবং সাধারন জিনিসের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে জাতিয় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং জনসংঘের সভাপতি এ.বি. বাজপেয়ী মঙ্গলবার এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখবেন।
 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!